দেশে দেশে ইসলাম
বুলগেরিয়ার মুসলমানরা জেগে উঠছে আবার
নাসীম আরাফাত
=======================================================================
শান্তি, সমৃদ্ধি ও পরম ভ্রাতৃত্বের মশাল হাতে নিয়ে মুসলিম উন্মাহ পৃথিবীর দূর প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলো। রোম-পারস্যের নির্যাতিত মানবাত্মা সেদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলে দলে ইসলামের পতাকা তলে শামিল হয়েছিল। মুসলিম পদধুলিতে সেদিন ইউরোপের মাটিও ধন্য হয়েছিল। প্রথম শতাব্দিতেই জিব্রালটার প্রণালী পাড়ি দিয়ে স্পেনসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় শতাব্দীতে সিসিলি ও ইটালী হয়ে মুসলমানরা ইউরোপে প্রবেশ করে। তারপর ইউরোপের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের ভলগা নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ও আরল ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রবেশ করে। অষ্টম শতাব্দীতে উসমানী খিলাফতের বিজয়যাত্রার পর মুসলমানরা তুরস্ক থেকে বলকান উপদ্ধীপে গমন করে। এভাবে মুসলিম উম্মাহ সত্যের দিশা নিয়ে চতুর্দিক দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বুলগেরিয়া বলকান উপদ্বীপেরই একটি ঐতিহ্যবাহী দেশ। ভারি চমৎকার এই দেশটি। কৃষ্ণ সাগরের পশ্চিম তীরে অবস্থিত এদেশের দানিউবীয় সমতল ভূমি, থ্রেসিয়ান সমভূমি, রোডোপ পর্বতশৃঙ্গ পর্যটকদের করে বিমোহিত। বুলগেরিয়ার মধ্যাঞ্চল দিয়ে পূর্বে পশ্চিমে চলে গেছে সুদূর বিস্তৃত মনোরম ষ্টারা প্লানিনা পর্বতমালা। যেন অতন্ত্র প্রহরী শীর উচু করে দাড়িয়ে আছে সারাক্ষণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বুলগেরিয়া
সোভিয়েট ইউনিয়নের উরাল পর্বত অঞ্চল ও ভগলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত শ্লাভ জাতির এক শাখা যার নাম ছিল বুলগার। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে তারা বলকান উপদ্বীপে আগমন করে এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের লক্ষে দানিয়ুর নদী পার হয়ে বর্তমান বুলগেরিয়ায় এসে যাত্রা বিরতি করে। তারপর তুর্কী বুলসারগন এসে তাদের সাথে মিলে দশম ও দ্বাদশ শতাব্দীতে অত্যন্ত শক্তিশালী রাজ্য গঠন করে। উসমানীয় খিলাফতের উত্থান কালে ১৩৯৬ খৃষ্টাব্দে বুলগেরিয়া উসমানী খিলাফতের অধীনে চলে আসে। এর পর থেকে সুদীর্ঘ পাঁচশ' বছর মুসলমানরা বুলগেরিয়া শাসন করে।
মুসলিম মুজাহিদরা ১৩৪৫ খৃষ্টাব্দে বস্পোরাস ও দার্দানেলিস প্রণালী অতিক্রম করে ইউরোপে প্রবেশ করে। ১৩৬০ খৃষ্টাব্দে তুরস্কের আড্রিয়ানোপলকে ইউরোপীয় রাজধানী বানীয়ে সম্মুখ যাত্রা শুরু করে। ১৩৯৩ সালে বুলগেরিয়ার উত্তরে অবস্থিত তুরনুকো শহর পদানত করে। ১৩৯৬ সালে বুলগেরিয়ার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত ফাহদান শহর জয় করে, ১৩৮৯ সালে মুজাহিদ বাহিনী পশ্চিম দিকে ধাবিত হয়ে সার্বিয়া পদানত করে৷ এভাবে বীর দর্পে শান্তি ও সভ্যতার মশাল নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়ে। সতের শতাব্দিতে ইসলামের রোশনি রুমানিয়া, দক্ষিণ পোল্যাণ্ডে ও অস্ট্রিয়ায় পৌঁছে যায়।
