JustPaste.it

JubokderProtiDawahNaseehah.jpg

 

 

যুবকদের প্রতি দাওয়াহ’র পদ্ধতির ব্যাপারে নসিহাহ

 

 

 

উস্তাদ আবু যুবাইদা হাফিজাহুল্লাহ

 

 

প্রশ্ন- সম্প্রতি একটি প্রকাশনী থেকে এরদোগানকে নিয়ে একটি বই বের হয়েছে। এর আগেও অন্য আরেকটি প্রকাশনী থেকে একটি বই বের হয়। স্যোসাল মিডিয়ায় এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক লেখালেখি হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের কোন কিছু করণীয় আছে কিনা?

উস্তাদ আবু যুবাইদা হাফিজাহুল্লাহঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। বর্তমান সময়ের মুসলিম উম্মাহের মাঝে “এরদোগানএকটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে এই বিষয়ের চর্চা রীতিমত ভাইরাল টপিক। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল বাস্তবতা আর বাস্তব দুনিয়ার বাস্তবতা কখনই এক নয়। এই বিষয়টি বুঝার মন মানসিকতা আমাদের তৈরি করতে হবে। তাই এই ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা আমাদের জেনে রাখা জরুরী।

একথাগুলো এই প্রেক্ষিতে বলা হলেও এগুলো আমভাবে ফেসবুকের সকল ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একটি জিনিস আমাদের বোঝা দরকার যে, ফেসবুকের ভাইরা, ইসলামীক সেলিব্রেটিরা, এমনকি যাদের 'মানহাজের সেলিব্রেটি' ধরা হয় - তারা আর আমরা এক জগতে বসবাস করি না। তাদের জন্য বিষয়গুলো অনেকাংশেই তাত্ত্বিক কিছু আলোচনার বিষয়। তর্কবিতর্ক, লাইক-স্ট্যাটাসের মামলা। আমাদের জন্য এই বিষয়গুলো জীবন-মরণ, বন্দীত্ব-মুক্তি, জেল-জুলুম আর সত্যিকার বিষয়ের মামলা। আমি ভাইদের ছোট করার জন্য বলছি না। সেটা আমার উদ্দেশ্যও না। আমার পয়েন্ট খুব সহজ। যেই জাহাজের কম্পাস নেই আর যেই জাহাজের কম্পাস আছে - দুইটি সমান নয়

ফেসবুকের ভাইরা যেসব লেখালেখি করেন, যেসব ইস্যু নিয়ে সময় দেন, মাতামাতি করেন, সেগুলোর মধ্যে কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। ঘটনার স্রোতে একেক 'ইস্যু' আসে। ভাইরা সেটা নিয়ে ব্যস্ত হন। আপনারা চাইলে এটা মিলিয়ে দেখতে পারেন। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া সত্তাগতভাবে খুব আত্মকেন্দ্রিক একটা জায়গা। অত্যন্ত যাহিদ লোকও এই জায়গায় এসে নাদান হয়ে পড়ে।

কারণ শেষ পর্যন্ত ফেসবুক একটা বাজার। আপনি বাজারে যাবেন। দেখবেন সামনে দুইজন ‘এরদোগাননিয়ে কথা বলছে। আপনি এটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখবেন আরো তিনজন এটা নিয়ে তর্ক করছে। তখন অটো আপনার মাথায় যুক্তি তর্ক আসতে শুরু করবে। আরেকটু আগালে দেখবেন চারজন এটা নিয়ে ঝগড়া কড়ছে। তখন দেখবেন আপনার হাত নিশপিশ করছে কিছু একটা বলার জন্য।

ফেসবুক হল এরকম একটা জায়গা। এখানে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা অগুরুত্বপূর্ণ এটা কীসের ভিত্তিতে নির্ধারন হয়? কতো বেশী জন ঐ বিষয় নিয়ে কথা বলছে তা নিয়ে। এই কারণে দেখবেন দ্বীনি সার্কেল বলেন বা জাহেল সার্কেল - ঘুরেফিরে প্রতি সপ্তাহের যে ইস্যু ভাইরাল - সেটা নিয়েই সবাই কথা বলে। পার্থক্য হল জাহেল তাঁর জাহালতের জায়গা থেকে বলে দ্বীনী সার্কেল তার জায়গা থেকে।

আমার এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হল, এটুকু আপনাদের বুঝানো যে - ফেসবুকে মাতামাতি হওয়া বেশিরভাগ বিষয় আসলে খুব ঠুনকো। এগুলোর পিছনে আক্বীদা-মানহাজের কিংবা দাওয়াহ থাকে না। থাকে ঠুনকো নানা বিষয়। আমরা যদি এগুলোর পিছনে পড়ি তাহলে আমরাও এই নষ্ট চক্রের মধ্যে আটকা পড়ে যাবো।

