মরণজয়ী মুজাহিদ
মল্লিক আহমাদ সরোয়ার
==================================================
একদিন আলী সবার সাথে ঘরে বসে নাস্তা করছিল। এমন সময় তারা জঙ্গী বিমানের শব্দ শুনতে পায়। খানা রেখে নিরাপদ মরিচায় পৌছার পূর্বেই তারা বোমা নিক্ষেপের আওয়াজ শুনতে পায়। সাথে সাথে বিকট শব্দে সেটি বিস্ফোরিত হয়।
বোমাটি নিক্ষিপ্ত হয় তাদের ঘরের ওপরে। মুহূর্তের মধ্যে তাদের ঘরখানা ধ্বংসস্থূপে পরিণত হয়। তার মা ও ফুফু ঘরের মধ্যে ছিলো। তারা আত্মরক্ষার সুযোগ পেলেন না। উভয়ে বোমা বিস্ফোরণে ক্ষত বিক্ষত হয়ে তৎক্ষণাৎ দুনিয়া থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে চলে যান। তার পিতাও মারত্মকভাবে আহত হন। আলী সামান্য যখমী হয়। রক্ত ঝড়া বাহু তুলে প্রতিশোধের স্পৃহায় প্রজ্জলিত আলীর পিতা তাকে কাছে ডেকে বলে, বেটা! তুমি অনেক বার আমার কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আমি তোমাকে অনুমতি দেইনি, এখন সময় হয়েছে আমি তোমাকে অনুমতি দিচ্ছি। তুমি খলীলকে সঙ্গে নিয়ে এক্ষুণি বেড়িয়ে পড়।
আলী তার পিতার যখম থেকে অস্বাভাবিকভাবে রক্ত ঝড়তে দেখে মমতার সুরে বলল, আব্বা! আপনি মারাত্মক আহত। আপনাকে এভাবে রেখে কিভাবে যাব?” আলীর আরা বললেন, “আলী! তুমি চিন্তা কর। যদি আমি বেঁচে থাকি তবে তোমাদের সাথে মিলিত হব-ইনশাআল্লাহ। সময় খুব কম। বিমান হামলা করে ওরা গ্রাম ধ্বংস করছে। এর পরই ট্যাঙ্ক ও সাজোয়া গাড়ী এসে গ্রাম ঘিরে ফেলবে। আমরা যারা এখনও বেঁচে আছি তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওদের মুকাবিলা করব। যদি মরতেই হয় তবে লড়াইয়ের ময়দানেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করব। কিন্তু তুমি এখনও ছোট, তোমাদের ভবিষ্যত বহু বিস্তৃত। দেশের আযাদীর জন্য লড়তে হবে তোমাদেরই। তোমাদের বেঁচে থাকা একান্ত জরুরী। যদি দুশমন তোমাকে ধরে ফেলে তবে জিন্দা ছেড়ে দিবে বলে মনে করি না। অতএব তুমি আমার কথা শুন, এক্ষুনি এখান থেকে বেড়িয়ে পড়। আর প্রধান পথ ধরে হাটবেনা। ইতিমধ্যে সেখানে দুশমনের ট্যাঙ্ক এসে গেছে। পিছনের পাহাড়ী পথ দিয়ে বেরুবে। বারুদের খেলনা ও বারুদের মাইন দেখে পথ চলবে। খলীলকেও তোমার সাথে নিয়ে যাও। ভালভাবে ওর দেখা শুনা করো। ওর যেন কোন কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখ।
বিদায়ের বেলা আলীর বাবা তাকে একটি থলে হাতে দিয়ে বললেন, বেটা! এর মধ্যে কিছু টাকা আছে। যা আমি জিহাদে খরচ করার জন্য জমিয়েছি। তুমি এগুলি নিয়ে যাও! প্রয়োজনের সময় এর দ্বারা উপকার হবে। আলীর বাবা আলীর কপালে চুমু দিয়ে অসীয়ত করে বললেন, সবকিছুর বিনিময়ে ইসলামের পতাকা সর্বদা সমুন্নত রাখবে। তোমাদের গাফলতির জন্য আল্লাহর নিকট যেন আমাকে লজ্জিত হতে না হয়। আমি দুয়া করি যেন সকল আফগান নওজোয়ানের আফগানের ইসলাম ও মুসলমানদের সর্বদা রক্ষার লড়াইয়ে শরীক হওয়ার ভাগ্য হয়। আমাদের জন্য ভেবনা। আমরা শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করব। পিতার ক্ষত স্থান সে রুমাল দিয়ে বেঁধে দেয়। শহীদ মা ও ফুফুকে একবার দেখে চোখে অশ্রু