JustPaste.it

আঁধার থেকে আলোর পথে

আমেরিকার বিখ্যাত নওমুসলিম

শহীদ মল্লিক শাহবাজ

 

             আমেরিকায় ইসলামী জাগরণের কথা বলতে গেলে যে লোকটির নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, তিনি হলেন ‘ম্যালকম এক্স’ যার ইসলামী নাম মল্লিক শাহবাজ। আরো পাঁচজন মার্কিনীর ন্যায় চরমভাবে চারিত্রিক অধঃপতনের শিকার এই নিগ্রো যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তার জ্বালাময়ী ও হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা বিশেষ করে আমেরিকার বিপুল সংখ্যক কৃষ্ণাংগ জনগোষ্ঠীকে বশীভূত করে ফেলে এবং হাজার হাজার মানুষ দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, কুফরী শক্তি তাকে বেশি দিন সহ্য করতে পারল না। ঠিক চল্লিশ বছর বয়সে এক আততায়ীর গুলীতে অত্যন্ত নির্মমভাবে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তার শাহাদাত তার ইসলাম প্রচার আন্দোলনের গতিকে আরো তীব্রতর করে তুলেছে। ফলে ম্যালকম এক্স-এর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া ভাগ্যবান ঈমানদারদের সংখ্যা এখন কমপক্ষে পয়তাল্লিশ লাখে এসে পৌঁছেছে। নিম্নে আমেরিকার এই বিখ্যাত নওমুসলিম শহীদের জীবন বৃত্তান্ত ও ইসলাম গ্রহণের কাহিনী পেশ করা হলো। (অনুবাদক)

ম্যালকম এক্স ১৯৫২ সালে আমেরিকার মিশিগান রাজ্যের মেসন সিটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন কট্টর ও নিষ্ঠাবান খৃস্টান পাদ্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিরিবিলি স্বভাবসম্পন্ন, সত্যানুসন্ধ্যানী ব্যক্তি। তার যাবতীয় কর্ম তৎপরতা নিজের ছোট্ট সংসার এবং গীর্জা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। অত্যন্ত সততার সাথে তিনি নিজ দায়িত্ব পালন করতেন। চার্চ থেকে প্রাপ্ত সামান্য বেতন দিয়েই কোনো রকমে সংসার চালিয়ে যেতেন তিনি। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ খৃষ্টানরা তাকে হয়রানি করার কোনো সুযোগই হাত ছাড়া করত না। ভিত্তিহীন অজুহাত দাড় করিয়ে তাকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের টার্গেট বানাতো। ম্যালকম তার ডাইরীতে লিখে গেছেনঃ

             “আমার মা আমাকে বলেছেন, ম্যালকম! তুমি যখন আমার গর্ভে, তখন এক রাতে বর্ণবাদী সন্ত্রাসীরা আমাদের ঘরে হানা দেয়। তারা তোমার বাবাকে খুঁজছিল। ভাগ্যক্রমে সে দিন তিনি ঘরে ছিলেন না। সন্ত্রাসীরা তাকে না পেয়ে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র সব ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলে এবং নানা রকম হুমকি দিয়ে চলে যায়।”

             ম্যালকমের ভাষ্যমতে তার পিতার একটি ক্রটি এই ছিল যে, এমন একটি সংগঠনের প্রতি তার সমর্থন ছিলো, যে সংগঠন নিগ্রোদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করত। আর কালো- ধলোর ভেদাভেদ না থাকায় ইসলামের তিনি ভূয়সী প্রশংসা করতেন। যা হোক ম্যালকমের জন্মের পর অল্প কিছুদিন যেতে না যেতেই উগ্রপন্থী বর্ণবাদীরা তার পিতাকে হত্যা করে।

             ম্যালকম প্রাইমারী পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গদের একটি স্কুলে শিক্ষা লাভ করেন। এ সময়ে প্রতিনিয়ত তাকে শ্বেতাঙ্গ সাথীদের তাচ্ছিল্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হতে হতো। এতে তার কোমল হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হয়ে যেত। অথচ, মেধার দিক থেকে ম্যালকম ক্লাসের প্রথম সারির তিন মেধাবীর একজন ছিলেন। তদুপরি শিক্ষকদের ব্যবহারও ছিল যারপরনাই হৃদয়বিদারক। যেমনঃ এক দিন এক শিক্ষক তাকে জিজ্ঞেস করেছিল , বড় হয়ে তুমি কি করবে ম্যালকম? ম্যালকম বললেন, 'আমি আইনবিদ হতে চাই।' জবাব শুনে শিক্ষক দ্রু কুচকে নাক সিটকে অবজ্ঞার সাথে বলল, ‘আইনবিদ হবে তুমি, তার চেয়ে বরং কাঠমিস্ত্রীর কাজ শিখে নাও, ভালো ফার্নিচার বানাতে পারবে।’

