JustPaste.it

"আল ফিরদাউস" পরিবেশিত

 

জাবহাতুন নুসরাহ থেকে জাবহাতু ফাতহিশ শামএকটি বিশ্লেষণ

 

উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দি হাফিজাহুল্লাহ

 

 

********************

প্রথম পর্ব

সালামি ‘আলা নুসরাহ’…’জাবহাতুন নুসরাহ’ থেকে ‘জাবহাতু ফাতহিশ শাম’ – একটি বিশ্লেষণ

 

উম্মাহর স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে যেকোন রাষ্ট্রের (দাউলা কিংবা ইমারাহ)স্বার্থের উপর। রাষ্ট্রের স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে কোন জামাআর স্বার্থের উপর, এবং জামাআর স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে ব্যক্তির স্বার্থের উপর”।

আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামাহ্ বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ।

জাবহাতু ফাতহিশ শাম নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক জল্পনা-কল্পনা করা হয়েছে। আরো হবে এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ জিহাদ সমর্থক এবং জামাতুল বাগদাদীর সমর্থকদের দিক থেকে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হবে। বিশেষ করে জামাতুল বাগদাদি এবং ইরজা সম্পন্ন বিভিন্ন ফিরকা ও দলের পক্ষ থেকেও অনেক ভুল ব্যাখ্যা এবং তির্যক মন্তব্য হয়তো আমাদের শুনতে হবে। একারণে শামের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদের বর্তমান পরিকল্পনা (যার বাস্তবায়ন হল জাবহাত আন-নুসরার সাম্প্রতিক ঘোষণা) নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। এটি প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে দৃঢ় আত্ববিশ্বাসের জন্য এবং সংশয়বাদী, গুজব রটনাকারী এবং অপবাদ দানকারীদের মোকাবেলার জন্য। একারণে এ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরছি। বস্তুত শামের এসব ঘটনাপ্রবাহ থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক উভয় ধরণের জিহাদের ক্ষেত্রেই।

প্রথমত- এ সিদ্ধান্ত কার?

জাবহাতু ফাতহিশ শাম –এর ঘোষণা নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল এ সিদ্ধান্তটি আসলে কাদের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে তা অনুধাবন করা। পশ্চিমা মিডিয়া-বিশ্লেষক, জামাতুল বাগদাদীপন্থীরা এবং ইরজাগ্রস্থরা ইতিমধ্যেই প্রচার করা শুরু করেছে এ সিদ্ধান্ত আন-নুসরার নিজের। নিজ উদ্যোগে নুসরা আল-ক্বাইদাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। অনেকে বলছে আল-কায়দা তাদের সবচেয়ে শক্তিশালি শাখাকে হারিয়ে ফেলেছে ইত্যাদি।

কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, এ সিদ্ধান্ত আল-কায়দা সেন্ট্রালের পক্ষ থেকেই আসা। বস্তুত শামের জিহাদের শুরু থেকেই আল-কায়দার উদ্দেশ্য ছিল শামে নিজেদের উপস্থিতি গোপন করা। সালাফি জিহাদের মানহাজকে আল-কায়দার ব্র্যান্ডিং ছাড়া শামের মানুষের কাছে উপস্থাপন করা এবং শামের মানুষের চিন্তা ও চেতনায়, ও সর্বোপরি শামের জিহাদের মাঝে এ বিশুদ্ধ মানহাজকে প্রোথিত করা। শুধুমাত্র আল-বাগদাদির হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণেই বাধ্য হয়ে শায়খ জাওলানি, আল-কায়দার শাখা হিসেবে আল-নুসরার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেন। সুতরাং আল-কায়দার সাথে সম্পর্কে ঘোষণাই ছিল মূল পরিকল্পনার ব্যত্যয়, উল্টোটা না।

পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার শামের অন্যান্য দলের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হলেও নুসরার পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হয়নি দুটো কারণে-

১। এক নাজুক পরিস্থিতিতে এরকম ঘোষণা দিলে অনেক সদস্যের জামাতুল বাগদাদির দিকে ঝুঁকে যাবার সম্ভাবনা ছিল। একারণে চিন্তাশীল সকল মুজাহিদের কাছে বিশেষ করে মুজাহিরিনের কাছে এবং বৈশ্বিকভাবে সকল জিহাদ সমর্থক ও তানযীমের কাছে জামাতুল বাগদাদির বিচ্যুতি স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন ছিল।

২। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু অন্যান্য দলগুলো গুরুত্বের সাথে চিন্তা করছিল, তাই এ বিষয়টিকে ঘিরে সর্বোচ্চ লাভ কিভাবে এবং কোন সময়ে করা যায় এটি নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন ছিল। (ইনশাআল্লাহ, পরবর্তী আলোচনাতে এটা আরো পরিষ্কার হবে)

অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে – টাইমিং। এ সিদ্ধান্তের জন্য সঠিক সময় নির্ধারন করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

শায়খ আইমান হাফিযাহুল্লাহ তার বার্তাতে খোলাখুলি ভাবেই সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং কোন পরিস্থিতিতে সম্পর্কচ্ছেদকে আল-কায়দা গ্রহণযোগ্য মনে করে সেটাও উল্লেখ করেছেন। এ বক্তব্যেই বুঝদারদের জন্য ইঙ্গিত ছিল।

পরবর্তীতে শায়খ আবু খাইর আল-মাসরির বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয় যে, এ সিদ্ধান্ত আল-কায়দা সেন্ট্রাল এবং আল-কায়দা শামের মধ্যে কো-অর্ডিনেশানের মাধ্যমেই নেওয়া হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কার কী?

এ বিষয়টি নিয়ে প্রথমটির চাইতেও বেশি বিভ্রান্তিতে অনেকে পতিত হচ্ছেন। প্রায় ৯৯% পশ্চিমা-আরব-আঞ্চলিক মিডিয়া ও বিশ্লেষকের ধারণা নুসরা এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার বোমা হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিজেদের নাম কাটানোর জন্য। আমার ধারণা জামাতুল বাগদাদির সমর্থকরাও ব্যাপকভাবে এটি প্রচার/ব্যবহার করবে।

কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, নুসরা ও আল-কায়দা এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই নিশ্চিত ভাবে জানে তারা যাই করুক অ্যামেরিকা তাদের উপর বম্বিং করবেই। অ্যামেরিকা যখন “আইএসদমনের ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ তে প্রথমবার শামে বোমা হামলা শুরু করে তখন দ্বিতীয় দিনেই তারা নুসরার উপর হামলা করে। শায়খ আবু ইউসুফ আল তুর্কি রাহিমাহুল্লাহ এর একটি এলিট ইউনিট ছিল যার নাম ‘আল ক্বান্নাস’। এই ইউনিটটি আন্তর্জাতিক হামলা নিয়ে কাজ করছিল। অ্যামেরিকা সেসময় তাদের উপর হামলা চালায়। সুতরাং এখন অ্যামেরিকা হামলা চালাবে না এমন মনে করার কোন কারণ নেই।

বস্তুত নুসরা যা করছে সেটা অ্যামেরিকার বোমা হামলাকে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে ধরে নিয়েই তারা করছে। বস্তুত ‘গেইম থিওরি’র (Game Theory) এর আলোকে বিষয়টিকে চিন্তা করলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে। সহজ ভাষায় ‘গেইম থিওরি’ হল সম্ভাব্য বিভিন্ন পরিস্থিতির আলোকে সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের নির্ধারণ।

ধরুন দুটি পক্ষ বিরোধে লিপ্ত। প্রথম পক্ষের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তার প্রতিপক্ষের কি কি সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত হতে পারে এবং প্রতিটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রথম পক্ষের জন্য কি কি সিদ্ধান্ত নেবার সু্যোগ থাকবে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের কি কি লাভ ও লোকসান হতে পারে [Payoff matrix]– ধাপে ধাপে এই বিবেচনা করা হয় গেইম থিওরিতে। এখানে ধাপ একটি হতে পারে দুইটি হতে পারে, আবার দশটিও হতে পারে। প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য কোন সিদ্ধান্তের জন্য কি লাভ ও কি লোকসান সেটা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরী।

নুসরার জন্য বাস্তবতা হল অ্যামেরিকা তাদের উপর হামলা করবেই। এটি অবশ্যম্ভাবী হিসেবেই নুসরা ধরে নিয়েছে। নাম বদল করা হোক বা না হোক, আল-কায়দার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হোক বা না হোক তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন গন্য করা হবে, এবং তাদের উপর হামলা করা হবে। তাই এ হামলা এড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন অর্থ নেই।

কিন্তু এ হামলা পরবর্তী প্রেক্ষাপটকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ এখানে পক্ষ শুধুমাত্র দুটি – অ্যামেরিকা বনাম নুসরা এমন কিন্তু না। এখানে শামের জনগণ আছে, আছে অন্যান্য দল যারা অন্যান্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখে। নুসরার এ ঘোষণার উদ্দেশ্য বা Target Audience হল শামের সাধারণ মানুষ ও অন্যান্য দলগূলো।

