গত পর্বে আমরা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছি যে বর্তমান পার্লামেন্টারী সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করা কোন মুসলিমের জন্যে জায়েয নয়। আজকে আমরা একটা ভিন্ন আঙ্গিকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে বুঝার চেষ্টা করবো। যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নিই যে শরীআ পরিস্থিতির কারনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে মৃদু সম্মতি দেয়, তাহলেই কি আমরা সেই মনজিলে মকসুদে পৌছঁতে পারবো যা আমরা চাই??

আসলে দুনিয়ার অনেক বিষয়ই আছে যেটা অনেকটা গণিতের মত, গাণিতিক সমীকরন দিয়েই বুঝে ফেলা যায়, এর জন্য বছরের পর বছর টেস্ট প্রজেক্ট খেলে খেলে মিশর আর আলজেরিয়া হতে হয় না। x^2 = -1 এই সমীকরণের যেমন কোন বাস্তব সমাধান নেই, কাল্পনিক একটা বিষয়, ঠিক তেমনি গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চিন্তভাবনাও কোন বাস্তবসম্মত চিন্তাভাবনা নয়, নিছক দিবাস্বপ্ন মাত্র। এখানে x এর লক্ষ-কোটি মান একের পর এক বসিয়ে পরীক্ষা করার দরকার নেই, সমীকরণই বলে দিচ্ছে যে এর কোন বাস্তব সমাধান নেই। 1 এর উপরে সূচক (Power) হিসেবে (অর্থাৎ 1^x) যা-ই বসাও না কেন ফলাফল কখনই 100 হবে না। চাই 1 এর উপর সূচক (Power) 1oo বসাও, 1 লাখ বসাও কিংবা 1 কোটি বসাও, ফলাফল শুধু এবং শুধুমাত্র 1 ই হবে, এর বেশি কিছুতেই হবে না। গাণিতিক যুক্তিগুলো যদি কারও বুঝতে অসুবিধা হয়, তার জন্যে সহজ করে বলি- গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন, মইয়ের উপর মই বসিয়ে চাঁদে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নের চেয়েও অবাস্তব। পাকিস্তানের অন্যতম ইসলামী চিন্তাবিদ Dr. Israr Ahmed যিনি একসময় জামাআতে ইসলামী করতেন, এক আলোচনায় ‘গণতন্ত্র দিয়ে কখনই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যাবে না’- এর কারন হিসেবে বলেছিলেন-

“DEMOCRATIC ELECTIONS ARE HELD TO RUN THIS SYSTEM, NOT TO CHANGE THIS SYSTEM.”

যেসব কারনে গণতন্ত্র দিয়ে কখনই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যাবে না-

১.

কুফর-শির্ককে মিটিয়ে দিয়ে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার পর ইসলামী রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল- নামায কায়েম করা। এবং এ কাজ না করলে হাদীসে শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার অনুমতিও আছে। মহান আল্লাহ বলেন-

“আমি তাদেরকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকর্মের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে, আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে”। [সূরা হাজ্জ : ৪১]

সহীহ মুসলিমে আউফ বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। নবী (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম নেতা তারাই যাদেরকে তোমরা ভালোবাসো আর তারাও তোমাদেরকে ভালোবাসে এবং তারা তোমাদের জন্য দুআ করে এবং তোমরাও তাদের জন্য দুআ কর। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট নেতা তারা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তোমরা তাদের অভিসম্পাত করো এবং তারাও তোমাদের অভিসম্পাত করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তলোয়ার দিয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করবো না?? আল্লাহর নবী (সঃ) বললেনঃ না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মাঝে সালাত কায়েম রাখে ততক্ষণ পর্যন্ত নয়”।

নামায কায়েমের ব্যাপারে রাষ্ট্রের কর্তব্য কি? এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফার (রহঃ )মত হল বে-নামাযীকে তওবা না করা পর্যন্ত জেলে বন্দী রাখা হবে আর অন্যান্য আলেমদের মত হল তাদেরকে তওবার আহ্বান জানানো হবে অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে। [সূত্রঃ তাফসীরে সূরা তাওবা/ ড. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম রহঃ, সালাত পরিত্যগকারীর বিধান/ ইবনে উসাইমীন রহঃ]

এখন, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার সবচেয়ে Vital একটি Element এ গণতন্ত্র কতটুকু সফল হবে??

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে দেশের মাত্র ২% মানুষ নিয়মিতভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ে। তাহলে আপনি কি করে আশা করেন যে তারা নামায কায়েমের এ ধরনের বিধানের পক্ষে ভোট দিবে?? অর্থাৎ তাদের ভোটে ইসলামী বিধান বাস্তবায়িত হবে এটা একটা আকাশ কুসুম কল্পনা।

ইনফ্যাক্ট গণতন্ত্রবাদী কোন একটি ইসলামি দল যদি ভাগ্যক্রমে ক্ষমতায় আসেও, তবুও তারা কখনই নামায কায়েম করবে না। কেননা এতে পরের নির্বাচনে তাদের ভরা ডুবির আশংকা আছে!!

[ এ বিষয়টা আরো একটু পরিষ্কার করিঃ যদি কোন রাষ্ট্রের শতভাগ মুসলিম নামায পড়ে তবুও আমরা ঐ রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র বলবো না, যদি না সেখানে রষ্ট্রীয়ভাবে বেনামাযীর শাস্তির বিধান না থাকে। কিন্তু যে রাষ্ট্রে বেনামাযীর শাস্তির বিধান আছে, চাই সে রাষ্ট্রের সবাই নামায নাও পড়ুক তবুও সেটা ইসলামিক রাষ্ট্র। বস্তুত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্ক সম্যক আইডিয়া না থাকার কারনেই এই বিভ্রান্তগুলো ছড়াচ্ছে। কেউ কেউ তো এমনটিও মনে করে যে তাদের দল পার্লামেন্টের ১৫১ টা সিট পেলেই বুঝি রাষ্ট্র ইসলামী হয়ে যাবে!!]

২.

ইসলাম নামক মুক্তির বিহঙ্গ আজ জাতীয়তাবাদ নামক লোহার খাঁচায় বন্দী। মুসলিমদের সীসা-ঢালা ভাতৃত্বের বন্ধন আজ বৃটেন, ফ্রান্সের এঁকে দেওয়া সীমারেখায় কেঁদে কেঁদে মরছে। গণতন্ত্র কি পারবে এ লোহার খাঁচা ভেঙে উম্মাহকে পুনরায় ঐক্য আর মুক্তির স্বাদ দিতে ??

৩.

কোন ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম থেকে ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান হয়ে গেলে কিংবা নাস্তিক হয়ে গেলে ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল তাকে তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসার আহ্বান জানানো। এতে যদি সে অপরাগ হয় তাহলে রাষ্ট্রের কর্তব্য হল তাকে ক্বতল করা।

রাসূল (সঃ) বলেছেন-

“যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে পরিত্যাগ করে (বা বদলে ফেলে), তাকে ক্বতল কর”। [ সহীহ বুখারী-২৭৯৪ ]

ইমাম তিরমিযী তাঁর জামে তিরমিযীর ১৪৫৮ নম্বর হাদীস- من بدل دينه فاقتلوه অর্থাৎ যে তার দ্বীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করে ফেলবে-এর অধীনে লিখেছেন-

والعمل على هذا عند أهل العلم في المرتد

অর্থাৎ মুরতাদের শাস্তির বিষয়ে ইলমের সকল ধারক-বাহকের নিকট এটাই অনুসৃত বিধান।

আপনার কি মনে হয় যারা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ পরিচালনা করছে, কোটি কোটি ডলার খরচ করছে মানুষকে ধর্মান্তরিত করার জন্য, তারা এত সহজে আপনাকে এই আইন বাস্তবায়ন করতে দিবে??

৪.

ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল তা ইয়াহুদী খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে জিযিয়া আদায় করবে। ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহঃ, “আর তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়” (সূরা আনফাল : ৩৯) এই আয়াতের উল্লেখ করে বলেন –

“আল জিহাদের লক্ষ্য তো এটাই যে আল্লাহর কালিমা সুউচ্চ হবে এবং দ্বীন সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে”।

তিনি আরো বলেন-

“দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ হল- কাফিররা নত হবে এবং তাদের নেতাদের উপর জিযিয়া কার্যকর হবে এবং তাদের উপর দাসত্ব চাপানো হবে- এটাই আল্লাহর দ্বীনের দাবী। এর একেবারে বিপরীত হল কাফিরদেরকে তাদের ক্ষমতা বজায় রেখে যেভাবে খুশী তাদের দ্বীন প্রচারের সুবিধা করে দেওয়া যাতে তারা ক্ষমতাশীল ও দৃঢ়পদ হয়”। [আহকামুল যিম্মাহ]

যারা কারনে অকারনে মার্কিন দূতাবাসে ধন্যা দেয়, তারা এটা করার সাহস দেখাবে বলে কি আপনার মনে হয়?? কুফফারদের ফর্মুলা Follow করে তাদের স্বার্থবিরোধী আইনের স্বপ্ন দেখা কি নিছক বিভ্রান্তি নয়??

৫.

