JustPaste.it

মাওয়ায়েযে থানভী (রাঃ) থেকে নির্বাচিত কাহিনী

===================================================================

 

আল্লাহর কেনি ক্ষুদ্রতম সৃষ্টিও অনর্থক নয়

        গােলজারে ইব্রাহীম নামক গ্রন্থে জনৈক চিকিৎসকের এক চমৎকার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। একদিন পায়খানায় বসে বসে তার মাথায় এক আজব খেয়াল চাপলাে--এই পায়খানার পােকা, এতে কোন কাজে আসে, কোন উপকার ও হয় না; তবে এ সৃষ্টির রহস্য কি? এধরনের চিন্তার কিছু দিন পর তার উভয় চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়। বহু চিকিৎসার পরও তার চোখের কোন উন্নতি দেখা গেল না।

 

        ঘটনাক্রমে সে গ্রামে চক্ষু বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক এলেন। অন্ধ চিকিৎসকও তার শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক তার চোখে একপ্রকার ঔষধ লাগিয়ে দিলেন আর কয়েক দিনের মধ্যেই তার চোখ ভাল হয়ে গেল। তিনি সবকিছু ভাল ভাবেই দেখতে লাগলেন। বিস্ময়ের আতিশয্যে সে চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করলেন, এ ঔষধ তৈরীতে কি কি বস্তু ব্যবহার করা হয়েছে? চিকিৎসক বললেন, এক ঔষধ তৈরীতে পায়খানার পােকার অংশই বেশী। সতর্ক চিকিৎসক সাথে সাথে বুঝে ফেললেন যে, পায়খানার পােকা সৃষ্টি নিরর্থক মনে করার কারণেই অদৃশ্য থেকে আমাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এভাবে, আমাকে এর উপকারিতা বুঝিয়ে দিলেন।

 

       ফায়দঃ আমরা না জানলেও কোন বস্তুই আল্লাহ তা'আলা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সব কিছুই যে মানুষের কোন না কোন উপকারার্থে সৃষ্টি করা হয়েছে এ ঘটনা তারই একটি দালিলিক প্রমাণ নয় কি?

 

হায়দ্রাবাদের এক শিক্ষকের কাহিনী

         হায়দ্রাবাদের এক পণ্ডিত আমাদের অঞ্চলে শিক্ষক হয়ে আসে। সে ছাত্রদের বই-কিতাব বুঝিয়ে দেয়ার পর তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে, তােমরা কি বুঝেছাে? ছাত্ররা তাদের রীতি অনুযায়ী হাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। কিন্তু শিক্ষক মনে করেছে যে, তারা কেউ পড়া বুঝেনি। তাই সে দ্বিতীয় বার বুঝিয়ে বলার পর জিজ্ঞেস করলাে, তােমরা কি বুঝেছাে? ছাত্ররা পুনরায় তেমনিভাবে মাথা নাড়লাে। শিক্ষক ছাত্রদের মেধাহীনতার কথা ভেবে চিন্তিত হলেন এবং তৃতীয় বার আরও পরিস্কার ও ব্যাখ্যা করে বুঝাবার পর তারা বুঝেছে কিনা জিজ্ঞেস করলে ছাত্ররা পূর্বের মত মাথা নাড়লাে। শিক্ষক এতে দারুন নিরাশ হয়ে এক ব্যক্তির নিকট অভিযোেগ করে বললেন, এখানকার ছেলেরা দারুন মেধাহীন। তাদের মাথায় কিছুই নেই। আমি একটি পড়া তিন তিন বার বুঝিয়ে বলার পরও তারা মাথা নেড়ে বলে বুঝিনি। সে লােকটি ছিলাে বুদ্ধিমান। হায়দ্রাবাদ ও এ অঞ্চলের রীতিনীতি সম্পর্কে সে ওয়াকিফহাল। জিজ্ঞেস করলাে, তারা কি মুখে বলেছে যে, আমরা বুঝিনি, শিক্ষক বললাে, মুখাে তাে বলেনি-তবে অস্বীকার বুঝায় এমনিভাবে তারা মাথা নেড়েছে। তখন তিনি তাকে বলেন, এখানের রীতি অন্য ধরনের। এখানে এমনিভাবে মাথা নেড়ে বুঝান হয় যে, তারা বুঝেছে।

