JustPaste.it

বিশেষ নিবন্ধ


মানুষ শূকর-বাঁদরে
রূপান্তুরিত হচ্ছে!


বানারস হতে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা “আওয়াযে মূলক” এর ২৭.৭.৯৬ তারিখ পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ, ‘ইউরোপের কোন কোন অঞ্চলে এবং আফ্রিকার সমুদ্রপোকুল এলাকায় এক অভিনব ধরনের অসুখ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। যাতে আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষ তার জন্মগত আকৃতি হারিয়ে শূকর অথবা বানরে রুপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।‘
এই ধরনের পীড়াক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে ভীষণ জ্বরের  শিকার হচ্ছে ও পরবর্তীতে শরীরের অভ্যন্তরের রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে শেষে নাক-চক্ষু ও দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সিংহভাগই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেও যারা কোন মতে বেঁচে যাচ্ছে, তাদের মানুষের চেয়ে বেশীর ভাগ শূকরের মত দেখাচ্ছে। তাদের চর্ম শূকরের চর্মের মত পুরু এবং নাসিকা ও কর্ন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে লম্বা রূপ পরিগ্রহ করছে। নাসিকা এত কুৎসিত আকার ধারণ করছে যে, নাসিকা ও শূকরে থুথনির মধ্যে কোনই ব্যবধান পরিলক্ষিত হচ্ছে না। চুল কাটা কাটা এবং শক্ত হয়ে যাচ্ছে এবং  তার রংও বদলে যাচ্ছে। চামড়ার উপর  ক্ষুদ্র শিং এর মত সুচাল (নাবগসপিন্ড) বেরিয়ে আসছে। এই ভয়াবহ পরিবর্তন কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এইডস ভাইরাসের পড়ে পৃথিবী আরও একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাসের সম্মুখীন হলো। ইউরপের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসা বিশারদ্গণ এই অসুখের প্রাদুর্ভাবে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, এর প্রতিরোধ চিন্তায় চিন্তিত। 
এ প্রকৃতির ঘটনা মানব জাতির ইতিহাসে অনেক পাওয়া যায়। কুরআন শরীফ ও হাদীসেও এর বিবরণ বিদ্যমান। শূকর ও বানরে রুপান্তরিত করা, প্রস্তাব বৃষ্টির ঘটনা ঘটা, জীবন্ত মানুষসহ মাটির ধস নামিয়ে দেওয়ার বৃত্তান্ত কুরআন মজীদে উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহপাক একে আযাব বা অপরাধের সাজা বলেছেন। আর এ সবের কারণ হিসেবে মানুষের গোয়ার্তুমি, দুষ্টুমি, অহমিকা, দাম্ভিকতা, সীমালংঘন, প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ ধরণের শাস্তি আল্লাহ্ পাক নিজের ন্যায়নীতির ভিত্তিতে ও নিজের কৌশলগত ইনসাফভিত্তিক বিচারের ফলাফল স্বরূপ যে কোন জনবসতি ও অঞ্চলে তা প্রেরণ করে থাকেন। অন্যথা অপরাধের ও পাপের প্রকৃত শাস্তি তো বারযাখে (মৃত্যু ও শেষ বিচারের দিনের মধ্যবর্তী) অবস্থানকালে আংশিক এবং অবশিষ্ট শাস্তি কিয়ামতের দিন বিচারের পরের জন্যে নির্ধারিত।
