|| আরব্য রজনীর নতুন অধ্যায় ||
|| নির্বাসনের চিরকুট ||
( সূচনা -৩ )
.
এই বইতে ১৯৯৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ের বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। বেশির ভাগ পর্বেক্ষকের চোখে আল-কায়েদা এবং তালেবানকে দেখতে এক রকম মনে হলেও, আসলে ব্যাপারটা এমন না। উদ্দেশ্য এবং সাংগঠনিক সদস্যের দিক থেকে আল-কায়েদা ও তালেবান কখনোই এক ও অভিন্ন ছিল না। তালেবানের একেবারে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ আর খুব অল্প কিছু মানুষই এ বাস্তবতাসম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন। আল-কায়েদা দীর্ঘদিন ধরে তালেবানকে সমর্থন করেছে এবং তালেবানের সামরিক সাফল্যের পেছনে আল-কায়েদার ভূমিকা ব্যাপক।
তালেবানের পক্ষে আল-কায়েদার সক্রিয় সামরিক সহায়তার শুরু ১৯৯০ এর দশকের শেষ দিকে, আফগান গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নর্দান এলায়েন্সের বিরুদ্ধে। তারপর ২০০১ এ আমেরিকার আফগানিস্তান আক্রমনের পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আল-কায়েদা সক্রিয়ভাবে তালেবানকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই না যে এ দুটো দল একই। বরং তাদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার বিরল এক সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কের মাধ্যমে আল-কায়েদার উদ্দেশ্য হল তালেবানসহ সমস্ত বিশ্বের ইসলামি স্বাধীনতা আন্দোলনগুলোকে নিজের আদর্শে নিয়ে আসা এবং তাদেরকে আল-কায়েদার বৈশ্বিক জিহাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে কাজে লাগানো।
আল-কায়েদা কিন্তু তাদের এ উদ্দেশ্য গোপন রাখেনি বরং প্রকাশ্যেই বিভিন্ন সময় তা ঘোষণাও করেছে। একারনে তালেবানসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক আন্দোলনগুলো যেমন উজবেকিস্তান, চেচনিয়া, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ (পূর্ব ইসলামী তুর্কিস্তান নামে পরিচিত ছিল), কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনগুলো আল-কায়েদার এই পরিকল্পনা সম্পর্কে সতর্ক ছিল। কিন্ত আল-কায়েদা খুব নিখুঁতভাবে তার কৌশল নির্ধারন করেছে। যুদ্ধরত সংগঠনগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের সম্পদ ও উপকরন যেন তার নিজস্ব চ্যানেলের মধ্য দিয়েই যায়, আল-কায়েদা সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। যাতে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেখানে আল-কায়েদার দিক নির্দেশনা অনুসরন করা ছাড়া এ আন্দোলনগুলোর আর কোন উপায় থাকে না।
কিন্তু এতো কিছুর পরও আল-কায়েদাকে আত্নকেন্দ্রিক, স্বার্থপর বলা যাবে না। বরং তাদের সমস্ত পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য ও পদক্ষেপের পেছনে চালিকা শক্তি হল সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মুক্তি ও বিজয় ত্বরান্বিত করার ইচ্ছা। আমরা যদি ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০১০ পর্যন্ত সময়কালকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষন করি, তাহলে দেখবো, আল-কায়েদা বার বার আত্মোৎসর্গের বেদিতে নিজেদের স্থাপন করেছে।
১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রাথমিকভাবে উত্তর আফগানিস্তানে নর্দান এলায়েন্সের বিরুদ্ধে তালেবান যে সাফল্য পেয়েছিল, তা দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। আল-কায়েদা এসময় তালেবানকে আরব যোদ্ধা দিয়ে সাহায্য করেছিল। ইসলামপন্থিদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল যে, সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদের ছিল প্রকৃত বীর ছিল আরব যোদ্ধারাই। তাই যখন আরব আল-কায়েদা নর্দান এলায়েনন্সের বিরুদ্ধে তালেবানকে সমর্থন দিল, তখন তা তালেবানের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে বাড়িয়ে দিল।
