JustPaste.it

দেশে দেশে ইসলাম

 

আমরা কেউ খবর রাখি নাঃ আলবেনিয়া হতে যাচ্ছে আরেক বসনিয়া!

নাসীম আরাফাত

========================================================================

 

        উষর পর্বতমালা, মেঘচুম্বী তোমর পর্বতশৃঙ্গ, স্ফটিক সদৃশ হ্রদের পর হ্রদ ও মাঝে মাঝে খরস্রোতা নদীর নয়নাভিরাম দেশ আলবেনিয়া। অ্যাড্রিয়াটিক সাগর বিধৌত এই দেশ আদি ইউরোপিয়ানরা প্রাচীঙ্কাল থেকে বসবাস করে আসছে। গোটা ইউরোপ মহাদেশের মাঝে এদেশের অধিবাসীরাই একটি সমৃদ্ধশালী আঞ্চলিক ভাষা ও সাহিত্যের উত্তরাধিকারী।

 

        গ্রীনিচ এর ২০° পূর্বে উত্তর-দক্ষিণ অক্ষরেখায় এর অবস্থান। আয়তন ১১৯৭ বর্গ মেইল। তথা ২৮৭৪৮ বর্গ কিঃ মিঃ। দেশটি যুগোশ্লাভিয়া, গ্রীস, ও আড্রিয়াটিক সাগর দ্বারা বেষ্টিত। রাজধানী তিরানা। স্কোডার, কোংচে, হারেস, ভলরো, জিরোকাসী ও এল্বাসেন প্রধান শহর। ডারেস প্রধান বন্দর ও সারান্দা মৎস বন্দর হিসসাবে বিখ্যাত। আলবেনিয়ার জনসংখ্যা ২৯,৭৫০০০। ৮৫% জন মুসলমান ও ১৫% জন খৃষ্টান।

 

ইসলামের আগমনঃ

        ১৩৫৫ খৃষ্টাব্দের কথা। রাজা দুশানের অত্যাচার-অনাচার আর দুঃশাষনে জনমনে অসন্তোষের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকে। এক পর্যায়ে তা প্রতিবাদ ও বিদ্রোহের আকার ধারণ করে এবং স্লাভ ও আলবেনীয় বংশদ্ভুত সামন্ত জমিদার প্রভুদের আবির্ভাব ঘটে। উত্তরাঞ্চলে বালশাগণ ও মধ্যাঞ্চলে হোপিয়া সকল সামন্ত প্রভুদের মাঝে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রভু ফিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বলসাগর আওলোনা, বেল্গ্রেড ও কানিনায় নিজেদের বস্তি স্থাপন করে প্রিথরেন পর্যন্ত বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রন লাভের চেষ্টা করে এবং বস্নিয়ার রাজা ও সার্বদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটা কার্লো থোপিয়ার জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। অন্যন্যোপায় হয়ে কার্লেথোপিয়া ১৩৮৫ খৃস্টাব্দে উসমানী তুর্কীদের নিকট সাহায্য প্রার্থণা করে।

 

 রাজনৈতিক চরম বিরোধের ফলে নির্যাতিত নিপীড়িত আলবেনীয় সর্বসাধারণের মুক্তির লক্ষ্যে ১৩৮৫ খৃস্টাব্দে উসমানী সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে। ১৮ই সেপ্টেম্বরে ভিজোস নদীর তীরে মুসলিম বাহিনী ও বলশাগনের মাঝে এক রক্তক্ষয়ী ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বলশা প্রধান নিহত হলে তারা পরাজিত হয়। এ ঘটনা গোটা আলবেনিয়ায় এক অভুতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করে। বলশার উত্তরাধিকারীরা সহ আলবেনিয়ার অন্যান্য সামন্ত প্রভুরা মুসলমান সুলতানের অধীনতা স্বীকার করে নেয়। এরপর থেকে নানা চড়াই উৎড়াই আর বাধা বিপর্যয়ের মোকাবিলা করে আলবেনিয়া মুসলিম শাসন চলে আসছে।

 

        মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে আলবেনিয়ার আদিবাসীদের মাঝে দারুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। মুসলমানদের সুশাসন, চারিত্রিক মাধুর্য ও আচার-আচরণে মুগ্ধ হয়ে তারা স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। গড়ে উঠে নগরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে মসজিদ-মাদ্রাসা, আর খানকাহ। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরিণতির রেশ ধরেই এগিয়ে চলে মুসলিম সুলতানরা। ভোগ বিলাস বিনোদন আর ধর্মবিমুখীতার কারণে কেন্দ্রীয় শক্তি ধীর ধীরে দুর্বল হয়ে পরে। পার্শ্ববর্তী খৃস্টান রাষ্ট্রগুলো আলবেনিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। অষ্ট্রীয়া, হাঙ্গেরী, ও ইটালী স্বাধিকার আন্দোলনের অগ্নি উসকে দেয় আলবেনীয়দের অন্তরে। ছেয়ে যায় আলবেনিয়ার আকাশ বিপদ কালমেঘে। এরই মধ্যে শুরু হয় বল্কান যুদ্ধ। এতে আলবেনিয়ার সামগ্রীক পরিস্থিতি পালটে যায় এবং ১৯১২ খৃস্টাব্দে বিপ্লবী নেতা ইস্মাইল কামাল আলবেনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তারপর লন্ডন সম্মেলনে আলবেনিয়াকে দৃঢ় শক্তি কর্তৃক প্রদত্ত গ্যারান্টির অধীনে একটি স্বাধীন রাজ্য রূপে ঘোষণা করা হয়। প্রথম মহাযুদ্ধের পর সার্বিয়া আলবেনিয়ার স্কোয়াড ও দূরবেস নগরীর দাবী ইত্থাপন করলে আলবেনিয়ার নেতৃবৃন্দ একটি সম্মেলনের আহবান করেন। সম্মেলনে তারা আলবেনিয়াকে একটি স্বাধীন রাষ্ট হিসেবে দাবী করে তিরানায় একটি জাতীয় সরকার গঠন করে। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের শৃঙ্খলার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা প্রাপ্ত আলবেনীয়ায় আংক্ষিত শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত না হয়ে ক্রমেই উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে আলবেনীয়া যুগোশ্লোভিয়া ও ইটালীর রাজনৈতিক ঘাটির চালে পরিচালিত হতে থাকে।

 

        ১৯২২ খৃষ্টাব্দে পশ্চিম ও মধ্য সমভূমি অঞ্চলের জমিদার মুসলিম রে-গণের সাথে পপুলার পার্টির মারাত্মক সংঘাত সৃষ্টি হয়। ক্রমে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে এবং বিপ্লব ঘটে। প্রধাণমন্ত্রী আহমেদ জোগ যুগোশ্লোভিয়ায় পালিয়ে যায়। ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে আবার যুগোশ্লাভ সমর্থনে পুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে সে। আলবেনিয়াকে একটি প্রজাতন্ত্র ও আহমদ যোগকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট আহমদ জোগ এরপর ইটালীর সাথে কয়েক দফা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯২৮ খৃস্টব্দে আহমদ যোগকে আলবেনিয়ার অবিসংবাদিত রাজা ঘোষণা করআ হয়।

 

