JustPaste.it

রুশ কয়েদীদের জবানবন্দী

 

আফগানিস্তানে আমরা কী দেখেছি?

সুলতান সিদ্দিকী

==================================================

 

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

মেশিন নষ্ট করে দেয়া

        ১৯৮৭-র ২৯শে আগস্ট ! মুজাহিদরা হঠাৎ করে তাদের ক্যাম্পে হামলা চালায়! মুজাহিদরা ক্যাম্প ঘেরাও করে ফেল্পে কমাণ্ডার আলেকজান্ডার ওয়ারলেসের মাধ্যমে অন্য ক্যাম্পে সংবাদ দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ওয়ারলেসের মাধ্যমে এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন করার প্রয়ােজন হতে পারে ভেবে আগেই সে মেশিন নষ্ট করে রাখে। আলেকজাণ্ডারকে সে মেশিন নষ্ট হওয়ার কথা জানায়। এই ত্রুটির কারণে পরে আলেক জান্ডারকে অন্য ক্যাম্পে বদলী করে দেয়া হয়। বদলীর পর অন্য ক্যাম্পে অবস্থান কালে তার পলায়নের সুযোগ মিলে যায়। যে জন সে দীর্ঘ দিন যাবত চেষ্টা করে আসছিল। ঘটনাটি নিম্নরূপঃ

 

        একদিন এক জায়গায় দু'টি গাড়ীর মধ্যে মুখােমুখি সংঘর্ষ লেগে যায়। এতে গােটা কাফেলার মধ্যে হৈ চৈ পড়ে যায়। আলেক জান্ডার এই সুযােগ থেকে ফায়েদা হাসিল করে। সবার অলক্ষ্যে নিরবে সে একদিকে পালিয়ে যায়। দু'দিন যাবত লুগারের মরুভূমিতে ইতঃস্তত বিচরণ করতে থাকে। কোথায় যাবে সে জানে না। দু'দিন পর ভাগ্যক্রমে ইত্তেহাদে ইসলামী আফগানিস্তানের মুজাহিদদের সাথে তার সাক্ষাত ঘটে। কয়েকদিন যাবত মুজাহিদরা তাকে মেহমান রাখার পর স্বাধীন এলাকায় ফাকা ময়দানে পাঠিয়ে দেয়। আলেক জান্ডার এখন মুজাহিদ মারকাজে স্বাচ্ছন্দে্য দিন কাটাচ্ছে। আফগানিস্তানে এসে তাকে মায়ের নির্দেশ লংঘন করতে হয়নি বলে সে আনন্দিত ও গর্বিত।

 

মধ্য এশিয়ার গায়রত

        ফয়েজ ও গায়রত ছিল তাশখন্দের এক স্কুলের সহপাঠী। মুসলিম পরিবারে তাদের জন্ম। এ কারণে তাদের হৃদয়ে ইসলামী চেতনা এখনও জাগ্রত ছিল। কিন্তু ইসলাম বিরােধী রাষ্ট্রযন্ত্র ও সংস্কৃতির মাঝে লালিত পালিত হয়ে ছিল বিধায় ধর্মের মৌলিক শিক্ষাটুকু লাভ করার সুযােগও তাদের হয়নি। তবুও জোরপূর্বক স্কুলে ভর্তি করার পর যখন তাদের সামরিক ট্রেনিং সেন্টরে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তারা এই সংকল্প করেছিল যে, যদি তাদেরকে আফগানিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে মুসলমান ভাইদের বিরুদ্ধে তারা লড়বে না এবং সুযােগ পেলেই মুজাহিদদের সাথে যােগ দিবে। অবশেষে দু' বন্ধু তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে। এখন তারা মুজাহিদের সাথী।

 

