স্মরণে ৫ মে শাপলা ট্র্যাজেডি
( ১০১ টি লেখার সংকলন )
স্মরণে ৫ মে শাপলা ট্র্যাজেডি
(৫ মে, ২০১৯ তারিখে শাপলা ট্র্যাজেডি স্মরণে ফেসবুক থেকে পাওয়া লেখা সমুহ। কিছু লেখা আগেরও আছে)
১
ভদ্র মহিলা আমাকে এখনও ফোন দিয়ে বলেন 'বাবা, তুমি ভালো আছো তো?' ৫ মে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার এক শহিদের স্ত্রীর কথা বলছি।
সেদিন ৫ মে, ২০১৩।
সারাদিন ইট ছোঁড়ার বিনিময়ে শত শত গুলি আর টিয়ারশেল উপহার পেয়ে সন্ধ্যার পর ক্লান্ত হয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ে বসে আছি। ডিভাইডারের উপর বসে। এক সফেদ দাঁড়ি ভরা মুখের বাবার বয়সী ভদ্রলোকও আমার পাশে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আমি ফোনে স্বজনদের সাথে কথা বলছিলাম। লোকটি অপলক আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিরক্ত হলাম। ফোন রেখে বললাম আমাকে কিছু বলবেন? লোকটি ইতস্তত করছিল। বুঝলাম কিছু বলবে। আবার বললাম, বলুন, কী বলতে চান।
খুব সাধারন একজন মানুষ মনে হলো। পোষাক দেখে মনে হলো শ্রমজীবি মানুষ। ইতস্ততা ভেঙ্গে বলল 'বাবা তোমার মোবাইল থেকে আমার পরিবারকে একটা মিসকল দিবে?'
আমি বুঝলাম ওনার কাছে মোবাইল নাই। হয় তো সংঘর্ষের সময় হারিয়ে গেছে, নয়তো ওনার ফোন কেনাই হয়নি।
আমি বললাম 'না আমার ফোন থেকে মিসকল দিতে পারবেন না।' লোকটি আমার এই জবাব হজম করে চুপ হয়ে গেল। আমি ইষৎ হেসে বললাম, 'মিসকল নয়; কল দিতে পারবেন। নিন কথা বলুন।'
লোকটি ফোনে কী বলেছিল— স্পষ্ট মনে নেই। শুধু শুনলাম 'ভালো আছি, রাতে থাকতে হবে, দুআ করো, টেনশন করো না'।
এরপর আমি আর ওনি হারিয়ে গেলাম ভীড়ের মাঝে।
রাত ১১.০০ টার দিকে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসল। রিসিভ করতেই বলল, 'তুমি এখন কোথায়?'
ভাষার টোন শুনে বুঝলাম সন্ধ্যার সেই নম্বর। বললাম আপনার সেই মানুষটি এখন আর আমার পাশে নেই। তবে ভালো আছে। কোনো সমস্যা নেই।
৬ মে, আবার সেই নম্বর থেকে ফোন। বুঝলাম লোকটির খোঁজ চাইবে। ফোন ধরলাম না। বারবার ফোন। অবশেষে রিসিভ করলাম। হাউমাউ করে শুধু কান্না শুনলাম। ওনি কোথায়?
বললাম, জানি না। তবে আল্লাহ চাহে তো ভালো আছে। বিকালেই বাসাই ফিরবে ইনশাআল্লাহ। বিকালে ফোন। কী বলব বুঝতে পারছিলাম না।
রাতে ফোন। কান্না। এবার আমিও কাঁদলাম। মিছে কিছু শান্তনা দিলাম। সেই শান্তনা আজও দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে অনেকবার নাম্বার পরিবর্তন করেছি। তবে ভদ্র মহিলাটিকে ভুলতে পারিনি আজও। ওনাকে নতুন নাম্বার দিয়েছি। এখনও আমার ঐ অচেনা মা ফোন দেন। এখন আর বলেন না ওনার কোন খবর আছে? এখন বলেন 'বাবা তুমি ভাল আছো?'
মা-কে কী করে বুঝাই— আমি ভালো নেই।
৫ মের সেই সফেদ শুভ্র শহিদকে আজ খুব মনে পড়ছে। খুব...
ঘুমাও তুমি বীর। ওপাড়ের সুন্দর ভূবনে। আমরা জেগে আছি অতন্দ্র প্রহরী।
বেঁচে থাকলে অনাগত উত্তরপূরুষদের কোনো এক চাঁদ রাতে ছাদে ডেকে ৫ মের গল্প বলব। তাদের বলব, ঈমানদীপ্ত মানুষদের বীরত্বগাঁথা। একইসাথে বলব, বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরদের কথা; যাদের আহবানে শত প্রাণ আজ বিদায় নিয়েছে। বলব সেই আলিমদের কথা, যারা আজ শাপলার রক্তকে অস্বীকার করছে।
লেখকঃ নূর মোহাম্মদ। প্রকাশক, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স।
২
শাপলা ইস্যুত বিতর্কিত একজন কওমি নেতার পোস্টে দেখলাম :
//জাতীয় গণ তাওবা
প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনার খবর আসছে। এটা শুভ ইঙ্গিত নয়। ‘ফনি’ জাতীয় প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগ থেকে দেশ , জাতির হেফাজতের জন্যে পুরো জাতিকে নিয়ে তাওবা করার জন্যে সরকারীভাবে "জাতীয় গণ তাওবা " ঘোষণা দিলে পুরো জাতি উপকৃত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় ঈদগাহে এবং জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের তত্ত্বাবধানে জেলার বৃহত্তম ময়দান গুলোতে তাওবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।//
চিন্তা করছি, সরকারিভাবে আয়োজিত এই তাওবা অনুষ্ঠানে কিসের থেকে তাওবা করা হবে? নিশ্চয়ই জাহিলিয়াত থেকে। কথা হলো, কোন জাহিলিয়াত থেকে তাওবা করা হবে? এ যুগে সবচে বড় জাহিলিয়াত হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা এবং তাওহিদের ক্ষেত্রে স্পষ্ট শিরক করা। সাধারণ কবিরা গুনাহগুলোও অবশ্যই জাহিলিয়াত। কিন্তু বড় জাহিলিয়াতকে বাদ দিয়ে, এমনকি বড় জাহিলিয়াতের ধ্বজাধারীদের অনুগত থেকে, তাদের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বসে ছোট ছোট জাহিলিয়াত থেকে সারাদিন তাওবা করলে কি দুর্যোগ কেটে যাবে? মন্দিরে বসে মূর্তির সামনে সিজদাবনত হয়ে খুন, গুম, ধর্ষণ, সুদ-ঘুষ, মদ্যপান, চুরি আর অশ্লীলতার ব্যাপারে তাওবা করলে আদৌ কি তা কবুল হওয়ার প্রত্যাশা করা যায়?
এ জাতির কতক স্বঘোষিত কর্ণধারের হলোটা কী! যুগের হোবলকে তারা চেনে না। জাহিলিয়াত বুঝেও বোঝে না। তাদের অন্তর কি মোহরাচ্ছাদিত করে দেওয়া হয়েছে অবশেষে? তারা আরাকানে কিতাল করার জন্য মাননীয় (!) তাগুতের অনুমতি চেয়ে বেড়ায় মাহফিলে মাহফিলে, ফেসবুকের পোস্টে পোস্টে। হাজারো-লাখো যুবকের নজরানা পেশ করে বসে সুধারণার ভিত্তিতে। অবশেষে অনুমতি না পেয়ে আবারও চুপসে যায়। হ্যাঁ, এসব কিছুই আজকাল মানুষ খায়। তাই তারাও এসবই খাওয়ায়। দিনশেষে মার্কেট ধরে রাখতে পারাই মূলকথা। তাই তাগুত ও জাহিলিয়াতের সঙ্গে একটু-আধটু আপসকামী না হলে কি আর চলে!
লেখকঃ আলি হাসান উসামা। অনুবাদক, আলিম।
৩
৫ মের কথা মনে পড়লে সেই বিভীষিকাময় ভিডিওটার দৃশ্য আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। মাদ্রাসার ছাত্রটি গুলি খেয়ে জোরে কাঁপতে কাঁপতে মারা যাচ্ছে।
আল্লাহ সেইসব জালিমদের এই দুনিয়াতে এবং আখিরাতে লাঞ্ছিত করুন যারা ওই ঘটনার সাথে জড়িত এবং জেনেও সমর্থন করেছে, মিথ্যাচার করেছে। মিথ্যাচার করা লোকদের আল্লাহ যেন ঘুম কেড়ে নেন।
লেখকঃ এম মাহবুবুর রহমান।
৪
আজ সেই মহান ৫ মে যেদিন আমি শাহবাগী চেতনা থেকে শাপলা চত্বরের চেতনায় শিফট করেছিলাম। ছোটবেলা থেকেই গুলিয়ে খাওয়ানো কথিত জাতীয়তাবাদী চেতনার নামে সূক্ষ্মভাবে ঢুকে গিয়েছিলো মোল্লা বিদ্বেষ। গালভর্তি দাড়ি থাকলেও হলুদ মিডিয়ার প্রচারে বারবার বিভ্রান্ত হচ্ছিলাম!
চেতনা বিক্রেতারা নিজেদের ধর্ম বিদ্বেষী মনোভাব লুকাতে কালামে পাক তিলাওয়াত করে আমাকে আরো বিভ্রান্ত করে। মনে মনে ভাবি, আরে এরাই তো ঠিইইইইইইক। হঠাৎ নারীপুরুষের এই মহা মিলনমেলার মঞ্চে হাজির শাইখুল শাহবাগ, জাতিসংঘের পীর শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম। আমার চেতনার বক্সে যুক্ত হয় আরো অনেক মোডারেট ইসলামী সেকুলাংগার চিন্তাধারা।
দিন আসে রাত যায়, শাহবাগীদের পক্ষের সকল পেইজ থেকে সকল নিউজ শেয়ার দিতে থাকি। কারণ চেতনা আমার চোখকে অন্ধ করে দিয়েছে। আর তখনও এত ভালো ফেসবুক চালানো বুঝিনা। বাংলিশে লিখতাম, প্রতি লাইনে ১০/১২ টা ভুল।
থাবা বাবার পোস্টগুলো যদিও আমাকে কিছুটা চিন্তায় ফেলে দেয়। এরপর আস্তে আস্তে শাহবাগ মঞ্চের একেকজন অভিনেতার মুখোশ উন্মোচিত হতে থাকে।
এরপর আসে ৫ই মে। সেদিন দাড়ি টুপিওয়ালা হুজুরদেরকে নেড়ি কুত্তারা ধেয়ে আসছে বলে একটা শাহবাগী পেইজ থেকে পোস্ট দেয়া হয়। আমার চোখ খুলতেও দেরি হয়না। আমি কিছুক্ষণ ভাবি, অনুভব করি। আমার মুখেও দাড়ি আছে, টুপি পড়ি। আচ্ছা ওরা কি তবে সূক্ষ্মভাবে নাস্তিকতার বিস্তার ঘটাচ্ছে?
আল্লাহ পাক চোখ খুলে দেন। সকল শাহবাগী পেইজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেই। সারাদিন উৎকণ্ঠার সাথে নিউজ দেখতে থাকি। অচেনা এক মানুষ আল্লামা শফি সাহেবকে ভালো লেগে যায়। ১৩ দফাকেও আপন বলে মনে হচ্ছিলো প্রথম থেকেই। দিনের সূর্য্য ডুবে রাত আসে। নেমে আসে এক বিভীষিকাময় কালো রাত্রী।
অপপ্রচারের পরও থেমে থাকেনা সত্য প্রচার। বিভিন্ন মাধ্যমে ভেসে আসতে থাকে নির্যাতনের সেই দৃশ্যগুলো। বন্ধ করে দেয়া হয় দিগন্ত টিভি। তবুও রয়ে যায় কত শত ভিডিও ফুটেজ।
আজও মনে পড়ে নির্যাতিত এক লৌহমানব জুনায়েদ বাবুনগরী (হাফি) এর কথা। যিনি শুধু মুখের হুংকার করেননি, মঞ্চে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। তার অসুস্থ শরীরে পুলিশি হেফাজতে থানায় হাজিরা দেয়ার দৃশ্যগুলো আজও চোখে ভেসে আসে।
জানিনা আজ কাদের হাতে রং মেখে শুয়ে থাকা নির্যাতিত শহীদদের রক্ত বিক্রি হচ্ছে। রঙ মেখে শুয়ে থাকা নবী প্রেমিকরা, তোমাদের রক্ত বৃথা যায়নি। তোমাদের রক্ত আমার মতো অনেকের কঠিন হৃদয়ে সাড়া ফেলেছিলো। সেই সাথে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো কুখ্যাত সেই নাস্তিকদের আড্ডাখানা। আল্লাহ পাক তোমাদের জান্নাতের জন্য কবুল করে নিন। আমিন।
লেখকঃ ইসমাইল হুসাইন। কর্ণধার, মাবিঈ শপ।
৫
শাপলাকথা
--------------
শাপলা নিয়ে লিখতেই হবে—এমন না। তবু লিখতে হয়। তবু লেখা হয়ে যায়। শাপলার মে বইতে থাকবে যতোদিন এ লেখার ধারাও চলবে ততোদিন। এ দিনটিকে নিয়ে যারা রসিকতা করে, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে মেতে ওঠে, ‘বেশ হয়েছে’ বলে, ‘আচ্ছা জব্দ’ বলে, তাদের বিরুদ্ধে নীরব থাকার কোনো অর্থ হয় না।
এই যে সেদিনের রক্ত—তা আসলে শাশ্বত তাজা চেতনার লাল প্রকাশ। এর কোনো মৃত্যু নেই। কেউ এর মৃত্যু ঘটাতে চাইলে এই চেতনার বারুদে সে জ্বলে যেতে পারে। ভস্ম হয়ে নেই হয়ে যেতে পারে। কেননা, সত্য চেতনার তেজ খুব মিথ্যা-বিধ্বংসী।
এর আগের লেখায় আমি একটি ছবি দিয়েছিলাম। ছবি নিয়ে কথা বলেছিলাম। এখন কোনো ছবি দিতে ইচ্ছে করছে না। শাপলার ছবি একটি নয়। অনেক। এই চেতনার যতো ভাঁজ আছে, সব ভাঁজে লুকোনো আছে সেই সব ছবি।
শোনা যায়—শাপলায় নাকি অনেক গাদ্দার ছিলো। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। ওয়াফাদারির ইতিহাস রচনার সময় গাদ্দারির কথা কিংবা তার কালো অধ্যায় সামনে চলে এলেও শাপলার ইতিহাসে গাদ্দারি খুব বেমানান।
আজ হতে অ নে ক দিন পরে শাপলায় আমরা কিংবা এই চেতনার ধারকেরা আবার জড়ো হবে। হয়তো রাতেও অবস্থান করবে। হাতে সুন্নতি লাঠি আর মুখে যিকির নিয়ে নির্ঘুম রজনী পার করবে। ফজরের আগে একটু ঝিমুনিও হয়তো আসবে। কিংবা ঘুমও চলে আসতে পারে। কিন্তু সেদিনের ঘুম ভাঙবে না—সাউন্ডগ্রেনেডের অথবা ভয়ঙ্কর আগ্নেয়াস্ত্রের বিকট শব্দে! ভাঙবে শুধু আজানের মিষ্টি সুরে! ধন্য তারা, সেই ভোর আনবে যারা!
লেখকঃ ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী। অনুবাদক, লেখক, আলিম।
৬
আচ্ছা বদর এর বিজয়কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কী নির্দিষ্ট তারিখে উদযাপন করেছেন। সেই দিন কী বিজয় দিবস হিসেবে পালন করেছেন । কিংবা উহুদের পরাজয়কে? উহুদের পরাজয়ের তারিখ কতো বলুন তো ? আমাদের কী উহুদের পরাজয়ের দিনটি মাতম করার কোন নিয়ম আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল(সাঃ) চালু করেছেন?(জানাবেন যদি আমি ভুল জেনে থাকি)
যদি না করে থাকেন । তাহলে কুফফার দের মতো আমরা কেনো প্রতি পাঁচই মে তে মাতম করি? নিয়ম করে দুঃখ প্রকাশ করি?
৫ ই মে তে নিয়ম করে স্মৃতি চারণ এবং দুঃখ প্রকাশ করাটাও পরাজিত মুসলমানের অসহায় ভাবে প্রতি পদে পদে ইয়াহুদি , নাসারা, মুশরিক, কুফফার দের অন্ধ অনুস্মরণ করারই প্রমাণ বহন করে। আমরা ৫ই মে শাপলা চত্বর কে না ভোলার মানে প্রতি বছর ঐ নির্দিষ্ট দিনে মাতম করা নয় । কিংবা শোক সভার আয়োজন করা নয়। বরং ৫ই মে শাপলা চত্বর কে না ভোলার অর্থ হলো , কেন তা হয়েছিলো , কিভাবে হয়েছিলো সেই ইতিহাস ভুলে না যাওয়া । এবং সেই রাত থেকে অনুপ্রেরণা নেয়া। সামনে এগিয়ে যাওয়া ।
আমরা মুসলিমরা এতোটাই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস এ ভুগছি যে আমরা ইসলামিক ইভেন্ট গুলোকেও কুফফার দের মতো করেই পালন করতে চাচ্ছি । আল্লাহ আমাদের এর থেকে হিফাজত করুক এবং সঠিক বুঝ দেক। আমিন...
লেখকঃ আলি আব্দুল্লাহ। ইউটিউবার, মুসলিমাইজেশন টিভি।
৭
6 মে একটি কালো রাত!
________________________
5 মে 2013। মুখে কিছু না দিয়েই সকালে বের হয়ে যাই৷ রাতে ঘুম হয় নি ঠিকমতো। দিনভর এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করা৷ পানি আর শুকনো খাবার নির্ভর দিন৷ আছর পড়লাম মতিঝিল এক ব্যাংকের নামাজের স্থানে। আল আমিন ভাই এখানে তারাবীহ পড়তান। সেই সুবাদে ব্যাংকে গিয়ে নামাজ পড়ে কিছু সময় বসেছিলাম৷ সেখানেও শুকনো খাবারের মেহমানদারি ছিলো।
নামাজ শেষে বের হওয়া মাত্রই আশপাশের লোকজন সতর্ক করলেন সাবধানে যেতে৷ বাইতুল মুকাররমে ইতিমধ্যে কয়েকজন শহীদ হয়েছেন। স্টেজ থেকেও শহীদ ভাইদের সংবাদ আসছিলো। আমি মাহমুদ ভাই (Jahanfahsion) ও আল আমিন ভাই (Arman Saber) ধীরে ধীরে শাপলা চত্বরের দিকে আসলাম৷
মোবাইলে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক ছিলো না। অনেকে ম্যাসেজ দিচ্ছেন বাড়ীর লোকজন টেলিভিশনের লাইভ দেখে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। একটুআধটু কথায় হয়েছে কয়েকজনের সাথে। সবাই ফিরে যেতে বলছিলেন। এখন আলাদা হয়ে ফিরে যাওয়াটা নিরাপদ হবে না মনে করে আমরা তিনজন সিদ্ধান্ত নিলাম না যাওয়ার। গেলল সবার সাথেই যাবো।
মাগরিবের পর বিদ্যুৎতিক লাইন বন্ধ করে দেয়া হলো। রাস্তায় গোলাগুলির শব্দ হচ্ছিলো বারবার। সেইসাথে হৈচৈ। ভয় ও আতঙ্কের মাঝেই আল্লাহমুখী ছিলাম৷ তিনি খায়েরের ফায়সালা করবেন। রাত যতো ঘন হচ্ছিল মাইকের আওয়াজে ততো গাঢ় হচ্ছিলো। বিদঘুটে অন্ধকারে হিংস্রতার ভয় তো ছিলোই!
রাত একটা পর্যন্ত বয়ান শোনা এবং নামাজে কাটলো। সারাদিন পানি আর হালকা শুকনো খাবার ছাড়া কিছুই পেটে পড়ে নি। হেঁটে এসেছি নারায়নগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। ক্ষুধার্ত ছিলাম তিনজন৷ সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিলো। ক্লান্ত বদনে খাবার তালাশ করতে লাগলাম৷ কলা রুটি ছাড়া কিছুই পাই নি।
খাবার খোঁজতে খোঁজতে রাত দুটা। ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি হামলা হবে। যেভাবে হোক সরিয়ে দিবে তাওহিদবাদীদের। এদিকে ক্লান্তিতে নিস্তেজ প্রায়। অনেককে দেখলাম পূর্বদিকে দ্রুত যাচ্ছেন। ভাবলাম কোথাও বিশ্রামের জায়গা হবে। তাদের সাথে আমরাও চললাম। গিয়ে দেখি একটু খোলা জায়গায় কিছু মানুষ খিচুড়ি খাচ্ছে। কোন লোক হয়তো এই সুন্দর আয়োজন করছেন৷ আমাদের আর খাওয়ার রুচি হলো না।
পাশেই একটা লম্বা টিনের ঘরে অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে৷ ঘরগুলো ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের। তারা সেখানে নানানরকম ভাঙ্গারী মালামাল রাখেন৷ সেখানে অনেক মানুষ জড়ো হচ্ছে। আমরা তিনজন গেলাম। যেহেতু তখন খুব বেশী বয়স ছিলো না। তাই সাথে থাকা দুই সহপাঠী খুব খেয়াল রাখতেন আমার প্রতি৷ হাত ধরে হাটতেন সবসময়।
টিনের ঘরের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা ঘরের সবগুলো দরজা খুলে দিলেন। প্রতি রুমে বিশ-ত্রিশজন লোকে ঠাসা। সাথে তাদের ভাঙ্গারী মালামাল ত আছেই। তারা সবরুমের লাইট বন্ধ করে দরজা তালা লাগিয়ে দিলেন৷ অন্ধকারে কিচ্ছু দেখা যায় না৷ ভয়ে মোবাইলের আলো জ্বালানি। চুপচাপ বসে আছি৷
আশপাশে বিভিন্ন রট এবং ভাঙ্গা জিনিসপাতি আছে এইটুকু অন্ধকারে উপলব্ধি হচ্ছিলো৷ এছাড়া কিছু বুঝতে পারি নি। মানুষ এবং মালামালে ঠাসা টিনের ঘর৷ অসহ্য গরম আর সারাদিনের ক্লান্তিতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাই না।
কিছুক্ষণ পড়েই ঘুম ভাঙ্গলো ভয়ঙ্কর সাউন্ড গ্রেনেড এবং গোলাগুলির শব্দে। ভয়ে কুঁকড়ে উঠছি। জীবনে এই প্রথম এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি৷ প্রতি আওয়াজে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো৷ পাশে রাস্তায় থাকায় ভাইদের কথা বারবার মনে হচ্ছিলো। কতো মানুষ মরবে সেই ভাবনা কাজ করছিলো। তারা কি করবেন! কোথায় যাবেন!
ইতিহাসের নৃশংস এই হত্যার মিছিল টানা দুই থেকে তিনঘণ্টা শুনতে থাকি৷ আবার ভয় হচ্ছিলো আমার যেখানে অবস্থান করছি এখানে এলে একসাথে কয়েকশো লোককে অন্ধকারে শহীদ করে ফেলতে পারবে। প্রতিটি গ্রেনেডের আওয়াজে কেঁপে উঠতাম৷ এভাবেই ফজরের সময় হলো। আওয়াজ কিছুটা কমলো।
মাঠে পরিস্থিতি এখনো জানি না আমরা৷ বের হই নি এখনো। বের হয়ে মূল পয়েন্টে যাওয়ার সাহস ও নাই৷ পাপিষ্ঠদের নৃশংসতায় পৃথিবী আলোকিত হতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে ভর থেকে বের হলাম। আমাদের ঘর এবং কমলাপুরের রাস্তার মাঝে ছোট্ট একটা পুকুর। কয়েক সেকেন্ডে পার হওয়া যায়৷ জনপ্রতি দশটাকা করে পারলাম৷
রাস্তায় এদিক-ওদিক তাকিয়ে হাঁটছি। যাত্রাবাড়ী গন্তব্য। হায়েনাদের চোঙরাঙ্গানি রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখলাম। কারো সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করতেও দেখলাম৷ নানারকম হতাশা এবং ভয়ে যাত্রাবাড়ীর এক মাদরাসায় আসি। এখানে মাহমুদ ভাই ইফতা পড়েন। ফ্রেশ হয়ে কিছু সময় বিশ্রাম নিলাম৷ মাদরাসায়।
আমাদের মাদরাসা বন্ধ। আল আমিন ভাই আর আমি একসাথে পড়ি। তিনি ইফতা পড়েন৷ আমি অন্য বিভাগে। বাড়ী যেতে চাচ্ছি। তারা দুজন কিছুতেই বাড়ী যেতে দিবে না৷ একাকী ছাড়তে নারাজ৷ বিকালবেলা আল আমিন ভাইয়ের বোন আসলেন তাঁর বাসায় নিয়ে যেতে। আক আমানি ভাই আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন৷ সেখানে দুদিন থেকে তারপর এক বিষাদ বিকালে বাড়ীর পথ ধরি।...
লেখকঃ আবু দারদা।
৮
আজ মে মাসের ৫ তারিখ। হেফাজতে ইসলামের অভ্যুত্থানের ৬ বছর। আমার কর্মস্থল, প্রিয় দিগন্ত টিভি স্টেশনও বন্ধ করে দেয়া হয় ৫ মে দিবাগত রাতেই। তাই এই দিনটিতে এলেই জাতীয় অনেক ঘটনা আর স্মৃতি যেমন মনে পড়ে, ঠিক তেমনি নিজের ব্যক্তিগত জীবনের নানা হিসেবও যেন মেলাতে শুরু করি এই দিনটিকে কেন্দ্র করেই।
নির্দিষ্ট কোন চাকুরী করিনা, নির্দিষ্ট কোন ইনকাম করিনা আজ ৬ বছর। এখনো নতুন কোন জায়গায় গেলে, যে প্রশ্নটা শুনে সবচেয়ে বেশী বিব্রত হই সেটা হলো, আপনি কি করেন? ইদানিং দু একটা বই বাজারে আসার পর সেই রেফারেন্স একটু দেয়ার চেষ্টা করি। তাও প্রশ্ন শুনি, সেটাতো বুঝলাম, প্রোফেশনালী কি করেন? এরপর সত্যি সত্যিই লা-জওয়াব হয়ে যাই।
আমার চোখের সামনে এখনো সেই ভয়াবহ দিনগুলো ভাসে। আমি ট্রাইবুনালে ছিলাম। আব্বার কেসের তারিখ ছিল। বের হয়েছিলাম ৪ টার পর। হেটে হেটে অফিসে আসছি। সারা রাস্তায় গন্ডগোল, মানুষের চিৎকার, কাঁদানে গ্যাস, রক্ত, ভ্যানে করে করে ইসলাম পাগল আহত কিশোরগুলোকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য- যা আজও চোখে ভাসে।
আমাদের ইংরেজী বুলেটিনটা প্রচার হতো বিকাল ৫টা ১০ এ। বুলেটিন শেষ করেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। সন্ধার পর থেকে ফকিরাপুলে ডিউটি করেছি। রাত ১২ টার পর যখন অভিযান শুরু হয়, আমি তখন নটরডেমের সামনে। সে কি এক বিভীষিকাময় রাত। গুলি আর সাউন্ড গ্রেনেডের আক্রমনে অন্য সবার মত দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি। ফজর অবধি এক নির্মানাধীন বাড়িতে কাটানো রাত। আমি আর আমার প্রিয় এক বড় ভাই এডভোকেট হেলাল। সেখানে বসেই ফোনে জানতে পারলাম, আমাদের টিভিটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ফজরের পর ছেড়া প্যান্ট শার্ট, ধুলোয় মাখা শরীর নিয়ে অফিসে ফিরলাম। সারা রাতের ক্লান্তিতে বুঝতেই পারিনি যে, বেকার হয়ে গেলাম। কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছি নিজের অজান্তেই। দিন কয়েক যাওয়ার পর বুঝলাম, এক ৫ মে, কত সহস্র মানুষের জীবনকে আজীবনের জন্য পাল্টে দিয়েছে। যে অনিশ্চয়তায় ৫মে ২০১৩ সালে পড়েছিলাম, তা হুট করে কেটে যাওয়ার মত নয়। সে কারনেই হয়তো, এক দিন/দুদিন নয়, টানা ৬ বছর পাড়ি দিয়ে ফেললাম আল্লাহর রহমতে।
এর মাঝে অনেক রাজনীতি, আপোষ, সমঝোতা, বিপদের সময় সঠিক ভুমিকা রাখা, মুল ধারার রাজনীতিবীদদের ব্যর্থতা, অপপ্রচার, পোপ্রাগান্ডা কত কিছুই না দেখলাম।
তারপরও সবই হয়তো মেনে নিতাম, যদি সেই মজলুম মানুষগুলো, সেই আহত আর শহীদ মানুষগুলো ন্যায় বিচার পেতো। তাও হলোনা, বিচারের বানী আজও নিভৃতেই কাঁদে। একেবারেই নিরীহ, সেই কিশোর আর তরুনগুলোর কুরবানীকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নিন। আমিন।
লেখকঃ আলি আহমাদ মাবরুর। অনুবাদক।
৯
ঐ রাতে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা তো আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে ধন্য হয়েছেন। জীবন্ত এক সুখময় হায়াত লাভে ধন্য হয়েছেন। তাদের নিয়ে আফসোসের কিছু নাই।
আফসোস তো এই আমাদের জন্য যারা জিয়েও মরে আছি। শিক্ষা নিতে পারিনি যমানার পাঠ থেকে। আসলে প্রবাহমান ঘটনা যে পাঠ করে শিক্ষা নিতে হয়, সেই দীক্ষাই আমরা লাভ করিনি। রক্তের তাজা স্রোত সেরাতে চিৎকার করে হয়ত বলছিল, " আমাদের সঠিক পথে ব্যয় করো, যে পথে আমরা খোঁজে পাব ইসলাম নামক বৃক্ষের শিকড়। সিক্ত হবে আমাদের স্পর্শে সেই গাছ"। কিন্তু আমাদের অন্তর সেই ভাষা বুঝে উঠতে পারেনি।
সেরাতের শ্লোগানগুলো কানে ভাসে। " শহীদের রক্ত বৃথা, যেতে দিব না"। মুখরিত পরিবেশ, প্রকম্পিত আকাশ-বাতাস। কিন্তু সেই শপথ আজ অস্বীকৃতিতে রূপ নিয়েছে দরবারের আবর্জনায়। সেদিনের বৃষ্টি মুছে দিয়েছিল পবিত্র রক্তের বাহ্যিক আবরণ, হৃদয়ের দাগ ও কেটে গেল, ভুলে গেলাম সব। কিন্তু এর পিছনে কোন বৃষ্টির ভূমিকা সেটা জানি না, জানলেও বলতে পারি না। সেদিন যারা প্রভাত দেখিয়েছিল পরিষ্কার মহাসড়কে, তাদের মদদেই আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করছি এক নির্মল ইতিহাস। যেখানে ঝড়েনি কোন রক্ত,পড়েনি কোন ভাইয়ের লাশ। আর কিছু হলেও আমরা যে শান্তির হাওয়ায় ভাসি, গাই শান্তির গান।
তাই ঈর্ষা তাঁদের প্রতি , যারা সেই শপথকে নবায়ন করেছিল এই ভাষায়:
والله إننا لن نبكي بدموعنا بل نبكي بدمائنا
" আল্লাহর শপথ! আমরা চোখের অশ্রু ঝড়িয়ে কাঁদব না শুধু ; বরং তোমাদের জন্য রক্ত প্রবাহিত করব"
তাঁরা কারা জানেন? তাঁরা এই উম্মতের মুহাম্মাদ বিন মাসলামা, আব্দুল্লাহ বিন আতীক। নবীজির দোয়া তাঁদের জন্য। " সাফল্যে উদ্ভাসিত হোক তাঁদের জীবন"।
আমিন।
লেখকঃ ইফতেখার সিফাত।
১০
নাহনুল্লাযিনা বা'ইউ মুহাম্মাদান
আলাল জিহাদি মা বাকিনা আবাদান-
সেদিনও পাঁচ'ই মে'ই ছিল।
যেদিন আকাশে বাতাশে পাখিরা হুল্লোরে মেতেছিল।
সেদিন শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মতেরা,
জীবনের গান গেয়ে উঠেছিল একদল মাংসাশী হায়েনার মাঝে !
সেদিন হাতে হাত কাধে কাধ মিলিয়ে স্তব্ধ করে দিয়েছিল রাজপথ
একপাল উত্তাল তরঙ্গ সেদিন ক্ষণেক্ষণে আছড়ে পরছিল ।
সেদিন পাখিরা গাইছিল, কলিরা ফুটছিল, ঘাসেরা দুলছিল
নীলাকাশ বেয়ে উপচে পরছিল ফোটায় ফোটায় রহমত--ধারা।
আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম।
আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম।
ঘুমন্ত শার্দূল জেগে উঠো।
ঘুমন্ত শার্দূল জেগে উঠো।
ঘুমভাঙা পতঙ্গের মত আছড়ে পরেছিল আলোর খুঁজে, নবীর প্রেমে।
সাদা কালোর ভেদাভেদহীন একপাল সিংহ । বদরের সৈনিক।
পাখিদের কলকাকলি ইথারে ইথারে বেজেছিল সুরের মুর্ছনায়।
সাললাল্লাহু আলা মুহাম্মাদানিন নাবীয়্যিনা ,
সাললাল্লাহু আলা হাবিবিনা ।
হে আমার প্রাণের সখা, হে কাওছার অধিপতি, হে মদীনার সেরেতাজ ।
"তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক"।
পূবাকাশে উদিত হওয়া সূর্যি আস্তে আস্তে পশ্চিমাকাশে অস্তায়মান হলো।
ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়েও সেদিন রাজপথ ছেড়ে যায়নি মুহিব্বিনে রাসুলুল্লাহ।
শাপলার পাদদেশে সিজদায় নত হলো খোদাপ্রেমী ।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর জিকির থেমেথেমে শুনা যাচ্ছিল।
আজ আনন্দ শাপলার, সাদা পাপড়ি ফেটে বেরোচ্ছিল আলোকচ্ছটা।
দূরদূরান্ত থেকে আসা কেও কেও কালো পীচে মাথা রাখছিল।
আধোঘুম, আধো জাগরণে নির্মীলিত চক্ষুদ্বয়। ক্লান্ত শ্রান্ত পরিতৃপ্ত।
রাত্রি যত গভীরে তলাচ্ছিল তত এগিয়ে এসেছিল একপাল রক্তখেকু পিশাচ।
পরিশ্রান্ত শার্দূল বুঝতেই পারেনি কিভাবে কি হলো!
আলোহীন চারিপাশ, নিস্তব্ধ রাত্রি, নিকষ আধার, একপাল হায়েনা।
ধারালো নখর, তীক্ষ্ণ চঞ্চু, শক্ত ডানা, লাল খুনে চোখ।
তৃষ্ণার্ত, পরিশ্রান্ত, আধোঘুম আধো জাগরণ, সিজদাবনত পায়রা।
কেও রেহায় পায়নি।
তরুন হাফেজ সাহেব, যুবা আলেম, উদ্যমী ভার্সিটি পড়ুয়া।
সাদা দাড়ি বৃদ্ধও সেদিন লুটিয়ে পরেছিল রাজপথে।
বৃদ্ধ শরীরেও এতো রক্ত! এতো আগুন!
কালো পীচে ছোপছোপ লাল মানচিত্র এখনো বিজয়ের কথা বলে।
শাহাদাতের কথা বলে।
হে আমার হাবিব, তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক।
হে আমার হাবিব, আমার রক্তের প্রতিটা ফোঁটা কুরবান হোক।
নাহনুল্লাযিনা বা'ইউ মুহাম্মাদান....
নাহনুল্লাযিনা বা'ইউ মুহাম্মাদান ....
শাপলার আলোকচ্ছটা এখন আর আগের মত নেই !
একটু পানির অভাবে শাপলা আজ শুকোয়।
রক্তে শাপলা আর কতদিন বাঁচে !!!
লেখকঃ সাকিব মুস্তানসির
১১
স্মৃতির মতো শক্তিশালী কিছু নেই। নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, শাপলা চত্বরের ঘটনা না ঘটলে আমার মতো অনেকের জীবন অন্যরকম হতে পারতো। আপাতদৃষ্টিতে শাপলা চত্বরে কোন সমাধান না এলেও এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল 'অরাজনৈতিক' গণআন্দোলন। একশো বছরে এমন ঘটনা হাতেগোনা কয়েকবারই হতে পারে।
শাপলা চত্বরের সাংস্কৃতিক প্রভাব এখনো অত্যন্ত ব্যাপক। একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে প্রধানত সংস্কৃতির মাধ্যমে। গল্প ও স্মৃতির মাধ্যমে। স্মৃতি অবলম্বন খুঁজে। তাই তার জন্য লাগবে চিহ্ন ও কাঠামো। এগুলো চাপিয়ে দেওয়ার কিছু নয়। আমাদের সম্মিলিত সচেতনতায় এই চিহ্ন ও কাঠামো ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে।
লেখকঃ ইফতেখার জামিল
১২
বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫ই মে অবিস্মরণীয় একটা দিন। এটা যারা সংগঠিত করেছিলেন তারা সাহস ও সংগ্রামের অগ্নিপুরুষ। যারা জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন, আহত হয়ে গাজী হয়েছেন, অবর্ণনীয় জেল জুলুম নির্যাতন সয়েছেন, যারা ৫ই মে’র চেতনা বুকে পুষে অনাগত সূর্যোদয়ের প্রহর গুনছেন- আজকের এই দিনে তাঁদের সবার প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম।
লেখকঃ মজিবুর রহমান মঞ্জু।
১৩
১.
