JustPaste.it
User avatar
@anonymous · Sep 21, 2022

সাক্ষাৎকার

 

জালালাবাদ রেডিও টেলিভিশনের প্রাক্তন পরিচালক আব্দুল হাদী মালাখীল
তালেবানের সামরিক ও নৈতিক সাফল্যের সঠিক সংবাদ যদি
বিশ্ববাসী জানতে পারতো তবে তারা নিশ্চয়ই অবাক হত

 

বর্তমান তালেবান আন্দোলন সম্পর্কে আফগানিস্তানের বাইরের মানুষ এখনও ভুল বুঝাবুঝির শিকার। অনেকে তালেবানকে 'আমেরিকার আবিষ্কার' বলে মনে করেন। গত ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের জালালাবাদ রেডিও-টেলিভিশনের প্রাক্তন পরিচালক জনাব আব্দুল হাদী মালাখীল পাকিস্তান সফরে আসেন। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনাব আব্দুল হাদী একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি। তালেবানের সাথেও তার কোনো বিরোধিতা নেই, তালেবান বিরোধীদের সাথেও সম্পর্ক নেই। তাই তালেবানের কাবুল দখল ও আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির উপর পাকিস্তানের উর্দূ বেদার ডাইজেস্ট এর পক্ষ থেকে তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। আলোচ্য নিবন্ধটি তারই সরল বাংলা অনুবাদ। [-অনুবাদক]
প্রশ্নঃ তালেবানের ব্যাপারে অভিযোগ আছে, তারা অল্পশিক্ষিত, চরমপন্থী ও কঠোর প্রকৃতির লোক। এ ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতা কী?
উত্তরঃ প্রথম কথা হলো, আমার না তালেবানের সাথে কোনো রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা আছে, না তালেবান বিরোধীদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রয়েছে। আরো দশজন আফগানীর মত আমারও আন্তরিক কামনা, আফগান সমস্যার সমাধান হোক, আফগান জনগণের জীবনে শান্তি ফিরে আসুক। চাই এ সমাধান তালেবানের হাতে হোক বা অন্য কারো দ্বারা। আমি মনে করি, তালেবান যে সব ভালো কাজ করছে তার প্রশংসা করা উচিৎ এবং কোনো ভুল করে বসলে তার গঠন মুলক সমালোচনা ও সংশোধন হওয়া জরুরী। ইসলামের শিক্ষাও এটাই।
তালেবানের ব্যাপারে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, তারা জনসাধারণের উপর কোনো প্রকার অত্যাচার করে না। অবৈধ উপায়ে যারা সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে, তাদের শায়েস্তা করে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে, নামায আদায়ের জন্য কড়াকড়ি করে  এবং মহিলাদেরকে পর্দা পালন করতে বাধ্য করে।
প্রশ্নঃ জালালাবাদের গভর্নর ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ ও তার সঙ্গীদেরকে তালেবান যেভাবে হত্যা করল, তাকে কি কোনোক্রমে সঠিক বলা যায়?
