JustPaste.it

"আল ফিরদাউস" পরিবেশিত

 

স্কুল অফ জিহাদ

 

উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দি হাফিজাহুল্লাহ

 

 

********************

 

আউযুবিল্লাহহি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম। বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম।

ইন্নাল হামদালিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ ওয়া আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি সাল্লাম তাসলিমান কাসীরা

আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আম্মা বাআদ

বাস্তবতা

জিহাদের দাওয়াহর প্রায় ৯৫% জুড়ে থাকে ‘কেন জিহাদ’ – এ নিয়ে আলোচনা। কীভাবে জিহাদ’ – এ নিয়ে আলোচনা হয় বাকি ৫% এ। সংখ্যাটা ৫-এর চাইতে আরো ছোটও হতে পারে। সুতরাং জিহাদ সংক্রান্ত অধিকাংশ লেখা, বক্তব্য, ভিডিও ইত্যাদি থেকে কেন জিহাদ করতে হবে’ – এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অত্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা পেলেও, কীভাবে জিহাদ করতে হবে এ নিয়ে খুব বেশি কিছু জানা যায় না।

আর এর পেছনে শক্ত কারণও আছে। উম্মাহর মূল সমস্যা হল তারা বিভিন্ন ভুল ব্যাখ্যা, দুনিয়ার ভালোবাসা, মৃত্যুকে অপছন্দ করা ইত্যাদি কারণে বিশুদ্ধ তাওহিদ সম্পর্কে প্রায় অজ্ঞ অবস্থায় আছে। তাওয়াগিতের পরিচয় ও তাদের বর্জন করার ব্যাপারে বেখেয়াল হয়েছে। আল ওয়ালা ওয়াল বারা বিস্মৃত হয়েছে। ফরয দায়িত্ব জিহাদ থেকে দূরে সরে আছে। তাই যারা বিশ্বজুড়ে জিহাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের মূল ফোকাস থাকে ঘুমন্ত উম্মাহকে জাগাবার। এছাড়া কীভাবে জিহাদ’ – এ আলোচনার মধ্যে রণকৌশল, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত পলিসি, স্ট্র্যাটিজি (strategy), ট্যাকটিক (tactics) ইত্যাদি বিষয় থাকে। যদি এধরণের বিষয় পাবলিকলি আলোচনা করা হয়, গণমানুষের সামনে প্রকাশ করা হয় তাহলে সেটা মুজাহিদিনকে কৌশলগতভাবে ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যায়। কারণ মুরতাদ তাওয়াগীত ও কুফফারের সামনেও বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়ে যায়।

একইসাথে, এও সত্য যে স্ট্র্যাটিজিক ও ট্যাকটিকাল বিষয়ে আলোচনা প্রত্যেক জিহাদ সমর্থক বা জিহাদি আন্দোলনের সাথে যুক্ত ব্যক্তির জন্য মানানসই না। প্রত্যেক ব্যক্তিকে এ বিষয়গুলো জানানোও আবশ্যক না। সর্বোপরি, জিহাদ একটি ফরয ইবাদাত এ সত্য উপস্থাপনের পর একজন মুমিনের প্রথম দায়িত্ব হল সে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হওয়া। আর যেহেতু জিহাদ একটি জামাতবদ্ধ ইবাদত তাই ব্যক্তির উপর আবশ্যক হল জামাতবদ্ধ হওয়া। কারণ যা কিছু আবশ্যককে অর্জনের জন্য প্রয়োজন তার সবকিছুই আবশ্যকে পরিণত হয়। আর যখন ব্যক্তি জামাতবদ্ধ হয়, তখন জামাআহ তাকে দিকনির্দেশনা দিতে থাকে ও দায়িত্ব বন্টন করে। তাই জিহাদি আন্দোলনের প্রতি দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে, জনসাধারণকে আন্দোলনের সাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে, ‘জিহাদ কীভাবে?’ – প্রাথমিক পর্যায়ে এ আলোচনা তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয় না।

তবে অনস্বীকার্য সত্য হল, কোন দল বা আন্দোলনের কাজ, কাজের প্রকৃতি, চিন্তাধারা, আদর্শ, উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, নীতিমালা, আক্বিদা, সিলেবাস, পলিসি - ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে কর্মীদের পক্ষে সম্ভব না কাজের ক্ষেত্রে নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার। এও অনস্বীকার্য যে কেবলমাত্র পাবলিকলি যেসব মিডিয়া রিলিজ (বই, রিসালাহ, বয়ান, ভিডিও) পাওয়া যায় তার মাধ্যমে এসবগুলো বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করা অধিকাংশের পক্ষেই সম্ভব না। তবে আলহামদুলিল্লাহ কত বেশ কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক মুজাহিদিন মিডিয়াগুলো এবং, গত প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাভাষার মিডিয়াগুলোতে ধীরগতিতে হলেও এসব বিষয়ে কিছু কিছু আলোচনা উঠে আসছে। এজন্য জিহাদি আন্দোলনের সাথে যুক্ত সকল ভাই এবং সকল সমর্থক ভাইদের উচিৎ জিহাদি মিডিয়ার রিলিজসমূহ সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল থাকা, বিশেষ মুজাহিদিন উলামা ও উমারাহর কিতাব, রিসালাহ ও বয়ানগুলো গভীর মনোযোগের সাথে পড়া ও এ নিয়ে চিন্তা করা।

এ দীর্ঘ ভূমিকার উদ্দেশ্য কী?

