"আল ফিরদাউস" পরিবেশিত
জামাতুল বাগদাদীর আবু মুহাম্মাদ আল-আদনানীর
বক্তব্যের বিশ্লেষণ
উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দি হাফিজাহুল্লাহ
********************
জামাতুল বাগদাদীর বাগাড়ম্বর স্বর্বস্ব মূর্খ মুখপাত্র আবু মুহাম্মাদ আল-আদনানী তার সর্বশেষ বক্তব্যের – ‘তারা বেঁচে থাকে প্রমাণ প্রতিষ্ঠার পর’ – মাধ্যমে আবারো শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ, এবং তানযীম আল-ক্বা’ইদাতুল জিহাদের মানহাজের শ্রেষ্ঠত্বকেই পরোক্ষ ভাবে স্বীকার করে নিল। তবে অতীত জীবনে কবুতর শিকারি এই ধারালো জিভের উন্মাদ তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে হয় না।
আদনানী তার “তারা বেঁচে থাকে প্রমাণ প্রতিষ্ঠার পর” – শীর্ষক বক্তব্যে বলেছে-
“যদি তোমরা (অ্যামেরিকানরা) মসুল, সিরতে কিংবা রাক্কা দখল করে নাও, এমনকি সবগুলো শহর দখল করে নাও এবং আমরা আমাদের সূচনা অবস্থায় (গেরিলা যোদ্ধা দল) ফেরত যাই, তবে কি তা আমরা পরাজিত হব এবং তোমরা বিজয়ী হবে?”
প্রশ্ন হল, যদি জামাতুল বাগদাদী পুনরায় একটি গেরিলা যোদ্ধা দলে পরিণত হয়, তবে তখন তারা কি হবে? একটী “গেরিলা-খিলাফাহ”?!!
সে আরও বলেছে –
“হে মুসলিমরা ! নিশ্চয় আমরা কোন ভূমি রক্ষা, কিংবা মুক্ত করা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জিহাদ করি না। আমরা কতৃত্ব অর্জন কিংবা নশ্বর সাময়িক পদের জন্য, কিংবা এই দুনিয়ার তুচ্ছ আবর্জনার জন্যও যুদ্ধ করি না।“
অথচ তাদের খিলাফাহ দাবির পেছনে একটা বড় যুক্তিই ছিল তাদের “তামক্বীন”। শামসহ, লিবিয়া, ইয়েমেন, বিভিন্ন জায়গাতে তারা বারবার প্রমাণ করেছে তাদের মূল লক্ষ্য সর্বদাই থাকে তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ভুমি রক্ষা করা এবং নতুন ভূমির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষা করা কিংবা তাগুতের পতন তাদের মূল লক্ষ্য না। একারনেই তাদের স্লোগানই ছিল – “বাক্বিয়্যাহ ওয়া তাতামাদ্দাদ” যার মোটামুটি বাংলা অনুবাদ হল, “যা বিদ্যমান আছে ও থাকবে এবং প্রসারিত হচ্ছে”। এমনকি তাদের দ্রুত প্রসারকে তারা তাদের পক্ষে দলিল হিসেবেও উত্থাপন করতে দ্বিধা করতো না। আজ যখন প্রসারিত হবার বদলে তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল সংকুচিত হচ্ছে তখন হঠাৎ এই সীমালঙ্ঘনকারী তার সুর পাল্টে ফেলেছে।
ইতিপূর্বে কৌশলগত পর্যালোচনা প্রবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়েছিল-
“অন্য পদ্ধতিটি হল আত-তাকফির ওয়াল হিজরাহ (জামাতুল মুসলিমীন), GIA এবং হালের জামাতুল বাগদাদীর অনুসৃত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে সফল হল জামাতুল বাগদাদী। আত-তাকফির ওয়াল হিজরাহ কিংবা GIA, কোনটাই জামাতুল বাগদাদীর মতো সাফল্য অর্জন করে নি। এই দলটি শুরুতে ছিল তানজীম আল-ক্বাইদার অধীনস্ত একটি ইমারাহ যারা, ইরাকে কর্মকান্ড পরিচালনা করতো। ইরাকেও তাদের অবস্থা বেশির ভাগ সময় ছিল একটি গেরিলা দলের মত। পরবর্তীতে সিরিয়াতে আরো