 

       ফায়দাঃ শরীয়তের কোন কোন বিধান পাত্র স্থান ভেদে রীতির পরিবর্তনের কারণে কখনও তার হুকুমও আংশিক পরিবর্তিত হয়ে যায়। যা মােটেই আশ্চর্যের বিষয় নয়। দক্ষ লােকের কাছেই কেবল সমাধান পাওয়া যায়।

 

দারাসিকো এবং আলমগীরের ক্ষমতার লড়াই

         দারাশিকো এবং আলমগীর উভয়েরই রাজক্ষমতা অর্জনের ইচ্ছা ছিলাে।  দারাসিকোর ইচ্ছা ছিলাে প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার বাগডোর হাতে নিয়ে সম্রাট হওয়া। আলমগীরের ইচ্ছা ছিলাে, রাজক্ষমতার সহায়তায় দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। কেননা আলমগীর (রঃ) একজন বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারে রাজক্ষমতা অর্জনের কথা চিন্তাই করা যায় না। এ উদ্দেশ্য সিদ্ধিলাভে বুযুর্গদের দু'আ লাভের প্রবণতা উভয়েরই ছিলাে। উভয়ে প্রায়ই কোন না কোন পীর দরবেশের কাছে যেতেন। শাহজাদা দারাসিকো সব ধরনের দরবেশের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল। আজকালের বেদয়াতীদের মত যাকে তাকে সে বুযুর্গ দরবেশ মনে করতেন।

 

        একবার শাহজাদা দারাসিকো সংবাদ পেলেন যে, দিল্লীতে এক বুযুর্গ ব্যক্তি এসেছেন। বাস্তবেও তিনি একজন খাটি বুযুর্গ ছিলেন। দারাসিকো তার খেদমতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। বুযুর্গ ব্যক্তি শাহজাদার সম্মানার্থে নিজ আসন ছেড়ে দিয়ে শাহজাদাকে সেখানে বসতে বলেন। বুযুর্গের আসনে বসা তার দ্বারা সম্ভব নয় বলে বিনয়ের সাথে সে এ কথা প্রকাশ করে। বুযুর্গ পুনরায় তাকে বসতে বলেন। কিন্তু দারাসিকো বিনয়াবনত ভাবে আশ্চান্বিত হয়ে বললেন, একি আমার দ্বারা সম্ভব যে, বুযুর্গদের স্থানে পা রাখবাে! এবার বুযুর্গ বলেন, বেশ ভাল। অতপর বুযুর্গ নিজের আসনে বসে পড়লেন। বিদায়ের বেলা বুযুর্গকে তার সিংহাসন প্রাপ্তির জন্য দু'আ করতে বল্লে তিনি বলেন, শাহজাদা! আমিতাে তােমাকে সিংহাসন দিচ্ছিলাম কিন্তু দুঃখের বিষয় তুমি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এ মারাত্মক ভুলের কারণে দারাসিকো দারুন মর্মাহত হলাে।

 

        এখন এ চিন্তা তাকে অস্থির ও ব্যাকুল করে তুললাে, যেন কোন ভাবেই আলমগীর এ ঘটনার কথা জানতে না পারে। সে যেন এই বুযুর্গের খবর জানতে না পারে। ঘটনাক্রমে এই বুযুর্গের সংবাদ পেয়ে আলমগীরও তার খেদমতে উপস্থিত হলেন। বুযুর্গ তার জন্যও নিজ আসন ছেড়ে দিয়ে তাকে ওখানে বসার জন্য অনুরােধ করলেন। প্রথমবার সেও ওজর আপত্তি করলাে, কিন্তু যখন দ্বিতীয়বার বসতে বললেন, তখন (আদেশ পালন শিষ্টাচারের উর্ধ্বে) বলে তার নির্দেশ পালনার্থে তার আসনে গিয়ে বসলেন। বিদায়ের সময় তিনিও সিংহাসন ও রাজ মুকুটের জন্য তার দোয়া প্রার্থনা করলেন। তখন বুযুর্গ বললেন, সিংহাসন তাে তুমি পেয়েই গেছে। এটাই তাে সিংহাসন। তবে রাজ মুকুট আমার আয়ত্বের বাইরে। আলমগীর জিজ্ঞেস করলেন, হযরত! তা কার নিকট। বুযুর্গ বললেন, তা তােমার এক চাকুরীজীবির আয়ত্বে, যে তােমাকে অজু করায়, সে যদি স্বহস্তে তােমার মাথায় পাগড়ী বা টুপি পড়িয়ে দেয় তবে রাজমুকুটও তুমি পেয়ে যাবে।