ইসলামী রাষ্ট্র ইসলাম বিরোধী সকল প্রকার বাতিল মতবাদ, মানব রচিত তন্ত্র-মন্ত্র ও দলকে নিষিদ্ধ করবে- চাই তারা বামপন্থী হোক, সেক্যুলারপন্থী হোক, কিংবা জাতীয়তাবাদী হোক। তাদেরকে তওবা করার আহ্বান জানানো হবে, অন্যথায় তাদেরকে মুরতাদ ঘোষণা করে হত্যা করা হবে।

শুধু তাই নয়, ইসলামে ‘সরকারী দল’ এবং ‘বিরোধী দল’ এ জাতীয় পরিভাষাগুলো সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য, সকল প্রকার দলাদলি নিষিদ্ধ, এক আমীরের নেতৃত্বে গোটা উম্মাহ- এটাই হল ইসলামিক মডেল। বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্বীকার করে নিয়ে এ কাজ করার সুযোগ কোথায়??

জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসে তাদের প্রিয় নাস্তিক-বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিককে হত্যা করার নৈতিক শক্তি একটি ইসলামি দল কই পাবে? রাজনৈতিক দলসমূহকে নিষিদ্ধ করতে গেলে কার্যত গণতন্ত্রকেই কবর চাপা দিতে হবে। যে জনগণের কাছ থেকে ভোটভিক্ষার মাধ্যমে দলটি ক্ষমতায় এসেছে তারা এটা মানবে কেন?? ঐ সমস্ত দলগুলো বা তাদের সাপোর্টাররাইবা বসে থাকবে কেন?? আর পশ্চিমারাইবা বসে বসে আঙুল চুষবে কেন??

৬.

একটি ইসলামী রাষ্ট্র সকল প্রকার অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, যত্রতত্র বেপর্দা চলাফেরা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, সহশিক্ষা, অশ্লীল নাটক, সিনেমা, যাত্রাপালা নিষিদ্ধ করবে। সিনেমা হল, নাইটক্লাব, মদের বার, ডিজে পার্টি, নিষিদ্ধ গানের আসর বন্ধ করবে। সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র ভেঙ্গে ফেলবে। ইসলামী মূল্যবোধ বিরোধী পত্র-পত্রিকা, ম্যগাজিন, ব্লগ, সাময়িকী, বইপত্র, কবিতা, উপন্যাস, সাহিত্য নিষিদ্ধ করবে। বিবাহিত ব্যভিচারীকে রজম করে হত্যা করবে, সমকামীদের হত্যা করবে। চারুকলা-কারুকলার নামে নিষিদ্ধ মূর্তি-ভাস্কর্য তৈরির চর্চা বন্ধ করবে। গণতান্ত্রিক পন্থায় এসব করার সুযোগ কোথায়??

আপনি যদি ক্ষমতায় যেতে চান তাহলে আপনাকে জনপ্রিয়তা খুঁজতে হবে। আর আপনি যদি জনপ্রিয়তা খুঁজতে চান তাহলে রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা আপনার নিজের মাঝেই ইসলাম থাকবে না। আসলে জনপ্রিয়তার রাজনীতিই আজকের ইসলামী দলসমূহের আদর্শিক অধঃপতনের প্রধান কারন।

আল কুরআনে আল্লাহ বলেন-

“আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করেন তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করে দেবে; তারা শুধু নিছক ধারণা ও অনুমানের অনুসরণ করে, আর তারা ধারণা ও অনুমান ছাড়া কিছুই করছে না”। [আল-আনআম : ১১৬]

আরো একটা লক্ষণীয় বিষয় হল, মহান আল্লাহ বলেন-

“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং তুমি মানুষকে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবে …….. “ [সূরা নাসর]

কাজেই ইসলামের বিজয় আসলেই মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করবে। কিন্তু গনতন্ত্রী ভাইয়েরা উল্টো বুঝে মনে করেন, আগে মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করবে, তারপরে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সূত্রে তারা ইসলামের বিজয় ঘটাবেন!!

৭.

সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থাকে উৎখাত করতে গেলে এবং যাকাত ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করতে গেলে দেশের ভোগবাদী ধনিক শ্রেণী আপনাকে অপসারন করার সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালাবে। কেননা এই সুদের জোরেই তারা জিইয়ে রেখেছে তাদের আদিগন্ত ভোগলিপ্সা, শাসন, শোষণ, অবৈধ কর্তৃত্ব আর সম্পদের বিশাল পাহাড়। আর একথা তো সর্বজনবিদিত যে বর্তমান পুঁজিবাদ নির্ভর গনতন্ত্রের পেছনের কলকাঠি নাড়ে এই ব্যবসায়ী গ্রুপ। আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর যুগেও একটা গ্রুপ যাকাত না দেওয়ার জন্য অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছিল । তাহলে তো বর্তমান যুগের পুঁজিবাদীদের কথা বলাই বাহুল্য।

৮.

মিশর কিংবা আলজেরিয়ার মত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দরকার পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ। গণতন্ত্রবাদীদের এসব পরিস্থিত ট্যাকল দেওয়ার প্রস্তুতি কতটুকু?? তাদের প্রস্তুতি তো কেবল পোস্টারিং আর দেওয়াল লিখন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। বরং তারা এ ধরনের প্রস্তুতিকে অসাংবিধানিক ও অনিয়মতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে থাকে। অথচ আলেমদের পরিষ্কার মত হচ্ছে সার্বক্ষনিক জিহাদের প্রস্তুতি মুসলিমদের জন্য ফরয, চাই যুদ্ধের পরিস্থিতি থাকুক, আর নাই থাকুক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন-

“তোমরা কাফিরদের মোকাবেলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদা সজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে”। [সূরা আনফাল ৬০]

“কাফেররা কামনা করে যেন তোমরা অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাব সম্পর্কে অসতর্ক হও যাতে তারা তোমাদের একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে”। [সূরা নিসা ১০২]

রাসূল (সঃ) বলেছেন –

“তোমরা অনেক রাষ্ট্র জয় করবে এবং তোমরা নিরাপদ নিশ্চিন্তে থাকবে। যদি তা হয় তবুও তোমরা তীরন্দাজী ছেড়ে দিও না”। [ সহীহ মুসলিম, উকবাহ (রাঃ) এর বর্ণনায়]

আসলে গণতন্ত্র হল কুফফারদের তৈরি করা ফাঁদ। যখন তারা দেখবে একটি ইসলামী দল ক্ষমতায় চলে এসেছে তখন তারা মিথ্যা অভিযোগে তাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালাবে এবং তখনও তারা গণতন্ত্র রক্ষারই অজুহাত দিবে!! 11122339_1442806562698671_1001745253_n

দেখুন ইতিহাস কি বলে-

ক) তুরস্কঃ

আরবী ভাষায় আযান পুনরায় চালু করার জন্যে ১৯৬০ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আদনান মেন্দারেসের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয় এরপর তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
১৯৮০ সালে তুরস্কের সেক্যুলার সেনাবাহিনী, মধ্যমপন্থী-ইসলামপন্থী কোয়ালিশনের সরকারকে আবার ক্ষমতাচ্যুত করে। ইসলামী দল নিষিদ্ধ করে।
১৯৯৭ সালে তুরস্কের ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রী নাজিম€Œ উদ্দীন আরবাকান কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সেনাবাহিনীর চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
খ) তিউনিসিয়াঃ

১৯৮৯ সালে তিউনিসিয়ার সেনাবাহিনী ও পশ্চিমা সমর্থিত শাসক যখন দেখতে পেল রশীদ ঘানুশীর নেতৃত্বাধীন ‘আন নাহদা’ নির্বাচনে অংশগ্রহনে বাধা স্বত্তেও স্বতন্ত্রভাবেই বিপুল ভোট পাচ্ছে, তখন ২৫ হাজার ইসলামপন্থীকে বিশৃংখলা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে জেলে ঢুকিয়ে দেয় আর সেই সাথে কয়েকজন নেতাকে ফাঁসিতেও লটকে দেয়।
গ) আলজেরিয়াঃ

১৯৯২ সালে আলজেরিয়াতে ‘ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট’ যখন বিপুল ভোটে বিজয়ী হল তখন সেখানে সামরিক অভ্যত্থান ঘটানো হল। ৩০ হাজার ইসলামপন্থীকে জেলে ঢুকানো হল। শুরু হল গৃহযুদ্ধ।
ঘ) ফিলিস্তিনঃ

২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাচনে হামাস বিজয়ী হয়। শুরু হয়ে যায় ইজরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের হাউকাউ। ইজরায়েল গাজা আক্রমণ করে। শুরু হয় অবরোধ।
ঙ) মিশরঃ

২০১২ সালের জুন মাসে ১ম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুহাম্মাদ মুরসি মিশরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই মুরসির বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। হাজার হাজার কর্মী-সমর্থদের হত্যা করা হয়। বর্তমানে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদেরকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যালিম আল ফাত্তাহ সিসি।
[ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরে যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগকেই প্রকৃত অর্থে Islamic Party বলা যায় না, বড়জোর ইসলাম ঘেঁষা জাতীয় রাজনৈতিক দল বলা যায়। আর যাদেরকে কিছুটা বলা চলে, তারাও তাদের ক্ষমতাসীন অবস্থায় দ্বীন কায়েম করতে পারে নি, কারন ইসলামী রাষ্ট্রের Very Very Fundamental Criteria পূরন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।]

গনতন্ত্র নিয়ে আক্ষেপ করতে গিয়ে এক ভাই একবার বলেছিলেন-

“গনতন্ত্র এমন একটা ধর্ম যা তার অনুসারীদের বেঁধে দেয়, বুলেটের আঘাতে তোমাদের বুক ঝাঁঝরা করে দিলেও তোমরা সর্বোচ্চ রাস্তায় গিয়ে একটু প্ল্যাকার্ড হাতে দাড়িয়ে থাকতে পারবে। আর এতটুকু করতে পারলেই তারা এই ভেবে পরিতৃপ্ত হয়ে যায় যে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় হয়ে গিয়েছে”!!

৯.

আমেরিকার RAND ইন্টস্টিটিউশন মডারেট মুসলিমদের যে চারটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছে এবং যেগুলো তারা আমাদের উপর Impose করতে চায়, তার দুটি হল-

1. Accepting Democracy as understood in the liberal western traditions (not in islamic perspective)

2. Acceptance of non sectarian source of law. Those who want laws from a particular scriptures are extremist!!!

বিস্তারিত ইমাম আনোয়ার আল আওলাকির ‘The Battles of Hearts & Minds’ লেকচারটা শুনুন।

[লিংক- http://www.kalamullah.com/anwar-alawlaki.html // বাংলা অনুবাদ লিখিত ভার্সন- http://www.pdf-archive.com/2014/04/0...tattik-juddho/ ]

আপনি হয়তো ভাবছেন Democracy গ্রহণ করলেই পশ্চিমারা আপনার উপর খুশি হয়ে যাবে, Moderate মুসলিম ঘোষণা করবে, তা কিন্তু নয়। তারা স্পষ্ট করেই বলেছে সেই গনতন্ত্র নয় যে গণতন্ত্র আপনি বুঝেন বা যা চান, বরং তাদের বক্তব্য একেবারে পরিষ্কার- Accepting Democracy as understood in the liberal western traditions এবং তারা গনতন্ত্রবাদী ইসলামী দল ইস্যুতে বলেছে- as in the case of present Egyptian Muslim Brotherhood is not Enough. প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন, RAND ইন্টস্টিটিউশনের সংজ্ঞায় যেটা Moderate Islam আমাদের কাছে তা পরিষ্কার কুফর।

মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন-

“ইয়াহুদী খৃষ্টানরা কখনই তোমার উপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের দ্বীনের অনুসরণ কর”। [সূরা বাকারা : ১২০]

১০.

প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী হবার সবচেয়ে সহজ কৌশল হল Divide & Rule. মোটাদাগে দেখলে এদেশের অল্পকিছু মানুষ ইসলামপন্থী। অতঃপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের ফর্মুলায় এই অল্প সংখ্যক ভোট ভাগ হবে এত্ত এত্ত ইসলামী দলের মাঝে। একদলের শাইখুল হাদীস দাড়াবে, অপরদলে দাড়িবিহীন শিক্ষিত তরুণ দাড়াবে। অতঃপর সমর্থকদের মাঝে শুরু হবে নোংরা কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি, গীবত, অপবাদ, আর পরনিন্দার বৃষ্টিধারা। দূর থেকে সেক্যুলার-বামপন্থীরা মজা লুটবে। আসলে গণতন্ত্র আর নির্বাচন এই উম্মাহর মাঝে বিভেদ ও অনৈক্যের বিষফোঁড়া রোপণ করে দিয়েছে। যার ফল আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দেশে বর্তমানে ইসলামী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ঠিক কতটি তা এই মূহুর্তে বলা মুশকিল তবে অন্তত এতটুকু জেনে রাখা ভালো যে এ দেশে ইসলামী ঐক্যজোটের (?) সংখ্যাই ৪ থেকে ৫ টা (!!)

১১.

