আল্লাহর আইন বনাম মানবীয় আইনঃ গণতান্ত্রিক দাওয়ার মৌলিক ডিফেক্ট (KaizenSeries : 11)
[১]
১৯২৬ সালে মার্কিন পার্লামেন্ট মদ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ১৯৩৩ সালে পুনরায় তা বৈধ করে। এ প্রেক্ষাপটেই উস্তাদ মওদুদী (রহঃ) লিখেছেন ‘মানবীয় আইন বনাম আল্লাহর আইন’ নামক সুবিখ্যাত প্রবন্ধটি। জনগণের হাতে আইন প্রনয়ণের ম্যান্ডেট দিয়ে আবার নৈতিকতার বুলি ছাড়তে গেলে যে কতটা নাজেহাল হতে হয় এ ঘটনা তার বাস্তব সাক্ষী। অথচ এ আইন প্রনয়ণের পূর্বে শুধু প্রচার কার্যেই ব্যয় হয়েছিল সাড়ে ৬ কোটি ডলার, লিখা হয়েছিল প্রায় ৯০০ কোটি পৃষ্ঠা, আইন বাস্তবায়ন করতে খরচ হয়েছিল ৬৫ কোটি পাউন্ড। কিন্তু আফসোস মি. রুজভেল্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই এ আইনের সমাধি রচিত হয়। মদের বিপক্ষে এত চিন্তা গবেষণা, এত প্রচার প্রচারণা, এত আয়োজন, এত প্রচেষ্টা এত কিছু সব ব্যর্থ প্রমাণিত হয়।
এ হচ্ছে গণতন্ত্রের স্বরূপ যার মাধ্যমে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের দুঃস্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ।
অন্যদিকে আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে ফিরে যান। শুধুমাত্র কুরআনের আয়াত দিয়েই মদ নিষিদ্ধের বিধান শতভাগ সফলতা লাভ করেছিল, দরকার পরে নি শত শত পুস্তকের, কিংবা পুলিশ প্রশাসনের। কে
ননা তাদের অন্তরে গেথে দেওয়া হয়েছিল যে বিধানদাতা কেবমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয় তাআলাই।
[২]
আল্লাহর রাসূলের (সঃ) দাওয়াত বনাম গণতন্ত্রবাদীদের দাওয়াতঃ
আল্লাহর রাসূল (সঃ) মক্কী জীবনে মানুষকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর মূলনীতিকে লোকদের অন্তরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করে দিয়েছিলেন। তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে আল্লাহ যা দেন সেটাই আইন, এটা বিনা প্রশ্ন মেনে নেওয়াটা ঈমান আর না মানাটা কুফরি। তাদেরকে দ্ব্যর্থহীন ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল U HAVE NO CHOICE. U HAVE NO MANDATE…!!
অন্যদিকে আজকের গণতন্ত্রবাদীরা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, তাদেরকে দাওয়াত দিচ্ছে U HAVE RIGHT TO CHOOSE… U HAVE MANDATE… হে জনগণ তোমরাই সব। তোমরা চাইলে শাহভাগীদের ভোট দিয়ে সমকাম বৈধ করতে পারো, আবার চাইলে ইসলামপন্থীদের ভোট দিয়ে মদ নিষিদ্ধ করতে পারো। তোমরা যেটা চাইবে সেটাই হবে। দয়া করে ভোটটা আমাদের দাও।
আল্লাহর রাসূল সঃ মদ নিষিদ্বের পূর্বে সাহাবীদের নিয়ে মিটিং ডাকেন নি, বলেন নি যে তোমরা অধিকাংশ মদের পক্ষে থাকলে মদ জায়েয আর না থাকলে মদ নাজায়েয।
অথচ আজকের গণতন্ত্রবাদীরা সংখ্যাধিক্যের কুফরি সূত্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এই স্বীকৃতিকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কারন তাদের শরীআ কায়েমের Procedure ই হলো পার্লামেন্টে নিজ দলের MP সংখ্যা বৃদ্বি করা, যাতে বিল উত্থাপনের সময় তারা সংখ্যাধিক্যের জোরে আইন চেন্জ করতে পারে। আর এই কারনেই তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে, ভোটভিক্ষা চায়। তারা বুঝতে পারে না যে জনগণকে মাথায় উঠার অধিকার স্বীকার করে নিয়ে যদি বলা হয় মাথায় ওঠা শোভা পায় না তাহলে জনগণ কেয়ার করবে না। বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণের অধিকার স্বীকার করে যদি পাবলিককে টিকেট কাটার অনুরোধ করা হয় তা কতটুকু কার্যকর হবে???
রাসূল (সঃ) এর দাওয়াতের সাথে আজকের গণতন্ত্রবাদীদের দাওয়াতের এই মৌলিক পার্থক্যের কারনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কখনই শরীআ বাস্তবায়ন করা যাবে না। যদি কদাচিৎ যায়ও তাহলেও তা মার্কিন পার্লামেন্টের মদ নিষিদ্ধের মতই তামাশায় পরিণত হবে।
[ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আইন পরিবর্তনের সিস্টেম হল বিল উত্থাপন ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফলো করা। এখন আপনি যদি এই প্রক্রিয়ায় বিল উত্থাপন ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখিয়ে মদ নিষিদ্ধ করেন, তাও তা হবে একপ্রকার মানবরচিত আইন। কারন এটার Breeding Process এটাকে তাই বলছে। আমরা বলবো এটা এক প্রকার মানবরচিত আইন কিন্তু ঘটনাক্রমে এটা শরীআ আইনের সাথে মিলে গেছে। ব্যভিচারের ফলে যে বাচ্চা হবে তাকে তো জারজ সন্তানই বলা হবে, যদিও ঘটা করে গরু জাবাই দিয়ে তার আকীকা করা হোক কিংবা জব্বরসই একখান আরবী নাম রাখা হোক। ]