JustPaste.it

পাঠকের কলামঃ

কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে বাধা কোথায়?

==============================================================

পূর্ব কথা:

          ১৮৫৭ সালে ভারত উপমহাদেশে মুসলমান সমাজ যখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। বাংলার বিদ্রোহী সিপাহীরা মোগল সাম্রাজ্যের গৌরব ফিরে আনার জন্য সিপাহী আন্দোলন শুরু করছে। ঠিক তখনই দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে জনসম্পদ ও ধন-সম্পদ দ্বারা কোম্পানি সরকারের সহায়তায় এগিয়ে আসে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পিতা মির্জা গোলাম মর্তুজা। তার এই আচরণে খুশি হয় ইংরেজ সরকার ভারত উপমহাদেশে তাদের অধিপত্য চিরস্থায়ীভাবে টিকে রাখার উদ্দেশ্যে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষে বেঁচে নেয় মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কে। গোলাম কাদিয়ানীও স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় কোন চাকরিতে সুবিধা করতে না পেরে ইংরেজ সরকারের এ পৃষ্ঠপোষকতাকে নিজ জীবনের সম্বল ও সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। ব্রিটিশদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সে একদিকে ইসলামের প্রধান বৈশিষ্ট্য জিহাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি ও প্রচার অভিযান চালায়। অন্যদিকে নিজ ভক্তবৃন্দের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিজেকে মুজাদ্দিদ, ইমাম মাহাদী, প্রতিশ্রুত ঈসা মাসীহ, বলে দাবি করে এবং লোকজনকে তার বায়াত গ্রহণ করে মুরিদ হতে আহ্বান জানায়। তার মনগড়া ও মিথ্যা কাশফ, এলহাম ও ভবিষ্যৎ বাণীর ব্যাপক প্রচারের প্রভাবিত হয়ে কিছু স্বার্থন্বেষী লোক তার চারপাশে ছুটে গেল সেই ইসলামের অকাট্য ও সর্বস্বীকৃত আকিদা ও বিশ্বাস ''নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কোন নতুন নবী ও রাসূল আসবে না তিনি হলেন শেষ নবী'' এই চিরসত্য অস্বীকার করে নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র নবী এবং রাসূল বলে দাবি করে বসে এবং কোরআন ও হাদিসের শত শত আয়াত ও বাণীর অপব্যাখ্যা ও মনগড়া অর্থের মাধ্যমে কিছু সংখ্যক সরলপ্রান মুসলমানকে ধোকায় ফেলে এবং প্রতারিত করে আর এভাবেই সাম্রাজ্যবাদী ইসলাম বিরোধী শক্তি ব্রিটিশ মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটি বাতিল ফিরকা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

 

 

ওলামা-মাশায়েখ ও মুসলিম বিশ্বের অভিমত:

          হাদিসের ভবিষ্যৎবাণী অনুসারে ইমাম মাহাদীর নাম হবে'-মোহাম্মদ তার পিতার নাম হবে-আবদুল্লাহ মাতার নাম হবে আমেনা এবং তিনি মহানবী সাঃ এর বংশধর থেকে জন্মলাভ করবেন। ৪০ বছর বয়সে মক্কার হারামে তাওয়াফরত অবস্থায় তার সাথে লোকের সাক্ষাৎ হবে।

