JustPaste.it

আমার দেশের চালচিত্রঃ

 

তথাকথিত প্রগতিবাদ পশুবাদেরই নামান্তর

মুহাম্মাদ ফারূক হুসাইন খান

==================================================

 

        আজকাল প্রগতির বাজারে একটা বাক্যের খুব কাটতি যাচ্ছে। প্রগতিবাদীদের মুখে মুখে ফিরছে ‘মধ্যযুগীয় জাহেলিয়াত বা বর্বরতা’ – এই বাক্যটি। এনারা মধ্য যুগের কোন কিছুকেই সহ্য করতে পারেন না। মধ্যযুগের সমাজ, শাসন ব্যবস্থা, পারিবারিক বন্ধন, সংস্কৃতি সবটাই এদের না পছন্দ। মনে মনে ভাবেন, বিজ্ঞানের টর্চলাইট জ্বেলে দুনিয়াটা আমরা ফকফকা করে দিয়েছি। আমরা নির্মাণ করেছি শ্রেষ্ঠ সভ্যতা। সভ্যতার শিখরে আরোহণ করার বাহাদুরী জাহির করে তারা ইচ্ছেমত দোল খান, পা নাচান আর প্রগতির কোরাশ গান। নিজেকে সভ্য মানুষ প্রমাণ করার জন্য অতীতের মানুষদের আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সার্বিক জীবন ব্যবস্থাকে উদ্দেশ্য করে অফুরন্ত গালি বর্ষণ করেন। কোন ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা অথবা কোন গোষ্ঠির জীবন ব্যবস্থা, জনমত, বিচার ব্যবস্থা ওনাদের পছন্দ না হলে তার গায়ে একখানা ‘মধ্যযুগীয় চিন্তা বা বর্বরতা’ ধরণের স্টিকার সেটে দেন। এই স্বঘোষিত মহা মানবেরা কল্পনার ঘোড়ায় চরে সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছে যাওয়ার গলাবাজী করেন কিন্তু দুনিয়ার কোটি কোটি ভুখা, পঙ্গু, পুষ্টিহীন, অশিক্ষিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের প্রতি এদের নজর পড়ে না। অথচ এরা দাবি করে, দুনিয়া সভ্যতার চরম শিখরে উপনীত আর আমরা সেই দুনিয়ার সুসভ্য সদস্য। তাহলে শোষিত, বঞ্চিত কোটি কোটি আবদুল্লাহ্, যোগেস, ডেভিডরা কোন দুনিয়ার সদস্য? এদের শাসনের নামে শোষণ ও বঞ্চিত করে যারা সভ্যতার মা-বাপ সেজেছেন তাদের সংখ্যাটাই বা কত? খুব একটা বেশী নয়।  অথচ এই গুটিকতক ফরসা সভ্যতার দাবীদাররা তাদের উন্নতি দিয়েই গোটা দুনিয়ার সভ্যতার মাপকাঠি নির্ণয় করছেন। এবার আমরা একটু এই সুসভ্য মানুষদের ঘৃণিত (!) মধ্য যুগের প্রতি দৃষ্টপাত করব যে, সেটা কি জিনিস ছিল।

 

