JustPaste.it

আমাদের দেশের চালচিত্র

 

একটি মহা বিপ্লবের মহড়া এবং ৩০ তারিখের সফল হরতাল

এদেশের ধর্মীয় ও আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদী চক্রের অন্যায় হস্তক্ষেপের অশুভ স্পর্ধা

ফারুক হোসাইন খান

=====================================================================

 

        [৩০ শে জুন,বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন । এই ৩০ শে জুনে তৌহিদী জনতার আহুত হরতাল নব প্রজন্মকে দেখিয়েছে আলোর মশাল, ইসলামের ঝান্ডা সমুন্নত রাখার দীপ্ত চেতনা । হরতালের মাধ্যমে যেমনি ইসলামী শক্তি,চেতনা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তেমনি ইসলাম বিদ্বেষী অপ্রকাশ্য মুনাফিক,মুরতাদের চেহারাও উন্মোচিত হয়েছে । ফলে কে আমাদের শত্রু আর কে মিত্র দিনের আলোর মতো চিনে নেওয়া সহজ হয়েছে । ইসলামের শত্রু-মিত্র, দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে এদেশ । এ সবই হরতালের প্রতিক্রিয়া,হরতাল সফল করার ফসল । এই হরতালের মাধ্যমে আমরা যাদের মুখোশ উন্মোচন করতে পেরেছি, তাদের নিয়ে এই ব্যতিক্রম ধর্মী প্রবন্ধ] ।

 

ইসলাম বিদ্বেষী কুরআনের রক্ষক

        হাস্যকর মনে হলেও এবার ইসলাম বিদ্বেষীরা এক মজার ভেল্কি দেখিয়েছে । দিন-রাত, অষ্টপ্রহর যারা ইসলামের সমালোচনা করে মজা পায় তারা হরতালের কয়েকদিন আগে কুরআনের রক্ষক বনে যায় । চিহ্নিত আধাচালু দৈনিক পত্রিকাগুলোতে,' আমরা পবিত্র কুরআনকে ওদের হাত থেকে বাঁচাবো' শিরোনামের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই মহাকীর্তি জাহির করে । হরতালের ৩/৪ দিন আগে গজিয়ে ওঠা 'স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি' নামক সংগঠনের হোতারা এই মহা-কীর্তির স্রষ্টা । হোতাদের একজন কবিতার মাধ্যমে আযানকে বেশ্যাদের খদ্দের ডাকার সাথে তুলনা করে দেশবাসীর ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়িয়েছেন । বর্তমানে তিনি 'মৌলবাদ' নির্মূলের অন্যতম এজেন্ট । এই চক্রের অন্যতম হোতা একজন লাঠিয়াল সম্পাদক । তার পত্রিকায় অহরহ ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে বিদ্বেষী সংবাদ,প্রবন্ধ,সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় প্রকাশের জন্য ইতোমধ্যে দেশবাসীর নিকট পত্রিকা ও তার সম্পাদক (সাবেক ইউনিফর্ম পরা আর্মি অফিসার) বিশেষ ট্রেডমার্ক হয়ে আছেন । হরতালের দিন কথিত ফতোয়াবাজদের রোখার জন্য তিনি সংবাদপত্রের লেবেল আঁটা বেবী ট্যাক্সি ও টেম্পু ভর্তি গজারী কাঠের লাঠি নিয়ে প্রেস ক্লাবে এসে উপস্থিত হন । সম্পাদককে এভাবে লাঠিয়াল ভূমিকায় দেখে সম্পাদকদের চক্ষু তো চড়ক গাছ । মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ী এই ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় না কি পাকিস্তানি বাহিনীর অন্যতম দোসর এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন ।

 

        ইসলাম বিদ্বেষী কবি সাহেবও মুক্তিযুদ্ধের সময় দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার সেবা করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকা পালন করেছেন । স্বাধীনতা বিরোধী এই কবি সাহেব ও সম্পাদক সাহেব ইসলামকে মৌলবাদ এবং মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলে গলাবাজি করতে করতে হঠাৎ কুরআনের রক্ষক বনে যাওয়ায় এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির ক্যাম্প খোলায় কৌতুকবোধ হওয়াই স্বাভাবিক ।

 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই বটে!!

