JustPaste.it

a543eb8bd7bbaaeb8966fd1d49b8b343.jpg

 

এক শহীদ দরবেশের স্মৃতি

 

মূল

মাওলানা উবাইদুর রহমান মুরাবিত

 

 

 অনুবাদ

মাওলানা ইউনুস আবদুল্লাহ

 

00d9e80fb2fed2cc8e3f7389311fea68.png 

[পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়ার বান্নু জেলার অধিবাসী “দরবেশ জানা রহ...” রজব ১৪৩৮ হিজরী মোতাবেক ১লা এপ্রিল ২০১৭ ইং তারিখে আফগানিস্তানের দক্ষিণ পূর্ব প্রদেশে আমেরিকান ড্রোন হামলায় শাহাদাত বরণ করেন। আল্লাহর পথে শহীদ এই আল্লাহওয়ালার স্মৃতিচারণ নিয়েই আমাদের এবারের পরিবেশনা- প্রকাশক ]

 

 

বান্নুর শহরতলী এলাকার এক গরীব পরিবারে জন্মগ্রহনকারী এক মুজাহিদ ফি সাবিলিল্লাহ। তার পিতা উপার্জনের তাগিদে বহির্রাষ্ট্রে চাকরী করতেন, কিন্তু পরিবার যথেষ্ট পরিমাণ খোরাকী দ্বারাই চলত। তার সেই মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, যিনি তার পিতার দুরত্বে অবস্থান ও আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও নিজ সন্তানদেরকে আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয় এবং ইসলামের প্রতি ভালবাসা অটুট রেখেছেন। তার শাহাদাতবরণে তার মাতা-পিতার সবচেয়ে বড় গৌরব ছিল এই যে, আখিরাতে সে তাদের শাফায়াতের মাধ্যম হবে এবং দুনিয়াতে এই সুখ্যাতি ছিল যে, বর্তমান সময়ের ফেরাউনতুল্য আমেরিকা তাকে আফগানিস্তানের মাটিতে মিসাইল ড্রোনের টার্গেট বানিয়েছে। আমেরিকা এমন অশ্বারোহীদের কারণে হিংসায় জ্বলে, যারা আমেরিকানদের এবং তাদের সহযোগীদেরকে নোংরামীতে ভরপুর সুখ-স্বাচ্ছন্দের জীবনে স্বস্তিতে থাকতে দেয় না।

তিনি চৌকান্না, আত্মমর্যাদাশীল ও দ্বীনদার-ই শুধু ছিলেন না, বরং তিনি একটি ভাল বৃক্ষের রসালো ফল ছিলেন। ইতিপূর্বে তার এক চাচা অধিকৃত কাশ্মিরে শহীদ হয়েছেন। অপর একজন মামাত ভাই আফগানিস্তানের ইমারত পতনের সময় শহীদ হয়েছিলেন। তার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনও জিহাদের প্রতি আন্তরিক ছিলেন। এই মনীষীদের উপর পশ্চিমা মিডিয়ার অপপ্রচার কোন প্রভাব ফেলেনি। কেননা, তার বাপ-দাদারা এই অপপ্রচারের মুখোশ আগেই উন্মোচন করে রেখেছিলেন। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা! জিহাদের ভূমিতে থাকার দরুন চাক্ষুস দেখার মতই সামনে ছিল। তার বাপ-দাদাদের মধ্যে কতক আলেম-উলামা ও মসজিদের ইমাম ছিলেন। এমনিভাবে তিনি তার বাপ-দাদাদের দ্বীনদারী, বংশীয় আত্মমর্যাদাবোধ এবং বীরত্ব উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ছিলেন। এমন খান্দানই তো এমন দ্বীনি আন্দোলনকে পরখ করে নিতে পারেন, চাই তা দাওয়াতের মাঠের পরিশ্রমী হোক বা রাজনীতির মাঠের। কিন্তু এই সমস্ত মনীষীদের উদ্দেশ্য এইগুলির প্রতি নিবদ্ধ থাকত না, বরং তাদের উদ্দেশ্য থাকত: পূর্ণ আত্মসমর্পণ... শরীর, আত্মা, রুহ ও হৃদয়সহ...তাদের ধন-সম্পদ তো কোন কিছুই ছিল না...তথাপি সবকিছু আল্লাহর জন্যই নিবেদিত ছিল।