কিছু অংশের উপর তামক্বীন অর্জনের পর তারা নিজেদের খিলাফাহ এবং তাদের আমীরকে খালিফাহ হিসেবে ঘোষনা করেছে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে তারা মুসলিমদের তাকফির করেছে, তাদের জান-মাল-সম্মান হালাল করেছে এবং মারাত্বক সীমালঙ্ঘন করেছে। যদি আমরা জামাতুল বাগদাদীর অবস্থার দিকে তাকাই তাহলে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, কিছুক্ষন আগে আমরা হিযবুত তাহরির বা জামা-ইখওয়ানের সম্ভাব্য “খিলাফাহ”- ব্যাপারে যা যা হতে পারে বলে আলোচনা করলাম- তার সব কিছুই জামাতুল বাগদাদীর সাথে বাস্তবিকই হয়েছে। খিলাফাহ ঘোষণার মাস খানেকের মধ্যে তারা ব্যাপক আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে এবং আক্রমণ ও আত্বগোপনের (attack and retreat) একটি গেরিলা দলে পরিণত হয়েছে। খোদ তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন অঞ্চলে তারা মুসলিমদের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম না। এমনকি তাদের নেতাদেরকেও, তাদের রাজধানী রাক্কা থেকে অ্যামেরিকানরা ধরে নিয়ে গেছে।
পাশপাশি আমরা দেখেছি, জামাতুল বাগদাদী নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করতে সক্ষম বা ইচ্ছুক কোনটাই না। তাদের কথিত খিলাফাহ-র কাছেই মাদায়াহ শহরে ৪০,০০০ সুন্নী মুসলিম অনাহারে মারা যাচ্ছে, তারা সাহায্য করছে না, বা সাহায্য করতে অক্ষম। তাদের কথিত খিলাফাহর কাছে ইরাকের বিভিন্ন জায়গায় রাফিদা শি’আরা সুন্নীদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারছে, সুন্নী নারীদের ধর্ষণ করছে – তারা সাহায্য করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক। তাদের খিলাফাহর পাশেই পশ্চিম তীরে মুসলিমরা ইহুদীদের হাতে নিহত হচ্ছে। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, যেসব জায়গায় জামাতুল বাগদাদী উলাইয়্যা ঘোষণা করেছে – যেমন সিনাই, ইয়েমেন, লিবিয়া এবং খুরাসান – এখানেও তারা না মুসলিমদের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম আর না শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে। সুতরাং চক্ষুষ্মান সকলের জন্য এটা স্পষ্ট যে বাগদাদীর খিলাফাহ একটি বাস্তবতা বিবর্জিত ঘোষণা মাত্র।
তাদের সর্বোচ্চ গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত একটি ইমারাহ বলা যায়, যা ইরাক-সিরিয়ার কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। সমগ্র ইরাকের উপর, শামের উপর কিংবা যে যে জায়গায় উলাইয়্যা ঘোষণা করা হয়েছে তার কোথাও তাদের পূর্ণ তামক্বীন নেই। এছাড়া তারা এসব অঞ্চলের মুসলিমদের কুফফার ও তাওয়াগীতের আক্রমণের মুখে নিরাপত্তা দিতে অক্ষম। এরকম একটি দলের নিজেদের খিলাফাহ দাবি করা, তাদের বাই’য়াহ ওয়াযিব দাবি করা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন বাগাড়ম্বর ছাড়া আর কিছুই না।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রতিটি পদ্ধতিতে শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে ইমারাহ প্রতিষ্ঠার দিকেই যেতে হচ্ছে। আর এটাই হল তৃতীয় সশস্ত্র পদ্ধতি - তানজীম আল-ক্বাইদা তথা শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহর মানহাজ।“
