JustPaste.it

UM-10-sirij guptohatta

um10.jpg

সিরিজ গুপ্তহত্যা:

উলামায়ে উম্মত যখন লক্ষ্যস্থল,

কারণ ও ফলাফল এবং সময়ের কিছু দাবি

 

মৌলভী সুহাইল আহমদ আল আফগানি

 

(উম্মাতুন ওয়াহিদাহ ম্যাগাজিনের ১ম সংখ্যা থেকে অনূদিত)

 

 

 

 

 

 

 

কোরআনে কারিমের একটি মহিমান্বিত আয়াত নিয়ে আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করেছি।সূরা আলে-ইমরানের আয়াতটি যখন-ই আমার সামনে এসেছে, তখন-ই তা আমার আবেগঅনুভূতিকে নাড়া দিয়েছে। আমি কল্পনার তুলিতে বাস্তব জগতেরভিত্তিতে তার শৈল্পিকচিত্র আঁকতে চেষ্টা করেছি। ‘রিব্বি’দের আলোচনা শীর্ষক আয়াতটি হলো-


وَكَأَيِّن مِّن نَّبِىٍّ قَٰتَلَ مَعَهُۥ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا۟ لِمَآ أَصَابَهُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا۟ وَمَا ٱسْتَكَانُوا۟ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلصَّٰبِرِينَ۝ وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّآ أَن قَالُوا۟ رَبَّنَا ٱغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِىٓ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَٱنصُرْنَا عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَٰفِرِينَ۝ فََاٰتىٰهُمُ ٱللَّهُ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ ٱلْءَاخِرَةِ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ۝

‘আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের অনুবর্তী হয়ে বহু রিব্বি জিহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেওযায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকেভালবাসেন। তারা আর কিছুই বলেনি- শুধু বলেছে, হে আমাদের পালনকর্তা! মোচন করেদাও আমাদের পাপ এবং যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে আমাদের কাজে। আর আমাদেরকেদৃঢ় রাখ এবং কাফেরদের উপর আমাদেরকে সাহায্য কর। অতঃপর আল্লাহ তাঁদেরকেদুনিয়ার সওয়াব দান করেছেন এবং যথার্থ আখিরাতের সওয়াব। আর যারা সৎকর্মশীলআল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন’। [সূরা আলে-ইমরান,৩:১৪৬-১৪৮]

 

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাএই সংবাদ দিচ্ছেন যে, তাঁর প্রেরিত নবীদের মাঝে অনেকেই নিহত হয়েছেন এবংতাঁদের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অনেক অনুসারীও হত্যার শিকার হয়েছেন। তাঁদেরমধ্যে যারা অবশিষ্ট ছিলেন তাঁরা আল্লাহর পথে এই বিপদের কারণে ভীত হয়েযাননি এবং দুর্বলও হয়ে পড়েননি। তাঁরা হেরেও যাননি এবং নিহত হবার সময়হীনমন্যতার পরিচয়ও দেননি। কোনো প্রকার দুর্বলতা তাঁদেরকে স্পর্শ করতেপারেনি; বরং তাঁরা দৃঢ়তা, সুউচ্চ মনোবল ও উৎসাহের সঙ্গে শাহাদাতের সুধাপান করেছেন। তাঁরা লাঞ্ছিত অপদস্থ হয়ে পিছু হটতে গিয়ে শাহাদাত বরণকরেননি। তাঁরা সম্মান ও গৌরবের পাখায় ভর করে, পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করেউৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে শাহাদাত আলিঙ্গন করেছেন’। (যাদুল মাআদ: ৩/২২৫)

এই আয়াতের অংশ বিশেষের পঠন-রীতি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এক কিরাত অনুযায়ী- قاتل معه ربيون আবার আরেক কিরাত অনুযায়ী- এই মতপার্থক্যেরউপর ভিত্তি করে উলামায়ে কেরাম উক্ত আয়াতের বিভিন্ন রকম অর্থ করেছেন। এক নজরেসেগুলো হচ্ছে-

‘কত নবী এমন আছেন যারা যুদ্ধের ময়দানে নিহত হয়েছেন এবংতাঁদের সঙ্গে অনেক আল্লাহ ওয়ালা অনুসারী নিহত হয়েছেন! তাঁদের মধ্যে যারাবেঁচে গেছেন তাঁরা দৃঢ়পদ থেকেছেন। তাঁরা হেরে যাননি, ক্লান্তও হননি; বরংনিজেদের ভাইদের আদর্শের প্রতি তাঁরা অবিচল ছিলেন’।

কেউ কেউ এভাবে অর্থকরেছেন- ‘কত নবী এমন রয়েছেন যারা নিজেরা সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন আরতাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে গিয়ে অনেক আল্লাহ ওয়ালা নিহত হয়েছেন। তখন নবীনিজে এবং তাঁর অবশিষ্ট মুমিন অনুসারীরা ধৈর্য ধারণ করেছেন’।

কেউ আবারএভাবে অর্থ করেছেন- ‘কত নবী এমন আছেন যারা নিহত হয়েছেন এবং তাঁদের সঙ্গেথেকে কত আল্লাহ ওয়ালা যুদ্ধ করেছেন! নবীর নিহত হওয়ার সংবাদ তাঁরঅনুসারীদের মাঝে প্রভাব ফেলেনি এবং তাঁরা এতে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি’।

আয়াতের অর্থ নিয়ে মুফাসসিরে কেরামের এই মতপার্থক্যসত্ত্বেওআয়াতেরনির্দেশনাগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার পর অন্তত একটি বিষয়ে তাঁরাকোনমতপার্থক্য করেননি। বিষয়টি হচ্ছে- আল্লাহওয়ালাদের সেই বিরাটদলটিঅধিকহারে নবীদের বাহিনীতে এবং তাঁদের জিহাদী জামায়াতের সঙ্গেযুক্ত হয়েছিলেন! আল্লাহ ওয়ালাদের সেই সংখ্যা নগণ্য ছিল না; বরং তাঁরাছিলেন বিপুল সংখ্যক। যাই হোক, এখানে রিব্বি তথা আল্লাহ ওয়ালা দ্বারাউদ্দেশ্য হলো, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মুজাহিদ ওলামা ও লড়াইকারী ফুক্বাহায়েকেরাম। শেষোক্ত এই মতটি পছন্দ করেছেন সাইয়্যেদুনা ইবনে আব্বাসরাদিয়াল্লাহু আনহু! অভিমতটি বিশুদ্ধ সূত্রে তাঁর থেকেবর্ণিত এবং অধিকাংশ মুফাসসিরের মত এটিই।

এরপর আমরা তাকাতে পারি আল্লাহওয়ালাদের ঐ সব জামাতের বেঁচে যাওয়া লোকদের অবিচলতার দিকে, যারা তাঁদেরনবীগণ ও সঙ্গী-সাথীদের বড় একটা অংশ নিহত হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেননি। আমরা চিন্তা করে দেখতে পারি, সংগ্রামী দলগুলোকে আদর্শেরউপর টিকিয়ে রাখতে, মনোবল না হারাতে, মন থেকে ভয়-ভীতি ও হীনমন্যতা ঝেড়েফেলতে এবং ধৈর্যধারণের জন্য তাদের মনকে প্রস্তুত করতে তাঁরা কতটা অবদানরেখেছেন! নিজেদের জন্য আল্লাহর ভালবাসার বরাদ্দ নিশ্চিত করতে তাঁরা কিরূপপদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন! তাঁরা নিজেরা কিরূপে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন এবংসবর করতে গিয়ে কোন সব দোয়া কালাম তারা পাঠ করেছেন? সেসব দোয়া কালামেরমাঝে কেমন করে তাঁদের বিনয়, সদিচ্ছা, একনিষ্ঠতা ও শত্রুর ব্যাপারেনির্ভীকতা ফুটে উঠেছিল? আমরা বলতে চাই, নিঃসন্দেহে এসব ছিল আল্লাহসুবহানাহুওয়াতায়ালার পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ সাহায্য। আর আল্লাহর কাছে সঞ্চিতরয়েছে তাঁদের জন্য উত্তম প্রতিদান। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের ওয়াদা, তিনিতাঁদেরকে নিজের পুণ্যবান অলিদের অন্তর্ভুক্ত করবেন।

কোরআনের আলোকে লিখিত উপরোক্ত ভূমিকার পর আমি ঈমান ও কুফরের মাঝে চলমানলড়াইয়ের বর্তমান বাস্তবতার দিকে সকলকে নিয়ে যেতে চাই। আসলে এ সংক্রান্তআলোচনার গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়ের তাৎপর্য তুলে ধরাই আমার উদ্দেশ্য।গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়টি হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহর এক শ্রেণীর উলামায়েকেরামকে টার্গেট করে সিরিজ গুপ্তহত্যাচালানোহচ্ছে, যারা সমকালীন জিহাদেরএকনিষ্ঠ সমর্থক। কোন লক্ষ্যে এবং কোন পন্থায় কাজগুলো করা হয়, এগুলোর কারণ ওফলাফল কী, আর এগুলোর প্রতিকারে সময়ের দাবিগুলোই বা-কী,এ বিষয়গুলো জানার এখনসময় এসেছে।

বর্তমানে লেখালেখির অঙ্গনে এবং রাজনীতি বিশ্লেষক মহলে যাদেরকেই দেখেছিআফগানিস্তানে জিহাদী আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাঁদের প্রায়সকলেই এই সাফল্যের পেছনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার তাওফিকের পর আফগানেরআল্লাহওয়ালা উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব পালনের অবদান স্বীকার করেছেন।অপরাপর মুসলিম দেশগুলোর ওপর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী হামলার ধারাবাহিকতায়এতদঞ্চলে পশ্চিমাদের মনস্তাত্ত্বিক ও সামরিক আগ্রাসনের মুখে আলেমগণ যেভাবেবুক টান করে দাঁড়িয়ে গেছেন সেটাকে তারা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। এসমস্ত আলেম যেমন আছেন আফগানিস্তানে তেমনি আছেন এর বাইরেও।

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে বড় বড় যত ইসলামিকসশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে,যত রকম ইসলামী জিহাদীআন্দোলনের অভ্যুদয় ঘটেছে, সবগুলোর ব্যাপারেই এটা সত্য যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দেওয়া তাওফিকের পর এ সমস্ত মুসলিম বাহিনীর প্রথম সারিতেআল্লাহওয়ালা উলামায়ে কেরামের উপস্থিতি না থাকলে কোন আন্দোলনই প্রতিষ্ঠা ওস্থায়িত্ব পেত না। আলেমগণ দিকনির্দেশনা ও সঠিক পথ প্রদর্শনের মাধ্যমেএগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রাচীন ওআধুনিক ক্রুসেডাররা খুব ভালোভাবেই এটি বুঝতে পেরেছে। আর ন্যায়-ইনসাফ ও ভারসাম্যের মাপকাঠিতেজিহাদী কার্যক্রমকে পরিচালিত করতে হলে উলামায়ে কেরামের সামরিক অংশগ্রহণএবং জিহাদী দলগুলোকে শরীয়ত ও চিন্তাক্ষেত্রে উপযুক্ত নেতৃত্ব দানের কোনোবিকল্প নেই। একইভাবে, এই ময়দানে তাঁদের দোয়া ও কান্নাকাটি এবং অন্যদেরমনোবল ও প্রত্যয় জাগ্রত করার ভার তাঁদেরগ্রহণ করা খুবই জরুরী বিষয়।

গৌরবের অধিকারী উলামায়ে আফগান ও দৃঢ়চেতা আফগান জাতির মাঝে জাতিগতমর্যাদাবোধ ও হিম্মত থাকাটা চলমানজিহাদী কার্যক্রম সফল হওয়ার প্রাথমিক নিয়ামক শক্তি। আর এ কারণেই শত্রু,গৌরবময় এই জাতির উলামায়ে কেরামকে লক্ষ্যস্থল বানানো ছাড়া আর কোনো উপায়দেখল না। তারা এই নীতিগ্রহণ করেছে যে, উম্মতে মুসলিমার বড় বড় আলিম ও বিশ্বস্ত মাশায়েখে কেরাম,যারা সমকালীন আফগান জিহাদকে সঠিক মানদণ্ডে পরিচালিত করার জন্য নেতৃত্বদিয়ে আসছেন; তাদেরকে লক্ষ্যস্থল বানানো। তাদের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক অপরাধগুলোর মধ্যে এটা একটি।