সমাজতন্ত্রের উত্থান

        রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সারা পৃথিবী সমাজতন্ত্রের স্বপ্নিল শুখদোলায় দোলে উঠে। পূর্ব ইউরোপের প্রত্যকীটি দেশ সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে যায়। আলবেনিয়াও পিছে পড়ে থাকে না। অপরিণামদর্শী কিছু টগবগে তরুন সমাজতন্ত্রের দীক্ষা গ্রহন করে আলবেনীয়ায় সমাজতন্ত্রের প্রচার প্রচারণা শুরু করে। দারিদ্র পীড়িত, নির্যাতিত জনতা শান্তির এই অলিক বার্ণালীতে বিগলিত হয়ে সমাজতন্ত্রের দীক্ষা গ্রহণ করতে থাকে। বাধভাঙ্গা এই উত্তাল তরঙ্গের মুখে আল্বেনিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহন করেন। এবং দন্ড মুন্ডের একক মালিক হিসাবে মুসলমানদের ইতিহাসের এক সকরুন অধ্যায়। নির্যাতন নিপীড়নের ষ্টীম রোলার বয়ে যায় মুসলমানদের উপর থেকে। ঘোষনা করা হয় ধ্ররমের বিরুদ্ধের যুদ্ধে। মসজিদের পর মসজিদ ধুলিস্মাৎ করা হয়। যে দেশের ১৭০০ মসজিদ থেকে পত্যহ পাঁচবার আল্লাহু আকবর মহাধ্বনি উত্থিত হতো। জনমনে অভূতপূর্ব শিহরণ সৃষ্ট করতো। সে মসজিদগুলো ক্রমান্বয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে। স্তব্দধে হয়ে যায় তার আযান ধ্বনি। অক্ষত মসজিদগুলো মিউজিয়াম, চর্মকার আর কর্মকারের  ওয়ার্কশপে পরিণত হতে থাকে। প্রতিবাদমুখী আলিম ওলামা ও ধার্মিক  ব্যাক্তিরা এগিয়ে এলে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বা কারাগারের রুদ্ধ প্রকোষ্টে ধূকে ধূকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়। হানাদার এই সমাজবাদীদের হাত থেকে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে মাত্র ৫০ টি মসজিদ অক্ষত রয়ে যায়। সোভিয়েট ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় আলবেনীয়ার সমাজতন্ত্রবাদীরা এভাবে গোটা দেশে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে থাকে।

 

সমাজতন্ত্রের পতন

         মিখাইল গর্ভাচভের আমলে সোভিয়েট ইউনিয়নে সংস্কার আন্দোলন জোরদার হয়। খুব ধীরে সোভিয়েট ইউনিয়ন মুক্ত বাজার অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ফলে আলবেনীয় কট্টরপন্থী নেতার সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের চুক্তিগত মতবিরোধ দেখা দেয়। বিরোধের এক পর্যায়ে আলবেনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের সয়ামজতান্ত্রিক বলয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আশির দশকে আলবেনিয়ায় গণজাগরণ দেখা দেয়। শুরু হয় সমাজতান্ত্রিক বিরোধী কানাঘুষা, তারপর প্রভার প্রচারণা। নিপিষ্ট জনতা সংগঠিত হতে থাকে। ইতিমধ্যে সমাজতন্ত্রের অপমৃত্যুর সক্রুন দৃশ্যে আলবেনীয় জনগণ আরো সোচ্চার হয়ে উঠে এবং সুদীর্ঘ প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল পর সেখানে বহু প্রতিক্ষিত অবাধ গনভোট অনুষ্ঠিত হয়। গণভোটে কমিউনিস্ট পার্টি নির্মম পরাজয় বরণ করার সাথে সাথে রহস্য ঘেরা রুদ্ধ এই দেশটির সকল কপাট খুলে যায়। গণতন্ত্রের হিল্লোল হাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে এবার।

 

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটঃ

        সুদীর্ঘ ৫৫ বৎসরের কমিউনিস্ট যাতাকলে পিস্ট আলবেনিয়ার সকল শিল্প কারখানা ভেঙ্গে পড়েছে। অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা রাস্তা ঘাট অত্যন্ত খারাপ। আলবেনিয়ায় গিয়ে কোন পর্যটক মনে করে না যে সে ইউরোপের কোন দেশে ভ্রমণ করছে। জীবন জীবিকার নিতান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর অভাব সেখানে লেগেই আছে। কলকারখানাগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি পানি ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট লেগে থাকে।

 

        সার কথা, আলবেনিয়া এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলা করছে। আলবেনিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে তীব্র প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকায় প্রত্যেক দল জনগণকে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক এই চরম সংকটের কারণে তা পূরণ করতে ব্যার্থ হয়ে পাশ্চাত্যের দাতা সংস্থাগুলোর দার গ্রস্থ হচ্ছে। অনন্যোপায় আলবেনীয় শাসক্রা মুসলমানদের চির শত্রু ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে সাহায্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাহায্যের জন্য পাশ্চাত্যের খৃষ্টান রাষ্ট্রগুলোর শরণাপন্ন হচ্ছে তারা।

 

