JustPaste.it

দেশে দেশে ইসলাম

 

দাগিস্তানঃ যেখানে পতপত করে উড়ছে ইসলামের বিজয় নিশান

নাসীম আরাফাত


তিনদিক পর্বত প্রাচীরে বেষ্টিত এক নয়নাভিরাম ভূস্বর্গের নাম দাগিস্তান। পূর্বপ্রান্ত যেমনি ককেসাস পর্বতমালা বুকে নিয়ে শির উচু করে বিজয় ডংকা বাজাচ্ছে, ঠিক তেমনি পূর্বপ্রান্তে আছড়ে পড়ছে কাম্পিয়ান সাগরের রাশি রাশি স্নিগ্ধশীতল বারিধারা। এমনি এক চমৎকার ভূস্বর্গ দাগিস্তান। সে তার বুকে ছোট বড় চৌদ্দটি পাহাড়, আটটি প্রসিদ্ধ শহর ধারণ করে চির গর্বিত। কে না জানে দাগিস্তানের নাম। যার মোট আয়তন ৫০৩০০ বর্গ কিলোমিটার। 
দাগিস্তানের এই পর্বতমালার বুক চিরে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য স্বচ্ছ স্ফটিক সদৃশ্য শীতল বরফমালা। এর মাঝে নহরে তুর্ক সর্বখ্যাত, যা দেশটির বুক চিরে চিরে কয়েকটি শহর বিধৌত করে কাম্পিয়ান সাগরে আত্মাহুতি দিয়ে যাত্রার বিরতি টেনেছে। যার ফলে দাগিস্তান একটি কৃষি উন্নত দেশ। সবৃজ শ্যামল দেশ। অসংখ্য সুস্বাদু ফলফলাদি ও টাটকা শাকসজির দেশ। এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান, গম, যব, সেব ইত্যাদি উৎপন্ন হয়। তাছাড়া এদেশের অধিকাংশ মানুষ গবাদি পশু পালনে দারুন পটু। তাই বিজন চারণভূমিতে প্রায়ই নজর কাড়ে দিগন্ত বিস্তৃত বকরির পাল। যা দর্শককে করে বিমোহিত, বিস্ময়াহত। দাগিস্তানের ভূগর্তও আল্লাহর অপার নেয়ামত থেকে বঞ্চিত নয়। তার ভূগর্ভে রয়েছে উন্নতমানের পেট্রোল, গ্যাস ও কয়লার অসংখ্য খনি। ফলে চোখের পলকে এখানে সেখানে গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা ও বিশাল বিশাল ইন্ডাস্ট্রি। অতি শীঘ্রই দাগিস্তান উন্নত বিশ্বের বাজারে তার পণ্য রফতানির আশা রাখছে।  

 

জনবসতি  

দাগিস্তানের জাতি ও গোত্রসমূহ অত্যন্ত সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের সাথে বহুকাল যাবৎ বসবাস করছে। ১৯৮৯ সালের আদম শুমারিতে দাগিস্তানে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার লোকের অধিবাস। ৩৪টির বেশী গোত্র সেখানে বসবাস করে। পূর্ব থেকেই দাগিস্তানে বহুভাষা প্রচলিত রয়েছে। তদুপরি ইসলাম গ্রহণের পর দাগিস্তানের অধিবাসীদের মাঝে আরবী ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি গভীর আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। ব্যাপকভাবে তা জনপ্রিয়তা লাভ করে। মাতৃভাষার ন্যায় আরবী ভাষাও সেখানে ব্যাপক চর্চা হতে থাকে। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তন ও মুসলমানদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কারণে ১৯২৮ সালে দাগিস্তানের অধিবাসীদের উপর ল্যাটিন ভাষা চাপিয়ে দেয়া হয়। এর কয়েকবছর পরই ১৯৩৮ সালে ল্যাটিনের পরিবর্তে সালালজী ভাষা চাপিয়ে দেয়া হয়। 
স্মতব্য যে, একই সমাজে যখন বিভিন্ন ভাষাবাসী লোক বাস করে, তখন তাদের মাঝে চির ঐক্য, সম্প্রীতি ও  ভ্রাতৃত্ব সৃষ্ট হওয়া দুষ্কর ব্যাপার বটে। তাই ইসলাম কিয়ামত দিবস পর্যন্ত স্বীয় স্বকীয়তা বজায় রেখে দুনিয়ার মাঝে প্রতিষ্ঠিত থাকবে বলে সে ইসলাম আকীদা বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে ঐক্যের সাথে সাথে ভাষাগত ঐক্য ও আরবী ভাষার প্রতি প্রচুর উৎসাহ প্রদান করেছে। যে কারণে দাগিস্তানের অধিবাসীরা ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই তারা আরবী ভাষাকে সকল ভাষার উপর প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। যার ফলে দাগিস্তানে প্রচুর বিখ্যাত আলিম সৃষ্টি হয়েছে, যারা আরবী ভাষায় প্রচুর পুস্তক রচনা করে গেছেন। ১৯২৩ সালের আদম শুমারীতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, সেখানের শিক্ষিত সমাজ ও আলিম ওলামা আরবী ভাষায় কথা বলতেন এবং মাতৃভাষার চেয়ে আরবী ভাষায় তারা অধিক দক্ষতা রাখতেন।  
তারা কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার স্টীমরোলারে নির্যাতিত হওয়া সত্তেও আরবী ভাষা রক্ষায় তারা প্রাণ দিয়ে হলেও চাইতেন যে, প্রতিটি মুসলমান যেন ইসলামকে তার মূল্য উৎস থেকে গ্রহণ করে ইসলামী আদর্শে অনুপাণিত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলমান যেন কুরআন ও হাদীসকে আরবী ভাষায় বুঝতে সক্ষম হয়। আলিম সমাজের এ প্রেরণা, আগ্রহ আর সমাজবাদীদের এর প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে এক চরম সংঘাতের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় এবং এরই সূত্র ধরে দাগিস্তানের বহু আলিমের বুকের রক্তে রঞ্জিত হয় তা ধূলি-ধূসর বুক। 

