JustPaste.it

আল্লাহর পথে জিহাদ

আমীনুল ইসলাম ইসমতী

======================================================

 

        মহা নবী ﷺ-এর আবির্ভাবের সময় পৃথিবী ছিল জিহালাতের কুহেলিকায় সমাচ্ছন্ন। মানন জাতির চরিত্র ছিল দানবতায় পরিপূর্ণ। লক্ষাধিক নবী রাসূল আনীত দ্বীনের আলোকশিখা হয়েছিল প্রায় নির্বাপিত। তাঁদের প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত আদর্শ ছিল অবলুণ্ঠিত। সত্য ধর্মকে জলাঞ্জলী দিয়ে স্রষ্টাকে অবিশ্বাসের মাধ্যমে কেউ হয়েছিল বদ্ধ নাস্তিকে পরিণত আবার কেউ ধর্মের নামে। প্রস্তর বা মাটির গড়া অসংখ্য দেবতার সম্মুখে ছিল মস্তকাবনত। সেবায় নিয়োজিত জড় পদার্থকে তারা বানিয়ে নেয় উপাস্য ও নমস্য। একদিকে স্রষ্টাকে অস্বীকার করার মত অহমিকা অপর দিকে সৃষ্টি বস্তুকে প্রভু মনে করার মত হীনমন্যতার ফলে, মানুষ হারিয়ে ফেলেছিল তার প্রকৃত মূল্য ও মর্যাদা। যার ফলে সেদিনের সমাজে বিরাজ করছিল সীমাহীন নৈরাজ্য। এক সম্প্রদায় ছিল অন্যের প্রতি চরম বিদ্বেষী ও বৈরী ভাবাপন্ন। একে ছিল অপরের রক্ত পিপাসু। লোভ, লালসা, জিঘাংসা, হত্যা, লুণ্ঠনের ছিল অবাধ রাজত্ব। সুদ, ঘুষ, জুয়া, নারী ধর্ষন ও অপহরণ ইত্যাকার গর্হিত কর্মের দ্বারা সমাজ দেহছিল ক্ষতবিক্ষত। ন্যায়, সততা, সুচিন্তা ও পবিত্রতা হয়ে গিয়েছিল অপমৃত।

 

        মুক্তি ও প্রগতির আশা ছিল সুদূর পরাহত। মোদ্দা কথা, এমনি এক ঘোর দুর্দিনে মুক্তির পয়গাম নিয়ে আবির্ভূত হন। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও সর্বোত্তম আদর্শের পতাকাবাহী মহান মুক্তি দূত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তৎকালীন ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থা ও (নোংরামী পূর্ণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবন ধারা তাকে ভাবিয়ে তুল্লো, অনেক ভাবতেন- একাকী নির্জনে চিন্তা করতেন, কোন পন্থায় এই সমাজ ভেংগে নতুন করে। গড়া যায়? গভীর চিন্তা ও সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে হেরার নির্জন করে ধ্যানরত মহানবী ﷺ-এর নিকট অবতীর্ণ হলো সত্যের। অম্লান দীপশিকা আল-কুরআন। শান্তি ও প্রগতির অবরুদ্ধ দ্বার খোলার জায়নকাঠি। মহানবী ﷺ সর্ব প্রথম সমাজের অভ্যন্তরে শান্তি স্থাপনে মনযোগী হন। রসূল ﷺ প্রথমে সুদপদেশ ও হিকমতের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার আরম্ভ করেন, তিনি তাদের নিকট আল্লাহর বাণী পৌছাতে থাকেন।

 

কিন্তু সুবোধ খোকার মত মক্কাবাসীরা সত্যের স্বীকৃত দিল না। উপরন্তু তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে কঠোর বাঁধার সম্মুখীন হন। তাঁর পৌত্তলিক সম্প্রদায় প্রথমে তাঁকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। তখন সত্যের প্রবর্তক মহানবী ﷺ ক্রমবর্ধমান নির্যাতনের মুখে চরম সংকটের পাহাড় পাড়ি দিয়ে আল্লাহর নির্দেশে স্বীয়মাতৃভূমি ছেড়ে মদীনায় হিজরত করে চলে যান। কিন্তু সেখানেও তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারলেন না। সেখানেও শত্রুরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তখন রাসূল ﷺ-এর উপর ধৈর্যধারণ করার আয়াত অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ পাক তাঁকে উদ্দেশ্যে করে বলেনঃ “লোকে আপনাকে যা বলে তাতে আপনি ধৈর্যধারণ করুন এবং সৌজন্য সহকারে তাদেরকে পরিহার করে চলুন।” (মুযযামিলঃ ১০)

 

