JustPaste.it

 মাওয়াযে থানবি (রহঃ) থেকে নির্বাচিত কাহিনী

========================================================================

 

এক বোকার কাহিনীঃ

        এক বোকা কিতাবে লেখা দোযখে যে ব্যক্তির দাড়ি লম্বা হয় এবং মাথা ছোট থাকে সে নির্বোধ হয়। একথা পড়ার পরই সে নিজেকে বোকা ভাবতে লাগলো। আয়নার সামনে দাড়িয়ে সত্যই নিজেকে বোকা বলে ধারণা করে। কারণ বোকার আলামত সবটাই তার মধ্যে আছে। বোকামীর আলামত দূর করতে সে তৎক্ষণাৎ তৎপরত হয়ে উঠলো। কচি তালাশ করলো কিন্তু পেলো না। দাড়ি কেটে ছোট করার জন্য হাতের কাছে কিছুই পেলো না। ফলে সে বাতির আগুনে দাড়ি, পুড়ে ফেলার ইচ্ছা করলো। কেননা মাথাতে আর বড় করা সম্ভব নয়। তাই যথাসম্ভব দাড়িই ছোট করতে হবে। এবার তাই সে মুষ্টিতে দাড়ি ধরে অতিরিক্তটুকু আগুনে পোড়াতে উদ্যত হয়। আগুনের তাপে সে তার হাত ছেড়ে দিলে সম্পূর্ণ দাড়ি আগুনের পুড়ে যায়।

 

        সত্যই লোকটা বোকার আলামত পড়ে তা দূর করতে এতো ব্যস্ত হয়ে পরেছিল যে, ভালমন্দ বিবেচনার শক্তিটুকুও সে হারিয়ে ফেলেছে। দাড়ি পোড়ার কারণে কথা সে নিশ্চিত বুঝতে পেরেছে যে, সে সত্যই বোকা। অন্যথায় সে এমন কাজ কিছুতেই করতো না।

 

 

বিমিল্লাহর বরকতঃ 

        এক মৌলভী সাহেব বিসমিল্লাহর ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি কোন কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ পড়বে সে কাজে তার অনেক বরকত হবে এবং সে তার কাজ অতি সহজে সমাধান করতে পারবে। এক ঘাস বিক্রেতা একথা শুনে মহা খুশি। মনে মনে বললো, প্রত্যেক দিন তাকে নদী পারাপারে নৌকার মাঝিদের পয়সা দিতে হয়, আজ থেকে বিসমিল্লাহ পড়েই নদী পার হয়ে যাব। সত্যই সে তার বিশ্বাস মতে প্রত্যেক দিন বিসমিল্লাহ বলে নদী পার হয়ে যেতো । কোন রকমের ভয় ভীতি বা শংকার ভাবও তার মনে জাগ্রত হতো না। হঠাৎ একদিন এসেই মৌলভী সাহেবের কথা মনে পরে যার কথায় সে এখন বিনা পয়সায় নদী পার হচ্ছো। তাই একদিন সে তাকে দাওয়াত করে বাড়িতে নিয়ে চললে পথেই নদী পড়ে। মৌলভী সাহেব তীরে এসে সটান দাড়িয়ে গেল। ঘাস বিক্রেতা তাকে বললো, আশ্চর্য, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন যে? কিসের অপেক্ষা করছেন। মৌলভী সাহেব বিস্ময়ের সাথে বলেন, বাহ চমৎকার কাণ্ডতো, তুমি আমাকে নদীতে ঝাপ দিতে বলছো নাকি! একটা নৌকা ডাক দাও। নদী পার হই। ঘাস বিক্রেতা বিস্ময়াবিভূত হয়ে বললো, বাহ বিসমিল্লাহ বলে পার হন। আপনিই তো সেদিন বিসমিল্লাহর নানা ফযিলত বর্ণনা করলেন। শেষে বিসমিল্লাহ বলে নদী পারাপারের হিম্মৎ তার হলো না। তখন ঘাস বিক্রেতা বললো, তবে আমার সাথে চলুন, এই বলে সে মৌলভী সাহেবের হাত ধরে বিসমিল্লাহ বলে নির্বিঘ্নে নদী পা হয়ে গেল। মৌলভী সাহেব এবার লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বলতে লাগলো, ভাই তুমি তোমার বিশ্বাসের ওপর গভীর শ্রদ্ধাশীল বলে এরূপ পারছে। আমি যদিও একজন আলেম কিন্তু পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আমল করি না বলে আমার এই অবস্থা ।

 

        শুধু আজকে নয়, বরং যুগে যুগে আলেম নামে সমাজে পরিচিত এমন কিছু লোক ছিলো এবং এখনো আছে যারা আকিদা এবং ফিকাহর মাসআলা বলতে পারে, কিন্তু সত্য বলতে কি তাদের কথা ও বিশ্বাসের ওপর তারাই আস্তা রাখে না। যা খুবই দুঃখজনক বৈ কি? আল্লাহ আমাদের এ ধরণের অবস্থা ও দুর্বল বিশ্বাস থেকে রক্ষা করুন।

