JustPaste.it

সেবার ছদ্মাবরণে এনজিও গোষ্ঠীর ভয়াবহ তৎপরতা

আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

=================================================================

 

        আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ঈমানের ওপর মারাত্মক ছোবল হেনে চলছে একটা আন্তর্জাতিক কুচক্রী দল। এ দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সব কিছুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এ দেশের মানুষকে ইচ্ছেমতো শোষণ করার ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে উক্ত চক্রটি। এই চক্রটির নাম এন, জি, ও (নন-গভরমেন্ট অরগানাইজেশন)

 

        আধুনিক সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণের এক মোক্ষম হাতিয়ার এই এন, জি, ও। পূর্বে সাম্রাজ্যবাদীরা কোন দেশ আগ্রাসন চালাতে চাইলে জাহাজ ভরে বন্দুক আর সৈন্য পাটিয়ে সে দেশটি দখল করে নিত। দখল হয়ে গেল সে দেশটাকে চেটে-পুটে একেবারে ছোবরা বানিয়ে ফেলত। কিন্তু এভাবে চাটাচাটি করতে গিয়ে ওরা বহুস্থানে ঠ্যাঙ্গানী খেয়েছে, লোলুপ জিহবা পড়ে বেইজ্জতী হতে হয়েছে। আগ্রাসন চালাতে গিয়ে চরম খেসারত দিতে হলেও সাম্রাজ্যবাদীদের দস্যু মনোবৃত্তির কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধুমাত্র আগ্রাসন চালানোর পদ্ধতি পরিবর্তন ঘটেছে। আগে সাম্রাজ্যবাদীরা কোন দেশে আগ্রাসন চালাতে চাইলে পুরো দেশটি শক্তি প্রয়োগ করে দখল করেন নিত, কিন্তু বর্তমানে তারা ভূমি দখল না করে এদেশের অর্থ সম্পদ লুটপাট করার প্রতি মনোযোগী হয়েছে। তাই বিশ্ব জুড়ে এখন চলছে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। কোন দেশের নাগরিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রভৃতি সেক্টরে নিজেদের তাবেদার শ্রেণী সৃষ্টি করে একসময় দেশের সার্বিক কর্মকাণ্ড তাদের তাবেদারদের নিয়ন্ত্রণে আনা।

 

        পক্ষান্তরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে ওই দেশের অর্থ-সম্পদ লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়। আর এই পটভূমি সৃষ্টির জন্য তারা ব্যবহার করে থাকে সেবার ছদ্মবেশধারী বিভিন্ন এনজিওকে। এসব এনজিও ঐ দেশে গরীব, দুস্থ ও রোগগ্রস্থদের সেবা করার বাহানা নিয়ে উপস্থিত হয় এবং সে দেশের শ্রম শোষণ, মাথা কেনা, মগজ ধোলাই এবং শিক্ষিত বেকার যুবক, বুদ্ধিজীবী, কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক রাজনীতিবীদ, কলেজ ভার্সিটির শিক্ষক, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিল্পী, অর্থনীতিবীদ প্রমুখকে অধিক বেতন, বাড়ি-গাড়ি এবং উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে তাদের জবাবদিহিবিহীন কর্মকাণ্ডে নিয়োগ করে একসময় সমাজে একটা তাবেদার শ্রেণি সৃষ্টি করে। এভাবে তারা কোন দেশের বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশসমূহের রাজনীতি,অর্থনীতি ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সংস্কৃতি অঙ্গনে একটা অলিখিত প্রভাব বিস্তার করে এবং সরকারের নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালায়। এসব এনজিওদের পেছনে শক্ত মুরুব্বী থাকায় এবং আন্তর্জাতিক অর্থসাহায্য হারানোর আশঙ্কায় দরিদ্র দেশের সরকারের পক্ষে এসব এনজিওদের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে গত্যন্তর থাকে না। এভাবেই আধুনিক সাম্রাজ্যবাদীরা কোন দেশের উপর নিজেদের অলিখিত নিয়ন্ত্রণ কায়েম এনজিওকে ব্যবহারে করে থাকে।

 