        সভ্য যুগের পোদ্দাররা মধ্যযুগ বলতে যা বোঝায় তা হল রাসূল (সাঃ) -এর নবুয়াত লাভের পর থেকে ইসলামের বিকাশ, সোনালী যুগসহ পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কে। এসময় ইসলাম আরব ভূখণ্ড থেকে ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া ও পাক-ভারত উপমহাদেশের বিস্তৃত দেড় হাজার বছর ব্যাপী মুসলমানরা দোর্দণ্ড প্রতাপের সাথে বিশ্বকে সত্যের পথে নেতৃত্ব দেয়। আজকের কারিগরি, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও আধুনিক সভ্যতার পত্তনসহ সবকিছু নতুন আদলে ঢেলে সাজান এবং এসবকে একটা মজবুত ভিত্তির ওপর দাড় করান। তাঁরাই কিন্তু ইসলামের নবী ও ইসলামকে অস্বীকারকারী ইউরোপের খৃষ্টান ও ইহুদী শক্তি ইসলামের এই উন্নতিতে প্রতিহিংসায় জ্বলে পুড়ে মরেছে। এ শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য দুই শতাব্দী যাবত তারা অসংখ্য ক্রুসেডের অবতারণা করেছে। অপরাজেয় মুসলিম শক্তিকে মোকাবিলা করার জন্য তৎকালীন ইউরোপে কোন একক শক্তি ছিল না। সুতরাং এজন্য তাদের পুরো ইউরোপের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়োজন হয়। আর এ কাজের জন্য তারা চরম ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের ধর্মীয় আবেগকে উস্কে দেয়ার হীন নীতির আশ্রয় নেয়। খৃষ্টান পাদ্রীরা ঢালাওভাবে মুসলমানদের বর্বর,অসভ্য, অবিশ্বাসী, শয়তান প্রভৃতি রূপে চিহ্নিত করতে থাকে এবং সমগ্র খৃষ্টান জগতে ঘোষণা করে দেয় যে, এদের ধ্বংস করে দেয়া প্রভুর নির্দেশ, এটা প্রত্যেক খৃষ্টানের পবিত্র ধর্মীয় কর্তব্য। যারা এ পবিত্র দায়িত্ব পালন করবে তাদের পাপ যিশু মোচন করে দেবেন এবং স্বর্গলাভ তাদের জন্য নিশ্চিত। একমাত্র খৃষ্টান ছাড়া আর কারো এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকার অধিকার নেই, ইত্যাদি। ব্যাস, পুরো ইউরোপ উন্মত্ত সমুদ্রের ঢেউয়ের মত একটার পর একটা মুসলিম বিশ্বের ওপর আছড়ে পড়তে থাকে। এক ক্রুসেড শেষ হতে না হতেই ইউরোপে আরেক কুসেডের ডঙ্কা বেজে উঠতে থাকল। সেদিনের খৃস্টান পাদ্রীরা খৃষ্ট সমাজকে ইসলাম সম্পর্কে যে হিংসা ও বিদ্বেষ প্রসূত ধারণা দিয়েছিল আধুনিক খৃষ্ট জগত সেই ক্রুসেডীয় উন্মাদনার সাথে সাথে এখনও সে ধারণা লালন করে চলছে। আজও খৃষ্ট জগত এমন ধর্মান্ধতায় ভুগছে যে, তারা ইসলামকে মনে করে সম্পূর্ণ একজন মানুষের সৃষ্ট মতবাদ এবং এর পেছনে গড বা আল্লাহর কোন ভূমিকা নেই। প্রখ্যাত ফরাসী বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ডঃ মরিস বুকাইলী (যিনি পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন) তার বিশ্বখ্যাত বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান বইতে বলেন, “তাদের কাছে কুরআনের কোনো উদ্ধৃতি দেওয়াটা শয়তানের বরাত দিয়ে কোন কথা বলার সমান!”

 

        এ খৃষ্টানরা আজও মুসলমানদের যে করে হোক ধ্বংস করে দেয়ার সুযোগ খোঁজে। একমাত্র ওই গোঁড়া ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে। ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি স্বভাবজাত গোড়ামীর তারা ঢালাওভাবে মুসলমানদের স্বর্ণালী ইতিহাসকে কালিমা লিপ্ত করার জন্য এই সময়কে মধ্যযুগীয় বর্বরতার যুগ বলে আখ্যায়িত করে। ইসলামের নবী, তাঁর প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ, শাসন ও বিচার ব্যবস্থা সবকিছুকেই তারা একজন বর্বর ব্যক্তির (!) চিন্তা-চেতনা বলে প্রচার করে। এই খৃষ্ট জগতের উদ্ভাবিত রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আদর্শকে ধার করে এনে মুসলিম বিশ্বের তথা কথিত সমস্ত প্রগতিবাদীরা রাজনীতি ও সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন করছেন তাদের মুখেও তোতা পাখির মত এই ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’ শব্দগুলি খইয়ের মত ফুটতে থাকে। আমাদের দেশের মুসলিম নামধারী ইসলাম বিদ্বেষী চক্ৰততা আরেক কাঠি সরেস। পাশ্চাত্যের লোকেরা মুসলমানদের নিকট থেকে ইসলামের দাওয়াত বাদে সকল কারিগরী ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রগতিবাদীরা ভাল মন্দ বিবেচনা না করেই কারিগরি, বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে সংস্কৃতি ও ধর্মীয় তত্ত্বও ধার করে এনেছে। ওরা প্রভুদের মুখে শোনা ‘মৌলবাদ’ আর ‘মধ্যযুগীয় বর্বতা’ প্রভৃতি খিস্তির মাধ্যমে ইসলাম মুসলমানদের গাল-মন্দ না করতে পারলে মনে শান্তি পায় না। ওরা জেনে শুনেই কোন কোন প্রভুভক্ত জানোয়ারের ন্যায় ইসলামের নবীকে একজন বর্বর ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে নিজেদের মহামানব হিসেবে জাহির করতে চায়, নিজেদের মনগড়া মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইসলামকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে।