 

উদ্দেশ্য হল, বাংলাদেশে এবং উপমহাদেশে জিহাদের ব্যাপারে মুজাহিদিনের ভূমিকা কী হবে? – এ প্রশ্নের ব্যাপারে আমাদের চিন্তাকে পরিপক্ক ও স্বচ্ছ করার গুরুত্ব সম্পর্কে ভাইদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া। কারণ জিহাদের ক্ষেত্রে জযবা যেমন থাকা প্রয়োজন তেমনিভাবে উপযুক্ত সময়ে জিহাদি আন্দোলনের প্রয়োজনেই সেই জযবাকে কন্ট্রোল করারও প্রবণতা প্রয়োজন। দলীল-আদিল্লা জানা থাকা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন আসলিহাত ও এর ব্যবহারিক জ্ঞান। ব্যবসা হালাল না হারাম হচ্ছে তা জানা যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে জানা প্রয়োজন ব্যবসা কতোটুক লাভজনক হচ্ছে।

বাস্তবতা ২

বিভিন্ন কারণে এ ভূমিতে জিহাদি আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে, এবং আন্দোলনের পক্ষে দাওয়াত দানকারী, এমনকি আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীদের মধ্যেও উপরে আলোচিত বিষয়ের বেশ কিছুর ব্যাপারে সঠিক বা যথেষ্ট ধারণা নেই। সব ব্যক্তির সব ব্যাপারে ধারণা থাকা অপরিহার্যও না। তবে নিজেদের অজ্ঞতা সম্পর্কে অবগত থাকা এবং প্রয়োজনের নতুন কিছু শেখার জন্য ইতিবাচক মনোভাব সবার মধ্যে থাকা প্রয়োজন। তিনি যে দলেরই হোন না কেন। এক্ষেত্রে কে কতোদিন ধরে কাজের সাথে যুক্ত আছে, কে কার আগে কাজ শুরু করেছে, সাধারন মানুষের কাছে কার মর্যাদা বা অবস্থান কতোটুকু ইত্যাদি বিষয় প্রাসঙ্গিক না। বরং এসব বিষয় নিয়ে অধিক চিন্তা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়ায়।

একথাগুলো ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, তেমনিভাবে সংগঠনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

উপরোক্ত বাস্তবতাগুলোর বিবেচনায় এ দুর্বল বান্দা চেষ্টা করবে নিজ তুচ্ছ সামর্থ্য অনুযায়ী জিহাদি আন্দোলনের সাথে যুক্ত সকল ভাই ও সমর্থকদের জন্য উল্লেখিত এমন সব বিষয়ে কিছু বিষয় পরিষ্কার করা যেগুলো সম্পর্কে আমাদের চিন্তাধারায় পরিপক্কতা ও স্বচ্ছতা আসা দরকার, বিইযনিল্লাহ। ইনশা আল্লাহ এর মধ্যে মুজাহিদিনের কল্যাণ নিহিত আছে। কারণ যতক্ষন নিজ দায়িত্ব, উদ্দেশ্য ও ভূমিকা সম্পর্কে কেউ পূর্ণ সচেতন হয় না, ততক্ষণ তার পক্ষে যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হয় না।

আল্লাহ সহজ করুন। ওয়ামা তাওফিক্বি ইল্লাহ বিল্লাহ।

সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও তাঁর সাহাবিগণের উপর, কেয়ামত পর্যন্ত।

 স্কুল অফ জিহাদ ১ - অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ভূমিঃ

জিহাদ কোথায় হবে? কীভাবে হবে?

এখানে যে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হচ্ছে তা কোন শার’ঈ ফতোয়া না। বরং ময়দানের বাস্তবতার আলোকে কিছু মুজাহিদিন উমারাহর ইজতিহাদ, এবং ক্বাইদাতুল জিহাদের মত। এক্ষেত্রে কেউ ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন। তবে গেরিলা যুদ্ধ, রাজনীতি ও ময়দানের বাস্তবতার সাথে ওয়াকিবহাল না, দীর্ঘদিন জিহাদি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়নি এমন কারো কথা স্বভাবতই তেমন গুরুত্ব পাবার যোগ্য না। যাদের জিহাদের ব্যাপারে জ্ঞান হল ঘরে বসে বই/আর্টিকেল পড়া, ভিডিও দেখা, কিংবা দাওয়াতি কাজ করা, কিংবা বাংলাদেশে কিছু অপারেশন করা, তাদের কথা শায়খ উসামা, শায়খ আইমান, শায়খ আবু বাকর নাজি, শায়খ আবু মুসাব আস-সুরি, শায়খ সাইফ আল-আদল, শায়খ আবু ফিরাস আস-সুরিসহ অন্যান্যদের কথার সামনে তেমন কোন গ্রহণযোগ্যতা রাখে না। এটা শায়খদের সম্মান ও ব্যক্তিপরিচয়ের কারণে না। তাদের দীর্ঘদিনের, একাধিক ময়দানের, একাধিক তানজীমের, একাধিক যুদ্ধের, একাধিক মডেলে কাজ করার অভিজ্ঞতার কারণে। যে জানে আর যে জানে না, সে সমান না।

মূল আলোচনায় যাবার আগে ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামা বিন লাদিনের রাহিমাহুল্লাহ একটি উক্তি আমি আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি। এই উক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে এমন এক বাস্তবতা ফুটে উঠেছে যা অনুধাবন করা ছাড়া সমস্যার সমাধান কিংবা লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না -

"সম্ভবত এর আগেও আমি এ বিষয়ে কথা বলেছি। বর্তমানে আমাদের শত্রুদের তুলনা হল একটি বিষাক্ত গাছের ন্যায়। ধরা যাক, এই গাছের কান্ডের পুরুত্ব হল ৫০ সেমি। গাছটির বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের ও পুরুত্বের অনেক ডাল-পালা, শাখা-প্রশাখা আছে।

গাছটির কান্ড হল অ্যামেরিকা। আর ন্যাটোর সদস্য অন্যান্য দেশগুলো, আরব শাসকগোষ্ঠী, ইত্যাদি হল গাছটির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা স্বরূপ। আর আমাদের (মুজাহিদিন) তুলনা হল, সে ব্যক্তির মতো যে এই গাছ কেটে ফেলতে চায়। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা, সামর্থ্য এবং উপকরণ সীমিত। তাই আমরা দ্রুত এ কাজটি (গাছ কেটে ফেলা) করতে সক্ষম নই। আমাদের একমাত্র উপায় হল, ক্রমাগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি করাতের মাধ্যমে এই গাছের কান্ডটিকে কেটে ফেলা। আমাদের লক্ষ্য হল, এই গাছের কান্ড কেটে ফেলা, এবং গাছটি ভূপাতিত হবার আগে না থামা।

ধরুন, আমরা গাছের কান্ডের ৩০ সেমির মতো কেটে ফেলেছি। এখন, আমরা একটা সু্যোগ পেলাম গাছে কোন একটি ডাল, যেমন ব্রিটেন; সম্পূর্ণ ভাবে কেটে ফেলার। এক্ষেত্রে আমাদের উচিৎ হবে এই সু্যোগ উপেক্ষা করে, কান্ড সম্পূর্ণভাবে কাঁটার কাজে মনোনিবেশ করা।

যদি আমরা এই ডাল, কিংবা সেই ডাল কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরি, তাহলে আমরা কখনোই আমাদের মূল কাজ (কান্ড কেটে কুফরের গাছকে ভূপাতিত করা) সম্পন্ন করতে পারবো না। এভাবে আমাদের কাজের গতিও বাধাপ্রাপ্ত হবে, এবং আরো গুরুতর ব্যাপার হল, আমাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

গাছ ভূপাতিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমরা কান্ড কাটার কাজ চালিয়ে যাবো। ইনশা আল্লাহ্, গাছ ভূপাতিত হবার পর, শাখাগুলো আপনাআপনিই মারা যাবে।"

-আল ইমাম আল মুজাদ্দিদ শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ

[অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্টস থেকে গৃহীত]

এই উক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাস্তবতা উঠে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম হল -

১) আমাদের ও শত্রুর মধ্যে শক্তির ব্যাপক ভারসাম্যহীনতা রয়েছে

২) অর্থস্বল্পতা

৩) পর্যাপ্ত উপযুক্ত জনবলের অভাব

 

ইতিপূর্বে “একটি কৌশলগত পর্যালোচনাশীর্ষক লেখায় আমি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, তাই এখানে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করা হল না। তবে এক কথায় যদি আমরা শাইখের এ উক্তিতে ফুটে ওঠা বাস্তবতার সারমর্ম তুলে ধরতে চাই তবে বলা যায়

আমরা সীমিত সামর্থ্য দিয়ে অত্যন্ত দামি একটি পণ্য কেনার চেষ্টা করছি।

এই মূহুর্তে আমাদের আছে যতটুক সীমিত সামর্থ্য আছে তা দিয়ে এই পণ্য কেনা সম্ভব না। তাহলে কী করণীয়?

