আমাদের দেশের চালচিত্র
রুখতেই হবে এই চারিত্রিক সন্ত্রাস
ফারুক হোসাইন খান
=========================================================
আজকাল প্রায়ই পত্রিকার পাতায় বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানী, বেসরকারী সংস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চাকুরীতে নিয়ােগ বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়। তবে টাইপিষ্ট, স্টেনােগ্রাফার, টেলিফোন অপারেটর, প্রাইভেট সেক্রেটারী এবং অভ্যর্থনাকারী পদে মহিলা কর্মী নিয়ােগের ক্ষেত্রে প্রায়ই বিশেষ একটা শর্ত দেয়া হয়। পদটি উল্লেখ করে তার যােগ্যতার ঘরে ছাপার অক্ষরে লেখা থাকে, প্রার্থীণীকে অবশ্যই সুন্দরী, স্মার্ট এবং অবিবাহিত হতে হবে। কোথাও একটু হেরফের করেও উল্লেখ করা হয়, “সুন্দরী, স্মার্ট, স্বাস্থ্যবান এবং অবিবাহিতা প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।” যাই হােক, উভয় বাক্যের সারমর্ম এক, অভিন্ন। এছাড়া কিছু সংখ্যক সংস্থা মহিলা কর্মী নিয়ােগ বিজ্ঞপ্তিতে এই শর্ত উল্লেখ না করেও প্রার্থী নির্বাচনের সময় ঠিকই সুন্দরী, স্মার্ট ও অবিবাহিতা প্রার্থীণীকে সেলেক্ট করেন।
একজন কর্মী হােক সে পুরুষ বা নারী-সে তার দায়িত্ব পালন করে তার শিক্ষালব্ধ জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা এবং সক্ষম অঙ্গ-প্রতঙ্গ যেমন হাত-পায়ের সাহায্য। একজন টাইপিষ্ট টাইপ করবে হাতের সাহায্যে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যা সে পূর্বে অর্জন করেছে। একজন টেলিফোন অপারেটরের দায়িত্ব পালনে প্রয়ােজন হবে কণ্ঠ, তার হাত এবং গুছিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলার ক্ষমতা, ভাষাজ্ঞান। একজন পি,এর দরকার হবে অফিসের কর্মকর্তার দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করার জন্য প্রশাসনিক বাস্তব অভিজ্ঞতা। এসব অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় একাডেমিক শিক্ষা এবং দায়িত্ব সম্পর্কে বিশেষ ট্রেনিং কোর্স করার মাধ্যমে।
সুন্দর স্বাস্থ্য, চোখ ঝলসানাে রূপ নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেই কেউ এগুলি অর্জন করতে পারে না। আজ পর্যন্ত আমরা কেউ শুনিনি যে, বিশ্বের সকল বিশ্ব সুন্দরী বা স্মার্ট ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারীণী নারীরাই কেবল শিক্ষা, মেধা, প্রতিভা ও কর্মক্ষমতার শীর্ষে উপনীত হয়েছে। এই দেশের কথাই ধরা যাক-প্রতিবৎসর এস, এস, সি, এইচ, এস, সি, ডিগ্রী ও অন্যান্য পরীক্ষাসমূহে যেসব মেয়েরা মেধা তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করে তাদের কতজন সুন্দরী, স্মার্ট ও স্বাস্থ্যবান? মেধা, প্রতিভা বা কারিগরি জ্ঞান অর্জনের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে কি?