 

        আলমগীর চিন্তা করলেন এতাে কোন কঠিন ব্যাপার নয়। সে তাে আমারই চাকুরীজীবি। কোন বুযুর্গই তার চাকুরীচুক্তির অত্যাবশ্যকীয় বিষয় পালনে অনিহাও জানাতে পারে না। তার দায়িত্বই হলাে আমাকে অজু করাবে। কাপড় পরাবে। আমি তাকে বলে অবশ্যই সে আমার মাথায় টুপি কিংবা পাগড়ী পরিয়ে দিবে।

 

        আলমগীর প্রাসাদে ফিরে আসলেন এবং কিছুক্ষণ পড়েই সেই চাকুরীজীবীকে ডেকে পাঠালেন। সে অজুর পানি নিয়ে উপস্থিত হলাে। আলমগীর পাগড়ী খুলে অজু করলাে। এবং বললাে, পাগড়ীটি আমার মাথায় পড়িয়ে দাও। সে খুব বিনয়ের সাথে বললাে, শাহজাদা আমার কি এমন দুঃসাহস আছে যে, আপনার মাথায় হাত দিব। আলমগীর বললেন, না আমার মাথায় পাগড়ী পরিয়ে দিতেই হবে। অগত্যা তিনি তার মাথায় পাগড়ী পরিয়ে দিলেন এবং দিল্লীর সেই দরবেশের নাম নিয়ে গালমন্দ করলেন। তার পর দিল্লী থেকে তিনি গায়েব হয়ে গেলেন।

 

        দেখ, বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাে আলমগীরের চাকুরী করলে ও কিন্তু তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিকতায় কামিল ব্যক্তি। স্বয়ং আলমগীর রাজ মুকুট অর্জনের ব্যাপারে তার অনুগ্রহভাজন ছিলেন তাই কোন কবি বলেছেন, “আল্লাহ প্রেমে বিভাের ব্যক্তিদের তুচ্ছ মনে করাে না। কেননা তারা সিংহাসন ও মুকুটহীন বাদশাহ।”

 

       ফায়দাঃ আদেশ পালন করা হলো সবচেয়ে বড় আদব, শিষ্টাচার। দেখুন, আলমগীর আদেশ পালনের কারণে রাজত্ব লাভ করলেন। আর আদব বা শিষ্টাচারের মূল কথা হলো প্রিয়জন ও সম্মানীত ব্যক্তিকে আত্মপ্রশান্তি দেয়। কথাটা সব সময় মনে রাখা দরকার।

 

বিবি তমীজনের কাহিনীঃ

         বিবি তমজিন নাম্নী এক মহিলা ছিল পাপি ও ভীষণ দুরাচারিনী। কোন বুযুর্গ ব্যক্তি একবার তাকে অজু করিয়ে নামায পড়ান এবং বিদায় লগ্নে তিনি মহিলাকে নছিহত করে যান, সে যেন নিয়মিত নামায আদায়ে গাফিলতি না করে। দীর্ঘ দিন পর সেই বুযুর্গ আবার উক্ত অঞ্চলে আসেন এবং বিবি তমীজনকে জিজ্ঞেস করেন, পাবন্দির সাথে নিয়মিত নামায পড়ছে তাে? উত্তরে বল্লো, হাঁ, পড়ি। আবার জিজ্ঞেস করলাে, অজুও করাে তাে? উত্তর মহিলা অত্যন্ত প্রফুলের সাথে বললাে, আপনি যে অজু করিয়ে দিয়েছিলেন তা দ্বারাই নিয়মিত নামায পড়ছি।

 