মুসলিম সভ্যতা সংস্কৃতি ও অনুপম ভ্রাভৃত্ববোধ ইউরোপের নির্যাতিত, নিপীড়িত খৃষ্টানদের তাক লাগিয়ে দেয়। বিমোহিত এই হরিজন প্রকৃতির খুষ্টানরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
কিন্তু কাল পরিক্রমায় শ্বাশত অনুশাসনে ইউরোপের সামাজিক রাজনৈতিক জীবনে অমূল পরিবর্তন আসে। পরিবর্তনের হাওয়া লাগে ইসলামী বিশ্বেও। ইউরোপ ভূমি-জমিদারদের পতন ঘটে। শিল্প বিপ্লবের দুর্দম যাত্রা গোটা পৃথিবীর মানচিত্র পাল্টে দেয়। অপরদিকে মুসলিম বিশ্ব প্রাণ চাঞ্চল্য হারিয়ে ফেলে। ঘুনে ধরে তার হৃদয়-শিকড়ে।
এদিকে পাশ্চাত্যের ধর্ম নিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের সুখ দোলায় পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত বুলগেরিয়াও দুলতে থাকে। মৌলবাদী খৃষ্টানরা তারই সুখ স্বপ্নে নেচে ওঠে। সাথে সাথেই রাষ্ট্রীয় সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। একাধিক জাতির সুমধুর ভ্রাতৃত্ব বন্ধন শিথিল হয়ে যায়। খৃষ্টানরা খৃষ্টবাদের নামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরোধীতা করতে থাকে। আঁতাত ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। ১৮৯৭ সালে তা খৃষ্টান জাতীয়তাবাদের রুপ নেয়। ফলে রক্তাক্ত সংঘর্ষ বাধে। পাশ্চাত্যের লেখক, সাহিত্যিক ও কলামিষ্টরা কল্পিত তুলির প্রলেপে এ সংঘর্ষকে বহুগুণে ভয়াবহ করে তুলে। খৃষ্টজগতে রাষ্ট্র হয়ে যায়, বুলগেরিয়ায় হাজার হাজার অর্থোডক্স খৃষ্টানকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। খৃষ্টান পল্লিগুলোতে আগুনের শিখা উঠছে। আরো কতো কল্প কাহিনী।
ঘাপটি মেরে থাকা রাশিয়ান সৈন্যরা সুযোগ পেয়ে যায়। স্বজাতি' ও স্বধর্মের লোকদের বিধর্মীদের নির্যাতন থেকে উদ্ধারের নামে দানিয়ুর নদী পার হয়ে বুলগেরিয়া আক্রমণ করে। এক শ্রেণীর মুসলমানের আত্ম দুর্বলতা ও দেশীয় খৃষ্টানদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মুসলিম বাহিনীর পরাজয় হয়। এবার ইস্তাম্মুল বিজয়ের নেশায় রুশ বাহিনী সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু বলকান অঞ্চলে রুশদের শক্তিবৃদ্ধির ভয়ে বৃটেন হস্তক্ষেপ করে। ফলে ১৮৭৮ সালে বার্লিন চুক্তি হয়। রুশ বাহিনী পিছু সরে আসে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮)
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় বুলগেরিয়া যৌথ প্রতিরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় শক্তিগুলোর জোটে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং জার্মানকে সমর্থন করে, কিন্তু জার্মান ও তার দোসরদের পরাজয়ের ফলশ্রুতিতে বুলগেরিয়া ব্রাস, গ্রীস ও মেসোডোনিয়া থেকে যুগোশ্লাভিয়া পর্যন্ত বিরাট ভূখণ্ড হারাতে বাধ্য হয়।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৬) ও রুশ আক্রমণ