নুসরা চাচ্ছে যেহেতু অ্যামেরিকা আক্রমণ করবেই, তাই শেষ মূহুর্তে নিজেদের আল-কায়দার সাথে সম্পর্কহীন দাবি করার মাধ্যমে বেশ কিছু লক্ষ্য অর্জন করতে –

১) শামের সাধারণ জনগনকে দেখানো জন্য যে, নুসরার কাছে শামের মুসলিম, শামের জিহাদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পরিচয় না।

২) বিশ্বের মুসলিমদের দেখানো যে, আল-কায়দা নিজেদের স্বার্থের আগে উম্মাহর স্বার্থ দেখে। এর মাধ্যমে জামাতুল বাগদাদির সাথে নিজেদের পার্থক্য তুলে ধরা এবং উম্মাহর নেতৃত্ব দেবার উপযোগী তানযীম যে আল-কায়দা তা তুলে ধরা।

৩) শামের মুসলিম ও বিশ্ব মুসলিমকে দেখানো যে, আমেরিকার হামলার বিষয়টা আসলে আল-কায়দা বা “সন্ত্রাসের” সাথে সম্পর্কিত না। অ্যামেরিকা আসলে শারীয়াহ, জিহাদ, মুসলিমদের ক্ষমতায়ন এসব কিছুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাই আল-কায়দা থাক বা না থাক, যখনি মুসলিমরা জিহাদের দাবিতে একত্রিত হবে, মযলুমের অধিকার আদায়ার জন্য অস্ত্র হাতে নেবে, শারীয়াহ কায়েমের চেষ্টা করবে তখনই অ্যামেরিকা মুসলিমদের আক্রমণ করবে।

৪) শামের জনগনের কাছে তুলে ধরা যে, অ্যামেরিকা ও যালিম-তাওয়াগীতের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর, মুসলিম জনগণের আত্বরক্ষার একমাত্র উপায় জিহাদ এবং আল্লাহর পর দুনিয়াতে উম্মাহর রক্ষক হল মুজাহিদিন

৫) এই ঘোষণার অন্যতম প্রধান একটি উদ্দেশ্য ছিল শামের অন্যান্য দলের উপর চাপ প্রয়োগ করা। যেন তারা সাউদি-কাতার ইত্যাদি দেশের তাওয়াগীতের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে।

৬) শামের অন্যান্য দলের উপর চাপ প্রয়োগ করা। যেন এই দলগুলো বাশারের বিরুদ্ধে নুসরার সাথে এবং নুসরার অধীনে বা নির্দেশনায় কাজ করে। সামরিক, কৌশল, সাহস ও শৃঙ্খলা সকল দিকে দিয়েই নুসরা শামের সবচেয়ে অগ্রগামী দল।

৭) বাশার বিরোধী জিহাদের নেতৃত্ব নিজের অধীনে নিয়ে নেওয়া।

(বোমা হামলা+সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণার মাধ্যমে এসব লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা) এবং (বোমা হামলা+সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা না দিয়ে আগে যা চলছিল তা চালিয়ে যাওয়া) এ দুটী সম্ভাব্য ফলাফলের মধ্যে নুসরা প্রথমটিকে বেছে নিয়েছে।

৫,৬ ও ৭ নং পয়েন্ট নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন। তবে এ পয়েন্ট তিনটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ফ্যাক্টরের আলোচনা। আর এ ফ্যাক্টরটি হল আহরার আশ-শাম। একারণে  ইনশা আল্লাহ পৃথকভাবে আহরার আশ-শাম, উপরোক্ত তিনটি পয়েন্ট এবং কিভাবে জাবহাতু ফাতহিশ শামের ঘোষণা এ বিষয়গুলো একসূত্রে গাথা তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

দ্বিতীয় পর্ব

কোন মুজাহিদ জামাআর আল-কায়দা হওয়া কিংবা আল-কায়দার সাথে সম্পর্ক না থাকার ঘোষণা দেওয়ার উপযুক্ত সময় এটি না…কারণ কাজের ক্ষেত্রে এধরণের ঘোষণা থেকে তেমন কোন লাভের সম্ভাবনা নেই। বরং এধরণের ঘোষণার ফলে অ্যামেরিকানরাই শুধু রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। কারণ বর্তমানে সাধারণ মানুষের কাছে আল-কায়দা নামটি ভীতিকর এবং এ নামের অর্থ তাদের কাছে বিকৃত করা হয়েছে। তাই এ পর্যায়ে এ নামটি থেকে দূরে থাকা এবং আল-কায়দার সাথে সম্পর্ক গোপন করা উত্তম”।

-শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী রাহিমাহুল্লাহ

শামের বিপ্লবের ইসলামীকর

আঞ্চলিক পর্যায়ে নুসরার সিদ্ধান্তের টার্গেট অডিয়েন্স হল মূলত শামের সাধারণ জনগণ এবং সিরিয়ার অন্যান্য দলগুলো। মূলত যে কোন অঞ্চলের জিহাদের ক্ষেত্রে আল-কায়দার চেষ্টা থাকে উম্মাহ ও জিহাদের কল্যাণে সকল সক্রিয় দলগুলোকে কেন্দ্রীয় দিকনির্দেশনার অধীনে একীভূতভাবে চালিত করা। তাত্ত্বিকভাবে নেতৃত্ব গ্রহণ ছাড়া এটা করা সম্ভব হলেও, বাস্তবে কখনোই এটা হয় না। একারণে  যেকোন অঞ্চলের জিহাদের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার একইসাথে সকল দলসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

শামের জিহাদে নুসরাকে প্রোথিত করার যে নীতি আল-কায়দা অনুসরণ করেছে তা এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই। শামের জনগণ ও জিহাদের মাঝে এমনভাবে আল-কায়দাকে গেঁথে দেওয়া যাতে করে শাম থেকে আল-কায়দাকে উপড়ে ফেলতে হলে সমগ্র শাম ধ্বংস করতে হয়। নুসরাহ এখনো পর্যন্ত যেভাবে অগ্রসর হয়েছে এবং যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই। একারণেই অনেক ক্ষেত্রেই তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের করণীয়কে বিলম্বিত করেছে সঠিক সু্যোগের অপেক্ষায়। শামের জিহাদের প্রতিটী পর্যায়ে শার’ঈ এবং মানহাজগত ছাড় না দিয়ে যতোটুক সম্ভব জনসম্পৃক্ততা অর্জনের চেষ্টা তারা করেছে। একারণেই হাযম এবং জামাল মারুফের দলগুলোকে গুড়িয়ে দেয়ার জন্য তারা অপেক্ষা করেছে, একারণেই সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা স্বতন্ত্র ভাবে উত্তর সিরিয়াতে ইমারাহর ঘোষণা দেয় নি

এখানে যা আমাদের খুব ভালো ভাবে বোঝা প্রয়োজন তা হল, আল-কায়দাকে গেঁথে দেওয়ার অর্থ আল-কায়দার নামের একটি ইমারাহ প্রতিষ্ঠা কিংবা প্রতি রাস্তার মোড়ে তানযীমের পতাকা ঝোলানো না, এর অর্থ হল মুসলিমদের মস্তিষ্ক ও হৃদয়ে আল-কায়দার আদর্শ ও মানহাজ শক্তভাবে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া- সেটা যেকোন নামেই হোক। সম্পূর্ণ বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত বৈশ্বিক কুফরের বিরুদ্ধে জিহাদই উম্মাহর জন্য একমাত্র সমাধান, একমাত্র রাস্তাএ ধারণা মানুষের মাঝে প্রোথিত করা। সবসময় ময়দানের যুদ্ধের আগে এ যুদ্ধ একটি আদর্শিক ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ।

শামের জিহাদে লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক জিহাদের আদর্শের অনুকরণে ইরজা ও গুলুহ থেকে মুক্ত একটি জামা’হ গড়ে তোলা এবং এ জামা’হকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আল্লাহর ইচ্ছায় ২০১১ থেকে শুরু করে গত পাঁচ বছরে জাবহাতুন নুসরার মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। যদিও নানা ফিতনা, বিশেষ করে জামাতুল বাগদাদির ফিতনার কারণে এ লক্ষ্য অর্জনে প্রত্যাশার চাইতে বেশি সময় লেগেছে। বর্তমানে জাবহাতু ফাতহিশ শামের ঘোষণার মাধ্যমে আল-কায়দা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। যার অন্যতম প্রধান দুটি উদ্দেশ্য হল –

বাশার বিরোধী বিপ্লবের সম্পূর্ণ ইসলামীকরণ

বাশার বিরোধী জিহাদের নেতৃত্ব গ্রহন।

এ বিষয়গুলো অনুধাবনের জন্য শামের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। যদিও পশ্চিমা মিডিয়া শামের জিহাদের সাথে জামাতুল বাগদাদির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফেলেছে, তবে বাস্তবতা হল ময়দানের পরিস্থিতি এতোটা সোজাসাপ্টা না।

