ইহুদী চক্রান্তের কবলে মুসলিম উম্মাহ
আবদুল্লাহ আল-ফারুক
==================================================
বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি নিবন্ধ করলে দেখা যায় যে, ইসলামের উত্থানের পর থেকেই মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংস করার জন্য ইহুদী চক্রের যে অব্যাহত চক্রান্ত চলে আসছে তা ব্যাপকভাবে ও কার্যকররূপে শুরু হয় ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রা)- এর সময় থেকে। এর পুর্বেও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদীনায় হিযরত করলে ইহুদীরা ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে মুসলমানদের মদীনা থেকে উৎখাত করার জন্য মক্কার কুরাইশদের সাথে গোপনে জোটবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু রাসূল (সাঃ)- এর দূরদর্শিতার ফলে তাদের চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেলে তাদের মদীনা থেকে বহিষ্কার করে দেয়া হয়। বহিষ্কৃত হওয়ার পর ইহুদীরা বার বার রাসুল (সাঃ) ও সাহাবীদের ধ্বংস করার চক্রান্তে মেতে থাকে। তাদের সেই চক্রান্ত ধ্বংসাত্বক রূপে নিয়ে প্রথম বারের মত মুসলিম উম্মাহর বুকে আঘাত হেনেছে তৃতীয় খলিফার খেলাফতের সময়ে।
ইহুদীদের চক্রান্তের ফলে খলিফা শাহাদাত বরণ করেন, পরবর্তিতে ভ্রাতৃঘাতী ও রক্তক্ষয়ী জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফ্ফিন সংঘটিত হয়েছে। ইহুদী চক্রান্তের জের ধরেই বিশ্ব বুকে সংঘটিত হয়েছে মর্মান্তিক কারবালা ট্রাজেডী-ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের হৃদয় বিদারক ঘটনা। এই ইহুদী চক্রের নায়ক ছিলো ইয়ামেনের ইহুদী বংশোদ্ভূত নও মুসলিম ছদ্মবেশী ইহুদী পণ্ডিত আবদুল্লাহ ইবনে সাবা। এই ইহুদী কুচক্রী মুসলমানের ছদ্মবেশে মুসলিম সমাজে ভাংগন ও বিরোধ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফার আমলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার দূর্তামী ও শঠ চরিত্রের জন্য তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়নি। তৃতীয় খলিফার সময় এই লোকটি অতীতের সকল চারিত্রিক দোষ সংশোধন করেছে এমন ভান করায় খলিফা সরল বিশ্বাসে তাকে ইসলাম গ্রহণের অনুমতি দেন।
ইবনে সাবার চক্রান্তের ফলে ও তার সুক্ষ্ম প্রচারণার কারণে মুসলিম সমাজে ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস নিয়ে সৃষ্টি হয় শিয়া সম্প্রদায়। ৯৬৯ খৃষ্টাব্দে মিশরে ফাতেমীয় শিয়া রাজবংশের শাসন ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পেছনেও রয়েছে সূক্ষ্ম ইহুদী চক্রান্ত। খৃষ্টান ধর্মকে বিকৃত করে “ত্রিত্ববাদ কায়েম করার পেছনেও রয়েছে ইহুদীদের অবিস্মরণীয় (!) অবদান। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর লাশ মুবারক চুরি করে অমর্যাদা করার এক দুঃসাহসিক ব্যর্থ চক্রান্ত করেছিল পাশ্চাত্যের এই ইহুদীরাই। মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক বিপর্যয়ে এই ইহুদীরা প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছে ওই সেই থেকে।