        মাওলানা রফী উদ্দীন সাহেবও এমনি একটি ঘটনা বলেছেন। এক পানি বহনকারীকে তিনি অজু করিয়ে দেন এবং এ ধারণা করে তিনি তাকে কোন বিশেষ তাকীদও দিলেন না যে, সেতাে সর্বদা পানি নিয়েই থাকে, সুতরাং অজু করা তার জন্য কোন মুসকিল কিছু নয়। কিছু দিন পর দেখলেন, সেই পানি বহনকারী অজু ছাড়াই এসে নামাযে দাড়িয়ে গেছে। বিষয়টা লক্ষ করে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এটা করলে কি? অযু ছাড়াই নামায পড়ছাে! সে বললাে, “হুজুর আপনিই তো আমাকে অযু করিয়ে দিয়েছিলেন। সে অযু দিয়েই নামায চালাচ্ছি।”

 

       ফায়দাঃ তার অজু এমনই পাকা ও মজবুত যে তা স্ত্রী সহবাস, পায়খানা, প্রস্রাবের দ্বারাও ভংগ হয়না। তার ধারণা ছিলো, অযু ভংগ হওয়ার মত কোন জিনিস নয়। ঠিক আজকালকার এক শ্রেণীর ভণ্ডপীরদের মতো তাদের বুযুর্গীও এত মযবুত যে, শত পাপেও তাদের বুযুর্গী নষ্ট হয় না। নমায না পড়লে ও তাদের বুযুর্গীর একটুকু ক্ষতি হয় না। একেই বলে ভণ্ডামী।

 

এক পীরের ঘটনা

         কথিত আছে, জনৈক মুরীদ তার বিবাহের আকদ খানীর জন্য নিজের পীর সাহেবকে না ডেকে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে বিবাহ কার্য সম্পাদন করে। মুরীদের এ কাণ্ড দেখে মুরীদ ব্যবসায়ী পীর সাহেব ভাবলেন, সকলে যদি তাকে এভাবে এড়িয়ে চলে তবে তাে তার বেচে থাকাই মুশকিল হবে। অনুষ্ঠানে যােগদানের দাওয়াত না পেলে টাকা আসবে কোত্থেকে? টাকা আমদানীর পথ বন্ধ হয়ে গেলে তাে মহা বিপদ! বেঁচে থাকাই দায়।

 

        একথা চিন্তা করে তিনি তৎক্ষণাৎ মুরীদের বাড়ীতে গিয়ে উঠলেন এবং বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে তােমার বিবাহ কে পড়িয়েছে? আমাকে ডাকা হলাে না কেন? দেখ, এখনই আমি তােমার বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করে দিচ্ছি এই বলে তিনি আশ্ শামসি অদদুহা-সূরাটি সুর করে পড়তে লাগলেন। সূরার শেষের দিকে এসে মুরীদকে বললেন, আর মাত্র এক-দু’আয়াত বাকী আছে। সে দু’আয়াত পড়ে ফেললেই তােমার বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে। এ কথা শুনে মুরীদ দিশেহারা হয়ে পড়ল, কোন উপায়ন্তর না দেখে পীর সাহেবকে থামিয়ে পকেট থেকে পাঁচটি টাকা বের করে তার হাতে গুজে দিলাে। এবার পীর সাহেব কিছুটা শান্ত হলেন। এরপর সে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বল্লো, হুজুর এবারের জন্য ক্ষমা করে দিন।

 

       ফায়দাঃ হযরত থানভী (রাহঃ) এই ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেছিলেন, কিছু ব্যক্তির তাকওয়া পরহেওভাধা অবস্থা হলো এরূপ যে, তারা যতই তাকওয়া পরিপন্থী কাজ করুক তাতে যেন তাদের তাকওয়া সামান্যতম হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে না। তারপর তিনি মৃদু হেসে বলেন, মজার কথা হলো, পীরের মনে কষ্ট দিলেও নাকি মুরীদের বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়।” এক ধরনের লােক আছে যারা পীর সেজে ব্যবসা করে, এসব কাজ ওই সব ভন্ড পীরেরাই করে। একটু লক্ষ্য করলে আপনার চোখেও তাদের এসব ভণ্ডামী স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়বে।

 