               শ্বেতাঙ্গদের এহেন জ্বালাতনের মধ্য দিয়ে বহু কষ্টে ম্যালকম প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং ১৯৪০ সালে পনের বছর বয়সে তিনি মিশিগান থেকে বোস্টন শহরে তার এক বোনের কাছে চলে আসেন। এখানে এসে তিনি সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবেশের সাথে পরিচিত হন। তিনি লিখেছেনঃ

             বোস্টন শহরে এসে আমি একটি নাইট চাকরি নিই। কিন্তু এ চাকরি আমার মনঃপুত হলো না। ফলে চাকরি ছেড়ে ক্লাবের সামনেই জুতা পালিশ করার পেশা গ্রহণ করি। এভাবে এখানে আমি মার্কিন সমাজকে অত্যন্ত কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেলাম। দেখতে পেলাম, ওরা মদ-জুয়া সহ অসংখ্য পাপ প্রবণতায় আপাদমস্তক নিমজ্জিত। দুর্ভাগ্যক্রমে আমিও নিজেকে এ অধঃপতন থেকে রক্ষা করতে পারলাম না। নিজের অজান্তেই তাতে জড়িত হয়ে পড়লাম। বাস্তবিক, আমেরিকান সমাজ সম্পূর্ণরূপে বন্য জীবনের প্রতিবিম্ব। অপরাধ প্রবণতা ও যৌন উচ্ছৃংখলতা এ সমাজের প্রধান পরিচয়। মানবিক চরিত্র আর আইন-শৃংখলা এখানে পদে পদে লাঞ্ছিত ও উপেক্ষিত।

              মোটকথা ম্যালকম নিজেও আরো দশজন মার্কিনীর ন্যায় অপরাধ প্রবণতায় ডুবে যান। তিনি নিজেই লিখেছেনঃ এ সময়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে হলে নির্বিচারে মিথ্যা ও প্রতারণা সহ সর্ব প্রকার পন্থাই বেছে নিতে হবে। জগতে অপরাধ বলতে কিছু নেই। নারী তখন আমার দৃষ্টিতে ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

            তারপর একদিন এমন এক অপরাধে আমাকে গ্রেফতার করা হলো, যার সঙ্গে আদৌ আমার সম্পর্ক ছিল না। বিচারে আমাকে দশ বছরের কারাদন্ড দেয়া হলো। জেলখানায় এসে দেখতে পেলাম, এ তো আসলে জেলখানা নয়-এ এক অপরাধের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানের ঘটে না এমন কোনো অপরাধ নেই। গুন্ডামি, বদমায়েশী, মদপান ইত্যাদি সহ সব ধরনের চারিত্রিক অপরাধ। কিন্তু আল্লাহর অভিপ্রায় ছিল যে, তিনি আমাকে কল্যাণের পথে টেনে আনবেন। জেলখানায় কিছু লোক আত্মশুদ্ধি ও কল্যাণকর কাজ পরিচালনা করতেন। তাদেরই মধ্য থেকে এক ব্যক্তি আমাকে আলীজা মুহাম্মদের আন্দোলন নেশন অফ ইসলাম এর একটি পরিচিতি প্রদান করেন এবং সেই পরিচিতি-ই আমার জীবনে বিপ্লব সৃষ্টির কারণ হয়ে দাড়ায়। এর আগে কখনো আমি ইসলামের নামও শুনিনি, কয়েকটি ফিল্মে কয়েকবার খোদা নামটা শুনেছিলাম, এ-ই যা। কিন্তু আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে, বন্দী জীবনের এ দীর্ঘ সময়ে আমি ইসলাম সম্পর্কে বেশ কিছু জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হই! ইসলামী সভ্যতা ও ইতিহাস সম্পর্কে কয়েকটি গ্রন্থ পাঠ করি এবং নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সীরাত ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট পড়াশুনা করি। ফল এই দাড়ালো যে, ইসলাম আমার হৃদয়ে আসন করে নেয়। ইসলামের এক একটি আদর্শে আমি অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে পড়ি। আমার হৃদয় জগতে এক নতুন বিপ্লবের বন্যা বয়ে যায়। ধীরে ধীরে আমি এক এক করে সব অপরাধ বর্জন করি। মদপান থেকে তাওবা করে নিলাম। এমনকি সিগারেট পর্যন্ত ছেড়ে দিলাম। অবশেষে জেলখানাতেই ইসলাম গ্রহণ করে মল্লিক শাহবাজ নাম ধারণ করলাম।