        দরিদ্র হওয়ার কারণে বাংলাদেশও আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হয়েছে। এদেশে তাদের তাবেদার সৃষ্টির জন্য স্বাধীনতা লাভের পরই এনজিওদের লেলিয়ে দিয়েছে এবং বর্তমানে এসব বিদেশি এনজিওর সংখ্যা ৬শ' এর কোঠায় ছাড়িয়ে গেছে। সাদা চামড়ার বেনিয়ার জাত এক সময় এদেশে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে এসে পুরো দেশটাকে দখল করে নিয়েছিল। ওদের এ দেশে আসার পূর্বে আমরা ছিলাম বিশ্বের বুকে এক নম্বর ধনী রাষ্ট্র। কিন্তু বেনিয়ারা রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এদেশের সকল সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। জাহাজ বোঝাই করে এদেশের সকল সোনা-দানা, হীরা, মনি, মুক্তা টাকা-পয়সা নিয়ে গিয়ে দেশে জমা করে এদেশকে মিসকিনে পরিণত করে। এভাবে সারা বিশ্বে ধন সম্পদ লুট করে বেনিয়া ইংরেজ, ফ্রান্স, পর্তুগাল, হল্যান্ড আজ বিশ্বে ধনী রাষ্ট্র বলে নাম পাঠাচ্ছে আর আমাদের সম্পদ ডাকাতি করে নিয়ে ফকির বানিয়ে আমাদের ভিখারী বলে উপহাস করছে! লুটপাটের সম্পদ ফুরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় পশ্চাত্য তাদের ঠাট আর বজায় রাখতে পারছে না। তাই এবার ওরা সেবার ছদ্মবরণে যে লুটেরা বাহিনী মাঠে নামিয়েছে তার নাম হলোঃ 'সেবামূলক মিশন' "এনজিও"।

 

        আমাদের দুঃখ, দরিদ্র, ক্ষুধা, রোগ-ব্যাধি, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সুযোগে আমাদের সেবা করতে ছুটে এসেছে সেই ডাকাতদের বংশধররা। সেবার এসেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নিশান উড়িয়ে এবার এসেছে দরদী সেজে এনজিওর ব্যানার ঝুলিয়ে।

 

        এদেশে এনজিও তৎপরতা ইদানিং মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ওরা আমাদের জাতীয় ও স্বাধীনতা চেতনাকে নস্যাৎ করার জন্য আমাদের ঈমান, আকিদা, তাওহীদ রিসালাত, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি লুটে নিতে উদ্যত হয়েছে। ওরা আমাদের চিন্তা-চেতনা, মেধা, প্রতিভা, বুদ্ধি বিবেক নগণ্য মূল্যে কিনে নিচ্ছে। আমাদের মা-বোনদের অমূল্য ইজ্জত, লজ্জা, সম্ভ্রমকে লুটে নিতে তৎপর হয়েছে পাষন্ডরা।

 

        সর্বোপরি এ দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মীরজাফর, উমিচাঁদ, ঘষেটি বেগম, রাজভল্লব, জগৎ সেঠ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের শত্রু এই বিদেশী এনজিও ওয়ালারা। ওরা এদেশের-

 

        (১) মুসলমানদের মুসলমানিত্ব খতম করে খ্রিসস্টান বানাতে লিপ্ত রয়েছে।

 

        (২) ইসলাম বিদ্বেষী মুরতাদ সৃষ্টির জন্য মগজ ধোলাই করেছে এবং এদের মাধ্যমে ইসলামের উপর আক্রমণ চালিয়ে গৃহ যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে।

 

        (৩) দারিদ্র্যের সুযোগে গরীব শিশুদের দত্তক নিয়ে তাদের দেশের বাইরে নিয়ে খ্রিস্টান বানানোর তৎপরতা চালাচ্ছে।

 

        (৪) গ্রামের অবলা সরল মেয়েদের ঘরের বাইরে বের করে তাদের মনে ইসলাম বিদ্বেষী ধ্যান-ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের ইসলাম বিরোধী এবং স্বামী, পিতা-মাতার বিরুদ্ধাচরণ করার উৎসাহ দিয়ে পারিবারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করে চলছে। উন্নত জীবনের প্রলভোন দেখিয়ে এসব মেয়েদের কর্তা-ব্যক্তিরা অফিসে চাকুরী দিয়ে তাদের লালসা পূরণ করার জঘন্য তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্কের নামে তাদের বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে।