পটভূমি

বাশারের বিরুদ্ধে বিপ্লব প্রাথমিক ভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ অধিকার আদায়ের আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল, যা পরবর্তীতে একটি শিআ বনাম সুন্নী সংঘাতে রূপ নেয়। সুন্নীদের উপর বাশার ও তার নুসাইরি সম্প্রদায়ের ভয়ঙ্কর অত্যাচারের প্রেক্ষিতেই মূলত সিরিয়ান সেনাবাহিনী থেকে সুন্নীরা বের হয়ে এসে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি বা FSA গঠন করে। যদিও জিহাদ-মুজাহিদ-শহীদ এসব শব্দগুলো বাশার বিরোধী বিপ্লবীরা গ্রহন করে কিন্তু বাস্তবতা হলো আদর্শের দিক দিয়ে এ বিপ্লব ইসলামি ছিল না। নুসাইরীদের কবল থেকে সুন্নীদের রক্ষা এবং বাশারের উৎখাত ছাড়া বাশার বিরোধীদের কোন ইসলামী লক্ষ্য ছিল না।

একথা সত্য যে আহরার আশ শামের মতো বেশ কিছু সালাফি আদর্শের সংগঠন ২০১১ থেকেই স্বল্প পরিসরে বিদ্যমান ছিল, কিন্তু এধরণের দলগুলো বিভিন্ন আদর্শিক কারণে বাশার বিরোধী বিপ্লবকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পন্ন ইসলামী জিহাদে রূপান্তর করতে পারছিল না।

এ সমীকরন বদলে দেয় জাবহাত আন-নুসরার। জাবহাত আন-নুসরা তাদের চমকপ্রদ ও দুঃসাহসী সামরিক অপারেশান, ইস্তিশাদী ও ইনগ্বিমাসি কৌশলের মাধ্যমে সামরিক ভাবে শামের জিহাদের নতুন পর্যায়ের শুরু করে। পাশাপাশি বৈশ্বিক জিহাদের আদর্শ জাবহাত আন-নুসরার মাধ্যমে বাশার বিরোধীদের মধ্যে ছড়াতে শুরু হরে। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি এবং যাহরান আলুশদের দলগুলোর কাছ থেকে শামের জনগন যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখতে পাচ্ছিল, নুসরার মাঝে তার কোন কিছুই ছিল না। একারণে  শামের জনগনের মাঝে বিশেষ ভাবে তরুনদের মাঝে নুসরা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এসব ঘটনাপ্রবাহের ফলে ২০১৩ সালের দিকে সিরিয়ার বাশার বিরোধী যোদ্ধাদের মধ্যে দুটী আদর্শিক ধারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একটি হল জাতীয়তাবাদী গৃহযুদ্ধের ধারা অন্যটি ইসলামী জিহাদের ধারা। যদিও বিপ্লবের শুরুতে জাতীয়তাবাদী ধারাই মুল শক্তি ছিল, কিন্তু বাশারের ক্রমবর্ধমান নিষ্ঠুরতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরন্তর নিস্ক্রিয়তার কারণে ২০১২ এর শুরু থেকেই প্রথম ধারাটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে এবং দ্বিতীয় ধারাটি শক্তিশালী হতে থাকে।

অ্যামেরিকার তথা পশ্চিমা বিশ্বের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল জাতীয়তাবাদী ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে বাশারের বিরুদ্ধে সহায়তা করা এবং বাশারের পতনের পর তুর্কির মতো একটি “সুন্নীশক্তিকে ক্ষমতায় বসানো। পরবর্তীতে বিপ্লবের ক্রমবর্ধমান জিহাদীকরন লক্ষ্য করে অ্যামেরিকা সিদ্ধান্ত নেয় এফএসএ-এর বিভিন্ন ব্রিগেডের পাশাপাশি ঐসব ইসলামি দলকে বাশারের বিরুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার যাদেরকে পরবর্তীতে সাউদি-কাতার-তুর্কির মাধ্যমে তারা নিয়ন্ত্রন করতে পারবে।

কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় বাশারের বিরুদ্ধে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জনে এবং সুন্নীদের রক্ষায় জাবহাত আল ইসলামিয়্যাহ [Islamic Front] এর ব্যর্থতার কারণে এ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৫ জুড়ে বাশারের বিরুদ্ধে FSA এবং জাবহাত আল-ইসলামিয়্যাহর চরম ব্যার্থতার কারণে, বাশারের পতনের ব্যাপারে আন্তরিক সব দল জাতীয়তাবাদী, ইসলামপন্থী, জিহাদি সবাই বিকল্প কিছুর চিন্তা করতে বাধ্য হয়।