সাধারণত যুদ্ধের ক্ষেত্রে আরবরা আফগানদের চেয়েও বেশী দৃঢ়চেতা ও আগ্রাসী হয়ে থাকে। নর্দান এলায়েন্স এবং তালেবানের মধ্যকার লড়াইয়ে আরবদের অংশগ্রহন পুরো যুদ্ধের ধরন ও গতি-প্রকৃতিকে পাল্টে দেয়। আহমেদ শাহ মাসুদের পরিচালিত নর্দান এলায়েন্স (পরবর্তীকালে সে নিহত হয়ে) অতিদ্রুত উত্তর আফগানিস্তানের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রন হারাতে শুরু করে এবং ছোট একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। মাসুদ এতোটাই কঠিন অবস্থায় পড়ে যে, একাধিকবার তাজিকিস্তানের পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। এটা হল সেই সময়ের কথা যখন তালেবান সেনাবাহিনী নর্দান এলায়েন্স আর মাসুদের মূল ঘাঁটি পানশির(পাঞ্জাশির) উপত্যকায় ঢুকে পড়ে।
নর্দান এলায়েন্সের বিরুদ্ধে তালেবানের প্রতি আল-কায়েদার সাহায্য ব্যাপকভাবে তালেবানকে প্রভাবিত করেছিল। বিশেষ করে, তালেবানের আমীর ও আধ্যাত্মিক নেতা মোল্লা মুহাম্মাদ উমর(নিহত হয়েছেন) নিজেকে ব্যাক্তিগতভাবে আল-কায়েদার প্রতি ঋণী মনে করতেন। এটাই ছিল আল-কায়েদার সুযোগের সদ্ব্যবহার করার সময়। এ সময় আল-কায়েদা কার্যত তালেবানের প্রতিরক্ষা নীতির নিয়ন্ত্রন গ্রহণ করে, যার মধ্যে ছিল নর্দান এলায়েন্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা ও যুদ্ধ কৌশল তৈরি করা। এর ফলে আল-কায়েদা চেচেন, পাকিস্তানি, উজবেক এমনকি চাইনিজ স্বাধীনতা আন্দোলনগুলোর ক্যাম্পেও প্রবেশাধিকার পেয়ে যায়।
আর এই কাজ চলাকালীন সময়ে আল-কায়েদা আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের প্রকৃতি বা ধরণই পাল্টে দেয়, তালেবানের নিয়ন্ত্রন প্রসারিত করার জন্য সমগ্র আফগানিস্তানে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয় এবং অনভিজ্ঞ তালেবান শাসনকে পরিণত করে একটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টেটে। এর মধ্যে ছিল বামিয়ানের বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করার মতো বিভিন্ন কর্মকান্ড, যা তালেবানকে পশ্চিমা বিশ্বের চোখে অচ্ছুৎ-এ পরিণত করে।
তিনটি দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল: পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই দেশগুলো প্রচন্ডভাবে চেষ্টা করছিল তালেবানকে চাইনীজ বর্ডারের দিকে ঠেলে দেয়ার। কিন্তু তালেবান চীনকে আশ্বস্ত করে, তালেবানের অধীনে থাকা এই অঞ্চলগুলোকে তালেবান কাউকে চীনের বিরুদ্ধে আক্রমনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দেবে না। পুর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলনকে আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে দেয়া হবে। কিন্তু চীন যে ভয় করছিল, জিনজিয়াং প্রদেশে কোন ধরনের বিদ্রোহ শুরু করার সুযোগ তাদের দেয়া হবে না।
চীন আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসাবে তালেবানকে স্বীকৃতি দিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছিল। কিন্তু ঠিক এমন সময়েই বামিয়ানের বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংসের ঘটনা ঘটে। আর তার কিছুদিন পরেই ঘটে ৯/১১। এসব ঘটনার কারণে চীন পিছিয়ে যায়। তালেবান সরকারকে চীন স্বীকৃতি দিলে তা তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে গৃহীত হওয়ার দিকে অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যেতো। কিন্তু আল-কায়েদার এটা চাইছিল না। আফগানিস্তান যদি পশ্চিমা জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশে পরিণত হয় তবে তা হতো আল-কায়দার সামগ্রিক উদ্দেশ্যের বিপরীত।
