JustPaste.it
User avatar
Jago Mujahid @JagoMujahid · Sep 13, 2021

সম্পাদকীয়

 

জীবনের চেয়ে শাহাদাত প্রিয় এমন একদল মুজাহিদের আজ একান্ত প্রয়োজন

==================================================

 

        এই মুহূর্তে আঘাতের পর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের দেহখানা। ক্ষত নিঃসৃত হাজারো রক্ত স্রোত ধারা সৃষ্টি করছে রক্ত সাগর মহা সাগরের। আজ ইসলামের সকল দুশমনেরা একজোট হয়ে মুসলিম জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়াকেই একমাত্র টার্গেট নিরূপন করেছে। তাই ওরা মুসলিম নিধন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে নিরুদ্বেগ, বাধাহীন গতিতে। খৃষ্টান ধর্মের ব্রাও ‘ক্রুস’ নামাঙ্কিত মিজাইলের আঘাতে তড়পাচ্ছে ঘুমন্ত মজলুম ইরাকবাসী। শান্তির ক্যানবাসারদের প্রত্যক্ষ মদদে বর্বর সার্ব ক্রোটদের বুলেটের আঘাতে চিরতরে শান্তহয়ে যাচ্ছে বসনীয় মুসলমানরা। ক্ষুধার্থ সোমালী মুসলমানরা জাতিসংঘ ঘোষিত ক্রুসেডের মোকাবিলা করছে। ক্রুসেড পরিচালক বুট্রোস ঘালির লাঠিয়াল বাহিনী প্রতিদিন সোমালীদের খুন ঝরাচ্ছে বেশ আয়েশ করেই।

 

        কাপালিক ব্রাহ্মণ ও উগ্র বুদ্ধিষ্ট বাহিনীর হাতে রক্ত ঝরছে কাশ্মীর, ভারত ও আরাকানে। খৃস্টান ফিলিপিনো সরকার ফিলিপাইন ও মিন্দানওয়ের মুসলমানদের অস্তিত্ব সহ্য করতে নারাজ। সামরিক জান্তা মুসলিম নিধনে এখনোও পিছিয়ে নেই। খৃষ্টান আর্মেনিয়া আগ্রাসন চালাচ্ছে মুসলিম আজারবাইজানে। দাম্ভিক রাশিয়া আর একবার আফগান ভুমে আগ্রাসন চালাবার তোরজোর করছে। তাজিক সীমান্তে ইতিমধ্যে তার লোক লস্কর ১৯৭৯ সালের খোয়াব দেখছে।

 

        রক্ত ঝরছে ফিলিস্তিনে। মুসলিম ছদ্মবেশী ইসলামের দুশমনদের বোষাণলে পড়ে শাহাদাৎ লাভকারী আলজেরীয় মিশরীয়, ও লিবীয় মুসলমানের সংখ্যাও কম নয়।

 

        ইসলামের দুশমনদের রোষাণল থেকে আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি খানাও নিরাপদ নয়। ওরা কাদিয়ানী ফিতনা উস্কে দিয়ে, মিশনারী ও এনজিওর মাধ্যমে নিরবে আমাদের ঈমান-আকিদার ওপর ছোবল হানছে–সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গণে অবৈধ হস্তক্ষেপ করে দেশের স্থিতিশিলতা ধ্বংসের পায়তারা চালাচ্ছে। কিন্তু কেন আমাদের এই অধঃপতন, এত দুর্দশা? কেন লাখো লাখো মুসলমান মঙ্গলুম হয়ে হাহাকার করে ফিরছে? কেন মুসলমানদের এত খুন ঝরাতে হবে, এত মার খেতে হবে?

 

        ইসলাম শান্তির* ধর্ম। দুনিয়ায় শান্তি স্থাপন এবং বন্দী মানবতাকে মুক্ত করতেই ইসলামের অভ্যুদয়। আর এই মিশন নিয়েই সেকালের সত্যান্বষী দৃঢ়মনবল চেতা আরবরা দুনিয়ার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। রোম, পারাস্য ও স্পেনের সম্রাটত্রয়ের অহংকার ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে বিশ্বে স্থাপন করেছিলেন শান্তি ও মানবতার অনুপম আদর্শ ও নজীরবিহীন ইতিহাস। কিন্তু আপসোস, সেদিনের কায়সার ও কিসরার দাম্ভিক সম্রাটদের উত্তর পুরুষ ক্লিনটন, মেজর ও মিতেরারা আজ শান্তির বার্তাবাহকদের ওপর একের পর এক আঘাত হেনেই যাচ্ছে। কিন্তু হেজাজের কোন কাফেলা তৈরি হয়নি এর যোগ্য জবাব দানে। কুফুরি ও জালিম শক্তি আজ মহা শক্তিধর। জালিমের ঔদ্ধত্ব ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। মজলুমের কাফেলার কলেবর তেমনি ভারী হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ বিশ্বে শান্তি ও মানবতার হেফাজতের দায়িত্ব প্রাপ্ত মানুষেরাও বিপুল সংখ্যক বিদ্যমান।

 

জালিমের সাথে শান্তির সৈনিকদের টক্কর চিরন্তন। যুগে যুগে জালিম যতই শক্তিমান হোক সত্যের সেবকদের দৃঢ়তায় তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। তদ্রুপ আজও জালিম মার্কিনীদের মিসাইলের আঘাতে সত্যাশ্রয়ী ইরাকীরা নয়, সত্যের সৈনিকদের বাগদাদ থেকে নিক্ষিপ্ত মিসাইলের আঘাতে জালিমের প্রসাদ ধ্বংস হওয়াটাই ছিল ইতিহাসের দাবি। মোগাদিসু, রিয়াদ, কুয়েত সিটি, বাহরাইন, মোসুলে কাফির শক্তির সেনা সমাবেশ নয় বরং এসব এলাকার মুজাহিদ কাফেলার এতোদিনে জালিমদের আড্ডাখানা লণ্ডন, ওয়াশিংটন, মঙ্কো, প্যারিস, দিল্লী অবরোধ করাটাই ছিল স্বাভাবিক। যেমনি অবরোধ করেছিল মরুচারী বেদুইনরা পারস্য ও রোম সম্রাজ্যের রাজধানী মাদায়েন ও কনস্টানটিনোপোল।

মজলুম নয় আজ নব্য ফেরাউন ক্লিনটন, মেজর, কোহল, মিতেরা, নরসিমা ও ইয়েলৎসিনরাই, সত্যের সৈনিকদের ভয়ে চম্পমান হতো।

 

        এ ব্যর্থতা আমাদের। আমরা ইসলামের আদর্শ থেকে বহু যোজন দূরে অবস্থান নিয়েছি। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, দর্শন ও রাজনীতি চর্চা করে আমরা বহুত আধুনিক বনে গেছি। সভ্যতার ঝলমলে লেবাস শরীরে চাপিয়েছি। কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও রাজনীতিবীদও মুসলিম বিশ্বে এ সময় কম জন্ম নেননি। কিন্তু জালিমের ধ্বংসকারী, ও মানবতার হেফাজতকারী কোন অকুতোভয় মুজাহিদদের কাফেলা আমরা তৈরি করতে পারিনি। তাই এসময় থেকেই বার বার প্রমাণিত হয়েছে যে, আমরা বিশ্ব শান্তি রক্ষাতে দূরের কথা নিজেদের জালিমের হাত থেকে রক্ষা করতেও অক্ষম। অশিক্ষিত মেষপালক আরব বেদুঈনরা ইসলামের ছায়াতলে এসে যে বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় রেখে শান্তি ও কল্যাণময় বিশ্ব গড়েছিল আমরা তার হাজার ভাগের একভাগও প্রদর্শন করতে সক্ষম নই।

 

        আমাদের এ ব্যর্থতার একমাত্র দাওয়াই ‘ইসলাম’। ইসলামকে রক্ষার জন্য নয় বরং ইসলামকে আকড়ে ধরে বিশ্ব মানবতাকে হেফাজতের দায়িত্ব পালনে এখন প্রয়োজন একদল নির্ভীক মুজাহিদের। জীবনের ন্যায় শাহাদাৎ প্রিয় হবে এমন মনোবলের মুজাহিদের আজ বড় প্রয়োজন। এ কথা আজ প্রমাণিত সত্য যে, শুধু শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও তথাকথিত রাজনীতি চর্চা করে মুসলিম বিশ্বের অধপতন রোধ করা সম্ভব নয়। এর সাথে ইসলামের তলোয়ারের শক্তিকেও সমন্বিত করতে হবে। জালিমের ঔদ্ধ্যত্ব চূর্ণ করে মাথা উচু করে দাড়াতে হলে পুনঃরায় তলোয়ার কোষমুক্ত না করে মুসলমানদের আর গত্যন্তর নেই।

 

*****