JustPaste.it

জীবন পাথেয়:

 

ধৈর্য, সহনশীলতা ও ওয়াদা পালন।

==================================================

 

       সহনশীলতা ও ক্ষমাঃ রাসূল সাঃ এর সবর, সহনশীলতা ও ক্ষমার গুণাবলী নবুওতের মহত্তম গুণাবলীর অন্যতম। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে বা ধনৈশ্বর্যের খাতিরে কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নেন নি। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর হালাল করা জিনিসকে হারাম সাব্যস্ত করেছে আল্লাহর ওয়াস্তেই তিনি সেই ব্যক্তির নিকট থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সর্বাধিক কঠিন সবর ছিল ওহুদ যুদ্ধের সময়ে, যখন কাফেররা তার সাথে যুদ্ধ ও মোকাবিলা করে এবং গুরুতর কষ্ট দেয়। কিন্তু তখন তিনি তাদের কেবল সবর ও ক্ষমা করে ক্ষান্ত হননি, বরং তাদের প্রতি স্নেহ ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে তাদের এ মূর্খতা প্রসূত কাজকে ক্ষমা সাব্যস্ত করে বলেছেন ''হে আল্লাহ আমার সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করুন। কেননা, ওরা অজ্ঞ।''

 

        মক্কার কাফেররা 21 বছর পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর নাম উচ্চারণ কারীদের উপর নির্যাতন চালায়। জুলুম ও নির্যাতনের এমন কোন পদ্ধতি ছিল না যা ওরা প্রয়োগ করেনি। অবশেষে ওরা তাকে বস্তুভিটা ও স্বদেশ ত্যাগে বাধ্য করে। কিন্তু মক্কা বিজয়ের তারা পুরোপুরি ভাবে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের দয়া ও কৃপার পাত্র হয়ে দাঁড়ায়। তখন তিনি তার একটি আংগুলের ইশারায় ওদের সবাইকে রক্ত গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার বিপরীত।

 

        এককালের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী কুরাইশ সর্দারেরা অনুশোচনার ভারে মাথা নত করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দন্ডায়মান। তিনি জিজ্ঞাসা করে বললেনঃ তোমরা আমার নিকট কিরূপ আচরণ প্রত্যাশা করো?

 

        ওরা সম্মিলিত কন্ঠে উত্তর দিলঃ হে সত্যবাদি! হে বিশ্বস্ত! আপনি আমাদের সম্ভ্রান্ত ভাই, সম্ভ্রান্ত ভাতুষ্পুত্র। আমরা সর্বদাই আপনাকে দয়ালু রুপে পেয়েছি।

 

        রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেনঃ অদ্য আমি তোমাদের তাই বলব যা হযরত ইউসুফ আঃ তাঁর ভ্রাতাদের বলেছিলেন তিনি বললেন "তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই যাও আজ তোমরা সকলেই মুক্ত (শেফা-ইবনে হিশাম)

 

       ধৈর্য ও স্থৈর্যঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন "আল্লাহর প্রথে আমাকে যত পরিমাণ ভয় দেখানো হয়েছে, তত ভয় অন্য কাউকে দেখানো হয়নি। আল্লাহর পথে আমাকে যত পরিমাণ নির্যাতিত করা হয়েছে, তত নির্যাতিত অন্য কাউকে করা হয়নি। একবার ত্রিশটি দিবারাত্র আমার এমন অতিবাহিত হয়েছে, যখন আমার ও বেলালের জন্য এমন কোন আহার্য ব্যবস্থা ছিলনা যা কোন প্রাণী খেতে পারে, সেই বস্তু ছাড়া যা কেবল তার বগলে লুকিয়ে রেখেছিল।" (মা'আরেফুল হাদীস, শামায়েল)

 

        একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওহীদের বাণী প্রচারের জন্য হযরত যায়েদ ইবনে হারেসামকে সাথে নিয়ে পদব্রজে তায়েফ পৌছেন এবং সেখানকার লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেন। ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার উপর নির্যাতন চালাতে উদ্যত হয়। তায়েফের সর্দাররা শহরের বখাটে ছেলে-ছোকরাদের তাঁর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। ফলে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যখনই লোকদের ইসলামের পথে আহবান করতেন তখনই তারা তাকে লক্ষ্য করে তুমুল প্রস্তর নিক্ষেপ করত, যাতে তিনি রক্তাক্ত হয়ে যেতেন। রক্ত বয়ে বয়ে জুতায় জমাট হয়ে যেত এবং অযুর জন্য জুতা থেকে পা বের করা কঠিন হতো। একবার উশৃঙ্খল বালকেরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এত গালিগালাজ করল এবং ক্রুব্ধ হয়ে এমনভাবে তাড়া করল যে তিনি এক গৃহের আঙ্গিনায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হলেন।

 

        এমনিভাবে অন্য একদিন তিনি দুষ্ট বালকদের আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান। হযরত যায়েদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাকে নিজের পিঠে বহন করে লোকালয়ের বাইরে নিয়ে যান অথচ চোখে মুখে পানির ছিটা দিলে তিনি জ্ঞান ফিরে পান।

 

        এ সফরে তিনি কেবল কষ্ট ও নির্যাতনই সইলেন। একটি লোকও ইসলাম গ্রহন করল না। এহেন দুঃখ-বেদনার মুহূর্তেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর অন্তর আল্লাহর মাহাত্ম্য ও মহব্বতে পরিপূর্ণ ছিল। এমন নির্যাতন ভোগ করেও তায়েফ থেকে ফিরে আসার পথে তিনি বললেন "আমি ওদের ধ্বংসের জন্য দোয়া করব কিরূপে? ওরা ইসলাম গ্রহণ না করলেও আশা করা যায় যে ওদের ভবিষ্যৎ বংশধরেরা অবশ্যই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।" (সহীহ মুসলিমঃ কিতাব-রাহমাতুল্লিল আলামিন)

 

       অঙ্গীকার পালনঃ রাসূল সাঃ তাঁর সকল আচরণ ও অভিব্যক্তিত্বে কবিরাও সগিরা গুনাহ থেকে নিষ্পাপ ছিলেন। ওয়াদার খেলাফ করা অথবা কারো পক্ষ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা তার জন্য সম্ভবপরুই ছিল না। না ইচ্ছাকৃতভাবে, না ভুলক্রমে, না সুস্থ অবস্থায়, না অসুস্থ অবস্থায়, না রাগান্বিত অবস্থায়। (নশরুত-ত্বীব)

 

        বদর যুদ্ধের সময় মুসলমানদের সংখ্যা খুবই সামান্য ছিল, এই মুহুর্তে একজন লোক পাওয়াও ছিল আনন্দের বিষয়, হুযাইফা ইবনে এয়ারমান রাঃ আবু হিয়াল রাঃ নামক দুই জন সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাজির হলেন এবং আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা মক্কা থেকে এসেছি। পথিমধ্যে কাফেররা আমাদের গ্রেফতার করে। অবশেষে এই শর্তে মুক্তি দেয় যে আমরা আপনার পক্ষে যুদ্ধ করব না এটা অপারগ অবস্থার অঙ্গীকার। আমরা অবশ্যই আপনার পক্ষে যুদ্ধ করব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন "কখনও নয়। তোমরা তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করো এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে যাও। আমরা মুসলমানদের কৃত অঙ্গীকার সর্বাবস্থায় পালন করব। আমাদের কেবল আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন।" (সহীহ মুসলিম, দ্বিতীয় খন্ড)

 

        হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবিল হাম্মাদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন, "নবুওয়াত লাভের পূর্বে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে কোন বস্তু ক্রয় করেছিলাম, কিছু মূল্য বাকি ছিল। আমি ওয়াদা করলাম যে অবশিষ্ট মূল্য নিয়ে আমি এই স্থানেই উপস্থিত হব। এরপর ঘটনাক্রমে কথাটা বেমামূল ভুলে গেলাম। তিনদিন পর স্মরণ হওয়ায় আমি সেখানে পৌছে দেখি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বিদ্যমান আছেন। তিনি বললেন তুমি আমাকে কষ্ট ফেলে দিয়েছো তিনদিন ধরে আমি এখানে তোমার অপেক্ষায় আছি। (আবু দাউদ)

 

এই ঘটনায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর বিনয় ও  ওয়াদা পালনের চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়। (মাদারেজুন নবুওয়াত)।

 

*****