 

        (৫) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে অবোধ শিশুদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের চেতনা এবং ইসলাম বিদ্বেষী প্রবণতা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে এসব শিশু জীবনের শুরুতেই ইসলামের প্রতি বিরাগ ভাজন হয়ে পডেছে।

 

        (৬) দেশের সরকারকে তাদের এসব অবৈধ তৎপরতা স্বাধীনভাবে চালানোর অনুমতি দিতে বাধ্য করছে।

 

        (৭) দেশের রাজনীতি এবং সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নীতি নির্ধারণে প্রত্যক্ষভাবে নাক গলাচ্ছে।

 

        (৮) রাষ্ট্রক্ষমতা দেশের স্বার্থবিরোধী ইসলাম চক্রের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে দেশকে বিদেশীদের তাবেদারে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশের ও ইসলামের স্বার্থে স্বার্থ-বিরোধীদের দলবদ্ধ করেছে। তাদের পক্ষে পত্রিকা প্রকাশ, বিবৃতি প্রদান, রাজনৈতিক উস্কানী প্রদান করে জনমত গঠনে লিপ্ত হয়েছে। ঐ চক্রকে সরকার ও ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক তৎপরতা চালাতে লেলিয়ে দিয়েছে।

 

        (৯) আমাদের ধর্মীয় চেতনা ঐতিহ্যকে বিলুপ্ত করার জন্য বিজাতীয় এবং অপসংস্কৃতি আমদানী করে নতুন প্রজন্মকে বিপদে চালিত করছে।

 

        (১০) অধিকাংশ এনজিও গ্রামে গ্রামে লেডিস ক্লাব, নাইট ক্লাব, মহিলা সমিতি স্থাপনের মাধ্যমে দরিদ্র সরলমনা গ্রাম্য মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ লাভের প্রলোভন দেখাচ্ছে। তাদের মুখে স্বামীর কথা মানবো না, পর্দা করে চলবো না" মার্কা শ্লোগান ধরিয়ে দিয়ে সমাজ জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে লিপ্ত হয়েছে। গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবকদের পরিবর্তে সুন্দরী যুবতীদের চাকুরীতে নিযুক্ত করে তাদের বাধ্যতামূলক মোটরসাইকেলে প্রশ্চাত্য স্টাইলে বেপর্দা অবস্থায় গ্রামে গ্রামে বিচরণ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাধ্য করা হচ্ছে। কোন কোন এনজিও বাড়তি আয়ের বিনিময়ে মেয়েদের কর্মকর্তাদের মনোরঞ্চনে প্রলুব্ধ করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

 

        (১১) কোন কোন এনজিও এদেশের বেতন স্কেল এর চেয়ে বেশী বেতন প্রদান করে যুবক-যুবতীদের চাকরিতে নিয়োগ করছে। তাদের মাধ্যমে গ্রামে শহরে বিভিন্ন প্রকারের ডাটা কালেকশন করে তা বিদেশে মুরুব্বিদের কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে। এই ডাটার উপর নির্ভর করে বিদেশ থেকে এদেশে বাজার, চাহিদা, রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এভাবে দেশের শিক্ষিত নাগরিকদের রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতায় লিপ্ত করানো হচ্ছে।

 

        (১২) জঙ্গি বাহিনী গঠন করে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

 

        (১৩) ইসলাম বিরোধী বাম রাজনীতিকে উৎসাহ প্রদান করেছে। এদের মাধ্যমে নতুন নতুন এনজিও গঠন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কর্মরত কিছু বিদেশী এনজিওর বিভিন্ন সময়ের রাষ্ট্র ও ইসলাম বিরোধী তৎপরতার দলিল নিম্নে দেওয়া হলো। এ সমস্ত তথ্য বিভিন্ন সময়ে এদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

 