কুরআন মজীদে আল্লাহ্ পাক বলেছেঃ জিজ্ঞাসা করুন ‘আমি কি তোমাদের বলে দিবো যে, এদের মধ্যে কার মন্দ প্রতিফল রয়েছে আল্লাহ্র কাছে? যাদের প্রতি আল্লাহ্ অভিশাপ দিয়েছেন, গজব অবতীর্ণ করেছেন যার প্রতি, তন্মধ্যে কাউকে বানর বানিয়েছেন, কাউকে শূকর, আর যারা তাগুতের পুজারী তারাই সর্ব নিকৃষ্ট পর্যায়ের, সরল পথ হতে তারা হহু দূরে।‘ (সূরা মায়েদা ৬০ আয়াত) ‘শনিবার দিনের সম্মান প্রদর্শন হেতু ইহুদীদের জন্য সে দিন যাবতীয় কর্মকান্ড  বন্ধের নির্দেশ ছিল। এ কঠোর নিষেধাজ্ঞা তাদের গর্হিত ও নির্লজ্জ কুকর্মের জন্য তাদের প্রতি আরোপ করা হয়েছিল। উক্ত দিনটিতে মৎস শিকার করাও তাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ছিল। লোহিত সাগরের উপকুলে তারা ক্যানেল খনন করে নিয়েছিল। শনিবার দাউদ (আঃ)-এর তেলাওয়াত শ্রবণের জন্য মৎস্যকুল আসত। ওই সুযোগে বহির্গমনের পথ বন্ধ করে দিয়ে অন্য দিনে তারা তা শিকার করত। এই ছল-চাতুর্যের দ্বারা আল্লাহ্র হারামকৃত বস্তু তারা হালাল করে নিয়েছিল। 
যারা এই অপকর্মে অংশ না দিয়ে দুর্বৃত্তদের বাধা প্রদান করেছিল, তাদের ছাড়া সকলকে জঘন্য বানরে রুপান্তরিত করে দেওয়া হয়। যেমন আল্লাহ্ পাক বলেছেনঃ “আর নিশ্চয় তমরা জ্ঞাত আছ যে, তোমাদের মধ্যে যারা শনিবার (এর বিধি-নিষেধ) লংঘন করেছিল, আমি তাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমাদের এই ঘটনাকে সমকালীন ও পরবর্তী লোকদের জন্য দৃষ্টান্ত স্বরূপ রেখে দিয়েছে এবং আল্লাহভীরু লোকদের উপদেশ বানিয়েছি।” (সুরা বাকারাহ ৬৫-৬৬ আয়াত)। 
লূত নবীর বংশধর সমকামিতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। আল্লাহ্ তাদের উপর প্রস্তর বর্ষণ করেছিলেন ও সৎকর্মশীলদের বাঁচিয়ে নিয়ে গোটা জনবসতিকে উল্টিয়ে নিঃশেষ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ্ বলেনঃ ‘আমার শাস্তি এসে পৌঁছল,  তখন আমি গ্রামের উপরিভাগেকে নিম্নভাগের সাথে বদল করে দিলাম। আর তাদের উপর চিহ্নিত পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। ওই ধরনের প্রস্তর (আজও) পাপিদের জন্য কোন দূরের জিনিস নয়।” (হুদ ৮৩ আয়াত)
কারুন মূসার (আঃ) বংশের একজন ছিল। সে কপটতা অবলম্বন করে ফিরআউনের নৈকট্য লাভ করেছিল। সে ছিল অত্যন্ত বড় ধনকুবের। তার ভান্ডারের চাবিসমূহ শিক্তিশালী একদল যুবকেরও বহন করা শক্ত কাজ ছিল। ধনের গর্বে সে ফেটে পড়েছিল। সে বলত, আমি নিজ বুদ্ধি দ্বারা এই সম্পদ সংগ্রহ করেছি। আল্লাহ্র নিকট তার এই অবাস্তব অহমিকা দন্ডযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তাকে তার বাসগৃহ সহ মাটিতে ধ্বসিয়ে দেওয়া হল। 