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে বুলগেরিয়া আবারো ভুল করে এবং জার্মানীর মিত্রতা গ্রহণ করে। কিন্তু ১৯৪৪ সালে যখন জার্মানদের বিপর্যয় প্রায় অনিবার্ষ ও নিশ্চিত হয়ে পড়ে তখন বুলগেরিয়া মিত্র জোট ভেঙে বেরিয়ে আসে। কিন্তু রাশিয়া বুলগেরিয়ার এই জার্মান প্রীতি ভুলতে পারেনি। তাই রাতের আঁধারে রুশ বাহিনী বুলগেরিয়া আক্রমণ করে দেশের ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে তা বুলগেরিয়া কম্যুনিস্ট পার্টির হাতে তুলে দেয়। চরম হতাশা নেমে আসে বুলগেরিয়ার মুসলমানদের ওপর। চার দিকে চাপ চাপ বেদনা। মৃত্যুর অবারিত পদচারণা। গভীর অমানিশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় বুলগেরিয়ার আকাশ। বুলগেরিয়ার মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয় স্টালিনের টেটালেটারিয়ানিজম বা সর্বগ্রাসী শাসনতন্ত্র। তারপর থেকে শুরু হয় বুলগেরিয়ার মুসলমানদের নির্যাতনের এক সকরুণ হৃদয় বিদারক অধ্যায়। সমাজতান্ত্রিক শাসনের যাতাকলে পিষ্ঠ হতে থাকে মুসলিম সমাজ। মৌলবাদী খৃষ্টান, ইহুদীদের যোগ সাজসে ও পোপ আতাত মুসলিম নির্যাতনের রূপ আরো ভয়াবহ করে তুলে।
এ নির্মম নির্যাতনের কারণ এরা মুসলমান। এরা ঈমানের ধারক-বাহক, কিন্তু এরাও তো এককালে খৃষ্টান ছিল। ইসলামের শ্বাশত সুন্দর বিধানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, মুসলিম ভ্রাতৃত্ব সুনিবিড় বন্ধনে মুগ্ধ হয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ইসলাম ধর্ম কবুল করেছিল। তারা ছিল খৃষ্টান সমাজ ব্যবস্থা, পাদ্রী শাসনের যাতাকলে নিপিষ্ঠ। ১৪৬৬ সালে সুলতান মুহাম্মদ আহমদের আমলে গ্রামের পর গ্রাম শহরের পর শহর ইসলাম কবুল করে নিয়ে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে থাকে। গোড়া মৌলবাদী ইহুদী খৃষ্টানদের এখানেই ক্ষোভ, এখানেই জ্বালা। তাই সমাজতান্ত্রিক সরকারের আস্তিনের তলে থেকে মুসলমান নির্যাতনের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ১২০০ মসজিদে তালা ঝুলায়। ইতিহাসের অতল গহবরে হারিয়ে যায় বহু মসজিদ। ধমীয়ি কার্যকলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। কোন প্রকার ধর্মীয় পুস্তক অনুপ্রবেশে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। মুসলিম শিশুদের সুন্নতে খাতনা বর্বরতা ও অমার্জনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসাগুলোকে নিশ্চিহ করে ফেলা হয়। তুর্কী ভাষা চর্চা বন্ধ করে দেয়া হয়। অনাবাদী অঞ্চলে মুসলমানদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। মুসলমানদের জাতীয় ধর্মীয় উৎসব পালন বন্ধ করে দেয়া হয়।
জাতির বিবেক আলেম সমাজের সতর্কবাণী
সচেতন আলেম সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা তখন বারবার হুশিয়ারী উচ্চারণ করে ছিল। ভবিষ্যৎ বুলগেরিয়ার অবস্থা ছিল তাদের নখদর্পনে। তাই ১৯১৭ সালে সোভিয়েট রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর থেকেই তারা বুলগেরিয়ার মুসলমানদের সতর্ক করতে থাকে। তারা জনগণের মাঝে এক আদর্শবাদী শ্লোগান তুলে দেয় Our Muslim Falg is green, not red. বুলগেরিয়ার আলেম সমাজ সাধারণ মানুষকে এক্যবদ্ধ করে সাম্রাজ্যবাদের ভবিষ্যৎ অনুপ্রবেশের প্রচণ্ড বিরোধীতা করতে থাকে। মুসলিম পত্রিকা ভুলাককে প্রতিদিন প্রকাশিত একটি শ্লোগান থেকেই মুসলিম আলেম সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের মনের ভাব ও আকুতি বুঝে আসে।
As long as the Holy Quran exists we will oppose those who pray in the direction of the new Kibla Mosccow.