উত্তরঃ ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ ও তার সঙ্গীদের হত্যাকান্ডে তালেবান জড়িত নয়। জানি না, বাইরের প্রচার মাধ্যমগুলো এ হত্যাকান্ডে তালেবানের জড়িত থাকার কথা কেন প্রচার করেছে। ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ তো তালেবানের সমর্থক্ক ও সহযোগী ছিলেন এবং জালালাবাদের সেসব শান্তিকামী নেতৃবৃন্দের একজন ছিলেন, যারা বিনা রক্তপাতে জালালাবাদকে তালেবানের হাতে তুলে দেয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ ছিলেন একজন মহৎ ও ভদ্র ব্যক্তি। কোন অপরাধের সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগ কখনো ছিল না। তালেবানের কাছেও তিনি শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। এজন্য তার শাহাদাতে তালেবান নেতারা গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছে। জালালাবাদ 'শুরার' (পরামর্শ পরিষদ) সঙ্গে যাদের মতানৈক্য ছিল, তারাই তাকে হত্যা করেছে।
প্রশ্নঃ তালেবানের কর্মতৎপরতার ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তরঃ তালেবান শাসনাধীন এলাকাগুলোতে এমন কল্পনাতীত শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আফগানিস্তানের ইতিহাসে যার কোনো নজীর খুঁজে পাওয়া যায় না। রাস্তার পাশে চাবি সহ গাড়ী ফেলে আপনি যথা ইচ্ছা চলে যেতে পারেন। গাড়ীর সিটের উপর কয়েকটি ডলারও রেখে যান। ফিরে এসে দেখবেন, আপনার এই মূল্যবান সম্পদ যেমনটি তেমনই পড়ে আছে। আপনার গাড়ী থেকে একটি কলমও স্পর্শ করার সাহস কারো হবে না। এর মূলে তালেবানের কড়া পাহারা নয়- ইসলামী দণ্ডবিধি বাস্তবায়নই এর মুল কারণ। সর্বক্ষেত্রে ইসলামী শাসনব্যবস্থা চালু করা তালেবানের সবচেয়ে বড় সাফল্য। 
ড. নজিবুল্লাহকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা তালেবানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্ম, যাকে সমগ্র আফগানবাসী স্বাগত জানিয়েছে। নজিবুল্লাহ ছিল গাদ্দার ও আফগান জাতির ঘাতক। প্রফেসর রব্বানী এবং হেকমতিয়ার কারোই এই জাতীয় গাদ্দারকে ফাঁসি দেয়ার তাওফীক হয়নি। নজিবুল্লাহর ফাঁসির ফলে লাখো শহীদের উত্তরসূরীরা আনন্দদিত হয়েছে এবং তারা তালেবানের এই ঐতিহাসিক সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করেছে।
অশ্লীলতা, উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনা রোধের জন্য তালেবান শুধু সিনেমাই বন্ধ করে নি, রেডিও-টেলিভিশনের আপত্তিকর প্রোগামগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। দেহ ব্যবসা সহ সকল অনৈতিক অশ্লীল কর্মকান্ডের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারী করে আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণ রূপে অশ্লীলতামুক্ত করেছে তালেবান।
দলমত নির্বিশেষে সব অপরাধীকে তালেবান শাস্তি প্রদান করে থাকে। পরিস্থিতির উপর রয়েছে তাদের কড়া দৃষ্টি।  কাউকে তারা কোনো প্রকার দুর্নীতি করার সুযোগ দেয় না। কোন কসাই গোশতের কেজি ৩২ টাকার স্থলে ৩৪ টাকা বিক্রি করলে তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয়। সরকারী আইনের ব্যতিক্রম করার হিম্মত কারো নেই। সর্বপ্রকার মাদক নিষিদ্ধ। কোনো মদ্যত ধরা পড়লে জনসমক্ষে তাকে জুতোপেটা করা হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।
প্রশ্নঃ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগ না দিয়ে যেভাবে নজীবুল্লাহকে ফাঁসি দেওয়া হলো, তা কি ইসলামের ন্যায়নীতির পরিপন্থী ছিল না?
উত্তরঃ ডঃ নজীবুল্লাহর ফাঁসি কোনোক্রমেই ইসলামী বিধান পরিপন্থী ছিল না। নজীবুল্লাহ ছিল একজন কুখ্যাত ঘাতক, জাতীয় গাদ্দার। হাজার হাজার নিরপরাধ আফগানীকে সে বিনা বিচারে হত্যা করেছিল। বোমা ও ট্যাংক ব্যবহার করে ধ্বংস করেছিল অসংখ্য জনপদ। এক কথায় নজীবুল্লাহ ছিল রক্তপিপাসু ঘাতক ও নির্দয় হায়েনা। আফগান ওলামা ও জিহাদী সংগঠনগুলো আগেই ফতুয়া দিয়েছিল যে, নজীবুল্লাহকে যথায় পাও, হত্যা কর। গুটি কতেক কম্যুনিষ্ট ছাড়া কোনো আফগানী তার মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেনি। একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, যে সমাজে খুনী ও বিশ্বাসঘাতকদের সমাদর করা হয়, সে সমাজ সন্ত্রাস ও জুলুম নির্যাতনের আখড়ায় পরিণত হয়। তালেবান নজীবুল্লাহর সাথে যে আচরণ রয়েছে, তা তার পাওনা কমই হয়েছে।
নজীবুল্লাহকে একদিনের জন্যও জীবিত রাখা ছিল লাখো শহীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। সময়মত ব্যবস্থা না নিয়ে যদি একদিনের জন্যও তাকে জীবিত রাখা হতো, তা হলে তার ব্যাপারে বাইরের চাপ এতই বেড়ে যেত যে, তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া তালেবানের পক্ষে সম্ভব হতো না। রব্বানী আর হেকমতিয়ার তো নজীবুল্লাহকে বিচারের কাঠগড়ায়-ই দাঁড় করাত পারেনি।
প্রশ্নঃ শুনেছি, তালেবান সরকার নাকি মহিলাদের জোরপূর্বক পর্দা করায় এবং যারা পর্দা করে না তাদের উপর কঠোর আচরণ করে?
উত্তরঃ ঠিক-ই শুনেছেন। এটা সম্পূর্ণ ইসলামসম্মত। কোনো মহিলা যদি পর্দার মত ইসলামের ফরজ বিধান উপেক্ষা করে, তবে ইসলামী সরকার তাকে পর্দা পালন করতে বাধ্য করাবে এটাই স্বাভাবিক। তালেবানের এ নীতিতে আপত্তিকর কিছুই নেই। উপরন্তু, অধিকাংশ আফগানীর এর প্রতি স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন রয়েছে। কেবল শহর এলাকার মুষ্টিমেয় স্বেচ্ছাচারী সেকুলার ধরনের মহিলা-ই এর সমালোচনা করতে চায়। অন্যথায় বাকী আফগানবাসীর এমনটিই কাম্য। তালেবান যদি এই কঠোর নীতি অবলম্বন না করতো, তাহলে সমাজ থেকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনা ঠেকাতে কী ভাবে?
প্রশ্নঃ দাড়ি রাখার ব্যাপারেও নাকি তারা কড়াকড়ি করছে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তালেবান বয়স্ক পুরুষদের জন্য দাড়ি রাখাকে একটি আবশ্যকীয় বিষয় মনে করে। তাই তারা দাড়ি রাখার ব্যাপারেও কড়াকড়ি আরোপ করছে। বর্তমান আফগানিস্তানে কোনো বয়স্ক পুরুষকে দাড়িবিহীন থাকার এতটুকু সুযোগ নেই।
প্রশ্নঃ তালেবান আর কোন কোন ব্যাপারে কড়াকড়ি করছে?
উত্তরঃ টেলিভিশন এবং ডিশের উপরও তালেবান কঠোর নিয়ন্ত্রণ কায়িম করেছে। এখন কাবুলের কোথাও ডিশ চোখে পড়ে না। বাদ্যবাজনার অবস্থাও ঠিক তদ্রুপ। কারো কাছে আপত্তিকর ভিডিও ক্যাসেট দেখতে পেলে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। আমার মতে কাবুলকে চারিত্রিক কদর্যের পংকিলতা থেকে মুক্ত করার জন্য এসব কড়াকড়ি ও বিধি-নিষেধ আরোপের অতীব প্রয়োজন ছিল।
প্রশ্নঃ পত্র-পত্রিকা বের হচ্ছে কি?