 

আঙ্গুরাদের সহকর্মীদের প্রাণপুরুষ:

দুনিয়া-আখিরাতের ইজ্জত-সম্মান লাভের আশায় এই অস্থির রুহ ২০১০ সালে আল-কায়েদার হাতে বাইয়াতকৃত এক জামাতের সাথে জুড়ে গেলেন। দক্ষিণ ওযিরিস্তানের রাজধানী ওয়ানার উত্তরে পাহাড়ের চূড়াতে অবস্থিত সীমান্তের অধিবাসীদের প্রবেশ পথ আঙ্গুরাদাহ এবং তার নিকটবর্তী এলাকা গুরলামাহর সামরিক জামাতের দায়িত্বশীলদের সহকারী হিসাবে নিয়োজিত থাকেন। পরিস্থিতি তো পূর্বেই তাকে কঠিন প্রাণ বানিয়ে দিয়েছিল। সুতরাং সেখানকার সামরিক বাহিনীর গুহা খনন ও হাতিয়ার/অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য মাটিতে পুঁতে রাখার বিশেষ জিম্মাদারী/দায়িত্ব পেলেন। অত্যন্ত ঠান্ডা ও বরফপ্রধান এলাকা এবং পাথুরে পাহাড়ে তিনি এই কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। তার এক সহকর্মী বলেন: তিনি তার সহকর্মীদের সাথে মিলে মিশে থাকতেন। তাদের খুব খেয়াল রাখতেন এবং গল্প-সল্প ও কথার জাদুতে খুব বেশী অলস ও অকর্মণ্য সহকর্মীকেও কাজে লাগিয়ে দিতেন। এ দিকে কাজও হয়ে যেত আবার সহকর্মীও অসন্তুষ্ট হত না। জীবন্ত হৃদয়, সাহসী এবং আত্মমর্যাদাশীল ছিলেন...গণিত ও বিজ্ঞানের বই হয়তবা পড়েননি তাতে কি! জীবনের পাঠ নিজে পড়েছেন এবং অন্যদেরকে পড়িয়ে চলে গেছেন। পাশাপাশি জীবনের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মর্যাদার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তার চিহৃ হলো শাহাদাতলাভ।

 

(আমরা এমনটাই মনে করি। তবে আল্লাহ পাক সঠিকটা জানেন। তাঁর জানার বাহিরে আমরা কাউকে সঠিক বলিনা।)

 

তার জন্য তো ডালের চেয়ে বেশী কিছুই ব্যবস্থা হত না। তবে মারকাযে ডাল দেখলে তখন সহকর্মীদেরকে বলতেন: “আপনারা তার পরিবর্তে সবজি খরিদ করুন, আর গোশত ব্যবস্থা করা তো আমার জিম্মায়” তারপর এখানে সেখানে দৌড়ঝাপ করে প্রতি সপ্তাহে দেশী মুরগী বা বকরীর ব্যবস্থা করে দিতেন। সাথীরাও খুশী হত আবার বাইতুল মালের টাকাও বেচে যেত। তিনি যে খাবারই পাকাতেন তা খুব মজাদার হতো। সহকর্মীরা তার প্রশংশা করলে বলতেন: আমি ভালো পাকাতে পারিনা, ভুলক্রমে পাক ভালো হয়ে যায়। এটা তো তার বিনয় ছিল, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ইখলাস থাকার দরুন তার প্রত্যেক কাজ মধুরতায় ভরা থাকত। 

 

মাহসূদ রণাঙ্গনের জিম্মাদার:

২০১০ সালের শেষ দিকে তাকে মাহসূদ এলাকার এক রণাঙ্গনের জিম্মাদার নিযুক্ত করা হয়। যেখানে তিনি তিন চার মাস পর্যন্ত আমেরিকার গোলাম সৈন্যদের সাথে লড়েছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারী শীতের মৌসুম এসে পড়ার দরুন মুজাহিদীনরা পিছন ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই সময়ের মাঝেও আমাদের ভাই আদর্শ ছিলেন। চাই তা সহকর্মীদের খেদমত হোক বা পাহাড়ে উঠা-নামা হোক বা অন্যকোন দৌঁড়ঝাপ হোক। রমযান মাসে একবার অভিযানে সকল সহকর্মীরা রোযাদার ছিলেন এবং (ফেরার পথে) সকলে হেলে দুলে আসছিলেন। তার এক সহকর্মী বলেন যে, তখন দরবেশ ভাই বলে উঠল: “ব্যস! ইখলাস চাই আর জিহাদের প্রতিদান তো জান্নাত।” সেই সময় সকলের উপর তার এই কথার অনেক প্রভাব পড়েছিল। তার সাথে যার পূর্ব থেকে কোন সম্পর্ক থাকত না সে তাকে সাধারণ মানুষ মনে করত।কিন্তু বাস্তবতা হলো-মাহসূদে যখন রণাঙ্গন কায়েম হল তখন দরবেশ ভাই সেখানের মারকাযের জানে-আত্মাতে পরিণত হলেন। সেখানকার এক দায়িত্বশীল বলেন: “ সেই সময়ে যে সহকর্মীর ব্যাপারে আমরা ধারণ করতাম যে, তাকে পরিচালনা করার জন্য অনেক যোগ্যতা দরকার! কিন্তু সেই সকল সহকর্মী তার প্রেমিক হয়ে গেল। দরবেশ ভাই নিজেই আনুগত্যের ক্ষেত্রে নজীরবিহীন ছিলেন এবং তার সাথে সাথে সহকর্মীদেরকে সম্মান-ইজ্জত প্রদান করতেও কোন কমতি করতেন না।”

সেই জামাতের এক জিম্মাদার দরবেশের তায়াক্কুলের বর্ণনা দিতে গিয়ে একটি ঘটনা শুনাতে গিয়ে বলেন: “আমরা মাহসূদ নামক এলাকা থেকে বের হচ্ছিলাম, কেননা সৈন্যবাহিনী আস্তে আস্তে আগে বাড়ছিল। সেই সময় আমরা তিনজন ছিলাম, তখন গাড়ীর টায়ার নষ্ট হয়ে গেল এবং মেশিনারী যন্ত্রের ক্লিপও পড়ে গেল। এমতাবস্থায় উপর থেকে সৈন্যবাহিনীর গোলাও পড়তে ছিল, গাড়ী থেমে গেল...! সেই দিন আবু ইউসুফ ভাই রোযাদার ছিলেন। আমরা পেরেশান হয়ে বসে রইলাম, কেননা সামনের রাস্তায় সৈন্যবাহিনী রয়েছে। তাছাড়া তখন আমরা ছাড়া অন্য কোন মাখলুক দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু দরবেশ জানা ভাই বলতেছিলেন: কোন সমস্যাই নাই! যখনই মাগরিবের সময় হল, তখন সামনে তালেবানের স্থানীয় চৌকির পাহারাদার দেখতে পেলেন। দরবেশ জানা ইশারা করলেন, তারা আসলে সমস্যার কথা বললেন। তখন তারা তাৎক্ষনিক মেশিনারী যন্ত্রের দুটি ক্লিপ বের করে দিলেন। অত:পর বললেন: আপনারা কোথায় যাচ্ছেন!?  আমাদের মারকাযে আসেন। তখন আমরা তার সাথে মারকাযে গেলাম, তখন দেখতে পেলাম সেখানে জবাইকৃত বকরী পড়ে রয়েছে। আবু সাইফ এবং জানা ভাই একে অপরকে খুশীর সহিত দেখতে ছিলেন। আবু সাইফ ভাই বলেন: হায়! আরো বেশি যদি দু‘আ করে নিতাম, যখন এত দ্রুতই দু‘আ কবুল হচ্ছিল।”