ও হৃদয়ে প্রতিশোধের স্ফুলিঙ্গ নিয়ে সব মায়া পিছনে ফেলে বাড়ীর পিছন দিক থেকে পাহাড়ের দিকে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের লক্ষ্যে কদম কদম অগ্রসর হয়। আড়ালে আবডালে লুকিয়ে লুকিয়ে তারা পাহাড়ের চুড়ায় পৌছে। সেখানে একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে তারা গ্রামের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখানে বিমানের আকস্মিক আক্রমণ ছাড়া অন্য কোন বিপদের আশংকা নেই। বোমা হামলায় সমগ্র গ্রাম ধ্বংসস্থূপে পরিণত হয়। অনেক নারী ও শিশু গ্রাম ছেড়ে পাহাড়ের দিকে হিজরত করে চলে আসে। কিছু সময় পরে দুশমনের সাজোয়া বহর গ্রামের দিকে অগ্রসর হয়ে পুরো গ্রামকে ঘিরে ফেলে। অতঃপর তারা গ্রামের উপর লাগাতার তোপের গোলা বর্ষণ করতে থাকে। তাদের চোখের সামনে ঘটতে থাকে এই নারকীয় কাণ্ড। ক্রমাগত গোলা বর্ষণের পর তাদের মনে হল যেন গ্রামের একটি প্রাণীও আর বেঁচে নেই। এই বর্বরদের মুকাবেলা করার মত একটি প্রাণীও বুঝি বেঁচে নেই। এবার তারা ট্যাঙ্ক ও সাজোয়া যান থেকে নেমে ক্লাসিনকভ হাতে গ্রুপে গ্রুপে গ্রামে প্রবেশ করে।
হঠাৎ তাদের সামনের দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি আসতে শুরু হয়। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দুশমনের কয়েক ডজন সৈন্য মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রুশ সৈন্যরা এবার সতর্ক হয়ে পিছনে এসে পুনরায় তোপের গোলা বর্ষণ করতে থাকে। এভাবে আরও এক ঘন্টা চলার পর ক্লাসিনকভ দ্বারা সামনের দিকে গুলি করতে করতে তারা গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করে। আলীর কাছে কোন অস্ত্র ছিল না। না হয় এখান থেকে অতি সহজে বেশ কিছু দুশমনকে হত্যা করা তার জন্য বেশ সহজ ছিলো। সে আফসোস করতে লাগল, হায় যদি একটা অস্ত্র তার কাছে থাকত। যখনই দুশমনের লাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখতে সে আনন্দে তকবীর ধ্বনি দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রামের প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। ফলে দুশমনের ট্যাঙ্ক ও সাজোয়া গাড়ী ভিতরে ঢুকে পাইকারী ভাবে সকল শ্রেণীর লোককে বন্দী করে। আলী করুণ চোখে অসহায়ের মত সব দেখতে থাকে। রুশীরা গ্রামের পুরুষ-মহিলা ও শিশুদের এক মাঠে জড়ো করে ব্রাশ ফায়ারে সকলকে শহীদ করে। এরপর তারা পুরো গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এসব দেখে আলীর হৃদয় ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। খলীল এসব দেখে মানসিক যন্ত্রণায় আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। আলী ভাবতে থাকে, অবশ্যই তার আব্বা বেঁচে নেই। নিশ্চয়ই শহীদদের কাতারে সামিল হয়েছেন তিনি। সে অশ্রু সিক্ত নয়নে উঠে দাড়িয়ে খলীলকে নিয়ে পাহাড়ের অপর দিকে চলে যায়। তারা দুজন দিন ভর হেটে সন্ধ্যায় পাহাড়ের এক গুহায় শুয়ে পড়ে। উভয়ই ছিল ভীষণ ভীত। এত কম বয়সে এত ভয়ঙ্কর দৃশ্য কখনও তারা কল্পনাও করেনি। উপরন্তু অজানা পথের এই লম্বা সফর