JustPaste.it

দেশে দেশে ইসলাম...

 

সমস্যা জর্জরিত লাইবেরিয়ান মুসলমানদের কবে আসবে সুদিন?

আরশাদ ইকবাল

==========================================================

 

        নয়নাভিরাম অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ, নাম লাইবেরিয়া প্রজান্ত্র। আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমে ও আটলান্টিক মহাসাগরের কূল ঘেষে তার অবস্থান। স্বর্ন, রৌপ্য, হীরা, লৌহ ও রাবারসহ অগণিত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই দেশটি। ১,১১,০০০ কিলােমিটার ব্যাপী বিস্তৃত এর সীমানা। জন সংখ্যা প্রায় পঁচিশ লক্ষ। ৩৫ জন মুসলমান, ২৫ জন খৃষ্টান, আর অবশিষ্ট সকল মূর্তি পূজক। জবরদস্তি ও অন্যায় দাসবানীয়ে রাখা লােকেরা মার্কিনদের কবল থেকে পালিয়ে এসে সাইবেরিয়ার রাজধানী মনরােভিযায় বসতি স্থাপন করে। ক্রমেই পালিয়ে আসা এই লােকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তারা প্রভূত শক্তি, সামর্থ ও প্রতিপত্তিশালী হয়ে ওঠে। দূর্দান্ত এই দাসদের নেতৃতে ১৮৪৭ সালের ২৬শে জুলাই লাইবেরিয়া প্রজাতন্ত্রের আত্ম প্রকাশ ঘটে। জন সংখ্যার ৫ জন হওয়া সত্ত্বেও তারা ১৯৮০ সাল পর্যন্ত রাজক্ষমতা আকড়ে রাখে। ১৯৭১ সালে উইলিয়াম টোলকার্ট লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিছু দিনের মধ্যেই টেলি সরকারের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযােগ উঠে। সময়ের তালে তা মহিরুহের আকার ধারণ করে। চরম বিশৃঙ্খলা, অরাজকতার অন্ধকারে দেশ নিমজ্জিত হয়। পরিস্থিতিতে ১৯৮০ সালের ১২ই এপ্রিল সামরিক বাহিনীর নন কমিশন অফিসার সার্জন স্যামুয়েল ডাে এক রক্তক্ষয়ী সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায় এবং টোলবার্টকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেন।

 

লাইবেরিয়ান মুসলমানদের অবস্থা

-----------------------------------------------------------------

আজ থেকে তিন বছর পূর্বে লাইবেরিয়ান মুসলমানদের ওপর বিপদের ঘনঘটা নেমে আসে; “ন্যাশনাল লাইবেরিয়ান ফ্রন্টের চার্লজ টেলরের নেতৃত্বে স্যামুয়েল ডাের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে এবং মুসলিম বিদ্বেষের কারণে লাইবেরিয়ার উত্তর পূর্বে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে আকস্মাৎ এক সশস্ত্র আক্রমন চালায়। অপ্রস্তুত মুসলমনরা প্রচণ্ড আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পালাতে থাকলে হাজার হাজার লােক বুলেট বিদ্ধ হয়ে নিহত হয়, অসহায় অবলা মুসলিম নারীদের ইজ্জত আবরু ভূলুণ্ঠিত হয়। গ্রামের পর গ্রাম লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আজো তাদের মুসলিম নিধনের পৈশাষিকতা থামেনি। প্রতিদিন নিহত হচ্ছে অসংখ্য নরনারী, শিশু কিশাের নৃশংস ভাবে। সৌদী আরবে নিযুক্ত লাইবেরিয়ান মুসলিম সালভেশন মুভমেন্টের প্রতিনিধি সায়েখ আবু বকর বিগত তিন বছরে লাইরেরিয়ান মুসলমানদের ক্ষয়ক্ষতির এক বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। লাইবেরিয়ান মুসলমানদের অবস্থা সহজে অনুমানের জন্য তা তুলে ধরা হলােঃ

 

        (১) বিগত তিন বছরে ২৫ হাজারেরও বেশী মুসলমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বহু ইমাম, মুবাল্লিগ ও ধার্মিক ব্যক্তিকে জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করা হয়। তাদের শিরচ্ছেদ করা হয় নির্দয়ভাবে। মরদেহ বিকৃত করাসহ গর্ভবতী মহিলাদের উপর বর্বর নির্যাতন করা হয়।

 

        (২) ইতিমধ্যে ১০ হাজার মুসলমান বিকলাঙ্গ, পঙ্গু ও নিখোঁজ হয়ে গেছে।

 

        (৩) ৭ লাখের চেয়ে বেশী মুসলিম উদ্বাস্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্র গিনি ও সিওরা লিয়েনে আশ্রয় নিয়েছে।

 

        (৪) অসংখ্য যুবক যুবতীদের পরিবার পরিজনের মাঝ থেকে ধরে নিয়ে গেছে। আজো তাদের কোন খবর মিলেনি।

