JustPaste.it

তালেবান পরিক্রমা

 

ইউরোনিয়াম ও আনবিক অস্ত্রের সরঞ্জাম এখন তালেবানের হাতে

"কাবুলের মৌলবাদীরা বিপুল পরিমাণ ইউরোনিয়াম সংগ্রহ করেছে। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য সকল উপায়ে এ ইউরোনিয়াম ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে তালেবান।' গত মাসে বিবিসির এক সম্প্রচারে এ কথা বলা হয়। কাবুল প্রতিনিধির বরাত দিয়ে উক্ত সম্প্রচারে বলা হয় যে, তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মোল্লা খায়রুল্লাহ এ ইউরোনিয়াম সংগ্রহ সম্পর্কে শুধু জ্ঞাতই নন, তিনি সাংবাদিকদের ইউরোনিয়ামের সীসার ফ্লাক্স এবং অন্যান্য বিপজ্জনক আনবিক সরঞ্জামও প্রদর্শন করেন।

সবুজ রংয়ের বৃহদাকার সিলিন্ডার আকৃতির ফ্লাক্সগুলো দেখামাত্র উপস্থিত সকল সাংবাদিক ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে যান। ভয়ে মনে হয় যেন সাংবাদিকদের বাক রুদ্ধ হয়ে গেছে। মোল্লা খায়রুল্লাহ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ইউরোনিয়াম হাতে নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছি, অথচ আপনারা এত ভয় পেলেন যে, দৌড়ে বাইরে চলে গেলেন'!

সাংবাদিকরা লজ্জিত হয়ে আবার রুমে ফিরে এসে মোল্লা খায়রুল্লাহকে সিলিন্ডারগুলো সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করে এবং তাঁকে রুমের বাইরে এসে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আহবান জানায়।

বিবিসির প্রতিনিধির তথ্য মতে, মোল্লা খায়রুল্লাহ দাবী করেন যে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগান রাজধানীতে অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা এ ইউরোনিয়াম জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। তিনি আরো বলেন যে, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ সব সরঞ্জাম ও ইউরোনিয়াম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

অপর এক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় যে, এ সীসার ফ্লাক্সভর্তি ইউরোনিয়াম কাবুল এয়ারপোর্টে এক মহিলার নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ মহিলা সম্ভবত কোন ইউরোপীয় দেশের কাছে চোরাচালানীর মাধ্যমে এ ইউরোনিয়াম পাচার করতে চেয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে এ মহিলা এ সম্পর্কে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে তা' গোপন রাখা হয়েছে। অন্য আর এক সূত্র জানায়, ঐ মহিলার তথ্য অনুযায়ী তার সঙ্গী দুই পুরুষকে ভিন্ন ভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের থেকেও বিপুল পরিমাণ ইউরোনিয়াম উদ্ধার করা হয়েছে। চার মাস আগে এ ইউরোনিয়াম আটকের ঘটনা ঘটে বলে সূত্র জানায়।

বিবিসির সূত্র অনুযায়ী, মোল্লা খায়রুল্লাহ বলেন, এ আনবিক কেমিক্যলস সোভিয়েতের বিরুদ্ধে জিহাদ চলাকালে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তানে নিয়ে আসে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্যা। এটা প্রমাণ করে যে, সোভিয়েত বাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে কেমিক্যালস অস্ত্রও ব্যবহার করেছিল এবং আফগানিস্তান থেকে বিদায় নেয়ার সময় বাকী কেমিক্যালস ফেলে রেখে যায়।

অন্য এক সূত্র মতে সম্প্রতি রাশিয়া থেকে স্বাধীন হয়ে যাওয়া ইউক্রেন থেকে যে সমস্ত ইউরোনিয়াম চুরির ঘটনা ঘটেছে এ , ইউরোনিয়াম তারই একটা অংশ হতে পারে। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশ এর রহস্য উৎঘাটনে সর্বাত্তক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পাচারকারীরা তালেবানদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এবং তাদের ধোঁকা দেয়া সহজ হবে মনে করে কাবুল এয়ারপোর্টকে বেছে নিয়েছিল, কিন্তু তারা হাতেনাতে ধরা পড়ে যায়।