 

আফগানিস্তানে গ্রেফতার:

২০১১সালের আগষ্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে দরবেশ ভাই আফগানিস্তান সীমান্তের শেষ প্রান্তে আমেরিকানদের গোলাম সৈনিকদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হলেন। মহান আল্লাহ তায়ালার তাকদীরি ফায়সালা ছিল যে, তার উপর পরীক্ষা আসবে। যাই হোক তিনি সহকর্মীদের সাথে মিলিত হলেন এবং সেনাবহিনীর একটি চৌকির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার হয়ে গেলেন। সে সময় তার নিকট কোন অস্ত্র-সস্ত্র ছিল না। গাড়ীতে বসা অবস্থায় দরবেশ তার সহকর্মীদের ইশারা করলেন যে, আমি বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব, আপনারা পলায়ন করুন। তিনি গাড়ী থেকে নামতেই আফগানী সৈনিকদের থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করলেন কিন্তু ব্যর্থ হলেন। কেননা, সৈনিক বন্দুকের হাতল তার গলায় ঝুলিয়ে রেখেছিল। ফলশ্রুতিতে উভয়েই একে অপরের প্রতি তেড়ে আসল। এই সামান্য যুদ্ধের কারণে অনেক সহকর্মী পলায়নে সক্ষম হলেন। শুধু তিনি দুই-এক সহকর্মীসহ গ্রেফতার হলেন। তিনি স্বয়ং নিজের কাহিনী শুনিয়ে বলতেন: “গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে কয়েকবার আমেরিকান কর্মকর্তাদের সম্মুখীন হয়েছি। সেই সময় আমার মস্তিস্কে এই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম যে,  যেভাবেই হোক তাদের মধ্য থেকে কাউকে মারব।”

 

   তিনি আরো বলেন: মুনাফিক আফগান নেতারা এসে কয়েদীদেরকে শাস্তি কমিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার দিয়ে এবং সহমর্মী হয়ে কয়েদীদের থেকে তথ্য বের করার চেষ্টা করত।

 

সর্বোপরি তিনি অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করার কারণে তাকে ৩ বছরের শাস্তির কথা শুনিয়ে দেয়া হল। তার কাহিনী দ্বারা বুঝা যায় যে, পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কারাগার অনেক ভাল। সম্ভবত তা এই কারণে ছিল যে, আফগানি নেতারা সদ্য কিছু দিন আগে আমেরিকানদের গোলামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুফরের খেদমত করা সত্ত্বেও ইসলাম, দাড়ি এবং আত্মমর্যাদাবোধকে সম্মানের সাথে দেখত। যখন আমাদের এখানে (পাকিস্তানে) গোলামীর তিন যুগ পার হয়ে যাচ্ছে। তারা ইংরেজদের একনিষ্ঠ গোলামে পরিণত হয়েছে। তাদের অন্তরে দ্বীনের প্রতি বিদ্বেষ থাকার দরুন তা তাদের চেহারায় ফুটে উঠত। হৈ-চৈ কারীরা তো গালি ছাড়া আর কিছুই পায় না। তাদের (উভয়ের) উপর আল্লাহর অভিশাপ। মুনাফিকদের জন্য তো জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থান বরাদ্দ রয়েছে। যে নিজের কুফর ও নিফাকের উপর যত বেশী কট্টোর হবে, সে জাহান্নামের ঠিক ততখানি নিম্নে ও প্রচন্ড শাস্তির সম্মুখীন হবে।

 

বীরত্ব ও দৃঢ়তা:

সম্ভবত: তিন বছর থাকার পর ২০১৩ সালে তিনি গ্রামে গেলেন, তখন তাকে আনন্দের সাথেই অভ্যর্থনা জানানো হল। কিন্তু এই ভাই দুই মাস পরেই পুনরায় তার সহকর্মীদের সাথে জিহাদের ভূমিতে চলে আসল। এবার তার ফৌজি তাশকীলের কাজ তার এলাকাতেই নির্ধারণ করে দেয়া হল। ২০১৪ সালে মিধ্যাবাদীদের সাথে যুদ্ধের অপারেশন চলাকালে কোন এক কাজে তাকে জিহাদের ভূমিতে আসতে হয়। তিনি পৌঁছানোর পর পরেই দেখতে পেলেন যে, নিচের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যস! তখন এই যুবক পুনরায় সীমান্তের উভয়পার্শ্ব দিয়ে আমেরিকার গোলাম সৈনিকদের এবং স্বয়ং আমেরিকানদের সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে গেলেন।

 

   সেই সময়ের মুজাহিদীনদের তদন্তের কাজ তিনিই আঞ্জাম দিতেন এবং এই কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে নিজেদের লোকদের দ্বারাই তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আল-কায়েদার সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের পক্ষ থেকে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই ভাই সবর ও ইস্তিকামাতের সাথে ছিলেন এবং এ সকল পরিস্থিতিতি থাকা সত্বেও স্বীয় মাকসাদের সাথে জুড়ে ছিলেন ও সহীহ মানহাযের উপর অটল ছিলেন।

 

এক সহকর্মী তার বীরত্বের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে:

 

“একবার গুমাল নদীতে বন্যা হল। তখন এক গাড়ীতে একজন বৃদ্ধা মা, মহিলা ও বাচ্চা আরোহী ছিল আর ড্রাইভার নদীর কিনারায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু নদীর মাঝখানে গাড়ী এমনভাবে আক্রান্ত হয়ে গেল যে, গাড়ী উল্টে যাবার উপক্রম। মনে হচ্ছিল নদীর তরঙ্গের তীব্রতা গাড়ী ও তার আরোহীদেরসহ নিজের সাথে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে! অপরদিকে নদীর কিনারায় স্থানীয় লোকজন দাঁড়িয়ে ছিল এবং আমি ও দরবেশ ভাইও দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন দরবেশ ভাই জলতরঙ্গের কোন পরওয়া না করে এই নদীর জলোচ্ছাসের মাঝেই সাঁতরানো শুরু করে দিলেন, যাতে করে এই সমস্ত রমনীদেরকে বাঁচাতে পারেন। এই সময় অন্যরা সবাই নির্বেকার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল। নদীর তরঙ্গ এ সময় তাকে উপরে উঠিয়ে দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দিচ্ছিল আর তিনি বারবার নদীর তরঙ্গমালাকে বিদীর্ণ করে গাড়ীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রাণান্তর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। অবশেষে তিনি স্বীয় বীরত্ব এবং দৃঢ় মনোবলের শক্তিতে নদীর তরঙ্গের বিপরীতে সাঁতরিয়ে গাড়ীর কাছে পৌছাঁতে সক্ষম হলেন। তারপর তার দেখাদেখি স্থানীয় লোকজনেরও সাহস সঞ্চার হল এবং তারা তাদের হাতের দ্বারা শিকল   বানিয়ে গাড়ী পর্যন্ত পৌঁছাল। সবশেষে এভাবেই এ সমস্ত রমনীরা বেঁচে গেল।”

 