কাদিয়ানী বই-পুস্তক ও প্রচারপত্রের ঘোষণা অনুযায়ী ইমাম মাহাদী প্রতিশ্রুত মাসীহ এবং নবী ও রাসূল হিসেবে মির্জা কাদিয়ানী দাবির সঙ্গে উপরের হাদিসের ভবিষ্যৎবাণীর কোন মিল নেই। বিশ্বের সকল নেতৃস্থানীয় ওলামা ও প্রসিদ্ধ মুফতিয়ানে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে কাদিয়ানী জামাতকে কাফির ফাতওয়া দিয়েছেন। কোরআনে বর্ণিত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিচয়কে (খাতামুন্নাবীয়্যিন বা শেষ নবী) অস্বীকার করে তারা। প্রকারান্তরে কালেমা ঈমানকেই অস্বিকার করে বলে সৌদি আরব ও পাকিস্তান সহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র সেদেশের ওলামায়ে কেরামের স্পষ্ট ফতুয়া ও সর্বস্বীকৃত মতামতের প্রেক্ষিতে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম (সংখ্যালঘু নাগরিক!) বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যেন তারা ইসলামীক পরিভাষায় ব্যবহার করে সরলপ্রান মুসলমানদের ধোকায় ফেলে প্রতারিত করতে না পারে।

কার্যক্রম: বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে

          ইরাকে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার সময় তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আল আজাদ তাতে স্বাক্ষর করলেও সেই ঘটনা বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে এদের অপতৎপরতা দ্রুত গতিতে বড়ে চলছে। কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে ''আহম্মদীয়া মুসলিম জামাত'' বলে পরিচয় দিয়ে সরল ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে অমুসলিম কাদিয়ানী বানানোর চেষ্টায় তৎপর রয়েছে। কাদিয়ানীরা তাদের ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য কৌশল হিসেবে বেছে নেই লোভনীয় চাকরি, নগদ অর্থ, এবং এমেরিকান ভিসার প্রস্তাব। তাদের এহেন প্রস্তাবের অনেকেই সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে, সরে যাচ্ছে প্রকৃত ইসলাম থেকে। কাদিয়ানীদের মতে সারা বাংলাদেশে এক লক্ষের মত কাদিয়ানী রয়েছে এবং ৩/৪ জন করে লোক প্রতিদিন তাদের ধর্মে দীক্ষা নিচ্ছে।

 

 

এদের শক্তি কোথায়?:

          দুঃখজনক হলেও সত্য যে পৃথিবীর প্রায় প্রসিদ্ধ মুসলিম দেশগুলো কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম বা সংখ্যালঘু ঘোষনা করার পর এখন তারা বাংলাদেশকে তাদের ভান্ত আকিদা ও মিথ্যা নবুওতের প্রচারের জন্য উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। ব্রিটিশ অর্থসাহায্যে পরিচালিত কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের কিছু লোক বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পদে কর্মরত রয়েছে, যারা তাদের ক্ষমতাকে সুকৌশলে ব্যবহার করছে এর প্রচার ও প্রসারের কাজে। সমগ্র দেশবাসী এবং আলিম সমাজ যেখানে এদের অমুসলিম ঘোষণার দাবীতে একমত সেখানে দেউলিয়া বামপন্থী দলগুলোর প্রচ্ছন্ন সমর্থন এদেশের শক্তি যোগাচ্ছে বৈকি।

অমুসলিম ঘোষণা করুন:

          ইসলামের ইতিহাসে কাফির ও মুশরিক সম্প্র।দায়সমূহ সরাসরি ইসলামের এত বেশি ক্ষতি করতে সক্ষম হয়নি যত, বেশি ক্ষতি করেছে মুসলিম নামধারী মোনাফেকরা। ইসলামের প্রথম যুগ হতে আজ পর্যন্ত সর্বকালের সর্বস্থানে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ'র বিরুদ্ধে সর্বদা ষড়যন্ত্র ও প্রতারণায় লিপ্ত রয়েছে। বর্তমানে বর্তমান যুগে কাদিয়ানীরা সেই মুনাফেক ও ষড়যন্ত্রকারী দল সমূহের অন্যতম। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নৈতিক কর্তব্য ও তৎপরতা বন্ধ করা এবং অমুসলিম সংখ্যালঘু নাগরিকদের প্রশ্ন করা এটা যত তাড়াতাড়ি হবে ততোই জাতির মঙ্গল।                                     

-আবদুল্লাহ সাঈদ: বায়তুল মোকাররম