        এনজিওদের অপতৎপরতা,নাস্তিক-মুরতাদদের বিচার এবং কুরআনের আয়াতের বিকৃত অর্থ প্রকাশ করে কুরআনের অবমাননাকারী পত্রিকা নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের তৌহিদি জনতা ৩০ শে জুন হরতাল আহ্বান করে । কিন্তু প্রতিবারের মতো চিহ্নিত মহল এবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি, প্রগতিবাদের ধোঁয়া তুলে তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে ময়দান গরম করতে নামে । তাই প্রশ্ন জাগে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে কি কুরআনের অবমাননা,  মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে উপহাস করে তাদের অনুভূতিতে আঘাত হানা??এদেশ থেকে ইসলামের অস্তিত্ব মুছে দেয়ার জন্যই কি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল?কুরআন, রাসূল (সাঃ) এবং ইসলাম নিয়ে উপহাস করার নামই কি প্রগতি? তাসলিমা নাসরিন নামক জরায়ুর স্বাধীনতার দাবিদার বিকৃত মহিলাটি কুরআন সংশোধনের স্পর্ধা দেখিয়েছে বলেই তৌহিদি জনতা তার  বিচারের দাবী তুলেছে ।

 

        তৌহিদি জনতার এই দাবী তোলাটা যদি অপরাধ এবং প্রগতি বিরোধী হয়ে যায় তবে প্রগতির ধারক,মুসলমান এবং  বুদ্ধিজীবীর দাবিদার পন্ডিতগণ কেন তসলিমাকে চ্যালেঞ্জ করলো না?কেন তারা তসলিমার বিচারের দাবী তোলার পরিবর্তে বরং তসলিমাকে বাঁচানোর জন্যই তার পক্ষ নিয়ে তৌহিদি জনতাকে নির্মূল করতে মাঠে নেমেছিল? গত ৯ই মে ইন্ডিয়ার স্টেটমেন্ট পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তসলিমা কুরআন মানুষের রচিত এবং এর সংশোধনের স্পর্ধিত দাবী তোলে । এছাড়া ১০ই জুন টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ১৩ ই জুন জার্মান সাময়িকী ডার স্পাইজেল এবং ১৮ই জুন অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকা ফিএজ এ দেয়া সাক্ষাৎকারে এই দাবীর পুনরাবৃত্তি করে । সবগুলি সাক্ষাৎকারের মূল বক্তব্য ছিল -আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে কুরআনের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে । কুরআনের বহু ক্ষেত্রে ভুল রয়ে গেছে । কুরআন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে ইত্যাদি ।

 

        কুরআন আসমানী কিতাব এবং কোন মানুষের পক্ষে এর রচনা সম্ভব নয় । আধুনিক বিজ্ঞানীরাও কম্পিউটারের মাধ্যমে গবেষণা করে কুরআনকে আল্লাহর রচিত কিতাব বলে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন । কিন্তু সেই কুরআন সম্পর্কে মূর্খ নারীর এতসব অযৌক্তিক দাবী খন্ডনে এদেশের তথাকথিত  বুদ্ধিজীবীরা এগিয়ে আসেন নি । বরং তারা কুরআনের অবমাননাকারীর বিচারের দাবীদারদের ঠেকাতে কমিটি গঠন করেছেন । পত্রিকায় বিশাল বিজ্ঞাপন ফেদেছেন " আমরা  ওদের হাত থেকে  কুরআনকে রক্ষা করবো" শিরোনামে । তৌহিদী জনতা কুরআন অবমাননাকারীর  বিচারের দাবী করায় তা ওদের কাছে কুরআনের অবমাননা হিসেবে অনুভূত হয়েছে । কিন্তু তসলিমা নাসরিনের স্পর্ধিত উক্তি কুরআনের অবমাননা বলে মনে হয় নি ।

 

        তাই তারা তাওহিদী জনতার বিরুদ্ধে নেমেছেন কুরআন রক্ষা করতে । এসব বুদ্ধিজীবীরা আসলে কোন কুরআন রক্ষার  জন্য মাঠে নেমেছিল?আসমানী কুরআন না কি তসলিমা কর্তৃক সংশোধিত হবে যে কুরআন সেই কুরআন? এদেশে কুরআন ও ইসলাম নিয়ে উপহাসের বিরুদ্ধে তাওহিদী জনতা প্রতিবাদ করলেই এই মহল তাদের মৌলবাদী এবং প্রগতির পথে অন্তরায় বলে প্রচারণা চালান । শফিক রেহমান নামক জনৈক কলমবাজ আরবী অক্ষর আলিফকে পুংলিঙ্গের সাথে তুলনা করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় প্রফেসর  ইসলামের ইতিহাসের বিরুদ্ধে গদা ঘুরিয়েছে । কবির চৌধুরী, আহম্মদ শরীফ, ফয়েজ আহম্মদ, বদরুদ্দীন উমর প্রমূখ বুদ্ধিজীবীর ইসলাম বিদ্বেষী ভূমিকা তো জনগণের জানা আছে । শামসুর রহমান নামক কবি কবিতার মাধ্যমে আযানকে বিদ্রুপ করেছে বেশ্যার খদ্দের ডাকার সাথে তুলনা করে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে পুনরায় কুরআনের আয়াত সংযোজনের প্রস্তাব আনায় উগ্র ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের হাতে নাজেহাল হয়েছেন প্রস্তাবক প্রফেসর সাহেব । এখানেই শেষ নয়, দাড়ি টুপি ওয়ালা ব্যক্তিদের ওপর অহরহ হামলা হচ্ছে তারা মুসলমান বলে । ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় এবং নাগরিক অধিকার বলে এই অপরাধের প্রতিবাদ করেছেন মাত্র । এই প্রতিবাদ করাটা প্রগতির অন্তরায়??আর তসলিমাসহ ইসলাম বিদ্বেষীরা যা করছে এটাই কি প্রগতি,এটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? ধর্ম নিরপেক্ষতার মানে কি ইসলামের ওপর আঘাতকারীকে বাহবা দেয়া আর তার প্রতিবাদকারীদের হিংস্র ভাষায় আক্রমণ করা?

 

তথাকথিত ইসলামী বিপ্লবীদের ভেল্কীবাজি

        হরতালের দিন যতই এগিয়ে আসছিল একশ্রেণির মতলববাজ বাম ও রামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা হরতালের ইস্যুকে উপহাস করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারে মেতে উঠে । এসব প্রচারণার অন্যতম ছিল 'কেউ যদি আল্লাহ, রাসূল (সাঃ) এর প্রতি কটাক্ষ করে, পবিত্র কুরআনের আয়াত অপব্যাখ্যা করে বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে তবে তার শাস্তি আল্লাহ দেবেন, মানুষের শাস্তি দেয়া বা শাস্তি দাবী করার কোন অধিকার নেই' ।

 

        শাস্তি দাবী করে দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও তারা নসিহত করেন । একজন বামপন্থী ডাকসাইটে নেতা এ ব্যাপারে বাহাসের আহ্বান জানিয়েছেন । মতলববাজ একটি পত্রিকার আত্মবিক্রেতা জনৈক কলামিস্ট প্রতি শুক্রবারে 'বুঝ হে সুজন, যে জান সন্ধান ' শিরোনামের কলামে কুরআনের আয়াতের আলোকে এ দাবীকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন । সবশেষে বড় চমক দেখিয়েছে ২৮ শে জুন এক সেমিনার আয়োজন করে  ঘাদানী টাইপের কিছু দরবারী আলেম খেতাবধারীরা সেমিনারে । এরা দাবী করেছেন যে, "একমাত্র আল্লাহই ধর্মদ্রোহিতার বিচারক ও শাস্তিদাতা, সরকার বা রাষ্ট্র নয় । ধর্মদ্রোহিতার জাগতিক শাস্তির বিধান ইসলামে নেই । ফতোয়াবাজরা ইসলাম ও কুরআন হাদিসের দোহাই দিয়ে দাঙ্গা বাধানো, হত্যা মারামারি বাধানোর উস্কানী দিচ্ছে । " চমৎকার যুক্তিই বটে । অপরাধীর শাস্তি দাবী করা মানে ফিতনা সৃষ্টি করা, দাঙ্গা,মারামারি বাধানোর উস্কানী দেয়া । আর যারা অপরাধ করলো, দেশকে এই দাঙ্গা পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে তৎপর তারা একেবারেই নির্দোষ । তাদের শাস্তির দাবীও করা যাবে না । ঐ দিন 'জয় বাংলা -সাথে আছে আল্লাহ' শ্লোগানধারীরা কোন কুরআন মন্থন করে তসলিমা গংদের রক্ষাকবচ এই মহা বিধান জাতিকে উপহার দিলেন তা আমাদের বোধগম্য নয় ।

 

        ওনারা ফতোয়া দিয়েছেন ইসলামদ্রোহী ও কুরআনের অবমাননাকারীদের শাস্তি আল্লাহ দেবেন, কোন মুসলমানের তাদের শাস্তি দাবী করাটাও না কি অন্যায় । এ দেশের তথাকথিত ফতোয়াবাজরা না কি কুরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা করে তবে সে অপব্যাখ্যার শাস্তিও আল্লাহর ওপর সোপর্দ না করে এহেন 'ইসলামদ্রোহীতার' শাস্তি  দিতে সরকারকে জাগতিক আইনের আশ্রয় নেয়ার নসিহত করছেন কেন?এক্ষেত্রে আল্লাহকে অক্ষম বানিয়ে নিজেরাই ময়দানে নেমেছেন কোন উদ্দেশ্যে?ইসলাম দ্রোহীতার শাস্তি দাবী করাটা যদি অন্যায় হয়  তবে আপনাদের এ 'মর্ডান' ইসলামী দর্শনের জন্য যদি আপনাদের নিয়ে কোন বেরসিক একটু তামাশা করে তবে নিশ্চয় আপনারা আইন-আদালতের দ্বারস্থ হবেন না, মানহানির মামলা ঠুকবেন না, সব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিবেন তো??ইসলামের এ নতুন দর্শন উপহার দেওয়ার জন্য আমরা যদি আপনাদের 'মজাক' করে অভিনন্দন জানাতে চাই আপনাদের এই ইসলামি দর্শনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কেউ যদি আপনাদের একটু অপদস্ত করেই ফেলে তবে যেহেতু আপনারা দাবী করেছেন ' ইসলামদ্রোহীতার জাগতিক শাস্তির বিধান নেই' সে অনুযায়ী এই 'কর্মটি' নীরবে মেনে নিবেন তো?শাস্তির জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করবেন তো?'বুঝ হে সুজন' কলাম লেখক এবং বাহাস আহ্বানকারীরা কি বলেন?আসলে আপনারা যে তসলিমা দর্শনকে ইসলামের নামে চালিয়ে দিতে চান তা জনগণ ধরে ফেলেছে । ও পথ ছেড়ে যদি কুরআনের পথে আপনাদের গবেষণা কর্মটি চালাতেন তবে দেখতে পেতেন, অসংখ্য আয়াত রয়েছে মুরতাদ, ধর্মদ্রোহীদের শাস্তির সম্পর্কে । যেমন দেখুন-সূরা নিসার ৯১ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

 

        "যখনই তাদেরকে ফিতনার দিকে আহ্বান করা হয় তখনই এ ব্যাপারে তারা পূর্বাবস্থায় (শিরক, ধর্ম ত্যাগ, কুফুরী) প্রত্যাবৃত্ত হয় । যদি তারা তোমাদের নিকট থেকে চলে না যায়,  তোমাদের শান্তির (ইসলামের)  প্রস্তাব গ্রহণ না করে এবং তাদের হস্ত সংবরণ না করে তবে তাদেরকে যেখানেই পাবে গ্রেফতার করবে ও হত্যা করবে এবং তোমাদেরকে  (মুসলমানদেরই) তাদের বিরুদ্ধাচরণের স্পষ্ট অধিকার দিয়েছে " । এছাড়া রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যে ধর্মত্যাগ করে তাকে হত্যা কর অথবা শিরোচ্ছেদ কর' । ( ইবনে মাজাহ,হুদুদ অধ্যায়, নাসাঈ, বুখারী, মুর্তাদীন অধ্যায়, আবু দাউদ, ইবনে হাম্বল  প্রথম খন্ড) ।

 

ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতিকদের ডিগবাজি

        তাওহিদী জনতার আহ্বানে দেশের আপামর ধর্মপ্রাণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, যতই কাঙ্ক্ষিত ৩০ শে জুন ঘনিয়ে আসছিল ততই মুসলমানদের জাগরণে ভীত মুনাফিম ও নাস্তিকচক্র স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে । বক্তৃতা, বিবৃতি ও জনসমাবেশের মাধ্যমে তারা  তাওহিদী জনতার প্রতিপক্ষের ভূমিকা নেয় । তাওহিদী জনতাকে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি, মৌলবাদী, অপপ্রচারকারী, প্রগতি ও উন্নয়ন বিরোধী, ফতোয়াবাজ, সাম্প্রদায়িক প্রভৃতি আখ্যা দিয়ে দেশবাসীর নিন্দা কুড়ায় । ৩০ শে জুন ঘোষিত হরতাল ছিল কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধার,  ব্যক্তিস্বার্থ বা কোন বৈষয়িক ব্যাপারে নয় । এ হরতালের উদ্দেশ্য ছিল যারা ধর্ম নিয়ে উপহাস ও কটুক্তি করছে তাদের বিচার এবং ভবিষ্যতে যাতে কেউ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে " জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শিক মূল্যবোধ সুরক্ষা আইন" প্রণয়নের জন্য সরকারকে চাপ প্রদান করা । কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারীরা এর মধ্যে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ভূত আবিষ্কার করে বসে । এদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মাননীয়া নেত্রী স্বয়ং তিনি বিবৃতির মাধ্যমে তসলিমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলে তাতে দুঃখ প্রকাশ করেন ।

 

        জনকণ্ঠ পত্রিকা কুরআনের আয়াত নিয়ে উপহাস করায় সরকার পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি আর এক বিবৃতির মাধ্যমে এটাকে 'সরকারের সংবাদ পত্রের কন্ঠরোধ ও স্বাধীনতা বিরোধীদের উস্কানী প্রদান করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া এবং পুরো ঘটনাকে স্বাধীনতা বিরোধীদের গুজব রটানো বলে আখ্যায়িত করেন । একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীর এমন লাগামহীন বক্তব্যে আমাদের দুঃখ হয় । দুঃখ হয় তার জ্ঞানের বহর দেখে । মনে প্রশ্ন জাগে, ইসলাম ধর্ম শুধু স্বাধীনতা বিরোধীদের ধর্মমত? এদেশের ১১ কোটি মুসলমান কি সবাই স্বাধীনতা বিরোধী ও গুজব সৃষ্টিকারী?আমরা জানি, মাননীয়া নেত্রী নিজেকে একজন মুসলমান বলে মনে করেন এবং মক্কা শরীফে গিয়ে হজ্বও করে এসেছেন অর্থাৎ তিনি হাজ্বীও । কিন্তু তসলিমা গংরা যখন ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে গিন্নী-শকুনীর ন্যায় টানা হ্যাচড়া করে তখন একজন মুসলমান হিসেবেও তিনি এর প্রতিবাদ করতে পারেন নি, করেন নি । তসলিমা 'উদ্যানে নারী' কবিতায় আদম ও হাওয়া (আঃ) কে নিয়ে জঘন্য ধৃষ্টতা ও ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে ।

 

        মাসিক নান্দনিক (অক্টোবর '৯১) সংখ্যায় সাক্ষাৎকারে দাবী করেছে যে, ধর্ম না কি পুরুষের বানানো এবং নারীদের অত্যাচার, শোষণ করার জন্যই না কি পুরুষরা ধর্ম বানিয়েছে । সাম্প্রতিক সময়ে এই মহিলা বিদেশী বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সাক্ষাৎকারে কুরআন সংশোধনের দাবী তুলেছে, "কুরআন না কি মানুষের রচনা এবং এতে বহু ভুল রয়েছে" । তসলিমার অভিযোগ যদি সত্য হয় তবে মাননীয়া নেত্রী অন্যায়-অবিচারের হাতিয়ার বিশেষ করে যা নারীদের বেলায়ই  প্রয়োগ করা হয় সেই ধর্ম ইসলামে বিশ্বাস রাখতে পারেন না,উচিতও না । আর যদি তসলিমার এ দাবী মিথ্যা হয় তবে ইসলামের ওপর আরোপিত এ অপবাদ একজন মুসলমান হিসেবে তিনি মেনেও নিতে পারেন না । অথচ তিনি ইসলামের ওপর আরোপ করা এ অপবাদ নীরবে হজম করেছেন । কোন প্রতিবাদ, নিন্দা বা শাস্তির দাবী করেন নি । এমনিভাবে কবির চৌধুরী, শামসুর রহমানরা আযান নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ এবং আযানকে বেশ্যার খদ্দের ডাকার সাথে তুলনা করার পরও তিনি কোন টু শব্দ করেন নি । অথচ তার জানার কথা, একজন মুসলমানের ধর্মের  ওপর আঘাত আসলে তা নীরবে মেনে নেয়া মুনাফেকিও বটে । ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা আশা করেছিল যে, জনগণের স্বার্থে সংগ্রামরত মাননীয়া নেত্রী তাদের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাতকারীদের শাস্তির জন্য সরকারের ওপর চাপ দেবেন এবং ভবিষ্যতে কেউ ধর্মের ওপর আঘাত হানতে না পারে তা আইন পাসের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন । কিন্তু তিনি রহস্যজনক নীরবতা পালন করায় জনগণকেই তাদের ধর্মের মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের দায়িত্ব  কাঁধে তুলে নিতে হয় । মাননীয়া নেত্রী সে আন্দোলনে সমর্থন বা শরীক না হয়ে বরং তা স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা এবং দেশকে গৃহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার সাম্প্রদায়িক তৎপরতা বলে আখ্যায়িত করলেন । জনগণ হরতাল পালনের মাধ্যমে চেয়েছে 'ধর্মীয় বিশ্বাস সুরক্ষা' আইন পাশ হোক ।

 

        কিন্তু মাননীয়া নেত্রী অভিযোগ করেছেন যে, এটা সরকারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চক্রান্ত । অর্থাৎ এ আইন পাশের দাবী স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা এবং এতে সরকারের চক্রান্ত আবিষ্কার করে তিনি এর বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন । দেশে তসলিমাসহ নাস্তিক ও মুরতাদচক্র অহরহ ইসলামের ওপর আঘাত হানছে, যার ভুরি ভুরি প্রমাণ বিদ্যমান থাকার পরও একজন সচেতন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে তিনি এর যথাযথ প্রতিবাদ করেন নি বরং প্রতিবাদীদের উল্টো চক্রান্তকারী, গুজব সৃষ্টিকারী,ও সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেয়ায় আমাদের করুণাবোধ হওয়াটাই স্বাভাবিক । স্মরণ করতে হয়, উনার পিতা চারটি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করেছিলেন, বাকশাল রেখে সকল রাজনৈতিক দলের তৎপরতা বন্ধ করে দিয়েছিলেন । অথচ সেই পিতার রাজনীতি অনুসরণ করে, পিতার ভুল স্বীকার না করে তিনি যদি একটি ইসলাম বিদ্বেষী পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব ও সংবাদ পত্রের কন্ঠরোধ বলে আখ্যায়িত করেন তবে এর চেয়ে বিস্ময়ের আর কি হতে পারে । এ দেশের ধর্ম নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির দাবীদাররা ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন দাবী-দাওয়া, আন্দোলনের কথা শুনলেই তাকে প্রগতি বিরোধী ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা বলে অভিহিত করেন । ভাবখানা যেন, তসলিমা নাসরিন, আহমদ শরীফ গংদের তৎপরতা তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে আঘাত হানার ফলে দেশে উন্নয়ন ও প্রগতির নহর বইয়ে যাচ্ছে । তসলিমা নাসরিন 'লজ্জা' উপন্যাসে বাংলাদেশকে 'শালা-শুয়োরের বাচ্চা বাংলাদেশ' গালি দিয়ে  স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের স্থায়িত্ব, মর্যাদাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে ।

 

        পক্ষান্তরে তথাকথিত মৌলবাদীদের দাবি অনুযায়ী "জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শিক মূল্যবোধ সুরক্ষা" আইন পাশ করলে এই উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হবে, দেশ হাজার বছর পিছিয়ে যাবে । মোটকথা, সবকিছুর মূলে রয়েছে ইসলাম । তথাকথিত স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ মহল ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার ছ্দ্মাবরণে ইসলামের ঘোরতর বিরোধিতায় অবতীর্ণ । তৌহিদী জনতা যখন আল্লাহ, রাসূল (সাঃ) ও ইসলামের মর্যাদা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের দাবী জানাচ্ছে তখন এই মহল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে সোচ্চার এবং তৌহিদী জনতার দাবীকে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে কল্পনা করেন । ইসলামের মর্যাদা রাসূল (সাঃ) এর মর্যাদা রক্ষা অপেক্ষা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা যে মুসলমান দাবীদারদের কাছে প্রাধান্য পায় তারা ক্ষমতায় গিয়ে ইসলামের যে কি দশা ঘটাবে তা ভাবতেও ভয় লাগে । সংসদে অহরহ আইন পাশ হচ্ছে কিন্তু ইসলামের মর্যাদা রক্ষার জন্য একটি আইন পাশ কোনো ব্যাপারই নয় । এ আইন পাশ হলে কোন নতুন অর্থ বরাদ্দ করতে হবে না, কোন লোক নিয়োগের প্রয়োজন নেই । অথচ এই সহজ ব্যাপারটিকে ক্ষমতায় যাওয়ার পথে বাধা কল্পনা করে তারা প্রমাণ করে দিল যে, তারা ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল (সাঃ) এর মর্যাদা রক্ষার পক্ষে নেই । বরং অহরহ তার উপর আঘাত আসুক সে পথ খোলা রাখার জন্যই তারা এ আইন প্রণয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে । এদের দ্বারা ভবিষ্যতে ইসলামের কতটুকু উপকার হবে এ ঘটনায় তৌহিদী জনতাকে তা নতুন করে ভাববার সুযোগ দিয়েছে বটে!

 

নাস্তিক মুরতাদের জন্য সাম্রাজ্যবাদী চক্রের মায়াকান্না

        এ দেশের আলো বাতাসে লালিত পালিত হয়ে একশ্রেণির বিকৃত বুদ্ধিজীবী এদেশেরই জনগণের ঈমান, আকিদা, ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে উপহাস, কটূক্তি করে ধর্মপ্রাণ মানুষের গণরোষের মুখে যখন কোনঠাসা হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে ঠিক তখনই এগিয়ে এসেছে তাদের বিদেশী প্রভূরা । এই বিদেশী প্রভূরা তাদের দালালদের রক্ষার জন্য তাদের হিংস্র চেহারার মুখোশ উন্মোচন করেছে নির্লজ্জভাবে । কুচক্রী ও দেশদ্রোহীদের অন্যতম তসলিমা নাসরিনকে উদ্ধার ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের প্রচার মিডিয়া । এদের অন্যতম হলো বিবিসি ও ভোয়া । মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ছ্দ্মাবরণে এ প্রচার মাধ্যম দুটি তসলিমা গংদের সাফাই এবং তাদের জন্য মায়াকান্না কেঁদে চলছে । তসলিমার শাস্তির দাবীতে ৩০ শে জুন এদেশের তাওহিদী জনতা যখন হরতাল পালন করছে, বিবিসি সেদিন তসলিমাকে হাজির করে টিভির পর্দায় ।

 

        তসলিমাকে এইদিন দেখা যায় এক হাতে জ্বলন্ত সিগারেট অন্যহাতে পবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে স্পর্ধিত উক্তি করতে । আর এই দৃশ্য দেখানো হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনের পর্দায়ও । বিবিসির জানা আছে, সারা দুনিয়ার মুসলমানরা কুরআন শরীফ স্পর্শ করার আগে ওযু অথবা প্রয়োজনে গোসল করে শরীর পাক সাফ করে নেয় । অথচ দূর্গন্ধময় জ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে নাস্তিক মুরতাদ তসলিমা তার অপবিত্র হাতে কুরআন স্পর্শ করার তথা কুরআনের অবমাননার দৃশ্য দেখিয়েছে কোন মতলবে? এটার নাম যদি হয় ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকার তবে ইংল্যান্ডে খৃষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে কোন সমালোচনা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় কেন?কেন সেদেশে ব্লাসফেমী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে? বিশ্ব বিখ্যাত পপ শিল্পী ম্যাডোনার 'লাইক এ প্রেয়ার' নামক এ্যালবামটি ইউরোপ আমেরিকায় প্রচারের পর প্রচন্ড প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল । কারণ এ এ্যালবামের 'লাইক এ প্রেয়ার' গানটিতে নাকি যীশু-খ্রিস্ট ও পাদ্রীদের বিদ্রুপ করা হয়েছে, খৃষ্ট ধর্মকে অপমান করা হয়েছে । তসলিমার তৎপরতা যদি আল্লাহ, রাসূলের প্রতি বিদ্রুপ এবং ইসলামের অবমাননা না হয়ে এটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা হয়, ধর্মের প্রতি আঘাত হানা  যদি লেখার তথা মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার হয় তবে ম্যাডোন্ব অপরাধী হবে কেন?পাশ্চাত্য তার মত প্রকাশে ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে কোন যুক্তিতে?

 

        এটাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়?

 

        মানবাধিকারের ধ্বজাধারী বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র হরতালের দিন এ দেশীদের তসলিমা সংক্রান্ত ব্যাপারে কিছু নসিহত বিলিয়েছেন । তাতে বলা হয়েছে, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ী মত প্রকাশের অধিকার মৌলিক অধিকার । এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠায় না কি উদ্বিগ্ন । এতে আরও নসিহত করা হয়েছে যে, "ডাঃ তসলিমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তার বাক স্বাধীনতা ও ধর্মীয় অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে যার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে তাকে রক্ষা করা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব মনে করে" । বাহ,মানবাধিকারই বটে!বলি, এ নসিহত বিলাবার আগে ম্যাডোনার মৌলিক অধিকার হরণ করার বিচার করুন । দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকায় ২২ শে এপ্রিল '৯৪ সংখ্যায় এক আত্মকথামূলক নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রতিবাদী এক আইরিশ পপ গায়িকা গত বছর ইউ-২ নামক আইরিশ ব্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক মঞ্চ শো তে বব মালির বিখ্যাত গান war গাইতে ছিল । গানের এক ফাঁকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে সে পোপ জন পলের ছবি ছিড়ে ফেলে । প্রতিক্রিয়া হয় ভয়ংকর ।

 

        সিয়েলো কনা নামক ওই গায়িকাকে ষ্টেজে ইটপাটকেল মেরে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, গায়ে থু থু ছিটিয়ে কনসার্ট থেকে বিতাড়িত করা হয় । তথাকথিত সেক্যুলার, উদারনৈতিক ও বাক স্বাধীনতা প্রিয় পশ্চিমারা তার গায়ের পোশাক পর্যন্ত ছিড়ে ফেলে । সিয়েলো কনাকে কাঁদতে কাঁদতে ষ্টেজ ত্যাগ করতে হয় । পরদিনই তার সমস্ত ক্যাসেট, সিডি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় । পত্র-পত্রিকা তাকে ধিক্কার দিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করে । অতএব, তসলিমা ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার পরেও তা যদি মার্কিনীদের কাছে মানবাধিকার ও মত প্রকাশের অধিকার বিবেচিত হয় তবে তসলিমার জন্য তারা যে মায়াকান্না কেঁদেছে তার সিকি ভাগও সিয়েলো কনার জন্য কাঁদলো না কেন?সিয়েলো কনার ওপর আক্রমণকারীদের মৌলবাদী বলে ব্রিটিশ সরকারের নিকট এসব মৌলবাদীদের রোষ থেকে তাকে রক্ষার নসিহত বিলায় নি কেন?না কি তথাকথিত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা থেকে  সিয়েলো কনা ও ম্যাডোনাদের বাদ রাখা হয়েছে?এ দেশবাসীকে নসিহত বিলাবার আগে মার্কিন সরকারের মনে রাখা উচিত ছিল যে,শুধু তসলিমাকে বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার দেয়া হয় নি,  এ অধিকার সকল নাগরিকেরও । তসলিমা যদি প্রলাপ বকে দেশের দশ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বাকস্বাধীনতার জোরে রক্ষা পেতে পারে,সঙ্গত কারণে এ দেশবাসীও সেই  বাকস্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের জোরে তসলিমাকে যা খুশি বলতে পারে । তাছাড়া আন্দোলন করা, জনসভা করা, মতামত ব্যক্ত করে বক্তৃতা দেয়া তো গণতান্ত্রিক অধিকার । যুক্তরাষ্ট্র সরকার কোন মুখে গণতন্ত্রের দাবীদার হয়েও এদেশের জনগণের আন্দোলনে উদ্বেগ প্রকাশ করে, সরকারকে মানবাধিকারের সবক দেয়? একি মানবাধিকারের ছদ্মবেশে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অশুভ স্পর্ধা নয়??

 

═──────────────═