কওমী দেওবন্দী উলামায়ে কিরামের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান
কওমী দেওবন্দী ভাইদের আকাবেরী হযরতদের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলা ও তাদের বইয়ের দলিল প্রমাণ থাকা সত্যেও বাংলাদেশের কওমী আকাবিরদের অনুসারী দাবিদারেরা কি ভাবে গণতন্ত্র করে???
.
গণতন্ত্র সম্পর্কে স্বনামধন্য ইসলামিক স্কলার গনের অভিমতঃ
.
.
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ বলেন-
“মোটকথা, ইসলামে গণতান্ত্রিক শাসন বলে কোন বস্তু নেই…. এই অভিনব গণতন্ত্র শুধু মনগড়া ধোঁকা। বিশেষত এমন গণতান্ত্রিক শাসন, যা মুসলিম ও কাফের সদস্য দিয়ে গঠিত। একে অমুসলিম শাসনই বলা হবে”। [1]
.
.
মুফতিয়ে আযম দারুল উলুম দেওবন্দ, মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রহঃ এর ফাতওয়া–
প্রশ্নঃ আমাদের নবী সঃ কি গণতন্ত্র কায়েম করেছিলেন? আর ৪ খলীফাও কি সেই গণতন্ত্রের উপর চলেছেন নাকি তারা রদবদল করেছেন??
জবাবঃ হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহঃ গণতন্ত্রের নিন্দা করেছেন। সেখানে আইন ও বিধিবিধানের ভিত্তি দলীলের উপর নয় বরং সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপরে। অর্থাৎ মতাধিক্যের ভিত্তিতে ফায়সালা হয়। সুতরাং যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতার রায় কুরআন সুন্নাহর খেলাফও হয়, তাহলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনুযায়ীই ফায়সালা হয়। কুরআনে কারীম সংখ্যাগরিষ্ঠের আনুগত্যকে পথভ্রষ্টতার নিয়ামক বলা হয়েছে।
(সমাজে) আলেম, সৎ ও বুদ্ধিমান লোকের সংখ্যা কমই থাকে। ৪ খলীফা হুযুর সঃ এর পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন। তাঁরা তাঁর খেলাফ অন্য রাস্তা অবলম্বন করেন নি। [2]
.
.
মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভী রহঃ বলেন-
“ওরা বলে থাকে যে, এটা মজদুর ও সাধারণ মানুষদের হুকুমত। এমন হুকুমত নিঃসন্দেহে কাফিরদের হুকুমত”। [3]
.
.
আল্লামা সাইয়েদ সুলাইমান নদভী রহঃ ইসলামী গণতন্ত্রের পরিকল্পনা রদ করে বলেন–
“গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের সাথে ইসলামের কি সম্পর্ক আছে? এবং ইসলামী খিলাফতের সাথেই বা কি সম্পর্ক আছে? বর্তমান গণতন্ত্র তো সপ্তদশ শতাব্দীর পরে সৃষ্টি হয়েছে। গ্রীকের গণতন্ত্রও বর্তমান গণতন্ত্রের চেয়ে ভিন্ন ছিল। সুতরাং ইসলামী গণতন্ত্র একটি অর্থহীন পরিভাষা। ……গণতন্ত্র একটি বিশেষ কৃষ্টি ও ইতিহাসের ফলাফল। একে ইসলামের ইতিহাসে অনুসন্ধান করাই অনর্থক”। [4]
.
.
কারী তায়্যিব সাহেব রহঃ বলেন-
“গণতন্ত্র আল্লাহ তাআলার কর্তৃত্বের মধ্যেও শির্ক এবং আল্লাহ তাআলার ইলমের মধ্যেও শির্ক”। [5]
.
.
মুফতি রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রহঃ বলেন-
“এইসব বুঝ পশ্চিমা গণতন্ত্রের খবীস বৃক্ষের ফসল। ইসলামে এই কুফরী ব্যবস্থাপনার কোন অবকাশ নাই“। [6]
.
.
মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভী শহীদ রহঃ বলেন-
“গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই শুধু এ-ই নয় বরং গণতন্ত্র ইসলামের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরও বিপরীত”। [7]
.
.
প্রখ্যাত আলেম মুফতি হামীদুল্লাহ খান দা.বা. বলেন-
“বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে একথা প্রমাণিত যে, বর্তমান গনতন্ত্রই ধর্মহীনতা, নির্লজ্জতা ও সমস্ত বিশৃঙ্খলার মূল। বিশেষত এই ব্যবস্থাপনা কর্তৃক সংসদকে হক্কে তাশরীহ (আইন প্রণয়নের অধিকার) প্রদান কুরআন সুন্নাহ ও ইজমার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। … আর ভোট পদ্ধতির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যত গ্রহন করা এবং তাঁর সমস্ত অনিষ্টের মধ্যে অংশগ্রহণ করার নামান্তর। এজন্য বর্তমান পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে ভোট গ্রহণ শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয”। [8]
.
.