আল-কায়েদার লক্ষ্য অর্জনের জন্য পুরো অঞ্চলকে একটি যুদ্ধের ময়দানে পরিণত করা প্রয়োজন ছিল, যার মাধ্যমে আমেরিকাকে টেনে এনে আফগানিস্তানের জলাভূমির ফাঁদে আটকে ফেলা যায়। ৯/১১ যখন পুরো অঞ্চলে যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে দিল, তা ছিল আফগানিস্তানকে ঘিরে আল-কায়েদার পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল-কায়েদার চোখে, ৯/১১ এর পর আমেরিকার আফগানিস্তান আক্রমণ ততোটাই অবশ্যম্ভাবী ছিল, যতোটা ছিল আমেরিকান আক্রমনের মুখে আফগানিস্তানে তালেবানের সাময়িক পরাজয় এবং পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় গা ঢাকা দেয়া।
পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মাঝে ৭টি উপজাতী শাসিত (স্বায়ত্বশাসিত) এলাকা রয়েছে, যেগুলোকে এজেন্সি বলা হয়ঃ
- খায়বার এজেন্সি
- ওরাকযাই এজেন্সি
- কুররাম এজেন্সি
- মোহমান্দ এজেন্সি
- বাজাউর এজেন্সি
- দক্ষিন ওয়াজিরিস্তান এজেন্সি
- উত্তর ওয়াজিরিস্তান এজেন্সি
পাকিস্তানের ডেরা ইসমাইল খান শহর দিয়ে এই এলাকাগুলোর সাথে দক্ষিণ পশ্চিমের বালুচিস্তান প্রদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা ছিল, যার সীমানা ঘেষেই আফগানিস্তানের হেলমান্দ এবং কান্দাহার প্রদেশ। এই এলাকাগুলো ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগান জাতীয় প্রতিরোধের কেন্দ্র। এই এলাকার বাসিন্দাদের বেশীরভাগই জাতিগতভাবে ছিল পশতুন, বাদবাকিরা বেলুচ(বেলুচিস্তান)। ঐতিহাসিকভাবেই পশতুন এবং বালুচরা জাতিগতভাবে সাহসী এবং যোদ্ধা প্রকৃতির হয়ে থাকে। তালেবান শাসনামলে এই পশতুন এবং বেলুচদের অনেকেই তালেবানের সাথে যোগ দিয়ে যুদ্ধ ও কাজ করেছিল। তাই আফগানিস্তানের সাময়িক পরাজয়ের পর পিছু হটা তালেবান ও আল-কায়েদার সেনাদের জন্য প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই এলাকাকে একটি নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত করায় তাদের কোন আপত্তি ছিল না।
আল-কায়েদার জন্য প্রয়োজন ছিল একটা বিশ্রামের স্থান — একটা নিরাপদ ঘাঁটি — কিন্তু নিরাপদ আস্তানায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। তারা চাচ্ছিল এই দুর্গম এলাকাকে প্রাকৃতিক দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করে ধীরে ধীরে সমগ্র অঞ্চলে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করতে। এর ফলে আল-কায়েদা একদিকে আমেরিকা এবং তার মিত্রশক্তিকে আফগানিস্তানের গেরিলা যুদ্ধের উপযোগী প্রাকৃতিক এলাকায় আটকে ফেলতে পারবে এবং অন্যদিকে আল-কায়েদা তার কার্যক্রমকে উত্তরে মধ্য এশিয়া থেকে পূর্বে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত করতে পারবে।
সীমান্ত পাড় হবার সময় পাকিস্তানে জিহাদ শুরু করার কোন পরিকল্পনা আল-কায়েদার ছিল না। কিন্তু আফগান যুদ্ধে আমেরিকাকে দেয়া পাকিস্তানের সক্রিয় সমর্থন একটা অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সৃষ্টি করে। যদিও পাকিস্তান দ্বিধাগ্রস্তভাবে এবং আমেরিকার চাপে পড়ে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু কিন্তু শেষ অবধি তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে আমেরিকার সাথেই যোগ দেয়। এর ফলে পাকিস্তানকে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্রশক্তিদের সামরিক জোটের অংশ এবং শত্রু বিবেচনা করা ছাড়া আর কোন পথ আল-কায়েদার সামনে খোলা ছিল না। আল-কায়েদার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী তাদের সামনে পাকিস্তানে সামরিক অপারেশন বিস্তৃত করার কোন বিকল্প ছিল না।