 

আমেরিকার প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন

আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর

কান্দাহার থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে যে, আমীরুল মুমিনীন তাঁর দেশের ছাত্রদের জন্য আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত আসনগুলো প্রত্যাখান করেছেন। আমেরিকা সরকার ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য উচ্চ শিক্ষার জন্য আফগান ছাত্রদের ১০টি আসন বরাদ্দ করে তা' আফগান সরকারকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু আমিরুল মুমিনীন এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, “আমেরিকায় গিয়ে লেখা-পড়া করা আমাদের দেশ ও ধর্মের স্বার্থের বিরুদ্ধে চলে যাবে। আমাদের এমন কোন শিক্ষার প্রয়োজন নেই, যা ইসলামী ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে চলে যায়। এ ধরনের কোন উদ্যোগ আফগান মুসলমানদের জন্য ভয়ানক ক্ষতি সাধন করবে।' উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে অনুপ্রবেশের আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন এভাবে হাজার হাজার আফগান যুবক-যুবতিকে বৃত্তি দিয়ে লেখাপড়ার জন্য নিজ দেশে নিয়ে যায় এবং তাদের মগজ ধোলাই করে আফগানিস্তানে কমুনিজম রপ্তানি করে ও ব্যার্থ বিপ্লব ঘটায়।

 

বিদেশী সাহায্যদাতা সংস্থার ষড়যন্ত্রঃ

জীবানু সংক্রামিত বীজ বিতরণ করে মাটির উর্বরতা ত্রাসের চেষ্টা

“আমাদের তথাকথিত সকল মানবাধিকার ও সেবামূলক সংস্থার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং পরীক্ষা করে দেখতে হবে, তারা অসহায় ও দরিদ্র আফগান জনগণের কি উপকার করছে। পাশাপাশি বিশ্বের এ সব লোকদের উদ্দেশ্যও পরীক্ষা করে দেখা উচিত, যারা অহরহ তালেবানের মানবাধিকার লংঘনের জন্য অভিযুক্ত করে থাকে।' তালেবান সুপ্রীম কমান্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মৌলভী হামিদুল্লাহ জাহিদ এ কথা বলেন। তিনি একটি বিদেশী সাহায্য সংস্থা কর্তৃক আফগান কৃষকদের মধ্যে বিষাক্ত বীজ সরবরাহ ঘটনা ধরা পড়ার পর এ মন্তব্য করেন।

এ ঘটনার তদন্তকারী আফগান কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মৌলভী নাসিম আখন্দ বলেন, “ভিয়া' নামের একটি বিদেশী সংস্থা কৃষকদের কাছে যে বীজ বিতরণ করে, তা ছিল জমির উর্বতা হ্রাস করার এক নাশকতামূলক চক্রান্ত। এ বীজ শুধু জীবানু সংক্রামিতই ছিল না, এগুলো জমির অন্যান্য উপকারী গাছকেও আক্রান্ত করে। বিভিন্ন স্থানে এ অবস্থা দেখে কৃষি বিভাগ কিছু বীজ ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। পরীক্ষায় জানা যায়, তৈল বীজের ন্যায় এ বীজের তেলও শুষে নেয়া হয়েছে, পরে এ ছোবড়ায় জীবানু ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে, যা এ ধ্বংসাত্মক কাণ্ড ঘটাচ্ছে।"

এ ঘটনার পর সরকার সমস্ত বিদেশী সংস্থাকে সরাসরি জনগণের নিকট বীজ বিতরণ নিষিদ্ধ করে। প্রথমে সরকার থেকে বীজ পরীক্ষা করিয়ে নিতে বলা হয়, এবং তা' যদি নিরাপদ প্রমাণিত হয়, তবেই তা" বিতরণের অনুমতি পাবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়।

 

রাশিয়া তালেবান সরকারকে ভয় দেখাচ্ছে!

তালেবানের উত্তর আফগানিস্তান অভিমুখী অগ্রযাত্রায় রাশিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তারা আশঙ্কা করছে যে, এর ফলে তাজিকিস্তান ও অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রেও বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়বে। তখন আফগানিস্তানের মতো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। রাশিয়ার অন্যতম তীতি হলো, তখন তার এসব সাবেক রাষ্ট্রসমূহে আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থার মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এ ভীতির কারণে রাশিয়ার বিভিন্ন কর্মকর্তা এখন বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে। তারা তালেবানদের দোষারোপ করে বলছে যে, তালেবানরা মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বোখারা ও সমরকন্দ শহর দু'টির প্রতি এখন দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে: তারা এ শহর দু'টির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে এ শহরদ্বয়ের অভিমুখে স্বভাবগত অগ্রাভিযান চালাতে পারে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ প্রেক্ষিতে এক বিবৃতি দিয়ে তালেবানদের সতর্ক করে বলেন, তারা যদি রাশিয়ার সীমান্তে এ ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে তাদের চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে। কাবুল রেডিও এক সংবাদ ভাষ্যে এ তথ্য জানায়।

তালেবানদের আফগানিস্তানে এ অপ্রতিহত অগ্রযাত্রায় তাজিকিস্তান সীমান্তে অবস্থানরত রুশ সেনাদেরও ভীত-সন্ত্রস্ত্র করে তুলেছে। তারা এখন তাজিকিস্তানে সরকার বিরোধী ছোটখাট ঘটনায়ও তালেবানদের উপস্থিতির সন্দেহ করছে। এ ভীতি তাদের মনের ওপর এমন প্রভাব বিস্তার করেছে যে, তারা স্বপ্নের মধ্যেও পাগড়ী, দাড়িওয়ালা তালেবানদের তাদের প্রতি অগ্রসর হতে দেখছে। তারা এ দুঃস্বপ্ন দেখে জাগ্রত হয়ে উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে চারিদিকে দেখতে থাকে, এ স্বপ্ন সত্যি কিনা, তালেবানরা তাদের দিকে সত্যই এগিয়ে আসল কিনা!

রাশিয়ান সমর বিশেষজ্ঞরাও তালেবানদের এ উত্থানে অভিমত ব্যক্ত করেছে যে, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলোর তালেবানদের ভয় পাওয়ার প্রধান কারণ হলো, তালেবানরা ভয় পায় না। তালেবানই একমাত্র সামরিক বাহিনী, যারা 'কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ, কোন বিনিময় পাওয়ার লোভ ছাড়াই যুদ্ধ করে এবং তারা যেদিকে অগ্রসর হয়, নিশ্চিত বিজয় অর্জনের ধারণা করেই অগ্রসর হয়, তাদের কাছে কোন কিছুই অসম্ভব মনে হয় না। তারা যেথায় যাবে সেখানেই তারা বিজয় অর্জন করবে।' সংবাদদাতা মন্তব্যে বলেন যে, বিশ্ব মুসলিমের সাধারণ অভিমত হচ্ছে, তালেবানদের আফগানিস্তানে বিস্ময়কর সাফল্যের পর বিশ্বের সকল অত্যাচারিত মুসলমানদের স্বাধীনতা ও হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক সহাযোগিতায় মতোনিবেশ করা, বিশ্বের সর্বত্র কুফরের বিরুদ্ধে লড়াই করা ও কুফরকে অপদস্থ করতে সকল শক্তি সামর্থ নিয়োগ করা।"

 

মুসলিম উম্মাহর উত্থান-পতনের আসল কারণ

‘মুসলিম জাতির উত্থান ও পতনের আসল কারণ হচ্ছে জিহাদ এবং জিহাদকে ভুলে যাওয়া। যদি আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র যুগ থেকে মুসলমানদের উত্থান-পতন, সম্মান-অসম্মানের বিষয়ে বিশ্লেষণ করি, তবে আমরা এ উপসংহারে পৌঁছি যে, মুসলিম জাতি যে গৌরব ও মর্যাদা অর্জন করে, তার কারণ জিহাদ এবং যখনই তারা অসম্মান ও বিপর্যয়ের মুখোমুখী হয়েছে, তার কারণ জিহাদকে পরিত্যাগ করা ।'

তালেবান সরকারের অন্যতম ব্যক্তিত্ব মাওলানা আবুল ফজল কান্দাহারে এক জনসভায় এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে কুফর এবং পৌত্তলিকতা তার এবং তার ধর্মের নিকট গুরুত্বহীন ছিল। কিন্তু যখন মুসলমানদের ওপর জিহাদের আদেশ জারী হলো, তারা শৌর্য, বীরত্ব এবং শক্তি প্রকাশে পিছপা হন নি। এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা জিহাদের আদেশকে বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে কাইসার ও কিসরার সাম্রাজ্যেও তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইহুদিরা অসম্মানজনক ও অপদস্থ অবস্থায় মদীনা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। মুসলিম দেশে যেসব কাফিররা বসবাসের অনুমতি পায়, তারাও জিজিয়া প্রদানে বাধ্য হয়। অল্প সময়ের মধ্যে পুরো বিশ্বের ওপর মুসলমানদের প্রাধান্য অর্জিত হয়। তখন কোন মুসলিম পুরুষের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ বা কোন মুসলিম নারীকে অসম্মান করার সাহস পেত না কোন অমুসলিম সম্প্রদায়। কিন্তু যখন মুসলিম জাতি জিহাদ ত্যাগ করে তখনই তারা বিশ্বব্যাপী অমর্যাদা ও অপদস্ত হতে থাকে। বর্তমানেও মুসলমানরা বহু দেশের শাসন ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের সামরিক শক্তি সরঞ্জামেরও কোন অভাব নেই, তাদের সম্পদেরও কোন অভাব নেই, তথাপি তারা নির্যাতিত। তারা সর্বত্র শোষণ বঞ্চনার শিকার হচ্ছে, তারা আজ অপদস্ত, মর্যাদাহীন একটি জাতি।

মাওঃ আব্দুল ফজল আফগান জিহাদের সূচনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, “যদি মুসলমানদের হৃদয়ে জিহাদের চেতনা সুপ্ত থাকত,তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে প্রবেশের সাহস করত না। মুসলমানরা ছিল অচেতন, তাই রুশরা আগ্রাসন চালাতে সক্ষম হয়। তারা একটি বৃহৎ প্রদেশ নয়, আফগানিস্থানের মতো একটা বৃহৎ দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ অভিযান পরিচালনা করে। আমাদের শাসকরা সে সময় ছিল ক্ষমতার জন্য পাগলপারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি ঘটলো? সোভিয়েত ইউনিয়ন বেশী দিন টিকতে পারল না এবং দেশটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। বর্তমানে তালেবান যে শ্রদ্ধা ও সম্মানের অধিকারী তা-ও এই জিহাদের কারণে। তালেবান কারা ছিল? কেউ তাদের সম্পর্কে কিছু জানত না। এখন এই সুপ্ত শক্তিকে সবাই ভয় পাচ্ছে। এর একমাত্র কারণ একটি ফরজ আদায় এবং এর ফলে তারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে, তারা মর্যাদা লাভ করে। এমনকি আল্লাহর অনুগ্রহে দেশের শাসন ক্ষমতাও লাভ করে। ইনশা আল্লাহ দেশের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এর সবকিছুই হচ্ছে জিহাদের বরকতে।

 

আল্লাহর শক্তির কাছে কুফর অবশ্যই পরাজিত হবে

‘আফগানিস্তানে তালেবানদের বিজয়ে বিশ্ব কুফরী শক্তি চরম উদ্বিগ্ন, বিভ্রান্ত, কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছে। আল্লাহর দেয়া এ বিজয় ইসলামের শত্রুরা বিশ্বাস করে না। তালেবানরা চরম দুঃখ-দারিদ্রে নিমজ্জিত অবস্থায় থেকেও বিজয় অর্জন করছে। তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উদাহরণযোগ্য শান্তি-শৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি করায় আজ সকলে বিস্মিত। তারা তালেবানদের এ বিজয়ে সন্দেহ পোষণ করতে থাকে এবং শীঘ্রই তালেবান বিরোধীরা বিজয় লাভ করবে বলে ধারণা ব্যক্ত করে। কিন্তু তাদের এ ধারণা কোন ভিত্তি লাভ না করায় তাদের বিস্ময়ের মাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে দিনে দিনে তালেবানদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে।'

তালেবান সরকারের আইন ও বিচার মন্ত্রী এবং সুপ্রীম শুরার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মোল্লা নুরুদ্দিন তুরাবী সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে আরো বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আফগানিস্তানে বিশুদ্ধ ইসলাম প্রতিষ্ঠাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র আল্লাহর তায়ালাই আমাদের সাহায্যকারী।

 কুফরের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা। কিন্তু এটা আমাদের জন্য কোন চিন্তার বিষয় নয়। কেননা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আল্লাহই আমাদের রিজিকদাতা, একমাত্র তিনিই আমাদের খাদ্য-পুষ্টির যোগানদাতা।

 

রহিমুল্লাহ ইউসুফ জিয়া অবশেষে দাড়ি রেখেছেন

বিবিসির পশতু বিভাগের প্রতিনিধি এবং ইংরেজী দৈনিক “দি নিউজের" ব্যুরো চীফ জনাব রহিমুল্লাহ ইউসুফ জিয়া অবশেষে দাড়ি রেখেছেন; সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন যে, আফগানিস্তানে বিভিন্ন স্থানে সফরে গিয়ে তিনি নিজেকে একমাত্র দাড়িবিহীন আফগানী হিসেবে দেখতে পান। তিনি এ সফরে যেখানেই গমন করেন, সেখানেই তালেবানরা তার দাড়ি না থাকার কথা জিজ্ঞেস করে এবং সত্ত্বর দাড়ি রাখার উপদেশ দেয়। পাকিস্তান ফিরে এসে তিনি হজ্বে গমন করেন এবং সুন্নাহ মোতাবেক দাড়ি রাখেন। কান্দাহারে আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি রহিমুল্লাহকে উপদেশ দেন, রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ মোতাবেক নিজের জীবনকে গড়ে তুলতে। তার রাসূল (সাঃ) মতো দাড়ি রেখে তার খাঁটি উন্মত হতে।' আমিরুল মুমিনীনের এ উপদেশের পর রহিমুল্লাহ হজ্ব করতে যান এবং ফিরে এসে দাড়ি রাখেন।

 

ইহুদিদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে

ইহুদিদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে এবং আফগানিস্তানকে দু'ভাগ করার তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবষিত হয়েছে। তারা উত্তর পশ্চিম আফগানিস্তান নিয়ে উজবেক ও পারসিয়ানদের নিয়ে একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের সকল চেষ্টা, কর্ম বিফলে গেছে, ইনশাআল্লাহ তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে,আমির খান মোত্তাকীর নেতৃত্বাধীন তালেবানদের অগ্রযাত্রা মাজারী শরীফ না পৌঁছা পর্যস্ত থামবে না। ইহুদীদের এ পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়ে একটি ব্যাপক ভিত্তিক এবং কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা হবে, যা হবে বিশুদ্ধ ইসলামী সরকার।' কাবুলের রেডিও শরিয়তের এক সংবাদ ভাষ্যে এ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

 

শিক্ষা সম্পর্কে তালেবানের নীতি

আফগান তালেবান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে 'তালেবানরা শিক্ষার বিরদ্ধে” এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা শুধু সারা বিশ্বে কুফরী মতাদর্শ অনুযায়ী চলিত বিষয় ও শিক্ষানীতির বিরোধিতা করি। আমরা এ সব পথ ও পদ্ধতির বিরোধিতা করি, যা শিক্ষার নামে ছাত্রদের ধর্মের প্রতি উদাসীন, চিন্তা-চেতনাকে বস্তুবাদী ও ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তোলে, এমনকি তাদের মুসলিম নামটির প্রতিও অসহিষ্ণু করে তোলে। তাই স্বাভাবিকভাবে আমরা এ ধরনের শিক্ষানীতি ও পদ্ধতির বিরোধী। এছাড়া মহিলাদের শিক্ষার ব্যাপারে আলিম সমাজ ব্যাপক পর্যালোচনা করে শিক্ষার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করছেন, তাদের শরিয়াহ সম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহিলাদের শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হবে।

 

ইউরোপ-আমেরিকার শাসন ব্যবস্থা সেকেলে জরাজীর্ণ

ইউরোপ-আমেরিকার যে শাসনব্যবস্থা নিয়ে গর্ব প্রকাশ করে ও আধুনিক বলে দাবী করে তা সেকেলে ও জরাজীর্ণ। তা  এখনও যেমন মানবতার মূল্য পরিমাপ করতে অক্ষম, ভবিষ্যতেও মানবাধিকারকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হবে।

একমাত্র ইসলামেই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, মর্যাদা রক্ষা ও মহত্বের বিকাশ নিহিত রয়েছে।

তালেবান সরকারের শিল্প ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোল্লা হামিদুল্লাহ কান্দাহারে এক সমাবেশে বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তিনি বক্তৃতায় আরো বলেন, বিশ্বের কোন দেশের আমাদের হুমকি দিয়ে ভয় দেখাতোর প্রয়োজন নেই, কেননা আমরা কোন হুমকিকে ভয় করি না। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা আফগানিস্তানে গ্রহণযোগ্য হবে না। আফগানিস্তানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করায় বিশ্ব কুফুরী চক্র প্রচন্ডভাবে মর্মাহত হয়েছে এবং সেজন্য তারা কখনো সংবাদ প্রচার মিডিয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় আবার কখনো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সরকারকে দুর্বল করার অপচেষ্টা চালায়।

ইনশা আল্লাহ তাদের সকল পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে এবং তালেবান সরকারের কোন ক্ষতি করতে সমর্থ হবে না।

ইসলাম শান্তি-ভালবাসার ধর্ম। ইসলামের বাস্তবায়নে শুধু মুসলমানরাই সুখী হয় না, ইসলামী রাষ্ট্রে কাফিররাও নিরুদ্বেগ শান্তিতে বসবাস করে।

মোল্লা হামিদুল্লাহ তার বক্তৃতায় আফগান জনগণকে মুজাহিদদের ভূমিকা নিতে এবং ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই করতে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান। তিনি তাদেরকে সাহাবাদের (রাঃ) ঐক্য ও সংহতিকে অনুসরণ করারও আহবান জানান। তিনি বলেন, সাহাবীগণ (রাঃ) কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর ছিলেন, কিন্তু নিজেদের মধ্যে সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, উদারচিত্ত এবং দয়ালু মতোবৃত্তি সম্পন্ন। আমরা যদি সাহাবীদের (রাঃ) চরিত্র থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি এবং তাদের অনুসরণ করি, তাহলে শুধু আমাদের সীমান্তই নিরাপদ থাকবে না, আমাদের দেশের মধ্যেও উদাহরণযোগ্য শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

আমাদের ভালবাসা ও ঘৃণা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আমরা যদি কারো জন্য আপেলের রসও নিয়ে যাই, তবে তা আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী হবে। শত্রুর বিরুদ্ধে যদি কোন ব্যবস্থা নেই, তা-ও শরিয়া আইন অনুযায়ী বাস্তবায়িত হবে।

 

তালেবান পরিক্রমা:সর্বশেষ সংবাদ

  • তালেবানের জঙ্গী বিমান ফারিয়াবের বড় একটি সেনা ছাউনি ধ্বংস করে দিয়েছে।
  • চারিকারে ৫টি গ্রামে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ, শত্রুপক্ষের ২০ সৈন্য নিহত, ৮০ গ্রেফতার।
  • হেলমন্দে ইরানী ষড়যন্ত্র ব্যর্থ। দেলারাম সেতু বিদ্ধস্ত করতে গিয়ে ৬ সন্ত্রাসী গ্রেফতার।
  • বাদগিস ও ফারিয়াবে তালেবানের অগ্রাভিযান, গোরমার্চ জেলা দখল,  ৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত।
  • কান্দাহারে হেন্দাগী জেলার বাসিন্দা মুসা খানকে হত্যার দায়ে ঘাতক আমীনুল্লাহর বিশ জাহার লোকের সামনে শিরচ্ছেদ।
  • গোরমার্চ দখল করার জন্য পরিচালিত হামলায় ১০০ কম্যুনিষ্ট নিহত।