JustPaste.it

ইসলামে নারী ও নারীত্বের মর্যাদা ও আজকের সমাজ

শহীদ আহমাদ সেকান্দার

=================================================

 

        সদ্য প্রসূতি মা' আতুড় ঘরে এখনও যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে নবজাতক শিশুটিকে কোলে নেয়ার চেষ্টা করছিল সে। এমন সময় চাঁদ আলী ঘরে ঢুকে বাজ পাখির মত ছোঁ মেরে সন্তানটি মুঠি করে ধরে দৌড়ে গিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল বহমান “গোমানী” নদীর ঠিক মধ্য বরাবর। এঘটনাটি গত ১০ই সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে ছাপা হয়েছে। পাবনা জেলার দরিয়াপুর গ্রামের চাদ আলী বার বছরের বিবাহিত জীবনে তার স্ত্রী পর পর সাতটি কন্যা সন্তান উপহার দেয়ায় সে ক্ষোভে এই নির্দয় কাণ্ডটি করেছে। নিঃস্পাপ এ জীবন্ত কন্যা সন্তানটি পাষণ্ড চাঁদ আলীর হৃদয়ে এতটুকু পিতৃ স্নেহের উদ্রেক করতে পারেনি। যে মা দশ মাস পেটে ধারণ - করে মরণ যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে প্রসব করলাে সে অভাগী পারেনি কন্যাটিকে মাতৃত্বের সােহাগ করতে ।

 

         কি অপরাধ এ সন্তানটির, কি অপরাধ এ অভাগী মায়ের? প্রতিদিন পত্রিকা হাতে নিলেই চোখে পড়ে নারী জাতির এ করুণ চিত্র। পত্রিকার অর্ধেক পাতা জুড়ে থাকে বিচিত্র ধরনের নারী নির্যাতনের খবরে পরিপূর্ণ। কোথাও আত্মহত্যা করছে, কোথাও ধর্ষিতা হচ্ছে, আবার কোথাও বিতাড়িতা হয়ে পথে নামছে বা বিদেশে চাকুরীর নামে বিক্রি হচ্ছে এরা প্রতিনিয়ত। তাহলে আমরা কি আবার ফিরে যাচ্ছি সেই অন্ধকার যুগে, যে যুগে নারী ছিল ভােগের সুগ্রী অপয়া ও সম্মান হানিকর একটি বস্তু বিশেষ। কন্যা জন্মদিলে সাথে সাথে সদ্যজাত সন্তানটিকে ইজ্জতের দায়ে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হত। কন্যা জন্মদান কারীনী মা নিজেকে মনে করতাে দুর্ভাগিনী । সে কন্যার সাথে কামনা করতাে নিজেরও মরণ। না হয় কেন আজো নূরজাহানরা আত্মহত্যা করে, কেন নদীতে ফেলে দেয় জীবন্ত ঔরষজাত সন্তান চাদ আলীরা!

 

        একই দিনে আরেকটি পত্রিকার খবরঃ একমাত্র নােয়াখালী জেলার পাঁচটি থানায় যৌতুকের দাবী মিটাতে না পারায় ৩৫ হাজার তরুণীর বিয়ে হচ্ছে না। শুধু যে নােয়াখালীর অবস্থা, এমন তা নয়, এই হারে হিসেব করলে সারা দেশে প্রায় বাইশ লক্ষ তরুণী যৌতুকের অভিশাপে বিবাহ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও হতাশায় নিজেরা হচ্ছে, দগ্ধ আর মা-বাবার শান্তি হয়েছে হারাম। এই অবস্থা কেন মুসলিম সমাজের মা - বােনদের ভাগ্যে নেমে এলাে। এর কারণ কি তা আমরা কখনাে ভেবে দেখেছি কি?

 

        প্রকৃত কারণ হলাে, যে আদর্শ দুনিয়ার বুকে অবাঞ্চিতা, নিগৃহিতা, অধঃপতিতা নারীদের বসিয়ে ছিল সম্মানের উচ্চাসনে, সেই কালজয়ী পুতঃপবিত্র আদর্শ থেকে - আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি বলে আমাদের এই অবস্থা। যে কারণে পাশ্চাত্যের তথাকথিত প্রগতিবাদের আধারে তলিয়ে যাচ্ছি আমরা। আমরা বিস্মৃত হয়ে গেছি আমাদের জীবন বােধ সম্পর্কে, আমাদের সুখী সুন্দর ভবিষ্যত সম্পর্কে পুরােদস্তুর সংশয়বাদী বস্তুবাদের প্ররােচনায় আখেরাতের কথা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। ভুলে গেছি আমরা আমাদের জন্য দেয়া ইসলামের চিরন্তন আদর্শ, নীতি, নৈতিকতা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা।

 

        ইসলাম ঘােষণা করেছে, নারীকে সমাজের এক গুরত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অংশরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে । সভ্যতা ও মানব জীবন ধারা নারী-পুরুষ উভয়ের কাছে সমানভাবে মুখাপেক্ষী। এক সময় এই মর্যাদাবান নারী তার বাঁচার অধিকার থেকেও বঞ্চিত ছিল। কিন্তু ইসলাম নারী জাতিকে হীনতার নিম্নতম পদাংক থেকে উদ্ধার করে সর্বোচ্চ মাতৃত্বের আসনে বসিয়েছে। ইসলাম ঘােষণা করেছেঃ . “আল, জান্নাতু তাহতা আকদামিল উম্মাহাত”, “মা'র পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত।”

 

        ইসলাম দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছে নারীও বাঁচবে-পুরুষের মত মান মর্যাদা সহকারে বেঁচে থাকার অধিকার অবশ্যই তার আছে। সে অধিকার কেউ হরণ করতে পারে না। ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতা কারাে নেই তার অধিকার। নবী করীম (সাঃ) বঞ্চিত, উপেক্ষিত নারী সমাজের অবস্থার উন্নয়ন ও সঠিক মর্যাদায় তাদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে উন্নত আদর্শ পেশ করেছেন পৃথিবীর কোন নারী মুক্তির নেতা- নেত্রীরা এমন ভারসাম্যপূর্ণ আদর্শ পেশ করতে পারবে না।

 

        রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে লােকের কন্যা সন্তান হবে সে যদি তাকে জীবিত পুঁতে না ফেলে বা তার প্রতি কোন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আচরণ না দেখায় এবং নিজ পুত্র সন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার না দেয়, তবে আল্লাহ একটি মেয়ের বদলে তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।"

 

        তিনি আরাে বলেছেন, “যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তানের লালন-পালন করবে এবং তাদের প্রতি ভালাে ব্যবহার করবে তার জন্য জান্নাত অবধারিত।”

 

        বস্তুতঃ কন্যা সন্তান লালন-পালন একজন মুসলমানের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় বটে। কারণ কন্যা পালনে জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ দিয়ে ইসলাম নারীর মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

        আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে কন্যা সন্তানদের প্রতি লক্ষ রেখে তাদের জীবন্ত মাটিতে প্রথিত করা ও অবহেলা তাচ্ছিল্য থেকে বাঁচানাের জন্য ইসলাম যে যুগান্তকারী ঘােষণা দিয়েছিল সেই সূত্রধরে কন্যা সন্তানদের জীবন হয়ে উঠে সকলের কাছে আদরনীয় ও মর্যাদাপূর্ণ। ইসলামের এ শিক্ষা জাহেলিয়াতের যুগে এমন বিপ্লব সাধন করেছিল যে, যে পুরুষ নিজ সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে রাখতে এতটুকুও দ্বিধাবােধ করতাে না, তারাই অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে কন্যা সন্তানদের প্রতি সবচেয়ে বেশী হৃদ্যতা প্রদর্শন করেছিলাে। ঔরষজাত কন্যা সন্তানেরা যাদের কাছে একবিন্দু নিরাপত্তা পেতাে না, পক্ষান্তরে তারাই অন্যদের কন্যাসন্তান প্রতিপালনে প্রতিযােগিতায় নেমে পড়েছিল।

 

        যেমন হযরত হামযার (রাঃ) শাহাদাতের পর তাঁর কন্যার লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণের জন্যে কয়েক জনে দাবী জানালেন। হযরত আলী বল্লেন, এ আমার চাচাতাে বোন, এর - লালন-পালনের দায়িত্ব বহন করার অধিকার আমার। হযরত জাফর (রাঃ) বল্লেনঃ .আমি আলী (রাঃ) অপেক্ষাও বেশী হকদার। কারণ এ শুধু আমার, চাচাতাে বােনই নয়, এর খালাও রয়েছে আমার ঘরে। অন্যদিকে হযরত যায়েদ (রাঃ) দাবী করলেনঃ হামযা তাে রাসূল(সাঃ) কর্তৃক মযবুত বন্ধনে বেঁধে দেয়া আমার ভাই-কাজেই এ সূত্রে এই মেয়ে লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করার আমিই সর্বাধিক হকদার। (-নাইলুল আওতার)

 

        হযরত জাবের (রাঃ) তার পিতৃহীনা সাতটি বােনকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে লালন পালনের জন্য যুবক বয়সে কুমারী মেয়ে বিয়ে না করে বয়স্কা বিধবা এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। যা বুখারী শরীফে বর্ণিত সে যুগের একটি উল্লেখযােগ্য . ঘটনা।

 

        লালন-পালনের নিশ্চিত ও সুন্দরতম ব্যবস্থা ঘােষণা করার পর যখন মেয়েরা যৌবন প্রাপ্তা হবে তখন যেন পুরুষরা তাদেরকে ভােগ্য পন্যের ন্যায় ব্যবহার না করে সেজন্য রাসূল (সাঃ) ঘােষণা করেছেনঃ “হে যুবক বৃন্দ! তােমাদের মধ্যে যাদের শারিরীক ও আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে তারা বিয়ে কর। কেননা বিয়ে তােমাদের দৃষ্টি ও যৌনাঙ্গকে হিফাজত করবে।” (মিশকাত) যৌবনপ্রাপ্তা নারী-পুরুষের যৌনসম্পর্ক মানব জীবনের খুবই ঘনিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পৃথিবীর যতসব ইতিহাস ও আবিস্কার নর-নারীর যৌন সম্পর্কই হলাে তার মূল । ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম যৌন সমস্যা সমাধানের কোন ভারসাম্য পূর্ণ বিধান নেই। কোন কোন ধর্ম মতে বৈরাগ্যতার খেয়ালীপনায় মানবজীবনের এ সভাবজাত স্পৃহাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আবার কোন ধর্মে নারী-পুরুষকে স্বাধীনভাবে যথেচ্ছা মেলা-মেশার অনুমতি দিয়ে যৌন সম্পর্ককে করেছে কলুষিত।

 

        বস্তুতঃ মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই যৌনকামনা চরিতার্থ করার যে প্রবণতা রয়েছে একমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই তার নির্বিঘ্ন, শান্তিপূর্ণ ও বৈধ চরিতার্থ সম্ভব। কিন্তু যদি বিয়ে ছাড়া মানুষ অবাধ যৌন ক্রিয়ায় অভ্যস্ত হয়, এর প্রতিক্রিয়ায় শুধু ব্যক্তি জীবনেই ধ্বংস নেমে আসে না বরং গােটা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে বিদীর্ণ করে ধ্বংসের মুখােমুখি এনে দাড় করায় । এইডস-এর অপ্রতিরােধ্য আক্রমণই এর জ্বলন্ত প্রমাণ নয় কি?

 

         শুধু তাই নয়, যথেচ্ছা মেলামেশার সুযােগে পংকিল মন মানসিকতার লােভাতুর পুরুষেরা নিজেদের যৌন প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য দুর্বল মনের অবলা , মেয়েদের ব্যবহার করার সুযােগ পায়। এ ব্যাপারে মেয়েদের দোষও কম নয়। সে জন্যই প্রত্যেক নারীকে তার যৌবন আড়াল করে রাখা চাই। তাই পর্দাকে ক্রয় করা হয়েছে- যা লংঘন করা হারাম। এর সুফল ও কুফল গুলাে বর্তমান পরিস্থিতিতে কারও বুঝতে মােটেই কষ্ট হওয়ার কথা নয়।

 

        পিতা-মাত্রার তত্ত্বাবধানে থেকে বেড়ে উঠার পর কন্যা যখন যৌবন প্রাপ্ত হয় তখন কোন পুরুষ যেন নারীকে ভােগ্য পণ্যের ন্যায় স্বাদ গ্রহণ করে ছুড়ে ফেলে দিতে না পারে এজন্য ইসলামী বিধানে বিয়ে করতে হলে লাগবে কন্যার সম্মতি এবং কমপক্ষে দু'জন স্বাক্ষী। এখানেই শেষ নয়, বাবা-মার কাছ থেকে চলে আসার পর স্বামীর সংসারে ঢুকার আগেই নারীকে দিয়েছে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা। কুরআন ঘোষণা করেছেঃ “কোন বিনিময় ব্যতীত আনন্দচ্ছলে নারীদেরকে মােহর দিয়ে দাও ” (সূরা নিসা-৪)

 

         কুরআন কারীম স্পষ্ট ভাষায় ঘােষণা করেছে, ‘মােহর' স্বামীর পক্ষ থেকে বিনিময় বিহীন উপহার। কোন অবস্থাতেই এটা নারীর মূল্য নয়। মােহর এমন বস্তু নয় যে স্বামী ইচ্ছা করলে আদায় করবে অথবা আদায় করবে না।

        মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বিয়ের পর মােহর আদায় না করার ইচ্ছা করবে সে ব্যাভিচারী হিসাবে চিহ্নিত হবে।” (মুসনাদে আহমদ।)

 

        তবে লােক দেখানাের জন্য বা নিজেদের কৌলিনত্ব জাহির করার জন্য মােটা অংকের মােহর নির্ধারণ করা যা স্বামী আদায় করতে সক্ষম নয় তা অবশ্যই একটি কঠিন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাই মােহর সব সময় স্বামীর সামর্থানুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত । মােহর নারীর একক এক অধিকার। এতে অন্য কারাে হক নেই। সে এই টাকা দিয়ে বৈধ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। স্বামী স্ত্রীকে থাকা-খাওয়া, বাসস্থান ও পােষাক পরিচ্ছদ এর - নিশ্চয়তা বিধান করার পরও ইসলাম মােহর স্ত্রীর সত্ত্বাধীন করে দিয়েছে। আজকাল স্ত্রীর প্রথম সাক্ষাতে তার স্বভাবগত লজ্জার সুযােগে মেয়েদের নিকট থেকে ছেলেরা ইচ্ছা করেই মােহর মাফ করিয়ে নেয়। যা একজন পুরুষের জন্য অপমান জনক ও পৌরুষত্বেরও পরিপন্থী। তবে, হাঁ, যদি স্ত্রী স্বজ্ঞানে চাপ প্রয়ােগ ছাড়া স্বামীকে মােহরের দায় থেকে পরিত্রাণ দিয়ে দেয় তবে তা আলাদা কথা। অবশ্য স্ত্রী মােহর মাফ করে দিতে অসম্মত হলে তার প্রতি এ ব্যাপারে কোন ক্রমেই চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। স্ত্রীর নিকট থেকে কখনই মােহর মাফ করিয়ে নেয়া উচিত নয়। এ জন্য সামর্থানুযায়ী মােহর নির্ধারণ করা চাই। আমরা মনে করি, মােহর-এর সদব্যবহার করলে যৌতুকের অভিশাপ সমাজ দেহ থেকে পালাতে বাধ্য হবে। শুধু এখানেই শেষ নয়। উপরন্তু ইসলাম পিতা মাতার খিদমতের ভার মেয়েদের উপর না চাপিয়ে ও পিতৃ সম্পদ থেকে ভাইদের তুলনায় অর্ধেক হিস্যা নারীর জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। যদি কোন কারণ বশত বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে তবে যেন ভাইদের গলগ্রহ হতে না হয় তাকে।

 

        অন্যদিকে প্রাথমিক অবস্থায় মােহর প্রাপ্তির পরেও স্ত্রীর জন্য রক্ষিত থাকে স্বামীর সম্পত্তি থেকে সন্তানাদী থাকা অবস্থায় এক অষ্টমাংশ এবং সন্তান না থাকা অবস্থায় এক চতুর্থাংশ।

 

        কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলাে,   আজ আমাদের নারী সমাজ ইসলামের দেয়া এসব মর্যাদা ও অধিকারের কথা, বিস্মৃত হয়ে মরিচিকার পিছনে দৌড়াচ্ছে। আর একটি বাস্তব সত্য হলাে, মহিলাদের প্রাপ্য মিরাস আমাদের দেশে খুব কমই আদায় করা হয়। এটাও সমাজের অসুস্থতা, অজ্ঞতার পরিচায়ক। নারী নির্যাতনের এটাও একটা বড় কারণ। এইরূপ একটি ফরজে আইনের প্রয়ােগ আজ আমাদের সমাজে নেই বল্লেই চলে।

 

        একটা জাতির ভাগ্যাকাশে দুর্ভোগ নেমে আসার জন্য এত বড় এক জুলুমই যথেষ্ট , নয় কি?  দাম্পত্য জীবনের শেষ লগ্নে মানুষ - যখন বার্ধক্যে উপনীত হয়, মা-বাবা যখন - হারিয়ে ফেলে শক্তি-সামর্থ্য, তখন আধুনিক পাশ্চাত্য জগতের শিক্ষা ও মানবাধিকার ব্যবস্থায় বুড়োদের জন্য “বৃদ্ধাশ্রম” ছাড়া আর আশ্রয় নেই। আশ্রয় শিবিরে পঁচে গলে দুর্বিষহ জীবনপাত করতে হয় তাদের। সন্তানরা একবারও তাকিয়ে দেখেনা তাদের প্রতি। পিতা-মাতাকে দেখা-শুনা করার দায়িত্বের কথা তাদের নীতি নৈতিকতার কোন কিতাবে নেই। কিন্তু ইসলাম এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ইসলাম বলেছে, তােমার পিতা মাতার সেবা করা তােমার উপর ওয়াজিব। কুরআনের ঘােষণা হচ্ছেঃ “আর তােমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন-তিনি ব্যতীত কারাে ইবাদত করাে না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করাে। তাদের একজন বা উভয়েই তােমার জীবদ্দশায় থাকা কালে , বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বিরক্ত সূচক কিছু বলবে না এবং তাদের ভর্ৎসনাও করাে না। তাদের সাথে সম্মান সূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে কথা বলবে। অনুগ্রহে তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাকবে এবং প্রার্থনা করার নিমিত্তে বলবে, হে আমার প্রতি পালক! তাদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করে ছিলেন । তােমরা যদি সৎকর্মপরায়ন হও তবে  জেনে রাখাে, যারা সৎ আল্লাহ  অভিমুখী, আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল।(সূরা বনী ইসরাইলঃ ২৩-২৫)

 

        উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা'আলা মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বার্ধক্যে উপনীত মাতা পিতার প্রতি সশ্রদ্ধ ব্যবহার ও সার্বিক খিদমতে নিজেকে নিয়ােজিত রাখার জন্য।

 

        রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “পিতা-মাতার সন্তুষ্টির উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতা মাতার নারাজীর উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি"।

 

        কাজেই ইসলামে একজন নারী অথবা পুরুষ কাউকেই জন্মের পর থেকে নিয়ে মৃত পর্যন্ত অবহেলা গঞ্জনার শিকার হওয়ার কোন অবকাশ নেই। আজ আমাদের জন্য ইসলাম নারীদের জন্য যে মর্যাদা, সম্মান ও স্বাধীনতা দান করেছে,এসব জানা ও ব্যাপকভাবে তা প্রয়ােগের উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।

 

        ইসলামী হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞতা, তার অপপ্রয়ােগ বা উপেক্ষাসহ সমাজে পাশ্চাত্যের প্রভাবই নারীর অধিকার বঞ্চিত ও নির্যাতিতা হওয়ার অন্যতম কারণ । যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের প্রতি নারী সমাজ সচেতন না হবে ততদিন পর্যন্ত নারী জাতি মাতৃত্বের সুমহান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা পাবে না। বিদূরীত হবে না তাদের জীবনের অমানিশা। তাই আমাদের ইসলামের দেয়া অধিকারগুলাের সফল বাস্তবায়নের জন্য সমাজ- সচেতনতা এবং এর শিক্ষা প্রচার করা একান্ত জরুরী। ইসলামী অনুশাসন প্রয়ােগে দুর্বলতা বা সুযােগেই আজ নারী নির্যাতিত হচ্ছে। এজন্য চাই ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী অনুশাসনের প্রতিষ্ঠা। নতুবা নারীরা ভােগ করতে পারবে না তাদের ন্যায্য অধিকার, কোন দিনই নারীত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে না। এব্যাপারে সকলকে আরাে ন্যায় নিষ্ঠ ও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।

 

*****