ধরুন আপনার কাছে ১,০০০ টাকা আছে। আপনি ১০ কোটি টাকা দামের কোন হীরার টুকরো কিনতে চাচ্ছেন। আপনি কী করবেন? যদি আপনি দৃঢ় সঙ্কল্প হন তাহলে আপনি আপনার এই ১,০০০ টাকাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে ১০ কোটিতে পৌছানোর চেষ্টা করবেন। আপনি আপনার এই ১,০০০ টাকা বিভিন্ন ব্যবসায় খাটাবেন। তা থেকে লাভ অর্জন করবেন, আবার খাটাবেন, এবং এভাবে আস্তে আস্তে আপনার লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকবেন।

স্বাভাবিকভাবেই তাহলে উপসংহার টানা যায় যে, আমাদের সীমিত সামর্থ্য আমরা কোথায় কোথায় ব্যয় করবো তা নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে চিন্তার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। যদি হেলাফেলা করে, কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়ে আমরা সব সম্বল আগেই খরচ করে ফেলি তাহলে প্রকৃত প্রয়োজন পূর্ণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। যদি আপনি যাচাইবাছাই না করে, বাজারের অবস্থা না বুঝে, নিছক ভালোলাগা, আবেগ কিংবা কারো কথায় কান দিয়ে আশেপাশের সব ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে ফেলেন, তাহলে আপনার পথে বসার সম্ভাবনা বেশ প্রকট।

জিহাদি আন্দোলনের ক্ষেত্রে, প্রায়োগিকভাবে এই কথার অর্থ হল জিহাদি তানজিমগুলো কীভাবে ও কোথায়, কোন মাত্রায় জনবল, অর্থ ও অস্ত্র ব্যয় করবে সেটা সঠিকভাবে নির্ধারন করা আবশ্যক। যদি জিহাদি আন্দোলন এটা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তা চরম মাত্রার ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসবে। যেহেতু এই আন্দোলনের সামর্থ্য সীমিত।

এই ক্ষেত্রে শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিব্বীর রাহিমাহুল্লাহ একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই –

জিহাদ করা হল নতুন ব্যবসা শুরু করার মতো। আর আল্লাহ জিহাদকে ব্যবসাই বলেছেন। ব্যবসার শুরু করার আগে আপনাকে বেশ কিছু বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। আপনি কিন্তু শুধু ব্যবসাটা হালাল হচ্ছে নাকি এটাই দেখবেন না। এটা হল শারঈ অংশ। কিন্তু আপনাকে আরো কাজ করতে হবে। বাজার নিয়ে গবেষণা করতে হবে যাতে করে আপনার জিনিসের চাহিদা আছে কি না এটা বুঝতে পারেন। কারণ যদিও আপনার মূল লক্ষ্য আল্লাহকে খুশি করা ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা, কিন্তু পাশাপাশি জীবিকা অর্জন করাও আপনার লক্ষ্য।

 

তাই আপনাকে চিন্তা করতে হবে, কিভাবে লাভ করা যাবে। আপনার চিন্তা করতে হবে কোন জায়গায় দোকান দিলে সেটা লাভজনক হবে। চিন্তা করতে হবে কারা আপনার মূল ক্রেতা হবে, তাদের কাছে কিভাবে আপনার পণ্যকে উপস্থাপন করা যেতে পারে। কিভাবে মার্কেটিং করতে হবে, মালামাল পৌছাতে হবে। এ বিষয়গুলো আপনি এড়াতে পারবেন না। শুধুমাত্র পণ্য হালাল হওয়াই প্রফিট করার জন্য যথেষ্ট না।

এ একই কথা খাটে জিহাদের ক্ষেত্রে। আপনাকে শুধুমাত্র শার’ঈ দিকটা দেখলে হবে না। কারণ আপনি দুটো লক্ষ্যের মধ্যে যেকোন একটা চাচ্ছেন। আপনার একটি লক্ষ্য হল শাহাদাহ অথবা শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা। পাশাপাশি আপনার লক্ষ্য হল মুসলিম উম্মাহকে অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে রক্ষা করা। অর্থাৎ এ দুটো উদ্দেশ্য নিয়েই আপনাকে কাজ করতে হবে। আর তাই আপনাকে সামরিক সক্ষমতা, জনবল, বাজেট, স্ট্র্যাটিজি, রণকৌশল, কোন শত্রুর উপর আঘাত হানা অগ্রাধিকার পাবে এ সব কিছুই চিন্তা করতে হবে।

অর্থাৎ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে, নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। কেন খিলাফতের পতন ঘটলো? বর্তমানে উম্মাহর রাজনৈতিক অবস্থা কী? আমাদের দুর্বলতার কারণ কী? আমরা কী কী অসুবিধায় ভুগছি? আমাদের পথে মূল বাধা কী? আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি কী? আমাদের শত্রুদের মূল শক্তি কী? তাদের বৈশিষ্ট্য কী? আর এ সব কিছুর আলোকে শত্রুর বিরুদ্ধে সর্বাধিক উপযুক্ত ও বাস্তবসম্মত স্ট্র্যাটিজি কী?