                ম্যালকম যখন জেলখানা থেকে বের হয়ে আসেন, তখন তিনি সম্পূর্ণরূপে এক ভিন্ন রকম ব্যক্তি। এ ম্যালকম এখন সে ম্যালকম নয়। কিন্তু আকীদা-বিশ্বাসের বেলায় তিনি তখন আলীজা মুহাম্মদের অনুসারী, যিনি নেশন অফ ইসলামের নামে শুধু নিগ্রোদের মধ্যে একটি আন্দোলন পরিচালনা করছিলেন। তার আকীদা-বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা ছিল সম্পূর্ণ মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর। যেমনঃ আল্লাহর বর্ণ কালো, কালোরাই কেবল জান্নাতে যাবে, সাদাদের জন্য জান্নাত হারাম ইত্যাদি। এভাবে নেশন অফ ইসলাম এ কথাও প্রচার করছিল যে, শয়তানের বর্ণ সাদা আর কালো মানুষ আল্লাহর অতি প্রিয় বান্দা। আলীজা মুহাম্মদ দাবী করতেন, আল্লাহ স্বয়ং একজন নিগ্রো মানুষের রূপ ধরে তার কাছে আসা-যাওয়া করেন। নেশন অফ ইসলামের সদস্যদের বিশ্বাস ছিল, যেভাবে হযরত মূসা (আঃ) ইহুদীদের প্রতি, ঈসা (আঃ) খৃষ্টানদের প্রতি এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলমানদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন, তেমনি আলীজা মুহাম্মদ আমেরিকার নিগ্রো মানুষদের জন্য সাক্ষাত একজন পয়গাম্বর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন।

              ম্যালকম লিখেছেনঃ

              হচ্ছে সে-ই ইসলাম, যার ওপর আমি ঈমান এনেছিলাম। কিন্তু সৌভাগ্যবশতঃ সউদী দূতাবাসের উর্ধ্বতন এক অফিসারের সঙ্গে ম্যালকমের সাক্ষাত ঘটে। তিনি ম্যালকমকে কুরআনের এক কপি ইংরেজী অনুবাদ এবং কয়েকটি ইসলামী পুস্তক প্রদান করেন। সেগুলো অধ্যয়নের পর ম্যালকম পরিস্কার বুঝতে পারলেন যে, আলীজা মুহাম্মদের দীক্ষার ইসলাম ও কুরআনের শিক্ষার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই এবং তার ব্যক্তি জীবনেও ইসলামের ছোয়া মাত্র নেই। এর কিছু দিন পর ম্যালকম সউদী সরকারের নিয়ন্ত্রণে হজ্জ করার সৌভাগ্য লাভ করেন। এ সুবাদে তিনি মক্কা ও মদীনায় নতুন এক জগতের সন্ধ্যান পান। তিনি দেখতে পেলেন সমগ্র পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত দেশ-জাতি, বর্ণ ও ভাষার ভেদাভেদহীন মুসলমানগণ এক অপূর্ব ও বিস্ময়কর ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশে আপন প্রভূকে আহবান করছে। এ দৃশ্য দর্শনে ম্যালকমের আন্দাজ হয়ে যায় যে, ইসলাম একটি সার্বজনীন আদর্শ। আলীজা মুহাম্মদের নেশন অফ ইসলাম থেকে তাওবা করে এবার তিনি সঠিক ও আসল ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আমেরিকা ফিরে এসে একদিকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন, অপরদিকে বর্ণ ও বংশের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সর্বস্তরের লোকের কাছে কুরআন-হাদীসের সঠিক পয়গাম তুলে ধরতে শুরু করেন। ম্যালকম অনলবর্ষী বক্তা ছিলেন। ইসলামের জন্য তিনি অসাধারণ নিষ্ঠা এবং চেতনার অধিকারী ছিলেন। তিনি যখন বক্তৃতা করতেন এবং কুরআনের শিক্ষা, নবী আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস ও মহান চরিত্রের দৃষ্টান্ত পেশ করতেন, তখন শুনে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে যেতো। তার বক্তৃতায় আলীজা মুহাম্মদের মুখোশ খুলে যেত এবং জনতা নেশন অফ ইসলাম থেকে তাওবা করে খাঁটি মুসলমান হয়ে যেত। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মুষ্ঠিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীও ম্যালকমেরই প্রেরণায় মুসলমান হয়েছিলেন এবং যে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি মুসলমান হওয়ার ঘোষণা দেন, ম্যালকমও তাতে উপস্থিত ছিলেন।