মাওলানা সাইয়েদ আতাউল মুহসিন বুখারী রহঃ বলেন-
“যদি কোন কবরকে মুশকিল আসানকারী মনে করা শির্ক হয়, তাহলে অন্য কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা, ইম্পেরিয়েলিজম, ডেমোক্রেসি, কমিউনিজম, ক্যাপিটালিজম এবং অন্যান্য বাতিল রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে মান্য করা ইসলাম হয় কিভাবে? … কবর সিজদাকারী মুশরিক, পাথর নুড়ি ও বৃক্ষকে মুশকিল আসানকারী মনে করে যে, সে মুশরিক। অথচ গাইরুল্লাহর ব্যবস্থাপনা- বিধিবিধান সংকলন করা, সেটার জন্যে পরিশ্রম করা, সেটা গ্রহণ করা কি তাওহীদ??
ইসলামে গণতন্ত্র কোথায়? ইসলামে না ভোট আছে? না (বাতিল মতবাদের সাথে) সমঝোতা আছে? এগুলো বরদাশতও করা হয় না, এগুলো কৃষ্টিও বরদাশত করা হয় না। ইসলাম আপনার কাছে আল্লাহর বিধানের কাছে আনুগত্য চায়, (বিধানের ব্যপারে) আপনার কাছে ভোট চায় না, আপনার মতামতও চায় না”। [9]
.
.
মাওলানা শাহ মুহাম্মদ হাকীম আখতার সাহেব রহঃ বলেন-
‘যেদিকে ভোট বেশি সেদিকে যাও’- ইসলামে এমন গণতন্ত্র বলতে কিছুই নেই। বরং ইসলামের কামালত হচ্ছে এই যে, সারা দুনিয়া এক দিকে যাবে, কিন্তু মুসলমান আল্লাহরই থেকে যাবে। …
যখন হুযুর সঃ সাফা পাহাড়ে নবুয়তের এলান করেছিলেন, তখন ইলেকশন ও ভোটের ব্যপারে নবীর সঙ্গে কেউ ছিল না। নবীর কাছে শুধু নিজের ভোটই ছিল। কিন্তু হুযুর সঃ কি আল্লাহর বার্তা প্রচার করা থেকে বিরত থেকেছেন?? [10]
.
.
শাইখুল হাদীস মাওলানা সলিমুল্লাহ খান দা.বা. এর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে গণতান্ত্রিক পন্থার অধীনে ইসলামী হুকুমত কায়েম করা সম্ভব কিনা? উত্তরে তিনি বলেন-
“না; তা সম্ভব না। নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলাম আনা সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের মাধ্যমেও সম্ভব নয়। গনতন্ত্রে বিবেচ্য হল সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়। আর গরিষ্ঠ সংখ্যা থাকে মূর্খ, যারা দ্বীনের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত নয়। তাদের থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না”। [11]
.
.
হযরত মুফতি নিযামুদ্দীন শামেযী শহীদ রহঃ বলেন-
“দুনিয়াতে আল্লাহর তাআলার দ্বীন ভোটের মাধ্যমে, পশ্চিমা গণতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে না। কেননা এ দুনিয়াতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হচ্ছে আল্লাহর দুশমনদের, ফাসেক ও ফাজেরদের। আর গণতন্ত্র হল মাথা গণনা করার নাম। ওজন করার নাম নয়।
[12]
.
.
________________________________________
রেফারেন্সসমূহঃ
1.মালফুযাতে থানবী রহঃ, পৃ ২৫২
2.ফতোয়া মাহমুদিয়া, ৪র্থ খন্ড, সিয়াসাত ও হিজরত অধ্যায়, পরিচ্ছেদঃ গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠন সম্পর্কিত আলোচনা
3. আকায়েদুল ইসলাম, পৃ ২৩০
4. মাসিক সানাবিল, করাচি, মে ২০১৩ ইং, খন্ড ৮, সংখ্যা ১১, পৃষ্ঠা ২৭, ২৮
5. ফিররি হুকুমাত, কারী মুহাম্মাদ তায়্যিব রহঃ
6. আহসানুল ফতোয়াঃ ৬/২৬
7. আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল, ৮/১৭৬
8. মাসিক সানাবিল, করাচি, মে ২০১৩ ইং, খন্ড ৮, সংখ্যা ১১, পৃষ্ঠা ৩২
9. তাওহীদ ও সুন্নাত কনফারেন্সে বক্তৃতা, ২৬ সেপ্টম্বর ১৯৮৭ ইং, বার্মিঙ্ঘাম জামে মসজিদ, বৃটেন।
10. ফাযায়েলে মারেফাত ও মহব্বত, ২০৯
11. মাসিক সানাবিল, করাচি, মে ২০১৩ ইং, খন্ড ৮, সংখ্যা ১১
12. মাসিক সানাবিল, করাচি, মে ২০১৩ ইং, খন্ড ৮, সংখ্যা ১১, পৃষ্ঠা ৩৩-৩৪