উত্তরঃ পত্র পত্রিকা বের হচ্ছে। তবে জীব-চিত্র ছাড়া।
প্রশ্নঃ সমর বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত বুঝে উঠতে-ই পারেন নি যে, অজেয় দূর্গের মত এই কাবুল শহরটি তালেবান এত সহজে কী করে জয় করল। এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বাহ্যত বিষয়টি বুঝে না আসারই কথা। তবে কাবুলের পূর্ববর্তী সরকার কাঠামো, তালেবানের ত্যাগ এবং জালালাবাদ দখলের উপর গভীরভাবে চিন্তা করলে বিষয়টির রহস্য অতি অনায়াসে বুঝে আসবে।
প্রথম কথা হলো, কাবুলে আহমদ শাহ মাসউদ ও হেকমতিয়ার যৌথভাবে সরকার পরিচালনা করছিল। একের সঙ্গে অপরের হৃদ্যতা ছিল না। উভয়ে নিজ পছন্দমত কাজ করত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছিল হেকমতিয়ারের হাতে। হেকমতিয়ার প্রতিটি গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় নিজ দলীয় লোক নিয়োগ করেছিলেন। এ কারণে আহমদ শাহ মাসউদ তার প্রতি ভীষণ ক্ষুদ্ধ ছিলেন। তালেবানের কাবুল আক্রমণ করার সময় আহমদ শাহ মাসউদ ভাবলেন, তার বাহিনী যদি এখন জীবন দিয়েও কাবুল রক্ষা করে, তবুও নাম হবে হেকমতিয়ারের। এ কারণে তালেবানের কাবুল আক্রমণের পর আহমদ শাহ মাসউদ তার বাহিনীকে যুদ্ধেই নামাইনি।
সরুবী ক্যাম্প সম্পর্কে সকলেই জানত যে, এটা হেকমতিয়ারের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। বাস্তবে ছিলও তাই। এক পর্যায়ে তালেবান বাহিনী এই ক্যাম্পটি দখল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। ক্যাম্পের চতুর্দিকে বিপুল মাইন পোতা ছিল। তখন তালেবান কমান্ডার মোল্লা বোরহান তার বাহিনীকে বললেন, জীবন দেওয়ার তার বাহিনীকে বললেন, জীবন দেওয়ার জন্য মাত্র চার পাঁচ গাড়ী মুজাহিদ প্রয়োজন। ঘোষণা শুনে অসংখ্য তালেবান জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। অভিযান শুরু হলো। মাইনের উপর দিয়ে তালেবান চার পাঁচটি গাড়ি ছেড়ে দেয়। উপর থেকে কামানের গুলি। নীচের থেকে মাইনের বিষ্ফোরণ। মুহূর্ত মধ্যে সব ক'টি গাড়ী সহ এই তালেবান বাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।
এবার গাড়ীর আরেকটি বহর সামনে অগ্রসর হলো। সে কি অবিশ্বাস্য বীরত্বের ঘটনা। এভাবে হাজার হাজার তালেবান নিজের জীবন উৎসর্গ করে হেকমতিয়ারের দুর্ভেদ্য ক্যাম্প সরুবী দখল করে নেয়। এতেই হেকমতিয়ার বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে এবং কাবুল আক্রমণের পর তারা তালেবানের মোকাবেলা করার সাহস হারিয়ে ফেলে।
জালালাবাদ সম্পর্কে কথিত আছে যে, জালালাবাদ হলো কাবুলের দ্বার। অর্থ্যাৎ জালালাবাদ দখল করা মানেই কাবুল নাগালের মধ্যে এসে যাওয়া। জালালাবাদ দখল করেই তালেবান কাবুল দখলের পথ সুগম করে নেয়। এসব বিষয়ের উপর গভীরভাবে চিন্তা করলে তালেবানের এত সহজে কাবুল দখলের ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ বর্তমানে হেকমতিয়ারের অবস্থান কী?
উত্তরঃ সামরিক দিক থেকে বর্তমানে আহমদ শাহ মাসউদ ছাড়া সব ক'টি জিহাদী সংগঠন কার্যত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আহমদ শাহ মাসউদ এখনও (লেখা অস্পষ্ট) একাই সে দীর্ঘ  দিন পর্যন্ত লড়তে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সামরিক দিক থেকে বর্তমানে হেকমতিয়ারের কোন গুরুত্বই নেই।
প্রশ্নঃ জিহাদী সংগঠনগুলোর এমন দশা হলো কেনো?
উত্তরঃ ক্ষমতার অব্যাহত লড়াই  এর মূল কারণ। আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে আফগান জনগণের সেবা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। পবিত্র কাবা ঘরে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে তা ভঙ্গ করে তারা গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন। তাই বলা যায়, জিহাদী সংগঠনগুলোর এই অধঃপতন আল্লাহর পক্ষ থেকে নেমে আসা শাস্তি বই নয়। আফগানীদের ধারণা, তালেবান যদি ভালো-ই হয়ে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদের-ই আসা উচিৎ। আর যদি তারা খারাপ হয়ে থাকে, তাহলে এটা নিশ্চিত যে, গৃহযুদ্ধে লিপ্ত জিহাদী  সংগঠনগুলোর কারণে-ই আল্লাহ্ আফগানীদের উপর এদেরকে চাপিয়ে দিয়েছেন।
প্রশ্নঃ তালেবান আমেরিকার মদদপুষ্ট, এ কথাটা কি ঠিক?