তোমরা জ্বেলেছ
আলো, আঁধার কাটবে তো?
মৃদু সান্ত্বনা!
২.
রাস্তায় মরেছে
যারা, ওসব কথা তো
ওরা জানতো না!
৩.
রাতের আঁধারে
কারা শুয়েছিল; গায়
মেখেছিল রঙ?
৪.
হুঁশিয়ার থেকো
আর জেনো- ওরা ছিলো
ধর্মান্ধ সব সঙ!
#ম্রিয়মাণ_কাল
(আজ সেই ৫ই মে!)
লেখকঃ মাহমুদ সিদ্দিকি। https://www.facebook.com/pidimrahman
১৪
শাপলার রক্তের দাগে যে কথাগুলো প্রাসঙ্গিক
মৌলিক যে দাবী সামনে রেখে হেফাজতকে মাঠে আসতে হয়েছিল, ফ্যাকচুয়ালি সে দাবীর কিছুই এখনো পূরণ হয়নি। এবং ৫ই মে তারই সাথে যোগ হয়েছিল শাপলায় রক্ত ঝরানোর অপরাধ।
তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, হেফাজতের এই নীরবতা সমাজ ও রাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ইসলামকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবার জোরদার আবেদন তৈরী করতে সক্ষম হয়ছিল। এটাকে হেফাজতের সফলতাই বলতে হবে।
বিচারহীনভাবে বেচে থাকার ফলে একটা প্রশ্ন এখনো অনেককে শুনতে হয়। শাপলা চত্বরে যদি কোন রক্ত ঝরেই থাকে তাহলে তালিকা কোথায়? যারা মানবাধিকার সংস্থা "অধিকার" সম্পর্কে খোজ খবর রাখেন তাদের কাছে এই প্রশ্নের বেশ বাস্তবমুখী জবাব থাকবে। কারণ অধিকার গত বছর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, হেফাজতের শহিদদের তালিকা প্রকাশের পর থেকে রাষ্ট্র কিভাবে তাদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিয়েছে।
এসব কিছু বিবেচনায় রেখে ভাবলে বিচার চাওয়ার পরিবর্তে হেফাজত কৌশলগত অবস্থান বেছে নেওয়াকে যৌক্তিক বলা যায়। তাছাড়া একদম চুপচাপ না থেকে হেফাজত তো সেকুলারিজমের নামে এন্টি ইসলামিজমকে দমনে মাঠে সক্রিয়ই ছিল। থেমিস দেবীর মুর্তি, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাস পুনর্বহালের আন্দোলনগুলোতে সে সক্রিয়তার সফলতা কিছুটা হলেও দেখা গেছে।
কিন্তু এর কিছুদিন পর প্রশ্নটা তৈরী হতে থাকে ভিন্নভাবে। রাজনৈতিক শক্তির সাথে সামাজিক বা অরাজনৈতিক শক্তির নেগোশিয়েশনের মোরাল এথিক্স মেইনটেইন করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। প্রশ্নটা হচ্ছে, রাজনৈতিক শক্তির সাথে নেগোশিয়েট করতে গিয়ে একক শক্তি হিসেবে হেফাজত নিজেকে কতটুকু উপস্থাপন করতে পেরেছে? আরো খোলাসা করে বললে,
যেহেতু হেফাজতের ভেতরে থাকা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ধারার ভিন্নতা আছে তাই সে ভিন্নতার সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক শক্তির ডিভাইডেড এন্ড রুল নীতি গ্রহণ করার বিপরীতে হেফাজত বা অরাজনৈতিক ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে কতটুকু পরিকল্পিত পদক্ষেপে সামনে এগোতে সক্ষম হচ্ছে?
এইসব প্রশ্ন করার অধিকার অবশ্যই সে সকল তৌহিদী জনতার আছে যারা হেফাজতের এক ডাকে সে সময় ইসলাম বিদ্বেষীদের বিচারের দাবীতে মাঠে নেমে এসেছিল।
আসলে রেটোরিক চর্চাটা আমাদের উপমহাদেশের রাজনীতিতে একটু বেশিই হয় বলতে হবে৷ যার ফলে আবেগী বক্তব্যে পার পাওয়ার বেশ সুযোগ থাকে৷ এ কারণেই ইসলামী শক্তিকে দমনকারীরাই আবার যখন ইসলামপন্থীদের খুশি করে দুইটা কথা বলে তখন তাদেরকে সাচ্চা নবীপ্রেমী বানিয়ে দেওয়া হয়৷
আর এদিকে দিন শেষে দিবস কেন্দ্রিক পাচই মের শহিদদের স্মরণ করাটাই আমাদের একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এই স্মরণকে আমি গুরুত্বহীন বলছিনা। তবে এটাই একমাত্র কাজ নয়। হেফাজতের মত একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠনের চিন্তাধারা সামাজিকভাবে ধর্ম চর্চায় কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো, এর প্রভাবে ইসলামবিরোধী শক্তি কেন এত শংকিত, এসব গবেষণার দায়িত্ব এদেশের ধর্মীয়গুরু থেকে শুরু করে প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের।
মনে রাখতে হবে, অফিশিয়ালি যেভাবে হেফাজতের শহিদদের রক্তকে অস্বীকার করার আয়োজন হয়েছিল তেমনিভাবে রক্তের দাগের প্রমাণটাও অফিশিয়ালি বাকি রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সেই "মাহফিল" আয়োজনের পর বিবৃতি ও বেশ কিছু মাহফিলে হেফাজতের শহিদদের রক্তমাখা শাপলা চত্বরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তৌহিদী জনতাকে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধকে বৈধতা দেয়। আর আমরা তো আজ ভুলতে বসেছি আমাদের বিচার চাওয়ার মত কোন ঘটনাও কোনদিন ঘটেছিল। সব ভুলে যেতে পারলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও একদিন রক্তের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। বামপন্থী মিডিয়ার আলাপ আলোচনায় প্রভাবিত হয়ে "হেফাজতের তান্ডব" থিউরিতে অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে বসবে। সেদিন হয়তো খুব বেশি দেরী হয়ে যাবে।
লেখকঃ আশরাফ মাহদি।
১৫
কারবালা হতে পলাশী পেরিয়ে
শাপলার পাদদেশে
বহু রক্তের সাগর মাড়িয়ে
আমরা পড়েছি এসে
আমরা এসেছি রাতের আঁধারে
পায়ে পিষে সব বাঁধা
আমাদের আনা ভোরের আলোয়
শাপলা হয়েছে সাদা
আমাদের স্রোতে ওঠে রাজপথে
তরঙ্গ উত্তাল
আমাদের তাজা রক্ত হোলিতে
শাপলা হয়েছে লাল
আমরা ভুলিনি সীমারের চোখ
মীর জাফরের হাসি
শত আঁধারের বুক চিরে তাই
বারে বারে ফিরে আসি
কতো তলোয়ার, ছুঁড়ি, খঞ্জর
কতো বন্দুক, গুলি
আমাদের করে এফোঁড় ওফোঁড়
তবুও আওয়াজ তুলি
তবুও জাগাই বজ্রমুষ্ঠি
মুক্ত আকাশ ছুঁয়ে
তবুও দাঁড়াই, কদম বাড়াই
কাদা-মাটি-খুন ধুয়ে
আমরা কখনও হারিয়ে যাবো না
অচিরেই উঁচু শিরে
লক্ষ হাজার শাপলা সেনানী
আসবো আবার ফিরে ।।
লেখকঃ মুহিব খান।
১৬
৫ই মে , ভুলি নাই, ভুলবও না। আল্লাহ্ যেন প্রতিটি রক্তকণা ও গোলাবারুদের উত্তম প্রতিদান দেন। আমিন । - আল নাহিয়ান খান জিশান।
১৭
শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডির ৬ বছর।
সেদিন শাহাদাৎ বরণ করা ৬১ মুমিনের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
শাপলা চত্বরের ব্যর্থ বিপ্লব আমাদের কি দিয়েছে? কেড়ে নিয়েছে ৬১ প্রাণ, আহত করেছে বহু, আর কোটি মুমিনের হৃদয়ে হয়েছে রক্ত ক্ষরণ। ইসলামপন্থী দুইটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আলিমদের আদালত চত্বরে ঘুরিয়েছে। তলিবুল ইলমদের কানে ধরিয়েছে। কিন্তু দিয়েছেও অনেক কিছু, ১৩ পরবর্তী ইসলামী জাগরণের পেছনে শাপলা ট্র্যাজেডির ভুমিকা অস্বীকার করার মত না। এই ইসলামী জাগরণ শাহবাগিদের প্রোপ্যাগান্ডা বুমেরাং করেছে। টেবিল উল্টে দিয়েছে, চেতনাবাজদের চেতনাবাজী ব্যর্থ করেছে।
সবসময়ই রক্তের একটা দাম থাকে। ৬১ শহিদের রক্ত আমাদের যা দিয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকি। কারণ আমরা নৃতাত্ত্বিকভাবে (বাঙালী) ভীতু জাতি। ৫ মে তে যে সাহস করেছিলাম এটাই আমাদের জন্য অনেক বেশি। এরপরে যখন আরও বেশি রক্ত দিব, সফলতাও সেই অনুপাতেই আসবে ইনশাআল্লাহ।
.
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহ শাপলা স্মরণে একটি বিবৃতি দিয়েছে, একটি জাতীয় পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছে। হুবহু তুলে ধরছি।
.
শাপলা চত্বরের আক্রমণ ইতিহাসের নতুন কারবালা: আল্লামা বাবুনগরী
আবু তালেব, হাটহাজারী থেকে ০৪ মে ২০১৯, ২০:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ
আল্লাহ ও রাসূল এবং পবিত্র কোরআন-হাদিসের অবমাননাকারীদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর ট্রাজেডির ৬ বছর পূর্ণ হবে রোববার।
শাপলা চত্বরের ওই ঘটনায় শহীদ ও আহতদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা।
শনিবার সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, কতিপয় নাস্তিক-ব্লগার, আল্লাহ ও রাসূল, পবিত্র কুরআন-হাদিস অবমাননাসহ ইসলাম, মুসলমান এবং আলেম-ওলামাদের হেয়প্রতিপন্ন করার হীন চেষ্টা চালিয়েছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার অপতৎপরতা চালিয়েছিল, তখনই এদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম শান্তিপূর্ণভাবে রাজধানী ঢাকা অবরোধ করেছিল।
যা বাংলাদেশের হক্কানী ওলামা-পীর-মাশায়েখ, আশেকে রাসূল (সা.) ও দেশপ্রেমিক ঈমানদার জনতার জন্য রক্তঝরা এক ঐতিহাসিক দিন। কেননা ওইদিনের ট্রাজেডি মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত মর্মান্তুদ ও বেদনাদায়ক।
হেফাজতে ইসলামের দেয়া বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সারা দিন অবরোধে অবস্থান নেয়া হেফাজত কর্মীরা যখন ক্ষুধা, পিপাসায় ক্লান্ত শরীরে হাহাকার তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের জন্য সরবরাহকৃত খাবার ও পানির গাড়ি বন্ধ করে দেয়। সন্ধ্যা থেকেই রাস্তার লাইট বন্ধ করে। মতিঝিলের আশপাশের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে বিটঘুটে অন্ধকার তৈরি করে নিরস্ত্র ঈমানদার নবীজী (সা.) এর সৈনিকদের ওপর ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
যুগান্তর পত্রিকার রিপোর্ট মতে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, পিপার গান, বৃষ্টির মতো সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়েছে পুলিশ-র্যাব-বিজিবির যৌথ বাহিনী নিরীহ, নিরাপরাধ, তাহাজ্জুদ গুজার, জিকিররত আলেম হাফেজ ও আশেকে রাসূলদের ওপর। ’
এই নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতার চাইতেও ভয়াবহ দাবি করে বাবুনগরী আরও বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যা চালিয়ে যৌথবাহিনী ইতিহাসে এক নতুন কারবালা সৃষ্টি করেছে। তাদের জানা দরকার, হেফাজত কাফেলার মাতৃভূমি কিন্তু বাংলাদেশ। তারা এদেশের নাগরিক, আইন বিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে তারা জড়িত নয়, কোন দাগী আসামিও নয়, আলেমরা শান্তিপ্রিয়, সমাজে তারা মর্যাদাশালী। এরা কোন অন্যায় করে না। আলেম-ওলামাদের সঙ্গে জুলুমের পরিণতি খুব ভয়াবহ।
২০১৩ সালে ৫ই মে ঢাকার শাপলা চত্বরে যারা রক্ত দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, তারা কেবল মহান আল্লাহ ও প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সা. এর ভালবাসা নিয়ে ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এমনটা জানিয়ে হেফাজত নেতারা বলেন, শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।
হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ দফা দাবি নিয়ে সেদিন ময়দানে নেমেছিল সে দাবি আজও পূরণ হয়নি। বরং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে ঈমানি আন্দোলন বন্ধ করার নানা চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে।
১৮
"শাপলা"। শাপলা বললে বর্ষা মৌসুমে গ্রাম বাংলার বিলপাথারে পানির উপর দুলতে থাকা ফুলটার কথা মনে পড়তো। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। কিন্তু দুই হাজার তেরো সালের ছয় মের পর থেকে শাপলা শুনলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা চত্বর। ছোপ ছোপ রক্তে ভেজা এক ট্রাজিক চত্বর। যেখানে রচিত হয়েছিলো খুনরাঙা ঈমানের ইতিহাস। শাপলা এখন অার শুধু বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের নাম নয়। ঈমানী চেতনার প্রতীকি শব্দ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্মূখে চেতনার পিদিম। এই চেতনাই হবে ইনশাঅাল্লাহ অাগামীর বাংলার বাংলাদেশ। - মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ।
১৯
কালকে ৫-ই মে। যদিও সেদিন আমি এবং অবেক্ষমাণ প্রুফ রিডার ভাই দুজন মিলে শাপলাচত্বর গিয়েছিলাম। কিন্তু সেসব আর এখন নিজেকেই বিশ্বাস করাতে পারিনা। মনে হয় ওটা একটা পরাবাস্তব স্বপ্ন ছিল মাত্র।.
.
সেদিন আমরা কেউ যাই নি,সেদিন কোথাও কিছু হয় নি। এটাই ধ্রুবসত্য।
লেখকঃ মাঞ্জুরুল করিম
২০
আমি ৫ ই এপ্রিলের মতো শাপলা চত্বরে যেতে পারিনাই। কেননা সকাল থেকে যাত্রাবাড়ী সায়েদাবাদ তারপর পায়ে হেটে সাইনবোর্ড এবং আবার যাত্রাবাড়ী ফিরে এসে পা ব্যাথায় বাসায় ঢুকি। পড়ে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে।সকালে হেলিকপ্টার আকাশে উড়ছিলো। মনে হচ্ছে জালিমগনের প্লান আগে থেকেই ছিলো।
- আবু হাফসা মোহসিন কামাল।
২১
মুমিনের পায়ে কাঁটা বিধলেও যদি নেকি মিলে তাহলে সেইদিনের জন্য মিলবে না বুঝি ? আর প্রকৃতপক্ষে ফসল ঘরে তোলার দিন তো সেদিন, যেদিন রাব্বে কারীম বলবেন, কী করেছিলে সেদিন?
-
তখন উত্তর দেব, হে মাওলায়ে পাক প্রাপ্য তো আপনার কাছ থেকে নিব তবে সেদিন ছিলাম। সেদিনের চেতনা ছিলো যতদিন বেঁচে ছিলাম।
-
রাব্বে কারীম যেখানে আশা দিতে ভালোবাসেন মুমিন হতাশাগ্রস্ত হবে কেনো ??
লেখকঃ আব্দুল হাই।
২২
এটাই মিডিয়ার কারসাজি!!! মিডিয়া ২৫ শে মার্চের কালো রাতকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যেন সেটা সেদিনের ঘটনা, আমাদের সবার চোখের সামনেই সেট ঘটেছিল,সেটা ধ্রুব সত্য। সেদিন রাস্তার সকল আলো বন্ধ ছিল মানুষের চলাচলের উপর কার্ফু ছিল। আর ৫ই মে গনহত্যার ব্যাপারে মিডিয়া এমন নীরবতা বা বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করে যে আমাদের সকলের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ড কে মনে হয় এক অলীক স্বপ্ন, যেন বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনোই এই ঘটনা ঘটে নাই। সেদিনও ঢাকার একটা অংশের রাস্তার সকল আলো বন্ধ ছিল। যালিম পাকিস্তানি হোক কিংবা বাংলাদেশী, যালিম যালিমই। আমরা সর্বশক্তিমানের কাছে এই দোয়াই করি যালিম যেন দুনিয়া এবং আখিরাতে তার উপযুক্ত শাস্তি পায়।
- মমিনুল ইসলাম।
২৩
৫ মে দিবাগত-রাত।
একটি ইতিহাসের জন্ম! একটি আন্দোলনের উত্থান।
একটি কালো অধ্যায়!
- আব্দুল্লাহ আল রোমান
২৪
আজ ৫ই মে।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল সাদা শাপলা মজলুমের রক্তে লাল হয়ে যাবার দিন আজ।
নিরস্ত্র মানুষের ওপর বিশাল সশস্ত্র বাহিনীর গুলি যে ফুলের রক্তাক্ত উদয় রুদ্ধ করতে পারে নি তার মাথায় টুপি পরিয়ে দাও কি গোপনে কবর দাও কুঁড়ি শুকাবে না। এই এক রক্তশাপলা যার আর মৃত্যুর সম্ভাবনা নাই। তার ভূগোল মোমিনের অন্তর, ষোল কোটি পাপড়ি লক্ষ কোটি শাপলা হয়ে ফুটবেই।
কসম এই রক্তকুসুমের, এই ফুল ফুটবে রানা প্লাজায়, ফুটবে পোশাক কারখানার মেয়েদের খোঁপায়, তাদের প্রতিটি আঙুলের ডগায়। সেই সকল আঙুলে পুড়ে মরা ও জ্যান্ত কবর হয়ে যাওয়া প্রতিটি কিশোর কিশোরি বোন ও ভাইয়ের লাশের সংখ্যা গোনা। নামগুলো সেলাই করা হৃদপিণ্ডে। সুঁইয়ে ও সুতায়।
আঙুলগুলো হিসাব নেবে শাপলা চত্বরের লাশেরও। কারণ অন্য ভাইয়েরা গ্রাম থেকে শহরে এসে আর ফেরে নি। যে অভাবে বোন শহরের কারখানায় সেই একই অভাবে ভাইটি মাদ্রাসায়।
পুড়ে মরা, জ্যান্ত কবর হওয়া ও গুলি খেয়ে মরা নিখোঁজ লাশ সকল দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের আদালতে। তারা ইনসাফ চাইছে।
কসম উদ্ভিদ, মাটি ও কাদাপানির, এই ফুল ফুটবে কৃষকের জমিতে কারন তাদের তাড়াতে হবে মনসান্টো ও মাহিকো সহ সকল বীজ কম্পানিগুলোকে। দখল নিতে হবে নিজ ভূখণ্ডের। কৃষকের বীজ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বীজের ডাকাত, বহুজাতিক পাইরেটস; আল্লার দান জমিনকে তারা বিষাক্ত করছে বিষে ও বিকৃত বীজে। গ্রামের কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে যারা মায়ের কোল খালি করে কিশোরি মেয়েদের ঘর থেকে টেনে শহরের কারখানায় কারখানায় দাসশ্রমিক হতে বাধ্য করেছে, সেই সহিংসতা ও সন্ত্রাসের শুরু কৃষিতে। সেী রক্তাক্ত ইতিহাস আমাদের জানা আছে।
কসম আগুন ও শক্তির, এই ফুল ফুটবে নোনা দরিয়ায় বঙ্গোপসাগরে। কনকো ফিলিপস সহ বহুজাতিক কম্পানিগুলোর হাত থেকে তেলগ্যাস ব্লকগুলো উদ্ধার করবার লড়াইয়ে ময়দানে ফুটে থাকবে এই ফুল।
কসম মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও সকল এবাদতখানার। একদিন ফুল ফুটবে মোমিনের এবাদতে, ভক্তের উপাসনায়, ক্রুশ বিদ্ধ ঈসা আলাইহে ওয়া সাল্লামের পেরেকবিদ্ধ পদযুগলে। মানুষের জন্য প্রেমে শহিদ হওয়ার চেয়ে মহৎ আর কী হতে পারে! এই ফুল কবর রচনা করবে আস্তিক কিম্বা নাস্তিক সকল কিসিমের সাম্প্রদায়িকতার। তাদের দাফন শেষে মানুষ যার যার বাড়িতে ফিরে যাবে।
এই ফুল আল্লার কাছে ক্ষমা চাইবে তাদের জন্যও যারা জানে না তারা কী করছে।
কসম বন্যা ও নদির, এই ফুল ফুটবে সীমান্তের জনপদে যেখানে প্রতিদিন গ্রামের মানুষগুলোকে হত্যা করছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, সীমান্ত পাহারার নামে। একদিন সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া ডুবে যাবে প্রগাঢ় বন্যায় আর সেই জলের ওপর ভাসবে লাল লাল শাপলা। মানুষের তৈয়ারি সীমান্তগুলো এমনকি জলজ প্রাণীরাও আর খুঁজে পাবে না।
আহ্, আমাকে আমার হত্যাকারীরা গুম করবার আগে দেখতে পাচ্ছি ফুল ফুটছে বস্তিতে বস্তিতে, পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় গ্রাম থেকে গ্রামে গ্রামান্তরে। আমাদের শহর ও গ্রামগুলোকে আমরা নতুন করে গড়ে তুলছি। ক্ষুধার্ত জীর্ণ শেকড়হারা উৎসহারা মানুষ নিজেদের বসতি খুঁজে পেয়েছে আবার।
বড় দীর্ঘকাল মানুষ বেহেশত থেকে নির্বাসিত। মানুষের স্মৃতির মধ্যে আছে বেহেশতের নকশা, ইহলোকে বেহেশত কায়েমই যুগপৎ একালের ধর্ম কিম্বা একালের রাজনীতি। মানুষের মুক্তির জন্য মজলুমের জিহাদে সন্তুষ্ট মাবুদ বেহেশত নামিয়ে আনবেন দুনিয়ায়।
আমরা তাঁকেই সন্তুষ্ট করি যিনি মজলুমের ভাষা বোঝেন এবং জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের সহায় হন।
কসম ভালবাসার, শাহবাগেও ফুটবে লাল লাল শাপলা। ফেরেশতাদের সঙ্গে মেঘের চেয়ারে বসে আমি দেখব ছবির হাটে বিশাল ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে বিশাল এক লাল শাপলা।
তার লক্ষ কোটি পাপড়ি। শেকড় বাংলাদেশে কিন্তু সারা জাহানে তার বিশাল বিপুল বিস্তার।
আজ ৫ মে। আজ প্রতিশ্রুতি দেবার ও শপথ নেবার দিবস।
লেখকঃ ফরহাদ মজহার
২৫
আজ সেই ঐতিহাসিক ৫ই মে। যে রাতে ধর্মপ্রান মুসলিম ভাই ও অসংখ্য মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের হত্যা করা হয়। আল্লাহ শহীদদের কবর কে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুক।
আর জালিমদের বিচার করুক।
আমীন।
- মাহমুদ খান
২৬
শাপলার ইতিহাস যারা ভুলে যাবে, আমরা ভুলে যাব তাদের। - জুবায়ের রশিদ।
২৭
শাপলা চত্বরের ৬১ শহিদের তালিকাঃ
১. সিদ্দিকুর রহমান (৩০), লাশ
গ্রহণকারী কাজী সেলিম সরওয়ার,
চট্টগ্রাম, শ্রমিক সম্পাদক,
সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড ।
২. এ কে এম রেহান আহসান
(২৮), লাশ গ্রহণকারী ডা.
শাহরিয়ার মাহমুদ, ৩৫৩/১-বি
দক্ষিণ পাইকপাড়া , ঢাকা ।
৩. কাজী রকিবুল হক (৪০) ,
লাশ গ্রহণকারী কাজী শহীদুল হক,
২০৮/৩ শেখপাড়া, যাত্রাবাড়ী,
ঢাকা ।
৪. মো. ইউনুস (৩৫), লাশ
গ্রহণকারী মাওলানা নাজিম
উদ্দিন, বাঙ্গাল হাওলা, কালীগঞ্জ,
গাজীপুর ।
৫. দ্বীন ইসলাম (৩৬), লাশ
গ্রহণকারী আলাউদ্দিন, বালুচর,
সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ ।
৬. নাহিদ (২১), লাশ গ্রহণকারী
শাহজাহান, লালগঞ্জ ৭ নম্বর
বিল্ডিং, ৭ নম্বর গলি, ঢাকা ।
৭. মো. আল-আমিন (৩০) ,
লাশ গ্রহণকারী শফিক,
কাচারীচেকেরহাট,কোতোয়ালি,
ফরিদপুর ।
৮. মাওলানা আবদুল ওয়াহাবমোল্লা (৪৫),
লাশ গ্রহণকারী আবদুল হান্নান,
তালাব, ভালুকা, ময়মনসিংহ ।
৯. হাফেজ আল-আমিন (১৮),
পিতা- আবদুল জব্বার, দুর্গাপুর
চরমাদবদিয়া, ফরিদপুর ।
(১০ নম্বর নেই)
১১. হাফেজ সাদ্দাম (২৭) ,
পিতা- রফিকুল ইসলাম, গ্রাম-
মহিপুর, পোস্ট- পাজমা ,
থানা-মধুখালী, ফরিদপুর ।
১২. মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
(২২), পিতা- মাওলানা ওয়াজী
উল্লাহ, ইমাম কটনমিল জামে
মসজিদ,জেলা- নারায়ণগঞ্জ ।
১৩. লৎফর রহমান (২৫) ,
পিতা- সিদ্দিকুর রহমান, গ্রাম-
সুতিয়াপাড়া, ইউনিয়ন-বাওলা,
থানা- ফুলপুর, ময়মনসিংহ ।
১৪. মো. নজরুল ইসলাম
(২৫),পিতা- মমতাজ উদ্দিন,
গ্রাম-দাইয়ের পার, খেবুতলা,
মনোহরদী, নরসিংদী ।
১৫. হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নু
(৩৫), গ্রাম- রায়পাড়া, খড়কি, যশোর ।
১৬. হাফেজ আতাউর রহমান
(৩৫), পিতা-সিদ্দিকুর রহমান ,
গ্রাম-সুতিয়াপাড়া ভৌলা,
থানা-ফুলপুর, ময়মনসিংহ ।
১৭. মুহাম্মদ আকবর ইবনে
নজরুল ইসলাম, দৌলতখান,
ভোলা ।
১৮. মাওলানা সিহাব উদ্দিন
(৩৫), প্রভাষক, গানিয়াতুল
মাদ্রাসা, থানা- সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম ।
১৯. মো. শামসুল আলম (২০),
গ্রাম- তেলিগাংদিয়া, থানা-
দৌলতপুর, জেলা- কুষ্টিয়া ।
২০. মাওলানা শিহাব উদ্দিন
(৩২), শিক্ষক, বগাচতর ফাজিল
মাদ্রাসা, গ্রাম-ডোমখালী,
ইউনিয়ন সাহেরখালী,
থানা-মিরসরাই, জেলা-চট্টগ্রাম ।
২১. মো. নাহিদ শিকদার (২২),
পিতা-দেলোয়ার শিকদার, গ্রাম-
পাতারহাট, থানা মেহেন্দীগঞ্জ,
বরিশাল, বাসা ২৭৪, জয়কালী মন্দির ।
২২. মো. ইউনুস মোল্লা (২৮),
২৫ নম্বর ওয়ার্ড, বরিশাল শহর,
বরিশাল (পুলিশ বলছে এ
ঘটনাটি সঠিক) ।
২৩. মো. সাইদুল বারী (১৭)
,
মোহাম্মদপুর বায়তুল
ফজলইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র,
গ্রাম ইউসুফদিয়া,থানা-গালতা,
জেলা- ফরিদপুর ।
২৪. মো. মোক্তার হোসেন
(১৫), পিতা- মহর আলী, গ্রাম
ও পোস্ট-উত্তর বাঘরনগর,
থানা-রায়পুরা, নরসিংদী ।
২৫. মাওলানা শামসুল আলম,
হরিণাহাট, শফিপুর, কালিয়াকৈর,
গাজীপুর ।
২৬. মাওলানা মোহাম্মদ হাসান,
শিক্ষক, দাগারপারফোরকানিয়া
মাদ্রাসা, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ ।
২৭. হাফেজ মো. মাহমুদুল হাসান
জুবায়ের, পিতা-মো.আব্দুল
বাসেদ, গ্রাম-বকুলতলা,
মাটিরপাড়া, নরসিংদী ।
২৮. মাওলানা মাহমুদুল হাসান,
নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা; ২৯. হাফেজ
লোকমান হোসেন, বাবুরাইল,
নারায়ণগঞ্জ ।
৩০. মো. আল-আমিন ,
রামারবাগ, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ ।
৩১. মাওলানা জুবায়ের, পিতা-
ক্বারি নেয়ামতুল্লা, সাপেরচর,
বালুচর, মুন্সীগঞ্জ ।
৩২. মো. শফিউল্লাহ বাদল,
দুরবাটি, কালীগঞ্জ, গাজীপুর ।
৩৩. হাবিবুল্লাহ মুন্সী,পিতা-আনু
মুন্সী, গ্রাম-দায়চর, সেনবাড়ী ,
কচুয়া, চাঁদপুর ।
৩৪. মো. সিরাজুল ইসলাম,
পিতা-আমির উদ্দিন, গ্রাম-
খলিফারপাড়, মাশকান্দা
পলিটেকনিক মোড়, ময়মনসিংহ ।
৩৫. বাবু গাজী, থানা-নড়িয়া,
শরীয়তপুর ।
৩৬. জাহিদুল ইসলাম সৌরভ,
নিমাইকাশারী, বাগমারা, রাজশাহী ।
৩৭. আনোয়ার, হাটহাজারী
মাদ্রাসার ছাত্র, চট্টগ্রাম ।
৩৮. শাহাদাত, মেঘল মাদ্রাসার ছাত্র, চট্টগ্রাম ।
৩৯. মো. সোহেল, দাউদকান্দি,
কুমিল্লা ।
৪০. ফকির ইবনে মাইজুদ্দিন
ফকির, কাতলা,শিববাদী ,
আদমদীঘি, বগুড়া ।
৪১. মাহফুজ খান, পিতা-বাবুল
খান , গ্রাম-শেখদী, চাঁদপুর ।
৪২. হাফেজ সাইদুর রহমান ,
পিতা-মৃত সিরাজুল ইসলাম ,
গ্রাম-ইউসুফদিয়া, থানা- সালতা,
জেলা ফরিদপুর ।
৪৩. মাওলানা আনোয়ার হোসেন,
পিতা-মো. আবুল হোসেন, নোয়াখালী ।
৪৪. মো. হারুনুর রশিদ, গ্রাম-
তায়েফা, থানা- মুলাদী, জেলা-
বরিশাল ।
৪৫. সুলতান, কোনাবাড়ী ,
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা ।
৪৬. রাজীব, কাজলা
ভাঙ্গা,ডেমরা, ঢাকা
৪৭. মো. আব্দুল হান্নান, পিতা-
আব্দুল বাতেন, গ্রাম
আদিয়াবাদ,মধ্যপাড়া, রায়পুরা,
নরসিংদী ।
৪৮. সোহেল, ছাত্র, চাঁদপুর
উজানী মাদ্রাসা ।
৪৯. মাওলানা মুতীয়র রহমান,
কুমিল্লা ।
৫০. পলাশ, ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী ,
মাদানীনগর, নারায়ণগঞ্জ ।
৫১. সাদেক হোসেন, পিতা-রইস
মিয়া, বক্সনগর,ডেমরা, ঢাকা,
গ্রাম-বড়াইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।
৫২. রুবেল, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা ।
৫৩. সাব্বির, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা ।
৫৪. তাহের, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা ।
৫৫. আবু সাইদ, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা ।
৫৬. জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা ।
৫৭. কামাল উদ্দিন খান,
ম্যানেজার, জেনারেল ইনস্যুরেন্স
কোম্পানি, মতিঝিল, ঢাকা ।
৫৮. মাওলানা আতাউল্লাহ ,
শিক্ষক, মোদাফামা মাদ্রাসা, টঙ্গী ।
৫৯. ইব্রাহিম খলিল, পটুয়াখালী ।
৬০. জালাল আহমেদ,শরীয়তপুর ।
৬১. সিরাজুল ইসলাম, কুমিল্লা ।
২৮
অনেকে মরে বেঁচে গেল, আর অনেকে বেঁচে থেকে মরে গেল।
#শাপলা
- ইমরান রাইহান।
২৯
৫ ই মে সম্পর্কে দুটি বই
আমাদের ইন্তিফাদা - আতিক উল্লাহ।
বিশ্বাসের বহুবচন - রশীদ জামিল।
(দুটো বইয়ের পরিচিতি নিম্নে দেয়া হল)
আমাদের ইন্তিফাদা বই নিয়ে অনুবাদক আলিম আব্দুল্লাহ আল মাসুদের #পাঠ_পর্যালোচনা
বই: আমাদের ইন্তিফাদা
লেখক: মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ
প্রকাশনা: দারুল ইলম
মুদ্রিত মূল্য: ৪০ টাকা
অনেক বই আছে যা ইতিহাস গ্রন্থ না হয়েও একটা সময় ইতিহাসের উপাদানরূপে বিবেচিত হয়। সময়ের স্রোতে ভেসে যখন বর্তমানের ঘটনাপঞ্জি হারিয়ে যায় কালের গর্ভে, তখন সেই বই দূরাগত প্রজন্মের সামনে তুলে ধরে ধুসর হওয়া অতীতের চিত্রাবলী। ইতিহাসের অন্যতম ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেই বই। এই জাতীয় বইগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
তরুণ লেখক আতিক উল্লাহ রচিত "আমাদের ইন্তিফাদা" এই ধরনেরই একটি বই। এই বইটিতে হেফাজত-বিপর্যয় পরবর্তী বাঙলাদেশের উলামায়ে কেরামের সামাজিক সংকট ও বিপদসঙ্কুল অবস্থা অল্প পরিসরে অত্যন্ত সুনিপুণরূপে চিত্রায়ন করা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে বিপর্যস্ত মানবতার করুণ রূপ।
বইটিতে লেখক তার কল্পনা বা ধারণার আশ্রয় না নিয়ে চোখে দেখা ঘটনাগুলো তুলে ধরেছেন। কিছু তার নিজের সাথে ঘটা। কিছু তার সামনে অন্য কারো সাথে ঘটা। কিছু আছে যা তিনি তার কাছ থেকে শুনে লিখেছেন যার সাথে ঘটনাটি ঘটেছে বা সেই ব্যক্তি নিজে দেখে তার কাছে বর্ণনা করেছেন। ফলে পুরো বইটি বিশ্বস্ততার চাদরে মোড়ানো বলা যায়। ঐতিহাসিক দলিলের ক্ষেত্রে যা অতিব জরুরি।
শাপলা-ট্র্যাজেডিতে আহতদের সেবাশুশ্রূষা আর নিহতদের পরিবারের খোঁজ নিতে বাঙলাদেশের নানা প্রান্তে লেখক একাধিক সফর করেছেন। অনেক হাসপাতাল আর এখানে সেখানে ছুটোছুটি করেছেন। সেই সফরগুলো আর ছুটোছুটির কারগুজারিই এই বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য। সেই সাথে প্রসঙ্গক্রমে কথায় কথায় উঠে এসেছে শাপলা-ট্র্যাজেডি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অন্যান্য বিষয়আসয়।
বইটা শুরু করে পাঠক প্রথম পৃষ্ঠা পাড়ি দিয়ে দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় যেতেই বড়সড় একটা ধাক্কা খাবেন। হয়ত তার অজান্তেই চোখের পাপড়ি দু'টো অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠবে। তার মনে একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেতে থাকবে, 'মানুষের প্রতি মানুষ এমন হৃদয়হীন-বর্বর হতে পারে! এ-ও কি সম্ভব!' প্রিয় পাঠক, সেখান থেকে অল্প ক' লাইন তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না।
"ছেলেটার পা না কাটলেও হতো। কিন্তু ডাক্তার অপারেশনে না গিয়ে, একপ্রকার জোর করেই পা-টা একদম গোড়া থেকেই কেটে ফেলেছে। এখানেই শেষ নয়, এক ডাক্তার অসহায় ছেলেটার পা ড্রেসিং করতে এসে পায়ের কাটা স্থানে কেঁচির খোঁচা দিয়ে প্রায়ই বলতো: কেন গিয়েছিলি? আর যাবি হেফাজতে?"
