JustPaste.it

সোমালিয়া উদ্বাস্তু শিবিরের শতকরা ৯০ জন হাফিজে কুরআন

সাইদুর রহমান

=================================================

 

        আফ্রিকার কালাে মানুষের দেশ সােমালিয়া। দেশটির অধিবাসীর শতকরা একশ জনই মুসলমান। সপ্তম শতাব্দী থেকেই সােমালিয়া ইসলামের সাথে পরিচিতি লাভ করে। তাই এই দেশটির রয়েছে সুদীর্ঘ দিনের ইসলামী ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ইতিহাস। উনবিংশ শতাব্দীতে দেশটির কেন্দ্রীয় মুসলিম শক্তি সম্মিলিত পাশ্চাত্য উপনিবেশন শক্তির কাছে পর্যুদস্ত হয় এবং একে একে দেশটি ইতালি, ফ্রান্স এবং বৃটেনের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ১০০ বছর ধরে সােমালিয়া এসব উপনিবেশ শক্তি কর্তৃক শাসিত হয়। সাম্রাজ্যবাদীরা উপনিবেশ কায়েম করে এদেশের ধন-সম্পদ লুটে নিয়ে যাওয়া এবং শাসন কর্তৃত্ব কুক্ষিগত করতে পারলেও দেশটির জনগণের ধর্ম ইসলামকে কেড়ে নিতে পারেনি। তারা এদেশে পাশ্চাত্যের প্রতিনিধিত্ব করার মত একটা খৃস্টান জনগােষ্ঠী সৃষ্টি করার জন্য খৃস্টান মিশনারীদেরও নিয়ােগ করে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে মিশনারীরা তদের চক্রান্ত সফল করতে পারলেও এ দেশটিতে দীর্ঘ একশ বছর তৎপরতা চালিয়েও তারা সাফল্য পায়নি। সােমালীরা ইসলামের কঠোর অনুসারী বলেই তারা পাত্রীদের এই ঘৃন্য ফাদে পা দেননি।

 

        তাই আজও সে দেশের শতকরা ১০০ জন লােকই মুসলমাম। সামাজ্যবাদীরা দেশটি ছেড়ে যাওয়ার সময় নিজেদের কোন প্রতিনিধি না রেখে যেতে পারলেও তারা স্বার্থপর ও ক্ষমতা লােলুপদের বেছে নেয়। এদের হাতেই ছেড়ে দেয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। পরবর্তিতে এই ক্ষমতা লােলুপদের মধ্যে শুরু হয় অন্তর্দ্বন্দ। পরিণতিতে দেশটি ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর একের পর এক সামরিক অভুত্থান ঘটতে থাকে । অবশেষে ১৯৯১ সালে একনায়ক সাঈদ বারীর পতনের পর দেশে শুরু হয়ে যায় রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ । একই সাথে দেখা দেয় সর্বনাশা দুর্ভিক্ষ। আর এই পরিস্থিতি কাজে লাগায় সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র, শান্তিরক্ষী বাহিনীর ছদ্মবেশে মার্কিনীরা আগ্রাসন চালায় সােমালিয়ায়। টনক নড়ে সােমালিয়ার কালাে মানুষদের। তারা জাতিসংঘের সেবার ঠ্যালায় এবং বন্দুক কামানের ভয়ে এক সময় জঙ্গলে পালালেও বুঝতে পারে, এটা তাদের আত্মরক্ষার পথ নয়। তারা সিংহ বিক্রমে ঘুরে দাঁড়ায়। তাদের মাঝে স্ফুরণ ঘটে ইসলামী চেতনার। এরই ফলশ্রুতিতে তারা বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি মার্কিন বাহিনীকে চরম আঘাত হানে। ধুলােয় মিটিয়ে দেয় তাদের সকল  দম্ভ-অহংকার। হাফ-ফেরাউন ক্লিনটন স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, “সোমালিয়ায় মার্কিন হস্তক্ষেপ ভুল ছিল।

 

        মাত্র চার দিনে এই লড়াকু সেনারা এমন ভেল্কি দেখান যে, তাতে মার্কিনীদের ১৯ জন সেনা প্রাণ হারায়, ৭৮ জন গুরুতর আহত হয়। দুটি হেলিকপ্টার গানশিপ ও দুটি সাজোয়া যান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় কালো মানিকদের সাথে যে আর পারা যাবে না তা বুঝতে পেরে মাকিনীরা সম্মানজনক পন্থায় পলায়নের জন্য ৩১শে মার্চ '৯৪ সাল পর্যন্ত সময় বেধে দেয়। তাদের এই চরম শিক্ষা পাওয়ার জন্য যার অবদান সেই ফারাহ আইদিদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার আক্রমণ বন্ধ করে দেয়। এই অবিস্মরণীয় বিজয়ের ফলে সােমালিয়ায় ঘটেছে ইসলামের অভুতপূর্ব পূনর্জাগরণ। মার্কিনীদের আগমনের সাথে সাথেই সােমালিয়ানরা বুঝতে পেরেছিল যে, তারা আমাদের জন্য কোন সৌভাগ্য বয়ে আনবে না। তাই দেশকে বাঁচানাের জন্য তারা মার্কিনীদের ঠেকাতে ইসলামী চেতনাকে শানিত করে। দেয়ালে দেয়ালে ভরে গেল মার্কিন মহিলা সৈনিকদের বিকিনি পড়া অর্ধনগ্ন ছবির প্যামপ্লেট। নিচে লেখা, “ইসলামী সােমালিয়ায় আমেরিকার উলঙ্গ মহিলা?” - প্রচণ্ড ঘৃণায় ফেটে পড়ল তরুন, যুব সমাজ। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ ও চরম আঘাতকে উপেক্ষা করে তারা চ্যালেঞ্জ করল আমেরিকানদের। মার্কিনী হামলা যতই বাড়তে লাগল ইসলামের প্রতি তাদের আনুগত্যও তত দ্রুত বাড়তে লাগল। ফারাহ আইদিদের বাহিনী লড়াইয়ের ময়দানে ইসলামী উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে তৎপর হল। পবিত্র কুরআন হাতে নিয়ে তারা শপথ করল আমরণ জিহাদের।

 

        তাকবির ধ্বনীর বজ্র গম্ভীর উচ্চারণে প্রকম্পিত করে তুলল রণক্ষেত্র। নির্দেশ জারি হলাে, “কোন মহিলা পর্দা করে না চললে তাকে রেশনের খাবার দেয়া হবে না। খােদ রাজধানী মােগাদিসুতে ব্যভিচারের অপরাধে কয়েকজনকে ইসলামী আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হল। শালীনতা, নৈতিকতা, ধৈৰ্য্য, সহিষ্ণুতা, শৃঙ্খলার অপূর্ব বিকাশ ঘটল জনগণের মধ্যে ! রাজধানী থেকে ৩শ ৫০ কিঃ মিঃ দূরে “লুগ" শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইসলামী প্রশাসন। সেখানে বন্দুক নয় কু'রআন শাসন চালাচ্ছে। ১৯৯২ সালে এখানে কড়াকড়িভাবে ইসলামী আইন চালু করা হয়। এ প্রশাসন জনগণকে ন্যায় ও ইনসাফের পথে চালিত করে তাদের শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে নিয়ে এসেছে। যুদ্ধের শুরু থেকে এখানে, শান্ত অবস্থা বিরাজ করায় বহিরাগত বহু লােক এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে এবং এত শান্ত পরিস্থিতি দেখে তারা বিস্মিত হয়েছে। এটাই এখন একমাত্র সােমালী নগরী যেখানে কোন বন্দুকের শব্দ নেই। যুদ্ধের শুরু থেকে এখানে একমাত্র একজন লােক দুর্ঘটনা বশত আহত হয়েছে । এছাড়া আর কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে এ শহরে মদ ও ধুমপান নিষিদ্ধ।

 

        সােমালীয়ার মুসলমানরা পূর্ব থেকেই কতখানি ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারী তা’ এ ঘটনার মাধ্যমে বােঝা যায়। দুর্ভিক্ষ ও গৃহযুদ্ধের কারণে হাজার হাজার সােমালী উদ্বাস্তু হয়ে প্রতিবেশী কেনিয়ায় আশ্রয় নেয়। কেনিয়ার মনীউ শহরে ৭০ হাজার উদ্বাস্তের একটা শিবির। আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায় যে, এ উদ্বাস্তু শিবিরের শতকরা ৯০ জন মুসলমানই কুরআনের হাফেজ। দুনিয়ার কোন স্থানে এত কুরআনের হাফেজ থাকা সত্যিই দুর্লভ। তারা উদ্বাস্তু জীবন যাপন করলেও এবং খাদ্য বাসস্থানের চরম সংকটে পতিত হলেও ইসলামের সাথে তাদের সম্পর্কের কোন ছেদ পরেনি। তারা লতা-পাতা, ঘাষ, খড় কুটা দ্বারা মসজিদ, মাদ্রাসা বানিয়ে নিয়েছে। কাগজ না মিললে কি হবে, কাঠের টুকরা ও গাছের ছালের ওপর কুরানের আয়াত লিখে বাচ্চাদের মুখস্থ করাচ্ছে। দিনের বেলায় জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে এনে রাতের বেলায় তা জ্বালিয়ে আলাের ব্যবস্থা করা হয়। আর এই আলােতে চলে নৈশ স্কুলের লেখা পড়া । এভাবেই দারিদ্র, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মােকাবিলা করে সােমালিয়ান মুসলমানরা দৃপ্ত পদে এগিয়ে চলছে ইসলামী ঐতিহ্যের সােনালী পথে।

 

*****