১৯৪৫ সালে মুসলিম জনপ্রিয় এই পত্রিকাটি কম্যুনিস্ট সরকার বন্ধ করে দেয়। খুব কমলোকই এই আলেম সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও জাতির বিবেকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পেরেছিল। তাই আজ তারা নিষ্ঠুর নির্যাতনে নিপিষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু এতো নির্যাতন নিষ্ঠুরতা ও অত্যাচারের পরও মুসলমানরা তাদের গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য আকড়ে ধরে রেখেছে। পারেনি তাদের বিশ্বাস, ধর্মীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক রীতি নীতিকে চিরতরে মিটিয়ে দিতে। পারেনি মুসলিম সমাজে তারা কোন প্রকার প্রতিপত্তি বিস্তার করতে। কম্যুনিষ্ট সরকারের ব্যর্থতার কারণ গবেষণা রিপোর্টে বুলগেরিয়ার এক জাদরেল কমরেড মন্তব্য করেছেন , “বুলগেরিয়ার মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভিত্তি অনেক মজবুত। তারা খুব শক্তিশালী।” কমরেড জেড নুরাইভা, যার রক্তে মাংসে ইমসলামী শত্রুতা ও বিদ্বেষীপনা মিশে গেছে সে ‘বুলগেরিয়ায় ইসলাম’ নামক বইযে লিখেছেঃ
“Islam in Bulgaria had and has a reactionary face to over come Islam in Bulgaria is very difficult and complicated priocess. We have to destroy. The basis of the isllamic way of life, Muslim tradition, style of theinking mentality and idntity. The process of destryction of islam in Bulgaria has not yet reached a icvel of similar process of annihation of christoinity in Bulgaria.”
অর্থ, বুলগেরিয়ায় ইসলাম প্রবেশের পর বহু প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। আজও তা বহু কঠিন ও জটিলতার সম্মুখীন। আমরা ইসলামী জীবন যাপনের ভিত্তি, মুসলিম ঐরতিহ্য ভাবধারা, মনোবৃত্তি ও স্বতন্ত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ছাড়ব। তবে বুলগেরিয়ায় ইসলাম ধ্বংসের প্রক্রিয়া এখনো পূর্বের খৃষ্টান ধর্ম ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় সাদৃশ্য হয়নি।
বুলগেরিয়ার কম্যুনিস্ট সরকার সব দিক দিয়ে ব্যর্থ হয়ে কাউন্সিল অব মিনিষ্টারস এর সাথে সম্পৃক্ত Committee For Religious Affaire এর অনুমোদন ছাড়া ধর্মীয় কার্যকলাপের জন্য অফিস নেয়া, প্রচার প্রচারণা চালানো ইত্যাকার সব কিছু নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
বুলগেরিয়ায় মুসলমানরা ছিলো বৃহত্তর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। এদের বিচ্ছিন্ন ও নিশক্তি করে ফেলার জন্য নতুন ষড়যন্ত্র আরম্ভ করে। ১৯৫০ সালে ১ লাখ ৫০ হাজার মুসলমানকে পেশীবলে তুরস্কে তাড়িয়ে দেয়। কম্যুনিস্ট সরকারের সাথে "The grand Mufty of Bulgaria" এর চুক্তি অনুযায়ী ৩৫ হাজার রোমেলী তুর্কী মুসলমানকে তুরস্কে তাদের আত্নিয় স্বজনদের নিকট ফিরিয়ে দেয়।
১৯৭১ সালে কম্যুনিস্ট প্রশাসনের মাথায় আরেক নতুন ভুত চাপে। তারা মুসলিম পোষাক পরিচ্ছদ ও মুসলিম নামের উপর নগ্ন হামলা চালায়। মুসলিম মুজাহিদরা এতে ক্ষেপে গিয়ে সুকিয়াত শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করে তাদের প্রত্যেককে ১৫ বা ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু মুসলমানরা সকল বাধা বিপত্তি ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইসলামী পোষাককেই আকড়ে ধরে। সরকারের এই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে পি জুবুনেভ নামক এক প্রশিদ্ধ লেখক বলেন,
Bulgarian Muslims woman wear veils on thjarir facce and Muslims men wear sunni dress because they want oto show their religions identyty.