এভাবেই লেখক একে একে অজানা অনেক কথাই পাঠককে জানাবেন। পুরো বই জুড়েই এমনসব কলজে কাঁটা দেওয়া ঘটনার ছড়াছড়ি। গুমোটবাঁধা আবহাওয়ার সেই দিনগুলিতে সরকারি হাসপাতালগুলো 'হেফাজতি' হবার অপরাধে নবিপ্রেমিকদের সাথে কেমনসব আচরণ করেছে তার ছোটখাট দৃশ্যায়ন রয়েছে পরবর্তী কয়েকপাতা জুড়ে।
সবচে প্রশংসার কথা হল, ছোট্ট এই বইটিতে লেখক অনেকগুলো বিষয়ের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। সেখানে কথার ফাঁকে ফাঁকে তিনি কোথাও গুরুত্বপূর্ণ জীবন-দর্শন তুলে ধরেছেন, কোথাও উপমাকেন্দ্রিক উপদেশ দিয়েছেন, কোথাও আবার পাঠককে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য করেছেন। অনেক জায়গায় আত্মউপলব্ধি আর ভাবনার খোরাক জুগিয়েছেন।
এসব কিছু ছাপিয়ে যে জিনিসটি আমার কাছে সবচে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে; আগামী ইতিহাস রচনাতেও যা আলোক-মশাল হিসেবে কাজ করবে, তা হল, শাপলা-ট্র্যাজেডিতে নবিপ্রেমিকদের রক্ত নিয়ে অনেকে উপহাস করেছেন। রং মেখে শুয়ে থাকার মতো অপবাদ দিয়েছেন। নিহত হবার খবরকে বানোয়াট বলেছেন। তাদের এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বইটি একটি বলিষ্ঠ দলিল হতে পারে।
'এক অব্যক্ত বেদনার আখ্যান' শিরোনামে যে কাহিনী লেখক বিবৃত করেছেন তা আমি চেষ্টা করেও পুরো পড়তে পারি নি। আমার দুর্বল চিত্ত এর ভার বহনে অক্ষম ছিল। ঘটনার মাঝপথে এসে আমি পরাজিত হই। আমাকে এক পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে সামনে এগুতে হয়। মনুষত্বহীন মানুষকে কেন পশুর চেয়েও অধম বলা হয়েছে কুরআনে, সেটা আমি খুব উপলব্ধি করেছি এখানে এসে।
'মানুষ মানুষের জন্য' কথাটা আমরা মুখে মুখে আওড়ালেও বাস্তবে আমরা মানব সেবা থেকে অনেক দূরে সরে আছি। বইটা পড়ার পর এই ভাবনাটা হৃদয়ের গভীরে অবশ্যই জাগ্রত হবে। সেই সাথে কিছু মানুষের নিজের সময়-শ্রম আর দিন-রাত একাকার করে মানব সেবায় ছুটে চলার দাস্তান পড়ে তাদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর সম্মান তৈরি হবে। বিশেষ করে মাওলানা রজীবুল হক সাহেবের প্রতি অন্যরকম একটা মানবিক দুর্বলতা তৈরি হতে বাধ্য। যিনি অহর্নিশি মানব সেবার কাজে ছুটে চলছেন দূরন্ত গতিতে।
লেখকের নিজের সাথে ঘটা ঘটনাগুলোও কম চমকপ্রদ না। একটি রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের হুমকি-ধমকি, অসদাচার, তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়া করানো এবং সেসব থেকে আল্লাহর অপার করুণায় তার উতরে যাওয়া, তাঁর মাদরাসার ছাত্রদের গায়ে হাত তোলা আর একজন শিক্ষককে চপেটাঘাত করা দুই ব্যক্তির করুণ পরিণতির সম্মুখীন হওয়া-- এসব পড়তে পড়তে কখনও পাঠকের হৃদকম্পন বেড়ে যাবে, কখনও কমে যাবে। কোথাও রাগে তার চেহারা লাল হবে কোথাও লজ্জায় মাথা নিচু হবে। এমন রং-বেরঙের অনুভব-অনুভূতি তরঙ্গে দুলতে দুলতেই একটা সময়ে দেখা যাবে বইটির শেষ লাইনে তিনি চলে এসেছেন।
এক কথায় বলতে গেলে বইটি অসাধারণ এবং পড়ার মতো একটি বই। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, প্রত্যেকের সংগ্রহেই বইটি থাকা উচিত। যাতে করে আগামী প্রজন্মের কাছে তারা সচ্ছ-সঠিক ও প্রকৃত ইতিহাস তুলে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। অন্যথায় আমাদের অতীতের অনেক বিষয়ের মতো এটিও বিকৃত হয়ে অনাগতদের সামনে উপস্থাপিত হবে। আর এর পরিণতি যে শুভ হবে না তা তো বলাই বাহুল্য।
বিশ্বাসের বহুবচন বইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
‘বিশ্বাসের বহুবচন’
রশীদ জামীল
প্রকাশক : কালান্তর প্রকাশনী
মূল্য : ২৫৫/-
শাহবাগ বললে এখন আর নাস্তিকতার কথা আলাদা করে বলা লাগে না। শাপলা বললে সাঁতার না-জানা বাচ্চাদের হাবুডুবু খাওয়া দৃশ্যের পাশাপাশি কিছু মুনাফিকের চেহারাও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আর কওমি ছেলেরা তো বরাবরই, ঠিক যেমন আগেই বলেছি—বিশ্বাসের কাঁচামাল।
শাহবাগের গণজাগরণকে খেয়েছে অ্যান্টি-ইসলাম বখাটে এবং ধান্ধাবাজ কিছু ব্লগার। হেফাজতের গণজাগরণকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে এনেছে আলেম নামধারী কিছু রাজনৈতিক মুনাফিক।
‘বিশ্বাসের বহুবচন’ হলো শাপলা এবং শাহবাগের পাণ্ডুলিপি একটু নেড়ে দেখা। বলা চলে নতুন করে হাশিয়া লেখা। সাথে একটু কওমিনামা। যাদের কাছে মনে হবে—কথা সত্য, তাদের জন্য ভালোবাসা। যাদের গা একটু জ্বালাপোড়া করবে, তাদের জন্যও শুভ কামনা।
যেকোনো অনলাইন শপ থেকে নিতে পারবেন।
সারাদেশে অভিজাত লাইব্রেরিতে পাবেন।
৩০
রঙ মেখে নয় লাল হয়েছি
বুলেট গুলির জোরে
শাপলা সেদিন কাঁপছিল খুব
দেখছে জাতি ভোরে।
দাগ লেগেছে বুকের মাঝে
প্রাণ হেরেছে হাজার
রক্তনদে ভাসছিল ঐ
মতিঝিলের বাজার।
যায় নি ভুলে দেশের মানুষ
যা হয়েছে সেদিন
শোধ হবে কি শোকরানাতে
প্রাণ ও ক্ষতের ঋণ?
ভাবো যদি তোমরা এখন
অনুগ্রহের ছলে
ভুল হবে রে যা ভেবেছ
ভুল রয়েছে মূলে।
লেখকঃ ইমরান চৌধুরী
৩১
একই পণ্য একই দিনে,
কেউ বেচে দুনিয়া কামাই করলো, কেউবা আখিরাত।
বাকিরা শুধুই দর্শক।
(৫ ই মে)
- আবু সুমাইয়া
৩২
৫ মে ২০১৩ বাঙালি মুসলমানের ঘরে ফেরার প্রথম পদচিহ্ন।
সর্ট অফ রিভার্স ২১ ফেব্রুয়ারী!
- মনোওয়ার শামসি সাখাওয়াত
৩৩
৫মে
ভূলিনি তোমায়! ভূলতে পারিনা, কারণ, আমার ভাইয়ের রক্ত ঝড়েছিলো এদিন।
- মিজানুর রহমান (আফরাদ ইকবাল)
৩৪
সবাই ছবি দেয় এইটা বুঝাইতে যে এই দেশের কুকুররা ঐ রাতে হিংস্র ছিলো। মজার কথা হইলো, কুকুররা ঐ রাইতের আগেও এমন করতো। আপনারা হয়তো অন্য দলের বইলা পাত্তা দিতেন না। কাজেই রক্ত মাখা শরীর দেখার চাইতে, এই ধরণের ছবিতে আমি বেশি আগ্রহী।
- হিসাব মুযাইয়্যাফ
৩৫
৫ মে তারিখে ঐতিহাসিক শাপলা ট্র্যাজেডি নিয়া ফেসবুকে কিছু পোস্ট, ছবি, লেখা, মাতম দেইখা শিওর হই যে আমরা ইতিহাস ভুইলা যাই না। বালাকোটেও আমাদের পরাজয় হইছিল, মনে হইছিল আর কি, শাপলাও আমাদের পরাজয়ের ইতিহাস বইলা মনে হয়, কিন্তু বাহ্যিকভাবে এইটারে পরাজয় মনে হইলেও মুমিন অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ভাবে সফল হইছে আর অন্যদিকে এই পরাজয় আমাদের জয়ের দিকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। এই যে আমরা ৫ মে নিয়া এতো আলাপ করতেছি, আমরা যে ৫ মে কে স্মরণ করতেছি এইটা হইতেছি সেইদিনের বাহ্যিক পরাজয়ের ফসল। মুমিনের পরাজয় বইলা কিছু নাই। মুমিনের পরাজয় যদি চর্মচক্ষুতে মনে হয়, কিন্তু মুমিন ঈমানের উপর থাইকা সবসময় জয়ী হইয়া যায়। তার জন্য জয়ের সার্টিফিকেট গলায় ঝুলান লাগে না। আমরা ৫ মে তে মাইর খাইছি, এতেই আমরা জয়ী। আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হইছে তারাও জয়ী। ৫ মে-র রক্ত আমাদের নতুন ভাবে তৈরি করবে। ৯০ এর প্রজন্মকে তুমুল নাড়া দিয়া একটা বিপ্লব আইনা দিবে যা ভবিষ্যতে দেখা যাবে ইনশাআল্লাহ। এইটা ভবিষ্যৎবাণী না, এইটা ইতিহাসের শিক্ষা। ইসলাম জিন্দা হোতা হায় হার কারবালাকে বাদ। শাপলা চত্বরের ঘটনা ছিল বাংলার জমিনের কারবালা। মাত্র ৬ বছরের তফাতে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করতেছি, নতুন রেনেসাঁর সৈনিকদের সাথে গলা মিলায়ে বলতেই হয় 'আগামি দিন শুধুই সম্ভাবনার'।
৩৬
অন্য আরো অনেকের মতো হেফাযত নামটার সাথে আমার পরিচয়ও ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারিতে। বাংলাদেশের সমাজের এ অংশটার ব্যাপারে এর আগে কোন ধারণা আমার ছিল না। শ্রেণীগতভাবে আমি সমাজের ঐ অংশের ছিলাম যাদের বেশিরভাগ মাদ্রাসার ছাত্রশিক্ষকদের তাচ্ছিল্য করে ‘মোল্লা’ বলে। তবে তাচ্ছিল্য না ব্যক্তিগতভাবে আমার না জানার কারণ ছিল অনিচ্ছা - কখনো জানার ইচ্ছা ছিল না, প্রয়োজন মনে করিনি, চেষ্টাও করিনি। ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মে পর্যন্ত সময়টা আমার জন্য ছিল একটা এক্সিসটেনশিয়াল ক্রাইসিসের মতো। এসময়টাতে আমি যা ছিলাম সেটাকে খুব টেনেটুনেও ভালো মুসলিম বলা যায় না – আদৌ মুসলিম বলা যায় কি না – সেটাও আমি নিশ্চিত না - কিন্তু প্রথমত, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সম্মানের প্রশ্ন এবং দ্বিতীয়ত হেফাযত ইসলামের আন্দোলন আমার চিন্তাকে শক্তভাবে নাড়া দিয়েছিল। হেফাযতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি আমাকে বাধ্য করেছিল নিজেকে এমন কিছু প্রশ্ন করতে যেগুলোর কাছ থেকে অনেকদিন ধরে অনেকের মতোই আমিও পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, আমার নিজেকে প্রশ্ন করার একটা ট্রিগার ছিল হেফাযত ইসলামের ১৩ দফা দাবির প্রতি শহুরে শিক্ষিত সমাজের – আমার সমাজের – প্রতিক্রিয়া। স্বেচ্ছায় চিন্তা বন্ধ করে রেখে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর ওপর বিশ্বাসের সাথে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্ঘর্ষের প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়ার অভ্যস্ততায় ব্যাঘাত ঘটলো।
.
হেফাযতের ১৩ দফা নিয়ে তখন তুমুল তর্কবিতর্ক। তেতুল তত্ত্ব নিয়ে গরম অনলাইন। আশেপাশের মানুষজন সমানে ‘মোল্লা’ আর ‘হুজুরদের’ শ্রাদ্ধ করছে। কিন্তু ১৩ দফা দাবি পড়ার পর আমি দুটো কথা স্বীকার করতে বাধ্য হলাম। এক. এই দাবিগুলো ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে ‘উগ্র’ বা ‘কট্টর’ কিছু নেই। বরং বলা যায় অনেক ক্ষেত্রে যতোটুকু বলা দরকার তার চেয়ে কম বলা হয়েছে। মুসলিম হিসেবে এগুলোর বিরোধিতা করার কোন সুযোগ আমার নেই। দুই. এই ১৩ দফায় উঠে আসা বেশ কিছু বিষয় এবং তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এই দাবিগুলোর পেছনে যে মতাদর্শ আছে, সেটা আমার বর্তমান লাইফস্টাইলের সাথে সাংঘর্ষিক। আমরা সবাই তো নিজেকে মুসলিম বলি, কিন্তু মৌখিক পরিচয় আর আসলে ইসলাম মানা ও পালন করার পার্থক্যটা নিয়ে আমি সত্যিকারভাবে, নিজের সাথে সৎ হয়ে ভাবতে বাধ্য হলাম। আমি বাধ্য হলাম নিজের দ্বিমুখীতাকে স্বীকার করতে। পাশাপাশি আমি দেখলাম আমার নিজের ভেতরের এই সঙ্কট সত্ত্বেও, নিজেকে কোন একটা দিকে দাড় করাতে না পারলেও, হেফাযতের উত্থান আমাকে আনন্দিত করছে। আমি কাউকে চিনি না, জানি না, কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছেন যারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষে কথা বলবেন, ইসলামের প্রশ্নে শক্ত অবস্থান নেবেন – এটা চিন্তা করে ভালো লাগছে।
.
এপ্রিলে শাপলার চত্বরের মহাসমাবেশে গিয়েছিলাম। যারা কথা বলছেন তাঁদের কাউকে চিনি না। সাউন্ড সিস্টেমের মিক্সিং এতো বাজে যে কী বলা হচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না। আশেপাশে যতোদূর তাকাই সবাই সাদা পাঞ্জাবী পড়া। চারপাশে ‘আমার মতো’ আর কাউকে দেখছি না। অস্বস্তি লাগছিলো। কিন্তু দায়িত্ব মনে হচ্ছিলো ওখানে থাকা। যদি শাহবাগে ওরা সবাই এভাবে জড়ো হয় তাহলে এতোগুলো মানুষ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য কষ্ট করে ঢাকা আসলো, আমি অস্বস্তি গিলে কিছুক্ষণ দাড়াতে পারবো না?
.
৫-৬ মে ছিল আমার জন্য একইসাথে সাইকোলজিকাল ট্রমা আর ট্র্যান্সফরমেটিভ এক্সপেরিয়েন্সের মতো। দুপুরে বেড়িয়েছিলাম, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে ফিরতে পুরো এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্র। টিয়ার গ্যাসের জন্য চোখ খোলা যাচ্ছে না। ৯ তলার ওপরও মুখে কাপড় বেঁধে বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে সব জানালা। তখন অভ্যাস ছিল প্রায় সারারাত জেগে থাকার। সারারাত ‘মতিঝিলে কিছু না হওয়ার’ শব্দ শুনলাম। সকালে জানলাম কোথাও কিছু হয়নি। ‘হেফাযতিরা সোবানাল্লাহ বলতে বলতে পালিয়ে গেছে’। এরপরের অবস্থা অল্প কথায় গুছিয়ে লেখা কঠিন, তবে আমি এটুকু বুঝলাম ‘কোথাও কিছু না ঘটলে’-ও আমার মনের মধ্যে কিছু একটা ঘটে গেছে। এই ঘটনাকে জাস্ট শ্রাগ করে আগের জীবনে ফিরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। সম্ভবত এর কয়েকদিন পরেই ছিল অনার্সের ফেয়ারওয়েল। মনে হল আল্লাহ্ ‘আয্যা ওয়া জাল সিদ্ধান্ত নেয়া আমার জন্য সহজ করে দিচ্ছেন। আমি হেফাযতের নেতাদের চিনি না, তাঁদের নিয়ে চিন্তিতও না – কিন্তু এই লক্ষ লক্ষ মানুষ কেন এসেছিল? আল্লাহ্ রাসূল ﷺ এর অবমাননার বিচার চাইতে। সব অ্যানালাইসিসের পরও এটাই হল বাস্তবতা। আর তাঁদের সাথে যা হয়েছে কিংবা ‘হয়নি’ সেটার মূল কারণ ছিল, বিচারের দাবি, ১৩ দফা – ইসলাম। এ ঘটনার পর দু নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না। সব কিছু ভুলে গিয়ে ফেয়ারওয়েলে গিয়ে মৌজমাস্তি করা যায় না। এই সময়টাতেই আমি কনশাসলি ডিসিশান নিয়েছিলাম যে আমি এতোদিন যা করে এসেছি সেটা ভুল এবং আমি হয়তো পারবো না, কিন্তু আমার নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করতে হবে।
.
.
ওপরে যে কথাগুলো বললাম সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক এবং আলটিমেটলি মূল্যহীন, কারণ এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। ইতিহাসের মাপকাঠিতে এসব ব্যাক্তিগত কথা আর অভিজ্ঞতার তেমন কোন মূল্য নেই। তবুও এ কথাগুলো বললাম কারণ হেফাযতে ইসলামের ব্যাপারে আমার চিন্তা এই অভিজ্ঞতার সাথে জড়ানো। হেফাযতের ব্যাপারে আমার কোন রোমান্টিসিযম ছিল না। হেফাযত কী, আর কী না, এ নিয়ে কোন কালেই আমার কনফিউশান ছিল না। যুক্তির বিচারে তখন থেকেই জানি হেফাযতে ইসলাম কোন বিপ্লব আনবে না। হেফাযতে ইসলামের সাথে ছোটবড় অনেক বিষয়ে আমার মতপার্থক্যও আছে। কিন্তু তারপরও হেফাযতের প্রতি, হেফাযতের আইডিয়াটার প্রতি আমার একটা দুর্বলতা কাজ করে। হয়তো এর মধ্যে বায়াস আছে, থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখনো আর্মার্ড ভেহিকেলের সামনে সিজদারত মুসল্লির ছবি আমার চোখে ভাসে। সব ত্রুটিবিচ্যুতির পরও একেবারে বাইরে থেকে দেখা একজন দর্শক হিসেবে বলছি ২০১৩ তে হেফাযত যে ভূমিকা পালন করেছে সেটা ঐতিহাসিক। আমার মনে হয় ২০১৩ সালের ঘটনাগুলো শুধু আমার মতো আরো অনেক মানুষের জন্য ট্র্যান্সফরমেটিভ ছিল না, বরং এটা বাংলাদেশের জন্যও একটা ট্র্যান্সফরমেটিভ সময় ছিল। এর অনেক প্রমাণও আছে, তবে সেই আলোচনায় এখন গেলাম না।
.
মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্রকে সংশোধনের জন্য, তাদের সামনে দৃষ্টান্ত হবার জন্য, নেতৃত্ব নেয়ার জন্য Integrity এর প্রয়োজন – নৈতিক বিশুদ্ধতা আর আদর্শিক শক্তির প্রয়োজন। শত সমালোচনার পরও ১৩ তে হেফাযতের এই integrity ছিল। মানুষ সেটা সম্মান করেছিল। ১৩ এর হেফাযত আমার মতো অনেককে ভাবতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু গত ছ’ বছরে দুঃখজনকভাবে ব্যাপারটা বদলে গেছে। গত অর্ধযুগের নানা ঘটন-অঘটনের পর এটুকু মনে হয় সবার কাছেই পরিষ্কার সমাজ ও রাষ্ট্রের সামনে বড় কোন পরিবর্তনে তারা আর নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। তারা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। বিশেষ করে ২০১৮ এর ৪-ই নভেম্বরের পর। যেভাবে সাধারণ মানুষ ১৩ তে তাদের কথা নিয়েছিল, সেভাবে এখন আর নেবে না। অনেকে বলতে পারেন ২০১৩ ছিল হেফাযতের, ২০১৮ ছিল হায়াত আল উলইয়া-র। সেটা ছিল আন্দোলন, এটা ছিল অধিকার অর্জন, ইত্যাদি। আমার কাছে খুঁটিনাটি নিয়ে প্যাচানোর এ চেষ্টা অর্থহীন এবং কিছুটা অসৎ মনে হয়। যারা হেফাযতের নেতা, যারা আকাবীর, যারা মুরুব্বী, যারা বড় – তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে অথবা নিরব সমর্থনে ২০১৩ এবং ২০১৮ হয়েছে। তাই এ পার্থক্য নিয়ে তর্ক সেমেন্টিক্স নিয়ে একটা অপ্রাসঙ্গিক, অনর্থক তর্ক। দিনশেষে, রিয়েল টার্মসে বাস্তবতা হল এই যে সাধারন মানুষ দেখছে কওমি আলিমগণ, ‘হেফাযতিরা’ ১৩তে আর ১৮তে দু রকম চেহারা নিয়ে এসেছেন। সাধারণ মানুষ কওমি কিংবা দেওবন্দিয়াতের লেন্স দিয়ে বিচার করবে না, সে তার সাধারণ বোধবুদ্ধির ভিত্তিতে করবে।
.
২০১৩ এর মতো ২০১৮ এর ঘটনাও তাই ট্র্যান্সফরমেটিভ, কারণ যারা নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনার জন্য এই মুরব্বিদের দিকে তাকিয়েছিলেন এখন তাদের অনেকে নতুন করে চিন্তা করবেন। করতে হবে। বিশেষ করে কওমি অঙ্গনের জন্য একথাটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। যারা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, যারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেন, যারা নিজের সাথে সৎ থাকতে চান – তাঁদের আসলেই গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে তারা আজকের ঘটনার ভার বহন করতে রাজি আছেন কি না। এবং এটাও মনে রাখতে হবে যে এটা কেবল শুরু। এটা বিশ্বাস করা সম্ভব না যে আল্লাহ্ রাসূল ﷺ এর ভালোবাসায় শাপলা চত্বরে ছুটে আসা সবাই আজ সবকিছু ভুলে গেছেন। নগ্ন আত্মবিক্রি আর উদগ্রীব হয়ে স্বেচ্ছায় অপমানিত হবার স্পষ্ট দৃষ্টান্ত দেখার পরও শুধু দেওবন্দিয়্যাত, আকাবীর, কিংবা বড়-দের অজুহাত দিয়ে সবাইকে ভুলিয়ে রাখা যাবে এটাও বিশ্বাস করা কঠিন। হক উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কোন পদবি না। আল্লাহ্র দ্বীন কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিবর্গের মুখাপেক্ষী না। কওমি অঙ্গনের যে বিশাল অংশ আজ অপমানিত ও ব্যাথিত হয়েছেন, তাদের আত্মজিজ্ঞাসার এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। চিন্তা করতে হবে তারা কি এই স্রোতে গা ভাসাবেন? দারুল উলুম দেওবন্দ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা, আহমাদ শফি কিংবা অন্য কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ দলিল বানিয়ে আত্মপ্রতারণা করবেন নাকি আল্লাহ্র নাযিলকৃত শরীয়তের আদলে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও করনীয় বেছে নেবেন? নিজেদের পরিচিত কমফোর্টে যোনের খোলসে আটকে থাকবেন নাকি অপ্রিয়, কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশ্নগুলো নিজেদের করবেন? তারা কি ‘কওমির’ নাকি উম্মাহর- এই প্রশ্নের জবাবও খুঁজে নিতে হবে। এ ভূখণ্ডে গৌরবময় এ ধারার পরিণতি কী হবে, তা নির্ভর করবে এ প্রশ্নগুলোর উত্তরের ওপর। পরিণতি কী হবে আমি জানি না। তবে আমি জানি বান্দা যখন আল্লাহ্ ‘আয্যা ওয়া জাল এর কাছে আন্তরিকভাবে পথে দিশা চায়, তখন তিনি নিরাশ করেন না।
.
কিছু জিনিস আগুনে পুড়ে যায়, কিছু জিনিস বিশুদ্ধ হয়।
যারা পুড়ে যাবার তারা পুড়ছে, পুড়ে গেছে। যারা বিশুদ্ধ হবার ইতিহাসের দাবি এখন তাঁদের কাছে।
- আসিফ আদনান
৩৭
আবার ৫ই মে এসেছে, গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি বুয়েটের আহসানুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র সিএসই'র তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শহীদ রেহান আহসানকে। এই রকম একটি ছেলেকে হারিয়ে সারা বাংলাদেশের হাহাকার করার কথা ছিল, অথচ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত তার শাহাদাতকে চাপা দিতে চেয়েছে। এই একজন শহীদকে দিয়েই ২০১৩ সালের অভিশপ্ত বাংলাদেশকে বোঝা যায়।
.
আরও স্মরণ করি, ঐ হাফেজ সাহেবকে, শাপলায় শহীদ হওয়ার পর যার লাশ বাড়ীতে নেয়ার জন্যে রওয়ানা হয়েও বাধ্য হয়ে ফিরে এসে প্রায় গোপনে কামরাঙ্গির চরে নুরিয়ার কবরস্থানে দাফন করা হয়। তাবলীগের কাজে জড়িত ছিলেন, চিল্লায় গিয়ে সাথিদেরকে শুদ্ধভাবে কোরআন পড়া শিখিয়েছিলেন। ঐ চিল্লার এক সাথীর মুখে তার আখলাক সম্পর্কে শুনেছি, তার তরুণী বিধবার আজ কী দশা কে জানে! এটাও ২০১৩ সালের অভিশপ্ত বাংলাদেশের আরেক ছবি।
.
যারা সেদিন মারা গেছেন, তারা অনেক সৌভাগ্যবান। তাদেরকে শাপলার পরিণতি দেখতে হচ্ছে না।
.
যারা বেঁচে ফিরেছেন, তাদের মধ্যে যারা বলগ দিয়া ইন্টারনেট চালায় মনে করতো, ঐ ঘটনার পরে তারা ইন্টারনেটে বলগার হওয়াকেই জীবনের মোক্ষ ধরে নিয়েছে। তখন পর্যন্ত ওস্তাদের কথায় পথ চলতো, এখন তারা নিজেরা যার যার প্রোফাইলে ওস্তাদি করে।
.
শাহ্বাগ ঘৃণা চর্চার কেন্দ্র ছিল, এখন ঘৃণার ভাইরাসে সবপক্ষ আক্রান্ত, শাহবাগের আলাদা প্রয়োজন এতে ফুরিয়েছে। এ এক অদ্ভুত রোগাক্রান্ত বাংলাদেশ।
.
যারা মুরুব্বি ছিলেন, তারা প্রায় সবাই পঁচে গেছেন। কওমিদের বিভিন্ন সমস্যা কোনোভাবে যা কিছুটা চাপা দিয়ে চলছিল, সেটা যেনো শাপলার পরে সারাদেহে ছড়িয়ে পড়া কুষ্ঠরোগের মতো একের পর এক অঙ্গ খসিয়ে চলেছে।
.
আগে অনেকে আল্লাহ্কে খুশি করার জন্য দ্বীন শিক্ষা করতো, অতি অল্প কেউ কেউ হয়ত দুনিয়ার ফায়দা খুঁজতো; এখন এটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুনিয়ার স্বীকৃতি আদায়ের কসরৎ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য আল্লাহ্'র রাসুলের বাণীতো মিথ্যা হতে পারে না, তাঁর কথা সত্য প্রমাণিত হচ্ছে, দ্বীন শিক্ষা চলছে সেটা বেঁচে দুনিয়া আদায়ের জন্যে।
.
এর অবধারিত পরিণতি, প্রশ্ন ফাঁস। আরেক পরিণতি মুরুব্বিয়ানা নিয়ে আপাতত দলাদলি, অচিরেই যেটি চুলাচুলি লাঠালাঠিতে পরিণত হবে।
.
স্খলনের আরেক দিক, তাবলীগের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যে লাঠিয়াল বাহিনী ব্যবহার, চক্রান্ত, মিথ্যাচার - কোনোটিই বাদ থাকে নি।
.
ইখলাস উঠে যাওয়ার পর, অবশ্যম্ভাবী পরিণতি বেইজ্জত হওয়া; যুগের পর যুগ সমকামিতার ইস্যুকে চাপা দিয়ে রেখে যে পাপ কওমি মাদ্রাসাগুলোয় প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে, সেগুলো এখন আর চাপা দিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
.
কওমিদের মধ্যে একে অপরকে যে ভাষায় আক্রমন ও গালাগালি চলছে, তা দেখে লজ্জা ও কষ্ট হয়, তবে, এটা তাদের পাওনা ছিল। পাপ ঢেকে রেখে, দুনিয়ার গোলামি করতে গেলে বেইজ্জত হতেই হবে। বাইরের কাউকে প্রয়োজন হচ্ছে না, তারা নিজেরাই একে অপরকে যে গালাগালিটা করছে, সেটা সম্ভবত বাইরের লোকে করতে দ্বিধা করতো।
.
হায় কাসেম নানুতুবি (রঃ) এর দারুল উলুম! হায় রশিদ আহমেদ গাঙ্গোহি (রঃ) এর দারুল উলুম!! হায় হোসাইন আহমেদ মাদানি (রঃ) এর দারুল উলুম!!!
.
তবে, হতাশ হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই; আল্লাহ্র জমিনে ইসলামের হেফাজত আল্লাহ্ নিজেই করবেন। যারা পথভ্রষ্ট, যারা স্বার্থের জন্যে মাদ্রাসাকে ব্যবহার করছে, যারা মাদ্রাসায় পাপ করছে, তারা বেইজ্জত হবে, ধ্বংস হবে, নিশ্চিহ্ন হবে।
.
কিন্তু দ্বীনের আলো নিভবে না, যারা দ্বীনকে ধারণ করে না, তারা ধ্বংস হলে বরং দ্বীন আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। ডালিম গাছের তলায় একজন শিক্ষক একজন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠান সারা হিন্দুস্থানে দ্বীনের আলো জ্বালায় নাই?
.
এখানেও, যারা মুখলিস, তারা হয়ত এই সময়ে বিপন্ন হয়ে আছেন, দুষ্টদের হানাহানি লাঠালাঠি কামড়াকামড়িতে নিস্প্রভ আছেন; কিন্তু ইঁনাদের হাতেই আবার দ্বীন জাগবে, ধর্মশিক্ষার সুদিন আসবে...
লেখকঃ মুন্তাকিম চৌধুরী
৩৮
“হেফাজত কর্মীরা মার খেয়ে সুবহানাল্লাহ বলে দৌড়ে পালিয়েছে”
-সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত
'এবার তো ঢাকায় এসেছেন, আগামী বার ঘর থেকেও বের হতে দেব না' -- সৈয়দ আশরাফ।
-
কে আছে শিক্ষা গ্রহণ করার মত?
(আব্দুল হাইয়ের ওয়াল থেকে)
৩৯
শাপলা নিয়ে অনেকে বলছেন কিছু বলতে। (হয়তো বিশেষ কারণে! না হয় আমি তো আর তেমন কেউ নই।)
কিন্তু কিছু তো নতুন করে বলার দেখি না। কথা তো সেই আগেরটাই।
১. আগামীতে যেন আর বিশ্বাসের কাঁচামাল না হই।
২. শহিদের তালিকা চাই।
৩. পঙ্গুদের তালিকা চাই।
৪. আহত-নিহতদের অসহায় পরিবারের তালিকা চাই।
৫. আহত-নিহতদের পক্ষে মদিনা সনদের আলোকে বিচার চাই। (সরকার যেহেতু মদিনা সনদের আলোকে দেশ শাসন করছে বলে মাঝে মাঝে বক্তব্য দেয়।)
৬. গাদ্দারদের চিহ্নিত করা চাই।
৭. হেফাজতের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মুসল্লিদের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহার চাই।
৮. আহত-নিহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।
৯. ১৩ দফার বাস্তবায়ন চাই।
১০. দালালমুক্ত হেফাজত চাই।
লেখকঃ আবুল কালাম আজাদ। প্রকাশক, কালান্তর।
৪০
আমি এখন আছি ডেমরা ব্রীজ থেকে একটু সামনে৷
একটা হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে ঢুকছি৷
কিছুক্ষন পর একটা লোক এসে বলবে,আপনারা দ্বীনের জন্য লড়ে যাচ্ছেন,আমাদেরকে একটু খেদমত করার সুযোগ দিন৷ এই বলে আমাদের খাবারের বিল দিয়ে যাবে৷
ফিরে দেখা শাপলা চত্তর৷
০৫/০৫/২০১৩ ইং
- ইফতিখার জামিল (https://www.facebook.com/eftikhar.jamil)
৪১
৬ই মে স্মরণে।
(তোমার ঘামগুলো মেশক আম্বর হয়ে ঘ্রাণ ছড়াবে)
-------------------------------------
তাজা খুনে লেখা নতুন ইশতেহার
কালো পিচে আঁকা বিশ্বাসের মানচিত্র
শুনেছি, এঁকেছি বুকে।
শতাব্দি জুরে ঘুমে থাকা প্রাণকে জাগার ডাক
জড়াগ্রস্থ চেতনায় শান দেবার অগ্নিপোড়ন
জেগে গেছি,পুড়েছি দহনে।
.
রোপিত হওয়া আগামির বিজয়ের চাড়া
লাল লোহিত সাগড় থেকে কিঞ্চিত সিঞ্চন
রোপন করেছি, রক্ত সিঞ্চন করেছি।
.
কোটি প্রাণের মজুদ থেকে কয়েকটি উপহার
সবগগুলো গোলাব দিতে পারার সক্ষমতা
তাজা গোলাব, তুলে দিয়েছি ।
.
ফুলের বাগানে মধু নিতে উড়ে বেড়ানো মৌ
চাকের মোমে সংঘবদ্ধ হবার দায়ীত্ব...
মুষ্টিবদ্ধ করেছি,আনুগত্যে প্রমাণিত নেতৃত্বে।
.
এ নতুন ইশতেহারে জেগেছি আগামির শতাব্দির জন্য
শাহাদাতের নাযরানা পেশ করে আমরা উজ্জিবিত
মরি নি, শহিদ হতে পেরেছি।
.
‘তোমরা আর আমরা ইতিহাসে’ বিভাজিত হতে পেরেছি
রব, তোমার আসনের সামনে হাটু গেড়ে বসে
কথা বলার স্বাদ পেয়েছি, আমি বেঁচে গেছি।
.
আমি বেঁচে গেছি, আমি বেঁচে গেছি, আমি বাঁচার জন্যই
তপ্ত রাজপথে সঁপেছি আমার ঘাম,রক্ত,আর সাধের জীবন
মহাকালের রাজ স্বাক্ষী হয়ে থাকবে আমার ভাই।
তোমার ফিনকি দেয়া রক্তগুলো স্বাধীনতার স্মৃতি গোলাব হয়ে ফুটবে, শহীদ মিনার হয়ে রবে তোমার আঁকা রক্তমানচিত্র
তোমার ঘামগুলো মেশক আম্বর হয়ে ঘ্রাণ ছড়াবে, আকাশ বাতাস মাতাল হয়ে যাবে বিপ্লবের নেশায়
তোমার রুহ কালো পতাকা উড়িয়ে বিজয় মিছিলের অগ্রভাগে থাকবে---- আমি খুঁজে নেব,বুক মেলাবো জান্নাতের দরজায়।
মুফতি মনোয়ার হোসেন, বগুড়া
৫ই মে,২০১৯
৪২
দূর-অতীতের ছিন্নপত্র, নিকট-অতীতের ছেঁড়াপাতা এবং কিছু ঐতিহাসিক চোরাকাঁটা বা প্রশ্নসমবায়
দূর অতীতের ছিন্নপত্র :
সাল ১৯১৯, ৯ এপ্রিল। আজাদি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ড. সাইফুদ্দীন কিচলু ও সত্য রায়ের নেতৃত্বে অমৃতসরে একটি হরতাল পালিত হলো। এর দায়ে অমৃতসরের তৎকালীন গভর্নর ফ্রান্সিস ডায়ার অমৃতসর থেকে এই দুই নেতাকে বহিষ্কার করলেন। সাথে-সাথে জনসমাবেশও করলেন নিষিদ্ধ।
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো সবখানে। ১৩ই এপ্রিল শিখদের উৎসব। সেটিকে কেন্দ্র করা হলো জনসমাবেশের যুতসই মন্ত্র ও মঞ্চ হিশেবে। জালিওয়ানওয়ালাবাগে প্রায় ১৫-২০হাজার লোকের সমাগম। কী মুসলিম, কী হিন্দু—সবাই সমবেত আজাদির আন্দোলনে। গভর্নরের নির্দেশে জেনারেল রেগিনাল্ড ডায়ার ২০০ গুর্খা সৈন্য নিয়ে সমবেত জনতার ওপর হামলা চালালেন। ৩৫০রাউন্ড গুলি। সময় সাকুল্যে বিশ মিনিট। নিহত হয়ে যায় সহস্রাধিক হিন্দু-মুসলিম আজাদি জনতা।
বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃটিশ-রাজকর্তৃক পাওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করলেন প্রতিবাদের অংশ হিসেবে।
ফলাফল : ঘটনার প্রায় ৯০ বছর পর বৃটিশ-প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন সেই বধ্যভূমিতে গিয়ে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে ভারতবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন—ভারতেরই মাটিতে এসে।
নিকট অতীতের ছেঁড়াপাতা :
২০১৩ সালের ৫ মে। মহানগর ঢাকা জনসমুদ্র। লাখ-লাখ মানুষের উপস্থিতি—ঠিক কত, ঠাওর করা মুশকিল। আন্দোলনের পুরোধা আল্লামা আহমদ শফীর নির্দেশ—সকলকে সমবেত হতে বলা হলো শাপলা চত্বরকে কেন্দ্র করে। জনঢল শাপলামুখী। এর ভেতরেও পল্টনে সরকারের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারদলীয় কর্মীদের জিঘাংসাত্মক বাধা, হামলা, নৈরাজ্য, বিভীষিকা। চরম বাধায় হতমান হেফাজতে ইসলামের সমর্থকগণ। দিনশেষে শত বাধার পরেও নবীপ্রেমীরা শাপলা-কেন্দ্রীভূত হয়ে ঘন করে তুলেছে দূর-দূর অবধি।
৫ মে দিনটির সমাপ্তি ঘটলো। ঘড়ির কাঁটা ধরে শুরু হলো আরেকটি নতুন দিনের। পঞ্জিকায় ৬ মে। রাত ২টা ৩১মিনিট—ইতিহাস নতুন করে পাশ ফেরা শুরু করলো। সূচিত হতে যাচ্ছে এক জঘন্যতম অধ্যায়ের।
পুলিশ ‘অপারেশান সিকিউরড শাপলা’, র্যাব ‘অপারেশান ক্যাপচার শাপলা’, আর বিজিবি ‘অপারেশান ফ্লাশ আউট’-এর মতো রোমহর্ষক নাম নিয়ে এগোতে লাগলো শাপলার দিকে। শাপলায় নিরস্ত্র আর ক্লান্তবিজড়িত দেহ নিয়ে ঘুমিয়ে আছে লাখো নবিপ্রেমিক জনতা—কেউবা তখনো মুসাল্লায়।
রাস্তার বিভাজকে দাঁড়িয়ে-থাকা ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো নিভে গেলো। গর্জে উঠলো অত্যাধুনিক সব মারণাস্ত্র—সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল; রাবার বুলেট, শটগান, রিভলবার; এসএমজি, একে-৪৭—গোলাবারুদের ঢের—প্রায় সাড়ে পঞ্চান্ন হাজার রাউন্ড! হাতে-কলমে নিকেশ করে—পঞ্চান্ন হাজার সাতশ’ ছিষট্টি রাউন্ড গোলাবারুদ! মাত্র চল্লিশ মিনিটে থেমে গেলো উত্তাল-উন্মাতাল শাপলা। ঘড়ির কাঁটায় যখন রাত ৩টা ১১মিনিট, তখন পুরো শাপলা সম্মিলিত বাহিনীর করনিয়ন্ত্রিত। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে-আনতে ভোর পাঁচটা! কী ছিলো সেই 'পরিস্থিতি', যা সামালে আনতে এত বিপুল সংখ্যক সম্মিলিত বাহিনীর লেগে গিয়েছিলো এত-এত সময়, তা আজও আমরা জানি না, জানতে পারিনি, আমাদের জানতে দেওয়া হয়নি।
অপারেশান-শেষে পুলিশের সদর দফতরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থায় দেওয়া প্রাথমিক রিপোর্ট :
''অপারেশানের নাম :
পুলিশ—অপারেশান সিকিউরড শাপলা।
র্যাব—অপারেশান ক্যাপচার শাপলা।
বিজিবি—অপারেশান ফ্লাশ আউট।
অপারেশানের সময়সীমা :
শুরু—রাত ২টা ৩১মিনিট।
শেষ—রাত ৩টা ১১মিনিট।
ব্যাপ্তি—৪০মিনিট।
গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তি : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে-আনতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ভোর ৫টা বেজে যায়।
জনবল :
পুলিশ—পাঁচ হাজার সাতশো বারো জন।
র্যাব—এক হাজার তিনশো জন।
বিজিবি—পাঁচশো ছিয়াত্তর জন।
অংশগ্রহণকারী মোট সদস্য—সাত হাজার পাঁচশো আটাশি জন।
রিজার্ভ—পুলিশ ও র্যাবের স্টাইকিং ফোর্স এবং বিজিবির দশ প্লাটুন সৈন্য।
গোলাবারুদ খরচ :
টিয়ার শেল—আশি হাজার শেল।
রাবার বুলেট—ষাট হাজার রাবার বুলেট।
শটগানের গুলি—পনের হাজার গুলি।
সাউন্ড গ্রেনেড—বারো হাজার গ্রেনেড।
রিভলবারের গুলি—তিনশ’ গুলি।
মোট গোলাবারুদ—এক লক্ষ সাতষট্টি হাজার তিনশ’ গোলাবারুদ—দেড় লক্ষাধিক।
গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তি : উপর্যুক্ত তথ্যের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ খরচ করা হয় রাতের আক্রমণে। অর্থাৎ পঞ্চান্ন হাজার সাতশ’ ছিষট্টি রাউন্ড গোলাবারুদ ব্যয় হয় অপারেশান-শাপলায়।
মৃত্যুর পরিমাণ :
সাত জন হেফাজত-সমর্থক ও একজন পুলিশ।
প্রাথমিক রিপোর্ট-সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য :
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, “প্রেস নোটে সব কিছু উল্লেখ করা যায় না। আর প্রেস নোটে উল্লেখ করলে তা ছাপতেও পারবেন না। হেফাজতের সহিংসতায় কি পরিমাণ গোলা-বারুদ খরচ হয়েছে, তার হিসাব-নিকাশ চলছে। দু’-একদিনের মধ্যে প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।”
প্রাথমিক রিপোর্ট-সম্পর্কে সংবিধান-বিশেষজ্ঞের বক্তব্য :
শাহদীন মালিক বলেন, “এটি আইন ও সাংবিধানিক শাসনের পরিপন্থী। সংবিধান অনুযায়ী অভিযোগকারী, তদন্তকারী এবং বিচারক একই ব্যক্তি হতে পারবে না, একই ব্যক্তি হলে ন্যায় বিচার হবে না। এক্ষেত্রে তাই হয়েছে। গুলি বর্ষণকারী, তদন্তকারী এবং রিপোর্ট দাখিলকারী (বিচারক) পুলিশ।
তথ্যসূত্র :
দৈনিক যুগান্তর, রবিবার, ১২ মে, ২০১৩ ঈসাব্দ।”
(উদ্ধৃতিচিহ্নে আটকে দেওয়া তথ্য উক্ত দৈনিকের আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত।)
জালিওয়ানওয়ালাবাগ ও শাপলা চত্বর : হিসেব-নিকেশ ও কিছু প্রশ্ন
ছেঁড়া-ছেঁড়াভাবে উভয় ঘটনার তথ্যগুলোই বিক্ষিপ্তভাবে দিয়ে ফেলা গেলো। এবার আমরা কিছু নিকেশ করি ফেলি এই দুটি ঘটনাপ্রবাহ থেকে; আর কিছু প্রশ্নও থাকবে এতে, সেগুলোর খাতাটা আমি না হয় না-ই খুলে বললাম, ওপর থেকে আপনারাই দেখে মিলিয়ে নেবেন।
আপনাদের মনে থাকবে, জালিওয়ানওয়ালা
বাগে যে-সমাবেশটি হয়েছিলো সেটি বৃটিশ রাজ-অনুমোদিত ছিলো না। আর শাপলার যে সমাবেশটি হয়েছিলো, সেটি?
আজাদি আন্দোলনের সেই সমাবেশে মাত্র ২০০ গুর্খা সৈন্য অংশ নিয়েছিলো। আর প্রেমোত্তাল শাপলায়?
রেগিনাল্ড ডায়ার ও তার বাহিনী জালিওয়ানওয়ালাবাগের সেই জন-সমাগমে ছুড়তে পেরেছিলো মাত্র ৩৫০রাউন্ড গুলি—আবারও বলছি, শুধু ৩৫০রাউন্ড গুলি। আর নবীপ্রেমের অপরাধে অপরাধী শাপলায়?
৩৫০রাউন্ড গুলিতে সহস্রাধিক মানুষ কীভাবে নিহত হয়ে যায়, সেটি একটি প্রশ্ন উদ্রেককারী ব্যাপার হলেও ইতিহাসের এ এক প্রথিত-কঠোর সত্য। আর এই সব জরিপ ও পরিসংখ্যান শাপলার বেলায়?
জালিওয়ানওয়ালাবাগের ওই অপারেশানটি হয়েছিলো দিনের আলোয় আন্দোলনরত জাগ্রত মানুষের ওপরে। আর অপারেশান ফ্লাশ আউট, ক্যাপচার বা সিকিউরড শাপলা?
একটি আশ্চর্যের বিষয় হয়তো আপনাদের চক্ষু এড়াবে না—মাত্র চল্লিশ মিনিটে শেষ হওয়া অপারেশানে সম্মিলিত বাহিনী ভোর পাঁচটা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে! সেই পরিস্থিতিটা আসলে কী ছিলো? সেখানে তো সাংবাদিকদের কোন সম্মেলন হয়নি। ‘সম্মেলন’ কথাটিই তো ওই দিনের সাথে আষাঢ়ে গল্পের মতো শোনায়—যেখানে কোনো সংবাদকর্মীর উপস্থিতিই ছিলো না, বরং দুটো সংবাদমাধ্যম ওই রাতেই বন্ধ করে দেওয়া হলো। তারা কি তবে বিজয়োল্লাসে সেখানেই কোনো আনন্দোৎসবের উদ্যোগ নিয়েছিলো? নাকি সাতজন হেফাজতকর্মীর লাশ সরাতে-সরাতেই এতটা সময় কেটে গেলো? নাকি আবার নিজেদের এক সঙ্গীর মাতম-পুরসি করতে গিয়েই ভোরটা গড়িয়ে এলো? নাকি আমরা এসব যা বলছি, তার কিছুই না, অন্য আরেক কিছু? সেই কিছুটা কী? সেই কিছুর সামান্য কি আমরা বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরায় পাই? নাকি হেফাজতে ইসলাম এদেরও হাত করে ফেলেছে? পারে বটে হেফাজতিরা...
কিন্তু ব্যাপারটা হলো কী, শোনা যায়, অনেক প্রত্যক্ষদর্শীকে আমরা বলতে শুনি, ৬ই মে’র সকালে শাপলা বড় ঝকঝকে-তকতকে ছিলো! অনেকদিন নগরটা ধোয়া হয় না—সেদিনই ধুতে হয়েছিলো। ৬ এপ্রিলের লংমার্চের চেয়েও সেদিন শাপলা আরও বেশি নোংরা হয়েছিলো কি না! আর শাহবাগ তো নোংরা হয়ই না। শুধু ৬ই মে-র রাতে শাপলা এতই নোংরা হয় যে, ঘষে-মেজে ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে! শাপলা গায় সেদিন অনেক নোংরা ছিলো।
মনে রাখবেন, আমরা অপারেশান শাপলা-সংক্রান্ত যে তথ্যটি ওপরে পেয়েছি, সেটি একটি প্রাথমিক তথ্য এবং সরকারি তথ্য। এই প্রাথমিক তথ্যের পরে চূড়ান্ত কোন তথ্য বের হয়েছে কি না, আমরা জানি না। আমাদের চোখে অন্তত পড়েনি।
অন্য কথা :
এবার কিছু অন্য কথা বলি। জালিওয়ানওয়ালাবাগের সেই আন্দোলনের নিহতদের নিয়ে এখনো আমরা আহা-উহু করি। বেদনায় কাতর হয়ে উঠি। আজাদি আন্দোলনের ধারাবাহিকতার একটি শাখা হিশেবে এখনো বিনম্র চিত্তে স্মরণ করি। রবীন্দ্রনাথের নাইট উপাধি ত্যাগের কীর্তন করতে গিয়ে ভক্তি-ভালোবাসায় আমরা উজ্জীবিত হয়ে যাই। নিজের ছেলে-মেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের চেতন-মানস এমন মহান করে গড়ে তোলবার স্বপ্ন দেখাই। খুব ভালো কথা, আনন্দের কথা, সুখের কথা। কিন্তু যখনই আসে ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ই মে-র হেফাজত-প্রসঙ্গ, তখনই তিতকুটে উন্নাসিকতায় আমাদের মুখ থেকে যাচ্ছে তা বেরোয়। ভেতরের গরল ভকভকিয়ে মানুষের নাকে-মুখে ধ্যানে-জ্ঞানে ময়লা ছিটোয়। আমি যে একদেশদর্শিতার এক অন্ধ সেবক লোকের কাছে তা হাট হয়ে যায়। চিন্তাবৃত্তিক উদারতার ধোঁয়া-ফেনানো আমি-ই যে চরম সংকোচনের চরণ-পূজারি, কারও আর জানতে তা বাকি থাকে না।
আমরা ইতিহাস আর এই মনোবৃত্তিসম্পন্ন মানুষদের মিলিয়ে বুঝে নিই, আমাদের গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে আছেন এমন কিছু মানুষ, সমাজে যারা গণ্যমান্য, চেতনার যারা ভিত্তি তোলেন, মানসের যারা নিষ্ঠ সেবক সমাজের। ভয়ে আমরা সিঁটিয়ে যাই। সত্যসন্ধ আমাদের সামনে ভবিষ্যত-প্রজন্মের এসব কাণ্ডারির দেখে সহজেই আমরা বুঝে যাই দেশ এখনো কেন এগোতে পারে না! আমরা কেন শুধু পিছিয়ে থাকি! অসাম্প্রাদায়িকতার ললিতকলা আমাদের মাঝে কেন হঠাৎ চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে—অথচ এ মাটি-মানুষের মজ্জাগত চেতনা বৈচিত্রে ঐক্যের সুর! হঠাৎ কেন চেতনা এত খেলো হয়ে যায়! কথায়-কথায় আমাদের মাঝেই কেন দেখি উগ্র জাতীয়বাদের বিষ-হলাহল!
প্রশ্নগুলো নিয়ে আনমনে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখি, আমি নিজেকে, আমার মাটি ও মাকে, আমার প্রিয় জন্মভূমি প্রিয় দেশকে সঁপে দিয়েছি রক্ষক নামের কিছু ভক্ষকের হাতে। নিজেকে খুঁজে পেয়ে আমি স্থবিড়, মূক, নীরব—আমার বলবার কিছু নেই। চোখ ফেটে বড়-বড় দু ফোঁটা অশ্রু গড়ায়, তারপর আচমকা ঝরঝর—আমি কাঁদছি; কান্না ছাড়া আমার আর উপায় নেই।
লেখকঃ নেসার উদ্দিন রুম্মান। কবি।
৪৩
জাগো
❑
হালকা ঝড়ের প্রলেপ, ঠাণ্ডা বৃষ্টিও আছে
আমার ঘুম পায়, আমি ঘুমুবো
অনুরাধা ফোনে এখন জ্বালাবে
টুং টাং টিং টিং। রিসিভার তুলে রাখবো
আজ আর লেখা-টেখা হবে না
মাথায় টুপটাপ শব্দের আঘাত
বৃষ্টিটা বাড়ছে ক্রমশ, ঠাণ্ডাটা জেঁকে আসবে
ঝড়টা কি ফাঁকফোকর গলে ঢুকে পড়তে চাইছে
কপাট বন্ধ করে রাখবো...
দরোজায় খুট খুট কড়া নাড়ছে কে রে
এতো রাতে ! অনু ! বড্ড জ্বালায় আজকাল
কয়েকটা অক্ষর মাথায় সেঁধিয়ে দিয়ে
বেমালুম হাওয়া হয়ে যায়
ন স ত ক
এটা কী? আকার বিকার নাই
নিশুতি পোকা ! ঘুমটা গাঢ় হবে নির্ঘাৎ
বাজ পড়লো নাকি? ফর ফর বিজলি চমকায়
ভয় নাই, ছিদ্র হবে না কংক্রিটের ছাদ
গভীর ঘুমে স্বপ্ন দেখবো..
–অনু, কী করছো এখন
–শ হ ব গ ন প ত য ক
–আবার? অনু প্লিজ, কী হচ্ছে এসব
চুলে বিলি কেটে যায় একটা কোমল হাত– ব ল ট
পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে বলি– অনু !
মুখ-বুক মথিত করে হাতটা কোমরে নামে
–ঘুমটা ভাঙিয়ো না, অনু, বাসায় যাও
–র ক ত
–রও কও তও- কী এসব ? যাও তো ! যত্তসব
–৫
এক মিনিটও না, যাও, আজ আর কিচ্ছু লিখতে পারবো না
–ম
–ফর গড সেক অনু, প্লিইজ, আমাকে ঘুমাতে দাও
উত্তাল ঝড়ে তুফান জাগছে, কাচ ভাঙছে, যাও লক্ষ্মী
এতো ঝড় ! আকাশটা ভেঙেই পড়বে নাকি
এতো আলোর ঝলক? ক্যালেন্ডারের পাতাটা স্পষ্ট দেখা যায়
চাঁদটা ছিঁড়ে পড়লো নাকি
ক’তারিখ আজ, প্রলয়ের বান ডাকলো নাকি
অনুর অক্ষরগুলো ঝুর ঝুর করে ভেঙে পড়ে মাথায়—
নস্তিক শাহবাগ নিপাত যাক নিপাত যাক
বুলেট রক্ত ৫ মে.. অবিনশ্বর বিশ্বাসের ডাক
আমার সমগ্র অস্তিত্ব কাঁপিয়ে নাড়িয়ে
আতীব্র তৃষ্ণার পানি হয়ে এক শাশ্বত কবিতা ঝলকে ছলকে ওঠে
শরীরের সমস্ত শক্তি পূঞ্জিভূত করে
গগন বিদারি চিৎকারের মতো ঝাঁঝালো স্বর যুক্ত করে
সময়ের উল্টোপিঠে আমি লিখি
পৃথিবীর সবচে’ মহান কবিতা— ‘জাগো’
-------------------------------------------------------------------
এইটুকু কবিতা হোক বা না-হোক Salahuddin Jahangir ও Nesar Uddin Rumman নামক দুই কমরেডকে উৎসর্গ দিলাম । তাহারা কোনো এক ভাদ্রমাসে একখানা কবিতা সংকলন করবেন জেনেছিলাম—তাই ।
লেখকঃ মঞ্জুরুল হক।
৪৪
শাপলা প্রসঙ্গ...
ইমরান রাইহান : অনেকে মরে বেঁচে গেল, আর অনেকে বেঁচে থেকে মরে গেল।
কাজী মাহমুদুল হক : না, রায়হান, এভাবে উপসংহার টানছি না।যদিও এভাবে বলাটা অবাস্তব না মোটেও। আমাদের ভূখণ্ডে রক্তের দাম বড় অল্প। তাই বিনারক্তে কোনকিছু অর্জিত হয় না। হেফাজতের আপাত ব্যর্থ মুভমেন্ট এর কারনে ভবিষ্যত বাংলাদেশের একটা গতিপথ পরিস্কার হয়েছে শাসক, জনগন, সুশীল সবার কাছেই। দুইটা ডিসকোর্সের এই লড়াই একপক্ষ নিশ্চয়ই মনেমনে হলেও পরাজয় মেনে নিয়েছে। জ্ঞান-ক্ষমতার পারষ্পরিক সাহচার্যে যে সত্য প্রতিষ্ঠিা করে ক্ষমতাসীনগণ, তাকে পর্যবেক্ষন করো, দেখবে তারা শাপলাকে গোনায় ধরেছিল এবং সেইটা গভীরভাবেই।তাছাড়া হেফাজত তো ক্ষমতা বদলের হাতিয়ার হতে চায়নিও কখনো।সামাজিক আন্দোলন হিসাবে তার অর্জনকে দেখতে হবে।
৪৫
৫ মে ২০১৩ বাঙলাদ্যাশের ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; হাইপার তুইলা বিরাট ও প্রকাণ্ড বানানো নানা আজেবাজে ঘটনার অন্তরালে সীমিত ও সংকুচিত এই ঘটনার বুদ্ধিবৃত্তিক নানা আউটপুট এই ঘটনার দিন থিকাই শুরু হইসে এবং তা চলতে থাকবে; তদুপরি এই ঘটনা মেইনটেইন করতেসে অনেক আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক ও ইজমিক (মতবাদগত) ইস্যু; তাই নাগরিক হিশাবে এই দিনটা আমার কাছে তাৎপর্যবহ; অন্যথায় এই দিনের নৈর্ব্যক্তিক যে ফায়দা, তা তো আমরা পাইয়াই গেসি--তাই দিবসপুজারিগো মতো এই দিনের আলাদা কোনো মাহাত্ম্য এই দিনরে গুরুত্বপূর্ণ-ভাবা কারও কাছেই নাই, আমার তা-ই ধারণা; কিন্তু মানুষ হিশাবে আমরা যেহেতু ব্যস্ত ও স্মৃতিভ্রষ্ট, তাই ইয়াদগার বা স্মারক হিশাবে এই দিনের অপরিহার্যতা রইয়াই যায়...
# ৫ মে ২০১৩ এই দিনকে কেন্দ্র কইরা এই দ্যাশের নানা শ্রেণির সাধারণ মানুষের উপ্রে যত রকম নৈরাজ্যই চলসে, তার বিরুদ্ধে আল্লার কাছে নালিশ; ওই নৈরাজ্যের ভুক্তভোগী সকলের প্রতি আন্তরিক মনোবেদনা কষ্ট ও দোয়া; শহিদদের দরজা বুলন্দির ফরিয়াদ...
# জাইনা-বুইঝা সচেতনভাবে এই আন্দোলনের ইমোশন ও এর নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকাররে নেতৃস্থানীয় কিংবা বহির্স্থানীয় যে-কেউ বিভিন্ন প্রবণতায় প্রবঞ্চনায় ধোঁকায় ও লোভে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করসেন ও এখনো করতেসেন যারা, তাগো বিরুদ্ধেও আল্লার কাছে নালিশ।
তবে অবেচনভাবে যারা চ্যুতির শিকার, আল্লা তাদের ক্ষমা করুক...
# শুকরানা-মাহফিল ভিন্ন একটা প্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপট হওয়া সত্ত্বেও সেইখানে এই ৫ মে প্রসঙ্গ উঠসিলো; এবং সেই প্রসঙ্গে মিথ্যাচার করসিলেন সরকারপ্রধানের ব্যক্তিগত সচিব; সেই মিথ্যাচারের কোনো অফিসিয়াল প্রতিবাদ আজ পর্যন্ত করা হয় নাই হেফাজতের অথরিটি থিকা; এমনকি সেই মঞ্চে হেফাজতপ্রধান ও হেফাজত-নেতৃস্থানীয় শীর্ষ ব্যক্তিবর্গের কেউই তার নৈতিক প্রতিবাদ করেন নাই--এইসব মেরুদণ্ডহীনতা থিকা পানাহ চাই আল্লার দরবারে; এবং এতদ-গর্ভস্থ সকল মাসলাহাত বোঝার সাধ্য না-থাকলে আল্লা আমারে সুমতি দিক; এবং এই সুমতির অভাবে এইসব মাসলাহাত না-বোঝার অপরাধে এর ভাগীদার ও ভোগদার হিশাবে আমারে মাহরুম না-করুক...
# গত টার্ম ও এই টার্মেও বাঙলাদ্যাশের সরকারপ্রধান যিনি, তিনি ৫ মে নিয়া সংসদে বলসিলেন, মতিঝিলে নাকি লোকে রং মাইখা শুইয়া আছিলো; একে তো তার অনেক গর্হিত কাজ ও কথার মতো এই কথার প্রতিও আমার নিন্দা আছে; উপরন্তু তার এই কথা বলার দিন থিকা আজ পর্যন্ত আমি একটা প্রত্যয় লালন করি, কখনো তার সাথে দেখা হইলে আমি তারে এই প্রশ্ন করবো, মিসেস শেখ হাসিনা, আমরা কি সেদিন রং মাইখা শুইয়া আছিলাম?...
# কওমি মাদরাসার একজন ছাত্র হিশাবে ৫ মে আন্দোলনে আমার যে অগ্রাধিকারী হিস্যা, দ্যাশের নাগরিক হিশাবে আমার যে সাংবিধানিক অধিকার ও হিস্যা, সে-বাবদে ৫ মে ২০১৩-এর স্মৃতি, সরকারি বর্বরতা ও খবরদারি, অন্তর্গত গাদ্দারি ও আমার ব্যক্তিগত বেদনাসঞ্চারের ৬ষ্ঠ-তম বছরে এই আমার প্রতিবাদ, ঘৃণা, নিন্দা ও উদযাপন...
লেখকঃ নেসার উদ্দিন রুম্মান।
৪৬
ভাই Asif Adnan বললেন, আগুনে পুড়ে শুধু কয়লাই হয় না, কেউ কেউ পুড়ে বিশুদ্ধও হয়।
৫ মে-র আগুন যেমন পুড়িয়েছে, তেমনি বিশুদ্ধও করেছে। পুড়েছে মুনাফিক্বদের মুখোশ, কুফরের খোলস। আর বিশুদ্ধির পথযাত্রী হয়েছে এই দেশের সহস্র-লক্ষ মুসলিম, মা শা আল্লাহ।
৫ মে-র খুনীরা জানে তাদের বিজয় ক্ষণস্থায়ী। খুনীদের সাপোর্টার-সিমপ্যাথাইজার যারা আছে, যাদের বসবাস আমাদের মাঝেই, ওরাও জানে ওরা হেরে গেছে।
দেশের অলিগলি-রাজপথ-মাঠঘাটের উপচে পড়া দাড়ি-টুপিওয়ালা আর বোরকাওয়ালীরা তো ওদের সামনেই ঘোরাফেরা করে। নিষ্প্রভ চোখে নতুন হুজুর-হুজুরনীদের এই জোয়ারের দিকে তাকিয়ে ওরা উপলব্ধি করে, চূড়ান্ত পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। সরকারী বন্দুকবাজ আর বিদেশী প্রভুর জোরে সেটা ক'টা দিন-মাস-বছর পেছানো যাবে বড়জোর, কিন্তু শেষ রক্ষা হবে না। ইন শা আল্লাহ, ইল্লা মা শা আল্লাহ।
হে আল্লাহ, হে 'আজ্জা ওয়া জাল, রাব্বা জিবরাঈলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরাফীল, আপনি এই দেশের মুসলিমদেরকে হিদায়াত দিন, তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করুন, আর তাদের প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রতিপক্ষকে দুনিয়া ও আখিরাতে চূড়ান্ত লাঞ্ছিত করুন।
লেখকঃ মোহাম্মদ তাওসিফ সালাম।
৪৭
নবীজির মিলাদ (জন্ম) নাকি ১২ রবিউল আউয়ালে হইছে, ওফাতও ১২ রবিউল আউয়ালে। দুইটার মইধ্যে আমাগো দেশে তারজিহ (প্রাধান্য) পাইছে আনন্দের তারিখটা।
হেফাজতের শোকের দিন ঘটেছে ৫ মে, শোকরানা মাহফিলটাও ৪ নভেম্বরে না হয়ে শাপলার তারিখ অনুযায়ী ৫ মে হওয়া উচিত ছিল, তাইলে আমাদের শাকেররা (শুকরিয়াবাদীরা) শোকরানাকে তারজিহ দিত, ধীরে ধীরে মানুষ শোকের দিনটা ভুইলা যাইত। ইতিহাস অনালোচিত করার জন্য এ এক উত্তম ট্রিকস হতে পারত। কী ভুলটাই না করে ফেলল আমাদের উভয় জাহানের মুরব্বিরা!
বিষয়টা আমার আগে কিল্লাইগা যে নদভি সাবের মাথায় আইল না, মায় আভি তক নেহি সমঝা।
#কেয়াস
- ওমর আলি আশরাফ
৪৮
যারা দুনিয়ায় অনেক অনেক বড় হয় তাদের মোটিভেশনাল স্পিচগুলো শুনলে দেখবেন, কিভাবে তারা অজস্র ব্যর্থতার পথ পাড়ি দিয়ে আসে। কখনো থমকে দাঁড়ায় না। প্রথম চান্সেই কারো হয় না। দ্বীনের পথটাও কিন্তু একইরকম। মুসলিম জাতি অজস্র ব্যর্থতার পথ অতিক্রম করছে। তাই বলে এখানে থমকে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। চলতে হবে সাফল্য না আসা পর্যন্ত। আর বড় বড় ব্যর্থতার পরে বড় সাফল্যই আসে। তাই ধৈর্য্য ধরে চলতে হবে সে আলোর পানে।
- আবু মুন্তাহা
৪৯
বিষন্ন বিকেলের কবিতা
সাইমুম সাদী
সব রক্ত শুষে নেবে পীচঢালা পথ।
আর যদি রৌদ্র ওঠে
গ্রীষ্মের এসিড ঝরা রোদ।
কিংবা যদি বৃষ্টি নামে অঝোর ধারায়
মুছে যাবে সব চিহ্ন
গুলির আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হৃদপিন্ড
ঝাঝরা হওয়া হাফেজে কুরআনের বুক
খুলির ভেতরের তরল পদার্থ।
'ইসলামের জয় হোক' লিখে শহীদ হওয়া
কিশোর আরমানের খুনের তপ্তধারা |
সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় গুম করা হবে
শাপলার শহীদদের লাশগুলো।
একটি সাম্প্রদায়িক কালো বেড়াল প্রেস কনফারেন্সে
মুখ ভেংচিয়ে বক্তৃতা করবে |
মোল্লা হত্যায় খুশী হয়ে একজন পুজিবাদী সম্পাদক
পত্রিকার পাতায় লিখবেন বিশেষ সম্পাদকীয় |
শরাবের পেয়ালায় টুকাটুকি আর চিয়ার্স চিৎকারে
আবার জমে উঠবে সরাইখানা।
রাজনৈতিক বেশ্যারা অবৈধ রমনে লিপ্ত হবে গোপনে
বুদ্ধিবৃত্তিক বাউন্ডুলেরা নতুন তত্ত্ব নিয়ে বই লিখতে বসবে
মুখোশের আড়ালে শকুন আর শেয়ালেরা হয়ে উঠবে
মহান জাতীয় নেতা
এক বিষন্ন বিকেলে অঙ্গহীন তালেবে ইলম বসে থাকবে বারান্দায়
এক বিষন্ন বিকেলে শহীদের মায়ের বুক হাহাকার করে উঠবে
এক বিষন্ন বিকেলে চোখের পানি মুছে ঠোটে লিপিস্টিক লাগাবে বালিকা বেশ্যা |
নায়েবে নবীরা আবার ফিরে যাবেন মাদ্রাসা মসজিদে।
বিপ্লবীরা বিধবা নারীর মত স্মৃতিকথা লিখতে বসবেন |
আমাদের দলবাজ নেতারা লিপ্ত হবেন কোলাহলবাজীতে |
জনপদে জনপদে নেমে আসবে হিমশীতল নিরবতা |
একটি সংঘবদ্ধ কাফেলার অভাবে
একটি সুশৃঙ্খল সংগঠনের অবর্তমানে
স্বপ্নবান একঝাক তারুণ্যের অনুপস্থিতিতে
মুমিনুস সালিহীনদের নির্লিপ্ততায়।
৫০
“হেফাজতে ইসলামের নিরীহ কর্মীদের উপর চালানো নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতার চাইতেও ভয়াবহতা দাবি করে” উল্লেখ করে সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরও বলেন-
“২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালিয়ে যৌথবাহিনী ইতিহাসে এক নতুন কারবালা সৃষ্টি করেছে। তাদের জানা দরকার, হেফাজতের কাফেলার মাতৃভূমি কিন্তু বাংলাদেশ। তারা এই দেশেরই নাগরিক, আইন বিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে তারা জড়িত ছিল না। তারা কোন দাগী আসামিও নয়। আলেমরা শান্তিপ্রিয়। সমাজে তাঁরা মর্যাদাশালী এবং স্নেহ ও শ্রদ্ধার পাত্র। এরা কোন অন্যায় করে না। আলেম-ওলামাদের সঙ্গে জুলুমের পরিণতি কিন্তু খুবই ভয়াবহ”।
৫ মে'র রক্তপাত ও গণহত্যা ক্রমাগত অস্বীকার করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু শত চেষ্টা করা হলেও ইতিহাস থেকে রক্তের দাগ মোছা যায় না। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে বাংলাদেশের আগামীর ইতিহাস অগ্রসর হবে না। শাপলা চত্বরের খুনের এই ক্ষত নিরাময় করেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে।
৫ মে’র শহীদদের আত্মত্যাগ আমরা ভুলিনি। বাংলাদেশ তাঁদেরকে ভুলবে না। ঈমান-আক্বীদার মর্যাদা রক্ষা ও দেশের সর্বস্তরে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁদের এক সাগর রক্ত ও বলিদান বৃথা যাবে না। ঈমান-আক্বীদার পতাকা সমুন্নত এবং সহনশীল সমাজ ও ন্যায়-ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে এই অগণিত শহীদদের আত্মদানকে বিজয়ী করতে হবে, ইনশাআল্লাহ।
৫ মে'র সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।।
- মুনির আহমেদ।
৫১
কেউ কথা রাখেনি (বিশ্বাসের বহুবচন বই নিয়ে লেখা)
________ রশীদ জামীল
স্বপ্নটা যদি অনেক উপরে উঠে তারপর হোঁচট খায়, অধিকারটা যদি কেড়ে খায় শকুনের দল, ত্যাগের নজরানাকে কেউ যদি রাজনীতির আলমারিতে বন্দি করে, আঁতাত কিংবা সন্ধি করে, পকেট ভারীর ফন্দি করে, তাহলে যা হবার তা-ই হয়। অথচ কথা ছিল অন্যকিছু, ভিন্ন ধারার।
পাঁচ বছর থেকে চেষ্টা ছিল হিসাব মেলানোর। লাশের হিসাব, বাঁশের হিসাব! পাওনা এবং প্রাপ্তির হিসাব! আমানতের ঘাটতির হিসাব। সওয়াব এবং খোয়াবের হিসাব। হিসাব এখনো মিলেনি।
সুতরাং,
লুঙ্গি কিংবা প্যান্টপরা, শাড়ি কিংবা পাঞ্জাবিওয়ালা; রক্তের যারা হোলি খেলেছে, এবং যারা রক্তের সাথে বেইমানি করেছে, মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও আমরা তাদের বেইমানই বলব। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি। ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করবে না।
অতএব,
লেখকের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারের নিয়তে হলেও বইটি পড়া যেতে পারে। না মেলা হিসাব কিছুটা মিললেও মিলতে পারে। মনে করিয়ে দিই; যাদের কাছে মনে হবে—কথা সত্য, তাদের জন্য ভালবাসা। যাদের গা একটু জ্বালাপোড়া করবে, তাদের জন্য এন্টিবায়োটিক শুভ কামনা।
৫২
ইয়া আল্লাহ, ৫ ই মের মৃতদের আপনি শহীদের মর্যাদা দান করুন। আর আমরা জানি আপনি জালিমদের হেদায়েত দান করেন না(৬১:৭)। - ফাহাদ বিন ইসলাম
৫৩
অসহায় মানুষদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যাও....
আবার আমাদের মনে হলো এই দিনে আমাদের উপর গনহত্যা চালানো হয়েছিল সেই ৫মে ২০১৩ ঈসায়ী সনে।
এতে কোন ইখতেলাফ আছে?
তাহলে দাবী আদায়ের রাজপথে আমরা আছড়ে পরলাম যে কারণে সেগুলো ডিঙিয়ে নতুন করে বিপ্লবের আহবান জানিয়ে প্রতিশোধ পরায়ন হওয়া কি উচিত নয়?
যারা আমার ভাইকে হত্যা করে শহিদ করে দিয়েছে তাদের বিচার করার দৈহিক ও আত্মিক ক্ষমতা কি আমাদের হারিয়ে গেছে?
আমরা আর যত অক্ষমতার দোহাই দিই এগুলো বিবেচনার বিষয় নয় যে জাতি নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেরা সচেষ্ট নয় তাদের ভাগ্য কি আসমান থেকে পরিবর্তন হয়ে আসার আশা করছে?
হয়তো অসহায় মানুষদের অভিশাপে ভস্ম হয়ে যাও
নতুবা শামসীর হাতে পূর্বসূরীদের মত জালেম হঠিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্টা করো।
- ফাহিম আল হাসান
৫৪
তোদের চোখে স্বপ্ন ছিলো
আলোকিত এক পৃথিবীর
আজ তোরা আলোকিত
অন্ধকারে পরে রইলাম শুধু আমরা
ভুলিনি প্রিয়রা ভুলবোনা তোদের
একটি কালো রাত্রীর ইতিহাস.......
- মামুন চৌধুরী
৫৫
রঙ মেখে শুয়ে থাকার দিন ৫মে 😞 - মাহবুবুর রহমান তালুকদার
৫৬
নিজ চোখে দেখা ঘটনা বিশ্বাস করার জন্য কি
অন্য সাক্ষী প্রয়োজন? শাপলা গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আমি নিজে। তাই এই হত্যাকান্ডের বিচার
আমি ততদিনই চাইব যতদিন বেঁচে রইব এই দুনিয়ায়।
মরে যাওয়ার পূর্বমূহুর্তেও ওসিয়ত থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যেন "৫ইমের খুনিদের একজনও যেন এই শাস্তি থেকে মুক্তি না পায়"।
৫ইমে একটি চেতনা
৫ইমে একটি উথ্যান
এই চেতনাকে দাবিয়ে রাখা যাবেনা।
এই উথ্যানের পতন হবেনা ইনশাআল্লাহ।
- এইচ এম আদিব
৫৭
৫ই মে'র পঙক্তি
"...বাধা দিও না-
শহরে আগুন জ্বলছে,
দাজ্জালের ফিতনার মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে
দলে দলে জড়ো হয়েছে নমরুদি শিষ্যদল,
মাঝরাতে আলো নিভিয়ে
বিশ্বাসের স্তম্ভগুলোকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে বধ্যভূমির দিকে,
এই দুর্দিনে প্রেমের মোহে
কি করে বলো, আল্লার আদেশ পরিত্যাগ করি,
ফেলে যাচ্ছি তাই মায়ের আদর,
বোনের হাতে বোনা ফুল তোলা বালিশ,
ফেলে যাচ্ছি পুরানো চৌকি, উঠানের রোদ,
বাজারের শেষ মাথার প্রাচীন জারুল গাছ
এবং সর্বশেষ তুমি- কুররাতুল আইন;
যদি ফিরে না আসি কখনো
কিছু সময় নিশ্চুপ থেকো- সবরে, প্রার্থনায়;
ভয় আর হতাশায় তোমার বিশ্বাস যেন দুলে না উঠে
হয়ে উঠো সুস্থির আছিয়ার মত,
রুয়ে আসা বীজগুলোকে বেড়ে তুলো সযত্নে,
আর লোকালয়ে প্রচার করো সাহসের সমাচার।"
সাহসের সমাচার থেকে
লেখকঃ শাহ্ মোহাম্মদ ফাহিম
৫৮
হেফাযতের অযোগ্যতা।
শাপলার রক্তাক্ত ইতিহাস আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। শহীদরা আমাদের সর্বদা অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু হেফাযতের অযোগ্যতা এই আলাপে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ৬ বছর হয়ে গেল। অথচ এখন পর্যন্ত শাহাদাৎ বরণকারীদের তালিকা করা হয় নি। আহতদের তালিকা হয় নি। যে ৬১ জনের তালিকা পাওয়া যায় সেটাও কতটুকু সঠিক জানা যায় না। কারণ অবস্থাদৃষ্টে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি বলেই মনে হয়। হেফাযত কেন এইসব কাজ করতে পারে নি? ১৩ পরবর্তী সময়ে হেফাযত বিভিন্ন কারণে কলুষিত হয়েছে বুঝলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনো একজন উদ্যোগ নিলেও তালিকা করা যেতো, অন্তত ৫ মে নিয়ে ১৩ পরবর্তী কালে হেফাযতের কিছু কন্ট্রিবিউশন হত। এর পিছনে একটা কারণ আমার মনে হয়, হেফাযত একটি বৃদ্ধ ও দুর্বলদের দ্বারা চালিত দল। বৃদ্ধ হওয়া সমস্যা না। দুর্বল হওয়া সমস্যা। তাদের দল চালানোর মত যোগ্যতা নেই। এজন্য প্রশ্ন উঠতেই পারে যারা একটা দল চালাতে পারে আ তারা কিভাবে দেশ চালাবে? হা, এই কথার যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু এর মানে এই না যোগ্য লোক হেফাযতের ভেতরে নেই। হেফাযতের ভেতরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক মেধাবী ও যোগ্য আলিম উলামা আছে। তাদের থেকে আমরা বড় আশা করতে পারি, কিন্তু এই মুরুব্বি, বৃদ্ধ আর দুর্বলদের নেতৃত্বের হেফাযত থেকে কওমি জননির দস্তরখানে বসা ছাড়া কিছুই আশা করা যায় না।
৫৯
৫ই মে ২০১৩ নিয়ে আমার অবস্থান
১. তখন বয়স কম ছিলো । রক্তে দৌড়াতো আওয়ামী চেতনা । তার উপর আবার হেফাজতে ইসলামের দাবীগুলোর মাঝে বিএনপির মসনদ দখলের স্বপ্ন লুকিয়ে আছে জানতে পেরে বুঝেছিলাম এই শাপলা চত্বর থেকে আবারো জর্জেট শাড়ি পড়া সেই অশিক্ষিত মহিলা তার জয়যাত্রা শুরু করবে । বিষয়টা শক্ত হাতে দমন করাটাই উচিত ছিলো বলে মানতাম । আওয়ামী বিরোধী যেকোনো কিছুর কাঁধে বন্দুক রেখে বিএনপি গুলি করতে সবসময়ই সিদ্ধহস্ত ।
২. তারপর যখন তাদের দাবীগুলোর সাথে বিএনপির সংশ্লিষ্টটা ছিলো না মনে হলো তখন সন্দেহ বাড়তে লাগলো ।
৩. যখন বুঝলাম আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা এমন অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে যা কল্পনারও বাইরে তখন বুঝলাম ৫ই মে আসলে জয় হয়েছে ইসলামবিদ্বেষীদের । আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী অনেক ইসলামবিদ্বেষী থাকলেও ৫ইমের ঘটনায় ওরাও আওয়ামী লীগপন্থী হয়ে যায় ।
এখন যেটা রিয়েলাইজ করি
৫ই মে আসলে হেরেছি আমরাই.........
- এস এম ফারহান আল-হানাফি
৬০
এক সময় যারা ছিলো আবেগী প্রতিবাদী, সময়ের ব্যবধানে পার্থিব লোভে পড়ে সেই তারাই হয়ে গেলো আপোষকারী!
সে সময়ে আমরা তাদেরকে না বুঝে সাপোর্ট করেছিলাম। সময়ের ব্যবধানে আপোষের হালত দেখে আমরাও বুঝে গেলাম যে, উনারা আসলে দ্বীনের সঠিক ধারক-বাহক নয়।
মহান আল্লাহর দয়ায় আমরা এখন আবেগী প্রতিবাদীও নই। আপোষকারী হওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। আমরা বিইযনিল্লাহ হিকমাহর সাথে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিবো। না মানলে/বাধা দিলে নবীদের তরিকায় প্রতিবাদ করবো। মহান রবের উপরই আমাদের ভরসা।
- উমর ফারুক (https://www.facebook.com/umar.bintabaruk)
৬১
#২৭৮৪
অফিসিয়ালি, সরকারি বক্তব্য হলো ৫ই মে হুজুররা শাপলা চত্বরে রঙ মেখে শুয়েছিলেন।
এই বক্তব্য এসেছে স্বয়ং কওমী জননীর পক্ষ থেকে এবং তাকে পরবর্তীতে সংবর্ধনাও দেয়া হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট যারা ৫ই মে সংক্রান্ত আবেগের প্রদর্শনী করছেন তারা না ঘরকা না ঘাটকা টাইপ অবস্থান থেকেই এই প্রদর্শনী করছেন।
৫ই মে প্যারাডাইম শিফট, স্পেশালি সেক্যুলার শিক্ষায় শিক্ষিত বাংলাদেশী তরুণদের অনেকের জন্য। তরুণ প্রজন্মের আলেমদের গরিষ্ঠ অংশকেও ধারন করে ৫ই মে।
কিন্তু কওমী মুরুব্বীদের পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে ক্যাপিটালাইজ করা এবং তারপরের ঘটনাপ্রবাহ সাক্ষ্য দেয়, তারা নিজেদের একটি অক্ষম বিরোধীদলের ঘুটি হিসেবে দেখার চেয়ে একটি সক্ষম অবৈধ সরকারের বেনেফিশিয়ারি হিসেবে দেখতে পছন্দ করবেন। মানেন আর না মানেন অফিসিয়ালি এটাই তাদের অবস্থান।
সিপাহী বিপ্লবের পর থেকে ইকোনমিক্যালি স্পাইনলেস একটা গোষ্ঠীতে আলেম সমাজের বিবর্তন এবং তাদের একাংশের ক্ষমতা তোষণের সুদীর্ঘ চর্চার একটা ক্লাসিক ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ৫ই মে কে মনে রাখতে হবে, যেখানে একটা ম্যাসাকারের পাচ বছরের মাথায় ম্যাসাকারড সাইড ম্যাসাকারকে ডিনাই করে এবং দেশের ৭০টা "ইসলামী" গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ৬৩ টা শাসকদের সাথে নিজেদের এলাইন করে।
যে প্যারাডাইম শিফট ৫ই মের কারনে হয়েছে, তার প্রভাব নিকট ভবিষ্যতে দেখা না গেলেও সময়ের সাথে সাথে দৃশ্যমান হতে থাকবে।
২০৩০ সালের পর দেশে বাম বলে কিছু থাকবে না। পক্ষ হবে দুটো, সা্ম্রাজ্যবাদের পক্ষের আর বিপক্ষের। এই সাম্রাজ্যবাদ ইন্দো-ইজরায়েলি-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।
দেশের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনগুলো ক্রমেই সময়ের সাথে সাথে প্রচলিত ভোটকেন্দ্রিক ধারা ছেড়ে বিপ্লবী ধারায় অগ্রসর হবে এবং যেসব ধারা ভোটকেন্দ্রিক, তাদের ক্রমশ স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটবে।
সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশী পরিচয়কে এখানে ইসলাম হিসেবে দেখিয়ে তার ওপর আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশী পরিচয়কে টিকিয়ে রাখার জন্য যে ধরনের লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়া দরকার, তার ছিটেফোটাও এখনো কেউ নিচ্ছে না কারন তথাকথিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামপন্থী নেতৃত্ব মোটের ওপর এখন আখের গোছাতেই ব্যস্ত।
লেখকঃ মুহাম্মাদ সজল। সাঞ্জাক ই উসমানের লেখক।
৬২
৫ ই মে নিয়া ইসলামপন্থীদের আলাদা বয়ান তৈরি করণ লাগবো। এইটা সময়ের প্রয়োজন, বাস্তবতার দাবি। বাস্তবতা হইতেছে ১৩ পরবর্তী সময়ে একটা নীরব বিপ্লব হইছে আর এখন সেইটার মধ্যে চাকা লাগানোর কাম চলতেছে যেন এইটা আরও দ্রুত আগায়, এইটাই সময়ের প্রয়োজন, আর এই জন্যই ৫ মে গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য ইসলামপন্থীদের আলোচনায় বারবার ৫ মে-র ইতিহাস আসবে। ৫ মে শুধু কানধরা আর গাদ্দারির ইতিহাস না। ইতিহাসের পাঠে নানা রকম দুঃখজনক গর্ত থাকে, কিন্তু গর্তগুলা 'ভালো ব্যাকটেরিয়া'র মত সবসময় উপকার বয়ে আনে। ৫ মে-র কান ধরা, কিংবা রক্ত মাখা টুপি জুতা, ছেড়া পাঞ্জাবি এই সব কিছুই একটা বড় ফল এনে দিবে। ১৩ এর পরে আওয়ামী লীগ আর শাহবাগি সেকুলাররা তাদের সমস্ত জনপ্রিয়তা হারাইছে এইটা ছিল ব্যর্থ বিপ্লবের সফলতা। মাত্র তো শুরু, এখনো অনেক কিছু বাকি, অবস্থাদৃষ্টে এইটা কওয়া যায়।
৬৩
আমি মনে করি না ১৩ তে আমরা পরাজিত হয়েছিলাম কিংবা আমরা হেরে গেছি। হারলে হেফাযত হারছে আপোষ করে, তারা ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, নামে মাত্র আছে। কিন্তু ১৩ এর সেই ঘটনা এক নীরব বিপ্লবের জন্ম দিছে যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ৯০ এর প্রজন্ম। ৬ বছরে যে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি বলা যায় সামনে আরও সম্ভাবনাময় দিন আসছে। আর এর পিছনে নাস্তিক্যবাদের উথান, ব্লগ যুগ, শাহব্যাগ আন্দোলনের কাউন্টারে ১৩ এর সেই ঘটনা অনেক বড় ভুমিকা রাখছে। সুতরাং এইটারে অস্বীকার করা যায় না। এই রক্তাক্ত ঘটনা ইসলামপন্থীদের কবর রচনা করে নাই, বরং শাহবাগিদের কবর রচনা করছিল। আওয়ামী লীগের মত মহাফ্যাসিস্ট দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আন্দোলন, সবচেয়ে বড় বিরোধিতা, সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ যেইটা কিনা আওয়ামী জালেমদের ভিত নাড়ায় দিছিল সেইটা ইসলামপন্থীরা করছিল এইটা ইসলামপন্থীদের জন্য গর্বের বিষয়। যত দিন যাবে ১৩ এর ৫ মে অনেক বেশি মাহাত্ম্যপূর্ণ বইলা প্রমাণিত হবে।
৬৪
শাহরিয়ার ইকবাল, ঢাকা ভার্সিটির টপ স্টুডেন্ট। সি এস।
বিএনপি সরকারের কাছে রাজাকারের ফাসি চাবার ছোট্ট দাবী নিয়ে আন্দোলনে গিয়েছিল। পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছে।
=====
উপরের ঘটনাটি পুরোই মিথ্যা। জাস্ট আপনাদের শক দিবার জন্য লিখলাম। আসলে চিন্তার কিছু নেই এমন কিছু ঘটেনি।
তবে চিন্তা করেন, এমন কিছু বিএনপি আমলে ঘটলে, তাতে মিডিয়া কিভাবে রিএক্ট করতো। কিভাবে সমগ্র দেশ জ্বলে উঠতো?
মনে আছে, ডা. মিলনের মৃত্যুতে এরশাদের মসনদ কিভাবে কেঁপে উঠে পরে ধ্বসেই যায়।
======
অথচ বুয়েটের ছাত্র , রেহান আহসান, সি এস ই সেইদিন শাপলা চত্বরে ছিল। সে কাউকে মারতেও যায়নি, কোথাও কোন ঝামেলাও করেনি। কোন সরকার পতন আন্দোলনও করেনি।
সে শুধু চেয়েছিল মুহাম্মদ (স) কে গালিগালাজ বন্ধ হোক।
সে চেয়েছিল নাস্তিকদের আস্ফালন বন্ধ হোক।
সে ছিল হুজুর।
========
হুজুর হবার কারণে তার মৃত্যু নিয়ে মূল ধারার কোন পত্রিকাই সেভাবে রিপোর্ট করেনি। কোন আন্দোলন হয়নি।
======--
জাফর ইকবাল রা পত্রিকায় লিখেছে, ৫ই মে নাকি হেফাজতের তান্ডব হয়েছে।
এরশাদের আমলে কোন বুদ্ধিজীবী যদি লিখতো, যে ডা. মিলনের তান্ডবে ঢাকা অচল হয়েছিল, তাই গুলি করার দরকার ছিল :: তাহলে আপনাদের কেমন লাগতো? অথচ এমন কথাই 'ড. আমেরিকান মুক্তিযোদ্ধা ক্যালটেক' বললেন। পত্রিকাও তা ছাপলো।
' নূর হোসেনের তান্ডব বললে কেমন লাগতো? '
=======
কাল প্রথম আলোতে দেখলাম, ৫ই মে হেফাজতের তান্ডবের ৬ বছর যাবার পরও নাকি ........
=======
বাংলার বুদ্ধিজীবী এবং পত্রিকামহল যে কতটা একচক্ষু হরিণ: তা প্রমান হতে আর কিছু বাকি নেই।
যে নূ্নতম নেংটি টি প্রগতিশীল সাংবাদিকদের ছিল, তাও খুলে যেতে বাকি নেই।
=========
সবচেয়ে ভাল লেগেছে, মৃত্যুর আগে রেহান আহসান তার বন্ধুকে ফোন করে নিজের ধার শোধ করতে বলে।
মুয়ামালাম শিখাতে চান? রেহাম আহসান থেকে শিখান।
=========
হে রেহাম, তুমি মরোনি, তুমি বেঁচে আছে, আমাদের হৃদয়ে।
আল্লাহ তোমাকে দিয়ে প্রগতিশীল সাংবাদিকদের লজ্জা খুলে দিয়েছেন।
আল্লাহ যেন তোমাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন । আমীন।
- এম রেজাউল করিম ভুঁইয়া
৬৫
জীবনে একবারই মাদ্রাসা থেকে পালিয়েছিলাম। ৫ই মে, ২০১৩। কিন্তু ঢাকা তক পৌঁছুতে সক্ষম হইনি।
#ব্যর্থ_এক_পলায়নের_গল্প
- আ হ ম সাকিব
৬৬
প্রত্যেক শহীদকে আমরা মনে রাখি, কারণ প্রতিদিনের আপোষনামা লেখতে তাদের রক্ত প্রয়োজন হয়।
ভুলি নাই দুদু মিয়ার সন্তানদের, ভুলি নাই শাপলা চত্বর, ভুলি নাই রক্তভেজা টুপি।
প্রতিরোধ যদি করার থাকে করুক শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীর, দরকারে থাকুক মওলানা ভাসানী, মোস্তফা মাদানী, আসুব হাসানুল বান্না, ইয়াসির আরাফাত আর শেখ আহমদ ইয়াসিন!
আপোষও কোনো না কোনো সময় প্রতিরোধ জারি রাখে, যখন খুনিরা আমার দুধ ভাই, সারারাত মানুষ মেরে যে পেটপুরে পরোটা-গোশত খেয়েছিল, বা সেই প্রধানমন্ত্রী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পড়ে যাচ্ছেন শোচনা ছাড়াই অথবা গুলির হুকুমবরদার কোনো অফিসার যখন আজোও আত্মহত্যা করেন নাই সাত বছরের রাসূল (সা.) প্রেমিক কওমী ছাত্রটির কাতরাতে কাতরাতে শহীদ হওয়ার দৃশ্যের তাড়া খেয়েও।
আমি শুধু স্মরণ করি সেই মেথরকে যে শাপলার রক্ত মুছে ফেলাকেই জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধ মনে করে দুই বছর পরেও তওবা করে বেড়ান।
৫ মে ২০১৪
- খোমেনি এহসান
৬৭
আজ মসজিদে মসজিদে দুয়ার আয়োজন হয়েছে কি??
.
আমি তো ৫ মের শহীদ দের নিয়ে টু শব্দও শুনিলাম না
- মুহাম্মাদ মাহবুব ইমন
৬৮
আমি নিজের গুরুত্বগুলো বুঝি ৫ মে'র মতো দিনগুলোতে এসে। আমি এখনো লেখিনি বলে ৫ মে নিয়ে কেউ গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখল না। সত্যিকার অর্থে ৫ মে'র রক্তলহু অশ্রু আর গোঙানিগুলোকে ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বোঝার মতো কোনো লোক নাই। কোথাও আপনি একটি সম্পূর্ণ বিবরণ পাবেন না। এটিই বাস্তবতা যে বাংলাদেশ এসব কাজ করার মতো কাউকে গড়তে পারিনি। একমাত্র আমিই মানুষের পরিবেদনাকে বাক্য দিয়ে ধারণ করার সামর্থ রাখি, কিন্তু ক্ষুধা-নিরাপত্তাহীনতা ঝুঁকিগুলো সামলাতে সামলাতে আমার হায়াত অপচয় হয়ে গেছে অনেক। তবে যখনই সুযোগ পাই আমি ৫ মে নিয়ে লংফর্মে কাজ করব ইনশাআল্লাহ। আমাকে আল্লাহ ঘটনার গভীরতা অনুসন্ধান, পরিস্থিতি নৈর্বত্তিক বিশ্লেষণেী তৌফিক এনায়েত করেছেন, আমার কতশত সীমাবদ্ধতা ও বঞ্চনা আছে তবে আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন প্রজ্ঞার নেয়ামত, তাই কোনো একদিন এসব বিবরণ লেখে যাব, যেমনটি লেখব জামায়াত-শিবির-কমিউনিস্টদের ওপর পরিচালিত রাষ্ট্রীয় নিধন কর্মসূচির বিবরণ, সেইসব অনাগতে দিনের জন্যই তো বেঁচে থাকার এত লড়াই। আমার চেয়ে অনেক বড় বড় প্রতিভা থাকলেও একুশ শতকের এই মহাসময়ের বড় কাজগুলোর তাগিদবোধ নাই তাদের, আমার আছে, আমি পেরেশানবোধ করি এবং এসব পেরেশানি আমাকে বিশেষ করে তোলে।
- খোমেনি এহসান
৬৯
বাংলাদেশকে বুঝতে হলে দুইটা বড় ঘটনা বুঝতে হবে অনেক বড় নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার শিকার জামায়াত-শিবিরের কিছু লোক যেমন এখন সংস্কারপন্থী হয়ে সব দায় থেকে মুক্ত হচ্ছে, ৫ মে'র মতো বড় হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েও হেফাজতের কিছু লোক ইসলামী রাজনীতির দায় থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা সেক্যুলার পরিসরে জায়গা পেতে হেন কোনো চেষ্টা নাই যে করে না এবং এরা সবাই সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের চক্ষুশূল ইসলামী রাজনীতির বিরোধী বলে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যস্ত।
- খোমেনি এহসান
৭০
১৩ কেন গুরুত্বপূর্ণ
যত দিন যাবে ১৩ আরও বেশি মাহাত্ম্যপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকবে। বাংলাদেশের ইসলামপন্থার ইতিহাসে এর একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। যদি খেয়াল করি দেখবো যে বাংলাদেশের মুসলিমদের ইসলাম নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে ১৩ এর ঘটনার পর। ১৩ এর ঘটনা ছিল সেকুলারদের শাহবাগ আন্দোলনের কাউন্টার। শাহবাগি সেকুলার আর নাস্তিকদের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হওয়া একটা আন্দোলন একটা ইসলামী জাগরণ হিসেবে কাজ করছে।
এইটার ভুমিকা এতো বেশি যে শাহবাগ আন্দোলনের কয়েক বছরের মাথায় শাহবাগি হয়া যায় একটা গালি, ডাইকা টাইনাও শাহবাগে আর লোক জড়ো করা যাইতেছে না।
অন্যদিকে শাপলা চত্বরের আন্দোলনে যারা আসছিল বা যেই তলিবুল ইলমরা আসছিল এরাই একেকটা বম্ব হয়া তৈরি হইতেছে। সেকুলারিজম, নাস্তিকতা, বাতিল মতবাদগুলারে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত বহু লোক তৈরি হইতেছে।
তবে আমি একটা অন্যদিকে আলোকপাত করব। ১৩ রে আমরা ভুলে যাই নাই এইটা সত্য কিন্তু ১৩ নিয়া আমাদের তেমন কাজ লক্ষণীয় না। রশীদ জামিল সাব ১৩ এর ঘটনার ভিতরের বিষয় অনুসন্ধান করছেন, আতিক উল্লাহ সাব বাংলার ইন্তিফাদার বর্ণনা দিছেন; এছাড়া আর কোনো কাজ কিন্তু আসে নাই! সেকুলারদের থেকে আমাদের শেখা উচিৎ প্রোডাক্টিভিটি। হা, সত্যি বলছি। এই জানোয়াররা যা করে দুনিয়ার জন্য, তবু এরা কতটা প্রডাক্টিভ, অথচ আমরা এরকম অলস কেন? আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করি, তবু কেন প্রোডাক্টিভ হতে পারি না। এই জন্যই হয়তো বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে এখনো সেকুলারদের ন্যাংটো করতে পারি নি। অবশ্য কাজের গতি বাড়লে শীঘ্রই এদের ন্যাংটো করে পুরুষাঙ্গে পাথর ঝুলিয়ে শাহবাগে রোদের মধ্যে দাড় করিয়ে রাখা হবে। সেটা হয়তো হবে আরও সময় লাগবে। কিন্তু আমরা এতো অলস, আমাদের পাছায় বেত দিয়া বাড়ি দিয়ে কাজ করানোর মত একটা নেতার খুব প্রয়োজন।
একুশে ফেব্রুয়ারি কিংবা মুক্তিযুদ্ধ, এগুলো সেকুলারদের বদর উহুদের মত, এরা এইসব নিয়ে যা কাজ করে, আমরা যদি শাপলার ঘটনাকে সেক্যুদের ৫২ এর ঘটনার সাথে তুলনা করি তাইলে আমাদের কাজ কতটা অল্প তা বুঝতে পারবো, আর বুঝতে পারবো আমরা কেন এখনো বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে জয়ী হতে পারছি না।
আল্লাহ আমাদের বুঝ দাও, আমাদেরকে কাজের মত কাজ করার তৌফিক দাও।
৭১
বাংলাদেশের সরকার কতৃক রাষ্টীয় সন্ত্রাসী হামলার ৬ষ্ঠ বছর।
৫ ই মে রাজধানীর মতিঝিল, শাপলা চত্বরের রাত পেরিয়ে রক্ত মাখা সকাল।
২০১৩ সালের আজকের এই দিন, ৫ ই মে বর্তমান সরকারের পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের এক নেক্কার জনক কালো অধ্যায় রচিত হয়।
নিশ্চয়ই আমরা ভুলি নাই এই রাষ্টীয় এই হামলার কথা।
এই দিন টিতে, রাতের আধারে গভীর অন্ধকারে , নিরিহ,নিরস্ত্র, ঘুমন্ত অবস্থায় হাজারে ছাত্র, যুবক সহ তৌহিদী জনতার উপর নির্মম হত্যাকান্ড চালায়, বর্তমান সরকারের যৌথবাহিনি নামক রাষ্টীয় সন্ত্রাসীরা।
তাদের অপরাধ বাংলাদেশের জমিন থেকে নাস্তিক্যবাদ কে উৎখাত করতে তারা আন্দোলন করেছিলো। সে আন্দোলন কোন সরকারের বিপক্ষে বা সরকারের মন্ত্রীদের বিপক্ষে ছিলো না। দুঃখজনক সরকার সে নাস্তিক্যবাদ কে সমর্থন দিয়ে এই হামলা চালায়।
জানি বর্তমান সরকার এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের বিচার পক্রিয়া কখনো পদক্ষেপ গ্রহন করবে না তাই তাদের কাছে বিচারের আশা করাটা ভুল হবে। কারন বর্তমান সরকারের এজেন্টরাই এই হত্যাকান্ডের ধোসর বলে প্রমানিত হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের এই কালো দিনটি তে যারা শহিদ হয়েছেন আমরা তাদের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান রাব্বুল আলামীন যেন তাদের জান্নাত দান করেন।
- মোহাম্মদ আয়াত উল্লাহ
৭২
৫-ই মে এর এই ছবিটা সবচেয়ে কষ্টের। জানি না ওরা পূর্ব পরিচিত কি-না, নাকি ওখানেই প্রথম আর শেষ দেখা ছিলো। একটা নিথর দেহকে কোলে নিয়ে এর চেয়ে কষ্টের দৃশ্য আর হয় না। কিছু ভিডিও ক্লিপসে দেখা গিয়েছিলো কীভাবে পাখির মতো মানুষ মারা হচ্ছিলো। পরের দিন রটে গেলো তারা নাকি রঙ মেখে শুয়ে ছিলো। সারা দেশের অবরোধ উপেক্ষা করেও শাপলা চত্বরে মানুষ ভর্তি হয়ে গিয়েছিলো। তারা কি তামাশা করতে গিয়েছিলো? গিয়েছিলো যেসব ব্লগার দিনের পর দিন অনলাইনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে কুৎসা রটাচ্ছিলো, উম্মুল মু'মিনিনদের নামে অপবাদ দিচ্ছিলো - তাদের বিরুদ্ধে বিচার চাইতে। এর বিচার হয়তো হয় নি। হয়তো কিছু জাগতিক স্বার্থ আর স্বীকৃতির বিনিময়ে একটা রফা হয়ে গিয়েছে এই আত্নত্যাগ। তবে একটা জিনিস কী, এরপরেই শিক্ষিত মুসলিম সমাজ দুইটা ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিলো। কারা যুগের আবু জাহেল, আবু লাহাব তা বুঝার জন্যে এর চেয়ে ভালো উপলক্ষ্য আর হতে পারতো না।
- মিসবাহ মাহিন
৭৩
আমার বাবার তাওহিদের পথে আসার বড় একটা উপলক্ষ্য ছিল ৫-ই মে। শাপলা চত্ত্বরে রং মেখে শুয়ে থাকা কিছু ছবি আর ভিডিও। আজ সবই ইতিহাস।
- মুনিরুল ইসলাম ইবনু যাকির
৭৪
Rehan Ahsan এর কথা মনে পড়ে গেলো। বুয়েটে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো। গত বছর ৫ মে ও শাপলা চত্ত্বরে নিহত হয়েছিলো। আমার পরিচিত এক সেলিব্রেটি ব্লগার কাম সাংবাদিক, কাম কোটিপতি ব্যবসায়ী, কাম প্রগতিশীল যখন দাবী করেছিলো শাপলা চত্ত্বর অভিযানে একজনও নিহত হয় নাই। তখন আমি রেহানের কথা বলেছিলাম। উত্তরে আমাকে সে জামায়াতের এজেন্ট বলেছিলো।
রেহানের জানাজার নামাজ বুয়েটে হতে দেয়া হয় নাই। অথচ রেহান আল্লাহকে বিশ্বাস করতো। আর ঐ সেলিব্রেটি ব্লগাররা ইসলাম বিদ্বেষী থাবা বাবার জানাজার নামাজ আয়োজন করেছিলো শাহবাগে। এদের ধর্মগুরু হুমায়ুন আজাদ একটা কবিতায় লিখেছিলো, "সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে"। বেঁচে থাকলে আজ লোকটি দেখে যেতে পারতো সবকিছু, এমন কী ধর্ম পালনের অধিকারটাও তার উত্তরাধিকারী 'নষ্ট'দের অধিকারেই চলে গেছে।
এই তথাকথিত প্রগতিশীলদের যখন ধর্ম নিয়ে পর্নো সাহিত্য রচনার কারণে পুলিশ গ্রেফতার করেছিলো তখন এরা বাক স্বাধীনতার দাবীতে 'মাজল মি নট' পোস্টার টানিয়ে নিজেদের বাক স্বাধীনতার হোলসেল এজেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। অথচ এরা নিজেরাই আমাদের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীকে দিয়ে পুলিশের কাছে নামের তালিকা পাঠায়। মন্ত্রী দিয়ে তদবির করে জামিন না দেবার জন্য বিচারকের ওপর চাপ দেয়ায়। রেহানের শেষ পোস্টটি ছিলো এই বিষয়টা নিয়েই। সেই পোস্টে আমার নামও ছিলো। ফেসবুকে সেই পোস্ট আছে, রেহানের আইডি আছে, অথচ রেহান নেই।
মৃত্যুর ঠিক একমাস আগে রেহানের একটি স্ট্যাটাস ছিলো, "আল্লাহ এর সাহায্য খুব কাছে ..." (https://www.facebook.com/rehanahsan/posts/10200301883782247)। ও জেনেশুনেই নিজের গন্তব্যে পৌছে গেছে।
- এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান। বি এন পি।
৭৫
পাঁচই মে-এর এইদিনে যুগের নৃশংসতম সেই কালরাত মনে করিয়ে দেয় নিষ্পেষিতদের বেদনাহত চিৎকার আর নিথর দেহের পাশে জমে ওঠা জমাট রক্ত। আমি নিন্দাজ্ঞাপনে অবিশ্বাসী, বরং ওটার প্রতি ঘৃণা রাখি! কারণ এটি নির্যাতিতের প্রতি কৌতুক যেন এবং তার জন্য দ্বিতীয় জখম।
সেই রাতের স্বরণে হৃদয়ে আরও ভেসে ওঠে আপনদের(?) অবিচক্ষণতা আর স্বার্থপরতা, সাথে হয়ত ছিল রক্তমূল্যের ভাগবাটোয়ারাও...। ভুলিনি কিছুই, দুটোই শিক্ষা আর মুক্তির পথের সোপান হয়ে থাকল ইন শা আল্লাহ।
- সদরুল আমীন সাকিব।
৭৬
ছ'টা বছর অতিক্রান্ত হল। যেদিন রক্তকমল ও তার দোসরদের চক্রান্তে, স্বার্থান্বেষীদের হিংস্র থাবায় রক্তলাল হয়েছিল সফেদ শাপলা।
#ফিরে_দেখা
#শাপলা_চত্ত্বর
#৫_মে_২০১৩
- কামরুল ইসলাম
৭৭
৫ মে শাপলাচত্বরে শহীদ হওয়া বুয়েট ছাত্র শহীদ রেহান আহসানের কবিতাঃ
রাতের আঁধার, হাহাকার শুধু, পথ পাই না খুঁজে,
গর্জায় পশু, ভয় দস্যুর, কখন যাবে ঘুঁচে?
আসছে ঝড়, বাজ কড়কড়, হৃদয় কেঁপে উঠে,
কোথায় গেল যোদ্ধার দল, শংকা যাবে টুটে।
আছে কুফফার, আছে মুরতাদ, আছে মুনাফিক সেনা,
দিক পাই না, আলো জ্বালি না, মোরা গোলাম কেনা।
আমির নেই, খলিফা নেই, কোথা আলেমের দল,
দ্বীন বুঝি না, লড়ব কীসে, নেই ঈমানের বল।
শত্রুরা আজ মাথা চাড়া তাই সামলাব কীসে জানি না,
জ্বলছে আগুন, মরছে মানুষ, হিসেবটাও রাখি না।
অল্প কজন, দাঁড়িয়ে অনড়, বাকিরা কোথায় গেল,
দাবী করে সব, মুমিন তারা, ঈমানটা এলোমেলো।
ভাই মরছে, বোন মরছে, অত্যাচারিত সবাই,
তবুও যেন কিসের বিভেদ, কীসের যেন বড়াই।
এ নয় মুমিন, ও হল কুকুর, ওরা ভরপুর ভুলে,
বিভেদটা যে ঈমানের নয়, এক পতাকার তলে।
দাঁড়াও রুখে, গড়ো প্রতিরোধ, শাহাদাহ যেন লক্ষ্য,
অস্ত্র ঈমান, আল্লাহ সাথে, তাজা বুকের রক্ত।
মাসিক রহমতে শাপলা শহিদ রেহান আহসানের কবিতা প্রকাশিত হয় সেই পৃষ্ঠার লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/photo.php?fbid=543876429009150&set=a.197119617018168&type=3&permPage=1
৭৮
স্মৃতিতে অম্লান ৫ই মে, জেনে নিন হেফাজতের কথা
পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল ঘেরা এ ভূখণ্ডের বিশ্বাসী মানুষ এ রাতের কথা ভুলবে না। নাস্তিকদের সমুচিত শাস্তির দাবীতে দিনভর সোচ্চার সফল অবরোধ শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত নবীপ্রেমিক মানুষগুলো যখন ঘুমিয়ে আছে, কিছু আল্লাহপ্রেমিক যিকির-নামায ও ইবাদতে নিমগ্ন- এমন শান্তিপ্রিয় নিরীহ মুমিন মুসাফিরদের উপর অতর্কিত নারকীয় তাণ্ডবে উন্মত্ত হয়ে ওঠে সরকারের পেটোয়া বাহিনী। তাদের ঘৃণ্য হিংস্রতায় সেদিন কেঁপে উঠেছিল আকাশ, থেমে গিয়েছিল রাতের স্নিগ্ধ বাতাস। ইসলামপ্রেমিক ঈমানদার মানুষের উপর নিজেদের খোদাদ্রোহী আক্রোশ মেটাতে সাঁজোয়া যান, বুলেট এবং প্রাণঘাতি অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পুলিশ-র্যাব-বিজিবির পোষাকে একদল হিংস্র মানুষ। আজ কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও সে ভয়াল রাতের ভয়ানক দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা নিরপরাধ মুসলমানরা জান বাঁচাতে ছুটে পালাচ্ছিল এখানে ওখানে। আগুনের লেলিহান শিখা আর রাবার বুলেটের গগনবিদারী ধ্বনিতে শাপলা চত্বর কেঁপে উঠেছিলো বার বার,হাজার লাখো বার। ভেসে গিয়েছিল কিছু অকুতোভয় সাহসী বীরের উত্তপ্ত রক্তস্রোতে। এ বীর সন্তানদের শহীদী চিরঞ্জীব রুহের প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম।
এর আগে যেভাবে ঢাকায় দুপুর-বিকালের পর থেকে দফায় দফায় শান্তিপ্রিয় হেফাজত কর্মীদের উপর সন্ত্রাসীরা হামলে পড়ছিল, পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছিল নিরীহ মাদরাসা ছাত্রদেরকে- রক্তপিপাসু হায়েনাদের এসব হত্যাযজ্ঞ দেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাই ইতিপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্তাবলীর আলোকে এবং আমীরে মুহতারাম শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. এর চূড়ান্ত ও অবিচল নির্দেশে শাপলা চত্বরেই শান্তিপূর্ণ অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে। অবস্থানের ঘোষণা প্রদান করেন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবূনগরী।
সেদিনের সন্ধ্যা পরবর্তী শান্তিপূর্ণ সমাবেশে জীর্ণ-শীর্ণ মলিন পোষাকের সাদামাটা মানুষগুলোর যিকির-তাকবীরে ক্ষমতার মসনদ কেঁপে ওঠেছিল শাসকের। তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে একটি নির্মম সিদ্ধান্ত নিল। এতে রক্ত ঝরল অজস্র মুমিন-মুসলমানের।
কিন্তু হায়! আজ সেই পাষণ্ড সরকারের বিরুদ্ধে কথা না বলে আঙুল তোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। পারস্পরিক কুৎসা-কলহে লিপ্ত হয়ে হেফাজতকে দুর্বল করে সরকারকে আরও গভীর ষড়যন্ত্রের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে কি অবলীলায়। ঈর্ষাকাতর হয়ে ভুল সিদ্ধান্তের নামে কিছু মিথ্যাচার দেখে আজ হৃদয়ে গভীর হাহাকার জেগে উঠে, কি সেলুকাস! কি বিচিত্র আমাদের সমাজ! আল্লাহ ও তার রাসূলের ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে যারা রক্ত দিল শাপলা চত্বরে- সেইসব বীরদের স্মৃতির প্রতি এ কেমন অবিচার! তাদের আত্মত্যাগের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে আজ কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন পরস্পরের নামে। হেফাজতের সবাই তো একসাথে ছিলেন নীতি-নির্ধারণী ফোরামের অসংখ্য বৈঠকে। তবে কি কিছু লোক কুৎসা রটিয়ে হেফাজতকে কলঙ্কিত করে হামলাকারীদের নির্মমতাকে আড়াল করে দিতে চায়! দেশবাসীর সজাগ দৃষ্টিকে তারা কোনদিকে ঘুরিয়ে দিতে চায়! এভাবেই কি ইতিহাস মোছা যায়!
অন্য দিকে যারা হেফাজতের আন্দোলনে ছিলনা, হেফাজতের কমিটিতে ছিল না, হেফাজতের নীতি নির্ধারণী কমিটিতে ছিল না,হেফাজতের সাথে নূন্যতম সম্পর্ক ছিল না, ছিল হেফাজতের বিরোধিতায়, হেফাজতের আন্দোলনের প্রকাশ্য বিরোধিতায়, হেফাজত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় তারাই রক্তে লাল শাপলার পর অজানা কারণে হেফাজতের সবচেয়ে বেশী দরদী সেজে গেল। হেফাজতের জন্য মায়া কান্না করতে আরম্ভ করলো। মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক ইত্যাদিতে) সরাকারের ভাষায় কথা বলতে লাগলো। সরকারের টার্গেট করা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গীবত আর বুহতানের বন্যা বয়ে দিলো। প্রশ্ন হচ্ছে, যারা আকাশ ভাঙ্গা মিথ্যাচার করলো- এরা কারা ? কি এদের পরিচয়?এরা কোন দলের? কোন পথের? এটা কি কারো অজানা? সবার কি জানা নেই ?
হ্যা, সরকার কিছু নেতাকে টার্গেট করলো। যুদ্ধ এবং আন্দোলনে অবশ্য এটাই নিয়ম। নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে টার্গেট করতে হয়। টার্গেটে আক্রমণের পর আক্রমণ শানাতে হয়। আন্দোলন নস্যাৎ করতে হয়। সরকার তার কাজ করলো। তারা তা করবে এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমাদের পোশাক পরে যারা এই মিথ্যা রটনা সাজালো, মিথ্যার ফুলঝুরি সাজালো, গীবত, বুহতান, অপবাদের পর অপবাদ ও সিমাহীন মিথ্যাচার করলো এবং আজো করে যাচ্ছে- ওদের কি হবে? অবশ্য তারা রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানাতে এখনো ব্যস্ত সময় পার করছে। রাফেজী আর খারেজী ফেরকার ইতিহাস সবার পাঠ করা উচিৎ।
আরও স্পষ্ট করে বলি, যারা বলছেন, হেফাজতের ভুল সিদ্ধান্তে এতগুলো মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে- তাদের কাছে সবিনয় জানতে চাই, একপক্ষকে দোষী বললে অপর পক্ষকে নির্দোষ বলতে হয়, তবে কি আপনারা হেফাজতকে ভুল বলে সরকারকে ধোয়া তুলসী পাতা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন? সব দোষ সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের কাঁধে, আর এতে সরকারের মোটেও দায় নেই- এটাই কি আপনাদের অভিমত? সরকারকে নির্দোষ, মা’সুম প্রমাণের জন্য সরকারের নির্দেশনায়, প্রযোজনায়, পরিকল্পনায় এবং পরিবেশনায় কি আপনাদের এই জঘন্য মিথ্যাচার? নাকি ইসলামী জনতাকে বিভ্রান্ত করে গড়ে উঠা ইসলামী জাগরণকে ফুঁৎকারে নিভিয়ে দেয়ার মহাপরিকল্পনারই অংশবিশেষ? হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে গালি দিয়ে সরকারের হালুয়া-রুটির ভাগ পেতে কিংবা জালিমের সাথে আঁতাত করে পিঠ বাঁচাতেই কি আপনাদের এমন মিথ্যাচার? নাকি সাময়িক বিজয়ীদের প্রশংসা এবং ক্ষনিকের পরাজিতের বিচারের চিরচরিত পন্থা আঁকড়ে থাকার অপপ্রয়াস?
যারা বলেন, হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে- তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন- হিংসাপ্রসূত এমন গুজবের আড়ালে কি আমাদের মুহতারাম আমীরকে অক্ষম প্রমাণিত করা হচ্ছে না? তবে তো আপনার কথা আর সরকারী মিথ্যাবাদীদের বক্তব্যে কোনোই তফাত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিজের অজান্তেই কি আপনারা সরকারের সাথে এক সুরে সুর মেলাচ্ছেন না?
যারা মিথ্যাচার ও ঈর্ষাকাতর কুৎসা রটনায় ব্যস্ত হয়েছেন, তাদের মুখোশ আজ উন্মেচিত।হেফাজতের সম্মানিত আমীরের বিরুদ্ধে প্ররোচিত হওয়ার অপবাদ এনে যারা নিজেদেরকে দূরদর্শী প্রমাণে ব্যস্ত- ইতিহাস ও সীরাত সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা, হীন মানসিকতা ও কাপুরুষতা আজ সবার কাছে প্রমাণিত।
যারা আজ মিডিয়ায়,ফেসবুকে কিংবা এখানে ওখানে বক্তব্য বিবৃতিতে এ নির্মমতার দায় হেফাজতের ভুল সিদ্ধান্তের কাঁধে চাপিয়ে সরকারকে আড়াল করে রাখতে চায়, আমরা চাইলেই আমাদের কাছে সুরক্ষিত সব সই-স্বাক্ষর প্রকাশ করে সেই মানুষগুলোর দ্বিমুখী আচরণ প্রমাণ করে দিতে পারি।
যেমন ৪ মে’র নীতি নির্ধারণী কমিটির যৌথ মিটিং এ লিখিত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তের রেজুলেশনের হুবহু কপিটি আজ অনেকের কাছেই আছে। বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদনেও ছাপা হয়েছে।
হেফাওত অন্য কোন প্রমাণ হাজির করার দিকে যাচ্ছে না। কারণ, যুগে যুগে ইতিহাস সাক্ষী, এমন রক্তসাগর নজরানা দিয়েই ইসলাম তার সুমহান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আর যারা ভীতু কাপুরুষ- যারা মদীনার সেই …… প্রজন্মের উত্তরসুরী- তারাই মিথ্যাচারের মোড়কে নিজেদেরকে সাধু সন্ন্যাসী প্রমাণে তৎপর রয়েছে।
হেফাজত মনে করে হেফাজতের আন্দোলন ১০০% সফল। সব সফলতা দৃশ্যমান হয় না, হতে পারে না। তার পরও আমরা বলি, যদি হেফাজতের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্দোলনের সাফল্য দৃশ্যমান হতো ( দাবী আদায় হয়ে যেতো) তবে সাফল্যের সুতা পরিমাণ কৃতিত্বও নিয়েও টানা তানি হতো? আমরা নিশ্চিত, না, দেয়া হতো না। তাহলে বাস্তবে সফল দৃশ্যত অসফলতার দায়ভার কিছু নেতৃত্বের কাঁদে চাপিয়ে দেয়ার কারণ বা রহস্য কি ? হ্যাঁ, এটাই নিয়ম, এমনই হয়ে আসছে যুগে যুগে। সাফল্যের ক্ষেত্রে সব কৃতিত্ব আমার আর ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ‘আমি কিছু ই জানি না’-এর চিরাচরিত ভাসার প্রয়োগ ! আল্লাহ ক্ষমাশীল।
আবারও সবিনয়ে মনে করিয়ে দিতে চাই, ৫ই মে রাতের অবস্থান এবং এর পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলো ছিলো সর্বসম্মত। কারো একক ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব ছিল না, সম্ভব হয়ও না। যারা এমনটি মনে করে তারা অন্য জগতের মানুষ। রাজপথের আন্দোলন,সংগ্রাম, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে তাদের কোন পরিচয় নেই। আর যারা আল্লামা শাহ আহমদ শফী এবং আল্লামা বাবুনগরীকে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম প্রমাণিত করতে চাইছেন, তারা সরকারের মদদপুষ্ট দালাল। তারপরও যদি কারো সন্দেহ থাকে,তবে নীতি নির্ধারণী কমিটির বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাব জেনে নিতে পারেন অথবা সেদিনের সই-স্বাক্ষর এবং সম্মিলিত সিদ্ধান্তুগুলোও দেখতে পারেন। অথবা চলে যান হাটহাজারীতে- সরাসরি জিজ্ঞেস করে আসুন আমাদের মুহতারাম আমীরকে বা মহাসচিবকে- এ সত্য চ্যালেঞ্জ আমাদের প্রথম ও শেষ সুস্পষ্ট প্রমাণ।
চারিদিকে এমন মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের কালোমেঘ দেখেও হেফাজত শঙ্কিত কিংবা হতাশ নয়। পবিত্র কুরআন যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে একদল মুসলমান নামধারী ……র সংশ্রব থেকে সতর্ক করেছে- ।তাদের পরিচয় দিতে মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাক বলেন, ‘যারা ঘরে বসে থাকে এবং নিজেদের ভাইদের সম্পর্কে বলে, আমাদের কথা মতো চললে তারা নিহত হতো না।’ (সূরা আলেইমরান-১৬৮)
হেফাজত শুরু থেকে আপোষহীন। আমাদের শক্তি ও সাহস এখনও অমলিন। কোনো মিথ্যাচার কিংবা গুজব হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব ও ঐক্যে কণা পরিমাণও ফাটল ধরাতে পারবে না। বরং, যেসব দ্বিমুখী মানুষদের ভীতু চেহারা আজ উন্মোচিত, তাদের স্বার্থান্ধ উপস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে হেফাজত এগিয়ে যাবে আমাদের লক্ষ্যপানে। মহান আল্লাহ আমাদের সাথে।বিজয় আমাদের দ্বারপ্রান্তে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া।
ফাতেহ২৪.কম এর লিঙ্কঃ https://fateh24.com/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A7%AB%E0%A6%87-%E0%A6%AE%E0%A7%87-2/
৭৯
হেফাজত নামা, কিছু বিশ্লেষণ পড়ে বেশ মর্মাহত হয়েছি
মে ৬, ২০১৮
- আশরাফ মাহদী
হেফাজত নিয়ে গতকাল আমাদের ঘরানার অনেকেই লিখেছেন। তবে ৫ই মে’র সেই অবস্থান নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ পড়ে বেশ মর্মাহত হয়েছি। ফেসবুকে কিছু পরিচিত মুখদের দেখলাম শুধু সেই রাতের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে পুরো হেফাজতকেই বিতর্কিত করে ফেলছেন। তাদের কাছে ৫ই মে’র আগের হেফাজত কোন গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে না।
প্রতিক্রিয়া থেকে নয়, বরং সেই রাতের অবস্থান প্রসঙ্গে কিছু বিষয় পরিস্কার করতে কিছু কথা লিখছি।
হেফাজত অবশ্যই অরাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু এই অরাজনৈতিকতাকে অনেকে ভুল বুঝেন। তারা একটা ঘোরের মধ্যে থাকেন। এবং নিজেই অরাজনৈতিকতার একটা সংজ্ঞা দাড় করান। তাদের মতে অরাজনৈতিক সংগঠন যদি জনগণের কোন দাবী নিয়ে আন্দোলন করে তাহলে সেখানেঃ
-কোন রাজনীতি থাকবেনা
-কোন রাজনীতিবিদ থাকবেনা
-অরাজনৈতিক দাবীর কোন অংশ কোন রাজনৈতিক দলের স্বার্থের সাথে মিলতে পারবেনা।
এগুলোই তাদের কাছে অরাজনৈতিক সংগঠনের আন্দোলনের একমাত্র রূপরেখা। তাই হেফাজতের সাথে রাজনীতির যদি কোন সংযোগ দেখা যায় সেটা উনারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেন না। তখন মনে হয়, বাংলাদেশ তাদের কাছে একটা রাষ্ট্র যেটার যাত্রা শুরু হয়েছে ২০১৩ সালে আল্লামা আহমদ শফির নাস্তিকবিরোধী আন্দোলনের ডাকের মাধ্যমে। এর আগে এখানে রাজনীতি বলতে কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না।
এইভাবে ভাবার কারণেই তাদের অনেক সমীকরণ মেলেনা। কারণ তখন হিসেবটা যেখান থেকে শুরু করতে হয় সেটা পুরোপুরি আউট অফ কন্টেক্সট একটা ব্যাপার।
বাস্তবতায় আসি,
শাহবাগ ইস্যুতে হেফাজতের সাথে জামাত-বিএনপির একটা সংযোগ যে ছিল সেটাকে অস্বীকার করা যাবেনা। আর সেই সংযোগটা হল শাহবাগের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। হেফাজতকে এটা করতে হয়েছিল ইসলাম বিদ্বেষী নেতৃত্বকে রুখে দাড়াতে। আর জামাত বিএনপিকে করতে হয়েছে রাজনৈতিক হুমকিকে দমন করার জন্যে। এখানে জামাত বিএনপির দোষারোপ যারা করেন তাদের নিরপেক্ষভাবে খেয়াল করা উচিত যে রাজনৈতিক হুমকির মুখে পড়লে যেকোন দল একই কাজ করতো।
তাই দাবী আদায়ের ক্ষেত্রে হেফাজতের সাথে জামাত বিএনপির এই সংযোগকে অস্বীকার করা যাবেনা। অস্বীকার করলেই দুনিয়ার যতসব আপত্তি ও প্রশ্নগুলো খুব শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আপনি তখন কোন সমীকরণ মেলাতে পারবেন না।
আপনার মনে তখন প্রশ্ন আসবে, সে রাতে তাহলে কোন শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে হেফাজত শাপলায় অবস্থান নিয়েছিল?
আচ্ছা, কিছুক্ষণের জন্য এ কথা মেনেই নিলাম যে জামাত বিএনপি হেফাজতকে পরিচালনা করে ক্ষমতায় বসতে চেয়েছিল। তাহলে এত বছর ধরে রাজনীতি করে আসা দলটার কৌশল এতই কাচা যে এত বড় একটা আন্দোলনকে পরিচালনা করে সরকারের পতনের ছক আকতে পারলোনা? গত তিনমাস সরকারবিরোধী কোন কর্মসূচি পালন করালো না?
এমনকি ৫ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজত কর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতে পাঠিয়ে দিল?
শেষ প্রশ্ন, একবারও বিএনপি থেকে একথা বলা হয়নি যে তারা হেফাজতকে সমর্থন দিচ্ছে। এরপরও কেন খালেদা জিয়া বিএনপি নেতা কর্মীদেরকে হেফাজতের পাশে দাড়াতে বলায় সমস্যাটা কি হল?
একটা পলিটিকাল পার্টি কি সোশাল মুভমেন্টে জনগণের পাশেও দাড়াতে পারেনা?
আপনারা যারা সত্যিই মনে করেন যে জামাত বিএনপি মদদ দিয়ে যাচ্ছিল পেছন থেকে তারা অনুগ্রহপূর্বক এই প্রশ্নের উত্তরগুলো দিয়ে যান।
হেফাজতের রাতে ওবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেব বেশ শংকিত ছিলেন। অনেক চেষ্টা করেছিলেন হেফাজত কর্মীদেরকে বাচাতে।
আমি উনার শংকাকে শ্রদ্ধা করি। এবং একজন কর্মী সমর্থকের জায়গা থেকে আমরাও এই শংকাটাই করেছিলাম।
কিন্তু মনে রাখতে হবে নদভী সাহেব নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কেউ ছিলেন না। তাই তাৎপর্যের বিচারে তার শংকাটা আর দশটা হেফাজত কর্মীর মতই বলা যায়। কিন্তু উনার সেই সাক্ষাতকারটা নিয়ে যেভাবে প্রমাণ করা হল যে হেফাজত অন্য কোন শক্তির ইশারাতেই সেরাতে অবস্থান করেছিল এটা পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটা লেখা ছিল। এই লোকগুলোর চোখে কেন যেন হেফাজতের ইতিবাচক কোন কিছুই ধরা পড়েনা।
এরা কতটা বাইয়াসড একবার খেয়াল করেন, সরকার যে ক্র্যাকডাউন চালিয়ে হেফাজতকে দমন করলো, সেইটা নিয়ে তারা কিছুই বলে না। হেফাজত নেতারা কেন সরকারের মাইরের মুখে টিকতে পারলো না এইটা নিয়ে তাদের সমালোচনা গত পাচ বছর ধরে চলছে। উদ্দেশ্য একটাই, এত বড় একটা আন্দোলনে তারা নাই? অতএব এটাকে বিতর্কিত করে নিজেদের নিস্পাপ বানানোই লাগবে।
সবচেয়ে অবাক হয়েছি যখন দেখেছি বিএনপি জোটের রাজনীতি করেন এমন একজন ইসলামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হেফাজতের হাইকমান্ডের উপর অদৃশ্য শক্তির দোষ চাপিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন। তিনিও মনে করেন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় নাকি হেফাজত সেরাতে অবস্থান করেছে। এই অদৃশ্য শক্তি উনার কাছেও বিএনপির জামাত। তিনি ইসলামী রাজনীতি করেন, বিএনপি জোটের সাথে আছে তার দল, এরপরও কেন উনি এমন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আচরণ করলেন সেটা সত্যিই আমি বুঝিনাই।
অথচ সেই রাতে অবস্থানের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একটা সত্য তথ্য এই লোকগুলো একেবারেই চেপে যান। সেই রাতে শাপলা চত্বরে অবস্থান হেফাজতের নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তেই হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তনামা লিখে যে প্যাডে রেজুলিউশন সাইন করা হয়েছিল সেটাতে সকল নেতাদের সাক্ষরও ছিল। এই দলিল পরবর্তীতে মিডিয়াতেও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এসব তাদের চোখে না পড়াটাও আমাদেরই দুর্ভাগ্য।
আমি একথা কখনোই দাবী করিনা যে ৫ই মে শাপলা চত্বরে অবস্থানের সিদ্ধান্তই শতভাগ সঠিক ছিল। আমিও মনে করি সিদ্ধান্ত অবশ্যই অন্যকিছু আসতে পারতো। এবং আরো অনেক ভাল কিছুও হতে পারতো। তবে সেটা কি হতে পারতো আপাতত সেই আলোচনা জরুরী না।
জরুরী হচ্ছে, হেফাজত সে রাতে যেই সিদ্ধান্তই নিত সেটা কি কোনভাবেই বিএনপি জামাত বা আওয়ামীলীগের পক্ষে যাওয়ার সুযোগ ছিল না? কোন একটা পক্ষে তো অটোমেটিকভাবেই চলে যেতরে ভাই! বাংলাদেশে এমনটাই তো সব আন্দোলনে হয়ে আসছে।
আমি জানিনা তারা এমন কোন ফর্মুলা দিতে পারবেন কিনা হেফাজত যে ফর্মুলা অনুসরণ করলে বিএনপির পক্ষেও যেত না, আওয়ামীলীগের পক্ষেও যেত না। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতা বলে এটা আদৌ সম্ভব ছিলনা। এই বাস্তবতাকে মেনে নিন।
আর যদি একান্তই না মানতে পারেন তাহলে ভাই আল্লাহর ওয়াস্তে ঘৃণার আর হতাশার চর্চা একটু কম করে ইতিবাচক যা ঘটছিল সেগুলাও কিছু বলেন। সুস্থ ইসলামী রাজনীতি করার একটা পরিবেশ তৈরী করেন। আরেকটা হেফাজত ঘটলে আপনারা কি করবেন সেটা নিয়া ভাবেন।
পরস্পরে ঘৃণার চর্চা করে নিজেদের ইতিহাসকে কলুষিত করতে আপনারা যে ইসলামী রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ পথকে আরো পিচ্ছিল করে তুলছেন সেটা অনেক বড় একটা ভুল হচ্ছে। এই ভুলের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আপনাদের ক্ষমা করবেনা।
#হেফাজতনামা
৮০
বিশ্বাসের বহুবচন। শাপলা থেকে শাহবাগ।
আমাদের উন্নাসিক, অসংযমী, অপটুতার বিপরীতে তীব্র এবং ঝাঁঝাল সংলাপ। হেফাজত আন্দোলনের পাঁচ বছর হয়ে গেল। শাহবাগেরও পাঁচ বছর হল। তারা এখন বিলুপ্তপ্রায়। আন্দোলন, ক্র্যাকডাউন, হতাহতের কাহিনি, সব মিলিয়ে দেনা পাওনার হিসাব নিকাশের একটা ব্যাপার থাকে। সেটার পথে কিছুটা দায়িত্ব পালন করেছে "বিশ্বাসের বহুবচন"। বাংলাদেশ না হয়ে পৃথিবীর অন্যকোনো উন্নত দেশ হলে এ নিয়ে এতদিনে প্রচুর বই বাজারে এসে যেতো। হেফাজতের এতো বড় উত্থান ঘটে গেল, সে হিসেবে আমাদের কয়টা বই আছে?
আমাদের চামড়া ভীষণরকমের মোটা। কথা কিংবা কলমের বেয়নেটের খোঁচানি আমাদের স্পর্শ করে না। ঋদ্ধ ফলা দিয়ে আমাদের ফালিফালি করে ফেললেও আমরা উপেক্ষা করি। আত্মসমালোচনাকে বিরোধিতা বলে এভয়েড করি, শিক্ষা নেবার কোশেশ করি না।
বিশ্বাসের বহুবচন আমাদের শুধরে নেবার অনুপ্রেরণা জাগাবে। জখমের জায়গাগুলোকে বাঁচিয়ে চলতে সাহায্য করবে।
বিশ্বাসের বহুবচন অনেক কারণেই সমৃদ্ধ। হেফাজতের ফ্রন্টলাইনের নেতাদের সাক্ষাতকার সারিবদ্ধ হয়েছে এখানে। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও আপত্তিগুলোই প্রতিটি সাক্ষাতকারে মূল বৈশিষ্ট্য। শাহবাগের নেতাদের সাক্ষাতকার আছে। ব্লগারদের আছে। হেফাজতের ক্র্যাকডাউনে আহতদের আছে। শহিদ পরিবারের আছে।
সবমিলিয়ে দায়বদ্ধতার যে বিশাল ঋণ আমাদের কাঁধে চেপে আছে, রশীদ জামীল তার কিছুটা লাঘবে সফল হয়েছেন বলতে হয়।
বিশ্বাসের বহুবচনে বলার ধরন, লেখকের খোঁচানি আমার ভালো লাগেনি। অনেকেরই ভালো না লাগার কথা। আমরা গোত্রান্ধ। আমাদের উস্তাদ শ্রেণির কারো সমালোচনা আমরা সহ্য করতে পারি না। তবু "বিশ্বাসের বহুবচন" গিলেছি। এবং হজম না করে ধারণ করে রেখেছি। সমালোচনাই যে বিরোধিতা না, এই বোধ আমাদের শাণিত করুক।
- - - -
বই : বিশ্বাসের বহুবচন (শাপলা থেকে শাহবাগ)
লেখক : রশীদ জামীল
প্রচ্ছদ : ইনাম বিন সিদ্দিক
প্রকাশনী : কালান্তর প্রকাশনী
প্রকাশ : ৫ মে ২০১৮
পৃষ্ঠা : ৩৬৬
মুদ্রিত মূল্য : ৩৪০/-
- ওমর আলি আশরাফ
৮১
রঙ মেখে শুয়ে থাকা রাত
আর উলামা সালতানিয়াত?
.
হেফাজতে আশা দেখেছিল এদেশের মুসলিমরা। মুসলিমদের প্রাণের স্পন্দন হতে পেরেছিল হেফাজত। কিন্তু দুনিয়াকে ঠিক রাখতে গিয়ে বয়স্ক মাওলানারাও যখন ঘোল খেয়ে গেল, স্পন্দন হারাল হেফাজত। আওয়ামী লীগের নিখুঁত কৌশলের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। লাল লাল তাজা রক্ত ঝড়েছিল রাতের আঁধারে, সেই আঁধারে কোনো রঙ চেনা যায় নি, শুধু চেনা গিয়েছিল আওয়ামী লীগের আসল রঙ।
.
শহীদদের সম্পর্কে আল্লাহ ওয়াকিবহাল এবং তাদের কর্মফল রব্বুল আ’লামীন বিনষ্ট করবেন না। একইসাথে আল্লাহ জালিমদের সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অবগত, সময় তো ফুরোবেই। কিন্তু সেই হেফাজত যে নিজেদের আদর্শ কাটছাঁট করে শেষমশ তাগুতের দরবারে গিয়ে হাজিরা দিল, তাগুতের শোকর পর্যন্ত করল - তা ছিল হেফাজত ইতিহাসের ঘটনার সবচেয়ে আশ্চর্যময় ঘটনা। এ যেন চোখের সামনে বারসিসার ঘটনা অবলোকন, পার্থক্য কেবল – একজনের জায়াগায় এক বিশাল জামাআত।
.
নিজেদের আদর্শ জলাঞ্জলি না দিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শ/চেতনাবাহীদের সাথে শামিল হওয়া যে অসম্ভব। আওয়ামীলীগ আর হেফাজতের কথা এলেই তাই উস্তাদ সায়্যিদ কুতুবের (রহিমাহুল্লাহ) অমূল্য কিছু কথা মনে পড়ে যায়। আদর্শের পতাকাবাহীদের প্রতি অন্তরে খোদাই করে রাখার মত কিছু কথা -
.
“… কোনো আদর্শের পক্ষে অবস্থান নেওয়া গোষ্ঠীর প্রতি শাসকবর্গের আচরণ এমন হয় যে, তারা সবসময় কূটকৌশলের মাধ্যমে সেই আদর্শিক গোষ্ঠীকে তাদের দৃঢ় অবস্থান থেকে শুধু সামান্য বিচ্যুত করতে চায়। তারা এর মাধ্যমে একটা সমঝোতামূলক সমাধানে আসতে চায়। কিছু জাগতিক পুরস্কারের বিনিময়ে তারা তাদেরকে বোকা বানাতে চেষ্টা করে। এমন অনেকেই রয়েছে যারা ভাবে যে তারা তাদের আদর্শের জন্য লড়ছে কিন্তু বস্তুত তাদেরকে সমঝোতা আর আপসের ছদ্মবেশে তাদের আদর্শ থেকেই বিচ্যুত করে দেয়া হয়েছে। কারণ তারা আদর্শকে জলাঞ্জলি দেওয়া এই সমঝোতাগুলোকে বড় করে দেখে না। তাই বিরোধীপক্ষও তাদেরকে প্রকাশ্যভাবে আদর্শ ত্যাগ করতে বলে না। বরং এদিকে সেদিকে হালকা পরিবর্তন করতে অনুরোধ করে যাতে উভয়পক্ষ মাঝখানে মিলিত হতে পারে।
.
যে মানুষটি আদর্শের পক্ষে লড়ছে শয়তান তাঁকে ধোঁকা দিতে বলে, কর্তৃপক্ষের সাথে সামান্য সমঝোতার মাধ্যমে তো তুমি তোমার আদর্শকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু পথের শুরুতে যে বিচ্যুতি খুব সামান্য হয়, পথের শেষে তা-ই বিশাল হয়ে দেখা দেয়। আদর্শের পতাকাবাহীরা আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ে আপস করতে রাজি হওয়ার পর আসলে সেখানেই থেমে যেতে পারে না। কারণ এরপর যখনই এক পা পিছিয়ে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হবে তখনি সেটা ঠেকাতে তার সমঝোতায় আসার ইচ্ছা আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই কর্তৃপক্ষ এই আদর্শবাদীদেরকে অতি সন্তর্পণে এবং ক্রমান্বয়ে তাদের আদর্শ থেকে টলাতে থাকে…”
.
উস্তাদের কথাগুলো কতই না বাস্তব! এতগুলো বছর পরে এসেও কতই না জীবন্ত!
.
আরেকটা ব্যাপার না বললেই নয় - রাজদরবারে আলিমদের গমন। সালাফদের কিতাবাদি, কউল, রাজদরবার থেকে তাদের সাবধানতা ইত্যাদি সম্পর্কে পড়াশুনা করে অনেকেই হেফাজতের ঘটনাকে স্রেফ ‘রাজদরবারে আলিমদের গমন’ এর আরেকটি উদাহরণ মনে করে। এমন ভাবা বান্দারা আসলে ইতিহাসের প্রেক্ষাপট, সালাফদের কথার প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করতে পারেন নাই। সালাফগণ রাজদরবারে যাবার যেসকল সতর্কবাণী উল্লেখ করেছিলেন তা মুসলিম শাসকদের দরবারের জন্যই সতর্কবাণী ছিল।
.
অন্য সকলের কথা বাদই দিলাম। ইমামে আজম আবু হানিফার (রহিমাহুল্লাহ) মিল্লাত কী ছিল? মুসলিম শাসকেরও প্রধান কাযির পদ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমাকে যদি সে ওয়াসিলের মসজিদের দরজাগুলোও গুনতে বলে, আমি সেটাও করব না”। তিনি কখন বলেছিলেন কথাগুলো? বন্দি অবস্থায় যখন তাকে চাবুক মেরে মেরে জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল, তখন তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন। এই ছিল ইমাম আজমের মিল্লাত। আল্লাহু আকবার! তাঁরা ছিলেন উলামা রব্বানিয়্যুন। আজ ইমাম আজমের (রহিমাহুল্লাহ) ফিকহ নিয়ে পাড়াপাড়ি করা বান্দারা (এমনকি আলিমরা!) তাঁর মিল্লাত থেকে কতই না দূরে! তাই তাগুতের দরবারে গিয়ে শোকর প্রকাশ করা, তাগুতকে নানারকম উপাধিতে ভূষিত করা উলামারা স্রেফ উলামা সালতানিয়াত বা দরবারি নয়। বরং তারা হল উলামা ফি সাবিলিত-তাগুত।
.
এই নির্মম বাস্তব কথাগুলো আজকে মানতে কষ্ট হলেও কিছুকাল পরের বান্দারা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে ইন-শা-আল্লাহ। তারা ইতিহাসে চোখ বুলিয়ে স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারবে – কারা ইহুদি রাহবারদের মতো হয়ে ঝড়ে গিয়েছিল, আর কারা অল্পসংখ্যক হয়েও আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরেছিল। আল্লাহ এই অধমকে, পাঠককে সেই অল্পসংখ্যকদের অন্তর্ভূক্ত করে কবুল করে নিন। আল্লাহ এই অধমকে আল্লাহর রাস্তায় রঙ ঢেলে শুয়ে যাবার তাওফিক দিন, যেভাবে ৫ই মের রাতে শুয়েছিল আমার ভাইয়েরা।
লেখকঃ তানভির আহমেদ
৮২
সবকিছু বদলে গেলেও
বদলায় না রক্তের লাল।
শুহাদাদের ভুলে যাওয়া
গাদ্দার যেনো না হই কাল।
.
#৫ই_মে
#আমরা_তোমাদের_ভুলবো_না
- আবু সাইদ মুহাম্মাদ উমর
৮৩
৫ মে। দিবসটি জাতীয় জীবনের অংশ, বাঙালির ইতিহসারের অঙ্গও বটে। এই দিবসকে ভুলে যাওয়া বা ভুলিয়ে দেওয়া আত্মপরিচয়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। - সগির চৌধুরী
৮৪
"আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।"
সূরা বাকারা (১৫৪)
#৫_মে
- সালেহ রেজার ওয়াল থেকে
৮৫
রব্বে কারীম!! শাপাল শুহাদাগনের প্রতিটি রক্তের ফোটার উপযুক্ত মূল্য দাও৷ তাদের জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব ফরমাও৷ - মেরাজ তাহসিন
৮৬
৫ মে'র স্মরণে...
আব্দুল জলিল কোন গল্পের নায়ক হতে পারে না
।। সানোয়ার রাসেল।।
গল্পটির নায়ক আব্দুল জলিল সাহেব। তার ক্ষেত্রে ‘নায়ক' শব্দটি ব্যবহার করতে সংকোচ হচ্ছে। নায়কোচিত কোন ব্যাপারই তার মাঝে নেই। তবু গল্প-উপন্যাসে প্রধান চরিত্র বোঝাতে সাধারণত নায়ক শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। আমিও আব্দুল জলিলের ক্ষেত্রে নায়ক শব্দটিই ব্যবহার করছি, সসংকোচেই।
সাধারণের আগে ‘অতি' বসালে যে টাইপের মানুষের ছবি ভাসে, আব্দুল জলিল ঠিক সেই টাইপেরই মানুষ। মানুষ হয়েছে মামার বাড়িতে আশ্রিত হিসাবে থেকে। বাজার সদাই থেকে শুরু করে যাবতীয় ফাই-ফরমাইশ খেটে দিন কেটেছে। পড়াশোনাটা ছিল এক রকম উপরি কাজ। কোন মতে পাস কোর্সে ডিগ্রি পাশ করতে পেরেছিলো। আশ্রয় দেওয়ার ক্ষমতা মামার থাকলেও পাস কোর্সে ডিগ্রি পাশ ভাগ্নেকে চাকরি দেওয়ার মতো ক্ষমতা আব্দুল জলিলের মামার ছিল না। মামার জোরবিহীন এই আব্দুল জলিল ইন্টারভিউ দিতে দিতে সরকারি চাকরিতে আবেদনের প্রায় শেষ বয়সে একটা দপ্তরে ক্লার্কের চাকরি জুটিয়ে ফেলেছিলো। আর লকেবল সেই সময়টাতেই কিছুক্ষণের জন্য তার নিজেকে নিজের কাছে কোন গল্প-উপন্যাসের নায়ক মনে হয়েছিলো। তারপর আবার চলতে থাকে তার অতি সাধারন জীবন।
একটু বেশি বয়সে বিয়ে-থা করা, চাকরিতে ঘুষ জাতীয় ব্যাপারে সুবিধা করতে না পারায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত জীবন যাপন, নয়টা-পাঁচটা অফিস, মাস শেষে টানাটানি, অসুখে বিসুখে ধার-কর্জ, ঈদে-রোজায় অগ্নিমূল্যের বাজারদরকে অভিসম্পাত, অন্য কলিগদের সাথে চোগলখুরি ইত্যাদি অতি সাধারণ সব বিষয়-আসয় নিয়েই আব্দুল জলিল সাহেবের দিন কাটছিলো। এর বাইরে যে তার নিস্তরঙ্গ জীবনে কোন ঢেউ আসতে পারে তেমন কোন কল্পনাও আব্দুল জলিল সাহেব কখনও করেননি। কিন্তু সেই অকল্পনীয় ঢেউই একদিন তার জীবনে এলো, ছোটখাট ঢেউ নয়, একেবারে সুনামির মতো ঢেউ।
একে তো বেশি বয়সের বিয়ে, তায় আবার সন্তানাদি হচ্ছিল না। তাই আব্দুল জলিল ও তার স্ত্রী মানত করেছিলো তাদের সন্তান হলে সেই সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় দিবে। মানতের ফলেই হোক কিংবা অন্য কোন জৈব-রাসায়নিক কারণেই হোক, মানতের পরের বছর তাদের কোল জুড়ে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান এলো। কথামতো আব্দুল জলিল সেই সন্তানকে যথাসময়ে এলাকারই এক ক্বওমী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিলেন। দিনে দিনে ছেলে বড় হতে থাকলো। আব্দুল জলিল সারাদিন অতি সাধারণ জীবন কাটিয়ে বাসায় ফিরে জোয়ান ছেলের মুখ দেখে অসাধারণ এক শান্তি অনুভব করেন। ছেলের চেহারা হয়েছে মাশাল্লাহ ‘নূরানী চেহারা'। গাল ভর্তি কচি দাড়ি, লম্বা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, সব মিলিয়ে তার দিলে যেন শান্তির বাতাস বয়ে যায়। তার কলিগরা অফিস আওয়ারে তাদের ডাক্তারি— ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সন্তানাদি নিয়ে গর্ব করে। মাঝে মাঝে আব্দুল জলিলের মনেও অপর্চুনিটি কস্টের আফসোসের মতো একটা হালকা আফসোসের ঝিলিক উঁকি মেরে যে যায় না তা নয়। তবে পরক্ষণেই পরকালীন সুখ-শান্তির সম্ভাবনার কথা মনে হলেই তার দিল ঠাণ্ডা হয়ে আসে। কলিগরা দুনিয়াতে সন্তান নিয়ে বড়াই করছে, আব্দুল জলিল বড়াই করবে আখিরাতে। ইনশাআল্লাহ। এই সব ভেবে ভেবে দিন কাটে আব্দুল জলিলের।
মাওলানা টাইটেল পাওয়ার ঠিক এক বছর আগে একদিন আব্দুল জলিলের ছেলে নিখোঁজ হয়ে যায়। আব্দুল জলিল মাদ্রাসায় খবর নিতে যান। বড় হুজুর, মেজো হুজুর কেউ কোন খবর দিতে পারেন না। অথচ তাদের মুখ দেখে মনে হয় কোন এক প্রচণ্ড ভয়ঙ্কর সংবাদ ঠেলে আসা বমির মতোই তারা প্রবল চেষ্টায় চেপে রেখেছেন। এদিকে বাড়িতে ফিরে এসে টিভিতে মতিঝিলে হাজার হাজার ক্বওমী ছাত্রদের সমাবেশের সংবাদ দেখতে পান। সারাদেশের হুজুরেরা মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে তাদের দাবীদাওয়া আদায়ের জন্য ঢাকার রাজপথ দখল করে বসে আছে। কম্পিত বুকে কি এক অজানা আশংকায় বার বার চোখ বুলাতে থাকেন টিভির পর্দায় ভাসা দৃশ্যের দিকে। তবে কি আব্দুল জলিলের ছেলে সেই সমাবেশে চলে গেছে কাউকে না জানিয়ে! পাগড়ি, টুপি, সাদা আলখাল্লার ভীড় থেকে আব্দুল জলিল তন্ন তন্ন করে একটি মুখকে আলাদা করে চিনে নিতে চান। কিন্তু মিছিলের মানুষগুলোর আলাদা কোন মুখ হয় না। টিভির পর্দাজুড়ে হুজুরদের ঢল, মঞ্চে আরও বড় বড় হুজুরদের হুঙ্কারে আব্দুল জলিলের হৃদয় কেঁপে কেঁপে ওঠে। টিভির পর্দায় আবার সাড়ি সাড়ি পুলিশ, বিজিবি দেখা যায়। তাদের অস্ত্রগুলোর সঙ্গীন যেন আব্দুল জলিলের হৃৎপিণ্ডে খোঁচা দিতে থাকে।
'ইয়া আল্লাহ! আমার ছেলেটা যেন এখানে না থাকে মাবুদ'। আব্দুল জলিলের ক্রন্দসী হৃদয় খোদার দরবারে ফরিয়াদ জানায়। এভাবেই দিন গড়িয়ে রাত নেমে আসে। হঠাৎ করেই সমস্ত টিভি চ্যানেলের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। আব্দুল জলিলের অস্থিরতা বাড়তে থাকে।
রাতেই আবার মাদ্রাসার দিকে ছুটে যান আব্দুল জলিল। হয়তো ছেলে অন্য কোথাও গিয়েছিলো, হয়তো এখন গিয়ে তাকে আবার মাদ্রাসায় দেখবেন আব্দুল জলিল। তখন খুব করে বকাঝকা করবেন ছেলেকে। না, না, বকাঝকা নয়, ছেলেকে সহি সালামতে ফিরে পেলে শোকরানা নামায আদায় করবেন খোদার দরবারে। এইসব ভেবে ভেবে মাদ্রাসায় ছুটে যান তিনি। কিন্তু নাহ, তার ছেলের কোন সন্ধান পাওয়া যায় না। এভাবেই রাত গুজরান হয়, খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে যায় সারা দিনটাও। পেপার-পত্রিকায় আর টিভিতে সারাদিন ঢাকার নানান ধরণের সংবাদ পাওয়া যায়। ঢাকায় নাকি খুব গণ্ডগোল হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাকি কঠোরভাবে অথচ সফলতার সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করে সব হুজুরদের বাড়ির পথ ধরিয়েছেন। সরকারি বরাত অনুসারে কোন প্রাণহানীর ঘটনাও নাকি ঘটেনি। আব্দুল জলিল আল্লা আল্লা করতে থাকেন, আল্লা, তাই যেন হয়, কোন মায়ের বুকের ধন যেন খালি না হয়। বালা মুসিবত যেন কারও ভাগ্যে না আসে।
অপেক্ষার আরও একটি দিন কেটে গেলে কুবাতাসে ভেসে ভেসে বাড়িতে দুঃসংবাদ আসে। আব্দুল জলিলের ছেলে নাকি ঢাকায় গুলি খেয়ে মরে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তার লাশ পাওয়া যায়নি। প্রথমে তার বুঝতে খুবই অসুবিধা হয়। তার যেই ছেলে তাকে না বলে দুই মাইল দূরে তার নানাবাড়িতেও যায়নি কখনো, সে কিভাবে কাদের সাথে ঢাকা চলে গেলো! আর সরকার থেকে তো বলেই দিয়েছে কেউ মারা যায়নি। নিশ্চয়ই তার ছেলে বেঁচে আছে। কিন্তু তার অন্য অনেক বন্ধুরা তো ঢাকা থেকে ফিরে এসেছে বলে শুনেছে, তাহলে আব্দুল জলিলের ছেলে এখনও আসছে না কেন? সে কি রাস্তা ভুলে গেছে?
এদিকে এই ঘটনার পর প্রতিটি উপজেলায় ও ইউনিয়নে জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমন কমিটি গঠিত হয়। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসায় ঘুরে তালিকা করতে থাকে সেদিনের জমায়েতে তাদের পাড়া-মহল্লার কেউ গিয়েছিল কি না। আব্দুল জলিল সম্ভাব্য বিপদের ভয়ে নিজের ছেলের মৃত্যুর উড়ো খবরের সত্যতা যাচাই করতে পারেন না। বুকে চেপে রাখেন। ছেলের মৃত্যুর উড়ো খবরে আব্দুল জলিল ও তার স্ত্রী শোকগ্রস্ত হন। অথচ শোক প্রকাশের উপায় থাকে না।
এরপর অনেক দিন কেটে যায়। আব্দুল জলিলের ছেলে ফিরে আসে না আর। এখন তারা ছেলেকে মৃত হিসাবেই ধরে নিয়ে দিন গুজরান করেন। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর মনকে অন্যত্র ব্যস্ত রাখার জন্য আব্দুল জলিল বাড়ির সামনের দিকের উঠানে গোলাপের বাগান করতে শুরু করেন। জমি তৈরি করা, চাষ দেওয়া, সার দেওয়া, চারা লাগানো, প্রতিদিন নিজ হাতে চারায় পানি দেওয়া, এভাবেই আব্দুল জলিলের দিন কাটতে থাকে। একদিন আব্দুল জলিল দেখতে পান তার একটা গোলাপ গাছে খুব ছোট্ট একটা গোলাপের কলি ফুটেছে। এরপর থেকে প্রতিদিন তিনি কলিটাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। একটু একটু করে কলিটা বেড়ে উঠে। আব্দুল জলিল বুঝতে পারেন, আগামীকালই কলিটি একটি পরিপূর্ণ গোলাপ হয়ে প্রস্ফুটিত হবে। একটি পরিপূর্ণ প্রস্ফুটিত গোলাপ দেখার আশা নিয়ে আব্দুল জলিল ঘুমাতে যান। ঘুমের মধ্যেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মরে যান আব্দুল জলিল। পরদিন তার মৃত্যুর খবর পেয়ে উপস্থিত আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যে কেউ কেউ দেখতে পান মৃতের বাড়ির বাগানে চমৎকার একটি গোলাপ হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। পরিপূর্ণ প্রস্ফুটিত গোলাপের হাওয়ায় দোল খাওয়ার দৃশ্য আব্দুল জলিলের জীবদ্দশায় আর দেখা হয়ে ওঠে না।
সত্যি বলছি, এ দুটো ঘটনা ছাড়া আব্দুল জলিলের জীবনে আর কোন অসাধারণ ঘটনা ঘটেনি। বাকি সব কিছুই অতি সাধারণ। এত অতি সাধারণ আব্দুল জলিলকে কি নিঃসঙ্কোচে কোন গল্পের ‘নায়ক' বলা যায়? আপনারাই বলুন?
(প্রায় সব চরিত্র কাল্পনিক গল্পগ্রন্থ থেকে)
৮৭
৫ই মে যুগ যুগান্তের প্রেরণা – মামুনুল হক হাফি.
খুব ভোরে জেগে উঠেছিলাম গাবতলী পয়েন্টে অবরোধ করতে হবে বলে ৷
ফজরের আগেই রওয়ানা করেছিলাম ৷
টিপ টিপ বৃষ্টি ছিল ৷
গাড়ীটা নিয়েই বেরিয়ে ছিলাম ৷ ড্রাইভার না থাকায় নিজেই ড্রাইভ করেছিলাম ৷ গাড়ী থাকলেও গতিটা ছিল পায়ে হাটা মানুষদের মতই ৷
মাজার রোড মসজিদের সামনে পার্কিং করে রেখেছিলাম ৷
মিরপুর-মোহাম্মাদপুর মিলে ছিল এই পয়েন্টের দায়িত্ব ৷ আমি ছিলাম নায়েবে আমীর ৷ আমীর ছিলেন মাওলানা মোস্তফা আজাদ রাহিমাহুল্লাহ ৷ প্রশাসন বলেছিল ব্রিজের অপর প্রান্তে অবস্থান করতে ৷ হেফাজতের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল এপারেই থাকার ৷ এপারেই থাকলাম ৷ এপার ওপার সবই তো এক সময় হয়ে গেল একাকার ৷ জোহরের নামাজ পড়েই ছুটলাম শাপলার দিকে ৷
ঢুকে পড়লাম ইতিহাসে ৷
শাপলা ফুলটার পশ্চিমে ট্রাক দিয়ে তৈরি করা ছিল স্টেজ ৷
খুব মামুলি ৷
কিন্তু সেটাই হয়ে গেল নতুন বালাকোটের ঐতিহাসিক মঞ্চ ৷
সেখানে দুইবার বক্তব্য রাখার তাওফীক হলো ৷ প্রথমবার আসরের আগে ৷ সেটা ছিল সিডিউল কর্মসূচীর অংশ ৷ আসরের পরপর মঞ্চ থেকে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সরকারের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে শাপলা চত্বরে অবস্থানের ঘোষনা দিলেন ৷ উত্তেজনার পারদ ক্রমেই উর্দ্ধগামী হলো ৷ ঐ অবস্থায় আবার মঞ্চে উঠলাম ৷
তখন মঞ্চে কোনো স্বাভাবিক কর্মসূচী নেই ৷
জনতার সাগর তখন উত্তাল ৷
গুলিস্তান, প্রেসক্লাব আর বিজয় নগর থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে ৷
কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া ৷
জমীন থেকে আকাশের মেঘ সব যেন লাল-কালোর বিদ্রোহী শোক ৷
শহীদদের লাশের মিছিল শুরু হলো শাপলার দিকে ৷
ভাইয়ের সামনে ভাইয়ের লাশ!
হায়েনাদের খুবড়ে খাওয়া লাশ!
রক্তের কণিকাগুলো জ্বলে উঠতে লাগলো বারুদের অমিত তেজে ৷
মাইক্রোফোন তুলে নিলাম হাতে ৷
দ্রোহের সবটুকু আগুন ঝরে ঝরে পড়ল ৷
শহীদের রক্ত যেন তখন আমার ধমনিতে বহমান ৷
এরপর রাত হলো ৷ রাত গভীর হলো ৷ ভয়াল অন্ধকারে ছেয়ে গেল শুভ্র সফেদ শাপলার চারিপাশ ৷ শুরু হলো বুলেট দিয়ে সত্যকে দমিয়ে দেয়ার দানবীয় আয়োজন ৷ নিস্তব্ধ রাতের কালো অন্ধকারে রচিত হলো শাহাদাতের উদ্ভাসিত নতুন ইতিহাস ৷ আমি তখনো শাপলার কাছাকাছি ৷ আড়াল থেকে সব দেখলাম ৷ এক সময় বন্ধ হলো তাণ্ডব ৷ বেরিয়ে পড়লাম সেই সুযোগে ৷ মতিঝিল পীরজঙ্গীতে আদায় করলাম সালাতুলফজর ৷ আবার শুরু করলাম হাটা ৷ টিপটিপ বৃষ্টি চলছে তখনো ৷ তবে সে বৃষ্টির সাথে ছিল বারুদের ঝাঁজ ৷ রক্তের লাল ৷ আর অশ্রুর ফোঁটা ৷
হায়েনার দল ভাবলো ঘটনা শেষ ৷
আমি দেখলাম ইতিহাসের অনিঃশেষ যাত্রা ৷
৫ই মের ভয়াল রাতের নিকশ কালো অন্ধকারে জাতি বিভক্ত হলো দুই ভাগে ৷
এক ভাগ শাপলার শহিদী কাফেলা ৷
অপর ভাগ শাহাবাগী মুরতাদের দল ৷
এক ভাগ বালাকোটের মশালধারী ঈমানদার ৷
অপর ভাগ ধূর্ত ইংরেজদের প্রেতাত্না ৷
এক ভাগ পরাজিত সেনাপতি নবাব সিরাজুদ্দৌলার ভাগ্য বরণকারী ৷
অপর ভাগ হিংস্র লর্ড ক্লাইভের উত্তরসুরী ৷
এক ভাগ কারবালার হুসাইনী চেতনার পতাকাবাহী ৷
অপর ভাগ এজিদী চিন্তার উল্লাসকারী ক্ষমতাশালী… ………
মানুষ মরে যায়, ইতিহাস রয়ে যায় ৷
ইতিহাস কথা কয়…
(৫ই মে’১৬ তে লেখা পোস্ট, ঈষৎ সম্পাদিত)
৮৮
পত্রিকা থেকে -
৫ মে’র ঘটনা ইতিহাস থেকে কখনো মোছা যাবে না: আল্লামা কাসেমী
মে ৫, ২০১৮
আওয়ার ইসলাম: ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যায় শহীদানদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে ঢাকা মহানগর হেফাজতের উদ্যোগে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় এক বিশেষ দোয়া-মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
আজ শনিবার বাদ আসর অনুষ্ঠিত এ মজলিসে মুনাজাত পরিচালনা করেন হেফাজতে ইসলমের নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
মুনাজাতে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দসহ শতাধিক উলামায়ে কেরাম শরীক ছিলেন।
মুনাজাত পূর্ব বয়ানে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে লাখ লাখ অভুক্ত ও ভীতসন্ত্রস্ত হেফাজত কর্মীর উপর রাষ্ট্রীয় বাহিনী ইতিহাসের ঘৃণ্য বর্বর হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। নিজ জনগণের উপর রাষ্ট্রের এমন নৃশংসতা দেখে সেদিন বিশ্ববাসী স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। ইতিহাস থেকে এই কালো অধ্যায় যেমন কখনো মোছা যাবে না, তেমনি উলামায়ে কেরাম ও নিরীহ মাদরাসা ছাত্রদের এই রক্ত কখনো বৃথা যাবে না, ইনশাআল্লাহ।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, শাপলা চত্বরের সমাবেশ সেদিন সন্ধ্যা ৬টায় শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন সমাবেশে আসতে থাকা তৌহিদী জনতা ও হেফাজত কর্মীদের জনস্রোতের উপর পুরো ঢাকা শহরের জায়গায় জায়গায় বিনা উস্কানীতে, বিনা কারণে বর্বর হামলা চালাতে শুরু করে। এতে সমাবেশ চলাকালীন সময়েই বহু সংখ্যক হেফাজত নেতা-কর্মী হতাহত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে সমাবেশেই অসংখ্য আহত ব্যক্তি ছাড়াও ৪টি লাশ চলে আছে। এতে শাপলা চত্বরের বিশাল জমায়েতে ক্ষোভ ও ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, হেফাজতের পক্ষ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে বার বার অনুরোধ করা হয় যে, এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট অচেনা গ্রাম-গঞ্জের সরলপ্রাণ লাখ লাখ মানুষ কোথায় যাবেন?
ফজরের পরই হেফাজত আমীর এসে মুনাজাত করে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। কিন্তু হেফাজতের বার বার আকুতি সেদিন শোনা হয়নি। এরপরের ঘটনা তো সকলেরই জানা।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ৫ ও ৬ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় এদেশের আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতার পরাজয়ের কিছুই নেই। বরং মুসলমানরা বিশ্বাস করে, শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের উত্তম প্রতিদান পরম করুণাময় আল্লাহ অবশ্যই পরকালে দান করবেন।
আর দুনিয়াতেও এর সফলতা চলতে থাকবে। ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদি অপশক্তি এই বাংলার জমিনে কখনো ঘাঁটি গেড়ে বসতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সে দিন রাতে হেফাজত নেতাকর্মীদের উপর যা করা হয়েছে, সেটা ছিল বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা। যারা এটা ঘটিয়েছে, তাদেরকে যুগের পর যুগ এর দায় বহন করে যেতে হবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর বক্তব্য শেষে শাপলা চত্বরের শহীদানদের রূহের মাগফিরাত কামনা এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার-পরিজনের দুঃখ নিবারণ ও বরকতের জন্য বিশেষ দোয়া-মুনাজাত করা হয়।
মুনাজাতে বাংলাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত বন্ধে আল্লাহর গায়েবী সাহায্য কামনা করা হয়।
মুনাজাতে হেফাজত আমীর ও দেশের শীর্ষ আলেম শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী এবং মহাসচিব প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ হায়াতের জন্যও দোয়া করা হয়।
৮৯
‘৫ মে’র শিক্ষা ইসলাম কায়েমে আমাদের অন্তরে শক্তি সঞ্চার করবে’
মে ৪, ২০১৮
আওয়ার ইসলাম: ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, ৫ মে’র শাপলা চত্বরের শাহাদাৎ শুধু একটি হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী ঘটনা নয়, বরং এক শিক্ষনীয় ও অনুসরণীয়।
এর এক দিকে রয়েছে শোকাবহ অশ্রুসজল কাহিনী, অপর দিকে মহান আত্মত্যাগের অণুপ্রেরণা এবং সেই সাথে ন্যায়, সত্য ও সততা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয়। সেদিনকার অতুলনীয় শাহাদাৎ কোন পরাজয়ের প্রতিফলন নয়, বরং পরম বিজয়ের সংকেত।
নেজামে ইসলাম নেতৃবৃন্দ হেফাজতে ইসলামের ৫ মে’র ঐতিহাসিক ঢাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশের ৫ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে পুরানা পল্টনস্থ মাওলানা আতহার আলী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নেজামে ইসলাম পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
সহসভাপতি অধ্যাপক এহতেশাম সারোয়ারের সভাপতিত্বে এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবদুল কাইয়ূমের পরিচলনায় অনুষ্ঠিত সভায় হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও মহাসমাবেশের বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করে আরো বক্তব্য রাখেন যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, সহকারী মহাসচিব আলহাজ্ব মোঃ ওবায়দুল হক,সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক, প্রচার সম্পাদক মাওলানা মমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক পীরজাদা সৈয়দ মোঃ আহসান, ইসলামী ছাত্র সমাজের সভাপতি মোঃ নুরুজ্জামান ও মাহমুদ হাসান বাঙ্গালী প্রমুখ।
তিনি মহানবী সা. সম্পর্কে মানুষের লালিত ও ধারণকৃত ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা, চিরায়ত মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং নাস্তিক্যবাদী চিন্তা-চেতনা সম্বলিত ন্যাক্কারজনক, কুরুচিপূর্ণ, ব্যাঙ্গাত্মক, অশোভন প্রভৃতি উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।
তিনি মহানবীর সা. মর্যদা রক্ষার প্রত্যয়দীপ্ত ৫ মে দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দীপ্ত শপথ গ্রহণের জন্যে সকল ইসলামি রাজনেতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই দিবস মহানবীর সা. মর্যদা রক্ষা তথা ইসলামের পতাকাকে সমুন্নত রাখার দীপ্ত শপথ গ্রহণের দিন।
তিনি বলেন, সৃষ্টির সূচনাকাল থেকেই যুগে যুগে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটণার স্বাক্ষী ৫ মে’র ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য চেতনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, যা মুসলিম মননে শহিদী চেতনা সঞ্চারিত করে।
আরবি ভাষার জ্ঞান প্রয়োগে ইংরেজি শেখার বিশেষ কোর্স
তিনি বলেন, সেদিন ইসলামের জন্যে আত্মত্যাগের যে নজির স্থাপিত হয়েছে, সেই ত্যাগের আদর্শ গ্রহণের মধ্যেই ৫ মে’র চেতনা নিহিত। এই অনন্য সাধারণ দিবসকে মাহাত্মশোভিত করার জন্যে প্রয়োজন ত্যাগ-তিতিক্ষার চেতনাকে উজ্জীবিত করা। আরো প্রয়োজন জাতীয় আদর্শ, ঐতিহ্য রীতি-নীতি ও স্বকীয়তা বিরোধী অপসংস্কৃতির পথ রুদ্ধ করা এবং এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিরায়ত ইসলামি মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে স্বচেষ্ট হওয়া।
তিনি বলেন, সেদিন আমাদের চেতনাকে আলোড়িত করেছে, সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণে ব্রতী হওয়ার জন্যে আগ্রহী করে তুলেছে, মহানবী সা. তথা ইসলামের জন্যে মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী হতে প্রণোদনা জুগিয়েছে। সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়তম কীর্তিতে ভরা এবং নবতর অধ্যায় রচিত হয়।
৫ মে’র শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা আমাদের অন্তরে শক্তি সঞ্চার করবে ইসলাম কায়েমের প্রচেষ্টায়।
৯০
আইকোনোক্লাস্টিক হেফাজত!
মে ৫, ২০১৮
ত্বরিকুল ইসলাম
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
হেফাজতকে আমি সাম্প্রতিককালের একটা প্রভাবশালী চেতনা হিসেবে দেখি। এর আবেদন এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী। ইসলামবিদ্বেষী জালিম সেকুলার দুষ্টচক্রের বিপরীতে গড়ে ওঠা ঈমান-আকিদায় বলীয়ান পাল্টা প্রতিবাদী গণশক্তির নামই তো হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজত বৃহত্তরভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকায় গণমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইকে প্রেরণা দেয়। ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’ উচ্চারণ করে জুলুম, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণমানুষকে জাগ্রত করে।
তবে ক্ষমতাকেন্দ্রিক ও নির্বাচনমুখী রাজনীতির প্রশ্নে অরাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে হেফাজত সবসময়ই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই, হেফাজত কোন্ অর্থে নিজেকে ‘অরাজনৈতিক’ বলে, সেটা বোঝা জরুরি। কেবলমাত্র রাষ্ট্রক্ষমতা ও নির্বাচন প্রশ্নেই হেফাজত অরাজনৈতিক থাকতে চায়। হেফাজত এই জায়গা থেকেই নিজেকে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে হেফাজতে ইসলাম এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। হেফাজতকে এড়িয়ে যাওয়া মানে ইসলাম-প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়া। তাই, প্রগতিশীল সেকুলার বাম ডান ও জাতীয়তাবাদী কোনো পক্ষই আজ আর হেফাজতের প্রভাববলয় থেকে মুক্ত নয়। হিম্মত থাকলে হয় এই প্রভাববলয় ছিন্ন করে বেরোতে হবে, আর সেই হেডম না থাকলে হেফাজতকে সালাম ঠুকে চলতে হবে। হুঁশিয়ার কিন্তু!
এছাড়া হেফাজতের মধ্যে একটা আইকোনোক্লাস্টিক ভূমিকা সুস্পষ্ট। যেমন, বিকৃতায়নের মাধ্যমে সেকুলারিজমের ধুয়া তুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর প্রচলিত প্রগতিশীল ও সেকুলার তরিকাকে হেফাজত শুধু প্রশ্নবিদ্ধই করেনি, বরং সেটাকে জনগণের কাছে খেলো করে দিয়েছে। দাঁড়ি-টুপি পরলেই রাজাকার কিংবা মুক্তমনা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধর্ম ও রাসূলের অবমাননা করার প্রবণতা, কিংবা সেকুলারিজমের ছদ্মবেশে ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর প্রচলিত মত ও তরিকাকে হেফাজত এক্কেবারে পঁচিয়ে দিয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে সেকুলার শিবসেনাদের প্রত্যেকটি ভণ্ডামিমূলক তৎপরতাকে হেফাজত আজ কোণঠাসা করে ফেলেছে।
হেফাজতে ইসলাম একটা দল কিংবা একটা সংগঠন মাত্র, এভাবে আমি হেফাজতকে বিবেচনা করিনা। কারণ দল বা সংগঠন হিসেবে হেফাজতে ইসলাম আজ আছে ঠিক, কিন্তু কাল বা পরশু না-ও টিকে থাকতে পারে। কিন্তু ঈমান-আকিদা ও জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ের চেতনা হিসেবে হেফাজতকে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
যদিও হেফাজত ইতোমধ্যেই আইকোনোক্লাজমে পরিণত হয়েছে (ICONOCLASM)। কিংবা এই চেতনার একটা ব্রান্ড নেইমে পরিণত হয়েছে। দেশের বিশালসংখ্যক ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনগোষ্ঠী এই ব্রান্ড নেইমকে ধারণ করে।
আচ্ছা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি কোনো দলের একক সম্পত্তি? কিংবা কোনো একটি বিশেষ দল যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একমালিকানা দাবি করে, সেটা কি গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে? যাবে না। হেফাজতের চেতনাও তদ্রুপ। এটা সামগ্রিকভাবে একটা জাতীয় চেতনার নাম। ভিন্ন দল বা সংগঠনও পারে এই নামের চেতনা নিয়ে জেগে উঠতে, লড়তে।
তাই, হেফাজতের চেতনা কোনো দলের একক সম্পত্তি নয়। শাপলা চত্বরের রক্তমাখা ইতিহাস শুধুমাত্র একটি দলের ওপর ভর করেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এমন নয়, বরং এই ইতিহাস সৃষ্টির মূল কারিগর দেশের বৃহৎ আপামর তৌহিদি জনতা। দলীয় সাফল্য ও ব্যর্থতা ছাপিয়ে তারাই মূল কুশীলব। তারাই রাজপথে শাহাদতি রক্তের কালি দিয়ে ঈমানের ইতিহাস রচনা করেছেন।
সুতরাং, তাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করার পরিণামও ভয়াবহ হবে। ইতিহাস নিশ্চয়ই সেটার বিচার করবে। তৌহিদি জনতা যেদিন বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পাবে, সেদিন বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতকদের রেহাই নেই।
৯১
শাপলার ছোপ ছোপ রক্ত না হয় পানি দিয়ে মুছে দিলেন।
কিন্তু
হাজার হাজার উলামা, তোলাবা, তাওহীদি জনতার হৃদয়ের রক্ত কী দিয়ে মুছবেন?
- মহিউদ্দিন জামি
৯২
হঠ্যাৎ ধুমকেতুর আবির্ভাব ! অতপর যেন মহাজাগতিক সংঘাত !
স্ফুলিঙ্গ নিভে যায় , দলা পাকানো জ্যোতিষ্ক খসে হলো সহস্র ভাগ !
কালো গহ্বরের অমোঘ আকর্ষণে ছুটে চলেছে কেউ কেউ । আমরা
ফেলে এসেছি শহীদানের চিহৃ ; শাপলায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ !
- সাব্বির আহমেদ
৯৩
এসেছে...!
আবারোও এসেছে...!
ঐ শোনা যায় গর্জন...!
শোণিতে জেগেছিলো যাদের,
শরাবান তাহুরার তৃষা,
ফিতরাতের অভিমান যাদের করেছিলো -
পিছুটান মুক্ত...!
আকাশ-বাতাস ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছিলো-
যাদের দৃপ্ত প্রতিজ্ঞায়..
এসেছে...
ওরা আবারোও এসেছে...
ঐ শোনা যায় ওদের নিনাদিত গর্জন...!
ওরা আসে,
ওরা আসবে,
জীবন্মৃত যাদের পাঁজরে আটকে আছে ফিতরাতের সুপ্ত প্রদীপ,
সে প্রদীপকে করতে প্রজ্জ্বলিত,
উদ্ভাসিত,উন্মোচিত,উত্তোলিত...
যে প্রদীপের আলো মেঘ কেটে,বায়ুস্তর কেটে,
এ সৌরজগত ছাড়িয়ে,এ গ্যালাক্সি,মহাবিশ্ব ছাড়িয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়বে মুনতাহার পাশে...!
জিনোম কোডে প্রোথিত যে ফিতরাত,
শিরা-ধমনী-ত্বক ছিঁড়ে সিক্ত করে দেবে এ অপবিত্র যমিন...!
ওরা আসে,
ওরা আসবে,
যে উত্তরসূরীরা আজ দ্বিধায় বিভক্ত,
চাটুকারিতার জিভ যাদের দাসত্বের বঞ্চনায় ভার,
সে উত্তরসূরীর নিউরনে নিউরনে জ্বালিয়ে দিতে...
আমর বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকার শব্দের স্ফুলিঙ্গ...!
যে স্ফুলিঙ্গে জ্বলে যাবে পোষ মেনে যাওয়া কলংকিত অন্তর...!
ওরা আসে,
ওরা আসবে,
এই জাতির অসময়ের নিদ্রা কাটাতে,
স্মরণ করিয়ে দিতে আমাদের পরিচয়,
আমাদের দায়িত্ব আর গন্তব্যের পথ...!
আধমরা আমাদের চাবকে করতে সজাগ...!
এসেছে,
ওরা আবারোও এসেছে...!
প্রত্যেকটি বিশ্বাসীর টিমপেনিক পর্দা কাঁপিয়ে,
ঐ শোনা যায় ওদের পবিত্র গর্জন...!!!
-
(৫ ই মে,২০১৯)
- মোহাম্মদ জাহিদ খান
৯৪
৫-ই-মের ইতিহাসটা আমরা কখনো ভুলতে পারবো না । সেদিন আমরা যারা সেখানে ছিলাম, শাপলা চত্বরে । বুলেট, আগুন, রক্তামাখা পান্জাবী ।
শুধু কিছুটা কষ্ট আরেকটা জায়গায় জেল-জুলুম কিংবা টাকার কারনে কেউ যখন তার কওমের ত্যাগ গুলোকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের সাথে মিশেই আবার ক্ষমতায় যাওয়ার পথে হাটে ।
- তানভির রাজ
৯৫
আওয়ামী লীগ ও সূক্ষ্ম ইসলামিকরণ
মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত
২০১৩ সালের ৫ মে’র সংঘাতের পর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একধরণের ড্যামেজ কন্ট্রোল ও ব্যালান্সের রাজনীতি শুরু করেছে। একদিকে ভারত বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করেছে ও ফাঁসি দিয়েছে। আবার অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের দিকে দূতিয়ালি, সন্ধি ও লেনদেনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
এর সুস্পষ্ট একটি ফলাফল হল কওমি সনদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও তার বিনিময়ে কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে আওয়ামী লীগের আঁতাত না হলেও অন্তত দাঁতাত বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই পারস্পরিক লেনদেনের সম্পর্কের আরেকটি লক্ষণ হল হেফাজতের প্রভাব এখন ন্যাশনাল কারিকুলাম ও টেক্সটবুক বোর্ডের উপরে অল্পবিস্তর হলেও পড়া শুরু হয়েছে। একারণে সুশীল ও বাম ঘরানার সেক্যুলারদের অস্বস্তিও বেশ লক্ষণীয়।
তবে সুশীল ও বাম সেক্যুলারদের শত আপত্তি সত্ত্বেও এই ভারসাম্য রক্ষার প্রবণতা কিন্তু ক্রমাগত বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। এছাড়া সার্বিকভাবে সমাজে নারীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হিজাব ও পর্দার ব্যবহারও আগের তুলনায় ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশে ইসলামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বতঃস্ফূর্ত সঞ্চারণের লক্ষণ। এভাবে শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতিতে খুব ধীরে হলেও একটা সূক্ষ্ম ইসলামিকরণ ঘটছে যা সেক্যুলার ও বাম মহল মনেপ্রাণে বন্ধ করতে চাইলেও বন্ধ করতে পারছে না।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এই দেশীয় এবং বৈশ্বিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ইসলামিকরণের ধারাকে সুকৌশলে নিজেদের মত করে ব্যবহার করতে চাইছে। সেদিক থেকে ১৯৭২-৭৫ সালের আওয়ামী লীগ আর আজকের আওয়ামী লীগ বেশ ভিন্ন — অন্তত ডি ফ্যাক্টো বা প্রকাশ্য রূপের দিক থেকে। যদিও ১৯৭২ এর সংবিধানের চার মূলনীতির প্রতি একধরণের ডি জুরে বা নীতিগত আনুগত্য আওয়ামী লীগ এখনো দেখিয়ে থাকে। শেখ হাসিনার অধীনস্থ আওয়ামী লীগের এই নতুন কৌশলের কাছে খালেদা ও তারেক জিয়ার বিএনপি ইসলাম বিষয়ক রাজনীতিতে বড় ধরণের মার খেয়ে গেছে।
মজার ব্যাপার হল এই রক্ষণশীল পরিবর্তনের ধারা, যা থেকে আওয়ামী লীগও মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারছে না, তা অনিবার্যভাবে একসময় একটি টিপিং পয়েন্টে গিয়ে পৌঁছে যাবে। তখন সমাজে গুণগত বড় পরিবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে। কামাল আতাতুর্কের তুরস্ক এভাবেই ধীরে ধীরে বদলে আজকে এরদোয়ানের তুরস্কে পরিণত হয়েছে।
৯৬
শহীদদের রক্তের প্রতিশোধের কথা বললে, কিছু আকাবির অন্ধ পূজারি এসে বয়ান দিবে, তায়েফে রাসূলকে (সা.) এতো কষ্ট দেওয়ার পরেও তিনি তায়েফবাসীদের উপর প্রতিশোধ নেননি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও । বরং ক্ষমা করে দিয়েছেন । এই ক্ষমার দৃষ্টান্তের বয়ান সবচেয়ে বেশি করা হয় । কিন্তু রাসূল (সা.) যখন তায়েফ অবরোধ করেন তখন তায়েফ বিজয়ের জন্য যে তিনি তায়েফের প্রাচীরে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করেছিলেন এই ঘটনা তারা বলে না, না হয় এড়িয়ে চলে ।
তাদের অবস্থা হলো, যখন বেশি বেশি দান-সদকার করতে বলা হয় তখন বলে, আল্লাহ সামর্থ্যানুযায়ী দান-সদকা করতে বলেছেন । আল্লাহ সামর্থ্যানুযায়ী দান-সদকা করতে বলেছেন এই আদেশ একনিষ্ঠভাবে মানা হয় । এই আদেশের বয়ানও করা হয় । অথচ, আল্লাহ যতবার সামর্থ্যানুযায়ী দান-সদকা করতে বলেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি-বার সামর্থ্যানুযায়ী শব্দ ব্যবহার না করে দান-সদকার কথা বলেছেন ।
এই দুইটাই 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড'।
ইসলাম ব্যক্তিগত বিষয়ে ক্ষমার আদর্শ শিখায় । নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রতিশোধ না নিতে উৎসাহ দেওয়া হয় । কিন্তু যেই ক্ষমা প্রদর্শনী উম্মাহর জন্য সামান্যতম ক্ষতি বয়ে আনবে ওই ক্ষমা কখনোই ইসলাম শিক্ষা দেয় না । মুসলিমদের ক্ষতি হবে এমন ক্ষমা রাসূলের (সা.) পবিত্র জীবনে কোথাও পাওয়া যায় না ।
- আহমাদ ওসমান
৯৭
অস্ত্র রাখা সুন্নাহ৷
সেই সুন্নাহ যদি ৫ই মে তে হেফাজতিরা পালন করতো তবে
ইতিহাস ভিন্নরূপে আবির্ভুত হত৷
- মোরশেদ বিন আব্দুল আজিজ
৯৮
৫ মে নিয়ে ইফতেখার জামিল ও তানজিন দোহা এর একটি যৌথ আর্টিকেলঃ https://www.milestonesjournal.net/articles/2017/5/8/deadly-milestone?fbclid=IwAR3cwHjoj3XxIJXht9CKoklmRR3gtCVQyo55eUfgcfewigLevoPl-A00oAM
Deadly Milestone
By Tanzeen R. Doha and Iftekhar Jamil
Preface
Two massacres in 2013 signaled the necessary incompatibility[1] between the secular state and Islam: one in broad daylight in Rabaa Square, Cairo (August 2013), and the other after sunset in Shapla Chattar, Dhaka (May 2013).[2] These events marked a contemporary de-grounding of political Islam.[3] While massacres of Islamist bodies in the killing fields of the secular state is the ultimate dramatization of this incompatibility, the contradiction is also made visible in juridico-legal proceedings, constitutional amendments, security discourse, extra-judicial murders, kidnappings, enforced disappearances, framed crossfires, and other operations of the administrative apparatus. In fact, the reach of the secular is so deep that at times it appears to exceed the state itself. The state does not simply operationalize secularism as a political doctrine; secularism de-naturalizes the state and employs its bureaucracy, courts, citizenry, finance, and security instruments to disarticulate Islam. The link between secularism and the state becomes more fluid, and more coherent with each successive disarticulation of Islam.
“Deadly Milestone” was first published in The Volta. In the essay, Iftekhar Jamil and I attempted to interrogate the secular through acts of translation and remembrance. We followed Talal Asad’s instruction to trace the secular through its shadows, instead of confronting it head on.[4] In many ways, this is harder to do, because the reach of the secular is further than the state and economy. To categorize the secular is to miss its influence. The secular is in bodily capacities and sensibilities; it reorganizes the hearts of a populace. It is in the “blood” of the nation. It is what gives life in the nation its vitality. It is constitutive. This is precisely why the confrontation between citizens within national secularism and those outside of it — the Islamists — appears a confrontation between species that are fundamentally different. Unlike Frantz Fanon’s concept of opposing species[5] — in which colonizer and colonized operate within a dialectic that can be overcome through decolonial violence (synthesis) — these species do not confront each other in a war of political societies. Islamists are threats because they exist. National secularism, unlike national socialism does not have a “racial hygiene,”[6] but it has a cleansing structure: a purifying project in which citizens must routinely demonstrate their fidelity to the nation by subordinating Islam to the grammar of a secular identity formation. In order to maintain its own metanarrative, secularism constantly re-founds and reproduces itself in a new historical plane[7]. The Shahbag movement in Bangladesh, organized by anti-theist bloggers and other left progressives earlier in 2013, was such a moment of re-founding of the national through secularity. If believers adhere to the shariʿa, resist (meta)physical subsumption in the secular, and position themselves within the paradigm of a moral universe that exceeds and oversees political discourse, they violate conditions imposed by secularity and become enemy combatants[8]. The May 5 response by Hefazat-e-Islam — which was undoubtedly the largest public gathering of masses in the history of Bangladesh — was seen as such a deliberate transgression, a religious embodiment of infidelity to the refounding of national secularism.
In his classic text Milestones, Sayyid Qutb describes how believers on the road of Islam will encounter signposts along its path of social renewal. These signposts help maintain the movement for Islamic revival (tajdid). In Qutb’s work — even in his darkest hours — there is a theological idealism. So, the “milestones” to which Qutb refers are not only guiding markers, they are also culmination points: an achievement at a particular stage in history. This stagism and teleology in Qutb was an outcome of the entrapment of his own thought in modern idealism. For us, milestones are not signs of a better future necessarily. They are an indication of a larger catastrophe, a final event in which the memory of the event is more real than the event itself. It is the end of the world as such, an end without sorrow, without nostalgia, an end where submission is facticity.
Tanzeen R. Doha
May 6, 2017
Introduction
Those who leave their homes in the cause of Allah, and are then slain or die, On them will Allah bestow verily a goodly Provision: Truly Allah is He Who bestows the best provision.
—Qur'an (Surah 22, Ayah 58)
In the preface of Poetry of the Taliban, Faisal Devji examines the “human element” beyond the strict religiosity of the Afghan Taliban. He seeks to interrupt popular representations of the Taliban by suggesting that the poems in the collection reflect a consciousness that moves beyond mere political instrumentality or rigid Islamic codes of conduct. In this essay, we examine Faisal Devji’s representation of the Taliban’s poetic aesthetics by juxtaposing it against a new literary poetic style within the Deoband tradition in Bangladesh. The literary works we use to interrogate and critique Devji’s elaboration emerged as a response to a massacre of Islamists in Dhaka on May 5-6, 2013. We prefer to address Devji’s taken for granted assumptions without giving a counter-narrative on the Taliban themselves. In other words, we choose not to use polemic against polemic, narrative against narrative, or interpretation against interpretation. We choose a completely different set of events, within a proximate political-geography, where Islamist clerics and students from the Deoband tradition — an Islamic pedagogical and discursive tradition of which the Taliban are a part — respond to secular domination with a potentially new kind of Islamic affect and aesthetics. More than the aesthetics itself, the questions that we grapple with are: Are we potentially witnessing the emergence of an Islamist aesthetics that positions itself in opposition to a localized dynamic of the “War on Terror”? Have we entered a period of a final crisis of nationalist aesthetic paradigms? And are we seeing Islam — not simply as a premodern tradition but as an anti-modern force from within a specific genealogy — immanently unfolding and entering a new plane of history through an antagonism with both the liberal-secularist public sphere and a cultural sphere of ultra nationalism?
Aestheticization of the Taliban
In order to explain the “Taliban’s self-consciousness,” Devji not only separates the aesthetic from the political, but he also linguistically contextualizes the Taliban’s poetics and shared sensibility. Devji writes that these poems demonstrate a human side beyond the “ethnic and doctrinal limits” frequently associated with the Taliban in popular discourse, and that the ambiguity in their poetic sensibility arises from the diversity of linguistic and social histories from which the group emerges. Devji writes that the Pashto language used by the Taliban poets has a close relation with “literary traditions of languages like Persian and Urdu that link the Pashtuns to Iran on the one hand and India on the other.” It is curious that Devji locates for the Taliban’s aesthetic “a consciousness external to their movement.” He writes that the aesthetic dimension of their lives is not influenced by their ideology and is a thorough expression of their “individual sense of freedom.” Devji suggests that the material collected in this text are written by “individual members or sympathisers of the Taliban” and therefore, radically different from the propaganda of the Cultural Committee of the Islamic Emirate. In describing the ambiguous lyricism of the ghazal form, Devji explains the significance of thinking about the relation between the profane and the sacred beyond structures of repression, but rather, as establishing “freedom as an internal quality.” He writes that the Taliban’s poetic form allows them to escape their own ideology, because it allows them to see the moral order from the outside. Devji then mentions how the collection of poems are not focused on contemporary Islamist figures like Mullah Omar or Osama Bin Laden but rather, they focus on figures from the earlier history of Afghan struggle — particularly that against British colonialism. Devji suggests that Soviet and American imperialists, compared to British colonialists are looked by the Taliban poets as the “palest of their imitators.” Devji emphasizes that the Taliban militants and sympathizers are not interested in the “purely religious element,” and there is a lack of focus on the shariʿa. Further, he claims that the Taliban are not only referencing erotic and non-religious mystical literature, but also literary works from the past that are nationalist and socialist.
police firing hefazat.jpg
Poetic Archives of the Massacre
Devji’s concepts — the human element, consciousness external to the movement, ideology, and freedom as an internal quality — de-materialize the Taliban and the larger Deoband tradition through an uncritical assimilation of their poetry into the European discourse of humanism. Devji attempts a negative dismantling of all the elements that constitute the Taliban: aesthetics is separated from political ethics, the sacred is separated from the profane, ideology is separated from the material ideology and determinations of the ‘War on Terror,’ and consciousness is conceptualized as idealism separate from the shariʿa and its moral doctrinal structure. Devji aestheticizes freedom, turning it into an internal quality of the individual and de-politicizing the contemporary positionality of Islamists — particularly those who challenge the logic of an imperialist war.
While the Taliban has its specificity, such aestheticization of their poetry impacts the hermeneutic context of a larger network of Deobandi revivalism — active in South and Central Asia — a tradition focused on perfecting the shariʿa through obedience to a tariqah[9] for the purposes of encountering the real (haqiqa). The very concept of tazkiyah-al-nafs[10] disallows the separation of the believer’s task with his heart and socio-political life. In fact, interventions from the outside — whether by a foreign power or local secular regime — produce an inverted world of non-Islam (jahiliyya) for the believer, making bodily obedience to divine will extremely difficult. This creates a condition for the possibility of struggle towards disalienation.
On May 5, 2013, according to madrassa sources, close to one million people took over a large segment of Dhaka — between the national mosque and the Business District — forming the largest public gathering in the history of Bangladesh. Nearly all of the Qawmi madrassas of the country organized under a single banner, forming Hefazat-e-Islam, a phrase that literally means “to safeguard Islam.” The masses marched in opposition to a series of denigrating — at times even pornographic — depictions of the Prophet Muhammad published in the secularist blogosphere earlier that year. After evening prayer on the day of the march, State forces turned off the electricity for a large segment of the Business District and forcefully removed Islamic journalists, launching what they termed “Operation Flushout.” This operation, which continued until the morning of May 6, involved the disappearances and mass killing of Islamic students and clerics. The administration repressed local media that sought to report on the event and took legal measures against human rights organizations and documentarians that attempted to publish fact-finding reports. Nonetheless, Al Jazeera, along with several key international organizations, reported that hundreds of Islamic clerics and students were killed that night.
In the rest of this essay, we examine the consequences of the May 2013 massacre in Dhaka, Bangladesh. We collected written memories, reflections, poems, novellas, videos, other literary and non-literary artifacts in the aftermath of the massacre. These are some of the forms in which the massacre is memorialized within the Islamist counterpublic.[11] These materials are the remaining traces — like dried blood — of the actual sets of events. It is a living archive that not only allows an immanent embodied critique of a secular society, but provides a marginal possibility for a realist speculation in retrospect. The materials of the archive are a critique of secular time: we simultaneously return to the flesh of the first killings, and stay within the silence of the present moment.
The following excerpt is from a poem written by a Qawmi madrassa student who witnessed the massacre of May 5-6, 2013. The poet speculates on the materiality of forms of death, and its relation to a secular regime, in which the distribution of power is not only operationalized by the State apparatus, but permeates the social life in the ethically ruined city Dhaka.
There is enjoyment in death.
For instance, I am walking and longing for the seductive fragrance of my lover
But, I suddenly stop, and piss on an anthill
Or, I am dating my fifth girlfriend
I tear off some flowers and give them to her as a promise
Like that.
A superficial reading of what the author calls “enjoyment in death” may lead one to think about the agential or intentional structure of the secular persons whom the poet addresses in this passage. Rather, the poet in his ethical judgment of secularity seems concerned about a specific generality that secular regimes produce: a fetish for this world, the duniya and its specific temporality which is naturalized in a final manner. Within this generality there is an affective history: a history of feeling, sensing, touching, smelling, embodying. One feels the dirt, disaster, and ethical corruption in Dhaka, where a massacre is the logical outcome of the structured erasure of Islam as a mode of life. The dynamic in this passage is the presence of Islam as a draft, as a wind, in the form of ethical critique of secular embodiment. In other words, the presence of Islam is within the absence of Islam. The voice in this passage is not of an individual author. But rather, it is a collective muffled voice of the mu’minun — the witnesses of the massacre — who are trapped in modern secularity, but are inspired by a fanaticism for the absent author (of revelations). The poem should not be mistaken as a call for the opposite of death — a philosophy of life. Rather, it should be read as an attempt to make a categorial distinction between two forms of death: the deaths of those charmed by the fetish of Man, and therefore this life, versus the deaths of those who fear Allah- within a larger general history of death.
The condition of the ants drowned in urine and the flower torn to pieces is a minute material representation of the comprehensive and detailed violence of the secular on every living being. Here, the poet’s thinking on the problematic of the secular is neither about secularism as a political doctrine, nor about the secular as an episteme of a particular historical period. Rather, his dwelling is on the fundamental ontology of violence: the violence that constitutes life within the force of secular regimes, configured by the logic of the ‘War on Terror,’ but more broadly, by modernity itself.
Let us leave the post-massacre condition in Dhaka for a moment. If we compare this Islamist poet’s pessimistic observations on unethical secular mannerisms towards smaller, negligible beings like ants, with remarks by a recently released Muslim prisoner on how he survived the indignity of torture through companionships with insects and animals, we observe contrasting positions, grounded in an antagonism between two different worlds. Soon after being released from 14 years in Guantanamo Bay military prison Shaker Aamer explains in a BBC interview how his ethical relationships with other beings like ants and cats helped him survive imprisonment. Aamer says,
I end up making friends with all kind of creatures. One of them is the ants. Because they were beautiful, the way they were doing things and all that. I never knew that how much time I can spend with them. But I start watching them. I start learning the different ants, the different colours, the different way of doing things. And it was beautiful because I learned so much, and they became so friendly with me that I do believe that animals, insects, all kinds of things that they do realize us. They do know us. They know the difference between us. But we don’t know the difference between them because they are ants, but they know me. They knew me as me because I used to feed them three times a day, put them the food certain times. And they don’t bother me.[12]
Aamer’s ethical steadfastness allowed him to maintain a sense of dignity under torture. His attention to small details of the ants’ lives derived not only from a particular kind of Islamic piety, but from Islam’s non-anthropomorphic concept of divinity, and a non-anthropocentric relational structure within which beings are in a dynamic with each other because of their specific orientation towards “abstract worship,”[13] an embodied worship of that which cannot be seen or felt through the finite senses.
Returning to the original poem by the Qawmi madrassa student in Dhaka, in the next section we see a critique of the disruption of quiet life through indulgence in worldly pleasures:
Who really likes the sovereignty of the tranquil?
We like to throw small stones into the pond to create ripples and disturb peace
We like to kick empty bottles when we walk down the street
We like to break the silence of empty alleys
In the dark night of poetry
We enter its form with words, like we enter whores
To prove how we are poets and good servants…
Our lover’s tidy appearance, and lipliner
Her pride and expensive makeup at the parlour
We take her to the park, and feel like men when we ruin her
Like that.
The tranquil is not simply an environment or a mood. Rather, it is a condition, a state of ethical order with particular cosmological underpinnings, a field with rules and coordinates for the opening up of a world in which only the unseen is sovereign. This originary condition — which has revelatory grounding — has been disrupted by something much deeper than an environmental shift, a cultural paradigm, or even a political-economic structure. All of these historical shifts emerge from within an ontological crisis, which is responsible for this disruption that derives its meaning from particular kinds of material relations that simultaneously emerge from and give meaning to the concept of man as sovereign. The confidence with which the sovereign man — whom we are obligated to historicize as secular — elevates himself as the decision-maker to “throw small stones into the pond,” “kick empty bottles,” or to massacre those who are humble, is a confidence rooted in a rebellion against divine order.
The comparison between vitriolic words entering the secular architecture of poetry with the dishonorable penetration of women is a critique of the structural relation between misogyny and secularism. In the last two lines of the section, the Islamist speaks from the perspective of secularists, demonstrating not only an antagonism between two modes of life but also a fluidity of ethical possibilities. In this sense, this is not simply a categorical judgment, but a call for Islam at the very base of social relations.
There is a quiet assembly
I walk towards it, and throw a bomb
Some are injured, some are dead
What difference does it make - if they do not die?
Like the anthill and the flowers, they too must die
There is enjoyment in death
In our quiet life, we need the breaking of silence
We need terrorists, alongside Tagore songs
It’s like that.
In the last section of the poem the Islamist evokes an image — common within technics of contemporary media, in which Islamists are materially inscribed as terrorists who attack the mundane peacefulness of everyday life — to deconstruct not only the truth-strategies used by secularism in mobilizing a specific discourse, but the actual sensation of felt-death. In other words, the Islamist ponders the inevitability as well as the globality of death itself. The poet ends with a critique of the necessary binary between Islam as terror, and nationalism as bourgeois language signified by Tagore’s humanism. This statement is dangerous because it runs the risk of being misinterpreted as a reading of the social world in which there is no difference in power between the secular and the Islamic. But the structure and form of the poem solves this crisis for us: the poem is primarily constructed in question form, and involves open speculation about the materiality of death, and its relation to a domineering secular regime within a specific grammar of the “War on Terror.” It is not a simple reduction of the world through a “postmodern” or “postcolonial” critique of binaries. Rather, it is a poetic questioning of the material metaphysics of the grounding of secularity.
Photo Credit: Atish Saha
Photo Credit: Atish Saha
Final Remarks
Sayyid Qutb’s influence on our essay should be easy to identify. Even though Qutb is known mostly for his analysis of modernity as jahiliyya in the text Milestones, his earlier works on literature and poetry are relevant to this essay. Qutb’s distance from the world of literary conventions is itself a critique of the secular, because he saw in literature the fetish of Man. Since our object of inquiry in this essay has been the possibility of poetry as an affective-ethical response to secular power, we focus on that dimension of Qutb’s work in which he navigates a similar concern: the death of literature in relation to the emergence of an inverted social totality of non-Islam. Except in our analysis we move from the death of literature to the conditions and strategies of death itself.
We ask, how are deaths mobilized within secularity? And, how are these death-strategies in antagonism with conceptualizations of death in Islam that materialize differently? The formation of death as experience has to be understood in relation to the formation of a particular administration of the senses, where the sense-structure of our bodies is thematized within the rationality of freedom. To put it simply: the empiricism of sense-experience is rationalized and universalized as truth through the concept of man as sovereign, who has as his telos: freedom. When the accumulation of knowledge through the senses of this particular man is conceptualized as truth we globalize European thought as thought itself. Normalization of particular thought as universal thought produces a kind of philosophical crisis that troubles the very possibility of thought itself, producing a certain anxiety in the modern man that is different from earlier anxieties. Anxieties prior to the secularization of thought were still within the immanent unfolding of thought itself, and due to strict contingencies of thought, those anxieties were contextual and temporal. Modern philosophical anxiety is more fundamental and elemental: it is a break within thought itself, organized around concepts of sense, free will, freedom within the rubric of man as a radically sovereign subject. This particular sovereign man globalized through relations of colonialism — a process we can name secularization — produces an anxious, pathological, sexually aggressive secular man in non-Europe who is directly disobedient to divine will. It is this secular man — a man who looks in the mirror and wants to see the white man — who hates the Islamist, whom we investigate.
Poetry is not outside of this crisis of man. The crisis of thought — materialized through the secular — incarcerates poetry within a structuralism and hermeneutics of words, sentences, and meanings. This fetish of the structures of poetry alienates it from the comprehensiveness of life. To show the relation of poetry to life is not to show a peculiar obsession with life, but rather, to grasp the limits and finitude of this life, and the acceptance of death as both closure and opening. Islamic resistance in and to poetry has to be grasped through a reconceptualization of man himself — a concept of time, body, and ruh[14] that are entangled within a specific rhythm. Death for this man is not the finality of life, but rather, a realization of haqiqah. Because of this, he is not an optimist, and has no need nor intention to turn the duniya into a utopia.
This essay has been republished with permission from The Volta.
Tanzeen R. Doha is a PhD candidate in Anthropology at the University of California, Davis. His ethnographic research focuses on the confrontation between national secularism and Islam in Bangladesh within the structure of the global War on Terror.
Iftekhar Jamil is trained in Islamic sciences, literature, philosophy, and jurisprudence. He writes and thinks in Bengali, Arabic, Urdu and Farsi. At present, Jamil is writing a short history of the failure of Bengali poetry and literature in representing Islam.
Acknowledgments
We dedicate this short essay to our brothers in Islam who were martyred during Operation Flushout on May 5-6, 2013 in Dhaka, Bangladesh.
Iftekhar Jamil contributed to this essay by providing his critique in Bengali, which was translated by Tanzeen R. Doha.
Rashida Doha translated another poem, written originally by a Qawmi madrassa student, which we could not use for this piece, but it still influenced our reading strategy.
Notes
[1] See Wael Hallaq’s The Impossible State: Islam, Politics, And Modernity’s Moral Predicament (2013). While Hallaq focuses on the structural incompatibility between the modern state and Islam, my emphasis is on the production of incompatibility by secularism.
[2] Witnesses say that the killings started earlier in the day, but what the regime termed “operation flushout” - systematic targeted killings and evacuation - began around evening time.
[3] By political Islam I mean pragmatic engagements by Islamists in the political discourse of civil society.
[4] See Talal Asad, Formations of the Secular: Christianity, Islam, Modernity. 2003.
[5] See Frantz Fanon, translated by Richard Philcox, The Wretched of the Earth. 2005.
[6] Joachim Scholtyseck, “Fascism - National Socialism - Arab “Fascism”: Terminologies, Definitions, and Distinctions.” Die Welt Des Islams 52 (2012), 242-289.
[7] This author participated in preparing a communique in May 27, 2013 where he used similar language to describe white-supremacy. https://davisantizionism.wordpress.com/2013/05/27/note-from-revolutionaries-of-color-ii-2/
[8] The definition of “enemy combatant” had a few shifts, but the War on Terror defined it in a specific way. See Congressional Bills 108th Congress, H.R. 1029, (8), https://www.gpo.gov/fdsys/pkg/BILLS-108hr1029ih/html/BILLS-108hr1029ih.htm. While the definition primarily concerns engagements of the US government (which technically changed under Obama), the influence of this definition is global. The secularist state in Bangladesh is influenced by this conceptualization of the “enemy combatant” in its own articulation of counter-terrorism.
[9] Specific concept of genealogy; chain of ethical lineage; Islamic path or way dependent upon following a specific religious scholarly line.
[10] Purification of the soul or heart may not be the best translation for this term. But it is often translated in that way. If one were to be serious about tazkiyyah, they would think about the violence of translation, and how the etymological and genealogical histories of soul or heart have significant distance from the meanings in Quranic Arabic.
[11] Anthropologist Charles Hirschkind uses the concept of the counterpublic in describing an Islamic society that is outside of the logic of the State in Egypt.
[12] Shaker Aamer’s comments are reproduced verbatim here. We wanted to keep his tone, his accent, his dialect, and his errors intact. There is no need to forcibly convert him into a pure Briton. Close to fourteen years of interrogation in Guantanamo failed to assimilate Aamer. We respect that. For interview links see these two links: http://www.bbc.com/news/magazine-35049397, https://shadowproof.com/2015/12/15/shaker-aamer-befriended-ants-stray-cats-to-survive-guantanamo-torture/
[13] Hegel uses this notion in describing Islam in his lectures Philosophy of History.
[14] It is often used to mean ‘spirit’. Sometimes it is used to mean ‘breath.’ And, sometimes it is used to mean ‘sign.’ The meaning of the word can also be related to a concept of ‘mercy.’
৯৯
ইরাকের কারবালার ইতিহাস আমরা পড়ি; পড়াই। ওয়াজ করি। বয়ান করি। চেতনায় শান দিতেও কার্পণ্য করি না।
কিন্তু...
শাপলা ছিল আমাদের কারবালা। হ্যাঁ, সত্যিই কারবালা। মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে আমরা ভুলেই গেছি। আসলে ছয় বছর না; পরের দিন থেকেই ভুলে গেছি।
কেউ কথা বলেনি; কেই কথা রাখেনি।
কিন্তু...
তরুণরা যখন জাগতে শুরু করে, তখন হতাশা দূর হতে দেরি নাই। ইতোমধ্যে আলোর কিরণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
হ্যাঁ, তরুণরা সত্যিই জেগে উঠছে। আপসকামী দালালদের চিহ্নিত করে এই তরুণরাই বয়কট করা শুরু করেছে। তাই তো ওদের লম্ফঝম্ফ আগের মতো চোখে পড়ে না।
এ জন্য আমাদেরকে ভেঙে পড়লে চলবে না। শাপলা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হবে। এগোতেই হবে...
- আবুল কালাম আযাদ। কালান্তর।
১০০
6 মে একটি কালো রাত!!
________________________
খাবার খোঁজতে খোঁজতে রাত দুটা। ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি হামলা হবে। যেভাবে হোক সরিয়ে দিবে তাওহিদবাদীদের। এদিকে ক্লান্তিতে নিস্তেজ প্রায়। অনেককে দেখলাম পূর্বদিকে দ্রুত যাচ্ছেন। ভাবলাম কোথাও বিশ্রামের জায়গা হবে। তাদের সাথে আমরাও চললাম। গিয়ে দেখি একটু খোলা জায়গায় কিছু মানুষ খিচুড়ি খাচ্ছে। কোন লোক হয়তো এই সুন্দর আয়োজন করছেন৷ আমাদের আর খাওয়ার রুচি হলো না।
পাশেই একটা লম্বা টিনের ঘরে অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে৷ ঘরগুলো ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের। তারা সেখানে নানানরকম ভাঙ্গারী মালামাল রাখেন৷ সেখানে অনেক মানুষ জড়ো হচ্ছে। আমরা তিনজন গেলাম। যেহেতু তখন খুব বেশী বয়স ছিলো না। তাই সাথে থাকা দুই সহপাঠী খুব খেয়াল রাখতেন আমার প্রতি৷ হাত ধরে হাটতেন সবসময়।
টিনের ঘরের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা ঘরের সবগুলো দরজা খুলে দিলেন। প্রতি রুমে বিশ-ত্রিশজন লোকে ঠাসা। সাথে তাদের ভাঙ্গারী মালামাল ত আছেই। তারা সবরুমের লাইট বন্ধ করে দরজা তালা লাগিয়ে দিলেন৷ অন্ধকারে কিচ্ছু দেখা যায় না৷ ভয়ে মোবাইলের আলো জ্বালানি। চুপচাপ বসে আছি৷
আশপাশে বিভিন্ন রট এবং ভাঙ্গা জিনিসপাতি আছে এইটুকু অন্ধকারে উপলব্ধি হচ্ছিলো৷ এছাড়া কিছু বুঝতে পারি নি। মানুষ এবং মালামালে ঠাসা টিনের ঘর৷ অসহ্য গরম আর সারাদিনের ক্লান্তিতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাই না।
কিছুক্ষণ পড়েই ঘুম ভাঙ্গলো ভয়ঙ্কর সাউন্ড গ্রেনেড এবং গোলাগুলির শব্দে। ভয়ে কুঁকড়ে উঠছি। জীবনে এই প্রথম এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি৷ প্রতি আওয়াজে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো৷ পাশে রাস্তায় থাকায় ভাইদের কথা বারবার মনে হচ্ছিলো। কতো মানুষ মরবে সেই ভাবনা কাজ করছিলো। তারা কি করবেন! কোথায় যাবেন!
ইতিহাসের নৃশংস এই হত্যার মিছিল টানা দুই থেকে তিনঘণ্টা শুনতে থাকি৷ আবার ভয় হচ্ছিলো আমার যেখানে অবস্থান করছি এখানে এলে একসাথে কয়েকশো লোককে অন্ধকারে শহীদ করে ফেলতে পারবে। প্রতিটি গ্রেনেডের আওয়াজে কেঁপে উঠতাম৷ এভাবেই ফজরের সময় হলো। আওয়াজ কিছুটা কমলো।
মাঠে পরিস্থিতি এখনো জানি না আমরা৷ বের হই নি এখনো। বের হয়ে মূল পয়েন্টে যাওয়ার সাহস ও নাই৷ পাপিষ্ঠদের নৃশংসতায় পৃথিবী আলোকিত হতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে ভর থেকে বের হলাম। আমাদের ঘর এবং কমলাপুরের রাস্তার মাঝে ছোট্ট একটা পুকুর। কয়েক সেকেন্ডে পার হওয়া যায়৷ জনপ্রতি দশটাকা করে পারলাম৷
রাস্তায় এদিক-ওদিক তাকিয়ে হাঁটছি। যাত্রাবাড়ী গন্তব্য। হায়েনাদের চোঙরাঙ্গানি রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখলাম। কারো সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করতেও দেখলাম৷ নানারকম হতাশা এবং ভয়ে যাত্রাবাড়ীর এক মাদরাসায় আসি। এখানে মাহমুদ ভাই ইফতা পড়েন। ফ্রেশ হয়ে কিছু সময় বিশ্রাম নিলাম৷ মাদরাসায়।
আমাদের মাদরাসা বন্ধ। আল আমিন ভাই আর আমি একসাথে পড়ি। তিনি ইফতা পড়েন৷ আমি অন্য বিভাগে। বাড়ী যেতে চাচ্ছি। তারা দুজন কিছুতেই বাড়ী যেতে দিবে না৷ একাকী ছাড়তে নারাজ৷ বিকালবেলা আল আমিন ভাইয়ের বোন আসলেন তাঁর বাসায় নিয়ে যেতে। আক আমানি ভাই আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন৷ সেখানে দুদিন থেকে তারপর এক বিষাদ বিকালে বাড়ীর পথ ধরি।...
- আবু দারদা (শামিম)
১০১
শাপলা চত্বর - শাহাদাৎ চত্বর
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৩
৫ ই মে কালো রাত : বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটা ভয়ঙ্করতম নারকীয় গনহত্যা
গত ৫ ই মে ২০১৩ ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম দিন। সরকার কর্তৃক সাধারন নাগরিক ও ইসলামপ্রেমীদের উপর চলে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ৫ ও ৬ তারিখের সকল ঘটনা তুলে ধরা হলো এখানে।
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ৫ মে ২০১৩- এ তাদের ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ঢাকা অবরোধের ডাক দেয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হেফাজত ইসলামের কর্মীরা ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখে অবস্থান নেন। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ভোর থেকেই সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে হেফাজতের কর্মীরা। ফলে ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্রগ্রামের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফজরের নামাজ সেরেই পোস্তগোলা এক নম্বর সেতুতে জড়ো হয় হেফাজত কর্মীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাদের সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌছায়। এ সেতু দিয়ে নারায়ণগঞ্জ ও মাওয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গাবতলী ব্রিজ থেকে শুরু করে আমিনবাজার, টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত হেফাজত কর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নেয়। কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হেফাজত কর্মীরা অবরোধ তৈরি করেন। ফলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যান চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় তারা ১৩ দফা দাবি ও নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকে। বাবুবাজার-নয়াবাজার এলাকাতেও কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী নামাজ পড়েই অবস্থান নেয়। ব্রিজের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। টঙ্গীব্রিজ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হেফাজত কর্মী অবস্থান নেয়। কয়েক লাখ হেফাজত কর্মী অবরোধ তৈরি রাখে। এসয় তারা ১৩ দফা দাবি মেনে নিতে নানা স্লোগান দেয়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক স্পটেই পুলিশ বেরিকেড দিয়ে রাখে যাতে তারা ঢাকা প্রবেশ করতে না পারে। এসকল প্রত্যেকটি যায়গায় তারা শান্তিুপূর্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকে। কোথাও কোথাও ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরী করে বক্তব্য, স্লোগান, জিকির, গান পরিবেশনের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি পালন করতে থাকে।
ভিডিও:
https://www.facebook.com/photo.php?v=3147470101214
পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী হেফাজত ইসলামের দুপুর ৩টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী সরকার তাদের এ গনতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে সমাবেশের অনুমতি প্রদান থেকে বিরত থাকে। হেফাজতের পক্ষ থেকে যেকোন মুল্যে সমাবেশের ঘোষনা দেয়া হয়। নির্দেশ অনুযায়ী হেফাজতের নেতাকর্মীরা সমাবেশের জন্য বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট অভিমুখে আসতে থাকে। কিন্তু হেফাজতের মিছিল পল্টনের কাছাকাছি আসতেই পুলিশ একদম কাছ থেকে মুহুর্মূহ গুলি, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হামলা শুরু করে। ফলে হেফাজতের নেতা কর্মীরা পুলিমের ধাওয়া খেয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সামনে গেলে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। শুরু হয় ত্রিমুখী সংঘর্ষ। ওদিকে পল্টনেও চলতে থাকে সংঘর্ষ।
ভিডিও:
http://www.facebook.com/photo.php?v=439253166165366
https://www.facebook.com/photo.php?v=10201295256047976
https://www.facebook.com/photo.php?v=134866550037054
http://www.facebook.com/photo.php?v=566883320018754
একদিকে পল্টন-বিজয়নগরে পুলিশের সাথে হেফাজতের সংঘর্ষ চলতে থাকে অপর দিকে হেফাজতকে মতিঝিলে সমাবেশ করতে দেবার অনুমতি দেয়ায় লক্ষ লক্ষ হেফাজত কর্মী ও সাধারন জনতা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হতে থাকে। দুপুর ৩ টায় আওয়ামী লীগের আশরাফ হেফাজতকে সন্ধার মধ্যেই শাপলা চত্বর ছেড়ে যাবার হুমকি দেয়। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম সকল প্রকার হুমকি ধমকি কে পরওয়া না করে শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষনা করে। বিকেলে আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব শাপলা চত্বরে উপস্থিত হবার জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত এলে পুলিশ বাধা দেয়। এবং তাকে যেতে দেয়া হয় না। ফলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। সংগঠনের নেতারা বলেন, গুলি করে আমাদের আন্দোলন দমানো যাবে না। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনে এক মাস অবস্থান করব, এক সাগর রক্ত দেব। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।
এদিকে পল্টন-বিজয়নগরের সংঘর্ষ রাতভর স্থায়ী হয়। কিন্তু রাত দশটার দিক থেকে সকল সংবাদ কর্মীদের সরিয়ে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয় হয় মতিঝিল-পল্টন-বিজয়নগর সহ আশেপাশের সকল এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ। সরকার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় সত্য প্রকাশে একনিষ্ট সংবাদ মাধ্যম দিগন্ত টিভি। ওদিকে জিকির-স্লোগান-বক্তব্যে চলতে থাকে মতিঝিলের অবস্থান কর্মসূচি।
ভিডিও:
https://www.facebook.com/photo.php?v=134867286703647
রাত ২.৩০, ০৬/০৫/২০১৩
পুলিশ বিজিবি র্যাব ও প্রফেশনাল শুটার বাহিনী দ্বারা গঠিত ১০০০০ হাজার সদস্যের যৌথবাহিনী হামলে পড়ে শাপলা চত্বরের সমাবেশে অবস্থানকারী লক্ষ লক্ষ হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীর উপর। একদল ফকিরাপুল মোড় হয়ে নটরডেম কলেজের সামনে দিয়ে আরেক দল দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শাপলা চত্বরের মঞ্চের অভিমুখে। হাজার হাজার রাউন্ড গুলি, গ্রেনেড, পিপার স্প্রে, টিয়ার শেল, বোমা, গরম পানি নিক্ষেপ করতে করতে তেড়ে যায় নিরস্ত্র শান্তি প্রিয় সাধারন মানুষগুলির দিকে। তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু হাজার হাজার বুলেট বোমা একের পর এক কেড়ে নিতে থাকে নিষ্পাপ প্রানগুলি। ইসলামের জন্য প্রান বিলিয়ে দেন হাজারো ইসলাম প্রেমী জনতা। একপর্যায়ে দুদিক থেকে চালান বুলেট বোমার সামনে তাদের এ প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। ওলিতে গলিতে আশ্রয় নিয়ে তারা আবারো প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু আওয়ামী হায়েনাদের উন্মাদের মত আক্রমন ও লাগাতার গোলাগুলির সামনে তারা এ প্রতিরোধ ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন ২৫০০ এর অধিক হেফাজতে ইসলাম এর কর্মী ও সাধারন জনতা। আহত হন ১০০০০ এরও বেশী।
গনহত্যায় অংশগ্রহনকারী এক পুলিশের বক্তব্য দেখুন:
https://www.facebook.com/photo.php?v=462343463853623
গনহত্যা সংঘটনের সময়কার একটি ভিডিও:
https://www.facebook.com/photo.php?v=10200195623309108
আরো জানতে এই লিংকগুলোতে ক্লিক করুন:
http://www.dailyinqilab.com/details_news.php?id=106848&&%20page_id=%205
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/05/07/199009#.UYkF_NiLY14
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/05/07/199017#.UYkGCNiLY14
গনহত্যার প্রমানসমূহঃ
কোরআন পোড়ানোর সাথে হেফাজতকে জড়িয়ে মিথ্যাচারের প্রমান:
যারা বইয়ের দোকান, যেখানে অনেক কপি কোরআন শরীফও ছিল, পোড়ানোর সাথে হেফাজতকে দোষারোপ করছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি। আপনাদের একটু মাথা খাটাতে বলবো।
এই ছবিটা google earth থেকে নেয়া। ছবির উপরের দিকে উত্তর দিক। স্বভাবতই দক্ষিণ দিক ঠিক নিচের দিক।
ছবিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ দিকের গেট, মানে দক্ষিণ গেটটি মার্ক করা আছে। আরও মার্ক করা আছে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
আমরা সবাই ভিডিওতে দেখেছি বায়তুল মোকাররমের গেটের সামনের দোকানগুলোতে আগুন দেয়া হয়, বই পোড়ানো হয়।
এইবার আপনাদের প্রশান করি, খেয়াল করেছেন বায়তুল মোকাররমের কোন গেটের সামনে। হ্যাঁ, দক্ষিণ গেটের সামনে (https://www.facebook.com/photo.php?v=648796955137799)।
এই মানচিত্র ভালো করে দেখুন। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সবচেয়ে কাছে কাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।
সবাই যদি গতকাল ভিডিওগুলা ভালোভাবে দেখে থাকেন এইটা খুব ভালোভাবে জানার কথা এই জায়গাটা কাদের দখলে ছিল। হ্যাঁ, ঠিক আওয়ামী লীগ কর্মী আর গোপালি পুলিশের দখলে ছিল (https://www.facebook.com/photo.php?v=123772774488571)। এইখানে হেফাজতের কর্মীরা আসার চেষ্টা করলে পিটিয়ে দুইজনকে হত্যা করা হয়। এই ভিডিও নিশ্চয়ই দেখেছেন।
আর হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয় কখন? হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের একটি মিছিল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট দিয়ে পুরানা পল্টন যাওয়ার সময় (https://www.facebook.com/photo.php?v=497151467007139)। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে পুরানা পল্টন যাওয়ার পথে কোনভাবেই এই দক্ষিণ গেটের সামনের রাস্তা ব্যবহার করা লাগে না।
তাহলে কোরআনসহ দোকানগুলো কিভাবে হেফাজতের কর্মীরা পোড়ালো যদি ঐ এলাকায় তো তারা ঢুকতেই পারলো না? একটু মাথা খাটান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে হেফাজত এতোবড় ঘটনা ঘটবে আর আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী চুড়ি পড়ে বসে থাকবে তা কখনই সম্ভব না। শুধুমাত্র তখনই এটা সম্ভব যখন তারা নিজেরাও এই কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে কাজ করবে।
কিছু কি বুঝতে পারছেন?? কারা করেছে এটা নিয়ে কি এখনো সন্দেহ আছে?? ঠিক আছে সন্দেহ থাকলে এই লিংক থেকে ঘুরে আসুন। সন্দেহ দুর হয়ে যাবে।http://www.dailyinqilab.com/details_news.php?id=106839&&%20page_id=%205
[http://shaplachottor.blogspot.com/ থেকে নেয়া। ছবি গুলো দেখতে লিঙ্কে যান]
Last updated: 2019-05-05