        ইটালী এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আলবেনিয়াকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সাহায্য দিলেও পাশ্চাত্য লোভাতুর দৃষ্টি এড়িয়ে সে আলবেনিয়ার মুল্যবান খনিজ সম্পদগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা ক্রমে বেড়ে চলছে। খৃস্টান রাষ্ট্রগুলো আর নিঃশর্ত ঋণদানে আগ্রহী নয়। তারা ঋণের সাথে এমন এমন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে যা মুসলিম আকীদা বিশ্বাস ও শিক্ষা সংস্কৃতি পরিপন্থী। যা জাতীয় সত্তার প্রতি বিরাট এক হুমকি।

 

মিশনারী তৎপরতা

        দুস্থ মানবতার সেবার ছদ্মাবরণে দরিদ্র বিমোচনের নামে খৃস্টান মিশনারীরা আলবেনিয়ায় ছুটে আসছে। ৮৩ টি মিশনারী সংস্থা পূর্ণোদ্যমে অব্যাহত গতিতে খৃস্টবাদের প্রচার কার্য চালিয়ে যাচ্ছে। বসনিয়া হার্জেগোভিনার এই হিংস্র হায়েনাদের দন্ত নখরের রক্তাক্ত গভীর ক্ষতটি শুকাতে না শুকাতেই তারা আবার ছুটে আসছে আলবেনিয়ার মা বোনদের সম্ভ্রম চাঁদর ছিন্ন করতে-তাদের ইজ্জত আবরু ধুলি মলিন করতে।

 

        সংখ্যাগরিষ্ট এই মুসলিম দেশটিতে খৃস্টানদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য তারা কর্মোদ্যম যুবক শ্রেনীকে বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন চাকুরীর ব্যবস্থা করে ধীরে ধীরে তাদের খৃস্টান বানানো হচ্ছে। নিরক্ষতা দূরীকরণ বা শিক্ষার নামে ধর্মান্তরের কাজটি নির্বিবাদে চালিয়ে যাচ্ছে। খৃস্টান ধর্মের  বিভিন্ন বি পুস্তক হ্যান্ডবিল, লিফলেট অবাধ জনসাধারণের হাতে পৌছে দিচ্ছে। বহু আলবেনিয় মসুলিম শিশু ও মহিলারা খৃস্টধর্মে দীক্ষা নিয়ে গলায় ক্রুশ চিহ্ন ব্যাবহার করছে। খৃস্টান পাদ্রীরা এবার গীর্জা নির্মাণে বেশী তৎপর নয়। তারা এমন একটি আলবেনীয় প্রজন্ম দেখতে চায় যারা নিজেরাই আলবেনীয়ায় খৃস্টান ধর্মকে আবহমান কাল লালন করবে। নিজেরাই গ্রামে-নগরে-বন্দরে গীর্জা তৈরী করবে।

 

        মিশনারীরা এলক্ষ্য অর্জনে বহুদূর অগ্রসর হয়ে গেছে। তারা রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমগুলোতে অপ্রতিরোধ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সমপ্রতি টেলিভিশনে তারা প্রভূত ক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রত্যহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান মালায় খৃশটান্দের সেবামূলক কার্যকলাপ প হৃদ্যতার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়। বিপ্রীতে মুসলামানদের চরিত্রহীনতার চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে এবং বলা হয় যে একমাত্র ইসলামই নাকি মাতৃজাতির স্বাধীনতা হরণ করে নিয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী তাদের শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞান বিজ্ঞানের-আলো থেকে বঞ্চিত রেখে চলেছে চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ করে রেখেছে। দেয়নি তাদের মুক্ত বিহঙ্গে অবাধে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার। ফলে তাদের নাকি সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটছে না। এরই মধ্যে আলবেনিয়ার ঘরে ঘরে খৃস্টবাদের দাওয়াত পৌছে গেছে। প্রত্যেক স্কুলের অবুঝ ছাত্রদের মাঝে তারা বিতরণ করছে মনলোভা স্কুল্ব্যাগ। তার সাথে খৃস্টবাদের কিছু বই পুস্তক ও এক কপি বাইবেল, একটি ক্রুশমালা ও কিছু শিক্ষার উপকরণ।

 