আর আল-কায়দার জন্য এ পরিস্থিতি তৈরি করে সুবর্ন একটি সুযোগের। প্রাথমিক ভাবে শামের উত্তরাঞ্চলে জাইশ আল ফাতেহ গঠনের মাধ্যমে নুসরা শামের জনগন এবং আন্তরিক দলগুলোকে বোঝাতে সক্ষম হয়, ঐক্যের মাধ্যমে সাফল্য পাওয়া সম্ভব। এই থিমটি জাবহাতু ফাতহিশ শামের ঘোষিত চার্টারেও উল্লেখ করা হয়েছে।

জাইশ আল ফাতেহের অগ্রযাত্রা ও সাফল্য বাশারকে কোণঠাসা করে ফেলে, ৪ বছরের মধ্যে বাশার সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় উপনীত হয়। এ প্রেক্ষিতেই সরাসরি রাশিয়া সিরিয়ার যুদ্ধে অবতীর্ন হয়। ইতিপূর্বে শায়খ আল জাওলানি রাশিয়ার আগ্রাসন - শত্রুর শেষ তীর” – বক্তব্যে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।

রাশিয়া তার বিমান হামলার চাইতেও তার কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বাশার বিরোধী জাতীয়তাবাদী দলগুলোর জন্য অধিক সমস্যার সৃষ্টি করে। রাশিয়ার তৎপরতার কারণে অ্যামেরিকার নিষ্ক্রিয় নীতি আরও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অ্যামেরিকা এক দ্বিমুখী সমস্যার মূখোমুখি হয়।

অ্যামেরিকার দ্বিমুখী সমস্যাঃ

শামের জিহাদে আল-কায়দার আদর্শ তথা বৈশ্বিক জিহাদের আদর্শ প্রোথিত হবার হুমকির ব্যাপারটা অ্যামেরিকা ভালোভাবেই বোঝে। জনগনের সাথে সম্পূর্নভাবে মিশে যাওয়া একটি গেরিলা বাহিনীকে হারানো কতোটা কঠিন সেটা আফগানিস্তানের তিক্ত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অ্যামেরিকা শিখেছে। তাই অ্যামেরিকা তার ক্কাতারি, সাউদি ও তুর্কি গোলামদের মাধ্যমে চেষ্টা করেছে নুসরাকে তথা বৈশ্বিক জিহাদের আদর্শকে জনবিচ্ছিন্ন করতে। অ্যামেরিকা তার গোলামদের মাধ্যমে অন্যান্য দলগুলোর উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে নুসরার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন হবার জন্য।

কিন্তু নুসরার জনসম্পৃক্ততা এবং শামের দল ও জনগণের মাঝে নিজেদের প্রোথিত করার নীতি অ্যামেরিকার জন্য বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি করেছে।

প্রথমত, অ্যামেরিকা যেসব দলকে অস্ত্র (বিশেষ করে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ও অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফট অস্ত্র) দিয়ে সাহায্য করতে চাচ্ছে, তাদেরকে তারা সাহায্য পাঠাতে পারছে না, কারণ তারা জানে এক সময় না এক সময় এদলগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র গুলো আল-কায়দার কাছে যাবে। আর যদি কোনভাবে নিশ্চিত করাও যায় যে এসব অস্ত্র নুসরার হাত থেকে বাচানো যাবে, তবুও অ্যামেরিকা নিশ্চিন্ত হতে পারবে না। কারণ শামে নুসরা যে পর্যায়ের শক্তি ও পেশাদারীত্ব অর্জন করেছে বাশার পরবর্তী সিরিয়াতে এরকম একটি অ্যামেরিকা ও ইসরাইল বিরোধী বাহিনীর অবস্থান উভয় দেশের জন্য হুমকির। ইতিপূর্বে যখন আফগানিস্তানে মুজাহিদিনের জন্য একটি অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছিল তখন তা অ্যামেরিকার জন্য সুফল বয়ে আনেনি। একারণে  নুসরা সমস্যার সমাধান না করে বাশার পতন হোক এটাও অ্যামেরিকা চাচ্ছে না।

অন্যদিকে যেহেতু অ্যামেরিকা অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য দিচ্ছে না, বা যতোটুক দেয়ার কথা ততোটুকু দিচ্ছে না তাই অ্যামেরিকার মিত্র দলগুলো বাশারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে তারা ফ্রন্টলাইন থেকে পিছু হটছে, যেটা শামের জনগনের সামনে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে তারা ফ্রন্টলাইনে আছে, কিন্তু নিষ্ক্রিয়ভাবে। আর যে সময়টা তারা নিষ্ক্রিয় সিদ্ধান্তহীনতায় কাটাচ্ছে সে সময় শামের জনগণ দেখছে বাশারের বিরুদ্ধে মুসলিমদের পক্ষ হয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুকি নিচ্ছে, সবচেয়ে বেশি কুরবানি করছে নুসরা।