        (১) দিনাজপুরে কর্মরত ভারতীয় এনজিও 'দ্বীপশিখা' গত বৎসর ভারতীয় স্বাধীনতা উৎসব উপলক্ষে অফিসে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করে। অফিস ক্যাম্পাসে আযান দেওয়া কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অন্য কোন সময় কর্মচারীদের টিফিনের ব্যবস্থা না থাকলেও রমজান মাসে দুপুরবেলায় বিনামূল্যে ভাত খাবার ব্যবস্থা করে। কোন মুসলমান কর্মী রোজা রাখার জন্য খাবার গ্রহণ না করলে কর্মকর্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করে।

 

        (২) 'গণ সাহায্য সংস্থা' নামক একটি এনজিও বাঙ্গালী সংস্কৃতি চর্চার নামে মঙ্গলপ্রদীপ, জল পিড়ির উৎসব প্রচলন, ঘটা করে আয়োজন এবং অন্যান্যদের পালনে উৎসাহ যোগাচ্ছে।

 

        (৩)  ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর "ওয়ার্ল্ড ভিশন" সহ বহু এনজিও দুর্গতদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। কুতুবদিয়ায় কর্মরত ওয়ার্ল্ড ভিশনের কর্মীরা দুর্গতদের খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার শর্তে ত্রাণ বিতরণ করার উদ্যোগ নেয়। দুর্গতরা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও তাদের এই ঘৃণ্য শর্ত পর্ত্যাখ্যান করে এবং তাদের সাহায্য গ্রহণে বিরত হয়। কেবল কিছু সংখ্যক দরিদ্র হিন্দু পরিবার খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে সাহায্য গ্রহণ করে। এ ঘটনায় এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে সর্বস্তরের জনগণ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং এনজিও অফিস ঘেরাও করার উদ্যোগ নিলে কর্মকর্তারা পালিয়ে প্রাণ বাঁচায়। সেবার ভেকধারী এই পাপিষ্ঠরা দুর্যোগ মুহূর্তেও মানুষের ধর্ম নিয়ে টানাটানি করে, তাদের ঈমান কে লুটে নিতে চায়।

 

        (৪) "সপ্তগ্রাম নারী স্বনির্ভর পরিষদ" নামের একটি এনজিও গ্রামের নারীদের শিক্ষাদান করছে 'পর্দা প্রথা নারী উন্নতিকে ৮১% পিছিয়ে দেয়।

 

        (৫) "যশোরের দি সালভেশন আর্মি" নামক একটি এনজিও শহরে ৮ টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করছে। এসব স্কুলে সকল ধর্মের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করা হয়। কিন্তু তাদের বাধ্যতামূলক শুধুমাত্র খ্রিস্টধর্মে বই পড়ানো হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের সমবেত ভাবে যিশু খ্রিস্টের স্তুতি সংগীত গাওয়ানো হয়। গির্জার ঘণ্টা ধ্বনির সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকার তালিম দেওয়া হয়। স্থানীয় জনগণ ও অভিভাবকদের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে এ ঘটনার জন্য সরকারী উচ্চ প্রদস্ত তদন্তদল গেলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং তাদের রূঢ় ভাষায় জবাব দেয় যে, আমরা এদেশের পয়সায় চলি না আমরা এদেশের সরকারের কাছে কোন কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।

 

        (৬) ১৯৪৮ সালে প্যারিসে দাতা সংস্থা সমূহের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল উপস্থিত হলে পাশ্চাত্যের এনজিও সমূহ বাংলাদেশে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার দাবিতে সভাস্থল ঘেরাও করে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা অসহায় ভাবে তাদের দাবী মেনে নিয়ে তাদের সাথে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন যা দাসত্বের সমতুল্য। এরপর থেকেই এনজিওরা সীমাহীন বেপরোয়া হয়ে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দাতা সংস্থা সমূহ দেয় সাহায্যের একটা বড় অংশ সরকারকে না দিয়ে বিভিন্ন এনজিও কে প্রদান করে এবং সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের নির্ধারিত এনজিওকে অংশীদার করার জন্য সরকারের ওপর শর্ত আরোপ করে। ১৯৯২ সালে 'এডাব' নামে একটি এনজিও বাংলাদেশ অবৈধভাবে রাজনৈতিক তৎপরতায় জড়িত হয়ে পড়লে সরকার তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে। কিন্তু ঐ এনজিওর মুরুব্বিদের চাপের মুখে সরকার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাধ্য হয়ে তাদের রেজিস্ট্রেশন বহাল করে।(৭) দিনাজপুরে 'দ্বীপশিখা' এনজিও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বাংলাদেশী বই-পত্রের পরিবর্তে ভারতীয় সিলেবাসের বই পত্র বিলি করেছে, ভারতীয় নেতাদের জীবনী পড়ানো হচ্ছে। এনজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্কুলের শিক্ষার্থীদের অখন্ড ভারতীয় জাতীয়তাবাদের শিক্ষা দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

        (৮) চাঁদপুরে "ব্র্যাক" স্কুলের একটি ১৯/১২ মেয়ে মারা গেলে এনজিওর কর্মকর্তারা তারা তার পিতাকে সাদা কাফনের পরিবর্তে কালো কাফনে আবৃত করে পূর্ব-পশ্চিম দিকে লম্বা-লম্বীভাবে একটি গর্তে অমুসলিমদের কায়দায় দাফন করতে বলে এবং এর বিনিময়ে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব দেয়। উক্ত পিতা তাদের এ প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং মেয়েকে ইসলামী কায়দায় দাফন করে। পার্শ্বের গ্রামের এক ব্যক্তি কয়েকদিন পর মারা গেল উক্ত এনজিও কর্মকর্তারা তার আত্মীয়-স্বজনকে লাশ এভাবে দাফন করলে ২০ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। উক্ত আত্মীয়রা এতে রাজি হয়ে লাশ অমুসলিমদের কায়দায় দাফন করে। পরে কর্মকর্তারা কবরের উপর ক্রশ স্থাপন করে ভিডিও করে রাখে। এভাবে ক্রুশ চিহ্ন কবরের ভিডিওতে ধারণকৃত ছবি স্বদেশে প্রেরণ করে নাকি মুরুব্বীদের সংস্থার অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয় এবং বিশেষ পুরস্কার পাওয়া যায়।

 

        (৯) "আশা" (এসোসিয়েশন ফর সোসাল এডভান্সমেন্ট) এনজিও গণশিক্ষা নামক বিতরণ একখানা পুস্তিকা প্রকাশ করে গ্রামে গ্রামে বিতরণ করছে। এই বইতে লেখা রয়েছে প-পর্দা কুসংস্কার, পুরুষরা পর্দার কথা বলে ঘরে মেয়েদের বন্দী করে রাখে। ভ-ভাগ্য বলে কিছুই নেই, প্ররিশ্রমই ভাগ্য গড়ে তোলে।

 

        (১০) খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল/ডোলহাজারী এর পক্ষ থেকে "মরলে নাহি ভয়" নামক ভয়ানক একখানা বইয়ে লেখা রয়েছে "বাইবেলের তুলনায় কোরআন অতি নিকৃষ্ট/মুহাম্মদ এর জীবন ও শিক্ষায় কিছু নেই/মুহাম্মদের বংশধররা চোর" অন্য একটি বই "শিষ্য শিষ্যায়" লেখা রয়েছে, মুহাম্মদ নিজেই কোরান রচনা করেছেন/সাহাবা ও তৎকালীন আরব বাসীরা জাহেল বলেই ইসলামের ন্যায় মূর্খতার ধর্ম প্রচার করা সম্ভব হয়েছে।" উক্ত বই দুটো বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া এ হাসপাতালটি প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে হওয়ায় এবং চিকিৎসার অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও সুযোগ-সুবিধা থাকায় গ্রামের লোকজন এখানে ব্যাপক হারে চিকিৎসার জন্য আগমন করে থাকে। উক্ত হাসপাতাল থেকে প্রথমে নিম্নমানের ওষুধ দেয়া হয় এবং রোগীদের মোহাম্মদ অথবা কৃষ্ণের নামে তা খেতে বলা হয়।

 