এসব কিছু চিন্তা করেই আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। কারণ জিহাদ একটা নতুন ব্যবসা শুরু করার মতো।”

শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবি রাহিমাহুল্লাহ [আস সাহাব মিডিয়া]

যদি শায়খের চমৎকার এই উদাহরণ আমরা বুঝি তাহলে পরবর্তী প্রশ্ন হল – জিহাদি আন্দোলন ঠিক কোন কোন ব্যবসায় তার সীমিত পুঁজি খাটাবে? আর এক্ষেত্রে এক-একটি অঞ্চল বা দেশ-ভূমি হবে এক-একটি ব্যবসা।

প্রাথমিক পর্যায়ে – অর্থাৎ অঞ্চলভিত্তিক জিহাদি আদর্শের তানজিমের পর্যায়ে, এ বিষয়ে সূক্ষ্ম আলোচনা অনুপস্থিত ছিল বলা যায়। সব তানজিম নিজ নিজ অঞ্চলে ময়দান কায়েম করা, ক্বিতাল করা, তাগুতকে উচ্ছেদ করাকে নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারন করেছিল। মিশরের জামাতুল জিহাদ ও জামাআহ ইসলামিয়্যাহ, লিবিয়ার আল জামাআহ ইসলামিয়্যাহ আল মুক্বাতিলা বি লিবিয়া, ফিলিস্তিনের বিভিন্ন দল, সিরিয়ার আল তালিয়াহ আল-মুক্বাতিলা, প্রথম আফগান জিহাদ কেন্দ্রিক দল, কাশ্মীরের বিভিন্ন তানজিম এইভাবে অগ্রসর হয়েছিল। মজার ব্যপার হল প্রত্যেক এমন তানজিম নিজেদের কাজকেই, নিজের ময়দানকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছিলো। এই পদ্ধতির অনুসরণের কারণে এমন প্রতিটি তানজিমই নিজ নিজ অঞ্চলে অত্যন্ত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ক্বাইদাতুল জিহাদ ও এর গ্লোবাল জিহাদের মানহাজের জন্মই হয় প্রথম পর্যায়ের এ মানহাজের ব্যর্থতা থেকে উত্তরনের উদ্দেশ্যে।

আমাদের ভূখন্ডে দুটি জিহাদি জামা’আহ হরকাতুল জিহাদ এবং জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ সাধ্যমত অঞ্চল ভিত্তিক মানহাজ অনুযায়ী কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। কিন্তু অবধারিতভাবেই অন্যান্য জায়গাতে যা হয়েছিল, এখানেও তার পুনরাবৃত্তি হয়। আর এর কারণ হল আল্লাহর কিছু অলঙ্ঘনীয় নিয়ম আছে যেগুলর ব্যাপারে কেউই ছাড় পায় না। যারা অঞ্চল ভিত্তিক পদ্ধতিতে কাজ করেছেন এই ভূখণ্ডে এবং অন্যত্র, তাদের ব্যর্থতার মূল কারণ হল অঞ্চলভিত্তিক তাগুত উৎখাতের এ পদ্ধতির মৌলিক দুর্বলতা। এর অর্থ এই না যে এসব তানজিমের সদস্যদের ইখলাস বা দক্ষতা ছিল না। বরং আমরা উল্টোটাই মনে করি, এবং সুধারণাই রাখি। কিন্তু যদি পদ্ধতি ভুল হয়, সেক্ষেত্রে ফলাফল কেমন হবে তা পূর্বনির্ধারিত।

দুঃখজনক ব্যাপার হল, বর্তমানে এমন অনেক ভাই আছেন যারা ক্বাইদাতুল জিহাদ এর মানহাজ বোঝেন, অনুসরণ করেন, কিংবা জিহাদি আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার কথা দাবি করেন। কিন্তু দেখা যায়, তারা আসলে মানহাজ বলতে প্রথম পর্যায়ের এই আঞ্চলিক জিহাদের মানহাজকে বুঝে থাকেন। পার্থক্য হল তারা একটা গ্লোবাল বা বৈশ্বিক সংগঠনের অধীনে এই আঞ্চলিক জিহাদের মানহাজ অনুসরণ করাকে, গ্লোবাল মানহাজ মনে করেন। একই ভুল বারবার হতে দেখা হতাশাজনক।