 

দাগিস্তানে ইসলামের আগমন 

দাগিস্তানের জমীন অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বারবার সিক্ত হয়েছে। বহু হকুমাতের গমনাগমনে বার বার আপন অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। খৃস্টপূর্ব ২৫ অব্দে রোমানরা দাগিস্তান দখল করে নেয় এবং স্থানীয় জনগণের উপর দারুন অত্যাচার শুরু করে। স্বর্গীয় দাগিস্তান তখন নরকের রূপ ধারণ করে। চারিদিকে হাহাকার। সর্বত্র ত্রাহি ত্রাহি ভাব। কিন্তু নির্যাতিত মানবতার পিট যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন তারা জীবন মরণ সংগামের পথ বেছে নেয়।  
সাহায্যের হাত বাড়ায় ইরান সম্রাট্যের প্রতি। ইরান সহযোগিতায় দাগিস্তানবাসী আবার স্বদেশে আত্মধিকার প্রতিষ্ঠা করে এবং রোমান জালিম শাসকদের পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়। খৃষ্টিয় ১৪ শতাব্দির সাইবেরিন অধ্যুষিত তুর্কিরা দাগিস্তান আক্রমণ করে। তুর্কী শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয় সেখানে । ১৬ শতাব্দিতে সমুদ্র শহরকে রাজধানী ঘোষণা করে। এমনিভাবে ক্ষমতার অদল বদলে নিপিষ্ট দাগিস্তানবাসীরা নিঃস্ব অসহায়ের মত বার বার জুলুম অত্যাচারের খাচায় বন্দী হতে থাকে। 
সবশেষে এবং সর্বপ্রথম ইসলামের সাম্য ও প্রগতির চেরাগ নিয়ে দাগিস্তানে আগমন করেন হযরত সুরাকা ইবনে উমর (রাঃ)। ইরান পদানত করার পর আজারবাইজানের পথে দরবন্দ শহরে এসে তিনি পৌছেন। তারপর ২২ হিজরী মোতাবেক ৬৪৩ খৃষ্টাব্দে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে রবিয়াহ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী এদেশ পদানত করে। তখনো সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ হতে থাকে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয় ৩৫ হিজরী মোতাবেক ৬৫৬ খুস্টাব্দে। এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিদ্রোহীদের সমুচিত জওয়াব দেয় এবং পরাভূত করে সমন্দর নামক সুরক্ষিত শহর থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়। ফলে তারা কাম্পিয়ান সাগরের উপকূলে অবস্থিত রদীল শহরে আশ্রয় নেয়! প্রচণ্ড যুদ্ধে কয়েকজন সাহাবী শাহাদত বরণ করেন। মোট কথা, উমাইয়াদের শাসনামলেই দাগিস্তানে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মারওয়ান ইবনে মুহাম্মদের শাসনামলে দাগিস্তানে বহু সংস্কারমূলক কাজ সম্পাদিত করেন। তিনি ইসলামী সালতানাতের সীমান্তকে অত্যন্ত মজবুত ও শিক্ষা-দীক্ষা ও ভ্রাতৃত্ব সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাদের অবদান সুরক্ষিত করে তুলেন। 
কিন্তু দাগিস্তানের ভাগ্যসূর্য তখনই মধ্যগগণে উদিত হয়, যখন আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদ তার স্ত্রী জোবায়দা সহ উক্ত অঞ্চল পরিদর্শনে যান এবং সচক্ষে সে দেশের নৈসর্গিক মনোরম দৃশ্য দেখে অভিভূত হন। ফলে তারা দাগিস্তানকে একটি উন্নত দেশরূপে গড়ে তুলতে মনস্থ করেন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন। খলীফা হারুনুর রশীদ ও তার স্ত্রী জোবায়দার আন্তরিক চেষ্টায় দাগিস্তান সত্যিকারের দাগিস্তানে রূপান্তরিত হয়।  
আব্বাসী খলীফা মোতাওয়াক্বিলের হত্যাকাণ্ডের পর ইসলামী সালতানাতে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ফলে ২৪৭ হিজরী মোতাবেক ৮৬৮ সালে হাসেম ইবনে সরাকা সালমী দরবন্দ শহরকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। ফলে ছোট্ট এই স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতি সেলজক গোত্র সরদারদের লোভ হয়। ৪৫৯ হিজরী মোতাবেক ১০৬৬ সালে তারা এই স্বাধীন রাষ্ট্রটির ওপর ব্যাপক হামলা চালায়। কিন্তু তারা পরাভূত হয়ে পশ্চাধাবনে বাধ্য হয়। ৬২০ হিজরী মোতাবেক ১২২৩ সালে আবার দাগিস্তানের আকাশে বিপদের ঘনঘটা শুরু হয়। মোগল বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে লন্ডভন্ড হয়ে যায় দাগিস্তান। নিহত হয় হাজার হাজার মুসলমান। চাপ চাপ রঙে লালে লাল হয়ে যায় দাগিস্তানের জমীন ৷ মুগলরা চেপে বসে দাগিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। 
এরপর শিয়া-সুন্নিদের বহু যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে দাগিস্তানের শহর, বন্দর, পাহাড়, পর্বত। আকীদা ও বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে শিয়া-তুকীর্দের যুদ্ধ হয়েছিল এই দাখিস্তানেরই বুকে। উসমানি খিলাফত ও ইরানী শিয়াদের মাঝে যুদ্ধও প্রত্যক্ষ করেছে দাগিস্তানের জনগণ। এভাবে একের পর এক যুদ্ধে এক সময় দাগিস্তান ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়ে। ঠিক তখন ক্ষণিকের স্বস্তি স্বরূপ ১৭১২ সালে সুন্নী মুজাহিদদের নেতৃত্বে একটি সঠিক ইসলামী হুকুমত কায়েম হয়। কিন্তু ইসলামী হুকুমতের স্বাদ তাদের কণ্ঠে পৌছার পূর্বেই দাগিস্তানকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আবার অশান্ত হয়ে উঠে দাগিস্তান। 