ইসা (আঃ) কে হত্যা করার ব্যর্থ চেষ্টার জন্যও দায়ী এই ইহুদীরাই। এ কারণে পাশ্চাত্যের খৃস্টান যুব সমাজ কর্তৃক যুগে যুগে নিমূল-যজ্ঞ কাণ্ডের শিকার হয়েছে। কথিত যিশু হত্যার প্রতিশোধ স্বরূপ খৃস্টান বিশ্ব যুগ যুগ ধরে ইহুদীদের অলিতে গলিতে, রাস্তায়, বস্তিতে যেখানে পেয়েছে হত্যা করেছে। যিশু হত্যার প্রতিশোধ, মজ্জাগত শঠতা ও ধূর্তামী স্বভাব ও কুচক্রী জাতি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় খৃষ্ট পূঃ ৫৮৭ সালে বখত নছর বাদশাহ জেরুজালেমের ইহুদীদের পাইকারীভাবে হত্যা করেন। ৭০ খৃঃ রোমানরা একই কারণে ইহুদী নিধনে ব্রত হয়। উল্লেখিত ত্রিবিধ কারণ ছাড়াও ইউরোপ মহাদেশের ইংল্যাণ্ড থেকে ১২৯০ সালে, ১৩৭০ সালে বেলজিয়াম, ১৩০৬ ও ১৩৯৪ সালে দুই পর্যায়ে ফ্রান্স থেকে ১৩৮০ সালে পূর্বের যুক্ত চেকোশ্লাভাকিয়া ১৪৪৪ সালে হটাও, ১৫৪০ সালে ইতালী, ১৫১০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৫৫১ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালে হিটলার কর্তৃক জার্মানী থেকে ইহুদী সম্প্রদায়কে বহিষ্কার করা হয়।
এভাবে কুচক্রী ইহুদী সম্প্রদায় তাদের কার্যকলাপের জন্য বিশ্বের সকল জাতি কর্তৃক বিতাড়িত, নির্যাতিত, নিপীড়িন ও গণহত্যার মুখোমুখি হলেও ইউরোপের মুসলিম স্পেন ও তুর্কী সুলতানদের উদারতার কারণে তারা এই রাষ্ট্র দুটিতে শুধু নিরাপদ আশ্রয়ই পায়নি সম্মানীত বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হয়। আধুনিক যুগে যেমনি ইসরাঈল তথা ইহুদীরা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার আশ্রয়ে থেকে বিশ্বময় মানবতা বিধ্বংসী যাবতীয় কার্যাবলী চালিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত দাপটের সাথে, তখনও ইহুদীরা মুসলিম শাসকদের উদারতার সুযোগে মুসলিম সাম্রাজ্যের ছত্রছায়ায় একই ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল। ইহুদী জাতির অস্তিত্ব যখন হুমকীর সম্মুখীন, খৃষ্টানদের হত্যাযজ্ঞের ফলে পথিবী থেকে ইহুদীলের নাম নিশানা মুছে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন তখন একমাত্র যে মুসলিম জাতি তাদের আশ্রয় দিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচায় অকৃতজ্ঞ ইহুদীরা সেই মুসলিম জাতিকেই ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। যে অপচেষ্টা আজও অব্যাহত আছে।
বিশ্বের ইতিহাসে ইহুদী জাতি বিশ্বাসঘাতক ও সততা বিরোধী, সত্যকে ধ্বংস করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা ও চক্রান্তকারী হিসেবে চিহ্নিত। হযরত ইয়াকুব (আঃ)- এর প্রথমা স্ত্রীর গর্ভে দশজন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে দু’জন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিলো। প্রথমা স্ত্রীর গর্ভের দশপুত্র ঈর্ষাপরায়ণ ও প্রতিহিংসাবশত সং ভাই ও পিতার আদরের দুলাল ইউসুফ (আঃ)-কে চক্রান্ত করে মারার জন্য কুপে নিক্ষেপ করেছিল। পরে তারা তার জামা কাপড় পশুর রক্তে রঞ্জিত করে পিতার নিকট হাজির করে বলেছিল যে, ইউসুফ (আঃ) কে বাঘে খেয়েছে। আপন ভাইয়ের সাথে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকারী ইয়াকুব (আঃ) এর এই দশ পুত্রের পরবর্তী বংশধররাই ইতিহাসে ইসরাঈল নামে পরিচিত।
এই ইসরাইলী ও পরে ইহুদী নামে পরিচিত সম্প্রদায় তাদেরকে সত্যের পথে আহবান করার জন্য যে কজন নবী তাদের মধ্যে আগমন করেছিলেন তাদের সকলের নির্দেশ লংঘন করে তাদের সাথে গোড়ামী, বেয়াদপী, মিথ্যা অপবাদ প্রদান করে এবং তাদের নিষ্কলুষ চরিত্রে কালিমা লেপন করেছিল। ইতিহাসে এরাই কয়েক হাজার নবীকে হত্যার জন্য দায়ী। ইহুদীরা ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধির জন্য তাদের আসমানী কিতাব তাওরাতের ইচ্ছেমত পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটিয়ে স্বার্থ উদ্ধার ও ধন সম্পদ অর্জনের হাতিয়ারে পরিণত করে। রাসুল (সাঃ)-এর নবুয়াত লাভের পর দৈনন্দিন এদের শঠতা, ধূর্ততা ও মোনাফেকী চরিত্রের রূপ সম্পর্কে ওহী নাজিল হতে থাকলে ইহুদীরা তখন মুসলমানদের কঠিন শত্রুতে পরিণত হয়। তাদের ইসলামের - দাওয়াত জানালে তারা প্রত্যুত্তরে গোড়ামী করে বলে, “এতো সেই জিবরীল যে চিরদিন আমাদের বিরুদ্ধে ওহী বহন করে এনেছে। তারা ইসলাম গ্রহণ না করে বরং ইসলামকে ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। ইসলামের অভূদায় থেকে ইহুদীদের ইসলামের সাথে সেই যে শক্রতার সূচনা, মুসলমানদের ধ্বংস করার চক্রান্তের জাল বুনোন শুরু তা আর কোন দিন থামেনি, বরং যুগে যুগে ইহুদী চক্রান্ত আরও শানিত হয়েছে, নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে।
তৃতীয় খলিফার মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনার পর ইবনে সাবার ইহুদি চক্রান্ত আংশিক সাফল্য লাভ করলেও ইবনে সাবা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। ভয়ঙ্কর জ্ঞানের অধিকারী এই পণ্ডিত ভাল করেই জানতো যে, তার ষড়যন্ত্রের ফলে মুসলিম জাতির যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে একদিন না একদিন তারা এর প্রতিশোধ নিবেই। তার ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উৎঘাটিত হলে মুসলমানরা সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে তখনই আবার ঐক্যবদ্ধ হবে। সুতরাং সে মুসলিম উম্মাহকে অনৈক্য, বিভ্রান্তি ও বিভেদের মধ্যে নিমজ্জিত রাখার জন্য এক দীর্ঘ মেয়াদী পরিল্পনা নেয়। একদল দক্ষ ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত প্রচারক মুসলিম বিশ্বের আনাচে কানাচে পাঠিয়ে দেয়। এসব প্রচারক দল কুরআনহাদীসের ভুল ব্যাখ্যা ও ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসকে বিকৃত করে নওমুসলিমদের নিকট উপস্থাপন করতে থাকে। নও মুসলমানরা প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবে সহজেই এসব প্রতারকদের প্রতারণার শিকার হল।
ফলে সেসব প্রচারক যে স্থানে ইসলামকে যেভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছে সেখানে সেই আকীদা-বিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন সম্প্রদায়। এভাবেই সৃষ্টি হয় শিয়া, খারেজী, ইসমাঈলী, বাহাঈ প্রভৃতি দল-উপদল-সম্প্রদায়ের। এদের মন-মজ্জায় এমন উগ্র চিন্তা চেতনার অনুপ্রবেশ ঘটান হল যে, এসব ভ্রান্ত বিশ্বাসের লোকজন নিজেদেরকে প্রকৃত মুসলমান মনে করতে লাগল এবং অন্যান্যদের মোনাফেক, কাফের এবং তাদের ছল-চাতুরী, চক্রান্ত বা যে প্রকারেই হোক হত্যা করা পূণ্যের কাজ বলে মনে করতে লাগল।
এই ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী ও সাবাপন্থী হিসেবে পরিচিতদের হাতে ইসলামের তৃতীয় ও চতুর্থ খলিফা শাহাদাত বরণ করেছেন, কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া যুগের পর যুগ মুসলিম বিশ্বে গৃহযুদ্ধ, ভ্রাতৃঘাতী লড়াই, শাসক উৎখাতে প্রসাদ ষড়যন্ত্র, বহিঃশক্তির মুসলিম বিশ্বে হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করার জন্য বিভীষণ তৈরি এই সাবাপন্থীরাই সাধন করেছে।
