অবিশ্বাস্য হলেও সত্য
যুদ্ধ ক্ষেত্রের এখানে সেখানে রুশ বাহিনীর বহু লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটু আগেও যারা খোদায়ী নূর ইসলামকে নিভিয়ে দেয়ার জন্য, মুসলমানদেরকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরবিদায় দেয়ার শপথে বদ্ধপরিকর ছিল, সে বাহাদুর সেনাদল এখন নিথর-মরা লাশ।
মুজাহিদের সংখ্যা ছিল কম, একেবারেই অনুল্লেখযোগ্য। অস্ত্রসস্ত্রও ছিল অপ্রতুল এবং তা ছিল একেবারেই সেকেলে। শত্রুবাহিনী সংখ্যায় বহু এবং তাদের কাছে রয়েছে বর্তমান দুনিয়ার অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হল। শত্রুবাহিনী বিজয়ী হবে, এটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু না, বিজয়ী হল ক্ষুদ্র মুজাহিদ দলটি। আফগান জিহাদের শুরুর দিকের এক বিস্ময়কর ঘটনা এটি।
মুজাহিদ, কমান্ডার ইন্ চীফ এক সহযোদ্ধাকে ডেকে বন্দী শত্রু সেনাদের সংখ্যা জানতে চাইলেন। বন্দীদের সঠিক সংখ্যা জানার জন্য সহযোদ্ধা মুজাহিদ তখনই রওয়ানা হয়ে গেছেন। অল্পক্ষণ পরই তিনি ফিরে এলেন। তার গোলাপী চেহারা খুশীর উল্লাসে ঝলমল করছিল। মুখে দাড়ি মাথায় পাগড়ি আর হাতে ক্লাশিনকভ। মুসলিম চরিত্র ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত ছবি যেন এ।
কমান্ডার ইন্ চীফ সোহাগভরে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী সংবাদ নিয়ে আসলে? তিনি জানালেন, শত্রুপক্ষের পাঁচশ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং তিরাশিজন জেন্দা গ্রেফতার হয়েছে। আমাদের একজন মাত্র মুজাহিদ শাহাদাত লাভে ধন্য হয়েছেন।
শেষের কথাটুকু বলতে গিয়ে তার কণ্ঠ যেন রুদ্ধ হয়ে আসছিল। তার টানা টানা চোখ থেকে ঝড়ে পড়ল দু’ফোটা তপ্ত অশ্রু! তিনি নিজেকে তাড়াতাড়ি সংযত করে নিলেন। প্রিয়জনের বিয়োগে মানুষের মনে ব্যথা লাগে.....। তবে ইসলামের গৌরবকে সমুন্নত করার খাতিরে জীবন দেয়া আর প্রিয়জনের খন্ডিত দেহ নিজের হাতে দাফন করা মুসলিম উম্মাহর নিকট এক মহা সৌভাগ্যের বিষয়ই বটে। মুসলিম উন্মাহ্ হাজারো বার এমন কঠিন থেকে কঠিনতর ত্যাগ স্বীকার করেছে, কিন্তু নিজের সমুন্নত শির কোন কুফরী শক্তির সামনে নত করেনি কোনদিন।
ইত্যবসরে কমান্ডার ইন্ চীফের পাশে সে সব বিদেশী সাংবাদিকরা এসে জড়ো হল, যারা অল্প সময় আগেও মুজাহিদের সংখ্যা কম দেখে ধারণা করেছিল, এরা কেউ বাঁচতে পারবে না। কিন্তু যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থা দেখে তাদের বিস্ময়ের কোন সীমা ছিলনা। বার বার তারা জিজ্ঞেস করছিল, আখের এতবড় বিজয় আপনারা কিভাবে লাভ করলেন? কমান্ডার ইন্ চীফ নির্দেশ দিলেন, বন্দী শত্রু সেনাদেরকে এখানে উপস্থিত কর। কমান্ডার সাহেবের নির্দেশ অনুযায়ী বন্দী সেনাদের উপস্থিত করা হল। পৃথিবীর বৃহত্তম পরাশক্তির উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্যরা মাথানত করে দাঁড়িয়েছিল। তাদের চেহারায় ভীতি ও শঙ্কা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
এবার সাংবাদিকরা বন্দী সৈন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল। তাদের প্রশ্ন ছিল একটাই যে, ‘আচ্ছা ব্যাপক শক্তিতে বলিয়ান হয়েও এত অল্প সময়ে তোমরা কিভাবে এবং কেন পরাজিত হলে? অথচ তোমাদের প্রতিপক্ষ মুজাহিদরা ছিল সংখ্যায় কম এবং অস্ত্র-সস্ত্রেও দুর্বল?
বন্দী সেনারা নিজেদের পরাজয়ের কারণ বর্ণনা করতে শুরু করল। তাদের মুখ থেকে মুজাহিদদের প্রতি আল্লাহপাকের অপার নুসরাত ও সাহায্যের ঘটনা শুনতে শুনতে মুজাহিদদের দাড়ী খুশীর অশ্রুতে ভিজে উঠছিল। বন্দী সেনারা অকপটে বলছিল, আমরা এত দুর্বল ছিলাম না যে, তোমাদের মত দুর্বল বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করব। আমাদের নিকট অস্ত্র-সস্ত্রের কোন ঘাটতি ছিলনা। কিন্তু, তোমাদের অশ্বারোহী সৈন্যরা যখন আমাদের ওপর হামলা করল, দেখে আমাদের মনে ভীষণ এক ভীতির সঞ্চার হয়। আর এ আক্রমণ একদিক থেকে হলে হয়ত আমরা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হতাম। কিন্তু তোমাদের অশ্বারোহী বাহিনী চারদিক থেকে আমাদের ওপর হামলা করে বসে, ফলে এক প্রলয়কান্ড শুরু হয়ে যায় সেখানে। তাদের হামলার মুখে আমাদের অধিকাংশ সৈন্য মারা পড়ে। এরূপ অবস্থায় আমাদের আত্মসমর্পন করা ব্যতীত কোন উপায় ছিলনা.........কিন্তু এখন যে আমরা কোন ঘোড়াই দেখছিনা, ব্যপার কী? তোমরা সেগুলোকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছ? এ কথাগুলো বলে বন্দী সৈন্যরা কথা শেষ করল।
উপস্থিত গোটা মজলিসে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিল। সবার চোখে টলমল করছিল বিস্ময় ও কৃতজ্ঞতার অশ্রুরাশি। হঠাৎ এ নীরবতা ভঙ্গ করে কমান্ডার সাহেবের কান্নাজড়িত কণ্ঠের আওয়াজ শুনা গেল.......নিরস্ত্র, সম্বলহীন মুজাহিদ সাথী ভাইরা আমার...........! এরূপ নিরস্ত্র অবস্থায়ও যদি তোমরা ইসলামের গৌরব ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জিহাদের পথে অবিচল থাক, তাহলে আসমান হতে আল্লাহর ওয়াদাকৃত অশ্বারোহী ফেরেশতা! বাহিনী তোমাদের সাহায্যে আসতে থাকবে। আর তখন তোমরা হবে বিশ্ব বিজয়ী শাসক জাতি, ফিরে পাবে তোমরা আমাদের হারানো গৌরব।
আসাদ বিন মাকসুদ