যাই হোক। আঞ্চলিক জিহাদের মানহাজের দুর্বলতা সম্পর্কে “একটি কৌশলগত পর্যালোচনাশীর্ষক সিরিজে বিস্তারিত আলোচনা থাকায়, এখানে পুনরাবৃত্তি করা হল না। আগ্রহী ভাইদের উক্ত সিরিজটি পড়ার অনুরোধ করছি।

ক্বাইদাতুল জিহাদ সর্বপ্রথম এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করে। এবং কোন কোন ব্যবসাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ, অর্থাৎ কোন কোন ভূমিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, এবং কীসের ভিত্তিতে এ নিয়ে অত্যন্ত বিস্তারিত ও সুক্ষ আলোচনা, গবেষণা ও বিশ্লেষণ তুলে ধরে। আর এর উপর ভিত্তি করেই ক্বাইদাতুল জিহাদ তাদের গ্লোবাল মানহাজ ও পরিকল্পনা নির্ধারন করে কাজ করেছে এবং করে যাচ্ছে। জিহাদি আন্দোলনের পরিকল্পনা ও কৌশল সংক্রান্ত কিতাবসমূহে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আমরা এখানে সংক্ষেপে সেগুলোর কিছুটা আলোচনা করবো।

বিভাজনঃ

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ও ভূখন্ডগুলোর মধ্যে কীভাবে জিহাদি আন্দোলনের সীমিত সক্ষমতা (পুঁজি) কাজে লাগানো হবে এ ব্যাপারে ক্বাইদাতুল জিহাদের স্ট্র্যাটিজিস্ট বা সমরকৌশলবিদ শায়খ আবু বাকর নাজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন –

 ‘...সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষন ও বিশ্লেষণের পর জিহাদি আন্দোলন কিছু ভূখন্ডকে, আরো সঠিকভাবে বললে কিছু অঞ্চলকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অঞ্চল হিসেবে নির্ধারিত করেছে। এই অগ্রাধিকারপ্রাপ্তঅঞ্চলগুলো হবে মুজাহিদিনের কাজের ও মনযোগের মূল কেন্দ্র। মুজাহিদিন তাদের কেন্দ্রীভূত আক্রমনী শক্তি এসব অঞ্চলে কাজে লাগাবেন, যাতে করে তাদের (সীমিত) শক্তি এমন সব অঞ্চলে ক্ষয় না হয় যেখানে শক্তিপ্রয়োগ (দীর্ঘমেয়াদী) কোন ফলাফল বয়ে আনবে না।’ [ইদরাতুল তাওয়াহ্হুশ, আবু বাকর নাজি ]

শায়খ আবু বাকর নাযি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মুজাহিদ উমারাহ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অঞ্চল নির্ধারনের ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের দিকে লক্ষ্য রেখেছেন। কোন ভূখণ্ড বা অঞ্চল, ‘অগ্রাধিকারপ্রাপ্তবলে গণ্য হবার জন্য যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক সেগুলো হল –

- ভৌগলিক গভীরতা (Geographical Depth) – অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে দেয়ার জন্য কোন অঞ্চলের ভৌগলিক উপযোগিতা।

- উক্ত অঞ্চলের শাসকগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় শাসন তুলনামূলকভাবে দুর্বল হওয়া। অর্থাৎ ক্ষমতার কেন্দ্র (রাজধানী) থেকে দূরবর্তী ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শাসকের নিয়ন্ত্রন তুলনামূলক ভাবে দুর্বল হওয়া

- জিহাদ, ইসলামি শাসনের ব্যাপারে দাওয়াহ ব্যাপক হওয়া

- উক্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী চিন্তাগত মানসিক গঠনের দিকে দিয়ে যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত হওয়া এই ক্ষেত্রে এক অঞ্চলের লোকের উপর অন্য অঞ্চলের লোকের প্রাধান্য দিয়েছেন

- অস্ত্রের সহজলভ্যতা

সুতরাং কোন অঞ্চল জিহাদি সামরিক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে কি না, সেটা বিবেচনার সময় আমাদের মিলিয়ে দেখতে হবে ঐ অঞ্চলের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো কোন কোন মাত্রায় আছে, বা আদৌ আছে কি না।

সামরিক দিক দিয়ে চিন্তা করলে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অঞ্চলগুলো ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলগুলোর কিছু দুর্বলতা আছে, এমনকি যেগুলোতে মোটামুটি শক্তিশালী ইসলামি আন্দোলন বা চেতনা আছে অথবা জিহাদি তানযিমের অস্তিত্ব আছে, সেগুলোতেও। এই দুর্বলতাগুলো হল

- শাসকগোষ্ঠী অত্যন্ত শক্তিশালী

- শাসনক্ষমতা কেন্দ্রীভূত, এবং ক্ষমতার প্রভাব বিস্তৃত। এমন কোন অঞ্চল নেই যেখানে শক্তিশালী সরকারবিরোধী মনোভাব ও বিদ্রোহ আছে

- মুজাহিদিনের চলাচলের স্বাধীনতা অত্যন্ত সীমিত

- সমাজ ও জনগণের মানসিকতা যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত না

 

লক্ষ্য করুন, পুরো বিষয়টা নির্ধারন করা হচ্ছে সফলভাবে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ চালিয়ে যাবার লক্ষ্যকে সামনে রেখে। আর এর কারণ হল মুজাহিদিনের বর্তমান সক্ষমতায় কোন তাগুত শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে, কোন ভুমি দখল করে, স্বল্প সময়ে পূর্ণ তামকিন (কর্তৃত্ব) অর্জন করা ও টিকিয়ে রাখা সম্ভব। যার প্রমান জামাতুল বাগদাদির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি।

শায়খ আবু মুস’আব আস-সুরির ফাকাল্লাহু আসরাহ গবেষণাতেও একই রকম সিদ্ধান্ত উঠে এসেছে। তিনি কোন ভূমি থেকে তাগুতকে হটানো, সেখানে তামকিন অর্জন এবং শারীয়াহ প্রতিষ্ঠাকে ময়দানি যুদ্ধের (Open Front Jihad) সাথে সংযুক্ত করেছেন। তার উপসংহার হল, ময়দানি যুদ্ধ ব্যাতীত অপর কোন পন্থায় এসবগুলো উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব না। কোন ভূখন্ড/অঞ্চলে মুজাহিদিন ময়দানি যুদ্ধে জড়ানোর কথা বিবেচনা করবে এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন

গেরিলা যোদ্ধার সবচেয়ে মারাত্মক দুর্বলতা হল ভুল সময়ে স্থায়ী ঘাঁটি থেকে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া। নিজের স্থায়ী ঘাঁটি ও নিরাপদ আশ্রয় স্থল (safe haven) রক্ষার যুদ্ধে বাধ্য হওয়া গেরিলার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক...

ময়দানি যুদ্ধে সফল হবার জন্য কিছু কৌশলগত পূর্বশর্তের উপস্থিতি আবশ্যক। আর সফলতা কেবল আল্লাহরই পক্ষ থেকে।

আবশ্যক পূর্বশর্ত - ভৌগলিক

১) উক্ত অঞ্চল বিস্তৃত হওয়া যেখানে স্বাধীনভাবে মুজাহিদিন চলাচল করতে পারবে

২) বিভিন্ন ধরনের এলাকা থাকা (পাহাড়, জঙ্গল, মরুভূমি ইত্যাদি), লম্বা সীমান্ত থাকা

৩) এমন জায়গা যা অবরোধ করে রাখা কঠিন

৪) কিছুটা হলেও পাথুরে পার্বত্য অঞ্চল, জঙ্গল বা এধরনের এলাকা থাকা। কারণ এরকম স্থানে শত্রু ছোট জায়গায় অনেক সেনা জমায়েতে বাধ্য হয়, এবং তাদের মোকাবেলা করা সহজ হয়। এক্ষেত্রে গাছে ঢাকা পাহাড় সর্বাপেক্ষা উত্তম।

৫) পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ও পানির উৎস থাকা, যাতে করে অব্ররোধ করা হলেও মুজাহিদিন টিকে থাকতে পারে

জনগোষ্ঠী

প্রচুর পরিমাণে এমন জনগণ থাকা যাদের চলাফেরার উপর নজরদারি করা সম্ভব না। বিশেষ করে এমন জনবসতিপূর্ণ পল্লী অঞ্চল, এবং ঘনবসতি পূর্ণ শহর থাকা উত্তম। একই সাথে উক্ত অঞ্চলের যুবকে মাঝে যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও জেদ থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজন সামরিক যোগ্যতা ও অধ্যাবসায়। উক্ত অঞ্চলে অস্ত্রের সহজলভ্য উৎস থাকা প্রয়োজন। [দাওয়াতুল মুয়াক্বাওয়ামা আল-ইসলামিয়্যাহ আল-আলামিয়্যাহ]

শায়খ আবু মুস’আব তিনটি ময়দানি যুদ্ধের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে তার উপসংহারের যৌক্তিকতা উপস্থাপন করেছেন। এ তিনটি ময়দান হল আফগানিস্তান, চেচনিয়া এবং বসনিয়া।

এর মধ্যে আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে সবগুলো বৈশিষ্ট্য উপস্থিত ছিল।

চেচনিয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ উপাদান উপস্থিত ছিল।

বসনিয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত ছিল, যেমন অস্ত্রের সহজলভ্যতা, জনগনের যুদ্ধংদেহী ও জেদি মনোভাব।

এই তিনটি ময়দানের মধ্যে বসনিয়ার জিহাদ উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। চেচনিয়ার জিহাদ আংশিকভাবে সফল হয়, এবং আফগান জিহাদ সম্পূর্ণভাবে সফল হয়।

এ বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি শায়খ আবু মুস’আব এবং শায়খ আবু বাকর নাযি দুজনেই জনসমর্থনকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবশ্যক পূর্বশর্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

শায়খ আবু মুস’আব তার এ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ময়দানি যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত কিছু ভূমির নাম উল্লেখ করেছেনঃ

আফগানিস্তান

মধ্য এশিয়ার দেশসমূহ

ইয়েমেন তথা জাযিরাতুল আরব

মরক্কো ও উত্তর আফ্রিকা

বিলাদ আশ-শাম

অন্যদিকে আবু বাকর নাযি রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেছেন ৯/১১ এর পর (২০০৩ এর আগে) তানযিম ক্বাইদাতুল জিহাদের পক্ষ থেকে যেসব অঞ্চলকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বলে বিবেচনা করা হচ্ছিলো তার মধ্যে ছিলঃ

জর্ডান

ইসলামি মাগরিব

নাইজেরিয়া

ইয়েমেন

বিলাদ আল-হারামাইন

পাকিস্তান

 

আজ এক দশকেরও বেশি সময় পর দেখা যাচ্ছে শায়খগণ তাদের বিশ্লেষণে সঠিক ছিলেন।

উপসংহারঃ

উপরে আমরা দুজন মুজাহিদ সমরকৌশলবিদের বিশ্লেষণ অতি সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। দুজনের বক্তব্যে সারসংক্ষেপ হল –

১) মুজাহিদিনের সামর্থ্য সীমিত

২) এই সীমিত সামর্থ্য কিছু অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হবে

৩) অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ভূমির কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকবে – যেমন দীর্ঘ ম্যেয়াদি গেরিলা যুদ্ধের উপযোগী ভৌগলিক অবস্থা, মুজাহিদিনের স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ, অস্ত্রের সহজলভ্যতা, জনগোষ্ঠীর যুদ্ধংদেহি ও জেদি মনোভাব, তাগুতের কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হওয়া, জনসমর্থন।

৪) অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ভূমি/অঞ্চলগুলোতে মুজাহিদিন তাগুত শাসকগোষ্ঠীর সাথে ময়দানি যুদ্ধে যাবেন এবং তাগুতি শাসন উচ্ছেদ করে, তামকিন অর্জন ও ইসলামি শাসন কায়েমের চেষ্টা করবেন

এখানে দু’জনের বক্তব্য তুলে ধরা হলেও বস্তুত এটিই কেবল এ দুজনের অবস্থান না। বরং এই বিশ্লেষণই ক্বাইদাতুল জিহাদের বিশ্লেষণ। গত এক দশকে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু মৌলিক কাঠামোগত কোন পরিবর্তন আসে নি। এবং এর প্রমান হল হাকিম আল-উম্মাহ শায়খ ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরীর হাফিযাহুল্লাহ নিম্নোক্ত বক্তব্য

আমেরিকার তাবেদারদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর ব্যাপারে বলতে হলে, এর বাস্তবতা একেক জায়গায় একেক রকম। এক্ষেত্রে সাধারণ মূলনীতি হচ্ছে, তাদের সাথে যে কোন সংঘর্ষ এড়িয়ে যাওয়া, শুধুমাত্র সেই দেশসমূহ ব্যতীত যেখানে সম্মুখ সমরে তাদের মোকাবেলা করা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। [জিহাদের সাধারণ দিক-নির্দেশনা]

এই ভূখণ্ডে ও অঞ্চলে জিহাদি তানযিমগুলোর ভূমিকাকে ক্বাইদাতুল জিহাদ কীভাবে দেখে তা অনুধাবনের জন্য অঞ্চলসমূহের এ বিভাজন ও এর ভিত্তি সম্পর্কে আমাদের পরিস্কার ধারনা রাখা প্রয়োজন। একই সাথে প্রয়োজন এ নিয়ে গভীর চিন্তা। উপরের বিশ্লেষণের আলোকে আমাদের এ ভূখণ্ড কোন শ্রেণীতে পরে সেটাও আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন। আর বিচক্ষণ ব্যক্তির জন্য এ প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করা একেবারেই কঠিন হবার কথা না।

তবে উপরের আলোচনার পর প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অঞ্চলগুলোর বাইরে যে ভূখন্ড-অঞ্চল রয়েছে সেখানে জিহাদি তানযিমের ভূমিকা কী হবে। ইনশা আল্লাহ পরবর্তী পর্বে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

 

*********************

 

Al Firdaus Logo.n.png