   অন্য একজন জিম্মাদার তার পাগলামী পর্যায়ের বীরত্বের নমুনা চাক্ষুস দেখে বর্ণনা করেন যে: “আফগানিস্তানের এক ক্যাম্পে কার্য পরিচালনা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করার সময় সামনের দিক থেকে গোলা আসতে লাগল। কিন্তু সে অবিকল দাঁড়িয়ে সোজা সে দিকে তার উপর (অষ্টাদশ দুই ৮২) দ্বারা জবাবী গোলা বর্ষণ শুরু করে দিল। আর সে সময় মাঝে কোন ধরনের প্রতিবন্ধক ছিল না। যখন তিনি গোলা বর্ষণ করতেন, তখন তার   জোসের সাথে সাথে মুখ থেকে ফেনা বের হত এবং বিশেষ আওয়াজের পরে জোড়ে তাকবীর ধ্বনি দিতেন। হাত-পায়ে নিস্তেজতা ও চোখ লাল থাকত। আর এ সময়ের মাঝে সে বসত না এবং কোন বিরতিও দিত না। এক দিকে গোলা নিক্ষেপ করার পর দ্বিতীয় গোলা ভরতেন এবং অন্যদিকে নিক্ষেপ করার জন্য নিশান ঠিক করতেন।”

 

শাহাদাতবরণ:

২০১৫ সালে আফগানিস্তানের এলাকা গুমালে আমেরিকান ও আফগানিদের যৌথ বাহিনীর ছায়া পড়ল। তখন দরবেশ ভাই এই ছায়ায় সহকর্মীদেরকে এবং  অস্ত্র-সস্ত্রকে সামাল দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন এবং বেঁচে গেলেন। এই ময়দানেই সহকর্মীদের তাগিদের কারণে বিবাহের কথা-বার্তা শুরু হল। কিন্তু তার সহকর্মীরা কি জানত যে, জান্নাতের হুরেরা তার ইনতিযারে/অপেক্ষাতে বসে আছে........! অবশেষে ২০১৭ সালে তিনি আফগানিস্তানের এক জায়গায় তাশকীল করার জন্য এক মোহগ্রস্থ সফর করছিলেন। যখন আমেরিকান ড্রোন গাড়ীর উপর মিসাইল ছূড়ে মারল এবং স্বীয় কয়েকজন সহকর্মীসহ নিজ মানজিলে মাকসুদ পর্যন্ত পৌঁছে সফলকাম হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাকে কবুল করে নিন।( আমীন)

 

দরবেশ ভাইয়ের পরিবার ও তার প্রিয় নিকটআত্মীয়রা ! তোমরা খুশী থাকো, কেননা তোমাদের সুপুত্র সফলকাম হয়ে গেছে এবং তোমরা জমে থাকো। দরবেশ ভাইয়ের এক সহকর্মী বলেন যে, তার পর দাদীর যখন কারো উপর রাগ আসত তখন তিনি তাকে (ইংরেজের বাচ্চা) বলে ধিক্কার দিতেন। এমনিভাবে তোমরাও মুসলমানদের ভালবাসা ও কাফিদের প্রতি শক্রতাকে অন্তরের মাঝে জাগ্রত রাখবে। কেননা, এটাই হল ‘ওয়ালা’ ও ‘বারাআ’ এর আকীদা। যার কারণে আল্লাহ জাল্লা শানুহু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আমাদের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন।

 

হে প্রিয় ভাই! আপনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছ। ব্যস! আমাদেরকে স্মরণ রাখবেন। আল্লাহ জাল্লা শানুহুর কাছে দু‘আ করি তিনি যেন জান্নাতে আপনার সাথে আমাদেরকে একত্রিত করেন। আমীন ইয়া রব্ব!

 

হে আল্লাহ ! পাকিস্তানের ভূমিতে এমন হাজারো যুবক তৈরী করে দাও। হে আল্লাহ ! দরবেশ ভাই এবং তার সকল সহকর্মীদের কুরবানীর বদৌলতে পাকিস্তানে ও আফগানিস্তানে শরীয়তের বসন্তকাল অচিরেই দেখিয়ে দিন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন

 

* * * * * * *