আমরা জানি, প্রশাসনের কর্মদক্ষতা, শৃঙ্খলা এবং উন্নত সেবাকে নিশ্চিত করার জন্য প্রয়ােজন উচ্চ শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, চরিত্রবান, সৎ মানসিকতা সম্পন্ন কর্মকর্তা ও কর্মীর। এক জন প্রার্থী নির্বাচনের সময় দেখতে হয়, প্রার্থীর সনদপত্র, প্রশংসাপত্র, তার কর্মক্ষমতা, দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা। যাচাই করতে হয় লােকটি সৎ কিনা, চরিত্রবান কিনা, দেশ প্রেমিক কিনা। প্রার্থীর টাকা পয়সা, গাড়ী-বাড়ী ও ক্ষমতার প্রতি মােহ বা লােভ আছে কিনা। প্রার্থী দায়িত্ব পালনের সময় ব্যক্তি স্বার্থকে প্রধান্য দেবে কিনা ইত্যাদি। যেহেতু এসব গুণের সাথে স্বাস্থ্য, চেহারা-লাবণ্য ও অবিবাহিতা হওয়ার কোনই সম্পর্ক নেই। তাই এগুলি প্রার্থী নির্বাচনের সময় কোন বিবেচ্য বিষয়ও নয়। অবিবাহিতা, সুন্দরী, স্বাস্থ্যবতী মেয়েই যে কেবল সকল প্রতিভা, বুদ্ধি, শিক্ষা ও দক্ষতার অধিকারীণী হবে এমন ‘আজগুবি' কথা কেউ কি কস্মিন কালেও শুনেছেন? মেয়েদের বিবাহ হলে, চেহারা সুন্দর না হলে, ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী না হলে সে উচ্চ শিক্ষিত হতে পারবে না, তার কোন জ্ঞান- বুদ্ধি থাকবে না, সে প্রশাসনিক কোন দায়িত্ব পালনের যােগ্যতা সম্পন্ন নয়, এটা কি কারাে বিশ্বাস হয়? অথচ তথাকথিত কর্মকর্তারা মহিলা প্রার্থী নিয়ােগের বেলায় এই শর্ত আরােপ করে এটাকে বিশ্বাসযােগ্য বলে চালিয়ে নিতে চাচ্ছে।' আমাদের সমাজে বিবাহে ইচ্ছুক বা বয়সপ্রাপ্ত যুবকরা আগামী দিনের সংসারকে সুখী-সমৃদ্ধ এবং দাম্পত্য জীবনকে মধুর করার জন্য কনে নির্বাচনের সময় বিশেষ কতগুলি গুণের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। প্রথমেই দেখেন হবু বধুটি সুন্দরী কিনা, তার স্বাস্থ্য ভাল কিনা, কণ্ঠস্বর মিষ্টি ও সুরেলা কিনা ।
ইদানিং নৈতিক অবক্ষয় দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন ছেলে বা তার অভিভাবকরা বিশেষভাবে খোজ নেন, মেয়েটি চরিত্রবান কিনা। অর্থাৎ মেয়েটি স্কুল-কলেজে লেখাপড়ার সময় কোন অবৈধ তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছিল কিনা বা গােপনে কোন ছেলেকে বিবাহ করে কুমারীত্ব ঘুছিয়েছে নাকি। মােটকথা, তারা অবিবাহিতা, সুন্দরী, চরিত্রবান, স্বাস্থ্যবতী মেয়ে পেতে চান। মেয়েটি লেখাপড়ায় তেমন একটা ভালাে বা সাংসারিক কাজ কর্মে বেশী দক্ষ না হলেও মানিয়ে নেন এবং চূড়ান্ত নির্বাচন করেন। কিন্তু প্রশাসনের কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কনে নির্বাচনের সময় যে যােগ্যতা ও গুণের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয় তাদেরও সেই সব গুণের প্রতিই বিশেষ এই “অবাঞ্ছিত আগ্রহ" দেখাবার হেতু কি? প্রশাসনের কর্মী নিয়ােগ আর সংসার গড়ার জন্যে কনে নির্বাচন করা কি এক জিনিস, একই উদ্দেশ্য? মেয়েদের দায়িত্ব পালনের প্রয়ােজনীয় যােগ্যতার বাইরের গুণাবলী সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করার মানে এই নয়কি, এরা চাকুরীর সাথে সাথে প্রতিষ্ঠান বা কর্মকর্তাদের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে? আসলে পাশ্চাত্য সভ্যতার জৌলুস, আধুনিকতা ও প্রগতির ভুত চেপে বসেছে আমাদের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণীর কর্তকর্তাদের ঘাড়ে।