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’আলা বলেছে, ‘আমি তাকে ও তার বসতবাটি মাটিতে বিলিন করে দিলাম।  তার পক্ষে আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কেউ ছিল না, তারা তাকে সাহায্য করতে পারে এবং সে নিজেও আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হলো না।‘ (কাসাস ৮১ আয়াত) কুরআন-হাদিস হতে পরিস্কার যে বিগত জাতিসমূহকে যে শাস্তি সমূহ দেওয়া হয়েছে, তার ক্রমধারা অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত যে, বর্ণিত শাস্তি বিধান এখনো কষ্টকর। হাদীসে এও উল্লেখিত হয়েছে যে, মুসলিমদের উপরেও ভবিষ্যতে শাস্তি আসতে পারে। বিশেষ কিছু হাদীসে শাস্তির উল্লেখ থাকলেও তাতে কারণ বর্ণিত নেই। কিন্তু অনেক হাদীস এমন আছে, যাতে অপরাধের উল্লেখ আছে। যা করলে শূকর ও বানর বানিয়ে দেওয়া হবে। কিছু পাপীকে মাটিতে ধসিয়ে দিয়ে তার জীবন্ত সমাধি রচনা করা হবে। আবার অনেক পাপীদের উপর পাথর বর্ষিয়ে শেষ করে দেওয়া হবে। সুতরাং এই মর্মে আবু মালিক আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রসূলুল্লাহর (ﷺ) বাচনিক হাদীসটি সবিশেষ প্রনিধান যোগ্যঃ
তিনি বলেনঃ “আমার উম্মতে এমন প্রকৃতির মানুষ অবশ্যই আগমন করবে, যারা ব্যভিচারী হবে, রেশম পরিধান করবে, বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকার ব্যবহারকে হালাল মনে করে নিবে। কিছু লোক বড় বড় পর্বতের পাদ দেশে বাস করবে, তাদের পশুকূল নিয়ে রাখালের দল সন্ধ্যাবেলা তাদের নিকট ফিরে আসবে। তাদের মধ্যে অভাবীগণ প্রয়োজনসহ তাদের তাদের নিকট উপস্থিত হলে তারা বলবে, আগামীকাল এস। অতঃপর আল্লাহ্ পাক সেই রাত্রেই তাদেরকেই নিঃশেষ করে দেবেন ও পাহাড়কে তাদের উপর ধ্বসিয়ে দেবেন এবং কিছু সংখ্যক লোককে চিরতরের জন্য শূকর ও বানর করে দেবেন”। (ফতহুল বারী ১০/৫১)
সাহল বিন সা’দ সায়ে’দী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ “আমার উম্মতের উপর মাটিসহ ধসে যাওয়া, প্রস্তর বর্ষণ হওয়া ও তাদের আকৃতি বিকৃত হওয়ার আযাব আসতে থাকবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এগুলি কবে হবে? তিনি বললেন, যখন বাদ্যযন্ত্রের প্রাদুর্ভাব হবে এবং মাদক দ্রব্যকে বৈধ ভেবে নেওয়া হবে। (ইগাসাতুল লাহফান ১/২৬১)
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘এই উম্মতের অংশ বিশেষকে শেষ যুগে শূকর ও বানর বানিয়ে দেওয়া হবে’। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ্র রসূল (ﷺ) ! তারা কি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর সাক্ষ্য দেবে না? তিনি বললেন, ‘আবশই তারা সাক্ষ্য দেবে, নামায পড়বে, রোযাও রাখবে এবং তারা হজ্জও করবে’। সাহাবীরা বললেন, তাহলে এমন হওয়ার কারণটা কি? তিনি বললেন, তারা গান বাজনার জন্য পাগল হয়ে যাবে, গায়িকা ও নর্তকী রাখার প্রচলন ব্যাপক হবে। রং-তামাশা ও মদ্যপান তাদের অভ্যাসে পরিণত হবে-এমনিতর পরিস্থিতিতে হঠাৎ তারা কোন এক সকালে উঠে দেখবে যে, তাদের বানর ও শূকরে পরিণত করে দেওয়া হয়েছে। (পূর্বোক্ততথ্য)
মালিক বিন দীনার বলেছেন, “আমি অবহিত হেয়েছি যে, শেষ যুগে ঘুর্ণী ঝড় ও অন্ধকার নেমে আসবে। জনগণ আশ্রয় হেতু তাদের আলেমদের নিকট দৌড়ে এসে দেখবে যে, তাদের অবয়ব বিকৃত হয়ে গেছে।” (ঐ)