উত্তরঃ আমেরিকা তো তালেবানদের আগেকার দলগুলোরও সহযোগিতা করেছিল? আফগানীদের ব্যাপারে একটি বিষয় ভালো করে জেনে রাখা দরকার যে, তারা সাহায্য নেয় সকলের, কিন্তু কাজ করে নিজেদের মর্জিমত। রব্বানী কি পাকিস্তান থেকে কম সাহায্য নিয়েছিল? তালেবানের আন্দোলন আফগান জাতির আন্দোলন। আমেরিকার সঙ্গে তাদের নৈতিক ও আদর্শিক কোনই সম্পর্ক নেই।
প্রশ্নঃ তালেবান আন্দোলনের ব্যাপারে ইরানের পলিসি কী?
উত্তরঃ ইরান খোলাখোলিভাবে রব্বানীর পক্ষপাতিত্ব এবং তালেবানের ঘোর বিরোধিতা করছে। রাশিয়া এবং ভারতও তালিবান বিরোধীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
প্রশ্নঃ তালেবান কি কি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে?
উত্তরঃ জাতিসংঘ এখনও তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। ও আই সি এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারের সদস্যপদ স্থগিত রেখেছে। জাতিসংঘ চায় যে, তালেবান ইসলামী শাসন চালু না করুক, মহিলাদেরকে বে-পর্দায় চলতে দিক্ সিনেমায় অশ্লীল ফিল্ম চলতে থাকুক, মদ জুয়া বন্ধ না হোক ইত্যাদি। একদিকে তালেবান এর একটিও মানতে প্রস্তুত নয়। অপরদিকে জাতিসংঘ এসব ছাড়া তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে রাজী নয়। আপাততঃ তালেবানের এটাই সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সমস্যা।
প্রশ্নঃ তালেবান এবং মাসউদ-দোস্তমের মধ্যে আপোসের সম্ভাবনা কতটুকু?
উত্তরঃ কোনো-ই সসম্ভাবনা নেই। কারণ তালেবান সমগ্র আফগানিস্তানে এককভাবে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা কারো কোনো শর্ত মানতে একদণ্ড প্রস্তুত নয়।
প্রশ্নঃ বর্তমানে কম্যুনিষ্টদের অবস্থা কী?
উত্তরঃ কম্যুনিষ্টরা এখনও আছে। তালেবান তাদেরকে নির্মূল করার চেষ্টা করছে। কম্যুনিষ্ট নেতা ড. নজীবুল্লাহ আর বাবরাক কারমাল তো খতম হয়েছে।
প্রশ্নঃ জহির শাহের দেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা কতটুকু?
উত্তরঃ কোনো সম্ভাবনা নেই।
     প্রশ্নঃ অভিযোগ আছে যে, তালেবান জহির শাহে-র স্বদেশ  প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম করছে। এর বাস্তবতা কতটুকু?
উত্তরঃ এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। তালেবান কোনো ক্রমেই জহির শাহের সহযোগী নয়। বরং তালেবানের বক্তব্য হলো, জহির শাহ যদি আফগানিস্তানে ফিরে আসে, তা হলে তার পরিণামও  নজীবুল্লাহর মত-ই হবে। তালেবানের অনেকে তো রীতিমত দু'আ করছে, জহির শাহ দেশে ফিরে আসুক, যাতে নজীবুল্লাহর মত তাকেও ফাঁসিতে ঝুলানোর সুযোগ হাতে আসে।
মুসলিম বিশ্বের জন্য দুর্ভাগ্য বলতে হবে যে, তাদের নিজস্ব কোনো মিডিয়া নেই। ফলে দুনিয়ার কোথায় কী ঘটছে, তা সঠিক সংবাদ, সঠিক চিত্র আমরা জানতে পারছি না। যদি মুসসলমানের নিজস্ব মিডিয়া থাকত, তবে তালেবানের সামরিক ও নৈতিক সাফল্যের সঠিক সংবাদ জানতে পেরে বিশ্ববাসী থ' মানতে বাধ্য হতো।

উর্দু বেদার ডাইজেস্ট এর সৌজন্যে

অনুবাদঃ মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন