সম্পাদকীয়
জাতিকে আগাছা আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে এখুনি ঝাঁপিয়ে পরতে হবে
========================================================================
ইদানিং এদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রে এক শ্রেণীর আগাছা - পরগাছার ভয়ঙ্কর দূর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিদেশী মদদপুষ্ট এনজিওদের গৃহপালিত এ আগাছারা বাক স্বাধীনতার সুবাদে জাতির বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার ক্ষেত্রে যা কিছু মানবতার জন্য ভালো তা ধ্বংস করে দেয়ার খেলায় মেতেছে। এ মহলের এদেশের ইসলামের বিরুদ্ধে ঘোষিত ক্রুসেডের সর্বশেষ নিক্ষিপ্ত ব্রাহ্মাস্ত্রটি হলো ফতোয়াবাজ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এ মহল ইসলাম, মুসলমানদের প্রতি ভীষণ ক্ষ্যাপা। প্রশাসন, রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষাঙ্গণ যেখানেই ইসলামের একটু নিশানা পেয়েছে সেখানেই চালিয়েছে বুলডোজার। এরপরও ওরা স্বস্তি পায়নি। দেশ থেকেই ইসলামকে শেকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলতে চাপাবাজী, কলমবাজী, বিবৃতিবাজী, বক্তৃতাবাজীতে নেমে পরেছে সদলবলে। কবিতা, নাটক, উপন্যাস, সাহিত্য, টেলিভিশন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে ইসলাম, মুসলমান সমাজ, সংস্কৃতি, ঈমান আকিদা, শরিয়ত নিয়ে করেছে ঠাট্টা মস্কারা ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য। ইসলামী জীবনাদর্শকে বর্বর ও মানবতার পরিপন্থী প্রমাণ করার জন্য উপস্থাপন করেছে হাজারো কু - যুক্তি। দাড়ি টুপিওয়ালা মুসলমানদের সমাজে হেয় করার জন্য তাদের প্রগতি বিরোধী, মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল, স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক প্রভৃতি একের পর এক ‘ টাইটেল দিয়েছে অসাম্প্রদায়িকতার ‘পান্ডারা’। আলেমগণকে ফতোয়াবাজ রূপে সমাজে নিন্দিত করে তুলে নতুন প্রজন্মকে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী করে গড়ে তোলা তাদের লেটেষ্ট অপচেষ্টা ।
বগুড়ার কতিপয় এনজিওর অপতৎপরতার প্রতিবাদ হতেই এ ঘটনার সূত্রপাত। নন্দীগ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাওলানা মুফতি ইব্রাহীম এনজিওদের অর্থনৈতিক শোষণের প্রতিরোধে বিনাসুদে (করজে - হাসানা) ঋণদানের একটি সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এতে আঁতে ঘা লাগে মতলববাজ, এনজিও ও তাদের পোষ্য দালালদের। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ন্যায় তাদের হিংস্রতা উৎক্ষিপ্ত হতে থাকে। হাজারো মিথ্যা ঘটনার জন্ম দিয়ে বগুড়ার প্রতিবাদী আলেমগণকে কেন্দ্র করে দেশের আলেম সমাজকে ফতোয়াবাজ, নারী নির্যাতনকারী সমাজের শোষকদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত করতে গলদঘর্ম হয়ে পরে তারা। সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, সংবাদ বিবরণী, ক্রোড়পত্রের মাধ্যমে কলমবাজরা সমস্বরে আলেমগণের ফতোয়া দেয়া বন্ধ করার জন্য চিৎকার করতে থাকে। জাতি তাদের আর্ত - চিৎকারে বোধ করে কৌতুক ও করুণা।
আলেমগণ মুসলিম সমাজের বিবেক। তারা ধর্মীয় বিধি - বিধান সম্পর্কে জ্ঞান আহরণে আজীবন ব্যয় করেছেন বলেই ধর্মের আলোকে কোন কাজ ন্যায় আর কোন কাজ অন্যায়, কোন পথ সত্য আর কোন পথ অসত্য তা ভালো বলতে পারেন। যুগ যুগ ধরে তারা এই ধর্মীয় দায়িত্ব। পালন করে শরিয়ত সম্পর্কে অনবিজ্ঞ সাধারণ মানুষদের সত্য ও সঠিক পথে চলতে সাহায্য করেছেন। তাই তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে আলেমগণের।
তাদের এই ভূমিকা বর্তমান উকিলদেরই ন্যায়। উকিলগণ আইন সম্পর্কে বিজ্ঞ বলে সাধারণ মানুষ আইনের সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের শরণাপন্ন হয়। উকিলগণ আইনের দৃষ্টিতে সমাধান বাতলে দেন। তেমনি আলিমগণও শরিয়তের বিধি বিধান সম্পর্কে - অনবিজ্ঞ সাধারণ মানুষদের কুরআন হাদীসের আলোকে সমাধান দেন, বা মতামত ব্যক্ত করেন মাত্র। কিন্তু প্রগতির তকমাধারীরা আবিস্কার করেছেন যে, আলেমগণ নাকি স্বার্থ হাসিল ও নারী নির্যাতনের জন্যই কুরআন হাদীসের অপব্যাখ্যা দেন। আজীবন কুরআন হাদীসের চর্চা করে তারা অপব্যাখ্যা দেন আর তা কিনা কুরআন হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ বুদ্ধিপরজীবীরা ধরে ফেলেছেন। কৌতুকই বটে!