ওরা অবাধ যৌনাচার, বিলাসিতা, বেহায়াপনায় নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে চরিত্রকে হারিয়েছে। বিকৃত যৌনাচার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। নারী মাত্রই ওরা ওদের বিকৃত লালসা পুরনের যন্ত্র মনে করে। নারী দেখলেই ওদের বিশেষ ক্লিপুটা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। কে বােন; আর কে মাতৃস্থানীয় এবং শ্রদ্ধা-সম্মান পাবার যােগ্য তার ভেদাভেদ ওরা জানে না। সবাইকে ওরা মনে করে লালসা পূরণের হাতিয়ার মাত্র। এরা চায় না নারী তার চরিত্র সংরক্ষণে যত্নবান হােক, সে সতী-সাধ্বী থেকে সংসার গড়ুক। বরং এরা চায় তাদের বিকৃত যৌনাচার তৃপ্ত করতে পােশাকের ন্যায় অহরহ সঙ্গিনী পাল্টানাের ব্যবস্থা। উঠতে, বসতে, গাড়ীতে, বাড়ীতে সর্বত্রই সুন্দরী নারীরা তার আশে পাশে কল-গুঞ্জন করুক, সঙ্গ দান করুক এটাই এরা চায় । এজন্যই এরা নারীদের শুনায় নারী স্বাধীনতার' “গল্প।” নারীদের সংসার ছেড়ে, সকল নৈতিকতার বাধা বন্ধন ছুড়ে ফেলে পুরুষের পাশে দাড়াতে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার জন্য হাতছানি দিয়ে ডাকে। ওরা চায় নারী সকল লাজ-লজ্জার দেয়াল তুলে দিয়ে নিজেকে কামুক পুরুষদের মাঝে উজাড় করে দিক, চরিত্রকে বিসর্জন দিক। প্রগতির নামে, নারী স্বাধীনতার নামে ওরা নারীদের সর্বদা নাগালের মধ্যে পাবার জন্য বিশেষ বিশেষ ‘পদের ব্যবস্থা করে রেখেছে।
অফিস, আদালতে এবং অন্য কর্মস্থলে দিনের বেশীরভাগ সময় কেটে যায়। এ সমস্ত স্থানে তাে, আর তাদের স্ত্রীরা সঙ্গ দিতে পারে না। তাই এই সময়টাও আনন্দঘন করে রাখার জন্য টাইপিষ্ট, স্টেনােগ্রাফার, প্রাইভেট সেক্রেটারী, অপারেটর প্রভৃতি পদে সুন্দরী, মার্জিতা, মনােলােভা ফিগারের এবং অবিবাহিতা নারীকে নিয়ােগ করা হচ্ছে। যদি তাই না হবে তবে এসব পদে কি পুরুষরা কাজ করতে সমর্থ নয়? কেন আমাদের শুনতে হয়, প্রায়ই পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এসব পদে কর্মরত মহিলাদের বসের মন যুগিয়ে চলা তথা তাদের মনােরঞ্জনে নির্দ্বিধায় সাথী হওয়াই প্রমােশন পাওয়ার অন্যতম শর্ত? বসের ইচ্ছার ব্যতিক্রম করলে তাদের চাকুরী অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এই অভিযােগ? কেন বসদের গাড়ীতে, বাড়ীতে, পার্টিতে তাদের সঙ্গী হতে হয়, এমনকি বসের বিদেশে সফরে যাওয়ার সময়ও একটি অবিবাহিতা নারীকে একাকী অসহায়ভাবে সঙ্গদিতে হয়? কর্মকর্তারা যদি এ লেখায় তাদের মর্যাদা, সম্মানহানীর কোন গন্ধ খুঁজে পান তবে আপনারাই বলুন, জাতির কোন উন্নতি, কোন সেবা কর্মটি সম্পাদনের জন্য মহিলা কর্মী নিয়ােগের সময় অবিবাহিতা, সুন্দরী, স্বাস্থ্যবতী শর্ত জুড়ে দেন? মহিলাটির ফিগার ভালাে না খারাপ সেদিকে নজর দেন কোন সদুদ্দেশ্যে? বলুন, যারা আপনার পাশের টেবিল বা অফিস রুমের সংলগ্ন স্থানে বসে দায়িত্ব পালন করে শুধুমাত্র তাদের নিয়ােগের বেলায় সুন্দরী যৌবনবতী নারী খোঁজার প্রবণতা কেন? প্রগতির নাম করে কেন তাদের সব সময় শশা গার্ল রূপে রাখতে চান? আক্ষেপ, নারীর ইজ্জত, আব্রু, মূল্যবান চরিত্র নিয়ে আজ জঘন্য খেলা চলছে। তাদের ভােগ্যপণ্যে পরিণত করছে একশ্রেণীর মানবরূপী শিক্ষিত পশু।
নারী সমাজের ওপর চালাচ্ছে তারা পৈশাচিক নির্যাতন। কিন্তু নারী স্বাধীনতার প্রবক্তা, আন্দোলনকারী, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যাদের ময়দান গরম করতে দেখা যায় তারা এসব ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ। নারীকে চাকুরীর স্বার্থে, অর্থনীতির স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখার বিমিনয়ে ইজ্জত, সতীত্ব লুটিয়ে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে, এটা কি নারী নির্যাতন নয়?নাকি যাতে ইজ্জত রক্ষা না হয়, যত সহজে তার ইজ্জত সতীত্ব বিলাতে পারে সে ব্যবস্থা করাই তথাকথিত নারী স্বাধীনতার প্রবক্তাদের উদ্দেশ্য? এই অপতৎপরতা রুখতে হলে নারীর ইজ্জত রক্ষা করার জন্য সচেতন মুসলমানকেই সােচ্চার হতে হবে। এ জাতির প্রতিটি নারী আমাদের বােন, আমাদের মাতৃতুল্য শ্রদ্ধা পাবার যােগ্য। তাদের সতীত্বের নিরাপত্তা বিধান আমাদেরই অন্যতম দায়িত্ব। ইসলামে প্রতিটি মজলুম অত্যাচারী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মােচনের জন্য প্রতিটি মুসলমানকে তাগিদ দিয়েছে। প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে জিহাদের বিধান দেয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে, মসজিদ, মাদ্রাসা ও পরিবারের মধ্যে। সীমিত কিছু তৎপরতা চালানাের নামই ইসলাম নয়, পরকালে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি নয়। মসজিদে নামাজ পড়ে, মাদ্রাসায় শিক্ষালাভ করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। মানুষকে সৎ পথ দেখানাে, জুলুম, নির্যাতন থেকে রক্ষা করার মধ্যেও পূণ্য নিহিত রয়েছে। মসজিদ শুধু নামাজ পড়ার জন্যই নয় । মসজিদ সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ও সকল অন্যায় জুলুমের মূল উৎপাটনের দীক্ষা নেয়ার স্থানও বটে। মসজিদের এই মিশনকে সফল করার মর্দে মুজাহিদের কাফেলা আজ কোথায়?
পর্দার অন্তরালে আর না থেকে ঝাপিয়ে পড়ে তােমাদের বিস্তৃর্ণ কর্মক্ষেত্রে। দু'পদ বিশিষ্ট কিছু মানবরূপী পশু আজ আমাদের মা-বােনদের অসহায়ত্বের সুযােগ নিয়ে চারিত্রিক সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। ওদের এই সন্ত্রাস রুখতেই হবে।
*****