মরণজয়ী মুজাহিদ-৩৮
মল্লিক আহমদ সারওয়ার
ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত একদল মুসলমান যখন রাশিয়ার কম্যুনিষ্টদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করেছিল, তখন রাশিয়ার অধিকাংশ আলেম ছোট ছোট মাসআলা মাসায়েল নিয়ে নিজেদের মধ্যে শতধা বিভক্ত ছিলেন। সামান্য শরয়ী মতবিরোধে প্রতিপক্ষকে কাফের ঘোষণা করতেন। আলেমদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধের এমন পর্যায়ও ছিল যে, পায়জামা পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত লম্বা হবে, না উপড়ে থাকবে, পাগড়ীর নিচে টুপি থাকবে কি থাকবে না, খাবার আগে হাত একবার ধোবে না তিনবার, এসব বিষয়ও তাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছিল প্রচণ্ড মতবিরোধ।
সচেতন আলেমদের একটি ক্ষুদ্র অংশ তাদেরকে একথা বুঝাবার চেষ্টা করছিলেন যে, মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য পরিহার করে জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে সকল আলেমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিৎ এবং সাধারণ মুসলমানদের জিহাদী প্রেরণায় উজ্জীবিত করে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল আলেমকেই মুসজাহিদদের সহযোগিতা করা দরকার। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বেহুধা বিভক্ত আলেমগণ তখন জিহাদী প্রয়োজনের গুরুত্ব অনুধাবনকারী আলেমদেরকে চক্রান্তকারী বিদেশী এজেন্ট বলে অপপ্রচার করতো। তারা যুক্তি দিতো, ঈমান ঠিক না হলে জিহাদ করে কোন উপকার হবে না। এভাবে আলামদের বড় অংশ সাধারণ মুসলমানদেরকে জিহাদ থেকে বিরত রেখে অভ্যন্তরীণ কলহে লিপ্ত করেছিলেন। তাদের কাছে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বিষয়াদি নিয়ে মেতে থাকাই ছিল জিহাদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
আলেমদের ক্ষুদ্র অংশটি জিহাদে লিপ্ত হয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ-যাতনা, অত্যাচার নির্যাতন বরণ করে নিলেন। বহু আলেমকে কম্যুনিষ্টরা জ্যান্ত কবর দিল, অনেককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করল, অনেককে খুচিয়ে খুচিয়ে যন্ত্রণা দিয়ে শহীদ করলো। তবুও সত্যাশ্রয়ী আলেমরা জিহাদ থেকে বিচ্যুত হননি। সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত হকপন্থী আলেমগণ জিহাদ অব্যাহত রেখেছিলেন। অথচ অধিকাংশ আলেম যদি আত্মকলহ পরিহার করে জিহাদে শরীক হতেন, কম্যুনিষ্ট কোন ভাবেই মুসলমানদের সাথে মোকাবেলায় টিকে থাওক্তে পারত না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, রাশিয়ার সত্যাশ্রয়ী আলেমদের তপ্ত খুন বুখারা-সমরকন্দ থেকে আমু দরিয়া পর্যন্ত রাশিয়ার প্রতি ইঞ্চি যমীন রঞ্জিত করে দিয়েছিলেন, রাজ পথের ধারে এমন কোন গাছ শূন্য ছিলনা।