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম বিশেষ এক বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে লিখেছেন, মানুষের হৃদয় যখন শঠতা, ধোকাবাজী ও গর্হিত কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সম্পূর্ণ্রূপে এই রঙে রঙিন হয়ে যায় তখন ওই গুণবিশিষ্ট পশুকুলের চরিত্রের সমাবেশ এদের মাঝে ঘটে। যেমন বানর, শূকর ইত্যাদি। যখন এই জঘন্য চরিত্র বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন মানুষের মুখমন্ডলে ঐ সমস্ত চরিত্র বিশিষ্ট পশুদের ছাপ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। যদি সে চরিত্রসমূহ আরও দৃঢ়তা লাভ করে তাহলে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পেতে থাকে ।যেমন তার অন্তর্জগত বদলে গিয়েছে বাহ্যিক অবয়বও তার তেমন বদলে যাবে।
যাদের দূরদর্শিতা আছে, তারা ঐ মানুষদের চেহারায় ঐ পশুকূলের চেহারার একটা বিকৃতরূপ লক্ষ্য করতে পারবে। অনেক অহংকারী, ধোকাবাজ ও চক্রন্তকারীদের চেহারা বানরের আকৃতি লক্ষ্য করা যায়। ঠিক অনুরূপ রাফেযী গ্রুপের (অদৃষ্টের অবিশ্বাসী) চেহারায় শূকরের বিকৃত অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। অধিকাংশ লোভী মানুষের হৃদয় কুকুরের সাথে সাদৃশ্য রাখে। অতএব তাদের আকৃতিতে কুকুরের আকৃতির মিল লক্ষ্য করা যাবে।  মানুষের বহির্বিভাগ মূলত অন্তর্জগতের আয়না তুল্য। যখন ঘৃণিত  স্বভাবের সমাবেশ অন্তরে দৃঢ়তা লাভ করে তখন স্বাভাবিকভাবে বহির্জগতের পরিবর্তন হতে থাকে। সেজন্য রাসূলুল্লাহ নামাযে ইমামের আগে বেড়ে রুকু ও সিজদায় গমনকারী ও মাথা উত্তোলন কারীকে ভীতি প্রদর্শন করে বলেছেন যে, ‘আল্লাহ্ পাক তার মাথাকে গাধার মত করে দিতে পারেন।’
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ ‘তোমাদের মধ্যে যখন কোন ব্যক্তি ইমামের আগে রুকু ও সাজদা হতে মস্তক উত্তোলন করে, তখন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্ তার মাথাকে গাধার মাথার মত করে দেবেন।’ (বুখারী-মুসলিম)
     ইবনুল কাইয়্যেম  বলেছেন-এটা এ জন্য যে, তার অন্তর্জগত গাধার মত হয়ে গেছে। কেননা সে ইমামের আগে সব কিছু করল, যে কারণে তার নামাযও নষ্ট হল, নেকীও পন্ড হল। এতদসত্ত্বেও ইমামের আগে সালাম ফিরাতে পারলো না। সুতরাং নির্বুদ্ধিতায় ও বোকামীতে সে গাধার সমান বটে।   
শিরোনামের যে সংবাদ নকল করা হয়েছে, তার জন্য চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীগণ অবশ্যই ব্যাকুল হবেন অতার কারণ নির্ণয় ও নিরসনের জন্য গবেষণায় রত হবেন। কিন্তু ইবনুল কাইয়্যেম বলেছেন, এর কারণ বর্হিজগতের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বেশী। সে জন্য চিকিৎসাবিদদের উচিৎ এটাকে আল্লাহ্র আযাব হিসেবে দেখা ও আধ্যাত্মিক দিকটাকে গুরুত্ব দেওয়া। নিজের গবেষণাতে ভেষজএর সুফল ও কুফলকে এবং তার প্রভাবকেই কেবল অন্তর্ভুক্ত না করা। অন্যথা এর রহস্যের দরজা অনাবৃতই থেকে যাবে।

(মাসিক ‘মুহাদ্দিস’ বানারসের সৌজন্যে)
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ সালাফী