২০০২ থেকেই আল-কায়েদা পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকাকে কেন্দ্র করে তাদের স্ট্র্যাটিজি বা কৌশল সাজাতে মনোযোগী হয়। পাকিস্তানের এই দুর্গম এলাকা হবে আল-কায়েদার ঘাঁটি — সেই প্রাকৃতিক দুর্গ যেখান থেকে পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে তাদের বৈশ্বিক যুদ্ধের আদর্শ। আফগানিস্তানে আমেরিকার প্রতি পাকিস্তানি সহায়তা বন্ধ করার জন্য আল-কায়েদা পাকিস্তানের ভেতর ছোট ছোট কিছু অপারেশন চালায়। কিন্তু পাকিস্তানকে খোলাখুলিভাবে যুদ্ধের ফ্রন্ট তৈরি করা থেকে তারা বিরত থাকে। উপজাতীয় অঞ্চলে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও প্রস্তুতির পর ২০০৬ সালে তালেবানের বসন্তকালীন আক্রমনের(Spring Offensive) সময় আল-কায়েদা আবার আফগানিস্তানে ফিরে যায়। আর ২০০১ সালে আমেরিকান আগ্রাসন ও সাময়িক বিজয়ের পর ২০০৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের প্রত্যাবর্তন আল-কায়েদার জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
২০০৭ সালে আরেকবার, অল্প কিছু সময়ের জন্য আল-কায়েদা উপজাতীয় এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হবার জন্য ফিরে আসে। ফিরে আসে নিজেদের দূর্গে। কিন্তু এইবার উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে একটি যুদ্ধের ময়দান খোলা; কেননা আফগানিস্তানে আমেরিকার কর্মকান্ডের প্রতি পাকিস্তানের আনুগত্য এখন একেবারে স্পষ্ট। আল-কায়েদা পাকিস্তানে বেশ কিছু বড় ধরনের অপারেশন চালায়, যার মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী বেনযির ভূট্টোর হত্যাকান্ড। তারপর আল-কায়েদা আবারো ফিরে যায় উপজাতীয় এলাকায় এবং আল-কায়েদার আদর্শে অনুপ্রাণিত গোত্রীয় নেতাদের “রক্তের ভাই” বানানোর এক জটিল, স্পর্শকাতর ও ধীর প্রক্রিয়া শুরু করে।
এই প্রচেষ্টা ফসল হিসাবেই ২০০৭-০৮ এর দিকে জন্ম হয় তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের (TTP)। আল-কায়েদা নেতৃত্ব ও কমান্ডারদের একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করে এবং তাদের কাজে লাগিয়ে একটি “ছায়া সেনাবাহিনী(Shadow Army) - লস্কর আল-যিল” গড়ে তোলে। এর উদ্দেশ্য ছিল একদিকে বিশ্বব্যাপী মুসলিম প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা — বিশেষ করে কাশ্মীর ও ভারতে — অন্যদিকে ফিলিস্তিন, সোমালিয়া এবং ইরাকের ইবনুল বালাদদের(মাটির সন্তান) কাজে লাগিয়ে এসব অঞ্চলে যুদ্ধের ময়দান তৈরি করা। কারণ আল-কায়েদার কৌশল এবং আদর্শ ততোদিনে একীভূত হয়েছিল এবং ২৬/১১ র মুম্বাই আক্রমন ও চেচেন মুসলিম প্রতিরোধ আন্দোলন সমন্বিতভাবে এমন এক পরিবেশ তৈরি করতে শুরু করেছিল যার ফলে আল-কায়েদার ভারতে নতুন করে আক্রমনের চিন্তা-ভাবনা শুরু করে।
সারা দুনিয়া এখন (২০১১, এ বই লেখার সময়কাল) আফগান যুদ্ধ নিয়ে ব্যাস্ত এবং ২৬/১১ এর ঘটনাকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে। কিন্তু এ বই বৃত্তের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে চায়। ৯/১১ এর পরবর্তী ঘটনাগুলোর বিশ্লেষন সম্পূর্ণ আলাদা একটি ছবি ফুটিয়ে তোলে। সেই বিশ্লেষন ও ছবির আলোকেই এই বই একটি উপসংহার টানতে চায়। আর তা হল –পশ্চিমের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধকে বিস্তৃত করার জন্য আল-কায়েদার উদ্দেশ্য হল ভারতকে যুদ্ধের ময়দান বানানো তারপর এ যুদ্ধকে মধ্য প্রাচ্য পর্যন্ত বিস্তৃত করা যাতে “শেষ জমানার চূড়ান্ত যুদ্ধ” — এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করা যায়।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)