যেমন কুকুর তেমন মুগুর

         এক মুসলিম বাদশাহর শাসনামলে এক নাস্তিক কোরআনকে মিথ্যা প্রমাণের জন্য বললাে, এই গ্রন্থ কখনাে আল্লাহর কালাম হতে পারে না। কারণ এতে কিছু আয়াত বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ একটি কথা বার বার বলা আল্লাহর জন্য শােভা পায় না, এই কথা শাহী দরবার পর্যন্ত পৌছলো। বাদশাহের নির্দেশে ওই নাস্তিককে দরবারে উপস্থিত করা হয়। কিন্তু সে তার মতে অটল। বাদশাহর প্রশ্নের জবাবে সে সেই একই উত্তর দেয় এবং খুব দৃঢ়তার সাথে বলে, একই কথা বার বার বলা আল্লাহর জন্য শােভনীয় নয়। বাদশাহ ছিলেন খুবই বুদ্ধিমান, তিনি মাথা নেড়ে জল্লাদকে হুকুম দিয়ে বল্লেন, “আচ্ছা আল্লাহর জন্য কোন কাজ বা কথা যদি একাধিক বার বলা অশােভনীয় হয় তাহলে একটি হাত, একটিপা, একটি কান কেটে ফেলাে। দুই চোখের একটি উপড়ে ফেলাে। কেননা সবগুলাে তাে আল্লাহর সৃষ্টি নয়।

 

        আল্লাহর জন্য নাকি একাধিক বার করার বিষয়টা শােভনীয় নয়। তাই জোড়া অঙ্গগুলাের একটি কেটে ফেলাে। কেননা, আল্লাহর সৃষ্টিতে যখন একই বস্তু ও বিষয় একাধিক নয় এবং অশােভনীয় তাই এগুলাে রাখার কোনাে যৌক্তিকতা নেই। আজ আমাদের কারাে কারাে ধর্মীয় অবস্থাও এমন হয়েছে। নামায ভালাে লাগে নামায খুব, পাবন্দীর সাথে আদায় করে। অথচ যাকাত, হজ্জ ভালাে লাগে না বলে সে সম্পর্কে দারুন উদাসীন। লেন দেনে সুদ-ঘুষ বিচারের ধার ধারে না। আবার কেউ অন্যগুলাে বাদ দিয়ে রােযাকে খুব গুরুত্বের সাথে আদায় করে আর বাকী সব আমল থেকে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে। কেউ কেউ তাে হজ্জ করে নিজেকে জান্নাতীই দাবী করে বসে অথচ জুলুম, অত্যাচার করেই চলছে, আমানতের খেয়ানত করছে, ব্যভিচার থেকেও বেঁচে নেই। লােকেরা অনেক হাজীদের এজন্যই পাজী বলে থাকে।

 

        ইদানিং (১৩৪২ হিজরী) বাজারে এক নতুন ধরনের তাফসীর এসেছে যার ভূমিকায় লিখা আছে এ তাফসীর গ্রন্থটি লিখতে অনেক আলেম অংশ গ্রহণ করেছে। যদিও সবাই কামেল ছিলেন না কিন্তু সকলে এক সাথে অংশগ্রহণের কারণে তারা কামেল হয়ে গেছে। এ বক্তব্যটির একটি চমৎকার মিছাল-আছে। তা হলাে এক কৃপণ অপরিণামদর্শী ব্যক্তি নদীর তীরে গিয়ে গাড়ােয়ানকে বললো, তীরে ও নদীর মাঝখানে কি পরিমাণ পানি আছে মেপে আমাকে বলাে। গড়ােয়ান মেপে দিলে আরােহী গর্দভ ব্যক্তিটি তার গড় কষে দেখলাে যে গড় পড়তা পানি কোমড় পর্যন্ত হয় তাই সে গাড়ােয়ানকে পানিতে গাড়ি নামিয়ে দিতে নির্দেশ দিলাে। কিন্তু গাড়িটি যখন মাঝ নদীতে পৌছলাে তখন ডুবতে শুরু করলাে। কিন্তু গর্দভ আবার হিসাব করতে লাগলাে। হিসাব কি আর বাস্তব মুতাবিক হয়।

 

আল্লাহর পক্ষ থেকে ধার্মিকদের সাহায্য হয়

         এক ধার্মিক ব্যক্তি শুক্রবার দুপুরে তার ক্ষেতে পানি দিচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে জুমআর আযান হলে সে চিন্তা করলাে, যদি ক্ষেতে পানির ব্যবস্থা করি তবে জুমআর নামায পাবাে না, আর যদি নামাযে যাই তবে পানির ব্যবস্থা করতে পারছি না। এ ধরনের চিন্তার পর অবশেষে জুমআয় শরীক হওয়াই প্রাধান্য দিলেন এবং পানি দেয়া বন্ধ করে নামাযে চলে গেলেন। নামায পড়ে এসে দেখেন যে তার ক্ষেত পানিতে টইটুম্বুর। কাণ্ড দেখে দারুন বিস্মিত হলে পার্শ্ববর্তী কৃষক বলতে লাগলাে, ভাই, আজ এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। আমরা নিজেদের ক্ষেতে পানি দিচ্ছিলাম অথচ বালতির পানি সব তাের ক্ষেতে গিয়েই পরতাে। সত্যই ধার্মিকদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য সর্বদা হইতেই থাকে। তবে কখনাে তা দৃশ্যমান হয়ে যায়। আর তাদের সময়েও আল্লাহ তায়ালা অনেক বরকত দান করেন।

 

আল্লাহর গজব থেকে সর্বদা দূরে থাকা দরকার

         আমার মামা মুন্সি শওকত আলী সহেব যখন সরকারী মাদ্রাসায় পড়তেন তখন একবার এক ইনেসপেক্টর মাদ্রাসা পরিদর্শন করতে আসে ও সে ছাত্রদেরকে এমন প্রশ্ন করলাে যা তার জন্যও শােভনীয় নয়, আর নিচের ক্লাসের ছােট ছােট ছাত্রদের পক্ষে তার জবাব দেয়াতাে সম্ভবই নয়। সে ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করলাে, বলতাে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ কি? ছাত্রওরা এ ধরনের প্রশ্নের জন্য মােটেই প্রস্তুত ছিলাে না। তাই তারা এ প্রশ্ন শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাে। ইনেসপেক্টরের বুদ্ধিহীন কাজে মামা অধৈর্য হয়ে তাকে বললেন, “মিয়া সাহেব, এ প্রশ্ন আমাকে করুন, আমিই উত্তর দিচ্ছি।” ইনেসপেক্টর তার পদমর্যাদার অহংকারে অসন্তোষের সুরে বললেন “আচ্ছা তবে আপনিই জওয়াব দিন।” মামা বললেন, “আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ হলাে যে, আপনি প্রথমে ছিলেন না এখন অস্তিত্ব লাভ করেছেন। আর প্রত্যেক নশ্বরের জন্যই কোন কার্যকারণ থাকে তাই আল্লাহই আপনার অস্তিত্বের কার্যকারণ।” ইনেসপেক্টর বললেন, “আমাকে তাে আমার পিতামাতা সৃষ্টি করেছেন।

 

        আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেননি।” তখন মামা তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আপনার পিতাকে কে সৃষ্টি করেছে?” সে বললাে, “তাদের জন্মদাতা পিতামাতা।” মামা বললেন, “আপনার কথামতে জন্মদাতাদের ধারাবাহকিতা এভাবে চলতে থাকবে অথবা তা এক পর্যায়ে গিয়ে শেষ হয়ে যাবে। যদি এধারা বিরতিহীন ভাবে চলতে থাকে তবে তা অন্তহীনতার পর্যায়ে পড়ে যা কোন সৃষ্টির ব্যাপারে প্রয়ােজন। আর যদি অন্তহীনতা হয় তবে তা এক পর্যায়ে আল্লাহ পর্যন্ত গিয়ে দাড়ায়। অর্থাৎ আল্লাহ এসবের সৃষ্টিকর্তা বলে প্রমাণিত হয়।” ইনেসপেক্টর সাহেব এর কোন জবাব না দিয়ে বললাে, “আপনি তাে তর্ক শাস্ত্রে দারুন পারদর্শী। আমিতাে তর্ক শাস্ত্রে পারদর্শী না, সাদাসিধে কথাই আমরা জানি। তাই যদি আপনার আল্লাহ থাকে তবে তার নিকট দোয়া করুন যেন আমার চক্ষু ভাল করে দেন।”

 

        উল্লেখ্য যে, ইনেসপেক্টরের এক চক্ষু ছিলাে দৃষ্টি শক্তিহীন। তার কথার উত্তরে মামা বললেন, “আচ্ছা আমি এখনই চোখ বন্ধ করে আপনার এ সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি। তারপর তিনি ভনিতা করে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে চোখ খুলে ইনেসপেক্টরকে বললেন, “আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলাম, কিন্তু আল্লাহ বলেছেন যে, আমি তাকে দুটি চক্ষু দান করেছিলাম কিন্তু সে আমার নেয়ামতের অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে তাকে তার পিতা-মাতা সৃষ্টি করেছে। তাই আমি তার উপর ক্রদ্ধ হয়ে তার একটি চক্ষুর আলাে ছিনিয়ে নিয়েছি। এখন আপনি তাকে বলে দিন, সে যেন তার পিতার থেকেই সে চোখের দৃষ্টি শক্তি আদায় করে নেয় যারা তাকে সৃষ্টি করেছে।”

 

        মামার এ কথা শুনে সে অত্যন্ত ক্রদ্ধ হলাে কিন্তু বলার মতো তার কিছুই ছিলাে না। ফলে সে মাদ্রাসার ব্যাপারে খারাপ রিপাের্ট করে, একজন বুযুর্গের সাথে এরূপ অন্যায় আচরণ করে এ বেয়াদবীর কয়েকদিন পরেই তার শরীরে মারাত্মক বেদনা শুরু হয় এবং সে মৃত্যুবরণ করে।

 

        উল্লেখ্য যে, আল্লাহর গজব বান্দার জন্য খুবই মারাত্মক তাই সর্বদা তা থেকে পানাহ চাওয়া দরকার। আল্লাহর গজব, আবার দু'ধরণের হয়। কখনাে দৃশ্যত ভাবেই আল্লাহর গজব দেখা দেয়। আবার কখনাে, আল্লাহর গজব শীথিল আকারে অর্থাৎ আল্লাহ তাকে নাফরমানী করার প্রচুর সুযােগ দান করেন। আর সে সুযােগ পেয়ে নাফরমানীতে আকণ্ঠ ডুবে যায়। দ্বিতীয় প্রকার গজব খুবই মারাত্মক ও ভয়াবহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার গজব থেকে রক্ষা করুন।

 

হযরত উমর (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ সত্যই গৌরবের বিষয়

        এক শিয়া এক সুন্নীকে তীরস্কার করে বললাে, “উমরের ইসলাম প্রচার ও প্রসারের অবদানে তােমরা খুব গর্ব বােধ করাে। আর তা তার কামেল মুসলমান হওয়ার প্রমাণ হিসাবে পেশ করাে। অথচ তার এই কাজগুলাে দ্বারা তাে তার মুসলমান হওয়া প্রমাণিত হয়না। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ পাপাচারী ব্যক্তি দ্বারা এধর্মের সহায়তা করবেন।” শিয়ার একথার উত্তরে সুন্নী মুসলমান ব্যক্তিটি বললাে, “আপনার কথার দ্বারা তাে এটা প্রমাণিত হলো যে, পাপাচারী ব্যক্তি যে ধর্মের খিদমত করেছেন তা হলাে ইসলাম ধর্ম ও সত্য ধর্ম। তাই তােমার কথা অনুযায়ী উমর (রাঃ) যে ধর্মের খিদমত করেছেন অবশ্যই তা ছিলাে সত্য ধর্ম, ইসলাম ধর্ম। এখন চিন্তা করাে হযরত উমর (রাঃ) যে ধর্মের খিদমত করেছেন তা শিয়াদের ধর্ম না সুন্নীদের ধর্ম অবশ্যই তুমি বলবে যে তা সুন্নীদের ধর্ম। এদ্বারা সুন্নীদের ধর্মই হক ও সত্য বলে প্রমাণিত হয়। আর উমরের (রাঃ) ধর্মও সুন্নীদের ধর্ম ছিলাে তাই তার মুসলমান হওয়া ও কামেলুল ঈমান হওয়া প্রমাণিত।” একথা শুনে শিয়া হতবুদ্ধি হয়ে গেল।

 