        রোগীরা আরোগ্য লাভ না করে পুনরায় ফিরে এলে এবার ভালো ওষুধ দিয়ে তারা যীশুর নামে খেতে বলা হয়। ভাল ওষুধের জোরে এবার রোগীর আরোগ্য লাভ করলে তাদের খ্রিস্ট ধর্মে-গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলে তাদের অর্থ, গাড়ী-বাড়ী প্রধানের প্রলোভন দেয়া হয়। তাদের উদ্দেশ্য করে প্রচারণা চালানো হয়, "মুসলমানরা গরীব কেননা তাদের পয়গম্বর মোহাম্মদ ছিল দুর্ভাগা, খ্রিস্টানরা ধনী এবং বিলাসী কেননা তাদের প্রভু আশীর্বাদ করেছে বলে এই অবস্থা। মোহাম্মদের নাম নিয়ে ওষুধ খেয়ে তোমরা মুক্তি পাওনি, তেমনি পরকালেও মোহাম্মদের কথা মত তার ধর্ম গ্রহণ করে মুক্তি পাবে না। যীশুর নামে ওষুধ খেয়ে যেমনি রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছ তেমনি পরকালেও যীশুর ধর্ম ছাড়া তোমরা মুক্তি পাবে না। তাই পরকালে মুক্তি পেতে হলে যীশুর ধর্ম গ্রহণ করা ইত্যাদি।

 

        এই হল দেশ বিদেশী এনজিওর  অপতৎপরতার কিঞ্চিৎ খতিয়ান। কলাগাছের মত গজিয়ে ওঠা প্রায় প্রতিটি গ্রামে এদের কর্মীদের আনা-গোনা লক্ষ্য করা যায়। এ দেশের ধর্ম পরায়ন সহজ-সরল গরীব মানুষরা বোঝেনা সেবার নামে চকচকে ফনিনা গোখরার গুষ্টি যে ছোবলটা তার হৃদয়ে মেরেছে তা কত বিষধর, কত মর্মান্তিক এর পরিণতি। এরা শিশুশিক্ষা থেকে শুরু করে রাজনীতি, অর্থনীতি সাহিত্য- সংস্কৃতি সহ আকীদা-বিশ্বাস ও ঈমানের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। এরা সুকৌশলে নির্দিষ্ট মেয়েদের মধ্যে একটি মুসলিম জাতিকে অবিশ্বাসী বা খ্রিস্টান বানানোর নীল নকশা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। এখনই যদি এদেরকে রুখে না দাঁড়ান হয়, এর বিকল্প ব্যবস্থা হাতে না নেয়া হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে আরো একবার যে আমরা পরাধীনতা সহ ব্যাপক ধর্মান্তরিত হওয়ার কবলে নিপতিত হতে যাচ্ছি তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

 

        এদেশের দুর্বল, সত্য ও ধর্মবিমুখ অথর্ব সরকারের কাছে এর প্রতিকারের আবেদন জানানো নিষ্ফল। তা হবে উলুবনে মুক্তা ছিটানোর সমান। তাই যারা এর ভয়াবহতার গভীরতা উপলব্ধি করেন যারা এর ভবিষ্যৎ বাস্তব চিত্র দেখতে পাচ্ছেন, সেই ঈমানদীপ্ত বীর উত্তরসূরীদেরকেই এসবের মোকাবেলায় সাহসী পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ ও স্বদেশ প্রেমিক বিচক্ষণ আলেম ও নাগরিকদেরকে এদিকে সতর্ক ও যথাযোগ্য দৃষ্টি রাখতে হবে। এর বিষফল থেকে জনগণকে সচেতন করার দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত তারা যদি শুধু উপদেশ বিতরণ করে ক্ষান্ত হন, যথাপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তবে আপনারা অবশ্যই আল্লাহর নিকটে এজন্য দায়ী থাকবেন। আর আপনাদের নাম লেখা হবে ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে। স্পেন ও বাগদাদ পতনের প্রাক্কালে আত্মঘাতী সেই তথাকথিত আলিমদেরই পাশে। যে কলংক অপন নেয়। শত শতাব্দীর পরিক্রমাও যে কলঙ্ক দাগ মুছতে পারেনি। ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করেন না। ক্ষমা করেনা পরবর্তী প্রজন্মও। অতএব কান্ডারী হুশিয়ার!

 

*****