JustPaste.it

সম্পাদকীয়:

 

গোড়ার গলদ দূর না করে বাজেট আর সংবিধান সুন্দর করেও লাভ হবে না।

==================================================

 

        রাষ্ট্রের সকল অসহায় দরিদ্র নাগরিক এতিম বিধবা ও ঋণগ্রস্তদের জীবনযাপনের সকল দায় দায়িত্ব আমার উপর, যার কেউ নেই আমি তার যার সহায় বলতে কিছু নেই আমি তার সহায়।

 

        বিশ্বের সর্বপ্রথম ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রথম নীতি নির্ধারণী বক্তৃতার উদ্বোধনী অংশ এটি! ইসলামী সরকারের বিধান বা বাজেট রচনার দিক দর্শনও বলা চলে এটিকে। বাজেট প্রসঙ্গে আলোচনার শুরুতে এ পবিত্র ভাষণের প্রথম অংশটি পাঠকের শুনে রাখা প্রয়োজন।

 

        আগামী এক বছর সরকারের আয় ব্যয়ের একটা পরিমিত হিসাবের নাম 'বাজেট'। সরকারের অর্থ বিভাগ কত টাকা আয় করবে আর কত টাকা ব্যয় করবে এর একটা আন্দাজ। জনগণের কাছ থেকে পয়সা আদায় করে এবং বিদেশ থেকে ঋণ ও অনুদান সংগ্রহ করে সরকার তার তহবিল গঠন করবে এবং নির্ধারিত খাতে এগুলো ব্যয়িত হবে। যথেষ্ট শ্রম মেধা ও সময় ব্যয় করে সরকারের অর্থমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা (তাদের ধারণা ও সমর্থন অনুযায়ী) একটি বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করতে পেরেছেন। এই নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে যারা বাজেট টা তৈরি করেছেন তারা এর প্রশংসা করেছেন আর যারা সরকারের বাইরে তারা করেছেন এর দুর্বলতা ও বিচ্যুতির সন্ধান। কর ও খাজনার চাপ যাদের উপর বেড়েছে, যারা ভ্যাটের আওতায় ঢুকেছেন তারা মন খারাপ করেছেন আর যেসব অঙ্গনে টেক্স কমেছে সেখানে একটু আনন্দও দেখা দিয়েছে। এই হলো আমাদের বাজেট। সরকারের শাসন ব্যবস্থা অর্থনীতি ও বাজেটের একটা বৃত্ত তৈরি হয়ে আছে। একটু উনিশ-বিশ হলেও এ বৃত্তের ভেতরেই সরকারকে হাত-পা ছুড়তে হবে। তা সরকার যে দলেরই হোক। আর এটাই হল বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থার জড়ত্ব ও বন্ধ্যাত্বের ফল। একটা বিরাট ধরনের বিপ্লব ছাড়া এ জড়তা ও বন্ধ্যাত্ব থেকে জাতি মুক্তি পাবে না।

 

        গত 22 বছর ধরে যারা একের পর এক এ দেশের ক্ষমতায় আসা যাওয়া করেছেন তারা কেউ এই জড়তা ও বন্ধ্যাত্ব থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেননি। এর তিনটি কারণ হতে পারে: (১) তারা বিষয়টি নিয়ে এভাবে চিন্তা করেননি। (২) এ ধরনের পরিবর্তন সাধনের সাহস, ক্ষমতা বা যোগ্যতা তাদের ছিল না। (৩) এসব পরিবর্তন চিন্তাকে তারা নিজেদের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেছেন এবং ইচ্ছা করে এসব উদ্যোগ এড়িয়ে চলেছেন।

 

        আমাদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের বাজেট সর্বাঙ্গীন সুন্দর হওয়ার জন্য যে নীতিমালা অবলম্বন করা উচিত ছিল তা কিন্তু সরকার ও বিরোধী দল কেউই বলেননি। আর এসব নীতিমালা দেশের জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকদের মাথায় খেলবার কথা নয়। কেননা তারা তাদের রাষ্ট্র ও অর্থব্যবস্থায় ইহুদি খ্রিস্টান ও নাস্তিক্যবাদীদের মূল নীতি অনুসরণ করে চলেছেন। মহান সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহ পাকের নীতিমালা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছেনা। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ এবং শিক্ষার প্রতি তাদের মোটেও মনোযোগ নেই। অতএব এরা কোন কালেই এ দেশের গণমানুষের জীবনে কল্যাণ ও শান্তি আনতে পারবে না। একথা আমরা হলপ করে বলতে পারলেও যতদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এ মহা সত্যটি উপলব্ধি না করবে ততদিন অবস্থার পরিবর্তনও আশা করা যায় না। পাশ্চাত্বের বস্তুবাদী রাষ্ট্রনীতির স্বার্থপর রীতি দিয়ে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন কি করে সম্ভব! ভোগবাদী বাজেটে দরিদ্র জনগণের কিইবা আশা করার আছে? একটু ইশারা দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে, বাংলাদেশের সংবিধানের শুরুর দিকেই রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব, অধিকার ও সুযোগ সুবিধার কথা। তাদের বেতন-ভাতা চিকিৎসা ও ঐচ্ছিক অনুদানের ক্ষমতা সম্পর্কে বর্ণনা। এরপর এসেছে মন্ত্রী আমলা ও অন্যান্যের পাওয়ানা-দেওনার প্রসংঙ্গ। বাজেটেও জনগণের কাছ থেকে নিয়ে টাকায় গড়ে ওঠা রাজস্ব বা অভ্যন্তরণীয় সম্পদের গঠিত তহবিলের টাকা ব্যয় করার প্রধান ও পহেলা খাত হলো রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীবর্গ সংসদ সদস্য ও আমলাদের বেতন ভাতা সহ অন্যান্য সুবিধাদি। সংবিধান ও বাজেটের কোথাও দেশের অনাথ, এতিম, বিধবা, দুস্থ, অসহায়, বাস্তুহারা, ভূমিহীন, পঙ্গু, বৃদ্ধ, অথর্ব, বেকার ও ঋনগ্রস্থদের জন্য সরকারি কোন বরাদ্দের কথা উল্লেখ নেই। প্রত্যক্ষ কোন অংক নেই আয়-রোজগার হীন কোন দরিদ্রের জন্য নির্দিষ্ট। যাদের সংখ্যা দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ।

 

        যে জনগোষ্ঠীটি পানি গ্যাস-বিদ্যুৎ শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রচার মাধ্যম ও বিনোদন ইত্যাদি কোন দিক দিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো ফায়দা ভোগ করার যোগ্যতা রাখে না, তাদের বাজেটে কি আসে যায়!? শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ালে এদের কি? সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ঋন দিলেই বা এদের কি লাভ? সরাসরি এসব নাগরিককে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ না দেয়ার ব্যবস্থা করে যদি পৃথিবীর সেরা অর্থনীতিবিদেরা বছরব্যাপী গলদঘর্ম হয়ে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম বাজেটটিও বাংলাদেশের জন্য তৈরি করেন তবুও শ্রেণীভূক্ত কুটিকুটি নাগরিকের কোন লাভ হবে না।

 

        পাঠক হয়তো চিন্তিত হয়ে উঠেছেন সবকিছু কেমন এলোমেলো মনে হচ্ছে অনেকেই হয়তো ভাবতে শুরু করেছেন যে দেশ-দুনিয়ার প্রচলিত সব রীতিনীতিকে এক কলমের খোঁচায় নাকচ করে দিয়েছে জাগো মুসলিম! কিন্তু বিষয়টি আসলে এমন নয়! আমরা কেবল সত্য ও নির্ভুল রাষ্ট্রনীতি এবং মানবতা পন্থি নিঃস্বার্থ অর্থনীতির প্রতি আমাদের শাসক ও রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানাচ্ছি যে রাজনীতি শেখার জন্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ গুলোতে চুষে বেড়ানোর প্রয়োজন নেই, এক কপি  কোরআন আর হাদিসের গ্রন্থই যথেষ্ট। তবে প্রশ্ন হল একটাই যে জাতির কর্ণধার কি এভাবে চিন্তা করতে রাজি হবেন!? সম্পাদকীয়ের শুরুতে উল্লেখিত প্রিয়নবীর ভাষণের পবিত্র বাণী গুলোর সাথে কি তারা তাদের সংবিধান ও বাজেটের চরিত্রটা তুলনা করবেন?

 

*****