অর্থাৎ অ্যামেরিকা একটি দ্বিমুখী সমস্যাতে পতিত হয়েছে। না পারছে গিলতে না পারছে ফেলতে। একদিকে তারা FSA এর দলগুলোকে সাহায্য করতে পারছে না, কারণ তারা মনে করছে শেষ হিসাবে এতে লাভবান হবে আল-কায়দা। অন্যদিকে FSA এর দলগুলো তাদের অদক্ষতা ও নিস্ক্রিয়তার কারণে বাধ্য হয়েই বাশারের বিরুদ্ধে নুসরার কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছে, কিংবা নুসরার সাথে একই ফ্রন্টে অবস্থান করছে।

প্রকৃতপক্ষে সিরিয়া প্রশ্নে অ্যামেরিকার নীতিনির্ধারনী ব্যর্থতার একটি মূল কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহনে তাদের দীর্ঘসূত্রিতা। অ্যামেরিকা যেখানে মাসের পর মাস সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে সেখানে রাশিয়া দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে অ্যামেরিকাকে একপ্রকার বাধ্যই করেছে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ প্রশ্নে অ্যামেরিকাকে আপোষ করতে।

সমস্যা হচ্ছে, অ্যামেরিকার এ সিদ্ধান্তহীনতার প্রভাবটা অ্যামেরিকা সমর্থিত দলগুলোর জন্য অত্যন্ত মারাত্বক। কারণ অ্যামেরিকা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেও বাশার তার আক্রমণ বন্ধ রাখছে না। মুসলিম হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের ক্রোধ বাধ মানছে না। সিরিয়ার দলগুলো দেখছে অ্যামেরিকা তাদের সাহায্যের আশা দিয়ে রেখেছে, কিন্তু যখন তারা মারা পড়ছে তখন অ্যামেরিকাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে যখনই বাশারের বিরুদ্ধে আক্রমণ কিংবা মুসলিমদের রক্ষার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে, সবার আগে পাওয়া যাচ্ছে নুসরাকে।

 

পাশাপাশি কিছুদিন আগে অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার আলোচনার মাধ্যমে যে Cessation of Hostility – বা সামরিক “যুদ্ধবিরতিচুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল তার ফলাফল হিসেবে অন্যান্য দলগুলো নুসরার দিকে আরো বেশি ঝুকে পড়েছে, কিংবা বলা যায় বাধ্য হয়েছে। কারণ এ চুক্তি চলাকালীন সময়ে অ্যামেরিকা তাদের অনুগত দলগুলোকে বাধ্য করেছে অস্ত্র নামিয়ে রাখতে। কিন্তু রাশিয়া-বাশার-রাফিদা এবং কুর্দিরা ঠিকই মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালিয়ে গেছে। এসময় এদের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে থেকেছে নুসরা। একারণে এসময়ে অন্য যে দলই ফ্রন্টলাইনে থাকতে চেয়েছে তাদের নুসরার সাথে সমন্বয় করেই কাজ করতে হয়েছে।

ফলাফল

অর্থাৎ একদিকে এ দলগুলো(অ্যামেরিকাপন্থি) বাশারের কাছে বিভিন্ন অঞ্চল হারাচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া তাদের উপর বিমান হামলা করছে। অন্যদিক থেক কুর্দিরা তাদের আক্রমণ করছে, অন্যদিক থেকে অ্যামেরিকা তাদের অস্ত্র নামিয়ে রাখতে বলছে। অন্যদিকে দল্গুলো দেখছে অস্ত্র নামিয়ে রাখলে শামের সাধারণ মুসলিম ও ইতিহাসের চোখে তারা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর তারা দেখছে এসব কিছুর মধ্যেও একটি দল নিরলসভাবে বাশারের বিরুদ্ধে, রাফিদাদের বিরুদ্ধে এবং কুর্দিদের বিরুদ্ধে ময়দানে যুদ্ধ করে যাচ্ছে, এবং ক্রমাগত দলগুলোকে আহবান করছে সিরিয়ার মুসলিম ও জিহাদের স্বার্থে একীভূত হবার, বহিঃশত্রুদের বদলে শারীয়াহ ও ইসলামের আনুগত্য করার। এরকম পরিস্থিতিতে মরিয়া দলগুলো আদর্শিকভাবে না, অস্তিত্ব রক্ষার কারণেই কোন দিকে ঝুকে পড়বে তা সহজেই অনুমেয়।