        ফয়জুল্লাহ- অভের পিতার নাম সাইফুল্লাহ- অভ। তারা তাশখন্দে বসবাস শুরু করার পূর্বে উজবেকিস্তানের কাশকা নদীর কাছে বসবাস করত। অপরদিকে গায়রতভের পিতা আহমদ খানভের সম্পর্ক হলাে ফারগানার সাথে। বংশগতভাবে সে তাজিক। জোর পূর্বক সামরিক বাহিনীতে ভর্তি করা প্রসঙ্গে ফয়জুল্লাহ অভের বক্তব্য হলে, আমি তখন স্কুল ছাত্র। ইত্যবসরে রুশ সামরিক অফিসার সেখানে আসে এবং বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে ভর্তি আইনের আওতায় অন্যান্য ছেলেদের সাথে আমাকেও শামিল করে নেয়। আমাদেরকে বলা হয়েছিল যে, অতি সত্বর সামরিক প্রশিক্ষনের জন্য তােমাদের কোন এক ছাউনীতে যেতে হবে। এই নির্দেশে আমাদের মনে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করার কোন উপায় ছিল না। এই নির্বাচনের পর তারা আপন আপন বাড়ীতে গিয়ে বাবা-মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাশখন্দের একটি সামরিক ঘাটিতে পৌঁছায়। এই প্রশিক্ষণ কোর্সে বিভিন্ন এলাকার এক হাজার যুবক শরীক ছিল। তাদের জন্য পরস্পর অবাধ মেলামেশার মােটেই অনুমতি ছিল না। ফয়জুল্লাহ বলেন, আমরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌছেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমাদেরকে যদি আফগানিস্তানে পাঠানাে হয় তাহলে আমরা মুসলমান ভাইদের বিরুদ্ধে লড়াই করব না। “আফগানিস্তানে রাশিয়ানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তা তুমি জানলে কি করে?” এই প্রশ্ন করা হলে সে বল্লো, মধ্য এশিয়ার মুসলমানরা এখন ইসলামী জগত সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। আমরা চুপি চুপি বেতার সংবাদ শুনে থাকি। আমরা জানি দুনিয়াটায় বর্তমানে আসলে কি ঘটছে।

 

        এ প্রসঙ্গে গায়রতের বক্তব্য হলোঃ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কেউ একথা বলেনি যে, প্রশিক্ষণের পর আমাদের আফগানিস্তান পাঠানো হতে পারে, বরং উল্টো জানানাে হয়েছিল যে, সব কটি ক্যাডেটকে পূর্ব জার্মান পাঠিয়ে দেয়া হবে। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে আসা যুবকদেরকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।

 

বার্লিনের স্থলে কাবুল

        দু'মাস প্রশিক্ষণের পর ফয়েজ ও গায়রতকে অন্য তিনশত যুবকের সঙ্গে বিমানে করে কাবুল পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। যে ক্যাম্পে তাদেরকে থাকতে দেয়া হয় তার বাইরে পূর্ব থেকেই কড়া পাহারার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল। দু'তিন দিন পর্যন্ত তাদের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি ছিল না। তখন তারা ধারণা করেছিলাে, এখন তারা পূর্ব জার্মানে অবস্থান করছে। অতঃপর কয়েকজন রুশ সিপাহী তাদের সাথে যােগ দেয়। তখন তারা জানতে পারল যে, এটা পর জার্মান নয় বরং আফগানিস্তান। আফগানিস্তানকে তারা এ যাবত বার্লিন ভেবে আসছিল। এখন তা কাবুল প্রমাণিত হলে এতে মনে অস্থিরতা জাগ্রত হলাে ঠিক, কিন্তু সাথে সাথে তাদের মুজাহিদদের সাথে যােগ দেয়ার প্রতিজ্ঞা আরাে দৃঢ় হয়ে উঠলো।

 

        পালাবার পথ তালাশ করার পূর্বে তার দুই বন্ধু বেশ কিছু দিন রেডিওর ফার্সী সংবাদ শুনতে থাকে। এতে আফগানিস্তানের জিহাদ ও মুজাহিদদের অবস্থা অনুধাবণ করা তাদের অনেকটা সহজ হয়ে যায়। দু'মাস যাবত তারা কাবুল শহরের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত খায়ের খানায় অবস্থান করে। এ সময়ের মধে্য মুজাহিদের বিরুদ্ধে কোন অভিযানে তাদের পাঠানাে হয়নি। দু'মাস পর প্রথমবারের মত তাদেরকে মুজাহিদদের উপর আক্রমণকারী বাহিনীর সাথে শামিল করে নেয়া হয়। (চলবে)

 

═──────────────═