কমান্ডার নাসরুল্লাহ মনসূরঃ
গজনবীর দেশ থেকে সোমনাথের পথে
===================================================================
আমরা দু'দিন ক্রেক ডাউনের অবরােধের মধ্যে ছিলাম। এই দু' দিনে মােট ছ'বার আমাদের গুপ্তচরের সম্মুখ থেকে হেটে যেতে হয়েছে। প্রতিবারই আমরা আল্লাহর কাছে দুয়া করতে করতে অগ্রসর হয়েছি। তার বিশেষ রহমতে আমরা তাদের হাত থেকে রক্ষা পাই। ক্রেক ডাউন তুলে নেয়ার পর সেনাদের গ্রুপ কমাণ্ডার সকল লােকদের একত্রে বসিয়ে এক ভাষণ দেয়। আমরাও তার ভাষণ শুনার জন্য বসে যাই। সে ভাষণে বললােঃ “আমরা জানতে পেরেছিলাম, এই এলাকায় তিনজন আফগানি দুষ্কৃতিকারী এসে আশ্রয় নিয়েছে। দীর্ঘ দু'দিন তল্লাসী অভিযান চালিয়েও তাদেরকে ধরতে পারলাম না। এর পূর্বেই তারা পালিয়ে গেছে। এখন আপনাদের এলাকায় কোন দুষ্কৃতিকারী নেই। “সে আরও বলল,” আমরা দুষ্কৃতিকারীদের চেহারা দেখলেই চিনতে পারি। আমাদের সিপাহীরা যখনই কোন এলাকায় ক্রেক ডাউন করেছে, দুষ্কৃতিকারীদের ধরে ফেলেছে। আমরা কর্ণেলের কথা শুনে মনে মনে তার আহম্মকির জন্য হাসতে ছিলাম । ভারত সরকার ও তার সিপাইরা নিজেদের ওপর এই রূপ মিথ্যা আত্মবিশ্বাসৃই পােষণ করে থাকে। তাদের পায়ের তলা থেকে যে মাটি সরে যাচ্ছে সে ব্যাপারে তাদের কোনই খবর নেই। ক্রেক ডাউন শেষে কর্ণেল হাসি মুখে জীপে চড়ে বিদায় নিল। এবার আমাদেরও হুশ ফিরে এল।
এখানকার যুবকরা সাধারণত প্যান্ট শার্ট পরে এবং বৃদ্ধরা পরে সাদা রংয়ের জামা - পাজামা। তবে সকলের গায়ের উপর ঢােলা কোর্তা চাপানাে ছিল। প্রত্যেকের সাথে ছিলাে একটি করে কাংরি। কাশ্মিরের লােকেরা তীব্র শীত থেকে বাঁচার জন্য একটি বিশেষ ধরনের পাত্রে গরম কয়লা রেখে হেঁক নেয়। সেই পাত্রকে কাশ্মিরীরা “কাংরি" বলে। তাদের গায়ের উপর মােটা অথবা পশমী কাপড়ের বিশেষ ধরনের ঢােলা কোর্তাটিকে তারা “ফেরন” বলে। , ক্রেক ডাউন তুলে নেয়ার পর এলাকার নারী পুরুষ ও শিশুরা আমাদের ঘিরে ধরে। মহিলারা নিজ নিজ বাড়ি থেকে নানা রকমের মুখরােচক পিঠা নাড়ু, ইত্যাদি আমাদের জন্য নিয়ে আসে । এখান থেকে বিদায় নেয়ার সময় গ্রামের সকল লােক এসে মােবারকবাদ জানিয়ে আমাদের হেফাজতের জন্য দু'আ করে। আমরা এখান থেকে সােজা শ্রীনগর পৌছে কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ মনছুরের সাথে মিলিত হই। কমাণ্ডার সাহেবের পায়ের ব্যথা বেশী হওয়ার কারণে একাধারে তাকে বিশদিন একটি ঘরে থাকতে হয়। সাবের ভাইর হাত বরফে জ্বলে গেছে, সে এখনও ঠাণ্ডা পানি ধরতে পারে না। আমি নিজেও একমাস ধরে বিছানায় পড়ে ছিলাম। ডাক্তাররা বললেন, আমার পা কেটে ফেলতে হবে। আমি পা কাটাতে রাজী হলাম না।