বর্তমানে নির্বাচনে বিদেশী প্রভাব একটি Open Secret. প্রতিটা ইলেকশনের পূর্বে বিভিন্ন নেতা-নেত্রীদের ভারত আর ওয়াশিংটনমুখী দৌড়াদৌড়ির দৃশ্য তাই খুবই কমন। বলা যায়, দিল্লী-ওয়াশিংটন থেকেই নির্ধারন করা হয়ে থাকে আগামী ৫ বছর কারা এদেশে তাদের Proxy দালাল হিসেবে কাজ করবে। তার উপরে ভোটে কারচুপি, জাল ভোট প্রদান, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, দূর্নীতি, নির্বাচন কমিশনের অবৈধ হস্তক্ষেপ, ক্ষমতার অপব্যবহার (দলীয় সরকার হলে তো কথাই নাই, তথাকথিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ক্ষেত্রে বলা যায়- পাগল আর বেকুব ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়) এগুলো তো আছেই। এই সিরিয়ালে সর্বশেষ সংযোজন হল এক তরফা প্রহসনের নির্বাচন, যেটা কিছু দিন আগে এ দেশের মানুষ খুব ভালোভাবেই প্রত্যক্ষ করেছে। ইসলামী দলতো দূরের কথা, সেক্যুলার দলগুলোরও এক্ষেত্রে কিছুই করার ছিল না। আর গণতন্ত্রের তথাকথিত ‘সর্বশক্তির উৎস’ বলে পরিচত ‘জনগন’ তো এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া আর কিছুই করে নি, এমনকি ২/১ টি ফাঁকা বুলিও নয়। আসলে আম জনতার এসব নিয়ে কোন মাথাব্যথাই নেই, ‘চাচা তোর আপন প্রান বাঁচা’ নিয়েই সবাই ব্যস্ত। দেশের মানুষ প্রহসনের নির্বাচনের আগেও যেমন সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘুমাতে যেত, এখনও তেমন-ই যায়। দেশের একটি প্রধান রাজনৈক দল, বিএনপি বারবার ওয়াশিংটনের দিকে হাত তুলে মুনাজাত করছিল, কিন্তু ওয়াশিংটন আকার ইঙ্গিতে ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছে, আমরা মুখে যাই বলি না কেন কাজে আমরা তারই পক্ষ নিবো, যারা আমাদের বেশি সুবিধা দিবে আর বেশি গোলামী করবে। সেক্যুলারদের প্রভু ওয়াশিংটনের এই নীতিটি আপনি আরো ভালো করে বুঝবেন গণতন্ত্রের পুরোপুরি বিপরীত রাজতন্ত্রবাদী সৌদিদের সাথে তাদের গভীর সম্পর্ক থেকে। আসলে তাদের দরকার কর্তৃত্ব আর আধিপত্য; গণতন্ত্রের মন্ত্রতো ওরা জপে কেবল তৃতীয় বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহকে ধোঁকা দেওয়ার জন্যে।

পশ্চিমাদের বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হল সাম্রাজ্যবাদ নীতি। বিভিন্ন মুসলিম দেশে আক্রমন করা, মুসলিম নারীদের ইজ্জত লুন্ঠন করা, শিশুদের রক্ত ঝরানো, মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুটে নেওয়া এগুলো পশ্চিমাদের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। এজন্যে তারা কখনই কোন দেশে এমন কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে দিবে না যারা তাদের দখলদারিত্বের বিরোধিতা করবে আর নির্যাতিত মুসলিমদের জন্যে জিহাদ পরিচালনা করবে। অথচ এ ব্যপারে আলেমদের ইজমা হল যখন কাফিররা কোন মুসলিম দেশ আক্রমণ করে তখন আস্তে আস্তে সারা বিশ্বের মুসলিমদের উপর জিহাদ ফরয হয়ে যায়।

প্রিয় ভাইয়েরা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না-

ক) দ্বীন ইসলামের চির শত্রু ইয়াহুদী- খৃষ্টানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে একের পর এক ক্রুসেড যুদ্ধ চালিয়েছে, মুসলিমদের প্রথম কিবলা বাইতুল মাকদিস দখল করে রেখেছে, স্পেন থেকে ইসলামের নাম নিশানাটা পর্যন্ত মুছে দিয়েছে।

খ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া মিলে মুসলিমদের ঐক্য ও শক্তির কেন্দ্র খিলাফতকে ধংস করেছে, মধ্যপ্রাচ্যকে ভেঙে খন্ড বিখন্ড করেছে। কামাল আতাতুর্ক নামক গাদ্দারের মাধ্যমে পশ্চিমারা সে সময় কর্যত তুরস্কে ইসলামকেই নিষিদ্ধ করেছিল। ১৯২৪ সালের ২৪ জুলাই, লুজেন চুক্তি (Lausanne Treaty) স্বাক্ষরিত হবার পর হাউস অফ কমন্সে তৎকালীন বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী লর্ড কার্জন ঘোষণা দিয়েছিল যে, “মূল বিষয় হচ্ছে তুরস্ক ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এটি আর কোনদিনও মাথা তুলে দাঁড়াবে না। কারণ, আমরা তাদের আধ্যাত্মিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিয়েছি। আর তা হল খিলাফত এবং ইসলাম”। এছাড়া, আল-কুদস এ দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পর বৃটিশ জেনারেল অ্যালেনবি ঘোষণা করে, “আজ ক্রুসেডের সমাপ্তি ঘটল”। আর, দামেস্ক দখল করে নেবার পর ফরাসী জেনারেল গরো (Gourou) তড়িৎ গতিতে সালাহউদ্দীন আইয়্যুবীর সমাধিস্থলে প্রবেশ করে তার কবরে লাথি মেরে বলেছিল, “উঠো, সালাহউদ্দীন! আমরা আবার ফিরে এসেছি”। বস্তুত খিলাফত ধংসের পর পশ্চিমাদের উল্লাসের কোন সীমা-পরিসীমা ছিল না।

গ) ইসলামী হুকুমত কায়েমের চেষ্টার জন্যে এবং মুজাহিদীনদের সাহায্য করার জন্যে এরাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হককে হত্যা করেছিল।

ঘ) এরাই সৌদি বাদশা ফয়সালকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করেছে। বাদশা ফয়সালের অপরাধ ছিল তিনি আমেরিকানদের মিত্র ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, মুসলিমদের ১ম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন এবং পশ্চিমাদের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিলেন!!

ঙ) মুসলিমদের পবিত্র ভূমিতে ১৯৪৮ সালে যখন ইহুদীবাদী ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হল, ইমাম হাসান আল বান্না (রহঃ) দেখলেন তাঁর চোখের সামনে ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই তিনি দশ হাজার মুজাহিদ (ঠিকই পড়েছেন ১০ হাজার) নিয়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশ করতে চাইলেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকার তিন রাষ্ট্রদূত বৈঠক করে তাদের সিদ্ধান্তপত্র মিশরের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠায়। এর ২ মাস পর মিশরের রাজা ফারুকের সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মাহমুদ আব্দুল মাযীদ শহরের সবচেয়ে বড় রাস্তায় ইমাম হাসান আল বান্নাকে হত্যার চেষ্টা করে। এতে তিনি আহত হন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। তখন রাজা ফারুকের আরেক ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা মুহাম্মাদ ওয়াসফি পুনরায় ইমাম বান্নাকে গুলি করে হত্যা করে। [ ফিলিস্তিনের স্মৃতি/ ড. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম ]

১২.

আধুনিক কালে নির্বাচন মানেই লক্ষ লক্ষ টাকার ছড়াছড়ি। মিছিল, মিটিং, মাইকিং, পোস্টারিং ইত্যাদিতে কে কাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে সবসময় তারই প্রতিযোগিতা চলে। একগাদা ভাড়া করা ক্যানভাসার যোগাড় করা হয়। কোথাও কোথাও তো অসভ্য নর্তকী আর গায়িকাদেরও ভাড়া করা হয়। এসব ক্যানভাসারদের কাজই হল জোর গলায় নিজ নেতার চরিত্রকে ‘ফুলের মত পবিত্র‘ বলে দাবী করা আর যেকোনভাবে প্রতিপক্ষের নামে দূর্নাম ও কুৎসা রটনা করা। একগাদা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, সুযোগ পেলে আকাশের চাঁদ হাতে এনে দেওয়ার গল্পও ছাড়া হয়। ভোটারদের মনোরঞ্জনের জন্যে ক্ষণে ক্ষণে পান, তামুক, চা, বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা, মদ, গাঞ্জা পরিবেশন হয়। এমন কি প্রয়োজনে নগদ টাকা-পয়সা দিয়ে ভোট কেনা হয়। যে এই কাজ যত বেশি করতে পারবে সে তত বেশি সফল। একজন ইসলামপন্থী না নিজের মিথ্যা গুণগান গাওয়ার জন্য লোক ভাড়া করতে পারে, না অন্যের নামে মিথ্যা বদনাম রটনা করতে পারে, না মিথ্যা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, না তরুণদের হাতে মদের বোতল আর বৃদ্ধদের হাতে হুক্কার ডিব্বা ধরিয়ে দিতে পারে, না সে দূর্নীতিবাজদের মত ক্যানভাসে লাখ লাখ টাকা অপচয় করতে পারে, না সে কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভোট কেনার মত জগন্য কাজ করতে পারে। এসব যদি সে না-ই পারে তাহলে এই প্রতিযোগিতায় তার কোন স্থান নেই কেননা তথাকথিত নৈতিকতার বুলিতো তো কত আগেই নগদ টাকা-পয়সা আর বিড়ি সিগারেটের গন্ধে কর্পূরের মত উবে গেছে। আর যদি সে এগুলোও করতে পারে তাহলে বুঝতে হবে তার মাঝে ইসলামী চরিত্রের আর ছিটেফোঁটাও নেই। জনপ্রিয়তা অর্জনের স্রোতে গা ভাসিয়ে সব ধুয়ে মুছে একেবারে সাফ হয়ে গেছে।

রাসূল (সঃ) বলেছেন-

“আমরা এরূপ ব্যক্তিকে কোন পদে মনোনিত করি না, যে তার পদ চেয়ে নেয় বা পদের প্রতি লালায়িত হয়”। [বুখারী]

১৩.

গণতন্ত্রের মাধ্যমে একটা ইসলামী দল যদি ক্ষমতায় আসেও (বাংলাদেশে সে আশা করা নিতান্তই গুড়ে-বালি) তাহলেও তারা ইসলামকে কায়েম করতে পারবে না- ইতিহাস এবং সমীকরণ এটাই বলে। একান্ত যদি পারেও এর পরের ইলেকশনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে। জনগণের মন সবসময়ই পরিবর্তনশীল। সবচেয়ে ভালো শাসনেও তাদের মাঝে ‘নদীর এপাড় কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ওপাড়েতে সর্বসুখ আমার এ বিশ্বাস’- টাইপের অনুভূতি কাজ করতে পারে। ফলে আবারও দেশ পরিচালিত হবে কুফরী আদর্শ ও মূলনীতিতে। এভাবে ‘৫ বছর ইসলাম, ৫ বছর কুফর‘– এই অবস্থা তো আমাদেরকে আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর কাছে তৎকালীন কাফিরদের সেই প্রস্তাবের কথা মনে করিয়ে দেয়- “আপনি এক বছর আমাদের ইলাহগুলির ইবাদাত করুন, তাহলে আমরাও পরের বছর আপনার রবের ইবাদাত করবো”।

১৪.

১ম পর্বে আমরা দেখেছি যে পৃথিবীতে ব্যাপক বিস্তৃত একটি খিলাফতের প্রতিশ্রুতি রাসূল (সঃ) আমাদেরকে দিয়েছেন। এবং এটা প্রত্যেকটা মাটির ঘর বা তাবু পর্যন্তও বিস্তৃত হবে। তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ বা জিযিয়ার আহ্বান জানাবে। অন্যথায় তাদের সাথে যুদ্ধ করা হবে। কথিত ভোটাভোটির মাধ্যমে পৃথিবীতে এত বড় পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস করাটা কি বোকামী নয়?

১৫.

শেষকথা, একটা প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্র বিনা আক্রমণে বিশ্বব্যাপী জিহাদ পরিচালনা করবে দ্বীনকে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী করার জন্যে। কারন দ্বীন ইসলাম কোন নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডের জন্যে নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীর জন্য অবতীর্ণ হয়েছে।

যদি মুসলিমরা অক্ষম না হয় এবং শত্রুর সাথে কোন চুক্তি না থাকে তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রকে পার্শ্ববর্তী কুফফার রাষ্ট্রে আক্রমন চালাতে হবে এবং তাদেরকে হয় ইসলাম, নয় জিযিয়া, নয় যুদ্ধের নীতিতে আহ্বান জানাতে হবে। এই জিহাদকে জিহাদ আত তালাব বলা হয়। অধিকাংশ আলেমদের মত হচ্ছে বছরে কমপক্ষে ১ বার এই ধরনের আক্রমন পরিচালনা করতে হবে। অন্যদের মত হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমরা সক্ষম ততক্ষণ পর্যন্ত এটি চালিয়ে যেতে হবে এবং এর সর্বনিম্ন কোন সীমা নেই। [দেখুনঃ আল মুগনী ওয়াশ শারহ আল কাবীর/ দশম খণ্ড]

ইমাম কুরতুবী তাঁর তাফসীরে কুরতুবীর অষ্টম খন্ডে অনুরূপ কথাই ব্যক্ত করেছেন অর্থাৎ আক্রমণাত্বক জিহাদের ফরযসীমা বছরে অন্তত একবার, এর অধিক ইমামের ইচ্ছাধীন। ইবনে কাসীর (রহঃ) সূরা তাওবার ১২৬ নং আয়াতের ব্যখ্যায় কাতাদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন- “তারা (কাফিররা) বছরে ১ বার বা ২ বার যুদ্ধের দ্বারা পরীক্ষিত হয়।” তবে ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) তাঁর ফাতহুল বারীর ৬ নং খন্ডের ২৮ পৃষ্ঠায় ২য় মতটিকেই অধিক শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেছেন।

কাজেই কুফফাররা ও তাঁদের দোসররা কখনই নিছক কিছু টিপসই দিয়েই এরূপ রাষ্ট্র হতে দিবে না, কখনই না।

প্রিয় ভাই, আশা করি, উপরের আলোচনায় থেকে আপনার কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কখনই দ্বীন কায়েম করা যাবে না, উম্মাহর ক্ষতের উপশম হবে না, খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। বরং গণতন্ত্র হল একটি ফাঁদ, একটি ধোঁকা, প্রতারণা। হে প্রিয় ভাই, এরপরেও কেন আপনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি খুঁজতে চান?? এখনও কেন এই গণতন্ত্রকে আঁকড়ে থাকতে চান?? হে আল্লাহ, আপনি সত্য উপলব্ধির জন্যে আমাদের অন্তরসমূহকে আরো উন্মুক্ত, আরো প্রসারিত করে দিন। আমীন।

মনে রাখবেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-

“মুমিন একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না”। [বুখারী, মুসলিম]