 

        (৫) মুসলমানদের অসংখ্য শিক্ষা নিবাস, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সরাইখানা ও মসজিদ ধ্বংস স্তুপে পরিণত করে, লাইব্রেরী পাঠাগারে আগুন লাগিয়ে দেয়। মাল সম্পদ লুট করে নেয়। কুরআন শরীফের সাথে আমার্জনীয় আচরণ করে।

 

        (৬) মুসলিম শিশু কিশােরদের শিক্ষা দীক্ষার সমস্ত পথ রুদ্ধ করে।

 

(১) ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ

         ঐতিহাসিক ভাবে খৃষ্টানদের দাবী মিথ্যা হলেও খৃস্টানরা দাবী করে যে, লাইবেরিয়া একটি খৃষ্টান রাষ্ট্র। লাইবেরিয়ার সংবিধানে সকল ধর্মালম্বীদের স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও খৃষ্টানরা তার মনগড়া ব্যাখ্যা দিচ্ছে। ইতিহাস সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দেয় যে, খৃষ্টান মিশনারীদের আগমনের পূর্বেই লাইবেরিয়া ছিল মুসলিম অধ্যুষিত।

 

 (২) হিংসা ও বিদ্বেষের শিকার

         মুসলমানরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী। সামাজিক ভাবে ঐক্য বদ্ধ, সুসংহত। তাই হিংসা ও বিদ্বেষের কারণে গােড়া মূর্তিপূজক সম্প্রদায় খৃস্টানরা একযােগে মুসলমানদের বিরােধিতা করছে।

 

(৩) ইসলামী পূর্ণজাগরণ

         নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলমানদের মাঝে ইসলামী পূর্ণজাগরণের জোয়ার এসেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি মিশনারী প্রতিষ্ঠানগুলােতেও মুসলমানরা সংস্কার কর্ম চালিলেয় যাচ্ছে। এতে খৃস্টান ধর্মপ্রচারকরা মুসলিম বিদ্বেষে আগুন হয়ে আছে। তারা মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করতে বদ্ধ পরিকর। তারা প্রকাশ্যে স্যামুয়েল ও ডাে-র বিরুদ্ধে বিষ উদগীরণ করে অভিযােগ তুলছে যে, স্যামুয়েল ডাে লাইবেরিয়াকে মুসলিম প্রজাতন্ত্ররূপে দেখতে চায়।

 

 (৪) রাজনৈতিক কারণ

         লাইবেরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব প্রতিপত্তি ছিলাে অপ্রতিরােধ্য। কিন্তু স্যামুয়েল ডাে ক্ষমতা গ্রহণের পর তা শেষ হয়ে যায়। মার্কিন পন্থী নেতা চার্লস টেলর এতে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং স্যামুয়েল ডো ও মুসলিম বিদ্বেষী উগ্র মূর্তিপূজকদের সহায়তায় সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে এবং সর্বপ্রথম মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল এ আক্রমন প্রতিহিংসার শিকার হয়।

 

 

খৃস্টান মিশনারীদের অব্যাহত কার্যক্রমের ভয়াবহতা

 -----------------------------------------------------------------

        শাইখ আবু বকর বলেন, লাইবেরিয়ান মুসলমানদের মাঝে দুটি কেন্দ্র থেকে খৃষ্টান মিশনারীরা তাদের কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

        (১) মুসলিম উদ্বাস্তু শিবিরগুলােতে অসহায় অনাহারী, অশিক্ষিত মুসলমানদের মাঝে তারা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্বাস্তুদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছে। মুসলিম শিশু কিশােরদের খৃস্টান বানানাের লক্ষে জায়গায় জায়গায় অবৈতনিক শিক্ষা নিবাস গড়ে তুলছে। নিঃস্ব, অসহায় পরিবারের শিশু কিশােরদের নিজ দায়িত্বে প্রতি পালনের ব্যবস্থা করে তাদের খৃষ্টান বানানাের পথ আরাে উন্মুক্ত করছে।

 

        (২) লাইবেরিয়ার যে সব অঞ্চলে থেকে মুসলিম পূণর্জাগরণের কোন ব্যবস্থা নেই সে সব অঞ্চলে খৃষ্টানরা খৃস্টধর্ম প্রচারের সূবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেছে। তারা তাদের প্রচেষ্টা পূর্ণ উদ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে। এখন তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কার ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচীতে বহুদূর এগিয়ে। সম্প্রতি বৃটেন চার্চ প্রধানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক কনফারেন্সে লাইবেরিয়ানদের খৃস্টান বানাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর জন্য এক বাৎসরিক বিরাট অংকের বাজেট ধার্য করা হয়েছে।

 

 

এখন মুক্তির পথ সর্বাত্মক জিহাদ

-----------------------------------------------------------------

        শাইখ আবু বকর বলেন, নিপীড়িত নির্যাতিত লাইবেরিয়ান মুসলমানদের সামনে এখন মুক্তির একমাত্র পথ জিহাদই বাকী রয়েছ। আল্লাহ বলেন, “সকল মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করাে যেমন তারা তােমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আর জেনে রেখাে, আল্লাহ খােদাভীরুদের সাথে রয়েছেন।”

 

 

লাইবেরিয়ান মুসলমানদের ভবিষ্যত

-----------------------------------------------------------------

        নিকষ অন্ধকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে লাইবেরিয়ান মুসলমানরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এখন তাদের ওপর জিহাদ ফরজ হয়ে গেছে। তাই জিহাদী আন্দোলন ও ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তারা “সালভেশন মুভমেন্ট ফর লাইবেরিয়ান মুসলমান” নামে একটি বলিষ্ঠ রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেছে। ইতিমধ্যে তা লাইবেরিয়ান মুসলমানদের মধ্যে দারুন আলােড়ন সৃষ্টি করেছে। দলে দলে আলিম ও মুবাল্লিগরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাতে যােগদান করছে। গিনির রাজধানী কোনানিতে এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ১৪১২ হিজরীর ২৫শে সফর থেকে এর সদ্যসদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। এ আন্দোলনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সাইখ আবু বকর বলেন, আমরা কয়েকটি উদ্দেশ্যে এ আন্দোলন শুরু করেছি। যথাঃ

 

        (১) পৃথিবীতে মুসলমানদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ঈমান ও তাওহীদের বিশ্বাসে মুসলমানদের উজ্জীবিত হওয়া।

 

        (২) বিদ্রোহীদের হাতে বন্দী মুসলিম নারী পুরুষদের মুক্ত করে আনার জন্য প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।

 

        (৩) বর্তমান সরকারের ওপর এজন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে যে, মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আমাদের প্রতিনিধিত্ব কারী আরেক জন মুসলিম উপরাষ্ট্রপতি নিয়ােগ করতে হবে।

 

        (৪) গােড়া উগ্র মূর্তি পূজকরা যে সব মসজিদ ভেঙ্গে ফেলেছে সেগুলাে পূনর্নিমাণের ব্যবস্থা করা।

 

        (৫) যুদ্ধরত সকল দলগুলাে থেকে অস্ত্র জমা নিয়ে একটি সুষ্ঠু নিয়মতান্ত্রিক সেনাবাহিনী গঠন করা যা লাইবেরিয়ান জনগণের মাঝে শান্তি, নিরাপত্তা, ঐক্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করবে এবং দেশে ভারসাম্য ফিরে আসবে। নিপীড়নের প্রতিক্রিয়া মুসলিম জাতি আঘাতে প্রচণ্ডভাবে জেগে উঠে। ঈমানী জজবায় হয়ে উঠে জানবাজ। চেপে ধরে শক্রর টুটি। এটাই দীর্ঘ চৌদ্দশত বছরের ইতিহাস। শাইখ আবু বকর বলেন, নির্যাতিত লাইবেরিয়ান মুসলমানরা আজ স্বাধীনতার উদীয়মান রক্তিম সূর্যের রােশনী দেখতে পাচ্ছে। এ নির্যাতনই তাদের আয়েশী ঘুম ভাংগাতে পেরেছে এবং নিম্ন বর্ণিত সুসম্ভাবনা আজ তার মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছেঃ

 

        (১) ধর্মাচারে লাইবেরিয়ান মুসলমানরা দারুন উৎসাহী। আল্লাহর নৈকট্য লাভই এখন তাদের জীবনের একমাত্র কামনা।

 

        (২) পরস্পরে মতানৈক্য, বিরােধ বিসম্বাদ ভুলে লাইবেরিয়ান মুসমানরা এখন এক ও ঐক্য বদ্ধ শক্তিশালী জাতি শক্তিতে পরিণত হচ্ছে।

 

        (৩) পশ্চাদপদতা, অলসতা আর গাফলতি ভুলে এখন সবাই দায়িত্ব সচেতন ও অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছে।

 

        (৪) নতুন প্রজন্মের নিকট এখন ইসলামই একমাত্র জীবনাদর্শ ও বিষয়।

 

        (৫) মুসলমানদের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত হয়েছে। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক সকল অধিকার আদায়ে আজ তারা সদা তৎপর।“সালভেশন মুভমেন্ট ফর লাইবেরিয়ান মুসলমান” আজ অভূতপূর্ব শক্তিশালী একটি দল যা দুশমনদের কিল্লায় কম্পন ধরিয়েছে।

 

        সবশেষে শাইখ আবু বকর বিশ্বের মুসলিম ভাইবােনদের নিকট লাইবেরিয়ান অসহায় উদ্বাস্তু মুসলমানদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।

 

*****