ভালােবাসার মজা

         এক অন্ধ ওস্তাদ কোন বাড়ীর ছেলেদেরকে পড়াতাে। ছেলের মা ওস্তাদের সন্তুষ্টির জন্য ছেলের হাতে মাঝে মধ্যে সুস্বাদু খাবার পাক করে অন্ধ ওস্তাদের জন্য পাঠাতেন। কখনাে কখনাে ছালামও পাঠাতেন। কিন্তু অন্ধ শিক্ষক তার অর্থ করে ভিন্নভাবে। সে ভাবলাে যে, ছাত্রের মা তাকে ভীষণ ভালবাসে। তাই ধীরে ধীরে তার মাঝে ভালবাসা দানা বাধতে থাকে। একদিন সে ছেলের মাধ্যমে তার মায়ের নিকট প্রেমের কথা জানিয়ে মােলাকাতের ইচ্ছা প্রকাশ করে। মহিলাটি পূণ্যবতী ছিলাে। অন্ধের এ ব্যবহারে সে খুব মর্মাহত হয়ে এ কথা স্বামীর নিকট খুলে বলে। তারপর উভয়ে মিলে সিদ্ধান্ত করলাে যে, এ অন্ধকে তার প্রেমের মজা ভালােভাবেই দেয়া দরকার। তারা এক চমৎকার ফন্দি আঁটলাে এবং ছেলের মাধ্যমে অন্ধ শিক্ষককে আসতে বললাে।

 

        অন্ধ ওস্তাদ সময় মতাে গিয়ে পৌছলে অন্দর মহলে তার থাকার ব্যবস্থা করা হলাে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় আওয়াজ পড়লাে দরজা খােলার জন্য। অন্ধ শিক্ষক গৃহ স্বামীর আওয়াজ শুনে ঘাবড়ে গেল। কিন্তু মহিলা অভয় দিয়ে বললাে, কোন চিন্তা নেই আমি এর ব্যবস্থা করছি। তুমি শাড়ী পরে বসে জাতা পিষতে থাকো। অন্ধ তাই করলাে। মহিলা গিয়ে দরজা খুলে দিলে স্বামী ঘরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করলাে, ইনি কে? স্ত্রী বললাে, আমাদের বাদী, আটার প্রয়ােজন ছিলাে তাই অসময়ে ডেকে পাঠিয়েছি। কিছু আটা পিষে দিচ্ছে। তারপর স্বামী বসে রইলাে। আর বাদী বেশী অন্ধ ওস্তাদ অসহায়ভাবে বসে বসে আটা পিষছে। কিন্তু কততক্ষণ আর পিষবে। ক্লান্ত হয়ে তার হাত অবশ হয়ে আসছিলাে। আটা পেষায় তার মন্থরতা দেখে স্বামী কুদ্ধ হয়ে বললাে, “কি পােড়া কপালী আটা পেষার সময় ঘুম আসছে।” একথা বলেই জুতা দিয়ে আচ্ছা মতাে কয়েকটি দিয়ে তারপর আবার গিয়ে বসলাে।

 

        অন্ধ ওস্তাদ ভয়ে জড়ােসড়াে হয়ে আবার আটা পিষতে শুরু করে। পাছে যদি তার প্রেমের কথা ফাঁস হয়ে যায় তবে আর রক্ষে নেই। তাই চুপ করে রইলাে এবং সে খুব দ্রুত আটা পিষতে লাগলাে। কিন্তু কিছুক্ষণ পিষার পর আবার হাত দুর্বল কর্ম অক্ষম হয়ে আসলাে। তখন স্বামী উঠে আবার তাকে কষে একচোট জুতা পেটা করলাে। মােটকথা সকাল পর্যন্ত অন্ধ ওস্তাদ দ্বারা খুব যাতা পিষালাে এবং জুতা দিয়েও কম কষালাে না। অন্ধ ওস্তাদের শাস্তি পূর্ণ মাত্রায় হয়ে গেলে তখন স্বামী স্থান ত্যাগ করে উঠে চলে যায়। স্ত্রী তখন এসে চুপি চুপি দেরী না করে এই সুযোেগ ওস্তাদকে চলে যেতে বলে। অন্ধ সাহেব দ্রুত সেখান থেকে পালালাে এবং তার বাসায় গিয়ে তবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাে। অন্ধের শাস্তিতো বেশ হয়েছে। কিন্তু মহিলাও কম ধুরন্দর নয়। আর একদিন সে তার ছেলের মাধ্যমে ছালাম জানিয়ে আবার ওস্তাদকে ডেকে পাঠালেন। দূরভিসন্ধি বুঝতে পেরে ওস্তাদ বললাে, “বুঝেছি ঘরে মনে হয় আটা নেই। তাই এই পােড়া কপালের ডাক পড়েছে।”

 

অনুবাদঃ ম.আ. মাহদী

 

 

 ═──────────────═