 

রুশ ভল্লুকের কবলে  

এবার রুশ শ্বেত ভল্লুকদের লোমশথাবায় আক্রান্ত হয় দাগিস্তান। প্রচণ্ড এক থাবায় লুফে নেয় তার দাগিস্তানের স্বাধীনতা। ১৭১৩ সালে এ থাবার দাগিস্তানের কণ্ঠনালি পর্যন্ত পৌছে যায়। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে পুরো দাগিস্তান। শহীদ হয় হাজার হাজার মুজাহিদ মুসলমান। স্বাধীনতার চির উন্নত পতাকা ধুলায় লুণ্ঠিত হয়। রুশরা প্রথমে আর্মেনী ও বুজী খৃষ্টানদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে এদের মধ্যবর্তী নির্জন স্থানে-যেখানে ইউরোপিয়ান ডাকুরা বসবাস করতো সেখানে-একটি কিল্লা স্থাপন করে। ফলে ডাকুরা এ স্থান ত্যাগ করে চলে যায় এবং আর্মেনী ও কুরজী খৃষ্টানদের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে যৌথ উদ্যোগে মুসলমানদের উপর আক্রমন করার পায়তারা চালায়।    
চেচেনীয় মুজাহিদ ইমাম মনসুর (রাঃ) এ নীল নকসা আঁচ করে ফেলেন। তিনি ইকামা শহরে একটি মজবুত কিল্লা গড়ে তুলেন এবং মরণপণ একদল মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে লাগাতার ১৪ দিন অত্যন্ত বীরত্বে সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যান। পরিশেষে ১৭৯১ সালে তিনি রুশ বাহিনীর হাতে বন্দী হন। তাকে বন্দী করে রুশ সম্রাটের নিকট নিয়ে যাওয়া হয়। এর তিন বৎসর পর ১৭৯৪ সালে রুশ শ্বেত ভল্লুকের হাতে অত্যান্ত নির্মমভাবে তিনি শাহাদত লাভে ধন্য হন।  
রুশরা ১৭৯৬ সালে দ্বিতীয়বার দরবান্দ শহর পদানত করে। রুশদের এই আক্রমণের ফলে আরেকটি নতুন ইসলামী সশস্ত্র বাহিনীর আবির্ভাব ঘটে। এর অনুসারী ও সৈন্যদর 'মুরীদিন' বলা হতো। এরা ইমাম মনসুরেরই অনুসারী ছিলেন। এদের মূল নেতৃত্বে ছিলেন গাজী মুহাম্মদ হামজা বেগ ও ইমাম শামিল আফারী। এই ইমাম শামিল রুশদের আক্রমণ প্রতিহত করার লক্ষে দাগিস্তানের অভ্যন্তরে এক বিরাট অস্ত্র উৎপাদন ফ্যাক্টরী স্থাপন করেছিলেন। যেখানে ট্যাংক, সহ অত্যাধুনিক গোলাবারুদ তৈরী করা হত। এ সকল পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল ককেশাশ অঞ্চলের মুসলমানরা যাতে নিরাপদে ইসলামী জীবন যাপন করতে পারে এবং এর সাথে সাথে আল্লাহর হুকুম পালনে জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকবে। ইমাম শীমিল (রাঃ)-এর এ জিহাদী তৎপরতা সুদীর্ঘ ৩৫ বৎসর অব্যাহত থাকে। ফলে ককেশাশ অঞ্চলের প্রতিটি মুসলমান জিহাদী প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে উঠে। শাহাদাত ফি সাবিল্লিহ ছিলো তাদের জীবনের চরম ও পরম পাওয়া। তারা জিহাদী মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে রুশদের বহু অঞ্চল জয় করে নেয়। বহু গনীমতের মাল তারা লাভ করেন এবং বিপুল অস্ত্রশস্ত্র গোলা বারুদ অর্জন করেন।  