ভালাে হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করতে থাকি হে আল্লাহ! আমি এখানে এসেছি তােমার পথে জিহাদ করে মজলুম কাশ্মিরী ও মা-বােনদের ইজ্জত বাঁচাতে। পা কেটে ফেলে জিহাদ করব কি করে । তুমি আমার পা ভালাে করে দাও। আমি এক মুজাহিদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তারা আমার যে খেদমত করেছে তার ঋণ কোন দিনই কিছু দিয়ে শােধ করা যাবে না। যদি আমি নিজের ঘরেও থাকতাম, তাহলেও এমন খেদমত পেতাম কিনা সন্দেহ। আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তারা দিনে কয়েকবার লেবুর পানি দিয়ে আমার পা ধুইয়ে দিত। আর যখন যা প্রয়ােজন হত সাথে সাথে তা উপস্থিত করত। আমার মনে হয়, ওই লােকদের এখলাস ও খেদমতের বিনিময় আল্লাহ আমার পাটা - সম্পূর্ণ ভালাে করে দিয়েছেন। কমাণ্ডার নাসরুল্লাহর পায়ের যখম মােটামুটি ভালাে হওয়ার পর পুরনাে মুজাহিদদের একত্রিত করে পরামর্শ করলেন। এখান থেকে আমরা অন্য যায়গায় চলে গেলাম । পুরাতন ট্রেনিং সেন্টারের যায়গা পরিবর্তন করে জেডা জিলার সুউচ্চ পবর্তমালার পাদদেশে নতুন ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হল।
কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ জীবনের এক লম্বা সময় যুদ্ধের ময়দানে অতিবাহিত করেছেন। যুদ্ধ তার কাছে ছেলা খেলার মত। তিনি প্রায়ই বলেন, “আমরা খেলা মনে করে লড়াই করি ঘূর্ণিঝড়ের তরঙ্গের সাথে।” সকাল সন্ধ্যা ভারতীয় সৈন্যদের রাস্তায় অবাধ চলা-ফেরা ও বাজারে তাদের নিঃশ্চিন্ত ঘােরা ঘােরি করতে দেখে তার রক্তে আগুন জ্বলে উঠে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুশমনের রক্তে হােলি খেলার জন্য তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠে। তিনি সকল সন্ধা ঘুরে ঘুরে এলাকা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। অভিজ্ঞ সাথীদের একত্রিত করে রােজই পরামর্শ করতে থাকেন। অবশেষে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হল। আমাদের অপেক্ষার দিন শেষ হয়ে এলাে। স্থির হল, যেহেতু এখানকার সকলে আমাদের আফগান মুজাহিদ বলে জানে, সেহেতু প্রথম হামলায়ই সফল হয়ে তাদেরকে আরাে আশান্বিত করে তুলতে হবে। ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করতে হবে। যেন তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার সাহস না পায়। অভিজ্ঞ মুজাহিদদের সাথে পরামর্শ ও কয়েক দিন একাধারে খবরা-খবর নেয়ার পর কাজীগুণ্ড ও টুল পােষ্টের মধ্যবর্তী রাস্তায় টহলদার সৈন্যদের উপর হামলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলাে। প্রতিদিন বাইশজন সৈন্য জাতীয় সড়ক হেফাজতের জন্য এই পথে টহল দিত। অতি ভােরে আমরা রাস্তার কিনারায় মাের্চা বানিয়ে ওঁত পেতে বসে গেলাম। আমরা মােট বারজন মুজাহিদ দুই গ্রুপে সমান বিভক্ত হয়ে পজিশন নিয়ে দুই যায়গায় বসে রইলাম। মাের্চায় পৌছার পূর্বে কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ মনছুর কয়েকবার ঘার লাগিয়ে হামলা করার কৌশল রপ্ত করেন। আমরা সকলে নিজ নিজ অবস্থানে বসে শিকারের অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি ছিলাম দ্বিতীয় গ্রুপে।