দেখুন ভাইরা, সাহাবী রাজিয়াল্লাহু আনহুম রাও কথা বলতেন, আমরাও কথা বলি। সাহাবীগণ রাজিয়াল্লাহু আনহুম নতুন ভূখন্ডে গিয়ে মানুষের সামনে চলাফেরা করতেন, অল্প একটু কথাবার্তা বলতেন। মানুষ তাতেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতো। বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে তাওহিদে আসতো। আর আপনি আমি ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলি - কিন্তু সেটার কোন তাসীর হয় না। এটা কেন? কথাই তো? সামির খান, তারেক মেহান্না, আনওয়ার আল আওলাকি, ইউসুফ আল উয়াইরিও ইন্টারনেটে লিখে দাওয়াহ করেছেন। আমাদের ফেসবুকের সেলিব্রেটি ভাইরাও করেন। তফাৎটা কই ভাই? কোন জায়গায়?

তফাত হল শিকার করতে বের হওয়া বাঘ আর রাতের খাবারের পর রিল্যাক্স করতে বের হওয়া বিড়াল এর মত। এরা দুইজন এক না, তাদের মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য! আমি আবারো বলি, আমি ভাইদের ছোট করছি না, আল্লাহ তাঁদের উত্তম প্রতিদান দিন আমীন।

কিন্তু ভাইরা নিজেদের বুঝ থেকে নিজেদের জায়গা থেকে লেখালেখি করেন। যেটার মধ্যে কোন কাঠামো নেই। উদ্দেশ্যহীন এলোমেলো লেখা। আমাদের এসব করে বিলাসিতা করার সময় নেই। মনে রাখবেন - আপনি শিকারের জন্য বের হওয়া বাঘ। আপনার একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। আপনার প্রতিটা কাজ হল সেই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য করা। এইভাবে আমাদের চিন্তা করতে হবে যে,  আমাদের উপর একটা দায়িত্ব আছে। একটা অনেক বড় ওজন আছে।

আপনি আমি - আমরা খুব সাধারণ লোক। সাধারণের চেয়েও সাধারণ। কোন বিশেষত্ব নেই আমার। আমি কিছুই না। কিন্তু যে দায়িত্বটা আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন, এটা সাধারণ না। পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষ আছে। হিসাব করে দেখেন -  ২০০ কোটি মুসলিম আছে। হিসাব করে দেখেন কতো লক্ষ লোকের মধ্য থেকে বাছাই করে আপনাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ আপনাকে বাছাই করেছেন। কেন করেছেন? সেটা কি কোন উদ্দেশ্য ছাড়া? আপনার জন্য কোন পরিকল্পনা ছাড়া? এটা কি হতে পারে? যিনি মহাকাশ থেকে শুরু করে অদৃশ্য ডিএনএ পর্যন্ত সুচারুভাবে নিখুত ভাবে সৃষ্টি করেছেন, তিনি এমনি এমনি কিছু করেন? আল্লাহর পানাহ

এটা বুঝেন ভাই। আপনি সাধারণ - আমি সাধারণ - আমি দুর্বল - আমি অযোগ্য। কিন্তু যে কাজটা আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন - এটা করতেই হবে। এবং এটার ওজন বুঝে করতে হবে। আমার মনোযোগ সরানো যাবে না, অন্যদের মতো নিশ্চিত ঘুম আমি দিতে পারবো না। অন্যদের মতো আমি রিল্যাক্স করতে পারবো না। আমার একটা মিশন আছে, এটা মাথায় রাখেন

ভাইদের বর্তমান তর্কের কিছু আমি দেখেছি। এখানে আদর্শিক কোন আলোচনা তেমন নেই। কে কখন কী বলেছে, আর কী বলে নাই, কোন প্রকাশনী কী করে, না করে - এসব নিয়ে ফুযুল কথাবার্তা। এগুলোর সাথে আমাদের কী লেনদেন?

শ্রীলংকা নিয়ে সবাই মানবতা দেখাচ্ছে। ভাইদের সুযোগ ছিল এই বিষয়ে আম মানুষের বুঝ ক্লিয়ার করা। শার'ই এবং কৌশলগত দিক ক্লিয়ার করা। সেটা করলেও এই তর্কের চেয়ে অনেক ভালো কাজ হতো। কিন্তু সেটা না করে তর্ক হচ্ছে। এগুলো দিনশেষে অর্থহীন বিষয়।

তাই এটা মনে রাখবেন যে অনলাইনে এবং আমাদের কাজ সবসময় আমাদের মৌলিক উদ্দেশ্যগুলো সামনে নিয়ে হবে। মৌলিক মেসেজ সামনে নিয়ে আসতে হবে। এভাবে ইস্যুকেন্দ্রিক নয়।

আরেক ভাই এর প্রশ্ন- আমরা কি এরদোগানকে নিয়ে তর্কবিতর্ক এর বিষয়গুলো এড়িয়ে যাব?