অর্থ, বুলগেরিয়ার মুসলিম মহিলারা মুখে ঘোমটা ব্যবহার করে এবং মুসলিম পুরুষরা সুন্নতী পোষাক পরিধান করে। কারণ তারা তাদের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র প্রকাশ করতে যত্নবান।
প্রায় পঞ্চাশ বৎসর যাবত বুলগেরিয়ায় মুসরমানরা কম্যুনিস্ট সরকারের ইসলাম বিরোধী যুদ্ধে ও গোড়া ইহুদী খৃষ্টানদের আতাত ও উস্কানীর মুখে নিজস্ব ঐতিহ্য গৌরব ও অম্লান মর্যাদা নিয়ে শীর উচু করে এখন টিকে আছে। তাদের মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধনে তারা ক্ষণিকের তরেও বিচ্ছিন্ন করতে পারে নি। পারে নি আল্লাহর নূরকে ফুৎকার দিয়ে নিভিয়ে দিতে।
বুলগেরিয়ান মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা
১৯৮২ সালে কম্যুনিস্ট সরকারের নির্মম পতন ঘটে। উথান ঘটে গণতন্ত্রের। নিপীড়িত বন্দী মানবতা সুখ শান্তির আশায় ইতিউতি করতে থাকে। শান্তির দিকে বার বার ফিরে ফিরে চায়। কিন্তু গণতন্ত্রও তাদের মনে কাক্ষিত শান্তি ও শক্তি দিতে ব্যর্থ হয়। রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত সর্ববিধান মানবতার সেই ক্ষীণ আশার আলো নিভিয়ে দেয়। ধর্ম, গোত্র, সম্প্রদায় কেন্দ্রিক সকল প্রকার সমাবেশ সংঘ সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তাই ধর্মীয় চেতনা নিয়ে পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মুসলিম নেতারা স্বাধীনতার নামে অন্দোলন শরু করেছে।মুসলমানরা সেখানে নামধারী এই গণতন্ত্রের সূর ধরেই বীর দর্পে এগিয়ে যাচ্ছে। দূর্বার তাদের গতি। অপ্রতিরোধ্য তাদের যাত্রা। ১৯৯০ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। মুসলিম নেতারা সেখানে আশাতীত আসন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়।মুসলিম নেতারা ৬.৯% টি আসন পায়। বুলগেরিয়ান কম্যুনিস্ট পার্টি পায় ৩২.৭% টি আসন। আর বাকী আসনগুলো ছিনিয়ে নেয় সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক দল।
সমগ্র বুলগেরিয়ায় নয়জন কেন্দ্রীয় মুফতি রয়েছেন। এদের তত্ত্বাবধানে বুলগেরিয়ায় মুসলিম নব জাগরণের প্রচেষ্টা চলছে। রাজধানী সোফিয়া একটি বৃহৎ ইসলামী ইনষ্টিটিউট রয়েছে। গোটা বুলগেরিয়ায় বৃহতাকারে তিনটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। একটি বুলগেরিয়ায় উত্তর পূর্ব শহর রুসিতে। আরেকটি বুলগেরিয়ার উত্তরে তাসুমান শহরে, তৃতীয়টি বুলগেরিয়ার দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত কারজেলী শহরে। দারুল ইফতা নামক এক মজবুত শক্তিশালী সংঘটন এই ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছে। কম্যুনিস্ট শাসনামলে এগুলো সহ আরো বহু মাদরাসা বন্ধ করে তার নাম নিশানাও মিটিয়ে দেয় মুসলমানরা আবার তা উদ্ধার করে জায়গায় জায়গায় ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে।
বুলগেরিয়ার ভাঙা মিনারে বহুদিন পর আবার প্রাণ ফিরে এসেছে। আবার আল্লাহু আকরর ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। প্রতি জুমাবারে মসজিদ গুলোতে তিল ধারণের ঠাই থাকে না। মুসলিম বস্তিতে বস্তিতে গড়ে উঠেছে মকতব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে বিশুদ্ধ ইসলামী চিন্তা চেতনা পৌঁছে দিতে আজকের পিতামাতারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জায়গায় জায়গায় হিফজ খানা খুলে কুরআনের আলো পৌঁছে দিচ্ছে শিশু কিশোরদের নিকট। নিশ্চয় এরাই আবার হিদায়াতের হারানো আলো হাতে নিয়ে দুর্দম্য গতিতে ইউরোপের অলিতে গলিতে ঘুরে ফিরবে।
প্রদীপ ধরি আঁধারের বুকে
আমরা রয়েছি জাগি
নব জীবনের লাগি।
═──────────────═