সহজ ভাষায় শামের জনগনের এবং শামের সকল আন্তরিক দলের সামনে গত ৫ বছরে বার বার প্রমাণিত হয়েছে, বাশারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং মুসলিমদের রক্ষায় সবচেয়ে কার্যকর ও আন্তরিক জাবহাত-আন-নুসরা। বর্তমানে তারা এমন এক পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছে যখন অনেক ক্ষেত্রেই ধ্বংস আর তাদের মাঝে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আল-কায়দা। শামে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যেখানে আদর্শিক ভাবে অনুপ্রাণিত হোক বা না হোক সিরিয়ার জনগনের এবং দলগুলোর বৈশ্বিক জিহাদের নেতৃত্বের ও পরিকল্পনার অনুসরণ ছাড়া নিজেদের টিকিয়ে রাখার অন্য কোন কার্যকর পথ খোলা নেই বললেই চলে।

তথাপি এ পরিস্থিতিতে সাউদি-কাতার-তুর্কির অনুগত বলয় বাশার বিরোধী যুদ্ধের সম্পূর্ণরূপে ইসলামীকরণ ও এ যুদ্ধের নেতৃত্ব আল-কায়দার হাতে যাওয়া ঠেকিয়ে রাখার জন্য যে বিষয়টি ব্যবহার করেছে তা হল জাবহাত-আন-নুসরার সাথে আল-কায়দার সম্পর্ক। মূলত নুসরার সাম্প্রতিক ঘোষণার মাধ্যমে নুসরা এ চালটির মোকাবেলা করেছে, অ্যামেরিকার দ্বিমুখি সমস্যাকে তাদের জন্য আরো প্রকট করেছে, এবং সিরিয়ার অবশিষ্ট বিদ্রোহীদের জন্য সহজ একটা সমীকরণ উপস্থাপন করেছে। হয় তারা নুসরার অবস্থান, নীতি ও নেতৃত্ব মেনে নিয়ে (গ্রহন করে না পার্থক্যটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ) ঐক্যবদ্ধভাবে বাশারের পতনের জন্য কাজ করবে অথবা তারা অপেক্ষা করতে থাকবে অ্যামেরিকার সাহায্যের জন্য কিংবা অপেক্ষারত অবস্থায় বিলুপ্ত হবে। এটি নিশ্চিত নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে অ্যামেরিকা সিরিয়ার ব্যাপারে তাদের বর্তমান নীতিতে নতুন কোন পরিবর্তন আনবে না। অর্থাৎ ২০১৭ এর আগে অ্যামেরিকার কাছে থেকে মুল্যবান কোন সাহায্য বিদ্রোহীরা পাবে না। আর রাশিয়া ও আসাদের লক্ষ্য থাকবে ১৭ এর জানুয়ারির আগেই বিদ্রোহীদের কোমর সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙ্গে দেওয়ার।

যদি বিদ্রোহীরা নুসরাকে গ্রহন করে তবে সফলভাবে বাশার বিরোধী যুদ্ধের সম্পুর্ণরুপে ইসলামীকরণ ঘটবে, বাশার বিরোধী জিহাদের নেতৃত্ব নুসরার হাতে চলে যাবে, এবং শামের জনগণ ও জিহাদের মাঝে আল-কায়দাকে গেঁথে দেওয়ার – উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। যদি বিদ্রোহীরা নুসরাকে গ্রহন না করে, এবং বাশারের বিরুদ্ধে নুসরার সাথে ঐক্যে তারা না যায় তবে তারা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকবে এবং বাশার ও মুসলিমদের মাঝে একমাত্র ফাইটিং ফোর্স থাকবে নুসরা ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলো – অর্থাৎ সেক্ষেত্রেও সফলভাবে বাশার বিরোধী যুদ্ধের সম্পুর্ণরুপে ইসলামীকরণ ঘটবে। বাশার বিরোধী জিহাদের নেতৃত্ব নুসরার হাতে চলে যাবে, এবং শামের জনগণ ও জিহাদের মাঝে আল-কায়দাকে গেঁথে দেওয়ার উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। উভয় ক্ষেত্রেই, সাধারণ জনগনের মাঝে নুসরার সমর্থন বৃদ্ধি পাবে।

[ইন শা আল্লাহ পরবর্তীত পর্বে আহরার আশ শাম এবং নুসরার এ সিদ্ধানের ব্যাপারে আলোচনা করা হবে]

 

*****************

Al Firdaus Logo.n.png