ফলে রুশরা বিপুল সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে এক বিশাল যুদ্ধের আয়োজন করে এবং মুসলমানদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। তাদের লক্ষ্য ও মূল উদ্দেশ্য হল, যে করেই হোক ইমাম শামিলকে মৃত অথবা জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করতেই হবে। কারণ এ লোকই তাদের প্রাণশক্তি। রাশিয়া বাধ্য হয়ে তাদের সাথে শাসন দিয়ে দেয়। তাই তারা ইমাম শামিলকে গ্রেফতারের ব্যাপারে তক্কে তক্কে থাকে। এদিকে ইমাম শামিল প্রচণ্ড যুদ্ধে আত্মনিয়োগ করেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ইমাম শামিল বন্দী হন।
ইমাম শামিল বন্দী হওয়ার পর নেতাশুন্য দাগিস্তানবাসীদের উপর রুশ নিদারুন নির্যাতন শুরু করে। হাজার হাজার মুসলমানকে নির্মম নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়। নিঃস্ব অসহায় অবস্থায় ভেড়া-বকরীর ন্যায় হাজার হাজার মাইল দূরে তাদের নির্বাসন দেয়।  
বহু মুসলমান পথেই মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু মুসলমান এমন এক জাতি, যাদের ভূপৃষ্ঠ থেকে মুছে ফেলা যায় না। এরা একদিকে অস্তমিত হলে অন্য দিক দিয়ে আবার জেগে উঠে। অত্যাচারের ষ্টিম রোলার এদের দেহ নিপিষ্ট করলেও হৃদয়ের গভীরে এদের ঈমানের আগুন আলো বিকিরণ করতেই থাকে। তাই সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউনিয়ন শক্তি ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে দাখিস্তানবাসী স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করে। হাজারো মুজাহিদের রক্তে সিঞ্চিত দাগিস্তানের বুকে আবার অঙ্কুরিত হয়েছে ইসলামী হুকুমতের বৃক্ষ। এ বৃক্ষকে রক্ষা করতে প্রস্তুত হাজারো তরুণ মুজাহিদের বজ্রমুষ্ঠি, ঈমানী নিস্কম্প শক্তি। এর জন্য প্রয়োজন ইখলাছ, আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা ও আখেরাতে সুদৃঢ় বিশ্বাস।  
আমরাও কি দাগিস্তানের মুসলিম মুজাহিদদের পথ ধরে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জিহাদে এগিয়ে যেতে পারিনা?