        কিন্তু যখনই কোন ধৈর্যের আয়াত অবর্তীণ হতো তখনই তারা রসূল ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণের উপর অত্যাচারের পেষনদণ্ড দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেত। উপরন্তু মুসল মানরা তাদের সংখ্যালঘুতা ও দুর্বলতা হেতু কাফেরদের মোকাবেলা করতে বাহ্যত সক্ষম ছিল না। কিন্তু রসূল ﷺ যখন মদীনায় সুদৃঢ় ও স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন এবং মুসলমানদের সংখ্যাও বৃদ্ধিপায় তখন মুসলমানগণ শত্রুদের প্রতিরোধ করার ' চিন্তায় ব্রত হন।

 

        ইসলাম শান্তির ধর্ম, সম্প্রীতির ধর্ম, ইসলাম সকলের সাথে মিলে মিশে বসবাস করার শিক্ষা দেয়। কিন্তু যখন এর শত্রুরা একে গ্রহণ না করে বরং এর সম্মুখে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ধরা পৃষ্ঠ হতে একে বিলীন করতে চায়, মানুষ হয়ে মানুষকে দাসত্বে পরিণত করার চেষ্টা চালায়, আর তাদেরকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে প্রবেশ করতে বাঁধা দেয় তখন। অস্তিত্বের সুরক্ষার প্রশ্নে তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ ভিন্ন কোন গত্যন্তর থাকেনা। বাধ্য হলো তারা তরবারী হাতে বাতিলের মুকাবিলায় ঝাপিয়ে পড়তে, শুরু হলো জিহাদ।

 

        জিহাদের সংজ্ঞাঃ জিহাদ একটি আরবী শব্দ। আভিধানিকভাবে চেষ্টা, শ্রম, সাধনা, দুঃখ-যাতনা ভোগ-সংগ্রাম ইত্যদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। পারিভাষিক ভাবে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সর্বস্তরে খোদায়ী আহকাম ও নবুবী আদর্শের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজের আভ্যন্তরীণ কুপ্রবৃত্তি ও বহিরাঙ্গনের সকল খোদাদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে সাধনা ও সংগ্রামের ধারাকে সদা অব্যাহত গতিতে চালিয়ে যাওয়ার নাম জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ।

 

        জিহাদের অনুমতি ও উদ্দেশ্যঃ আল্লাহর ঘোষণা, “যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হল তাদেরকে যারা আক্রান্ত হয়েছে ; কারণ।তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করতে সম্যক সক্ষম ; তাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী হতে অন্যায়ভাবে বহিস্কৃত করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে, তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহু আল্লাহ যদি মানব জাতির একদলকে অন্যদল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খৃষ্টান সংসার বিরাগীদের উপাসনালয়, গীর্জা, ইয়াহুদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদ সমূহ যাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহর নাম। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। আল্লাহ নিশ্চয়ই শক্তিমান, পরাক্রমশালী। আমি তাদেরকে তথা মুসলমানদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত প্রতিষ্ঠিত করবে যাকাত প্রদান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কার্যে নিষেধ করবে ; সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে।” (হাজ্জঃ ৩৯-৪১) উক্ত আয়াত গুলি দ্বারা সর্ব প্রথম জিহাদের অনুমতি দেওয়া হয়।

 

        অন্যত্র আল্লাহ আরো ঘোষণা করেন, “হে নবী ! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং তাদের প্রতি কঠোর হও। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম সেটা কত নিকৃষ্ট। প্রত্যাবর্তনস্থল।” (তাহরীমঃ ৯) একটু গভীরভাবে দূরদৃষ্টি দিলে উপরোক্ত আয়াত গুলি থেকে আমরা জিহাদের উদ্দেশ্য ও এর অন্তর্নিহিত রহস্য সম্পর্কে সহজেই অবহিত হবো। বাতিল শক্তিকে নিমূল, পদদলিত মানবতার পুনরুদ্ধার এবং যারা ইসলামের সরল সঠিক পথে আসতে ইচ্ছুক তাদেরকে ঐ পথে আনয়ন করা সর্বোপরী ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ নিষ্কন্টক করাই জিহাদের মর্ম কথা।

 

        আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা তাদের সাথে সংগ্রাম করবে। তোমাদের হস্তে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন ও মুমিনদের চিত্ত প্রশান্ত করবেন।” (তাওবাঃ ১৪)

 

        রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের পূর্বে আমাকে তরবারী দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে, যেন সকলে একক অদ্বিতীয় আল্লাহ্র বাধ্যগত হতে পারে।”

 

        জিহাদের প্রয়োজনীয়তাঃ সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষের সার্বিক অশান্তি ও সর্বপ্রকার পতন থেকে রক্ষা করার গুরুত্ব যেমন সবচাইতে অধিক তেমনি তার জন্যে প্রাণপণ সংগ্রাম করার প্রয়োজনীয়তাও সর্বাধিক। একারণই ইসলামী আদর্শে আস্থা স্থাপনের পর তার বিকাশ ও বাস্তবায়নের তাগিদের স্থান নির্ধারিত করা হয়েছে। মহানবী ﷺ কে কোন কাজ শ্রেষ্ঠ প্রশ্ন করা হলে তিনি ইরশাদ করেছিলেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন। পুনরায় তারপরবর্তী শ্রেষ্ঠ কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেছিলেনঃ “আল্লাহর পথে জিহাদ”। এই জিহাদের প্রয়োজনীয়তার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ ঘোষণা করেনঃ “আল্লাহ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্যদল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হত। কিন্তু আল্লাহ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল।” (বাকারাঃ ২৫১)

 

        আল্লাহ আরো বলেনঃ “মানুষের মধ্যে। এই দিনগুলির পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তণ ঘটাব যাতে আল্লাহ মুমিনদেরকে জানতে পারেন এবং তোমাদের মধ্য হতে কতককে শহীদরূপে গ্রহণ করতে পারেন এবং আল্লাহ জালিমদেরকে পছন্দ করেন না।”

 

        উপরোক্ত আয়াতদ্বয় ব্যতীত আরো বহু আয়াতে জিহাদের প্রয়োজনীয়তার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যা সহজেই অনুমেয়। জিহাদের মৌলিক কর্তব্যঃ জিহাদের প্রয়োজনীয়তা যেমন অপরিসীম, একে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্বওতেমন মহান। এ ক্ষেত্রে বাহ্যিক উপায় উপাদান তথা অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্যবল যেমন একান্ত প্রয়োজন, মানসিক শক্তি তথা চরিত্র, মনোবল, সৎসাহস, বিরত্ব, কৌশল, ধৈর্য প্রভৃতিও তেমনি অপরিহার্য। অবশ্য ইসলাম বাহ্যিক শক্তির চেয়ে আত্মিক শক্তির প্রতি বেশী গুরুত্ব আরোপ করে।

 

        (ক) মানসিক প্রস্তুতিঃ জিহাদের ক্ষুদ্র বৃহৎ, কোমল-কঠিন সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে প্রশস্ত ও পরিচ্ছন্ন ধারণাই মানসিক প্রস্তুতির প্রধান ভিত্তি। এ পর্যায়ে জিহাদের সীমাহীন দুঃখ কষ্ট ও সংহারী রূপ দেখেই যদি মুসলিম উম্মত এর অফুরন্ত ও চিরস্থায়ী কল্যাণের কথা ভুলে যায় এবং একে অকল্যাণ মনে করতে আরম্ভ করে। তাহলে আল্লাহর পথে জিহাদের গোটা সৌধই চুরমার হয়ে যেতে পারে। একারণেই আল্লাহ ঘোষণা করেনঃ “তোমাদের জন্য যুদ্ধের। বিধান দেওয়া হলো যদিও তোমাদের নিকট তা অপ্রিয় ; কিন্তু তোমরা যা পছন্দ কর না সম্ভত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা পছন্দ কর সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন ; তোমরা জাননা।” (বাকারা ২১৬)

 

        তাওহীদের জলন্ত অনুভূতি তথা এক ও একক আল্লাহ রাবুল আলামীনের একাগ্রচিত্ত ইবাদতই শত সহস্র অমুসলিম ব্যক্তিকেও ভীত সন্ত্রস্ত করার ইতিহাস ইসলামের ইতিহাসে অসংখ্য। সুতরাং আল্লাহ্ বিরোধী শক্তির দোর্দন্ড প্রতাপ, সীমাহীন আস্ফালন, প্রচুর রণ সম্ভার, অগণিত সৈন্য-সামন্ত কোন কিছুতেই যাতে মুসলিম বাহিনী প্রভাবিত ও ভীত না হয় এবং যাতে তারা কাফিরদের অনুসরণ করতে শুরু না করে সে জন্যই আল্লাহ সাবধান বাণী উচ্চারন করে ইরশাদ করেছেনঃ “হে মুমিনগণ ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর তবে তারা তোমাদেরকে বিপরীত দিকে ফিরিয়ে দিবে এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।” (আল-ইমরানঃ ১৪৯)

 

        পৃথিবীর তথাকথিত যাবতীয় ধর্ম ও মতাদর্শ মানুষকে অনিবার্য ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যায় এবং এ কারণেই এর ধারক ও বাহকসহ সকল কাফির ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হতে হয় গোটা মুসলিম উম্মতকে। তাই কফিরদের সকল শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ করাই হলো মুসলিম বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য। এর জন্যে চাই কাফিরকে চির শত্রু তথা চরম বিরোধী শক্তি রূপে গণ্য করার মনোভাব চাই। তাদেরকে আপন মনে করার যাবতীয় দুর্বলতা থেকে আত্মরক্ষা করার চৈতন্য। নইলে জিহাদের সাফল্য আকাশ-কুসুম কল্পনাই মাত্র। সুতরাং যাতে কোন মুসলিম কোন কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে মুসলিম উম্মতকে লক্ষ্য ভ্রষ্ট করতে না পারে সেজন্যে আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ “হে মুমিনগণ ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না, তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ, অথচ তারা তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে, রসূলকে এবং তোমাদেরকে বহিস্কৃত করেছে এই কারণে তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে বিশ্বাস কর। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বহির্গত হয়ে থাক, তবে কেন তোমরা তাদের সাথে গোপনে বন্ধুত্ব করছো? তোমরা যা প্রকাশ কর তা আমি সম্যক অবগত। তোমাদের মধ্যে যে কেউ তা করে সে তত বিচ্যুত হয় সরল পথ হতে।” (মুস্তাহানাঃ ১)

 

        আল্লাহ আরো ইরশাদ করেছেনঃ “ মু'মিনগণ যেন মু'মিনগণ ব্যতীত কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট হতে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর।” (আলে ইমরানঃ ২৮)।

 

        এরপরেও যাতে কোন মুসলমান যুদ্ধের কষ্ট ভোগের আশংকায় প্রাণের মমতায় আরাম আয়েশের বন্ধনে, আত্মীয় স্বজন, সন্তান-সন্তুতি কিংবা ধন-ঐশ্বয্যের মোহে জিহাদের মহান কর্তব্যের কথা ভুলে যায় সেজন্য মাহনবী ﷺ কঠিন সাবধান বানী উচ্চারণ করে ইরশাদ করেছেনঃ “যে ব্যক্তি জিহাদ করেনি, কোন জিহাদকারীর অস্ত্র-শস্ত্রেরও ব্যবস্থা করেনি, কিংবা কোন জিহাদকারীকে যুদ্ধে প্রেরণ করে তার পরিবার পরিজনের দেখাশোনাও করেনি, কিয়ামতের পূর্বে আল্লাহ তাকে কোন একটি কঠিন বিপদে ফেলবেনই।” (আবু দাউদ)

 

        তিনি আরো ইরশাদ করেনঃ “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যু মুখে পতিত হয় যে জিহাদ করেছে আর না সে কোন দিন জিহাদ করার ইচ্ছা পোষণ করেছে সে। ব্যক্তি মুনাফেক হয়ে মৃত্যু করণ করবে।” (মুসলিম)

 

        (খ) বাহ্যিক প্রস্তুতিঃ গোটা পৃথিবীই নৈমিত্তিক। বাহ্যিক উপায়-উপকরণ সকল কাজের জন্যেই অপরিহার্য। ইসলাম তাই জিহাদের ক্ষেত্রেও মানসিক প্রস্তুতির সাথে সাথে বাহ্যিক প্রস্তুতির উপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। আল্লাহ্ ইরশাদ করেনঃ         “তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এরদ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে ও তোমাদের। শক্রকে এবং এদদ্ব্যতীত অন্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ্ জানেন, আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।” (আন ফালঃ ৬০)

 

        জনশক্তি ও অস্ত্রবলই যুদ্ধের বাহ্যিক প্রস্তুতির সর্ব প্রধান অবলম্বন। আর জন শক্তিকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ অস্ত্র শস্ত্র, যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জাম। এর সীমাহীন গুরুত্বের কথা যাতে কোন মুসলিম ভুলে না যায়, কিংবা ধন-সম্পদের স্বাভাবিক মোহে এতে যাতে বিন্দু মাত্রও কার্পণ্য না ঘটে সেজন্যে আল্লাহ্ জীবন দেওয়ার পূর্বে ধন-সম্পদ দেয়ার কথা উল্লেখ করে ঘোষণা করেছেনঃ “হে মু'মিনগণ ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিব যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে মর্মন্তুদ শাস্তি হতে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও রসূলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে শ্ৰেয় যদি তোমরা জানতে”। (সাফফঃ ১১-১২)

 

        আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য জনশক্তির পরেই দরকার প্রয়োজনীয় অর্থের এবং যথেষ্ট পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্য ও চিকিৎসা সমাগ্রীর। মহান আল্লাহ এ অর্থ ও দ্রব্য সামগ্রীর সহযোগীতাকে উত্তম ঋণ নামে অভিহিত করে ইরশাদ করেছেনঃ “তোমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম কর এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। কে সে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে? তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন।” (বাকারাঃ ২৪৪,২৪৫)

 

        ❝এবং ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর-করতে থাক, যতক্ষণ না, ফিতনা-অখোদায়ী বিধান নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন আনুগত্য, শাসন ও আইন কেবলমাত্র আল্লহর জন্যই হয়।❞ –আল-কুরআন