ভাবছে, কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। মঞ্জিলও দুশমনদের ঘাটি চেনে না, না জানে তাদের সহযোগীরা কোথায় আছে। সারা দিন পথ চলে ক্লান্ত হওয়ায় শোয়ার সাথে সাথে চোখে গভীর ঘুম নেমে আসে। ঘুমের ঘোরে সারা রাত আলী ভয়ঙ্কর আজে বাজে সপ্ন দেখেছে। সকালে উঠে আবার হাটতে থাকে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পা মেপে মেপে দেখে শুনে চলতে থাকে। কোথাও মানুষের শব্দ পেলে পথ বদল করে নেয়। হতে পারে ওরা দুশমনদের লোক। এ অচেনা দেশে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।
পথের পাশে একটি যায়গায় ঝর্ণা দেখতে পেয়ে তারা সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। হাতের পুটলি থেকে রুটি বের করে খেয়ে নেয় এবং প্রাণভরে পান করে স্বচ্ছ ঝর্ণার নির্মল পাণীয়। খলীল ক্লান্ত হয়ে পড়লে আলী তাকে কাধে তুলে নেয়। দুশমনের কোন বিমানের আওয়াজ পেলেই ওরা ঝোপ ঝাড়ে কিংবা পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। এভাবে একাধারে তিন দিন সফর করার পর তারা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাদের পায়ে ফোসকা উঠে। চলার গতি ক্রমশ শ্লথ হয়ে আসছে। সামান্য যে কয়টি ক্লটি তারা এনেছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। খলীল ক্ষুধায় কাতরাতে থাকে। বার বার আলীকে বলে “ভাইজান ভীষণ ক্ষুদা পেয়েছে আর হাটতে পারছি না।” আলী তাকে এই বলে সাস্থন দেয় যে, সামান্য চললেই সামনে খাবার পাওয়া যাবে। আলীও ক্রমশ দুর্বলতা অনুভব করছে। ক্ষুধায় পেট জ্বলতে থাকে। চলারশক্তি নেই তবুও সামনে অগ্রসর হতে হবে—চলতে হবে, তাই চলছে।
আবহাওয়া খুবই উষ্ণ। হঠাৎ পশ্চিম আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা শুরু হয়। দেখতে না দেখতে সারা আকাশ অন্ধকারে ছেয়ে যায়। বিদ্যুতের চমক ও গর্জনে পাহাড়গুলো কেপে কেপে উঠে। প্রচণ্ড বেগে বায়ু বইছে। এসব দেখে খলীল ভীষণ ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করে। আলী তাকে কাঁধে নিয়ে চলতে চেষ্টা করে কিন্তু প্রচণ্ড বেগে বেয়ে আসা হাওয়ার মোকাবেলা করে মোটেও এগুতে পারছিল না। এমন সময় আকাশ ভেঙে শীলা বৃষ্টি শুরু হয়। শীলা বৃষ্টি থেকে গা আড়াল করার মত কোন আশ্রয় না পেয়ে খলীলকে শিলা থেকে বাঁচাতে আলী নিজের চাদর তার মাথায় বেঁধে দেয়। শিলা গুলো আকার বেশ বড় হওয়ায় আলীর খালি মাথায় আঘাত লেগে প্রচণ্ড ব্যাথার সৃষ্টি করে। সামনে একটি ছোট ঝোপ দেখে তারা তার নিচে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পর ঝড় ও শীলা থেমে গেলেও বৃষ্টি থামার নাম নেই। প্রথমে প্রচণ্ড গরমে অস্থির ছিল। এবার শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছে। সন্ধ্যায় বৃষ্টি থেমে গেলেও পাহাড় থেকে বর্ষার পানি নালায় নেমে ঢল বইতে থাকে। পানির স্রোতের সো সো আওয়াজ দূর থেকেও শুনা যায়। এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়েও যাওয়া সম্ভব নয়। খলীলের গা বেশ গরম হয়েছে। ক্রমেই জ্বরের তেজ বাড়তে থাকে। খলীল জ্বর ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় হাত পা ছুড়তে থাকে। আলী খলীলের বেহাল অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে শান্তনা দিয়ে বলল, তুমি এখানে থাক আমি সাতার কেটে ওপারে যেয়ে দেখি খাওয়ার জন্য কিছু পাওয়া যায় কিনা! তুমি বেশী অস্থির হয়ো না। আল্লাহ তার অসহায় বান্দাদের জন্য কোন সুব্যবস্থা করবেনই। কিন্তু খলীল কোনক্রমেই একা থাকতে রাজী নয়। আলী নিরাশ হয়ে খোদার কাছে দোয়া করতে থাকেঃ হে পরম করুণাময় আল্লাহ! নাঙ্গার পানি শুকিয়ে দাও। যেন আমরা ওপারে যেতে পারি। আমাদেরকে বন্ধুদের কাছে পৌছিয়ে দাও।” অসহায় মানুষের প্রার্থনা আল্লাহ দ্রুত কবুল করেন।
এমন সময় আলী কারও পায়ে হাটার শব্দ শুনতে পায়। শত্রুর আশংকায় প্রথমে তার শরীর শিউরে উঠে। খলীলের অবস্থার কথা বিবেচনা করে পরক্ষণেই সে সিদ্ধান্ত নেয়, শত্রু হোক মিত্র হোক এই লোকদের সাথে সে মিলিত হবেই। জীবন মরণের প্রশ্নে প্রয়োজনে শত্রুরও সাহায্য নিতে হয়। তাই এরা যদি শত্রও হয় নিজের উদ্দেশ্য গোপন রেখে সে তাদের নিকট সাহায্যের আবেদন জানাবে।
হাটার শব্দ অনুসরণ করে আলী শব্দ করে তাদেরকে ডাকতে থাকে। কারও ডাকার শব্দ শুনে সাতজন সশস্ত্র যুবক দাড়িয়ে যায়। আলী নিসংকোচে তাদের নিকট তার অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে। অবশেষে সে জানতে পারে, এরা সবাই মুজাহিদ। তারা নিকটবর্তী এক পোষ্টে হামলা করার জন্যে রওয়ানা হয়েছে। খলীলের অবস্থা দেখে কমাণ্ডার ছয়জন সাথী নিয়ে হামলার জন্য চলে যায়। বাকী একজনকে এদের সাথে রেখে যায়। মুজাহিদদের কাছে খাওয়ার জন্য সামান্য গুড় ছিল। তা তারা খলীলকে খেতে দিল। গুড় খেয়ে খলীল সামান্য সুস্থতা অনুভব করে। নালার পানি কমলে মুজাহিদ যুবকটি তাদেরকে নিয়ে নালা পার হয়ে মারকাজের দিকে চলতে থাকে। খলীলের পক্ষে হাটা সম্ভব ছিল না বলে তাকে কাঁধে করে নিতে হয়েছে। কয়েক ঘন্টা চলার পর তারা মুজাহিদদের একটি ছোট মারকাজে পৌছে।
এই মারকাজ কায়েম করা হয়েছে পাহাড়ের এক গুহার মধ্যে। পূর্বে এতে জংলী জানোয়ার বাস করতো। মুজাহিদরা তা সাফ করে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলেছে। মুজাহিদরা তাদেরকে অবশিষ্ট কয়টি রুটি খেতে দেয় আর গরম চা তৈরি করে পান করায়। এক মুজাহিদের কাছে, জ্বরের টেবলেট ছিল তা খলীলকে খাইয়ে দেয়া হয়। তারা শুয়েই গভীর নিদ্রায় ভেঙ্গে পড়ে। সকালে খলীলের জ্বর ছেড়ে যায়। মুজাহিদরা নাস্তা করতে বসতেই রাতের আক্রমনকারী গ্রুপ ফিরে আসে। কমাণ্ডার প্রথমেই আলী ও খলীলের খবর নেয় এর পর গত রাতের অপারেশনের (আকস্মিক হামলার) বিবরণ দেয়। দুশমনের বিশজনেরও বেশী সৈন্য হতাহত হয়। কয়েকটি গাড়ী বিধ্বস্ত হয়। বেশ কিছু রুশী অস্ত্র তাদের হাতে এসেছে। কমাণ্ডার সেগুলি আলী ও খলীলকে দেখায়। এরপর অস্ত্র গুলি মারকাজের অস্ত্রাগারে জমা করা হয়। তিন দিন পর্যন্ত আলী ও খলীল এ মারকাজে থাকে। এর পর কমাণ্ডার তাদেরকে এই প্রদেশের কেন্দ্রীয় মারকাজে পাঠিয়ে দেয়। মুজাহিদদের চীফ কমাণ্ডার আলী ও খলীলের কথা শুনে অত্যন্ত দুঃখিত হন। তিনি আলীকে বলেন, দেখ বেটা! আফগানিস্তানের সর্বত্র আজ জুলুম ও নির্যাতন চলছে। কোথাও বারুদের খেলনা, কোথাও বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে রুশীরা মুসলমানদের হত্যা করছে। চিন্তার কোন কারণ নেই। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই মুজাহিদদেরই বিজয়ী করবেন।
আলী বলল, দুশমনদের কাছে বিমান, ট্যাঙ্ক এবং অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র আছে। খালী হাতে মুজাহিদরা এর মোকাবেলা কিভাবে করবে? আলীর প্রশ্নের জওয়াবে কমান্ডার বললেন, দুশমন যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন আল্লাহ তাদের থেকে বহুগুণ বেশী শক্তির মালিক। তুমি জঙ্গে বসরের ইতিহাস দেখ। মুসলমানদের কাছে সামান্যই হাতিয়ার ছিল। আর তা নিয়ে তিনগুণ শক্তিশালী কাফেরদের ওপর আল্লাহ তাদেরকে বিজয়ী করেছিলেন। ইনশাআল্লাহ আমরাও অতি শিঘ্রই দেশকে রুশদের থেকে আজাদ করব এবং আফগানিস্তানে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়াব।
অল্প দিনের মধ্যেই আলী মুজাহিদদের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়। এক দিন কমাণ্ডারের কাছে যেয়ে বলে, আমাকে অস্ত্র দিন আমিও দুশমনের সাথে লড়াই করব।”
কমাণ্ডার তাকে বললেন, “এখনও তুমি ছোট, আমি তোমাকে ও খলীলকে পাকিস্তান পাঠাবার ব্যবস্থা করছি। সেখানে লেখাপড়া শেষ করে ফিরে এসে তোমারা জিহাদে শরীক হবে। কিন্ধু আলী নাছোড় বান্দা। সে বলতে লাগল, আমি এত ছোট নই যে বন্দুক উঠাতে পারবো না। আর এখন আমার অস্ত্র চালানোর শিক্ষা নেয়া বেশী প্রয়োজন। যা পাকিস্তানে নয় বরং এখানেই হাসিল করা সহজ ও সম্ভব। কমাণ্ডার তাকে অনেক বুঝালেন, কিন্তু আলী তার সিদ্ধান্তে অনড়। অবশেষে কমাণ্ডার আলীর প্রস্তাব মেনে নেন। তবে শর্ত দিলেন, ছয় মাস পরও কোন লড়াইয়ে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। বরং ট্রেনিংয়ের সাথে সাথে সে মারকাজের সকলের খেদমত করবে। ঝর্ণা থেকে মুজাহিদদের জন্য পানি আনবে। জ্বালানী সংগ্রহ করবে এবং যখন কাজের প্রয়োজন তা করবে। এরপর তাকে অস্ত্র দেওয়া হবে এবং লড়াইয়ে যাওয়ার অনুমতি পাবে। আলী সানন্দে এ প্রস্তাব মেনে নেয়। খলীলকে মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়া হয়। যাওয়ার সময় খলীল খুব বেশী কান্নাকাটি করে। আলী তাকে অনেক বুঝায় এবং শান্তনা দিয়ে বলে, পাকিস্তান এসে সে মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা করবে। ছয় মাস পর আলীর ট্রেনিং সমাপ্ত হলে চীফ কমাণ্ডার তার হাতে অস্ত্র তুলে দেন। আলী অত্যন্ত খুশী হয়। সে এবার দুশমনের ওপর হামলা করার জন্য নিজে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে থাকে।
আলী রাইফেল ও অন্যান্য ছোট অস্ত্র চালাতে সক্ষম হওয়ায় চীফ কমাণ্ডার তাকে ছোট ছোট হামলায় অংশ গ্রহণের অনুমতি দেন। এসব অভিযানে আলী অত্যন্ত সাফল্যের পরিচয় দেয় এবং প্রমাণ করে যে, সে অন্যান্য মুজাহিদদের তুলনায় কোন অংশে কম নয়। আলী অতি অল্প সময়ের মধ্যে রকেট লাঞ্চার ও বিমান বিধ্বংসী তোপ পরিচালনা শিখে নেয়। এর পর সব ধরণের আক্রমণের সময় সবার আগে তাকেই ডাকা হয়। (চলবে)
*****