        চিন্তার জগতে শিক্ষিত যুবকদের মাঝে ধ্বংসের আরো নব নব পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। ভাষা-শিক্ষা কর্মসূচী তার অন্যতম। জায়গায় জায়গায় ভাষা শিক্ষা কেন্দ খুলে শিক্কাহ্র সাথে সাথে খৃস্টবাদের সত্যতা চিরন্তনতা ও মহত্ব বর্ণনা করা হচ্ছে।

 

 আমেরিকার এক মিশনারী সংস্থা রাজধানী তিরানার বুকে এক বিরাট এতিমখানা খুলছে। এতিম অসহায় শিশু-কিশরদের সেবা ও শিক্ষার নামে তাদের নিজস্ব শিশু সদনে নিয়ে আসছে। তার পর সময়ের গতির তালে তারা মিশে যাচ্ছে খৃস্ট বিশ্বে।

 

        সম্প্রতি আলবেনিয় মিশনারী সংস্থাগুলি ভেটিকেন পোপের আগমন প্রতীক্ষায় অধীর হয়ে আছে। তার আগমন উপলক্ষে বি-পত্র, হ্যান্ডবিল, পোষ্টার ছাপিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সংবাদ পৌছে দিচ্ছে। কারণ পোপের এই আগমন সাধারণ জনগণ থেকে রাষ্ট্রীয় মহল পর্যন্ত আলোড়ন সৃষ্টি করবে, এতে মিশনারি কাজ বিদ্যুৎ গতিতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। খৃষ্টানরা অভিষ্ট লক্ষ্যে দ্রুত পোউছে যাবে।

 

আত্মহননের কিছু চিত্র

        সুদীর্ঘ অর্ধ শতাব্দি কাল পর্যন্ত ন্সতিক্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাথে আলম সম্প্রদায়কে যে হারে হত্যা  করা হয়েছে, তাতে আলবেনিয়া প্রায় আলেম ওলামা শুন্য হয়ে পড়েছে। বিদয়াত, কুসংস্কার অ কুফরী আকীদা বিশ্বাসে ছেয়ে ফেছে আলবেনীয় মুসলিম সামজ। ধর্মের লেবাসে কিছু ভন্ড সূফী সাধক অ পীর দরবেশদের সমাজ বিধ্বংসী অণৈসলামিক কার্যকলাপ আলবেনীয় মুসলিম মানসকে আরো দূষিত করছে। চিন্তাশীল মানুষ এখন ইসলামের সততা অ বিশুদ্ধতায় প্রশ্ন তুলছে। এ ভন্ড পীররা জায়গায় জায়গায় আস্তানা গেড়ে সরল মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে। কেউ কেউ মূর্তি পূজাও করছে। মাজারের অলিক কল্পশক্তির বর্ণনা করছে। মাজারে গিয়ে সিজদা অ মাক্সুদ হাসিলের জন্য প্রার্থণা করছে।

 

        মিশনারী সংস্থাগুলো তাদের কার্যকলাপ ডালাও ভাবে প্রচার করে মানুষের আত্মবিশ্বাসে হানা দিচ্ছে। বিংশ শতাব্দীর এই বিজ্ঞান্ময় যুগে ইসলাম কে অচল প্রমাণে তারা উঠে পড়ে লেগে গেছে। ওরা ওদের তৎপরতা বিনা বাধায় আরো বেগবান করছে।

 

মুসলিম বিশ্বের দায়িত্ব অ কর্তব্য

        অফুরন্ত ধন-সম্পদ অ প্রাচুর্যের মালিক মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিত্তবান ধর্মপরায়ণ মসুলমানদের ব্যাপার কী দায়িত্ব তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘ দারিদ্র, লাঞ্চনা, আর বঞ্চনার শিকার এই আলনেবীয় মুসলমানদের সাহাযার্থে এগিয়ে আস এখন আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। অর্থনৈতিক উন্নতি অ সমৃদ্ধির পথ উম্মোচিত করে দারিদ্র বিমোচনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার সাথে সাথে সঠিক ইসলামী সমাজ গড়ার চিন্তা ফিকির আমাদেরই করতে হবে। তাহলে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে কঠিনতম বাস্তবতায় নিপীড়িত এই দেশটি সাফল্যের সিড়ি অতিক্রম করে ইউরোপের বুকে ইসলামের কালেমা খচিত পতাকা উড্ডিন হবে আবার।