কোন আলেমের লাশ ওখানে না ঝুলছে। কিন্তু এতো ত্যাগ, রক্তবন্যা, অসহ্য নির্যাতন আর জুলুম সবই ধুলিস্যাত হয়ে গেল যখন মুসলমানদের সিংহ ভাগ আলেমের জিহাদ বিরোধী প্রচারণায় কম্যুনিজমের সমর্থন ছিল। অধ্যাপক বুখারী বলেনঃ মুজাহিদদের সাথে তাদের মা, বোন, যুবতী কন্যা, ছোট ছোট সন্তানরা পর্যন্ত হাসিমুখে বীরবিক্রমে জিহাদ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছিল। যার দৃষ্টান্ত বর্তমান আফগানিস্তান ছাড়া পৃথিবীর কোন অমুসলিম ইতিহাসে নেই। অধ্যাপক বুখারী বলেন, আফগানিস্তানে রাশিয়ার লাল ফৌজ যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, আমাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা ছিল এর চেয়েও ভয়াবহ। হাজার হাজার মুসলমান যুবতীকে কম্যুনিষ্ট পশুরা গণধর্ষনে হত্যা করেছিল। রাশিয়ায় এমন কোন মুসলমান ঘর ছিলনা, যার আঙিনা মুসলমানের রক্তে প্লাবিত হয়নি। এমন কোন গলি ছিল না যেখানে নিহত মুসলমানের তপ্ত খুনের স্রোত বয়ে যায়নি। লাখ লাখ মুসলমানকে বাড়ীঘর থেকে উচ্ছেদ করে উদ্বাস্তু করেছিল। ঘরছাড়া মুসলমানদের আশ্রয় শিবিরগুলো আগ্নি সংযোগ করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। লাখ লাখ মুসলমানকে দিনের পর দিন মরুভূমিতে অভুক্ত অবস্থায় ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। হাজার হাজার মুসলমানকে একত্রিত করে জীবন্ত পেট্রোলের আগুনে পুরিয়ে কম্যুনিষ্ট পিশাচের নারকীয় উল্লাসে মেতে উঠতো।
অধ্যাপক আইয়ুব বুখারী বললেন, আজ আমরা যে পাহাড়ে ব্যাংকার করেছি, মুজাহিদরা এই পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অস্ম যুদ্ধে একের পর এক মুজাহিদ প্রাণ ত্যাগ করার ফলে যখন পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ছিল, তখন মুসলমান মেয়েরাও অস্ত্র হাতে জিহাদে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাদের দেখাদেখী শিশু সন্তানরাও জিহাদে সশস্ত্র মোকাবেলায় প্রাণ বিসর্জন দিতে কুন্ঠাবোধ করেনি। অবস্থা এমন ছিল যে, পুরো মুজাহিদ ক্যাম্পগুলো পুরুষ শুন্য হয়ে যাওয়ার পরও এখানকার একটি দুধের শিশুকেও পর্যন্ত জীবিত গ্রফতার করতে সক্ষম হয় নি রেড আর্মিরা।
এক দুধের শিশুকে পিঠে বেধে এক মহিলা যুদ্ধে আহত হন। এমতাবস্থায় কম্যুনিষ্টরা তাকে গ্রেফতার করে বললো, শিশুটিকে আমাদের কাছে দিয়ে দাও, এর কোন অনিষ্ট করা হবে না। মহিলা ওদের তিরস্কার করে বললেনঃ ‘আমি কখনও চাইনা, আমার পেটে ধারণকারী এ শিশুটি তোমাদের কাছে গিয়ে কাফের হয়ে বেঁচে থাকুক। আমি কাফেরের মা হতে রাজি নই। এই বলে খরস্রোতা নদীতে শিশুটিকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মহিলা। তবুও কাফেরের হাতে নিজের ইজ্জত ও সন্তানের ভবিষ্যৎ বিসর্জন দেন নি।
অধ্যাপক বুখারী থেমে গেলেন। অশ্রু ভেজা চোখ হাতের রুমাল দিয়ে মুছলেন তিনি। রুশ মুসলমানদের করুন কাহিনী শুনে আলীও আব্দুর রহমানেরও দু’চোখ অশ্রুসজল হলো। তারাও চোখ মুছলেন।
প্রফেসর আইয়ুব বুখারী বললেনঃ জানেন, কে ছিল ঐ মহিলার কোলের শিশুটি? ঐ দিনের সেই শিশুই আজ আপনাদের মুখোমুখি বসা প্রফেসর বুখারী। আল্লহর বিশেষ রহমতে আম্মা অতি কষ্টে তীব্র স্রোতের মধ্যে আমাকে উপরে তুলে ধরে কোন মতে পানির উপর ভেসে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। নদীর তীব্র স্রোত এক পর্যায়ে আম্মাকে অপর তীরে ঠেলে দিল। আম্মা আমাকে নিয়ে কুলে উঠলেন। অলৌকিকভাবেই আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম জালেম কম্যুনিষ্টদের অত্যাচার থেকে।