মুজাহিদদেরকে উপর্যুপরি হামলা ওআক্রমণের শিকার বানানোর পর সর্বশেষে বিশ্বাসঘাতক ও খেয়ানতকারীদের কালো হাতযাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করেছে, তাঁদের মধ্যে আছেন ফজিলাতুশ শায়খ আল্লামামুহাদ্দিস শহীদ-বিইযনিল্লাহ মাওলানা সামিউল হক হক্কানী রহিমাহুল্লাহ। তিনিদারুল উলুম হাক্কানিয়া মাদরাসার মুহতামিম। মাদরাসাটি মুসলিম বিশ্বেপ্রথম সারির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। শয়তানের দোসররা পুণ্যবান, মুহাদ্দিস, অশীতিপর বয়োবৃদ্ধ এই আলিমকে ১৪৪০ হিজরি সনের সফর মাসের ২৩ তারিখ জুমার দিনআসরের সময় পরপারে বিদায় করে দেয়—ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিরাজিউন!

আফগান ও পাকিস্তানের ভূমিতে উলামায়ে ইসলামের প্রসিদ্ধ আলেমদের এভাবেই বিশ্বাসঘাতকতা করে হত্যা করা তাদের এবারই প্রথম নয়।বরং তারা ইতিপূর্বে শায়খ আল্লামা মুহাদ্দিস শহীদ-বিইযনিল্লাহ মুফতি নিজামউদ্দিন শামযায়ী এবং শায়খ আল্লামা মুহাদ্দিস আল মুসনাদ মাওলানা হাসান আলমাদানী তাকাব্বালাহুমুল্লাহ্- উভয়কে শায়খ সামিউল হক রহিমাহুল্লাহর মতইপ্রতারণামূলকভাবে হত্যা করে।এমনই আরও অনেকে রয়েছেন যারা ক্রুসেডারও মুরতাদগোষ্ঠীর কারাগারেরঅভ্যন্তরে নিহত হয়েছেন।

ইমারতে ইসলামিয়ার পতন ঘটাতে ক্রুসেডার সেনাবাহিনীআফগানিস্তানে প্রবেশ করারপর এমনই অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেসবহত্যাকাণ্ডের শিকার আলেমদের মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন: শায়খ ফকীহমুজাহিদ উস্তায মুহাম্মদ ইয়াসির আলওয়ারদাকী, শায়খ মুহাদ্দিস শহীদ নসিবখান আলওয়াযিরী, আল্লামা ফকীহ মুফাসসির অলিউল্লাহ আল কাবুলগারামি এবং শায়খমুফাসসির সুলতান আরিফ সোয়াতী। তাকাব্বালাহুমুল্লাহ্!

আফগানিস্তানেরনুরিস্তান প্রদেশে আমি স্বচক্ষে দেখেছি, শায়খ মুহাদ্দিসমুফাসসির আল্লামা মুহাম্মদ নুরিস্তানীকে ড্রোন বিমান থেকে ছয়টি হিল ফায়ারক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে আমেরিকা কিরূপে কাপুরুষোচিত হামলা করে শহিদ করেদিল! সেসময় তিনি মুজাহিদ ভাইদের একটি মজলিসে তাফসির করছিলেন। হামলায় শায়খেরদেহ পুরো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ষাটোর্ধ বয়োবৃদ্ধ এই শায়খের বার্ধক্য ওশারীরিক দুর্বলতার ওপর এতটুকু মায়া হয়নি পাষণ্ডদের। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন!

তারা এমন এক শুভ্রকেশ বিশিষ্ট ভদ্রলোককে শেষ করে দিল যার কপালে আঁকাছিল সেজদার চিহ্ন। যিনি তাসবীহ কোরআন পাঠের মধ্য দিয়ে রাত কাটাতেন।পিতৃতুল্য আল্লামা মাওলানা সামিউল হক ছিলেন প্রকৃত অর্থেই একজন স্নেহশীলপিতা ও আদর্শ শিক্ষক। আফগান মুজাহিদদের সবচেয়ে বড় সমর্থকদের একজন ছিলেনতিনি; যেমনটি ছিলেন মুফতি নিজাম উদ্দিন শামযায়ী (আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরউভয়কে কবুল করুন)।