 

        তথাকথিত প্রগতিবাদীরা ওই যুগকে বর্বরতার যুগ বলে যে দাবী করছে তার অসারতা প্রমাণে আমাদের মাথা ব্যথা নেই। কেননা, ছাগলকে কান ধরে বার বার বোঝানোর পর কান ছেড়ে দিলেই সে কান দুলিয়ে মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় সে বুঝতে মোটেই রাজি নয় অথবা সে বুঝেনা, কেননা সে ছাগল। সুতরাং আমরা ও পথে না গিয়ে বীরত্ব, এই প্রগতির যুগের ভদ্র মানুষের দাবীদারদের মানবিক মূল্যবোধ ও চারিত্রিক মহত্ব সম্পর্কে একটু আলোকপাত করব। বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকারময় ফুগ হিসেবে পরিচিত রাসূল (সঃ) -এর জন্ম গ্রহণের সময় থেকে এক শতাব্দী পূর্ব সময় পর্যন্ত। যে সময়কে আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগ বলা হয় সে সময়কার মানুষদের চরিত্রের সাথে এদের চরিত্রের একটু তুলনা করলেই এই ভদ্রদের মুখোশ খুলে যাবে।

 

        সেই জাহেলিয়াত যুগে নেতা নির্বাচিত হত সাহসিকতা, প্রজ্ঞা, বয়জেষ্ঠ্যতার ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু আধুনিক প্রগতিবাদীরা নেতা নির্বাচন করে ভোটচুরি, সন্ত্রাস, ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে এক টাকার বিড়ি সিগারেট, এক কাপ চা বা একটি রসগল্লার বিনিময়ে তারা ভোট বিক্রি করে দেয়। এই ভোট প্রক্রিয়ায় জাল ভোটের সুবাধে মৃত ব্যক্তিও কবর বা শশ্মান থেকে ভোট প্রদান করতে পারেন। লোকটি কতখানি সৎ তার নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ বিবেচ্য বিষয় নয়। বিবেচ্য বিষয় হল লোকটি ভোট কিনে, ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে যে ভাবেই হোক বেশী ভোট পেল কিনা তাই। সে-ই নির্বাচিত হন জননেতা। এ সুযোগে একজন পতিতাও হতে পারে সংসদ সদস্যা।

 

        সে যুগের মানুষ মাস্তানী, ছিনতাই, চাঁদা আদায়, ভোটচুরী, এসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি কায়দায় প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সাথে পরিচিত ছিল না। কিন্তু তথাকথতি প্রগতিবাদীরা এই সভ্য যুগে আমাদের এই সব কলা-কৌশল উপহার দিয়েছে। ছাত্র রাজনীতির নামে লাশের রাজনীতি ওই সভ্যদের নয়া আবিষ্কার। যা দেখলে জাহেলি যুগের মানুষরাও শিউরে ওঠত। ঐ যুগের মানুষরা একত্রে ৩/৪ জন বা তারও বেশী স্ত্রী রাখত এবং ইচ্ছে মাফিক যাকে খুশী পরিত্যাগ করত। কিন্তু সভ্য দুনিয়ার সাদা চামড়ার মানুষরা সে রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

 