 

 

বালকের জবাব রিযিক দাতাঃ 

        আমার এক ছোট ভাতিজা দারুন বুদ্ধিমান। আমি একবার তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,আচ্ছা বলো তো আরবী শেখা ভালো না ইংরেজী শেখা ভালো? সে বললো, আরবী শিখা ভাল। আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম কেন আরবী শেখা ভালো। সে বললো, কেননা কুরআন আরবী ভাষায় আমি আবার প্রশ্ন করলাম, কিন্তু আরবী পড়লে টাকা পাবে কই, চলবে কি দিয়ে? আমার প্রশ্নগুলো সে খুব সচেতনতার সাথে উত্তরে বললো, মানুষ যখন আরবী শিখে তখন সে আল্লাহর হয়ে যায়। আর যখন সে আল্লাহর হয়ে যায় তখন আল্লাহ তায়ালা অন্য মানুষের অন্তরে একথা উদয় করেন যে তাকে অর্থ দাও। তখন মানুষ এসে তাকে অর্ধ দিয়ে যায়। আর সে তা দ্বারা জীবন নির্বাহ করে। আমি বললাম, তোমার এ কথাতো ঠিক কিন্তু মানুষ তাকে লাঞ্ছনার চোখে দেখে যে? সে তখন দৃঢ়তার সাথে বলতে লাগলো , হা যদি সে মানুষের কাছে হাত পাতে তখনই মানুষ তাকে লাঞ্ছনার চোখে দেখে । আর সে হাত পাতবেই বা কেন। লোকেরা তো এসে তাকে হাতজোর করে দিয়ে যাবে। আমি তার কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। মুগ্ধ হলাম তার বুদ্ধিমত্তা দেখে। বললাম আশ্চর্য, এতো অল্প বয়সে এতো বুদ্ধি তোমার। কিন্তু ধিক আমাদের সমাজের লোকদের বুদ্ধির ওপর, তারা আরবী পড়ার জন্য বোকা শ্রেণীর ছেলেদের নির্বাচন করে। আর বুদ্ধিমান মেধাবী চতুর ছেলেদেরকে ইংরেজী শিখায়। আজো এ কথা আমার মনে বেদনার কারণ হয়ে রইলো। আল্লাহ আমাদের সঠিক সমঝ দান করুন।

 

 

রিযিকের মালিক আল্লাহঃ 

        মাওলানা ফাতেহ মোহাম্মদ হাসেব কিরানায় থাকতেন। এক এক তালিবের ইমাম মসনবী শরীফ পড়ার জন্য তার নিকট আসে এবং তা পড়ার জন্য ভীষণ আগ্রহ প্রকাশ করে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে থেকে পড়লে তুমি তোমার খাবারের ব্যবস্থা কোথা থেকে করবে? খুব দৃঢ়তার সাথে বললো আল্লাহই খাবার ব্যবস্থা করবেন না হয় তিনি মৃত্যু দান করবেন। তার সাহসী কথা শুনে মাওলানা মোহাম্মদ ফাতেহ সাহেব তাকে পড়ার অনুমতি দিন। ওই সময় থেকেই তিনি তাকে পড়ার অনুমতি দেন। - আশ্চর্যভাবে সেদিন থেকে তার একটির পর একটি খানার দাওয়াত আসতে শুরু হলো। সে কিবালায় আমার কাছে কয়েকমাস ছিল। এ কয় মাস সে দাওয়াতই খেলো। বস্তুত কোথাও যদি ধার্মিক আল্লাহ তায়ালার ব্যক্তিদের খাবারের ব্যবস্থা না হয় তবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেন যে, লোকেরা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়।

 

        ফতেহ মোহাম্মদ সাহেবই আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করেন যে, পানি পথে এক তালেবে ইলম কারী আব্দুর রহমান সাহেবের কাছে কেরাত শিখতে আসে। কিন্তু মহল্লাবাসীরা তার খাবার কোন ব্যবস্থা করলো না। ঘটনাক্রমে মহল্লার একক ব্যক্তি মারা যায়। সেখানে প্রচলন ছিলো, যে বাড়ীর কোন মানুষ মারা যেতো চল্লিশ দিন পর্যন্ত একজন অভাবী ব্যক্তিকে খাওয়াতো। ফলে ওই ঘরে তার খানার ব্যবস্থা হয়ে গেল। চল্লিশ দিন পূর্ণ হতে না হতেই আরেক ব্যক্তি মারা গেল। সে ঘরে চল্লিশ দিন খাবার শেষে হতে না হতেই আরেকজন মারা গেল। কারী সাহেব মরার এ হিড়িক দেখ সংকিত হলেন এবং মহল্লাবাসীকে ডেকে বললেন, আপনারা জরুরী ভাবে এর খাবারের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় মৃত্যুর এ ধারাবাহিকতা থামবে না। তখন মহল্লাবাসী সবাই মিলে সম্মানের সাথে তার খাবারের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়।

 

 

═──────────────═