 

আলবেনীয় মুসলমানদের প্রয়োজন সমূহ

        (১) আলবেনীয় মুসলিম সমাজ আজ নিবেদিত প্রাণ কিছু দায়ি-ইল্লাহ বামুয়াল্লিম ধর্মীয় শিক্ষাদানকারী আলিম অলামার তীব্র প্রয়োজন অনুভব করছে। যারা শিক্ষিত অশিক্ষিত জ্ঞানী-গুনী মানুষ্কে ধ্ররমীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার সাথে সাথে ইসলামী বিধি বিধান পালন ও তার প্রচার প্রসারের ক্ষেত্রে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে। সেখানে একটি ইসলামী সমাজ গড়ে তুল্বে।

 

        (২) আলবেনীয় ভাষায় ছোট বড় বিভিন্ন ইসলামী বই পুস্তক করা। এতে নিঃসন্দেহে আলবেনীয় মসুলিম সমাজে নবজাগরণ শুরু হবে এবং ধর্মীয় বিষয়ে তারা আরো সজাগ ও সতর্ক হবে।

 

        (৩) আলবেনিয়ার অনাগত প্রজন্ম যেন ইসলামের পতাকাবাহী সৈনিক হতে পারে তাই তাদের জন্য এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যেখানে তারা শিক্ষিত, চরিত্রবান ও সংস্কৃতবান রূপে গড়ে ওঠবে। যেন তাদের হাতেই ভবিষ্যত নেতৃত্ব পরিচালিত হয়।

 

        (৪) ঘন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নতুন নতুন মসজিদ ভিত্তিক দাওয়াতের কাজ চাকিয়ে যাওয়া, বিশুদ্ধ কোরআনী তাকিমের ব্যবস্থা করা। বিধ্বস্ত ও ধ্বংসপ্রায় মুখ থুবড়ে পরা মসজিদ্গুলোকে সংস্কার করে আবার তা জীবন্ত সজীব করা, প্রত্যেক মসজিদে সুযোগ্য মুয়াজ্জিনের বুবস্থা করা।

 

        (৫) যে সব আমিল ওলামা স্বতস্ফূর্ত ভাবে আল্বেনীয়ায় দাওয়াত ও তাব্লীগের কাজে অংশ গ্রহণ্র আগ্রহী অথচ আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সক্ষম হচ্ছে না তাদের যাতায়াত, থাকা-খাওয়া ও প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসা।

 

        (৬) দরিদ্র বঞ্চিত আলবেনীয়  মুসলমানরা তীব্র আর্থিক সংকটের কারণে তারা স্বীয় মান ইজ্জত, ধর্ম-বি্শ্বাস ও সংস্কৃতিতে অবিচল থাকতে পারছে না। তাই তাদেরকে যথাসাধ্য আর্থিক সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করা।

 

        (৭) আলবেনীয় মুসলিম নারীদের পর্দার সাথে চলার জন্য বোরখাসহ অন্যন্য অতি প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণের মাধ্যমে তাদের ইজ্জয় -আবরু ও সম্ভ্রম রক্ষার্তে এগিয়ে আসা। মুসলিম নারী মানস জাগরণের জন্য সুষ্ঠু ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যেন ভবিষ্যতের প্রজন্ম মায়ের কোলেই ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করে সোনালী জীবন গড়তে পাবে।

 

        (৮) সবশেষে আলবেনীয় মুসলমাদের জন্য মহান আল্লাহ্‌র বিনয় বিগলিত চিত্তে দোয়া করা। যেন পৃথিবীর বুকে আরেকটি বসনিয়া, আরেকটি হার্জেগভেনিয়ার করুন মৃত্যুর গোঙ্গানী ইসলামী বিশ্বকে শুনতে না হয়। যেন তার আগেই ইসলামী শিশব আলবেনিয়ার পাশে দাড়াতে পারে। যেন হেদায়েতের মশাল নিয়ে তাদের নূরে ইলাহীর পথ দেখাতে পারে।  

(সমাপ্ত)

 

*****