        এখন ওদের পথে ঘাটে যাকে খুশী ভোগ করা ফ্যাসনে পরিণত হয়েছে। ইংল্যাণ্ডে ১৪ বছর বয়সের বেশী বালিকারা কুমারী থাকলে তাদের ঘৃণার পাত্রী হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৬ জনের একজন জারজ সন্তান। এখানে সন্তানের পিতৃ পরিচয় নির্ণয় করা যায় না বলে সন্তানকে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে মাতৃ পরিচয় দেওয়ার প্রচলন করা হয়েছে। আমাদের দেশের উগ্র নারীবাদীরা পাশ্চাত্যের অনুকরণে ‘নারী স্বাধীনতার’ শ্লোগান দিয়ে থাকেন। আবার দেখা যায় এরাই স্বামীর সাথে সাথে ড্যান্স ফ্লোর, নাইট ক্লাব, প্রমোদ তরী, হোটেল বারে পর পুরুষের সঙ্গ দিচ্ছেন। গাড়ীর চাবির ন্যায় স্বামীরা এসব স্ত্রীদের অন্যের নিকট বদল করছেন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। নারী বিকিনি পরে সাতার কাটছে, সুন্দরী নারী মডেল হচ্ছে খোলা পোষাকে, বিলাশ বহুল পতিতালয় স্থাপন করে এই প্রগতিবাদীরা পতিতা বৃত্তিকে একটা শখের পেশা হিসেবে গ্রহণ করছেন। অফিস-আদালতে বড় বসের প্রাইভেট সেক্রেটারী সুন্দরী নারী ছাড়া চলে না। আর এসব প্রাইভেট নারীরা রক্ষিতার ন্যায় বসের সকল চাহিদা পূরণ করে চলছেন। নারীকে সমান অধিকার দেয়ার কথা বলে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার নামে এই মুখোশধারী ভদ্র জাহেলরা শুধু ভোগের জন্য নারীকে যেভাবে ব্যবহার করে, স্বল্প বসনে সাজিয়ে নিজের চাওয়া-পাওয়ার চৌহদ্দিতে যে কায়দায় হাজির রাখেন তা সে যুগের মানুষরা কল্পনাও করতে পারত না। আধুনিক নারীরা প্রগতি আর আধুনিকতার যাতাকলে যে ভাবে নির্যাতিতা হচ্ছে, পুরুষের ভোগের পণ্যে পরিনত হচ্ছে সে যুগে এর শতাংশ ভাগ নির্যাতনও নারীদের ওপর হত কিনা সন্দেহ। হলিউড, বোম্বে-মাদ্রাজ সহ পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে উৎপাদিত নীল ছবির মাধ্যমে যে অগণিত নারীকে জঘন্য কায়দায় পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর মত জাহেলিয়াত কি কোন কালেও ছিল? বিশ্বের সিনেমা নামক রঙ্গ জগতের নায়িকারা স্কাণ্ড্যাল সৃষ্টি করে নারীত্বের যে চরম অবমাননা করে নারীর এমন অবমাননা আর কোন কালে কি ঘটেছিল? পাশ্চাত্যের প্রতিটি নারী এক একটা কলগার্লে পরিণত হয়েছে। নৈতিকতা, নারীর সতীত্ব সর্বোপরি লজ্জার এমন মর্মান্তিক দাফন ঐ জাহেলিয়াত যুগেও সংগঠিত হয়নি। অথচ প্রগতিবাদী-বাদীনীরা, এহেন সতীত্ব হরণ, নারী নির্যাতনকে জুলুম না বলে বলেন এ্যাডভেন্সার বা, ‘নারী স্বাধীনতা’।

 

        সে যুগের মানুষরা যুদ্ধ করত তরবারী, বর্শা, ঢালের মাধ্যমে। ফলে কেবল যুদ্ধের সাথে জড়িত ব্যক্তিরাই নিহত বা আহত হত। কিন্তু আধুনিক সভ্যরা দেশের সিংহভাগ মানুষকে অভুক্ত, অশিক্ষিত রেখে বানাচ্ছে পারমানবিক বোমা, কামান, মিজাইল। এর দ্বারা হিরোসিমা, নাগাসাকি ও ইরাকের ন্যায় লাখ লাখ নিরাপরাধ মানুষকে একসাথে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

 

        এই সভ্য যুগেই সভ্য মানুষরা দু’ দুবার বিশ্ব যুদ্ধ বাঁধিয়ে কোটি কোটি মানুষ হত্যা করেছে। মানবতার এমন ধ্বংস তাণ্ডব জাহেলী যুগের মানুষরা কি কল্পনাও করতে পেরেছে? এমন ধ্বংসাত্মক সমরসজ্জা দেখে তো সে যুগের মানুষরাও ভয়ে শিউরে ওঠতো। জাহেলীয়াত যুগে থানা, পুলিশ, ব্যাঙ্ক, টেন্ডার, শিল্প-কারখানা, কোম্পানী, কাস্টমস-ক্লিয়ারেন্স, প্রভৃতি ছিল না ফলে তখনকার দিনে কমিশন, ঘুষ, দুর্নীতি, দালালী, সেলামী, তদবির প্রভৃতিরও অস্থিত্ব ছিল না। কিন্তু আজ দুর্নীতি হচ্ছে ভদ্র মানুষদের নীতি, তাদের মান-ইজ্জত প্রতিপত্তি ও সম্পত্তি। ঘুষ না হলে আজ কোন অফিসের দারোয়ানও অফিসে ঢুকতে দিতে চায় না। ফাইল-টাইলের ব্যাপার স্যাপারতো বাদ। আধুনিক বিশ্ব অর্থনীতির পরাশক্তি জাপানের কোন সরকারই স্থায়ী হতে পারছে না এই দুর্নীতির ঠ্যালায়, কয়েক মাস যেতে না যেতেই সরকার বদল হচ্ছে পোশাকের ন্যায়। জার্মানী, ইটালী, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রের বিগত অধিকাংশ সরকার প্রধানই এই দোষে দুষ্ট। অথচ এরাই নিজেদের সভ্যতার শিখরবাসী বলে দাবী করে। আধুনিক থানা পুলিশের কেরামতিতে বিচারক মজলুমকে সাজা দেয়। কখনো টাকার বিনিময়েও বিচারের রায় বিক্রি হয়ে যায়।