১৯৯৩ সনের ৩০শে জানুয়ারী। রাস্তার আশে পাশে হালকা বরফ জমে আছে। সূর্যোদয়ের পর একজন মেজরের নেতৃত্বে ছয় জন সৈন্যের প্রথম ট্রলিটা সামনের দিকে অগ্রসর হয় । সবার সামনের মাের্চায় ছিল মুজাহিদ মুহাম্মাদ খালেদ। কমাণ্ডার তাকে আগে ভাগে গুলী ছুরতে নিষেধ করেছেন। তাকে বলে রেখেছেন,দুশমনরা পুরােপুরি রেঞ্জের মধ্যে পৌছে গেলে আমি সম্মুখ থেকে প্রথমে গুলী করব। এরপর তুমি পিছন থেকে গুলী চালাবে, যাতে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে। যখন সৈন্যরা মুজাহিদদের একদম কাছে পৌছে যায় তখন একজন সৈন্য মেওরকে থামিয়ে বলে, স্যার বরফের উপর পায়ের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। সাবধানে চলা উচিত, কোন দুষ্কৃতিকারী ওঁত পেতে থাকতে পারে। মেজর তার অধিনস্ত সাধারণ সিপাহীর কথায় কর্ণপাত না করে বললাে, “এখানে কোন দুষ্কৃতিকারী আসার হিম্মত করে না, এখানে কোন ভয় নেই।” এরা তখন পুরাপুরি আমাদের রেঞ্জের মধ্যে এসে গিয়েছিল। পায়ের নিশানা দেখে ফিরে যেতে চাইলে ও তাদের শেষ রক্ষা হত না।
মেজর সবার প্রথমে, তার পেছনে একই লাইনে বাকি পাঁচজন সৈন্য অগ্রসর হচ্ছে। তারা নিশ্চিন্ত মনে হেটে কমাণ্ডার নাসরুল্লাহর সামনে গিয়ে পৌছলেই তিনি উচ্চ কণ্ঠে 'হর্ট' বলে উঠলেন। মেজর যেন কিছুই বুঝতে পারলাে না। সে চলতে লাগলাে। এবার কমাণ্ডার আরও জোরে ‘হর্ট' বলে উঠলেন। তার প্রচন্ড গর্জন পাহাড়ের চুড়ায় প্রতিধ্বনি হয়ে সারা উপত্যকা জুড়ে অনুরণিত হচ্ছিলাে। এবার মেজরের টনক নড়ে। সে নিজের ক্লাসিকভ বােল্ড করে নাসরুল্লাহর প্রতি গুলী বর্ষনের চেষ্টা করে। নাসরুল্লাহর ক্লাসিনকভ পূর্বে থেকেই প্রস্তুত। ট্রিগারে আংগুলটা দিয়ে একটু চাপ দিতে যা সময়। সামান্য আঙ্গুলের স্পর্শ পেতেই ঝাকে ঝাকে গুলী বেরিয়ে মেজরকে ঝাঝরা করে দিয়ে যায়। কমাণ্ডারের অস্ত্র গর্জে উঠতেই বাকী পাঁচ মুজাহিদের ক্লাশিনকভ থেকে অগণিত গুলী বের হতে থাকে। দেখতে না দেখতে ছয়জন ভারতীয় সৈন্য ধুলায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো। মুজাহিদরা “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি দিয়ে রাস্তায় নেমে এসে সৈন্যদের অস্ত্র, ক্যাপ ও ব্যাজ নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। অনভিজ্ঞ বেয়াকুব মেজর তার অধিনস্ত জোয়ানগুলােসহ জাহান্নামে নিক্ষেপিত হলাে। অপর দিকে মুজাহিদদের কোনই ক্ষতি হলাে ন। উপরন্তু গনীমতে বেশ কিছু আধুনিক অস্ত্র মুজাহিদদের হস্তগত হয়। টহলদার বাকী ষােলজন সৈন্য জীপে করে টুল পােষ্টে গিয়েছিল।