এ আবিস্কারের পরই 'বিশেষ ব্রান্ডের' বুদ্ধিজীবীরা আবদার জানাচ্ছো যে, আলেমগণ ফতোয়া দিতে পারবেন না। কুরআন হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন না করেই ইসলাম সম্পর্কে পণ্ডিতী জাহিরকারী মুরতাদরাই কেবল ধর্ম সম্পর্কে ফতোয়া দেবেন। মুসলমানী নাম ভাংগিয়ে তারা ইসলামকে সাম্প্রদায়িক বানাবেন, ইহা ইতর, মুখ ও মধ্যযুগীয় বর্বরদের ধর্ম বিশ্বাস এবং আধুনিক যুগে অচল বলে ফতোয়া দেবেন। এ সম্পর্কে আলিমগণের মুখ খোলারও কোন অধিকার নেই।
ইসলামকে টার্গেট করে হামলা চালাতে গিয়ে তারা এত হিংস্র হয়ে যায় যে, আলেমগণ যে এদেশের নাগরিক, তারা ভারতের ন্যায় হরিজন নয়, তাদেরও মত প্রকাশের ও ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকার রয়েছে সে কথা বিলকুল ভুলে যায়। ভুলে যায় ওরা, যে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার বলে ইসলামকে আধুনিক’ বানাতে গিয়ে ইসলামের সাথে ভোগবাদী বিধি বিধান সংযোজনের অপচেষ্টা করছে, প্রগতির দোহাই দিয়ে ইসলামের বিধি বিধানের যতটুকু পছন্দ পালন করার আর যতটুকু পছন্দনীয় নয় তা মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলে ত্যাগ করতে মুসলমানদের উপদেশ বিলাচ্ছো, সেই গণতান্ত্রিক অধিকার বলে আলেমগণও তাদের এ অপতৎপরতার প্রতিবাদ করতে পারে।
মুলত বিষাক্ত প্রচারণার মাধ্যমে সত্য - মিথ্যা, ন্যায় - অন্যায়ের প্রভেদকারী আলেমগণকে সমাজে জনবিচ্ছিন্ন করাই তাদের মুল লক্ষ্য। সমাজ থেকে সত্য, মানবতার চিহ্নটুকু মুছে দিয়ে সমাজকে ভোগবাদের অতল গহবরে ঠেলে দেয়াই ওদের মিশন।
আমাদের উদাসীনতার সুযোগে দিনে দিনে এদেশের আলো - বাতাসে লালিত হয়ে এহেন অসংখ্য আগাছা পরগাছা বড় হয়েছে। যথাযথ ‘পরিচর্চার’অভাবে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশ নামক বাগানটায় তাদের অনেক শাখা প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটেছে। যার ভয়ঙ্কর কুফল এখন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। সুতরাং এখুনি যথাযথ পরিচুৰ্চার মাধমে বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার বাগান খানা ‘আগাছা’মুক্ত রাখার উদ্যোগ না নিলে অচিরেই যে পুরো জাতি আগাছা আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে যাবে তাতে আর কোন সন্দেহ নেই।
═──────────────═