 

        সে যুগের মানুষরা নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি করতো। কিন্তু এ যুগে কি কম হচ্ছে? প্রতিটি আদালতে হাজার হাজার মামলা ঝুলে আছে। আর এসব মামলায় জড়িত ব্যক্তির সংখ্যা কত হবে?

 

        জাহেলি যুগের মানুষ আর যাই হোক দেশ এবং স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করতো না। তারা ছিল দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ। কিন্তু আধুনিক প্রগতিবাদীরা? মাশাআল্লাহ, পকেটে কিছু মালপানি পড়লে তারা পারলে দেশটাকে ঝুড়িতে ভরে শত্রুর হাতে তুলে দিতে কসুর করে না। এ ব্যাপারে তারা খুব বেশী পাঁকা!

 

        উদাহরণ দিলে আধুনিক সভ্য মানুষদের কীর্তির মহাগ্রন্থ রচনা করতে হবে। প্রতিনিয়ত ওরা মহা-অপরাধ সংঘটিত করে চলছে আর তা অনায়াসে প্রগতি আর আধুনিকতা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। ওদের শয়তানী, ওদের প্রতারণা, ওদের পশু চরিত্রের প্রতি রুচিশীল মানুষ ধিক্কার জানালে ওরা তাদের “মধ্য যুগের বর্বর” বলে আখ্যায়িতকরে।

 

        মূলত পৃথিবীতে যা কিছু ভালো, যতটুকু সত্য ও ইনসাফ কায়েম হয়েছিল তা এই মধ্য যুগেই কায়েম হয়েছিল। কিন্তু ইবলিসী শক্তি প্রবল হওয়ায় এখন সত্য ও ন্যায়ের পথ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এই ইবলিসী শক্তির কারণে পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের ন্যায় আমাদের দেশেও ভালোর অপেক্ষা মন্দ প্রধান্য পাচ্ছে। অপশক্তি উদ্যত হয়েছে সবটুকু সত্য ও ইনসাফকে মুছে ফেলতে। তাই ওরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, প্রতিটি অঙ্গনে কাজের চেয়ে অকাজের অনেক কিছু বিনির্মাণ করেছে, করছে।

 

        এই সব জাহেলদের ধ্বংস করতে হবে। জাতিকে মাথা উঁচু করে দাড়ানোর জন্য ওদের সকল জাহেলী চিহ্নকে ধ্বংস করতে হবে। ইনসাফ প্রতিষ্ঠার তাগিদে গড়া নয় ধ্বংসের মন্ত্রে এখন দীক্ষা নিতে হবে। কেননা সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে এসব জাহেলিয়াত ধ্বংস না করে উপায় নেই। এসব জাহেলিয়াত ধ্বংস হলেই কেবল সত্য ও ন্যায়ের যন্ত্র বাধাহীনগতিতে চলতে পারবে। এর জন্য চাই ইনকিলাব, চাই বিপ্লব, চাই আমূল পরিবর্তন, চাই বিধ্বংসী মিথ্যা তেজোদ্বীপ্ত যৌবন শক্তি। এজন্য রাজপথে ঢেলে দিতে হবে বুকের তাজা রক্ত। আর সেই রক্তে শিক্ত হয়েই অঙ্কুরিত হবে বিপ্লবের চাড়া গাছ। কোথায় সেই অকুতোভয় নওজোয়ান, যার রক্তের কণিকায় কণিকায় সুপ্ত হয়ে আছে বিপ্লবের আগুন?

 

*****