১২৫৮ সালে মধ্য যুগের ত্রাস বর্বর মোঙ্গলদের হাতে মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষমতা খর্ব ও ৬০০ বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র বাগদাদ সহ মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ বিশ্বখ্যাত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রভূমি সমরকন্দ, বুখারা, খোরাসান, খাওয়ারিজম, রয়, আজারবাইজান, হামদান, সরবল, শিরওয়ান, কসবীন, তাবরীজ, মরগান, মবাগ, আরবল, তিবরিজ, বলখ, নিশাপুর, হিরাত, কুম, মশুল প্রভৃতি ধ্বংস স্তূপে পরিণত হওয়া ও লক্ষ লক্ষ্য নারী পুরুষ ও শিশু হত্যার শিকার হওয়ার পেছনেও সক্রিয় ছিল সাবাপন্থীদের চক্রান্ত। খলীফা মুসতাসিম বিল্লাহ এর মন্ত্রী সাবাপন্থী শিয়া ইবনুল আলকামীর বিশ্বাসঘাতকতার কারণে কুখ্যাত হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করে শহরটিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। দুর্ধর্ষ চেঙ্গিস খান বা হালাকু খান বর্বরতা ও ধ্বংস তাণ্ডব চালিয়ে পুরো এশিয়াকে বিধ্বস্থ ও পদানত করলেও মুসলমানদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্রাজ্যে আক্রমণ পরিচালনা থেকে বিরত ছিলো। কিন্তু খলিফার শিয়ামন্ত্রীর বিশ্বাসঘতমলুক আমন্ত্রণ ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি প্রদানের পর হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করে, মন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতার ফলে খলিফা নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন। বাগদাদ নগরীতে ৪০দিন পর্যন্ত চালানো হয় হত্যা, লুণ্ঠন ও ধ্বংস তাণ্ডব।
পাশ্চাত্যের খৃষ্টানদের কর্তৃক পরিচালিত ক্রুসেড কালীন সময়ে ক্রুসেডার বাহিনীকে প্যালেস্টাইন প্রবেশ করার পথ প্রদর্শক ছিলো প্যালেস্টাইনী ইহুদীরা। একই সময়ে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অঞ্চল মিশরে সাবাপন্থীদের চক্রান্তের ফলে প্রতিষ্ঠিত হয় সুন্নী মুসলিম বিরোধী উগ্রপন্থী ফাতেমীয় শিয়াদের শাসন। ক্রুসেডার বাহিনী যখন একেরপর এক মুসলিম শহর জয় করে লুণ্ঠন, ধ্বংস ও গণহত্যা চালিয়ে জেরুজালেমের উপকণ্ঠে হাজির হয় তখন তাদের প্রতিরোধে মুসলিম শক্তির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত মিশরের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের এই মহা দুর্যোগের সময় সাবাপন্থী শিয়াদের কারণে মিশরের কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। জেরুজালেমের পতনের দৃশ্য মিশরের শাসকগোষ্ঠী অত্যন্ত নিরুত্তাপ চিত্তে উপভোগ করে।
এভাবে ইবনে সাবা মুসলিম উম্মাহর বুকে সূক্ষ্মভাবে যে ধ্বংস ও বিভেদের বীজ রোপন করেছিল তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়ে আজ প্রকাণ্ড মাহিরুহে পরিণত হয়েছে। এর পরও ইহুদী চক্রান্ত থেমে নেই। মুসলিম উম্মাহ যাতে কখনো এই বিভেদ, হানাহানি থেকে ফুরসত না পায় সে জন্য নিত্য নতুন ইহুদী চক্রান্ত উদ্ভাবিত হচ্ছে। মুসলিম উম্মাহ যাতে কখনো আর ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে সেজন্য গঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ইহুদী সংগঠন ফি ম্যাসন, ওয়াল্ড জিওনিষ্ট অর্গানাইজেশন। মুসলিম যুবশক্তিকে বিভ্রান্ত করার জন্য মুসলিম দেশ সমূহে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে লায়ন, লিও প্রভৃতি সেবার ছদ্মবেশধারী ইহুদী ক্লাব, এনজিও, ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান, কোম্পানী। মুসলিম যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রেস আর প্রচারণার হাতিয়ারকে ব্যবহার করছে অত্যন্ত সুকৌশলে। কোন দেশে কোন লক্ষ্যে বিপ্লব ঘটানোর পূর্বশর্ত হলো মানুষের মস্তিষ্কে বিপ্লব ঘটানো। আর এই বিপ্লব ঘটানোর প্রধান হাতিয়ার হল সাহিত্য। এজন্য আধুনিক যুগে বিশ্ব মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য ইহুদী কবি, লেখকরা চরিত্র ধ্বংসকারী সাহিত্য রচনায় অধিক মনোযোগী হয়েছে। বিশ্বের অত্যাধুনিক ইলেকট্রোনিক প্রচার মিডিয়া স্থাপন করে অনর্গল মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ব ও প্রভূত্ব স্থাপন করা ইহুদীবাদের মূল কথা। আর এই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয় সাধনই ইহুদীদের মূল তৎপরতা। এজন্য ইউরোপে যখন পাদ্রী ও প্রজাসাধারণের মধ্যে ধর্ম প্রভাবিত শাসন ও ধর্মের প্রভাবহীন শাসন ব্যবস্থা নিয়ে প্রচণ্ড রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিল তখন জেকব, হলিয়ক, ব্রেডলাক, সাউথ ওয়েল, থমাস প্রমুখ ইহুদী দার্শনিকেরা নাস্তিক্যবাদী সেকুলারিজমের মতবাদ পেশ করেন। পাদ্রীদের শোষণে অতিষ্ট জনগণ এ মতবাদ মূহূর্তের মধ্যে লুফে নেয়। পরবর্তীতে ইহুদী প্রচার মাধ্যমের প্রচারণার বদৌলতে সেকুলারিজম, ভূখণ্ড ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র হয়ে দাড়ায় বিশ্বের মহান (!) শাসন ব্যবস্থা। মুসলিম বিশ্বের নৈতিকভাবে বিভ্রান্ত মুসলমানদের নাকের ডগায় ইহুদীরা এই মহান শাসন ব্যবস্থার মূলো ঝুলিয়ে ধরে তাদের প্রলুব্ধ করে। ইহুদী ও এই ভ্রষ্ট মুসলমানদের প্রচার প্রোপাগাণ্ডার সয়লাবে মুসলিম বিশ্বে আজ সেকুলারিজম ও গণতন্ত্রের জয়ধ্বনি হচ্ছে। এককালের মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র তুরুষ্ক থেকেই এই তথাকথিত নবজাগরণের উদ্বোধন করা হয়।
১৬৬৬ খৃস্টাব্দে গ্রীসের স্মার্নার অধিবাসী শারতে শিবী নামক এক ইহুদী নিজেকে “মসিহ মউদ" দাবী করলে বহু ইহুদী তার ভক্তে পরিণত হয়। এই প্রতারক সিরিয়া ও বায়তুল মুকাদ্দাস পরিভ্রমণ করে ইস্তাম্বুল পৌছলে তুর্কী সুলতান মুহাম্মদ তাকে গ্রেফতার করেন। পরে এই শিৰী ভক্তদল সহ মুসলিম ঐক্যের প্রতীক তুর্কী খেলাফতকে ধ্বংস করার কুমতলবে মুসলমান বনে গিয়ে তুর্কী মুসলমানদের সাথে মিশে যায়। এই কুচক্রীরা মুসলমানদের আশ্রয়ে থেকে খিলাফত ধ্বংস করার জন্য "ঐক্য ও প্রগতি সংস্থা” নামে একটি সংগঠন কায়েম করে বহু তুর্কী যুবককে বিভ্রান্ত করে। এদের তুর্কী সালতানাত উত্থাতের লক্ষ্যে প্ররোচিত করা হয়। ইতিহাসে এই কুচত্রিরা 'দুনমা' মুসলমান হিসেবে পরিচিত। কালক্রমে এই সংগঠন জোরদার হতে থাকে এবং 'দুনমা' চক্রান্তকারীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর পরাজিত তুর্কী শক্তির যখন নিবু নিবু অবস্থা ঠিক তখনই এই ‘দুনমা’দের পরিচালিত 'ঐক্য ও প্রগতি সংস্থা ' মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সর্ব শক্তি নিয়ে হাজার বছরের ইসলামের ঐক্যের প্রতীক তুর্কী খেলাফতকে বিলুপ্ত করার জন্য বিষাক্ত ছোবল হানে। উল্লেখ্য তুর্কী খেলাফতকে ধ্বংস করার চক্রান্তে যারা প্রথম সারীতে ছিলো তাদের মধ্যে ডঃ নাজেম, ফজী পাশা, তালাত পাশা, সপ্তম আকেলী, মাহাত পাশা প্রমুখ সকলেই ছিল এই 'দুনমা' সম্প্রদায়ের লোক। কামাল পাশাকে খেলাফত কাঠামো বাতিল করে পাশ্চাত্যের ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ আমদানীতে এরাই ইন্ধন যুগিয়েছিল।
ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে ইহুদীদের শত্রুতা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। মুসলিম বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে প্রতিভাবান ও ইসলাম দরদী মুসলিম নেতাদের হত্যা উদিয়মান মুসলিম শক্তিকে ধ্বংস করা ও ইসলামী আন্দোলনকারীদের দমন করার জন্য এরা পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের মদদে মধ্য প্রাচ্যে কায়েম করেছে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈল ও এর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে হাজারো সমস্যা সৃষ্টি ও তা জিইয়ে রেখে আরব মুসলমানদের উত্থানকে ঠেকিয়ে রাখতে চাইছে। আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে এই রাষ্ট্রটি চারবার আরবদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে বিস্তৃর্ণ আরব ভূমি দখল করেছে। মিশর, উগান্ডা, তিউনিসিয়া, জর্ডান, লেবাননে হাজারো সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। ইরাকের পারমানবিক প্রকল্পে ১৯৮১ সালে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয় প্রতিদ্বন্দ্বীর উথানের আশংকায়। মুসলিম জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা শাহ ফয়সালকে হত্যার পেছনে রয়েছে ইহুদী চক্রান্ত। ইহুদী সংস্থা মোসাদ সারা বিশ্বে মুসলমানদের হত্যা করার জন্য মুসলিম বিরোধী শক্তিগুলোকে ট্রেনিং দিচ্ছে। কাশ্মীরে মুজাহিদ দমনে মোসাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে এবং ভারতীয় বাহিনীকে ট্রেনিং দিচ্ছে। শ্রীলংকার তালিম বিদ্রোহীদের তামিল মুসলমানদের হত্যার ইন্ধন যোগাচ্ছে তাদের ট্রেনিং দাতা মোসাদ। বার্মায় রোহিঙ্গা বিতাড়নে বর্মীবাহিনীকে ট্রেনিং দিচ্ছে মোসাদ। বসনিয়ায় মুসলিমদের হত্যার জন্য সার্বদের ট্রেনিং দেয়াসহ তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছে এই মোসাদের গোয়েন্দরা। যেখানেই ইসলাম বিদ্রোধী আন্দোলন গড়ে উঠে ইহুদীদের চরেরা সেখানেই উপস্থিত হচ্ছে। ইদানিং, এই দেশে ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের ইসলামী আন্দোলন ঠেকানোর কসরতের জন্য যে উগ্রবাদী সংগঠনটি গজিয়ে উঠেছে তার জন্মদিনেও একজন মার্কিন ইহুদী টমাস টিকিটিং এটর্নীর আইডেন্টি নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
গোটা মুসলিম বিশ্বে আজ ইহুদী চক্রান্তের জাল ছড়িয়ে পড়েছে। বর্ণবাদ, জাতীয়তাবাদ, আরববাদ প্রভৃতি বিভ্রান্তির মাধ্যমে তারা মুসলিম বিশ্বকে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যকে বিনষ্ট করে এবং তা অব্যাহত রাখার জন্য - হাজারো চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে হবে। পৃথিবী। আজ দুটি দলে বিভক্ত। এক হিযবুল্লাহ আর অন্যটি হিযবুশ শয়তান। হিযবুশ শয়তান সর্বদাই সুযোগ সন্ধানী এবং ঈমানদারদের ধ্বংস করতে তৎপর। আধুনিক ইহুদী ও খৃস্টান শক্তি হিযবুশ শয়তানেরই অন্তর্ভুক্ত। এদের হাত থেকে ঈমান, ইসলামকে রক্ষা করতে হলে হিযবুল্লাকে অবশ্যই প্রতিরোধের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। ঈমানদার ও শয়তান কখনো এক পথে চলতে পারে না; তাদের মধ্যে কোন সমঝোতা হতে পারে না। ধ্বংস অথবা বশ্যতাই হিযবুশ শয়তানের ভাগ্যের অখণ্ডনীয় লেখা। আল্লাহ ঈমানদারদের হাতেই তাদের শাস্তি দিবেন।