এখনও বেঁচে আছেন আমার আম্মা। প্রতি বছর একবার এখানে এসে আমার আব্বার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। আব্বা বলতেনঃ “আমার রক্তধারার একটি বিন্দু অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত কম্যুনিষ্টদের বিরুদ্ধে জিহাদ চলবে। আমার বংশের কোন পুরুষ কাফেরদের মোকাবিলায় অস্ত্র ত্যাগ করে ময়দান ছেড়ে যাবেনা। পরাধীনতার শৃংখল থেকে জিহাদের ময়দানে মৃত্যু বরণ করা অনেক উত্তম। আব্বা বলতেন, আমার এ কথা ভবতে ভালো লাআগে যে, রাশিয়ায় মুসলমানদের ঈমান, ইসলাম ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে আমার বংশের সকল শেষ হয়ে যাবে, তবুও তারা জিহাদ বিমুখ হবে না। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমার বংশের কোন রক্তধারা জিহাদ বিমুখ হয়ে যাবে একথা ভাবতেও আমার কষ্ট হয়। এমন হলে আমার আত্মা পরপারেও শান্তি পাবে না”। আমার আম্মা বলেন, তিনি সর্বদাই তাকে বলতেন, “তুমি আমার সন্তানদেরকে জিহাদের দীক্ষা দিও, ওরা কখনও যেন কাফেরের সাথে আপস না করে”।
আমার দশ বছর বয়সে আব্বা ইন্তেকাল করেন। কিন্তু আম্মা এখনও প্রতি বছর এখানে এসে আমাকে সেই কথা স্মরণ করিয়ে যান। আমি আমার সন্তান ও নাতি নাতনীদেরকে আব্বার ওসিয়ত পালনে উজ্জীবিত করেছি।
প্রফেসর বুখারী আরেকবার দু’চোখ মুছে বললেনঃ বেটা! আমার মা একজন শীর্ষস্থানীয় মুজাহিদ মায়ের অতীত স্মৃতি ও পিতার কথা স্মরণ হলে, অতীতের মুসলমানদের উপর বয়ে যাওয়া রুশদের অত্যাচারের কথা উঠলে আমি স্থির থাকতে পারি না।
প্রফেসর আইয়ুব বুখারী, আলী ও আব্দুর রহমান সবার চোখ থেকে ঝর ঝর করে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। প্রফেসর বুখারী দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বললেনঃ ভাই আলী! আফগান মুজাহিদদের চরম সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, শুরু থেকেই তারা পাকিস্তানের মতো একটি অকুণ্ঠ সহযোগী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সর্বময় সহযোগিতা পেয়ে আসছে। সামরিক, অর্থিনৈতিক দিক থেকে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তান জনগণ মুজাহিদদের অব্যাহত সমর্থন ও সাহস যুগিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া মুসলিম বিশ্বের সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতাও আফগান মুজাহিদদের শক্তি যুগিয়েছে। শত্রুর শত্রু প্রতিপক্ষের বন্ধু নীতিতে সোভিয়েত বিরোধী শক্তিও মুজাহিদ বাহিনীকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। কিন্তু কম্যুনিষ্ট বিপ্লব বিরোধী রুশ-তুর্কী মুজাহিদদের বেলায় বিশ্ব পরিস্থিতি এমন ছিলনা, প্রতিবেশী কোন রাষ্ট্রও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে নি। মুসলিম বিশ্বের অবস্থাও তখন তথৈবচ। টালমাটাল উসমানিয়া সালতানাত। আরব বিশ্ব তখন ছিল দৈন্যদশায় জর্জরিত। তদুপরি কম্যুনিষ্ট অপশাসন মুসলমানদের ঘাড়ে চেপে বসার সুযোগ পেতো না, যদি না রাশিয়ার অপরিণামদর্শী আলেমরা লাল বিপ্লবের সহযোগী হিসেবে খাড়া না হতো। আফগান শাসক আমানুল্লাহ এবং নাদির শাহ্ আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও ঈমানের বিনিময়ে রুশ কম্যুনিষ্টদের গোলামী খরীদ করার সঙ্গিণ সময়ে তোমরা জিয়াউল হকের মতো তেজোদীপ্ত ঈমানদার সহযোগী পেয়েছো। যিনি নিজের সৎ সাহসিকতা ও দৃঢ়তা দ্বারা শুধু নিজ দেশের মানুষকেই সহযোগী করেন নি, পুরো মুসলিম বিশ্বকে আফগানাদের সাহায্যে টেনে এনেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন রাশিয়ার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রু হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকা, ফ্রান্স ও বৃটেন আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। মুসলিম বিশ্বের কোন নেতাও আমাদের পক্ষে টু শব্দটি উভভারণ করেননি।
১৯৮০-এর প্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক-এর রেডিও ভাষণে শুনতে পেলাম, তিনি বললেনঃ রাশিয়া বুখারা ও সমরকন্দ শক্তির দাপটে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। সমরকন্দ, বুখারা মুসলমানদের তির্থ ভূমি। এসব স্থানে দখল করার কোন বৈধতা কম্যুনিষ্টদের নেই। জিয়াউল হকের ভাষণ শুনে এই প্রথম বুঝতে পারলাম বিশ্বে আমাদের পক্ষে কথা বলার মতো শক্তিশালী বক্তি অন্ততঃ একজন হলেও আছেন। জিয়াউল হক-এর ভাষণ শুনে দু’চোখ পানিতে ভরে গেল। পরম করুণাময় আল্লাহ্র দরবারে শুকরিয়া আদায় করলাম যে, সত্তর বছর পর আমাদের কথা একজন রাষ্ট্র প্রধাণ স্মরণ করলেন।
জিয়াউল হক স্মরণ করলেও আমাদের জন্য সরাসরি কোন সাহায্য করার সামর্থ তার ছিল না। দু’দিক থেকে দুশমন তাকে অক্টোপাশের মত আটকে রেখেছে, একদিকে হিন্দু পৌত্তলিক ভারত তার মাথার উপর সঙ্গীন উঁচিয়ে রেখেছে, অপরদিকে দৈত্যের মতো রুশ লাল ফৌজ ঘিরে আছে আফাগান সীমান্ত। এমতাবস্থায় পাকিস্তানকে উভয় দৈত্যের কবল থেকে রক্ষা করা আরো শক্তিশালীরূপে গড়ে তুলেন।
রুশ মুসলমানদের দুরাবস্থার কথা উচ্চারণ করা জিয়াউল হকের জন্য ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এটা ছিল বিশ্ব নেতৃত্বের গালে এক যথার্থই চপোটাঘাত। কোন মুসলমান নেতার মুখে রুশ মুসলমানরা সত্তর বছর পর্যন্ত উচ্চারিত হয় নি। এমন একটি আহ্বান শোনার জন্য রুশ মুসলমানরা সত্তর বছর পর্যন্ত চরম অপেক্ষায় প্রহর গুনছিল। জিয়াউল হক-এর ভাষণ শুধু রুশ মুসলমানদেরকেই উজ্জীবিত করেনি, সারা বিশ্বকে সোভিয়েত ইউনিয়নে মুসলমানদের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে দিয়েছে। চেতনাবিস্মৃত রুশ মুসলমানরাও হারানো অনুভূতি ফিরে পেয়েছে, বুঝতে পেরেছে যে, সত্যিই রাশিয়ায় মুসলমানরা আযাদী হারিয়ে কত জঘন্য দাসত্ব বরণ করেছে।
সোভিয়েত সরকার প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের এ ঘোষণায় আতকে উঠেছিল। সোভিয়েত শাসকবৃন্দ পাক প্রেসিডেন্টের ভাষণকে বিশ্বের সুপার পাওয়ার রাশিয়ার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ মনে করছিল। সোভিয়েত পত্রিকাগুলো পূর্ব থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছিলো। বর্তমানে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। জিয়াউল হক রুশ শাসকদের আরাম হারাম করে দিয়েছেন।
প্রফেসর আইয়ূবী বুখারী বলেনঃ আমরা প্রত্যাশা করি, আফগানিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সম্মিলিতভাবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করুক। উভয়ের সহযোগিতা পেলে আমরাও রাশিয়াকে আমাদের আবাসভূমি থেকে দখলদারিত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে পারবো।
আলী প্রফেসর বুখারী ধন্যবাদ জানিয়ে বললেনঃ আপনার সাথে আলোচনা করে রুশ মুসলমানদের পূর্বাপর ইতিহাস সম্পর্কে আমার ধারণা আরো স্বচ্ছ হয়েছে। তবে আমি রুশ-আফগান মুজাহিদদের ভিন্ন মনে করি না। ভোইগলিক অবস্থানে ভিন্নতা থাকলেও চেতনার দিক থেকে আমরা অভিন্ন, আমাদের শ্ত্রুও অভিন্ন। আজ আফগানিস্তানের মুসলমানদের উপর রাশিয়ার যে অত্যচার চলছে, এ জুলুম অত্যাচার রুশ মুসলমানদের লাশ মাড়িয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছেছে। আপনাদের উপর কম্যুনিষ্ট রাশিয়া যে প্রক্রিয়ায় নির্যাতনের সূচনা করেছিল, বর্তমানে আফগানিস্তানের মুসলমানদের ওপর তারই অনুশীলন চলছে। অতীতের আফগান সরকার সোভিয়েত আগ্রাসনের মুকাবিলায় আপনাদের সহযোগিতা না করার জন্য আফগান জনসাধারণ মোটেও দায়ী নয়। তখনকার শাসক গোষ্ঠীর কাপুরুষতাই এর জন্য দায়ী। শাসক গোষ্ঠীর কাপুরুষতার মূল্যই আজকের আফগান জাতির বিপুল রক্তের বিনিময়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
আইয়ুব বুখারী আলীর কথা শুনে বললেনঃ হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছ বেটা! রুশ মুসলমানদের অনেকেই তৎকালীন আফগান সরকারের অসহযোগিতাকে তাদের পরাধীনতার জন্য দায়ী করে থাকে। এজন্য আবেগের বশীভূত হয়ে আমি একথা বলে ফেলেছি। তবে সত্য ও আমার সঠিক অবস্থান হলো আফগান মুজাহিদদেরকে আমরা জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসি। মুজাহিদদের বিজয় ও পরাজয়কে নিজেদের বিজয় ও পরাজয়কে নিজেদের বিজয় পরাজয় মনে করি। আমরা রুশ মুসলমানরা তো আফগানের সাহায্য ও বিজয়ের সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ মুক্তির স্বপ্ন দেখছি।
একটু থেমে প্রফেসর আইয়ূব বুখারী বললেনঃ আলি! আমি অকপটে তোমাকে জানাচ্ছি যে, আফগানিস্তানের মুজাহিদদের জিহাদী প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়েই আমরা রাশিয়ায়র মুসলমানদেরকে জিহাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে আত্মনিয়োগ করেছি এবং সশস্ত্র জিহাদের সূচনা করেছি। জীবনের শুরু থকেই কম্যুনিজম বিরোধী জনমত গঠনে আমি কাজ করেছি। কিন্তু ক্যাম্প স্থাপন করে দস্তুরমতো সামরিক জিহাদের সূচনা আফগানদের দেখেই শুরু করেছি। বর্ত্মানে এই ক্যাম্পে শতাধিক মুজাহিদ সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বিগত পাঁচ বছরে পাঁচ হাজার মুজাহিদ সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে স্ব স্ব পেশায় ফিরে গেছে।
(চলবে)
অনুবাদ: শহীদুল ইসলাম