JustPaste.it

মরণজয়ী মুজাহিদ  

=================
মল্লিক আহমাদ সরওয়ার  (১৫) 

=========================

 

মুজাহিদরা সুরক্ষিত ঘাঁটিতে পৌঁছে গেল। কেন্দ্রীয় কমান্ডারগণও ততক্ষনে এই ঘাঁটিতে পোঁছে গেছেন। অন্যান্য ঘাঁটি থেকেও কমান্ডারগণ নিজ নিজ মুজাহিদদের নিয়ে হাজির। অল্প সময়ের মধ্যে মুজাহিদদের সম্মিলিত অপারেশন প্রােগ্রাম নিয়ে আলােচনা শুরু হল। পথি মধ্যে শক্তিশালী রুশ ঘাঁটির পতনই এখন মুজাহিদদের প্রধান আলােচ্য বিষয়। আলীকে এই মজলিসে বিশেষ মর্যাদায় ডেকে আনা হয়েছে। যেন আলী তাঁর তীক্ষ্মধী ও অভিজ্ঞতার আলােকে যথােপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারে। অধিকাংশ অধিনায়ক এক মাসের প্রস্তুতি নিয়ে রুশ ঘাঁটি আক্রমণের জন্য মতামত ব্যক্ত করলেন। কিন্তু আলী বললঃ না, শীঘ্রই হামলা করতে হবে। দুশমনদের অতর্কিত আক্রমণে আমরা যেভাবে পর্যদুস্ত হয়ে পড়েছি ঠিক ওরাও আমাদের আকস্মিক আক্রমণে পরাজিত হবে। ওরা কল্পনাও করতে পারবে না যে, আমরা এতো শীঘ্র তাদের আক্রমণ করতে সক্ষম হব। আলীর কর্মদক্ষতা সম্পর্কে যে ক'জন অধিনায়ক জ্ঞাত ছিলেন, তারা আলীর কথার সমর্থন করলেন। বহু আলােচনা পর্যালােচনার পর সর্ব সম্মতিক্রমে সিন্ধান্ত হলাে, আজ বেলা ডােবার পরই অপারেশন শুরু করা হবে। প্রস্তুতি পর্বের আগে মুজাহিদ সংখ্যা পাঁচ হাজারে উন্নীত হলাে। পরাজয়ের গ্লানি ধুইয়ে ফেলার জন্যে মুজাহিদরা আক্রমণের অগ্নি বানে জ্বলতে ছিল। বেলা ডােবার সাথে সাথে সমস্ত ঘাঁটি আল-জিহাদ, আল জিহাদ, আল্লাহু আকবার তাকবিরে কেঁপে উঠল। প্রত্যেক মুজাহিদ নিজের অস্ত্র পরীক্ষার ও ক্রটি বিচ্যুতি পরখ করতে লেগে গেল। ঘােড়া ও গাধার পিঠে বােঝাই করা হলাে ভারি অস্ত্রশস্ত্র। ইত্যবসরে চীফ কমান্ডার এলেন, তাঁর ঘাড়ের ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজ বাঁধা। মুজাহিদরা তাঁকে দেখে সসব্যস্থ হয়ে একত্রিত হলে তিনি সমবেত মুজাহিদদের উদ্দেশ্যে বললেন, “জানবাজ সাথীরা! শত্রুদের আকস্মিক আক্রমণের ফলে আমরা মােকাবেলা করার মওকা পাইনি। তদুপরি, আত্মনিবেদিত বন্ধুরা নগন্য জনবল নিয়ে যে ভাবে শক্রদের অগ্রাভিযান প্রতিহত করেছেন তা প্রশংসা যােগ্য। আপাতত আপনাদের জনবল বৃদ্ধি পেলেও শত্রুবাহিনী আমাদের থেকে আরাে পাঁচ গুণ বেশী। তবে দৃঢ়তার সাথে মােকাবেলা করলে অল্পসংখ্যক বাহিনীকেও আল্লাহ তাআলা বিজয়ের গ্যারান্টি দিয়েছেন। বন্ধুগণ!প্রাচীরের মতাে অটল অবিচল থেকে বীরবিক্রমে শক্রদের উপর ঝাপিয়ে পড়ুন, দুশমনদের ঘাঁটি তছনছ করে দিন। আল্লাহ আপনাদের অবশ্যই বিজয়ী করবেন।” সমস্বরে পাঁচ হাজার মুজাহিদের তাকবিরে কেঁপে উঠল আকাশ। সিংহ গর্জনে তারা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এগিয়ে চলল।-এতাে শীঘ্র আক্রমণ মােকাবেলায় অপ্রস্তুত রুশ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হল। পলায়নপর বহু রুশ সেনা নিহত এবং প্রায় পাঁচশ গ্রেফতার হল। অতি শ্রীঘ্রই মুজাহিদরা হারানো ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করলেন এবং বিপুল সংখ্যক অস্ত্র তাদের হস্তগত হল। এই আশাতীত বিজয়ে সকল মুজাহিদ শুকরিয়া নামায আদায় করলেন। হারানাে ঘাঁটি কব্জা করার পর চীফ কমান্ডার সাব কমান্ডারদের আবার মিটিং ডাকলেন। পুনরুদ্ধার অভিযানে মুজাহিদদের বিনষ্ট হয়েছে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র , শাহাদত বরণ করেছে শতাধিক এবং আহত হয়েছে প্রায় দু'শ মুজাহিদ। শত্রু পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি ছিল মুজাহিদদের তুলনায় অনেক বেশী। চীফ কমান্ডার ধারণা করেছিলেন শত্রু পক্ষের হতাহতের সংখ্যা হাজার খানেক হবে। কিন্তু গােয়েন্দা মুজাহিদদের খবরে জানা গেল যে, পনেরশরও অধিক রুশ সৈন্য নিহত এসেছে, আর আহতের সংখ্যা এর চার গুণ। শত্রু বাহিনীর দুটি জঙ্গি বিমান ও কুড়িটি রুশ ট্যাংক ধ্বংস হয়েছে। একদিনের মধ্যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন করে ঘাঁটি উদ্ধার করতে পারায় মুজাহিদদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। এক রুশ মুসলমান সৈনিক আলীর কাছে নিজের দল ত্যাগ ও বহু অজানা তথ্য জানিয়ে কেমনে সে রুশ বাহিনীর অর্ন্তভূক্ত হয়েছে সবিস্তারে জানাল। আলী তাকে মুজাহিদ বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করে নিলাে। পরদিন শহীদ মুজাহিদদের জানাযার ব্যবস্থা করা হল। রুশ সৈনিকটিও জানাযায় শরীক হয়েছিল। আব্দুর রহমান নামের এই রুশ সৈনিকটি জানাযা অনুষ্ঠানে সমবেত মুসলমানদের পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে যার পর নাই বিস্মিত হল। সে দেখল, শতশত শহীদের জানাযায় অংশ গ্রহণকারী একজনের চেহারায়ও কোন অনুতাপ 'দুঃখবােধ নেই, কারাে চোখে নেই হতাশার অশ্রু। আপনজন হারা মহিলাদের কন্ঠেও বিলাপ আহাজারী নেই। সে আশ্চর্যান্বিত হয়ে আলীকে জিজ্ঞেস করল, পিতা-পুত্র, ভাইদের মৃত্যুতেও ওরা এক বিন্দু চোখের পানি ঝরাচ্ছে না, সামান্যতম শােকানুভূতিও এদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না, এ কি অদ্ভুত ব্যাপার। এরা এত নিষ্ঠুর কেন? আলী রুশ সৈনিককে একজন বৃদ্ধ আফগান মুজাহিদের কাছে নিয়ে গেলেন, এই যুদ্ধে যার পাঁচ পুত্রের তিন জনই শহীদ হয়েছে। বৃদ্ধ মুজাহিদ আব্দুর রহমানের বিস্ময় ভরা প্রশ্নের জবাবে বললেন, বেটা! আফগান জিহাদে এ পর্যন্ত বারো লক্ষের চেয়ে অধিক মুসলমান শাহাদত বরণ করেছে, আমরা কজনের জন্য শোক প্রকাশ করব? এরা সবাইতাে আমাদের আপনজব। তাছাড়া, শাহাদত আল্লাহর বিশেষ উপহার। পুরস্কার তাে চোখের পানি দিয়ে নয় সানন্দে গ্রহণ করতে হয়। তুমি কি জান না? আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘােষনা করেছেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা মু'মেনদের জান-মাল বেহেশতের বিনিময়ে খরীদ করে নিয়েছেন। আমাদের আপনজনরা আল্লাহকে পাওয়ার উদ্দেশ্যে শক্র সংহার করে এবং জীবন দেয়। আল্লাহর দেয়া চির সত্য প্রতিশ্রুতি পালনে এরা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়, যে প্রতিশ্রুতিতে নেই সন্দেহ সংশয়ের কোন অবকাশ। তবে কেন তাদের মৃত্যুতে মুসলমানরা আনন্দ করবে না? এই মহা সাফল্যে সবাই উল্লাস করুক এটাই তাে ঈমানের দাবি। বৃদ্ধ আরাে বললেন, বেটা! প্রত্যেক আফগান মা' বিলাপের কুম্ভিরাশ্রু প্রবাহিত না করে নিজ পুত্রকে উপদেশ দেয় তােমার জীবন দিয়ে হলেও জিহাদের ঝান্ডাকে উঁচিয়ে রাখবে। ইসলামী পতাকা ভূলুণ্ঠিত হতে কখনো দিবে না। পুত্রের শাহাদতে প্রত্যেক পিতা গর্বানুভব করে যে, “আমি শহীদের পিতা হতে পেরেছি। (১১ পৃঃ দেখুন)