JustPaste.it
User avatar
Jago Mujahid @JagoMujahid · Nov 8, 2021

সম্পাদকীয়

এনজিও আগ্রাসনের মুখে আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব বিপন্ন প্রায় (!) সচেতন হওয়ার এখুনি সময়

===================================================================

 

        বিশ্বের প্রধান সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। এই দেশটির শাসকগােষ্ঠী এখন মহাদুর্ভাবনায় পড়ে গেছেন। সাম্প্রতিক নির্বাচনে এনজিওদের ভুক্তভােগী, ৫০ % প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। এনজিওদের এই ধামাধরা প্রার্থীরা এখন এনজিওদের প্লান-প্রােগ্রাম অনুযায়ী দেশ শাসন করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। ফলে রাষ্ট্রনায়ক সূহার্তোর মাথায় হাত। এতদিনে তার চৈতন্যোদয় হয়েছে। তিনি এখন পরিষ্কার উপলব্ধি করছেন যে, প্রধান মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বাহ্যিক দৃষ্টিতে অক্ষুন্ন থাকলেও রাষ্ট্র পরিচালনার কলকাঠি চলে গেছে বিদেশী এনজিওদের হাতে। ইন্দোনেশিয়া এখন অর্থ সম্রাজ্যবাদ-‘এনজিও আগ্রাসনের’ অন্যতম শিকার।

 

        ইন্দোনেশিয়ার এই পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে দ্বিতীয় প্রধান মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশও। স্বাধীনতা লাভের পরক্ষণেই এনজিওরা এদেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য সেবার নাম করে ছুটে আসে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এরা বিভিন্ন এনজিওর সাইনবাের্ডের আড়ালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এদের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেদের মধ্যে কর্মক্ষেত্র ভাগ করে নেয়। এই নীল-নকশা অনুযায়ী ব্রাক টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, গাজিপুরসহ প্রায় ২৪ টি জেলায় ব্যাপকভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সমগ্র উত্তর বঙ্গে কার্যক্রম চালাচ্ছে রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস, দ্বীপশিখা, এম.সি.সি, কারিতাস! খুলনা যশােরসহ দক্ষিণ বঙ্গে কার্যক্রম চালাচ্ছে দি সালভেশন আমি। পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, দিনাজপুরে উপজাতীয়দের মধ্যে কাজ করছে ওয়াল্ড ভিশন।

 

        এছাড়াও সহযোগী হিসেবে আশা, এডাব, প্রশিকা, কেয়ারসহ ৬৫০ টি ছােট বড় এনজিও বিভিন্ন জেলায় তৎপরতা চালাচ্ছে। এভাবে আমাদের অলক্ষ্যে দেশকে এনজিওরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনে বহু এনজিও ইতিমধ্যে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করেছে। ওরা একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করে যাচ্ছে। অধিকাংশ দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকা তাদের নুন খেয়ে গুণগান গাইতে শুরু করে দিয়েছে। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, গবেষক, শিক্ষক সংস্কৃতিসেবীদের ‘বিবেক’ অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সরকারী বাজেটের ৭৯ % শতাংশ এই এনজিওদের মুরুব্বী দাতাগােষ্ঠী সাহায্য হিসেবে যােগান দেয় বলে সরকারও এনজিওদের দৌরাত্বের কাছে মাথা নুইয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি সর্বত্রই এনজিওদের ভয়াবহ আগ্রাসন চলছে। ব্র্যাক নামক এনজিওর ৩৪ টি কার্যক্রমের শিক্ষা ব্যতীত ৩৩ টি বাণিজ্যিক। তার ৩৩ টি কার্যক্রমের মাধ্যমে চুটিয়ে ব্যবসা করছে আর যৎকিঞ্চিত ব্যয় করছে শিক্ষাখাতে তাও তাদের স্বার্থেই। এই শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে অবুঝ শিশুদের (যাদের ৭০% মেয়ে) ব্রেন ওয়াশ করা হয়, নাস্তিক্যবাদ অথবা খৃস্টধর্মের শিক্ষা দেয়া হয়।

 

        তাদের বােঝানাে হয়-পর্দা নারী স্বাধীনতার প্রধান বাধা, উন্নতির অন্তরায়, এদেশের মৌলবাদী মােল্লারাই দেশের উন্নতির প্রধান অন্তরায়, তারা জাতির অগ্রগতির প্রধান শত্রু। অন্যান্য এনজিওর শিক্ষা কার্যক্রমেরও সারাংশ এটাই। এনজিও গােষ্ঠী তাদের ষড়যন্ত্রকে আড়াল করার জন্য ' সেবার ' সাইনবাের্ড ব্যবহার করে। আমাদের সেবা করার জন্য তাদের এত দরদ কিন্তু দেশের দ্রুত উন্নতির জন্য উৎপাদনশীল খাতে তারা অর্থ সাহায্য করছে না। কলকারখানা প্রতিষ্ঠা, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তি আহরণ, খনিজ সম্পদ উত্তোলন, শ্রমিকদের উন্নত ট্রেনিং দিয়ে তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, উন্নয়ন কার্যক্রম চালু বা তাতে সাহায্য-সহায়তা করছে না। দেশে যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতি এবং উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ঔষধের অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা মুখ থুবরে পড়েছে। দেশের এ প্রধান সমস্যা সমাধানে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। অথচ দেশের দ্রুত উন্নতির প্রধান শর্ত হচ্ছে কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন তা কে না জানে? দেশে বনায়ন দরকার, কিন্তু তারা লাগাচ্ছে রেশম ও তুত গাছ যা আমাদের মাটি ও পরিবেশের ক্ষতি করছে বলে বিজ্ঞানীরা মতামত ব্যক্ত করছেন।

 

        এদেশের মাটি ও পরিবেশের ক্ষতি করে ব্যবসার জন্য রেশম ও তুত গাছ লাগানাে কেমন ধরনের সেবা? এ সেবাতাে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর জোর করে ধানের পরিবর্তে নীল চাষের সেবাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাদের শিল্প, খনিজ, কৃষি উৎপাদনের উন্নয়নের বেলায় নেই অথচ তারা ' সেবার ' গান গাইছে। ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে শুধু ঋণ নিয়ে ধনী হওয়ার প্রলােভন দেখাচ্ছে। ব্রাক, গ্রামীণ ব্যাংক দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠা করেছে ঋণের মাধ্যমে শােষণের সাম্রাজ্য। তারা জনগণকে গাজী, মুরগী, ছাগল, সেলাই মেশিন কেনা এবং গৃহ নির্মাণ, নলকুপ বসানাে খাতে ঋণ দেয়। এটাই ওদের সেবার পরিধী। এগুলাের কোন স্থায়িত্ব নেই। তাছাড়া জাতীয় জীবনের সার্বিক উন্নয়নে এর কোন প্রভাবই নেই। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র ঋণগ্রস্থ ব্যক্তিকে এনজিওর প্রভাবাধীনে আনা হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই এনজিওৱা এহেন সেবার নামে প্রতারণা করে জনগণকে বশীভূত করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই আমরা শুধুই দরিদ্র হচ্ছি, এনজিওদের এত সেবা এত সাহায্য কার্যক্রম কোনটাই আমাদের উন্নতির মুখ দেখাতে পারছে না। এনজিওরা তাদের সেবা তৎপরতার সব কিছুরই নিজেরাই নিয়ন্ত্রক। তাদের স্বেচ্ছা সেবার যদি এতই প্রয়ােজন তবে সরকারের মাধ্যমে অথবা এলাকার বিশ্বস্ত সংগঠনের মাধ্যমেই এ কাজ করতে পারতাে।

 

        এলাকার সমস্যা সমাধানের উপায় এলাকাবাসীরই বেশী জানা থাকার কথা। কিন্তু তারা সে পথ পরিহার করে ট্রেনিং দিয়ে বাহিরের লােক এনে স্বাধীনভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে কেন? সরকারের দুর্নীতি ও অদক্ষতার অজুহাত তুলে তারা স্বতন্ত্রভাবে প্লান-প্রোগ্রাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিশাল বিশাল অফিস বিল্ডিং স্থাপন, প্রশাসন প্রতিষ্ঠা, কর্মী বাহিনী গঠন করছে। সুদূর ইংল্যান্ড আমেরিকার অধিবাসী হয়েও সরকারের চেয়েও আমাদের প্রতি তাদের এত দরদ কেন? এত অর্থ খরচ, এত পরিশ্রম করে আমাদের শান্তির স্বর্গে পৌছে দেয়ার তাদের উদ্দেশ্যটাই বা কি? জনগণের সেবা করতে চাইলে তা তাদের গ্রহণ করা বা না করার অধিকার আছে। কোন এলাকার জনগণ যদি কোন এনজিওর সেবা অগ্রহণযােগ্য বা তাদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর মনে করে প্রত্যাখান করে তবে সেবার মনােবৃত্তি সম্পন্ন সংগঠন তা বন্ধ করে দেবে এটাই স্বাভাবিক। দেশের বিভিন্ন স্থানে এনজিওদের তথাকথিত সেবার সমালােচনা হচ্ছে, তাদের কার্যক্রম জাতীয় স্বার্থের ক্ষতিকর বলে জনগণ তাদের তৎপরতায় বাধা দিয়েছে। এনজিওরা তাদের কার্যক্রমে বাধা পাওয়ার পরও তা বন্ধ করেনি, উপরন্তু প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে। মামলার আসামী হয়ে ঘর-বাড়ী ছেড়ে ফেরারী জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে বহু নিরীহ মানুষ। অথচ এদের সেবার জন্যই এনজিওদের এত দরদ।

 

        সেবা গ্রহণে অবাধ্যতার এহেন পরিণতির কোন নজীর আছে কি? জনমত উপেক্ষা করেও সেবা করতে চাওয়ার আসল রহস্যটা কি? বাধা পেয়েও সেবা কর্ম চালানাের অপরিহার্য দায়িত্ব তাদের কে দিয়েছে? সেবা নয়, এনজিওরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ন্যায় এদেশের ধন-সম্পদ লুটে নিতে এসেছে। ভূ-খণ্ড দখলের দিন ফুরিয়ে যাওয়ায় সাম্রাজ্যবাদীদের হাতিয়ার এনজিওরা কৌশলে আমাদের সরকারের হাত-পা বেধে ফেলতে চাচ্ছে, ধামাধরা বা পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিক, শিক্ষক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকদের এনজিওদের ওপর নির্ভরশীল করে তুলছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে গ্রামের সরল, সহজ মানুষদের উন্নয়নের প্রলােভন ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ‘এনজিও ভােট ব্যাঙ্ক’ তৈরী করছে। তাদের অবাধ তৎপরতা চলতে থাকলে অচিরেই এই “ভােট ব্যাঙ্ক” এদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সবকিছুতেই এনজিওদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। অতএব, আমাদের জাতীয় স্বার্থ, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এক্ষুনি সচেতন হওয়ার সময়।

 

 

 ═──────────────═