তাঁরা উভয়ই ছিলেন শায়খ মুজাহিদ শহীদ উসামা বিন লাদেনতাকাব্বাল্লাহুর একান্ত প্রিয়ভাজন, ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। উভয়ইকান্দাহারে শায়খের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হতেন। সবসময়ই তাঁদের মাঝে পত্রমারফত যোগাযোগ এবং কুশল বিনিময় অব্যাহত ছিল। শায়খ সামিউল হক গর্বকরতেন যে, তাঁর একেকবারের কান্দাহার সফরে শায়খ উসামা খাওয়ার আগে পরেতাঁকে হাত ধোয়ানোর জন্য নিজে পানি ঢেলে দিতেন। অতএব, আমরা আল্লাহ তায়ালারকাছে কামনা করি, তিনি যেন পুণ্যবান এসব লোকের মেহনতকে কবুল করেন এবং নিজরহমতের সুবিস্তৃত চাদর দিয়ে তাঁদেরকে জড়িয়ে নেন! নিশ্চয়ই তিনি এ কাজেরতত্ত্বাবধায়ক এবং এ বিষয়ে পূর্ণ শক্তিমান।

কলমের কালি শুকিয়ে লেখা বন্ধ হবার আগেই সময়ের কিছু দাবি আমি পেশ করতে চাই। এবার তাহলে সে দিকে যাওয়া যাক।

‘রিব্বি’-দের আয়াতের কাঠামোগত এমন অনেক নিগূঢ় অর্থ আমেরিকা ও তাঁর থিংকট্যাংকগোষ্ঠী বুঝতে পেরেছে, যেগুলো অনেক মুসলমানও উপলব্ধি করতে সক্ষমহননি। তারা (আমেরিকানরা) এই আয়াতের প্রকৃত বাস্তবতা এবং এই আয়াতে উল্লেখিত পরিণতিরসঙ্গে ইলম ও আমলের বেষ্টনীতে ঘেরা ঈমানের যে সেতুবন্ধন রয়েছে, সেটাআবিষ্কার করতে পেরেছে। এ কারণেই জিহাদ ও মুজাহিদদের সমর্থক উলামায়েউম্মাহকে টার্গেট করে একের পর এক শহীদ করে দিতে তারা কোন কসুর করেনি।মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামী সভ্যতার উপর তাদের অন্যায় আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে একাজগুলো তারা রুটিন মাফিক সম্পাদন করে চলেছে।

এ কারণেই এই সময়ে জিহাদিসচেতনতা হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো, কোরআন সুন্নাহর আলোকে রিব্বিদের জামাততৈরিতে পূর্ণ মনোনিবেশ করা।তাঁদের উৎসমূল সংরক্ষণ করা এবং তাঁদেরকে পূর্ণনিরাপত্তা দেওয়া। এভাবে তাঁদের পূর্ণতাপ্রাপ্তির পর মুজাহিদ দলগুলোর প্রথমসারিতে অধিকহারে তাঁদেরকে প্রেরণ করা। কারণ গোটা মুসলিম উম্মাহর ওপরতাঁদের বিরাট প্রভাব রয়েছে। পুণ্যবান পূর্বসূরিদের মাঝে যারা গত হয়েগেছেন এবং নিজেদের আদর্শ যারা বিকিয়ে দেননি, তাঁদের মানহাজ ও মতাদর্শেরউপর চলার ক্ষেত্রে এই জামাতের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে।

শায়খ মুজাহিদ শহীদ আবু ইয়াহহিয়াআল-লিবি রহিমাহুল্লাহ বলেন, “এগুলো এমন কিছু বাস্তব ঘটনা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেগুলো আমাদের কাছেবর্ণনা করেছেন। কারণ যুগে যুগে এসব ঘটনার প্রতিচিত্র বার বার ফুটে উঠবে।মহাকালের সুবিশাল ক্যানভাসে এসব দৃশ্য সর্বদাই ভাসমান থাকবে। ঐশী বানীতে বিজয় লাভের কথা এভাবে এসেছেযে, তারাপেয়েছেন‘দুনিয়ার সওয়াব’। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে, জিহাদেরপথে ও সংগ্রামী যাত্রায় মুজাহিদদেরকে কি কি করতে হবে? জানিয়ে দেওয়াহয়েছে, যদি তাঁরা শরীয়ত ও বিশ্বপ্রকৃতির নিয়মাবলীর আলোকে সঠিক পন্থাঅনুসরণ করেন তবে আল্লাহর সাহায্য তাঁদের সন্নিকটে। তাঁদেরকে সান্ত্বনা দেওয়াহয়েছে যে, তাঁদের অবস্থা শত্রুদের মত নয়। শত্রুরা তো প্রতিষ্ঠা লাভেরপ্রশ্নে বস্তুবাদী সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কোনো অপরাধ, অবিচার ওঅন্যায়ের পরোয়া করে না। তারা শক্ত ঈমানের সঙ্গে দুর্বল ঈমানের পার্থক্যবোঝে না। তারা মনে করে না যে, তাদের বাহিনী ও দলের মাঝে অন্যায়-অপরাধের সংঘটন,বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও বেশি সাংঘাতিক, বিনাশী ও বিধ্বংসী।

যারা এইসংক্রান্ত প্রকৃত বাস্তবতা উপলব্ধি করতে না পেরে একে অবহেলা করে এবং এরদিকে মাথা তুলে তাকায় না; বরং বিজয়ের সন্ধান করে কেবলই গুদামভর্তিঅস্ত্রশস্ত্র, বৈষয়িক উন্নত প্রশিক্ষণ, উপযুক্ত কর্মপন্থা ও মেধা ব্যয়এবং গভীর গুপ্তচরবৃত্তির মাঝে, এদিকে কোনো অন্যায়-অপরাধ এবং গুনাহ ওপাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে থাকে বেপরোয়া, আল্লাহর নাফরমানি ওঅবাধ্যতা বর্জনের ব্যাপারে হয় নিঃস্পৃহ, এমন লোকেরা নিজেরা যেমন ধ্বংসেরপথে, তেমনই তারা অন্যদেরও ধ্বংসের কারণ’।

ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রহিমাহুল্লাহ ‘রিব্বি’দের আয়াত প্রসঙ্গে আলোচনাকরতে গিয়ে বলেন, ‘এই আয়াত এবং এর পূর্বের নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহতায়ালা পরাজিত মানসিকতার মুমিনদেরকে তিরস্কারকরেছেন-

أم حسبتم أن تدخلوا الجنة ولما يعلم الله الذين جاهدوا منكم

“তোমরা কি ভেবেছ তোমরা জান্নাতেপ্রবেশ করে ফেলবে অথচ আল্লাহ তায়ালা এখনও দেখেন নি তোমাদের মাঝে কারা জিহাদকরেছে?”

এই তিরস্কারওই সমস্ত লোকের জন্য যারা লড়াই ছেড়ে দিয়ে পরাজিতহয়ে গিয়েছিল, অথবা যারা এক ঘোষণাকারীকে এই ঘোষণা করতে শুনে হাতিয়ার ফেলেদিয়েছিল যে, ‘নিশ্চয়ই মোহাম্মদ নিহত হয়ে গিয়েছে’।

এই আয়াতেআল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের এই পৃষ্ঠপ্রদর্শন ও লড়াই ছেড়ে দেওয়াকেনিন্দা করে একথা বলছেন যে, ‘যদি মুহাম্মাদ মারা যান অথবা নিহত হন, হেমুমিনরা! তবে কি তোমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরেযাবে?’ অতঃপর তিনি তাঁদের সামনে পূর্ববর্তী নবীগণের অনুসারীদের বিরাট অংশেরঅবস্থা তুলে ধরেছেন এবং তাদেরকে বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী নবীগণেরঅনুসারীরা তাঁদের নবী নিহত হলে নবীদের আদর্শের ওপর টিকে থাকার যে দৃষ্টান্তস্থাপন করেছে, তাঁদের মাঝে মর্যাদাবান আহলে এলেমরা যে উদাহরণ পেশ করেছেন, তোমরা কেনো তাঁদের মত সেরকম দৃষ্টান্ত পেশ করতে পারলে না? নবীদের ইন্তেকালেরপরেও আল্লাহর দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নবীদের সঙ্গে থাকাকালীন লড়াইয়েরমতোই তাঁরা যেভাবে লড়াই করে গেছে, তোমরা কেন তাঁদের মত সেভাবে লড়াইচালিয়ে গেলে না?’ (তাফসীরে তাবারী: ৭/২৬৪)

******