আজ জামাতুল বাগদাদীর এই মূর্খ সীমালঙ্ঘনকারী এই সত্যকেই স্বীকার করে নিল। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হল নিজেদের অঞ্চল হারানোর ব্যাপারে সাফাই গাইবার পরেই, একই বক্তব্যে মুকাল্লা থেকে AQAP এর স্ট্র্যাটিজিক রিট্রিটের করার কারণে সে তানযীম আল-ক্বা’ইদার সমালোচনা করেছে। হাকিম আল-উম্মাহ শায়খ আইমান হাফিযাহুল্লাহকে “কথিত উম্মাহর নির্বোধ” বলে সম্বোধন করেছে। আল্লাহু মুস্তা’আন। অথচ এই একই বক্তব্যে এই অপদার্থ বলেছে –
“... আর যে মনে করে আমরা কোন ভূমির প্রতিরক্ষা কিংবা কতৃত্বের জন্য যুদ্ধ করি, কিংবা এগুলো বিজয়ের মাপকাঠি, নিশ্চয় সে সত্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে”।
যদি ভূমির জন্য যুদ্ধ জিহাদের মূলনীতি না হয় তাহলে মুকাল্লাহ থেকে কৌশলগত পিছু হটার জন্য কেন সে আল-ক্বা’ইদার সমালোচনা করছে? আর কোন মুখে সে সমালোচনা করছে যখন রামাদিতে, তিকরিতে, ফাল্লুজাতে এবং আরো অনেক জায়গাতে সে নিজেই পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে? সে নিজেই এ বক্তব্যে আক্রমণের মুখে কৌশলগত পিছু হটার এবং গেরিলা যুদ্ধের পর্যায়ে ফেরত যাবার যুক্তি দিচ্ছে। সে আরো বলছে সালাফ আস সলেহিনের মধ্যে কোন ভুখন্ড থেকে পিছু হটার কোন নজির নেই। অথচ আল- সাইফুল্লাহ মাসলুল খালিদ দামাস্কাস বিজয়ের পর, জিযিয়া ফেরত দিয়ে পিছু হটেছিলেন কৌশলগত কারনে। এমন নজীর তাবে’ঈ ও তাব-তাবে’ঈনদের মধ্যেও অনেক। আর যদি কৌশলগত কারনে কোন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ পাবার পর সেখান থেকে পিছু হটা বিদ’আ কিংবা হারাম হয় তবে তারা নিজেরা কেন তা করছে আবার তার স্বপক্ষে যুক্তি দিচ্ছে বা সাফাই গাইছে? তারা বলছে “আমরা তো ভূমির জন্য জিহাদ করি না, ভুমি গেলে কি আর হবে?” কতোবড় নির্বোধ! কতোবড় নির্লজ্জ হায়াহীন হলে, কান্ডজ্ঞানহীন হলে একই বক্তব্যে একই ব্যক্তি এরকম সাঙ্ঘর্ষিক কথা বলতে পারে!
হাকিম আল-উম্মাহ শায়খ আইমান হাফিযাহুল্লাহ যথার্থই বলেছেন, ঠিক যেমনিভাবে আলজেরিয়ার GIA এর প্রথমে নৈতিক ও পরবর্তীতে সামরিক অধঃপতন সুস্পষ্ট হয়েছিল, জামাতুল বাগদাদীর ক্ষেত্রেও একই রকম হচ্ছে – ওয়াল্লাহু ‘আলাম। ইতিপূর্বে মুজাহিদিনের স্ত্রীদের যিনাকারী আখ্যায়িত করা এবং নানা বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের নৈতিক অধঃপতন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আর আজ তাদের সামরিক অধঃপতন কবুতর শিকারি আদনানী নিজেই স্বীকার করছে, এবং আল্লাহই উত্তম ফায়সালাকারী।
হে কবুতর শিকারি মুর্খ, হে শামের যুওয়াবরি ! তোমার অবস্থাও তেমনই হচ্ছে যেমনটা হয়েছিল আলজেরিয়ার মুরগী জবাইকারির। অপেক্ষা করো। মুবাহালার পূর্ণ ফলাফল দেখার প্রতিক্ষায় আমরা আছি।
*************************