JustPaste.it

"আল ফিরদাউস" পরিবেশিত

 

অতএব সুসংবাদ গ্রহন করুন, আনন্দিত হোন, এই বরকতময় পথে দৃঢ়পদ থাকুন

 

উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দি হাফিজাহুল্লাহ

 

 

********************

 

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম।

ইন্নাল হামদুলিল্লাহ ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ ওয়া আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া সাল্লাম তাসলিমান কাসীরা

আম্মা বাআদ -

মালিকুল মুলক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন –

 

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ ۚ إِن يَكُن مِّنكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ ۚ وَإِن يَكُن مِّنكُم مِّائَةٌ يَغْلِبُوا أَلْفًا مِّنَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُونَ ﴿٦٥

 

হে নবী, আপনি বিশ্বাসীদের উৎসাহিত করুন ক্বিতালের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দুশর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফিরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন। [আল-আনফাল, ৬৫]

 

হে আমার ভাইরা সুসংবাদ গ্রহন করুন, মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। অধিক পরিমানে আল্লাহ আর-রাহমান, আল মুজিব উদ-দুআকে স্মরন করুন। দৃঢ়পদ থাকুন, নিজের কাজে অধিকতর মনোযোগের সাথে আত্বনিয়োগ করুন। শুনুন ও আনুগত্য করুন। তানযিম ক্বা’ইদাতুল জিহাদের এই বরকতময় মানহাজের সাথে নিজেকে আবদ্ধ রাখুন যে মানহাজের শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্য এর ঘোরতর শত্রুদের মুখ থেকেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বের করেন। বারবার আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করুন, যিনি বলেছেন –

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوهُمُ الْأَدْبَارَ ﴿١٥

হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কাফেরদের সাথে মুখোমুখী হবে, তখন পশ্চাদপসরণ করবে না। [আল-আনফাল, ১৫]

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّـهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿٤٥

 

হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কোন বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা উদ্দেশ্যে কৃতকার্য হতে পার। [আল-আনফাল, ৪৫]

 

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত “Bangladesh Says It Now Knows Who’s Killing the Bloggers” [প্রকাশিত ৮ই জুন, ২০১৬] রিপোর্টে বাংলাদেশে ২০১৩ থেকে শুরু হওয়া এবং ২০১৫ থেকে বেগবান হওয়া জঙ্গি তৎপরতা, বিশেষ করে ব্লগার ও সমকামী অধিকার কর্মী হত্যা নিয়ে আলোচনা উঠে এসেছে। এ রিপোর্টে বর্তমান প্রেক্ষাপটে জঙ্গিদের দ্বারা সঙ্ঘটিত হত্যাকান্ড সহ বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জঙ্গি ফ্যাক্টরটি ঠিক কি ধরনের ভূমিকা রাখছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। এ রিপোর্টে নবগঠিত CTTC (Counter Terrorism And Trans National Crime) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের বরাত দিয়ে দীর্ঘ উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে।

এ রিপোর্টের মাধ্যমে দেশীয় শত্রুর চোখে বাস্তবতা চিত্রিত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক শত্রুদের সামনে বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরার জন্য। আর যে চিত্রায়ন তারা করেছে তা আবারও প্রমান করে কেন তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদের মানহাজই উম্মাহর উত্তরনের জন্য শ্রেষ্ঠ মানহাজ ইনশা আল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ আনসার আল ইসলাম এই বরকতপূর্ণ মানহাজের উপরই দৃঢ় আছে।

এই রিপোর্টে শত্রুর মুখ থেকেই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে আনসার আল ইসলামের বিজয়ের কথা ফুটে উঠেছে। শত্রু নিজেই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে –

তারা সতর্কতার সাথে তাদের টার্গেট নির্ধারনের চেষ্টা করেছে যাতে করে জনসমর্থন আদায় করা যায়। সাধারণভাবে মানুষ এখন মনে করছে তারা যা করেছে ঠিকই করেছে, এবং ব্লগার, সমকামী এবং অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের হত্যা করা অযৌক্তিক কিছু না।

মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে আমাদের হারাবার জন্য তারা এবং তাদের কাফির প্রভুরা প্রতিনিয়ত, মিডিয়া এবং ভাড়াটে সুশীলদের পেছনে অজস্র অর্থ ব্যয় করছে। যে যুদ্ধে আমাদের হারাবার জন্য বাকস্বাধীনতার ধ্বজাধারীরা প্রতিনিয়ত আমাদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে, আজ তারা নিজেরাই স্বীকার করছে এই যুদ্ধে এখনো পর্যন্ত তাদের পরাজয় হয়েছে। এবং সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই।

মূলত এ রিপোর্টটি লেখা হয়েছে মনিরুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে, এবং প্রকৃতপক্ষে সে আইন শৃংখলা বাহিনি তথা প্রশাসনের মুখপাত্র হিসেবেই এ কথাগুলো বলেছে। তার কথায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে –

১) তারা মনে করছে দুটো পৃথক জঙ্গিদল বর্তমানে কাজ করছে।

২) এদের উদ্দেশ্য এক, বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে মেরুকরণ ঘটানো।

৩) আনসার আল ইসলাম এ উদ্দেশ্যে টার্গেট নির্ধারণ ও হামলার বাস্তবায়নের দিক দিয়ে অধিকতর পেশাদার।

৪) উপরোক্ত কারণেই তারা জনসমর্থন তাদের দিকে নিতে সক্ষম হয়েছে, এবং জনসাধারনের সামনে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও যারা ধর্মনিরপেক্ষ তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপনে সক্ষম হয়েছে

৫) সাধারন জনগন আনসারের হামলা গুলোকে সমর্থন করে, এবং এ জাতীয় হামলার গ্রহনযোগ্যতা সমাজে রয়েছে।

৬) আইএস(যেটাকে তারা জেএমবি বলছে) হামলা বাস্তবায়ন টার্গেট নির্ধারনের ক্ষেত্রে একই রকম মুন্সীয়ানা দেখাতে পারে নি। যেকারণে জনসমর্থন তাদের অনুকূলে নেই।

৭) পেশাদারিত্বের অভাবের কারণে তাদের অনেক সদস্য হামলার পরপরই ধরা পরেছে।

৮) হামলার যে গ্রহনযোগ্যতা সমাজে আনসার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে এবং যার কারণে সমাজে যে মেরুকরণ ঘটছে তার ফলে সরকার রক্ষনাত্বক ভূমিকা নিতে বাধ্য হচ্ছে।

৯) বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট আওয়ামী লিগ বনাম বিএনপি, চেতনা বনাম রাজাকার থেকে, ধর্মনিরপেক্ষ বনাম ইসলামপন্থীতে পরিনত হয়েছে।

১০) যদি দলগুলোর নেতাদের ধরাও হয় তথাপি এসব হামলা থামানো যাবে না যদি না মূল আদর্শকে (তাদের ভাষায় “ইসলামী মৌলবাদ) থামানো না যায়।

মনিরুলের এ স্বীকারোক্তি থেকে একদিকে প্রমানিত হয় আল্লাহর ইচ্ছায় আনসার আল ইসলামের সফল হামলা সমূহের মাধ্যমে সমাজের চিন্তাধারাতেই এবং জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি পরিবর্তন হচ্ছে, নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নুসরাত। যারা আল্লাহ রাসূলের ﷺ সম্মান রক্ষার্থে এগিয়ে এসেছে, যারা আল্লাহর রাসূলকে ﷺ নিজের চোখে না দেখেও, আল্লাহর রাসূলের ﷺ সংস্পর্শের সৌভাগ্য না পেয়েও আল্লাহর রাসূলের ﷺ আনসার হবার জন্য, আল্লাহর রাসূলের ﷺ প্রতি ভালোবাসার প্রমান দেওয়ার জন্য সাহাবাদের সাথে প্রতিযোগিতা করছে, মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা, আর আব্দুল্লাহ ইবন আতীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইনের অনুসরণ করছে, নিজেদের জান ও মালকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞা করেছে, আল্লাহ তার সে দুর্বল বান্দাদের সাহায্য করছেন। সকল প্রশংসা আর রাহমান আর রাহীম আল্লাহর, এবং সাফল্য শুধুমাত্র তাঁর পক্ষ থেকেই। অতএব সুসংবাদ গ্রহন করুন, আনন্দিত হোন, এই বরকতময় পথে দৃঢ়পদ থাকুন।

 

 

আল্লাহ্‌ সুভানাহু ওয়া তাআলা বলেন-

 

إِنَّ الَّذِينَ يُحَادُّونَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ أُولَـٰئِكَ فِي الْأَذَلِّينَ ﴿٢٠ كَتَبَ اللَّـهُ لَأَغْلِبَنَّ أَنَا وَرُسُلِي ۚ إِنَّ اللَّـهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ ﴿٢١

 

নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তারাই লাঞ্ছিতদের দলভূক্ত। আল্লাহ লিখে দিয়েছেনঃ আমি এবং আমার রসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হব। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী”।[আল মুজাদিলাহ, ২০,২১]

 

مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِينَ أَن يَعْمُرُوا مَسَاجِدَ اللَّـهِ شَاهِدِينَ عَلَىٰ أَنفُسِهِم بِالْكُفْرِ ۚ أُولَـٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ وَفِي النَّارِ هُمْ خَالِدُونَ ﴿١٧

 

সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত। [আত-তাওবাহ, ১৭]

অন্যদিকে এও প্রমানিত হয় নিছক সহিংসতার খাতিরে সহিংসতা কিংবা তাড়াহুড়ো, কিংবা মিডিয়াতে শোরগোল সৃষ্টি করার জন্য কাজ করা, সঠিক শারই বিশ্লেষণসহকারে ও মূলনীতি অনুযায়ী অগ্রসর না হওয়া- এধরনের প্রবনতা দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের ক্ষতি ডেকে আনে। যেমনটা আইএসের অপারেশানের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। শুরুতেই জনগন থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে তাদের জন্য এবং সাধারন মুসলিম জনগণের জন্য ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। অতএব সতর্ক হোন নিজের কাজে অধিকতর মনোযোগের সাথে আত্বনিয়োগ করুন। শুনুন ও আনুগত্য করুন। তানযিম ক্বা’ইদাতুল জিহাদের এই বরকতময় মানহাজের সাথে নিজেকে আবদ্ধ রাখুন এবং জিহাদের সাধারণ দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের চিন্তা ও তরবারীসমূহকে শানিত করুন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন-

 

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّـهِ ۚ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّـهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿٣٩

 

আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। (সূরা আল-আনফালঃ ৩৯)

 

সকল প্রশংসা একমাত্র জগতসমূহের অধিকর্তা আল্লাহরই। সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ﷺ, তার পরিবার ﷺ, এবং তার ﷺ সাহাবাগণের উপর।

 

সংযুক্তিঃ

নিচে মূল ইংরেজি রিপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশের বাংলা তুলে ধরা হল-

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত “Bangladesh Says It Now Knows Who’s Killing the Bloggers” [প্রকাশিত ৮ই জুন, ২০১৬]

মূলত দুটি জঙ্গি সংগঠন এ হত্যাকান্ডগুলো ঘটাচ্ছে। তারা স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মি সংগ্রহের পর তাদেরকে প্রশিক্ষন দিয়েছে। তারপর এক এক জন কমান্ডারের অধীনে বিভিন্ন সেলে ভাগ করে দিয়েছে।

তারা জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে সতর্কতার সাথে হামলার টার্গেট বাছাই করেছে, এবং খুনীদের প্রশিক্ষিত করেছে। (এসব কাজের মাধ্যমে) তাদের উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মভীরুতার মিশ্রনে যে প্রচলিত সামাজিক চেতনা বিদ্যমান আছে তার পরিবর্তে সমাজের ইসলামীকরণ

বাংলাদেশী কতৃপক্ষ জানিয়েছে, এ দুটি দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে তারা মনে করে। এই নেতাদের গ্রেফতারের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মতে শুধুমার নেতাদের ধরার পরই চলমান হামলাগুলো বন্ধ হবে। আর যদি ইসলামী মৌলবাদের আকর্ষনকে প্রতিহত না করা যায় তবে নেতাদের গ্রেফতার করা হলেও হামলাতে সামরিক বিরতি আনা যাবে, সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করা যাবে না।

যদিও অনেকের কাছে জঙ্গিদের হামলাগুলোকে বিক্ষিপ্ত মনে হতে পারে, তবে মনিরুল ইসলামের মতে জঙ্গি দলগুলো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারেই এ হত্যা অভিযান শুরু করেছে। এবং তাদের এই অভিযান শুরু হয়েছে মূলত ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে।

ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে দুটি দল এগিয়ে এসেছে। যার একটি হল আনসার আল ইসলাম, যার নেতৃত্বে রয়েছে একজন অগ্নিঝরানো বক্তব্যের আলিম এবং একজন সুপ্রশিক্ষিত ও ক্যারিশম্যাটিক সামরিক কমান্ডার। তবে এ দুজনের পরিচয় মনিরুল ইসলাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। কারণ তার মতে এ দুজনকে বর্তমানে নজরদারীতে রাখা হয়েছে। আনসার আল ইসলামের নেতাদের অধীনে ২৫ জন প্রশিক্ষিত খুনী আছে। যাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে ৩/৪ টি হামলায় অংশগ্রহন করেছেন বলে মনিরুল ইসলাম জানিয়েছে।

এব্যাপারে CTTC প্রধান মনিরুল ইসলামের বক্তব্য হল-

তারা সতর্কতার সাথে তাদের টার্গেট নির্ধারনের চেষ্টা করেছে যাতে করে জনসমর্থন আদায় করা যায়। এবং তারা এতে সফলও হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে জনসাধারনের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষেত্রে তারা বিস্ময়কর সফলতা অর্জন করেছে।

সাধারনভাবে মানুষ এখন মনে করছে তারা যা করেছে ঠিকই করেছে, এবং ব্লগার, সমকামী এবং অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের হত্যা করা অযৌক্তিক কিছু না।

একই সাথে তারা বাংলাদেশের বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকেও রক্ষানত্বক অবস্থানে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে একদিকে সরকার হত্যাকান্ডগুলোর নিন্দা জানিয়েছে, অন্যদিকে লেখক-ব্লগারদের আহবান জানিয়েছে ইসলামের সমালোচনা করে কিছু না লিখতে এবং তাদের এই বলে সতর্ক করেছে যে অপ্রাকৃতিক যৌনকর্মেরপক্ষে প্রচারনা চালানো একটি ফৌজদারী অপরাধ।“

অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন হামলা বন্ধ করার একমাত্র পথ হল ব্যাপক আকারে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন করা কিন্তু সরকার এখনই এ পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে না, কারন এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা নিয়ে সরকার শঙ্কিত।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদের মতে, “বাংলাদেশের রাজনীতি ধর্মনিরপেক্ষ বনাম ইসলামপন্থীতে পরিনত হয়েছে। যেকারণে সরকার হিসেব করে পা ফেলতে বাধ্য হচ্ছে।

দ্বিতীয় দলটি হল ‘জামা’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’। মূলত ২০০৫ সালে একইসময়ে দেশজুড়ে প্রায় ৫০০ বোমা হামলার কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া দলটীরই একটি অংশ পুনর্গঠিত হয়ে বর্তমানে কার্যক্রম চালাচ্ছে। যদিও এদুটোই ইসলামী জঙ্গি সংগঠন তবে এদের কোনটিই সরাসরি আল-কায়দা বা ইসলামিক স্টেটের সাথে যুক্ত না বলেই মনিরুল জানিয়েছে, যদিও দুটি দলই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

অন্যদিকে জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ, আনসার আল ইসলাম থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে। এবং তারা বলা চলে একচেটিয়াভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলেই কাজ করছে। তবে মনিরুল ইসলামের মতে দল হিসেবে এটি আনসার আল ইসলামের মত পেশাদার নয়। যেকারণে এদলটি এমন বেশ কিছু ভুল করেছে যার কারণে তারা জনসমর্থন পাচ্ছে না।

জামা’তুল মুজাহিদীনের অধীনে ৫০ থেকে ১০০ জন প্রশিক্ষিত খুনী আছে যারা মাদ্রাসা ছাত্র। এ খুনীদের ৪/৫ জনের সেলে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু এলোমেলো ভাবে ও যথেষ্ট গবেষণা ছাড়া টার্গেট নির্ধারণের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তারা এমন লোকদের হত্যা করেছে যারা সাধারণের মধ্যে ছিল বেশ জনপ্রিয়। যখন বন্দী জঙ্গিদের জানানো হয়েছিল যে ৬৬ বছর বয়েসী জাপানীজ ব্যক্তিকে তারা হত্যা করেছে সে আসলে ইসলাম গ্রহন করেছিল, তখন এ জঙ্গিরা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এ খবর পেয়ে বেশ আপসেট হয়েছিল।

এধরনের ভুলের কারণে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যে কারণে খুব তাড়াতাড়ি পুলিশের পক্ষে হত্যাকারীদের ধরা সম্ভব হয়, এবং বর্তমানে পুলিশ তাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের চেষ্টায় নিয়োজিত আছে।

 

******************

 

Al Firdaus Logo.n.png