নবীদের জীবনী থেকে শিক্ষা
উস্তাদ আহমাদ নাবিল হাফিজাহুল্লাহ
***************************************
সীরাত থেকে নিরাপত্তা শিক্ষা
নিরাপত্তা গ্রহণের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই হচ্ছেন আমাদের উত্তম আদর্শ। মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাতের ক্ষেত্রে একটু দৃষ্টি দিলেই বুঝতে পারা যায়, তিনি নিরাপাত্তার ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্ব প্রদান করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমরা শিখতে পারি, দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টারত একজন মুজাহিদের কতটা নিরাপত্তা গ্রহণ আবশ্যক।
শুধুমাত্র আমরা যদি রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের “মক্কা থেকে মদিনা হিজরত” এর উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করি তাহলে আমরা নিরাপত্তা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর যে পদক্ষেপগুলো পাইঃ-
-
শত্রুদেরকে বোকা বানানো ও গোপনীয়তার উদ্দেশ্যে আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছানায় শুইয়ে দেয়া।
-
ভর দুপুরে কাইলূলার সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর বাড়িতে গমন । কারণ এ সময় খুব কম মানুষই বাইরে থাকে।
-
আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর বাড়ী থেকে প্রধান দরজা দিয়ে বের না হওয়া, এই আশংকায় যে নযরদারি থাকতে পারে।
-
সরাসরি মদিনাতে গমন না করে গুহা অভিমুখে রওয়ানা করা। শত্রুদের পক্ষ থেকে মদিনার পথে প্রহরী নিয়োগ থাকার কারণে।
-
এমন একটা গুহা নির্ধারণ করা যেন এর অবস্থান মদিনার পথের উল্টো দিকে হয়। এই সতর্কতার কারণ হল, যাতে কেউ অনুসরণ করলে ধোঁকা খায়।
-
আবদুল্লাহ বিন আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর মাধ্যমে অনুসরণের ব্যাপারে শত্রুদের পদক্ষেপের, ধারাবাহিক খবর মক্কা থেকে সংগ্রহ।
-
আসমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এর মাধ্যমে পাথেয় সরবরাহ করানো।
-
আবদুল্লাহ ও আসমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর পায়ের ছাপ আমের বিন ফুহাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর ছাগল চরানোর মাধ্যমে মুছে দেয়া।
-
গুহার মধ্যে তিন দিন অপেক্ষা এবং তারপর মদিনার দিকে রওয়ানা, যাতে শত্রুর হাতে গ্রেফতার হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
-
প্রতিটি পদক্ষেপে গোপনীয়তা রক্ষা ও ছদ্মবেশ ধারণ। (একজন ব্যক্তির সাথে আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর দেখা হয়ে গেলে সে জিজ্ঞাসা করল, আপনার সামনে এই ব্যক্তিটি কে? তিনি উত্তর দিলেনঃ এই লোকটি আমাকে পথ দেখায়, সে ব্যক্তি ভাবলো এটা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে চলার রাস্তা, কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য হল, কল্যাণের পথ)
(দেখুনঃ আল-মানহাজুল হারাকী লিস-সীরাতিন নাবাবিয়্যাহ)
প্রত্যেক যুগের অপরাধীরা ঐ যুগের নবীর শত্রু ছিল
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন-
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِينَ ۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ هَادِيًا وَنَصِيرًا ﴿٣١﴾
আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু বানিয়েছি।
(সূরা আল ফুরকান, আয়াত-৩১)
প্রত্যেক যুগে নবীগণ এসে উম্মতকে মৌলিক ২টি ব্যাপারে দাওয়াত দিয়েছেন-
এক, সকল তাগুতকে বর্জন করে এক আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদাতের প্রতি।
দুই, ঐ জমানার প্রচলিত সবচেয়ে জঘন্য হারাম-মুনকার সমূহের বিরুদ্ধে।
লূত আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের জমানায় প্রচলিত জঘন্য মুনকার ছিল সমকামিতা। তিনি সমকামিতার বিরুদ্ধে বলেছেন। শুয়াইব আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের সময় প্রচলিত পাপ ছিল, মাপে কম দেয়া। তিনি এর বিরুদ্ধে দাওয়াত দিয়েছেন।
অপরাধ সমূহের মধ্যে অপরাধীদের স্বার্থ নিহিত থাকে এটাই স্বাভাবিক। আর এ কারণেই এই অপরাধের বিরুদ্ধে যখন বলা হয় তখন তারা দায়ীদের শত্রুতে পরিণত হয়। নবীগণ যদি এই মুনকার সমূহের বিরুদ্ধে দাওয়াত না দিতেন, অথবা দিতেন কিন্তু জমানার প্রচলিত মুনকারের বিরুদ্ধে না তাহলে কোন সমস্যা হতো না। শুয়াইব আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম যদি মাপে কম দেয়ার বিরুদ্ধে চুপ থেকে সমকামিতার বিরুদ্ধে দাওয়াত দিতেন তাহলে তিনি সম্ভবত কখনোই অপরাধীদের শত্রুতে পরিণত হতেন না। লূত আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম যদি সমকামিতার ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করে মাপে কম দেয়ার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতেন তাহলে তিনিও তাঁর কওম এর শত্রুতে পরিণত হতেন না। নিশ্চিতভাবেই তাদের দাওয়াতের বিরোধিতার পরিমাণ কমে যেত।
সুতরাং কোন দায়ী যখন বাস্তবিক নবীদের পথ অনুসরণ করবে, তাঁদের উপর সেই বিপদ নেমে আসবে যা এসে ছিল নবীদের উপর। কিন্তু কোন দায়ীর দাওয়াতের বিষয় যদি হয় নবীদের দাওয়াত থেকে ভিন্ন অর্থাৎ জমানার তাগুত ও ফিতনার বিরুদ্ধে চুপ থেকে ভিন্ন কোন বিষয়ে দাওয়াত দিয়ে থাকে, তাহলে তার পথে যদি কাঁটার পরিবর্তে ফুল বিছানো থাকে। জ্ঞানীদের জন্য এতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই।
এটাই নবীদের পথ!
তাওহীদ ও জিহাদের আওয়াজকে বন্ধ করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে দ্বীনের শত্রুরা। দ্বীনের দায়ী ও মুজাহিদীনদেরকে অতিক্রম করতে হচ্ছে ইবতেলার নতুন এক মারহালা।
হে দ্বীনের দায়ী! হে আল্লাহ্ তায়ালার রাহের মুজাহিদ!
হতাশা বা চিন্তা আপনার মনোবলকে যেন ভেঙ্গে ফেলতে না পারে। ইবতেলার এই মারহালা তো প্রমাণ করে আপনি সঠিক পথেই আছেন। এটাই সেই পথ যে পথ অতিক্রম করেছেন আম্বিয়া আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম গণ।
খুব চমৎকার ভাবে এই পথের পরিচয় দিয়েছেন ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ। কয়েকটি লাইন! কিন্তু চিন্তার একটি সমুদ্র। চেতনার একটি জগতঃ-
يا مخنث العزم أين أنت, والطريق طريق تعب فيه آدم, وناح لأجله نوح, ورمى في النار الخليل, وأضجع للذبح اسماعيل, وبيع يوسف بثمن بخس, ولبث في السجن بضع سنين, ونشر بالمنشار زكريا, وذبح السيد الحصور يحيى, وقاسى الضر أيوب, وزاد على المقدار بكاء داود, وسار مع الوحش عيسى, وعالج الفقر وأنواع الأذى محمد صلى الله عليه وسلم تزها أنت باللهو واللعب.
ওহে দুর্বল সংকল্পের অধিকারী!
তুমি কোন পথে?! এ পথ তো সে পথ!!!। যে পথে চলতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরেছিলেন আদম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম। ক্রন্দন করেছেন নূহ আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম। আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন ইব্রাহীম খলীল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম। জবেহ করার জন্য শোয়ানো হয়েছে ইসমাইল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামকে। খুব স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করা হয়েছে ইয়ূসুফ আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামকে, কারাগারে কাটাতে হয়েছে জীবনের দীর্ঘ কয়েকটি বছর। জাকারিয়া আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামকে করাত দ্বারা দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে। জবেহ করা হয়েছে নারী সংশ্রব থেকে মুক্ত সায়্যেদ ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামকে। রোগে ভুগেছেন আইয়ূব আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম। দাউদ আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের ক্রন্দন, সীমা অতিক্রম করেছে। নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেছেন ঈসা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম। নানা দুঃখ-দুর্দশা, কষ্ট-ক্লেশ ভোগ করেছেন শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তুমি (এখনও) খেল-তামাশায় মত্ত?!!! (আল-ফাওায়েদ, লি-ইবনিল কাইয়্যিম)
লূত্ব আঃ এর সম্প্রদায় ও বর্তমান জাহিলিয়্যাত
মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ ** إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِنْ دُونِ النِّسَاءِ**
আমি লূত্বকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা এমন কুকর্ম করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে পুরুষের নিকট গমন কর ...। (সূরাঃ আ’রাফ, আয়াতঃ৮০-৮১)
এই সম্প্রদায়ের মূল অপরাধ ছিল ২টি ---
এক, তাউহিদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা।
দুই, সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া।
‘সমকামিতা’ ছিল এমন এক জঘন্য অপরাধ, এ সম্প্রদায়ের পূর্বে বিশ্ব জগতের কেউ এই অপরাধে লিপ্ত হয়নি। যেমনটি কুরআন বলছে – ‘তোমরা এমন কুকর্ম করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি।’
লূত্ব আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম তাঁর সম্প্রদায়কে বারণ করলেন। তারা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিল না। তাঁর নিষেধ মানল না। যার ফলে আল্লাহ্ তায়ালার শাস্তির উপযুক্ত হল। আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে শাস্তি দিলেন।
কি ছিল সেই শাস্তি –
فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ مَنْضُودٍ (82) مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ وَمَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِينَ بِبَعِيدٍ
“অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হলো তখন ভূ-খন্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম এবং ওর উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা ছিলো একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিলো তোমার প্রভূর ভান্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ যালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়”।(হূদঃ ৮২-৮৩)
কতইনা ভয়ানক ছিল সেই শাস্তি।!!! পুরো সম্প্রদায়কে জমিন সহ উল্টিয়ে দেয়া, তাঁর উপর একাধারে ঝামা পাথর বর্ষণ। অপরাধ ছিল, তাউহিদকে না মানা আর সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া।
বর্তমান জাহিলিয়্যাত
আমরা এক নব্য জাহিলিয়্যাতের মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। এমন এক জাহিলিয়্যাহ, ইতিহাসে যার কোন দৃষ্টান্ত নেই। পূর্বের উম্মতদের অনেক জাহিলী সমাজকে আল্লাহ্ তায়ালা নিঃশেষ করে দিয়েছেন। এই সকল জাহিলিয়্যাতের সমন্বয়ে সৃষ্ট আমাদের এই অত্যাধুনিক (!) জাহিলিয়্যাত।
আমরা এই জাহিলী সমাজের একটা অপকর্ম নিয়ে আলোচনা করি -
লূত্ব আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের সম্প্রদায় ছিল এক জাহিলিয়্যাতের মধ্যে। নব আবিষ্কৃত যে অপকর্মের মধ্যে তারা লিপ্ত ছিল, তা হচ্ছে সমকামিতা। আচ্ছা! বর্তমান সমাজে কি এই অপকর্মটি বিদ্যমান নেই?! হ্যাঁ আছে।
তবে নব্য জাহিলিয়্যাত এই অপকর্মের মধ্যে যে আধুনিকায়ন করেছে, তা হচ্ছে, তাদের সমকামিতা ছিল শুধু পুরুষ-পুরুষ। কিন্তু এই নব্য জাহিলিয়্যাত এটাকে মেয়ে-মেয়ে গণ্ডিতে উন্নতি (!) করেছে। তাদের মাঝে সমকামিতা ছিল, কিন্তু পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এমন কোন দৃষ্টান্ত নেই। কিন্তু এই জাহিলিয়্যাতের মধ্যে পুরুষ-পুরুষ, নারী-নারী বিবাহকে রাষ্ট্রীয় ভাবে বৈধতা প্রদান করা হয়েছে। এই হচ্ছে আধুনিক জাহিলিয়্যাত।
তবে প্রশ্ন জাগে –
এত জঘন্য পর্যায়ে পৌঁছার পরও কেন আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করছেন না? কেন তাদেরকে তল-উপর করে দিচ্ছেন না? কেনইবা তাদের উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করছেন না? অথচ এরা তাদের চেয়ে হাজারগুণ বেশী সীমালঙ্ঘন করেছে।
এর উত্তর আল্লাহ্ তায়ালা দিচ্ছেনঃ-
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ ............
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের হাত দিয়ে তাদেরকে শাস্তি দেবেন ...। (সূরাঃ তাওবা,আয়াতঃ ১৪)
এরা আল্লাহ্ তায়ালার শাস্তির পূর্ণ উপযুক্ত হয়ে আছে। পূর্বের সম্প্রদায় সমূহকে আল্লাহ্ তায়ালা যে অপরাধ সমূহের ফলে ধ্বংস করেছেন, এখনকার মানুষ সে অপরাধগুলোতো করছেই অনেক ক্ষেত্রে পূর্ববর্তীদের তৈরি করা সীমানাকেও অতিক্রম করেছে। কিন্তু ঐ সম্প্রদায় সমূহকে আল্লাহ্ তায়ালা ধ্বংস করেছেন, তার ফিরিশতাদের মাধ্যমে। আর এই আধুনিক জাহিলিয়্যাতকে ধ্বংসের দায়িত্ব দিয়েছেন আমাদের কাঁধে।
তাই আল্লাহ্ তায়ালার বান্দারা যদি এই সমস্ত সমকামী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে, তাহলে আল্লাহ্ তায়লা তাদেরকে সাহায্য করবেন। তারা কোন ভাবেই আল্লাহ্ তায়ালার বান্দাদের সামনে টিকতে পারবে না। কেননা তারা তো শাস্তির উপযুক্ত হয়ে আছে।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন –
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ
আর মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। (সূরাঃ রুম, আয়াতঃ ৪৭)
নূহ আঃ এর দাওয়াত থেকে আমাদের শিক্ষা
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একজন নবী, নূহ আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম। যিনি ছিলেন একজন দায়ী। তিনিই সব চেয়ে দীর্ঘ সময় দ্বীনের পথে দাওয়াতের কাজ করেছেন। এক-দুই বছর নয়। একশত-দুইশত বছরও নয়। প্রায় হাজার বছর যিনি দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করেছেন। দাওয়াত দিয়েছেন, গোপনে ও প্রকাশ্যে। দাওয়াত দিয়েছেন রাত্রে ও দিনে।
তিনি দাওয়াত দিয়েছেন আল্লাহ্ তায়ালার আদেশ পালনের। সাড়ে নয় শত বছর দাওয়াত দিয়ে তিনি কি অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন? তিনি আল্লাহ্ তায়ালাকে বলেছেন –
وَقَالَ نُوحٌ رَّبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارًا ﴿٢٦﴾
إِنَّكَ إِن تَذَرْهُمْ يُضِلُّوا عِبَادَكَ وَلَا يَلِدُوا إِلَّا فَاجِرًا كَفَّارًا ﴿٢٧﴾
“হে আমার রব! পৃথিবীতে একটি কাফেরকেও বাঁচিয়ে রাখবেন না। যদি আপনি তাদেরকে ছেঁড়ে দেন তারা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে। আর তাদের ঔরসজাত সন্তানগুলোও হবে কাফের-ফাজের।” (সূরাঃ নূহ, আয়াতঃ ২৭)
নূহ আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম দীর্ঘ সময় দাওয়াতের পর উপলব্ধি করেছেন, এই সমস্ত কাফেরগুলো দাওয়াতের পথে মূল বাঁধা। তারা নিজেরা তো ঈমান আনবেই না বরং আল্লাহ্ তায়ালার উত্তম বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে। তাই তিনি তাদের শাস্তি ও ধ্বংসের জন্য আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দুয়া করেছেন।
আল্লাহ্ তায়ালা তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। এই অবাধ্য কাফের সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন। শেষ নবী মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামের উম্মতদের ক্ষেত্রেও আল্লাহ্ তায়লার এই নিয়ম বিদ্যমান আছে, “যে সমস্ত কাফেররা দাওয়াত গ্রহণ করবে না তাদেরকে তিনি পৃথিবীতেই শাস্তি প্রদান করবেন।”
তবে এই উম্মতের ক্ষেত্রে পার্থক্য দুটি---
## দাওয়াত দেবার পর সাড়ে নয় শত বছর অপেক্ষা করতে হবে না। দাওয়াতের পরবর্তী মারহালাই হচ্ছে জিঝয়া অথবা কিতাল।
## অন্যান্য নবীর দাওয়াতকে যারা অস্বীকার করেছে, আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন ফেরেশতাদের মাধ্যমে। আর মুহাম্মাদে আরবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত যারা গ্রহণ করবেন না তাদেরকে তিনি শাস্তি দেবেন তার অপর সৃষ্টি মানুষের মাধ্যমে, মুমিন বান্দাদের মাধ্যমে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন ---
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّـهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ ﴿١٤﴾
“তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের হাত দিয়ে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন।” (সূরাঃ তাওবা, আয়াতঃ ১৪)
লক্ষণীয়ঃ জিহাদ কাফেরদের জন্যও রহমত!
এই উম্মতের মধ্য থেকে যারা কাফের, জিহাদ তাদের জন্যও একটা অনেক বড় নিয়ামত ও রহমত। কারণ, অন্য উম্মত যখন নবীকে অস্বীকার করত আর জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করত, আল্লাহ্ তায়ালা পুরো জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দিতেন। শিশু হোক বা বৃদ্ধ, নারী কিংবা পুরুষ, দুর্বল কিংবা সবল, কেউ রেহাই পেতনা। আর ধ্বংসের পর, পরকালে তো রয়েছে চিরকালের জন্য জাহান্নাম।
কিন্তু জিহাদের ফলে, সকল কাফের সমূলে ধ্বংস হয়না। বরং তাদের নির্দিষ্ট একটা শ্রেণী নিহত হয়। আর এর ফলেই অন্য সকলের জন্য সঠিক পথ খুলে যায়। জিঝিয়া দিয়ে ইসলামের ছায়াতলে সময় অতিবাহিত করতে পারে। তাদেরকে ইসলামের বাস্তব রূপ কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, তারা দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। যার ফলে আল্লাহ্ তায়লার এই বান্দাগুলো ইহকাল-পরকাল উভয় জগতের শাস্তি থেকে মুক্তি পায়। জান্নাতে তাঁদের জন্য তৈরি প্রাসাদটায় চিরদিনের জন্য রাজত্ব করে।
হে দ্বীনের দায়ী! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীয়তের অনুসরণ করুণ। কারণ এটাই হচ্ছে পরিপূর্ণ শরীয়ত। আর আমরা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত।