-পাঠকের কলাম -
=========================================
নদওয়ার চিঠি
----------------------
"উপমহাদেশের মুসলিম সমাজ প্রযুক্তিগত ভাবে না হলেও ধর্মীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্ব মুসলিমের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম"। এই উক্তি করেছেন কবি সম্রাট আল্লামা ইকবাল (রহ.)।
পাকিস্তান ও ভারতের বেলায় মরহুম আল্লামার মূল্যবান উক্তিটির যথার্থতা পরিলক্ষিত হয়। পাকিস্তান তো ইতিমধ্যেই মুসলিম উম্মাহর অন্যতম নেতৃত্বদান কারী রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবী ব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছে। সাম্প্রদায়িক বৈষম্যনীতির নির্মম শিকার হয়েও ভারতের মুসলমানরা পিছিয়ে নেই। ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে সদা দেদীপ্যমান " দারুল উলুম দেওবন্দের" কারিকুলাম অনুসরণ করছে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার হাজার হাজার ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উলুমে দ্বীনিয়াহ ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধন প্রয়াসী প্রাচ্যে আরবী তথা ইসলামি সাহিত্যের লালন ভূমি নদওয়াতুল উলামা লক্ষ্ণৌর ভূমিকায় মুগ্ধ মুসলিম দুনিয়া। আরব বিশ্বের সংবাদপত্র গুলোর ভাষ্য মতে, নদওয়ার হচ্ছে,"ওয়াহাতুল আরাবিয়াহ" বা আরবী সাহিত্য -উদ্যান।আন্তর্জাতিক ইসলামিক সাহিত্য পরিষদের হেড অফিসটি এখানেই অবস্থিত এবং পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ অলংকৃত করেছেন নদওয়ার মহাপরিচালক, অক্সফোর্ড ইসলামিক সেন্টারের চেয়ারম্যান আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী। কিন্তু দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে যে সত্যটি উচ্চারণ করতে হয় তা হলো উপমহাদেশেরই একটি অংশ বাংলাদেশের অবস্থা। সে দেশের মুসলমানের এক বিরাট অংশ কবি ইকবালের ধ্যান ধারণার সাথে ঐক্যমত পোষণ করে না। ঐতিহ্যমন্ডিত ও বিপুল সম্ভাবনা সমৃদ্ধ হয়েও কোটি কোটি মুসলিম অধ্যুষিত সে দেশটি আজও বিশ্ব মুসলিম নেতৃত্বের ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। যুগোপযোগী ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থার অনুপস্থিতিই এর প্রধান কারণ, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।তবে উলামা মাশায়ীখের নিষ্ঠাপূর্ণ সাহসী প্রচেষ্টা ও তাওহীদ প্রিয় মুসলমানদের আন্তরিক সহযোগিতায় সে দেশের মাদ্রাসা গুলো আপন সীমাবদ্ধতা ও অসম্পূর্ণতা সত্ত্বেও সামাজিক পর্যায়ে ব্যাপক অবদান রেখেছে সত্য, কিন্তু পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত শাসক শ্রেণির হীনমন্যতা ও স্বচ্ছ দৃষ্টি ভঙ্গির অভাবে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে ইসলামি শিক্ষার স্বীকৃতি মিলেনি।উপনিবেশিক যুগ হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন কল্পে আন্তরিকতা পূর্ণ কোন সরকারি উদ্যোগের কথাও আমাদের জানা নেই। বর্তমান সরকারের শাসন কালে তো রাজপথে ও সংসদে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার দাবী উচ্চারিত হয়েছে। সে দাবীর গুঞ্জরণ এতদূরে থেকেও আমরা শুনতে পেয়েছি।
সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈনক অধ্যাপক পাঠ্যক্রম থেকে ইসলামী ইতিহাস বিলুপ্তির আবদার জানিয়েছেন বলেও শুনেছি। এমনকি সবেধন নীলমণি একমাত্র ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়েও ষড়যন্ত্রের ফিরিস্তি অতি দীর্ঘ। তৌহিদী জনতার হৃদয় মুকুরে লালিত আশার আলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা ইসলামি মূল্যবোধের অনুকূলে নয় বলে জানি।নৈতিক চরিত্রের প্রাণ সংহারী সহশিক্ষার মত জঘন্য অনৈসলামিক পদ্ধতি সেখানে বিদ্যমান। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ইসলামি বিষয়ের প্রসার ঘটানোর প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়ে ভিসি এম.এ হামীদ সমালোচনা ও প্রতিবাদের সম্মুখীন বলে সংবাদ পেয়েছি। ভিসির প্রতি আমাদের একান্ত আহবান, যে কোন মূল্যে আপনার এ নন্দিত পদক্ষেপ সার্থক করে তুলুন।গুটি কয়েক মুখচেনা দালাল ছাড়া সকল দেশপ্রেমিক মহলের সমর্থক ও আশীর্বাদ আপনার সাথে আছে এবং থাকবে। সাথে সাথে মুসলমানদের ভোটে নির্বাচিত সরকার সমীপে একজন মুসলমান হিসাবে আমার দাবী, অনতিবিলম্বে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনে প্রয়াসী হোন যে শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী একদিকে ধর্মীয় নেতৃত্ব দানে দক্ষরুপে গড়ে উঠবে। অপরদিকে, দেশ গঠন, রাষ্ট্র পরিচালনা ও আধুনিক সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়ায় রাখবে আপন যোগ্যতা ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর। এ লক্ষ্যে সর্বাগ্রে প্রয়োজনঃ (১) দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম, সত্যিকার মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিশারদদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি শিক্ষাণমিশন গঠন করা। (২) কমিশন মদীনা ও রিয়াদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রোর আল - আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়ালালামপুর ও ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক ইসলামী, করাচীর আল্লামা ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ, নদওয়াতুল উলামা লক্ষ্ণৌ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের কারিকুলাম পর্যালোচনা ও বিশ্ববরেণ্য শিক্ষাবিদদের সাথে মত বিনিময়ের আলোকে একটি সর্ব সম্মত পাঠ্যক্রম প্রনয়ন করা।
(৩) কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত সকলের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
সময়ের অপরিহার্য দাবি- ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের সরকার যদি সচেষ্ট হোন তাহলে সেদিন বেশি দূরে নয় যে দিন মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ মুসলিম নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হবে এবং মরহুম ইকবালের স্বপ্ন চিন্তাধারা পাবে পূর্ণাঙ্গতা ও যথার্থতা।
ইউসুফ ইবনে নূর
আরবী সাহিত্য বিভাগ
নদওয়াতুল উলামা লক্ষ্ণৌ, ভারত।