উস্তাদ আবু যুবাইদা হাফিজাহুল্লাহঃ আমভাবে আমি এই ব্যাপারে একমত নই। ব্যক্তি এরদোগান নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই। সে কী করলো না করলো তাতেও আমাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু যখন মানুষের সামনে কোন মূর্তি তৈরি হয় তখন সেটা ভাঙ্গতে হয়। এরদোগানের প্রতি জামায়াতে ইসলামির মুগ্ধতা স্বাভাবিক। উনারা একেকসময় একেক জিনিসের প্রেমে পড়েন। কখনো ইরান, কখনো তুরস্ক, কখনো তিউনিশিয়া। কিন্তু এরদোগানের প্রতি কওমি অঙ্গনের মুগ্ধতার বিশেষত্ব আছে-

প্রথমত, কওমিদের বড় একটা অংশ মডারেট ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ার শক্ত লক্ষণ

দ্বিতীয়ত, বিশ্ব রাজনৈতিক বাস্তবতার ব্যাপারে তাঁদের অনেকের বুঝের ঘাটতি থাকার লক্ষণ। যেহেতু এরদোগানের সস্তা হুংকার শুনেই উনারা তাঁকে বিশাল বীর ভাবতে শুরু করেছেন।

তৃতীয়ত, মুজাহিদিনদের বদলে এরদোগানকে সমর্থন করতে তারা বেশী আগ্রহ এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এটাও অনেক কিছু ইঙ্গিত করে।

চতুর্থত, মানুষ অপমানিত এবং দুর্বল অবস্থায় থাকলে, সে সম্মানের স্বপ্ন দেখাও বন্ধ করে দেয়। এটারও একটা বাস্তব প্রমাণ এইসব ঘটনা।

এই সব কারণে এরদোগানের মত নেতাদের বাস্তবতা হল - তারা এই সকল মুসলিমদের আবেগকে ব্যবহার করে। আর আমাদের বাস্তবতা হল - আমরা বারবার ব্যবহৃত হই। এরকম পদ্ধতিতে উম্মাহর জন্য ভালো কিছু আসবে না। এই ব্যাপারগুলো নিয়মিত আমাদের কথার মধ্যে উঠে আসা উচিৎ। তবে খাস ভাবে তাঁকে নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয় না। বরং বর্তমানে আগামী এক মাস আমাদের বিশেষভাবে শাপলা চত্বর এবং পরবর্তী ৬ বছরে কিভাবে অপমানের বোঝা বাড়লো - সেটা নিয়ে ফোকাস করা দরকার

কাফির, মুরতাদ, সেকুলাররা যেমন প্রতি ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬ শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরে একই গীত গায়, বছর বছর একই কথা বলে যায় - আমাদেরও প্রতি বছর বার বার এই সময়ে মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে

স্মরণ কর শাপলা চত্বর - স্মরণ কর শাহবাগ - স্মরণ কর আপোসের গল্প - সংবর্ধনা - তাগুতের বাস্তবতা -গণতন্ত্রের বাস্তবতা। কিভাবে আমাদের যিল্লতি বাড়ছে - এগুলো বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে

আমি শেষ একটা কথা বলি। আশা করি এখান থেকে সহজে বিষয়টা বুঝবেন। এটা কে লম্বা করার জন্য না বরং এটা একটা ফর্মুলার মত তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

দেখুন, ফেসবুকের সেলিব্রেটি ভাইরা লিখেন, আর আমাদের একজন ভাইও লিখতেন। নাম বলছি না, আপনারা তাঁকে জানেন। আপনারা একটু চিন্তা করে দেখুন তাঁর লেখার তাসীর কেমন ছিল? আমরা মাশওয়ারাতে ফেসবুকের লেখা নিয়ে চিন্তা করছি। কিন্তু ভাই লিখতেন আর ফেসবুকের ছেলেপেলে ভাইয়ের লেখা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যেতো। মানুষের চিন্তা বদলাতো। ফেসবুক জুড়ে তর্ক শুরু হয়ে যেতো। এবং ভাই ঐসব বিষয় গুলো নিয়ে বলতেন যেগুলো নিয়ে আসলে কথা বলা দরকার। তাবলীগ বলেন, আহলে হাদিস বলেন, জামাত বলেন - সবাইকে ভাই নাড়া দিয়েছিলেন। সাফল্য কেবল আল্লাহর কাছ থেকে।

এটা কেন হয়েছে? কিভাবে হয়েছে? এটা নিয়ে চিন্তা করেন ভাইরা। ইনশাআল্লাহ অনেক কিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

logo.png