যাবার সময় তারা জীপ থেকে ঐ সৈন্যদের পথে নামিয়ে দিয়ে যায়। এদের পরিণতি সম্পর্কে ঐ সৈন্যরা কিছুই জানে না। যেখানে সৈন্যদের নামিয়ে দিয়েছিল ডিউটি শেষে তাদের তুলে নিবার জন্য জীপগুলি এসে ঠিক সেইখানে দাড়ায়। জীপের স্ট্রার্ড বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের অস্ত্রগুলাে আবার গর্জে উঠে। গােলাগুলির শব্দ শুনে ড্রাইভাররা দ্রুত গাড়ী চালিয়ে পালিয়ে গেল। আমাদের গুলিতে তিনজন সৈন্য নিহত ও তেরজন আহত হয়।মােট নয়জন নিহত ও তেরজন আহত হওয়ায় এলাকার সৈন্যরা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। তারা রাস্তায় টহল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এলাকার কোন গ্রামে ক্রেক ডাউন করা থেকেও বিরত থাকে। এলাকার সৈন্য প্রধান একজন অসামরিক লােকের মারফত নাসরুল্লাহ মনছুরের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে সে লিখে “আপনারা আমাদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থেকে অন্য জায়গায় কাজ করুন, আমরা আপনাদেরকে কিছুই বলবাে না।” কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ মনছুর তার জবাবে লিখেছেন, “এত তাড়াতাড়ি হিম্মত হারানাে ঠিক নয়, আসল খেলাতো শুরুই হয়নি। বাহাদুর মুজাহিদরা আকাঙ্ক্ষা করে, তারা তাদের দুশমনদের সাথে সামনাসামনী যুদ্ধ করবে। যদি আপনারা কাশ্মীর ছেড়ে চলে যান তবে অন্ততঃ কাশীর প্রশ্নে আমরা আপনাদের প্রতি একটি গুলীও ছাড়ব না।” হামলার পর কমাণ্ডার সকল মুজাহিদকে একত্রিত করে সুশৃঙ্খল ভাবে আক্রমন পরিচালনার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানালেন।
তিনি আরও বললেন, “আমরা যখনই কোন আক্রমণের প্রােগ্রাম তৈরী করি সর্ব প্রথম এই চিন্তা করি, যদি বিজয় লাভ করতে না পারি তবে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিব। এই ধরনের চিন্তা করাটাও একরকম দুর্বলতা। এই ধরনের চিন্তা খুব বেশী ফলদায়ক হয় না। আমরা যদি তারিক বিন যিয়াদের মত গাজী নয় শাহাদাতের তামান্না নিয়ে আক্রমণ করি, তবে অতি স্বল্প সংখ্যা ও সাধারণ অস্ত্র-সস্ত্র নিয়েও আমরা দুশমনের বড় বড় ঘাটির উপর বিজয় লাভ করব। আমাদেরকে দুশমনের সাথে এই আকাক্ষা নিয়ে লড়তে হবে যে, তাদের প্রত্যেককে খতম করে তবে আমরা ক্ষান্ত হবে। তাহলে আর আমাদের মনে আশ্রয় নেয়ার চিন্তা স্থান পাবে না। নিরাপদ যায়গার জন্য চিন্তা করতে হবে না। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আমাদের আক্রমণের ফলে সাধারণ মুসলমানদের কোন ক্ষতি না হয়। আমরা কোন গ্রাম বা বস্তি থেকে সৈন্যদের উপর আক্রমণ চালাব না। এতে সৈন্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ মানুষের উপর প্রতিশোধ নিবে। আমরা আক্রমনের পর কোন মহল্লায়ও আশ্রয় নিব না। এতে ক্রেক ডাউন বসানাের ফলে এলাকাবাসীর উপর চরম দুর্যোগ নেমে আসে। তার চেয়ে আমরা সৈন্যদের পাহাড়, জংগলে ব্যতিব্যস্ত করব। যুদ্ধ এখন শহর ছেড়ে ময়দানে হবে। যদি শহরের কোন বাংকারে আমাদের আক্রমণ চালাতে হয় তবে এমন ভাবে পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে, যাতে ব্রাস ফায়ারে একটি সাধারণ লোকও গুলীবিদ্ধ না হয় । কমাণ্ডার আফগান জিহাদের উদারহণ দিয়ে পাহাড় ও ময়দানের জিহাদের কৌশল সম্পর্কে আলােচনা করতে থাকেন। তিনি আমাদের বলেন, বিজয়ের পর কেউ যেন গর্বিত না হয়। আমাদের বিজয় মহান আল্লাহর খাছ রহমতের জন্য হয় ।
অতএব যত বিজয় আসবে তত বেশী করে তার শুকুর আদায় করবে। শেষ রাতে সেজদায় লুটিয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করবে। মুসলমানদের কামিয়াবি ও বিজয় একমাত্র আল্লাহর সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। অর্থ, শক্তি ও সম্পদে সােভিয়েত কারাে থেকে পিছনে ছিল না, কিন্তু আজ তার অবস্থা কত করুন - অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন দায় । তিনি ভারতীয় সৈন্য ও মুজাহিদদের সাথে তুলনা করে বলেন, ছয়লাখ ভারতীয় সৈন্যের মােকাবেলায় অল্প কিছু মুজাহিদ কোনই গুরুত্ব রাখে না। তাদের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের মোকাবেলায় আমাদের কয়েকটি গুলী কিইবা করতে পারে। তাদের মাটির নিচের পাকা বাংকার আর আমরা খােলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে আছি। আমাদের তাে কোন - অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। আসলে পার্থিব শক্তি ওজন করার জায়গা এটা নয়। এটা হলাে পার্থিব শক্তির সাথে ইমানী শক্তির সরাসরি মােকাবেলা। এক পক্ষে ছত্রিশ কোটি দেবতার পূজারী আর তাদের মােকাবেলায় দাড়িয়েছে এক আল্লাহর উপর অটুট ঈমানদার মুসলমানরা। দুনিয়ার সব শক্তির মালিক রব্বে জুলজালাল যখন তার সহযােগিতা আমাদের সাথে হবে তখন দুনিয়ার কোন শক্তি আমাদের মােকবেলায় টিকতে পারবে না । আমরা কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের জন্য লড়াই করছি না।
আমাদের লক্ষ্য সমগ্র বিশ্বের উপর আল্লাহর দ্বীনকে বিজয় করা। আমরা শুধু কাশ্মীরকে স্বাধীনকরে ক্ষান্ত হব না। গজনভীর দেশ থেকে বের হওয়া এই কাফেলা ক্রমে সােমনাথের দিকে অগ্রসর হবে। আমরা আবার হিন্দুদের স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, সুলতান মাহমুদের রক্ত তার সন্তানদের শিরায় শিরায় প্রবাহিত রয়েছে। কাশ্মীরের এই লড়াই ভারত আযাদীর লড়াই। স্বাধীন কাশ্মীর হলাে স্বাধীন ভারতের সূচনা মাত্র। হিন্দুস্তান মুসলমানদের দেশ। এদেশ শাসন করার অধিকার একমাত্র মুসলমানদেরই আছে। মুসলমান কখনও হিন্দুদের মত সাম্প্রদায়িক মন নিয়ে শাসন করেনি করবেও না। বরং মুসলমানদের শাসনে সকল ধর্ম ও মতের জনতা নিজ সন্তানের মত পালিত হয়েছে। জাত পাতের ভেদাভেদ করে কারও উপর সামান্য অবিচার করা হয়নি। মুসলিম শাসনামলে বিধর্মীদের সাথে এমন উত্তম ব্যবহার করা হয়েছে যে, আজকের সভ্যতার দাবীদার ইউরােপ, আমেরিকাও তার কোন নজীর পেশ করতে পারবে না।” (চলবে)
অনুবাদঃ মনজুর হাসান
*****