            এভাবে ম্যালকমের প্রচেষ্টা রং ধরতে শুরু করে এবং আলীজা মুহাম্মদের হাজার হাজার অনুসারী খাঁটি মুসলমান হয়ে যায়। অসংখ্য নিগ্রো খৃস্টানও ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। ম্যালকমের জনপ্রিয়তা এবং তার মিশনের অভাবনীয় অগ্রগতি আলীজা মুহাম্মদের জন্য ভরাডুবির কারণ হয়ে দাড়ায়। দিন দিন সে ক্ষিপ্ত থেকে ক্ষিপ্ততর হয়ে ওঠে ম্যালকমের ওপর। এক পর্যায়ে সে ম্যালকমের বিরুদ্ধে জঘন্যতম ষড়যন্ত্র ও আঁটে। ১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী যখন ম্যালকম এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ এক অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলীতে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। কিন্তু যেহেতু তার দাওয়াতী তৎপরতায় গোটা খৃষ্টজগত ভীতসন্ত্রস্ত ছিল, তাই, না তার ঘাতককে গ্রেফতার করা হলো। আর না এ হত্যকান্ডের জন্য কাউকে শাস্তি দেয়া হলো।

             বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ ছিল বিরাট এক দুর্ঘটনা এবং আমেরিকার মুসলমানদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এ দুর্ঘটনার ফলে আমেরিকায় ইসলাম প্রচারের কাজ পদে পদে ব্যহত হয়। এক হৃদয়বান আরব রাষ্টদূত আফসোস করে বলেছিলেন, দশ লাখ ডলার ব্যয় করেও আমরা সে কাজ করতে পারতাম না, ম্যালকম ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় যা করতে পেরেছেন। অপর এক রাষ্টদূত এই বলে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন যে, ম্যালকমের জীবন থেকে আমার উমর (রাঃ) এর কথা স্মরণ আসে। উমর (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ দ্বারা ইসলামের যে মুক্তি অর্জিত হয়েছিল, ঠিক তদ্রুপ ম্যালকমের ইসলাম গ্রহণ দ্বারাও ইসলামের যথেষ্ট শক্তি অর্জিত হয়েছে। ম্যালকম যেনো ঠিক এ যুগে আমেরিকার উমর ছিলেন।

             কিন্তু অতীব বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই যে, ম্যালকম এক্স-এর পবিত্র রক্ত বড় সুফল বয়ে এনেছে। ম্যালকম এর শাহাদাতের পর আলীজা মুহাম্মদ থেকে তার অনুসারী এবং নিকটতম সঙ্গীরা একের পর এক কেটে পড়ে। এমনকি তার পুত্র উইলসন মুহাম্মদ পর্যন্ত পিতার সঙ্গ ত্যাগ করে খাঁটি মুসলমান হয়ে যায়। এভাবে ধীরে ধীরে আলীজার মিশন ও আন্দোলন ম্যালকমের রক্তের স্রোতে ভেসে যায়।

             আলীজার মৃত্যুর পর পুত্র উইলসন মুহাম্মদ তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং পিতার মনগড়া মতবাদকে ভ্রান্ত আখ্যা দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক শিক্ষার অনুসরণের ঘোষণা দেন। বর্তমান অবস্থা হচ্ছে এই যে, ১৯৯৪ সালে রিপোর্ট অনুযায়ী ম্যালকমের সংগঠনে ৪৫ লাখেরও অধিক নিগ্রো অংশগ্রহণ করেছেন। এরা সকলেই খাঁটি মুসলমান। বিশেষতঃ আমেরিকার জেলখানাগুলোতে ইসলাম প্রচারের কাজ তীব্র গতিতে প্রসার লাভ করছে এবং প্রতিদিন কয়েক ডজন করে লোক মুসলমান হচ্ছে। ইসলাম গ্রহণ করা মাত্র তাদের চালচলন ও কর্মকান্ডে আমূল পরিবর্তন এসে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মুষ্টিযোদ্ধা মাইক টাইসনও মুসলমান হয়েছেন এবং ম্যালকমের নামে নিজের নাম রেখেছেন মল্লিক শাহাবাজ আব্দুল আজীজ। ম্যালকম এক্স তথা মল্লিক শাহবাজ ইসলামের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। কিন্তু তার পবিত্র খুনের এক একটি ফোটা আলোর মিনার হয়ে আছে।

             আশা করি এ আলো আমেরিকার অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, ইনশা আল্লাহ।

সৌজন্যেঃ বেদার ডাইজেস্ট

অনুবাদঃ মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন