JustPaste.it

আমরা যাদের উত্তরসূরী

 

জনৈকা মহিলা বুযুর্গের জীবন্ত কারামাত

–জসীম উদ্দীন খান পাঠান

=================================================

 

একজন মহিলা ওলীর কথা

        আধ্যাত্মিক জগতের সাধকদের নিকট বিষয়টি খুবই আলােচিত। জনৈক বুযুর্গ বলেন, আমি এবং মুহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি এক সাথে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে রামলা যাত্রা করি। দিনটি ছিল শুক্রবার। পথিমধ্যে এক উপত্যকায় পৌঁছলে অদৃশ্য থেকে একটি আওয়াজ আমাদের কানে ভেসে আসে। ধ্বনিগুলাের উচ্চারণ ছিল এরূপঃ “মানুষ ভীষণ ঘাবড়ে যায় যখন সে সঙ্গিহীন হয়। আর পথ চলা কত কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন কোন পথ প্রদর্শক না থাকে।”

 

        আমরা উকি দিয়ে দেখলাম, একজন রমণী। তার পরিধানে একটি পশমী কুরতা, তার ওপর দিয়ে একটি চাদর আবৃত। হাতে একখানা কাষ্ঠ খণ্ড। আমরা তাঁকে সালাম জানালে সে উত্তর দিল এবং জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

 

        : রমলা যাব।

 

        : সেখানে যেয়ে কি করবেন?

 

        : ওখানে আমাদের দোস্ত আহবাব রয়েছেন।

 

        : আপনাদের ধারণা মতে সব চেয়ে বড় দোস্ত বা বন্ধু কে?

 

        : তিনিই তো (আল্লাহ) আমাদের এবং দুনিয়ার সকল মুসলমানদের দোস্ত।

 

        : মিথ্যে কথা। এটা শুধু আপনাদের মুখের কথা। কিন্তু সে আমার সত্যিকারের দোস্ত। যাকে আমি মুখে স্বীকার করি এবং হৃদয়েও বিশ্বাস করি।

 

        : আপনাকে তো একজন জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাধিকারী নারী বলে মনে হচ্ছে। তবে তার পরও আপনি একটি ভুলের ওপর চলছেন।

 

        : সে ভুলটি কি?

 

        : আপনি একজন যুবতী নারী, তথাপি স্বীয় আপন জন (মুহরিম) ব্যতীত একাকি ভ্রমণ করছেন!

 

        তখন মহিলা এই আয়াতখানা তেলাওয়াত করলেন, “আমার পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী সেই মহান আল্লাহ যিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং তিনি নেককারদেরও পৃষ্ঠপোষক।” (সূরা আরাফঃ ১৯৬)

 

        ঘটনার বর্ণনাকারী বলেন, আমি কিছু রৌপ্যমুদ্রা তার হাতে তুলে দিতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলাে আপনাদের নিকট কোথা থেকে এবং কিভাবে এসেছে?

 

        : আমি হালাল পদ্ধতিতে কামাই রোজগার করে থাকি।

 

        : আপনার এ কামাই খুবই দুর্বল প্রকৃতির।

 

        : আমার কি দুর্বলতা আছে?

 

        : আপনার ভিতর একীনের দুর্বলতা আছে।

 

        : একীনের নিদর্শন কি?

 

        : আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত একীনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনি আল্লাহ পাকের অসন্তুষ্টিতে বর্ধিত দেহের রক্ত মাংস সংশোধিত করে নতুন গোশত দ্বারা সে স্থান পূরণ না করবেন, যে অংশে আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি থাকবে।

 

        : প্রত্যেক বস্তুর কিছু না কিছু নিদর্শন থাকে! আপনি যে সৎ ও সত্য এর নিদর্শন কী?

 

        মহিলা সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দুটো হাত মাটিতে মেরে কিছু কংকর কাঁকর ওঠালেন এবং বল্লেন, “হে দুর্বল ঈমানের অধিকারী! এগুলাে তুলে নিন।” মুহাম্মদ আবেদ সে গুলাে গ্রহণ করলেন। কিন্তু বিস্ময়কর যে, দেখা গেল সবগুলাে স্বর্ণমুদ্রা। মহিলা মুহাম্মদ আবেদকে বল্লেন, “আপনি এগুলাে নিয়ে নিন।

 

        আর আমাকে বল্লেন, “আপনাকে এজন্য দেয়া হয়নি যে, আপনি এগুলাে থেকে দূরে থাকতে চান।” অতঃপর আমাকে বল্লেন, “আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

 

        : রমলায়।

 

        : এটাই তো রমলা।

 

তাকিয়ে দেখলাম, হ্যা, সত্যি আমরা রমলা নগর প্রাচীরের নিকট দাঁড়িয়ে আছি। নগরীতে প্রবেশ করে দেখি, লােকেরা জুমার নামায আদায় শেষে ঘরে ফিরছেন। মুহাম্মদ আবেদ সে স্বর্ণমুদ্রাগুলাে দিয়ে আসক্বালান নগরীতে একটি মসজিদ তৈরী করলেন। যা আজো “মসজিদে মুহাবী” (অনুদানের মসজিদ) নামে পরিচিত।

 

        হযরত যুননুন মিসরীর এক কিশোরী থেকে উপদেশ গ্রহণ

 

        হযরত যুননূন মিশরী (রাহঃ) ছিলেন হিজরী দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর একজন, বিখ্যাত বুযুর্গ আবেদ, জাহেদ, আল্লাহর ওলী। তিনি এলমে জাহেরী এবং এলমে বাতেনীতে ছিলেন পরিপূর্ণ। তিনি ছিলেন হাদীসের, ফেকাহর ও তাসাউফের একজন বিখ্যাত ইমাম। তাঁর প্রতিটি কথা পাথরে খোদাই করে রাখার মত মূল্যবান। মিসরের অদূরে আসীম নামক স্থানে তাঁর জন্ম। হালকা। পাতলা ক্ষীণ দেহের অধিকারী যুননূনের আধ্যাতিকতার সামনে কালের অসংখ্য রাজা-বাদশা, আমীর উমরার মাথা নত হয়েছে। বাগদাদের খলিফা মুতাওয়াক্কিল বিল্লাহ তাঁকে একবার ফাঁসী দেয়ার মানসে বাগদাদে তলব করেন। কিন্তু অলৌকিক ভাবে তিনি স্বসম্মানে খলিফার দরবার থেকে বিদায় নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, একদা আমি আল্লাহ্ পাকে পবিত্র কাবা জিয়ারত করছি। হঠাৎ একটা নূরের ঝলক আকাশ পর্যন্ত বিচ্ছুরিত হতে দেখলাম। এতে আশ্চর্য বোধ করলাম। তওয়াফ শেষে কা’বার গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছি আর সে ঝলক নিয়ে চিন্তা করছি। ইতোমধ্যে একটি বিষাদ ও গাম্ভীর্য মিশ্রিত কণ্ঠ আমার কর্ণকুহরে এসে বিঁধল। আমি আওয়াজটার অনুসরণ করলাম। গিয়ে দেখি, কিশোরী কা’বার গেলাফ ধরে কবিতাবৃত্তি করছে:

 

        হে প্রেমাস্পদ! তুমি জান,

        আমার প্রেমিক, তুমি জান

        এই ক্ষীণদেহ, অশ্রু বিন্দু আজ

        একাকার হয়ে বলছে,

        যে প্রেম দীর্ঘদিন চেপে রেখেছিলাম

        হৃদয় ভুবনে

        পুঞ্জিভূত সে প্রেমকণাগুলাে

        বাঁধ ভাঙ্গা স্রোতের মত

        প্রবাহিত হলাে

        আজ এখানে।

 

        হযরত যুননূন (রাহঃ) বলেন, তার সাথে আমাকেও কান্না পেল। সে আরো বলছেঃ “হে আমার প্রভু! তোমার যে ভালবাসাটুকু আমার জন্য রয়েছে, সে ভিক্ষাটুকু তুমি আমাকে দিয়ে দাও।” আমি বললাম, হে মেয়ে! তোমাকে তো এভাবে বলা উচিত ছিল যে, হে প্রভু! তোমার প্রতি আমার যে ভালবাসাটুকু রয়েছে তার প্রতিদান তুমি আমাকে দিয়ে দাও। কারণ তুমি কিভাবে জানলে যে, আল্লাহ্ তোমাকে ভালবাসেন?

 

        : হে যুননূন! তুমি আমার নিকট থেকে দূরে সরে যাও। তুম কি জাননা, আল্লাহ তায়ালার এমন কিছু প্রিয় বান্দা আছেন যারা আল্লাহকে মহব্বত করেন এবং আল্লাহও তাদের মহব্বত করেন। আর আল্লাহ পাকের মহব্বত আগে সৃষ্টি হয়। এটা তাঁরই ঘোষণা, “অচিরেই আল্লাহ পাক এমন এক জাতি সৃষ্টি করবেন যাদেরকে আল্লাহ পাক ভালবাসেন। এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে।” (সূরা মায়েদাহ -৫৪)

 

        : তুমি কিভাবে জানলে যে আমি যুনন?

 

        : হে বোকা! আমার হৃদয় যখন গোপন দুনিয়ায় একবার ঘুরে আসে তখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তোমাকে চিনে নিয়েছি।

 

        : তোমাকে দুর্বল দেহ, ক্ষীণ শরীরের অধিকারী দেখছি। তবে কি তুমি অসুস্থ?

 

        তখন আবারো সে কবিতা আবৃত্তি করতে থাকে:

 

        আল্লাহ প্রেমিকরা দুনিয়াতে অসুস্থই থাকে। তাদের রোগ যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে। ঔষধ পথ্য সে রোগ ক্ষতের সৃষ্টি করে। তাঁর (আল্লাহর) প্রেমের কথা মনে হলে হৃদয় হয়ে ওঠে আরো অস্থির, অশান্ত। তাঁকে না দেখা পর্যন্ত সে ব্যথা ঘুচবে না।”

 

        অতঃপর আমাকে বলল, পিছনের দিকে তাকাও। তাকালাম অতঃপর তার দিকে তাকালাম কিন্তু তাকে আর দেখলাম না। কোথায় অদৃশ্য হল তা আর জানা হলাে না।

 

*****

 

 

বাবরী মজদি ধ্বংসকারী শত শত করসেবক আল্লাহর গজব-ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার

-----------------------------------------------------------------

        ১৯৯২ সালর ৬ ই ডিসেম্বর ভারতের ঐতিহাসকি বাবরী মসজদি ধ্বংসের সাথে জড়িত করসেবকরা আবারো আল্লাহর ভয়ঙ্কর গজবের শিকার হয়েছে। ভারতীয় পাক্ষিক পত্রিকা “তামিরে হায়াত” সূত্রে জানা যায় যে, ভারতে সংগঠিত সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে মারাত্মক জানমালের ক্ষয়ক্ষতির শিকার বিরাট অংশ বাবরী মসজিদ ধ্বংসকারী শত শত করসেবক। উল্লেখ্য, বাবরী ধ্বংসের সাথে জড়িত অধিকাংশ করবেসকদেরই সংগ্রহ করা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের লাতুর ও ওসমানাবাদ জেলা থেকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, সাম্প্রতিক কালের প্রলয়ংকারী ঐ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল উক্ত লাতুর ও ওসমানাবাদ জেলা। এই দুই জেলাতেই মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে, ঘর-বাড়ী গাছপালা ভূ-লুণ্ঠিত হয়েছে এবং ব্যাপক প্রাণহানী ঘটেছে। উক্ত সূত্র থেকে আরও জানা যায় যে, ভারতের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা উদ্ধারকারী এবং স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ লােকদের সূত্রে জানিয়েছে যে, ভূমিকম্পে প্রাণহানী ও মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার অধিকাংশই মসজিদ ধ্বংসের সাথে জড়িত করসেবক। এইসব করসেবকদের আত্মীয় স্বজনরা এ ঘটনাকে মসজিদ ভাঙ্গার অপরাধের শাস্তি স্বরূপ ‘ঈশ্বরের প্রতিশোধ’ বলে মনে করছে।

 

 

*****