JustPaste.it

রুশ কয়েদীদের জবানবন্দি

 

আফগানিস্থানে আমরা কি দেখেছি?

সুলতান সিদ্দিকী

========================================================================

 

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

 

কুরআন পাকের রাশিয়ান ছাত্রঃ

        রাশিয়ান সৈন্যদের থেকে পালিয়ে মুজাহিদদের সাথে মিলিত হয় এবং ইসলাম গ্রহণ করে যে দু সৈনিক তাদের কথাও আলোচনা করা প্রয়োজন। যারা ইসলামী শিক্ষায় নিজেদের হৃদয় আলোকিত করেছিলো। অবশেষে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে মুজাহিদরা তাদেরকে আন্তর্জাতিক কমিটির হাতে সোপর্দ করে। এদের মধ্যে একজন হলো ইউক্রেনের কীক শহরের বিশ বছর বয়সী “নেকুলায়ী আলেকজান্ডার ইসলাম গ্রহণের পর সে নিজের জন্য দীন মুহাম্মদ নাম পছন্দ করে।”

 

 

নেকুলায়ী এখন মুহাম্মদঃ 

        নেকুলায়ী দীন মুহাম্মদ বিশ সদস্য বিশিষ্ট এক পদাতিক বাহিনীর সার্জেন্ট ছিল। হাত বোমা নিক্ষেপে তার বিশেষ দক্ষতা ছিলো। তার পিতা অসীলা আলেকজান্ডার একজন কৃষক। সরকারী যমীনে চাষাবাদ করাই তার কাজ। তার বড়ভাই ট্রাক ড্রাইভার। অপর দিকে ছোট ভাই পিতার সাথে সরকারী ফার্মে কাজ করে। ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে সেনা অফিসাররা তাকে নতুন সৈণ্য সংগ্রহ অভিযানের সূত্র ধরে স্কুলে ভর্তি করে দেয় এবং ইশকাবাদের ফেীজি একাডেমীতে পেীছে দেয়। সাত মাসের কোর্স শেষে তাকে সার্জেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়।

 

        একাডেমী থেকে শিক্ষা কোর্স সমাপ্ত করে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আফগানিস্তান পাঠিয়ে দেয়া হয় এবংতাকে কাবুল থেকে সোজা গজনীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ আটমাস যাবত সে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকে। আন্তরিকভাবে সে এর বিরোধী। এ প্রসঙ্গে তার কথা হলো, একটি দিনও অতিবাহিত হয়নি যেদিন আমি কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। অবশেষে একদিন পলায়নের সুযোগ পেয়ে যাই। তার ভাষায়ঃ

 

        “সেদিন ঘটনাক্রমে পাহাদারগণ সারা রাত জাগ্রত থাকার পর সকাল সকাল শুয়ে পড়ে। আমি চুপিসারে উঠে চৌকি থেকে বের হয়ে নিকটবর্তী একটি গ্রামের দিকে রওয়ানা দেই। গ্রামে প্রবেশ করার পর মুজাহিদরা আমাকে ধরে ফেলে এবং তাদের কমাণ্ডার আব্দুর রহীমের কাছে নিয়ে যায়। আমার সাথে সে অত্যন্ত সদয় আচরণ করে। সেখানে বিশদিন রাখার পর তারা আমাকে স্বাধীন এলাকায় পাঠিয়ে দেয়।

 

        এদিকে আমাকে ধরার জন্য রাশিয়ানরা ট্যাঙ্ক সজ্জিত একটি বাহিনী প্রেরণ করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। মুজাহিদদের হামলায় তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। অতঃপর বিমান। বাহিনী গোটা এলাকায় তীব্র বোম্ব বর্ষণ করে। কিন্তু মুজাহিদদের বিমান বিধ্বংসী তোপের আঘাতে তারা যথাস্থানে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়।"

 

        নেকুলায়ী এখন যিনি দীন মুহাম্মদ নামে পরিচিত তিনি মুজাহিদদের স্বাধীন এলাকায় পবিত্র কুরআন এবং অন্যান্য দীনি কিতাবাদি পড়ছে। ইতিমধ্যে সে ফার্সী এবং পশতু ভাষাও শিখে ফেলেছে। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ি যাওয়রর জন্য তার মন ছটফট করতে থাকে। স্নেহের ছোট ভাইটির কথা তার বার বার মনে পড়ে। এর সাথে সাথেই তার মনে পড়ে কে.জি.বির নির্যাতনের কথা। তার শরীর শিউরে উঠে। দেশে ফিরলে ওদের হাতে তাকে ধরা পড়তেই হবে। তার ধারণা, রাশিয়া যাওয়ার সকল পথই এখন তার জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।

 

 

ইউরভঃ 

        তুর্কমেনিস্তানের অধিবাসী ইউরভ এর ইসলামী নাম রাখা হলো আব্দুল্লাহ। রাশিয়া থেকে যখন সে রওয়ানা হয় তখন তার মন ছিল আমেরিকা ও অন্যান্য বিজাতীয় শক্তি গুলোর বিরুদ্ধে ঘৃণায় ভরা। কেননা তাদেরকে বুঝান হয়েছিলো একটি শক্তি আফগানের নিরীহ জনসাধারণের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছো এবং আফগানিস্তানের বুকে পা রেখে এখন রাশিয়ার উপর হামলা করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে। আফগানিস্তান রওয়ানা হওয়ার পূর্বে তাকে এ তথ্যই দেয়া হয়েছিল। এখান এসেছিল সে আমেরিকা, চীন, পাকিস্তান ও অন্যান্য রাষ্ট্রের সৈন্যদের মুকাবিলায় লড়াই করার খায়েশ নিয়ে। কিন্তু আফগানিস্তান এসে সে দেখতে পেল যে, রুশ সেনা কমাণ্ডারদের সব কথাই মিথ্যা ও বানোয়াট। এখন কুরআন পাকের একজন তালিবে ইলম এবং ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করাই তার প্রত্যাশা।

 

        ইউরভ বলেন, এরূপ মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় রাশিয়ার কোন লাভ হয়নি। এতে প্রধান সেনাপতি ও হাই কমাণ্ড থেকে রুশ সৈন্যদের আস্থা উঠে যায় এবং অকুতোভয় আফগান মুজাহিদের মুকাবিলায় তাদের সাহস ভেঙ্গে পড়ে। আর এ কারণেই লক্ষ লক্ষ আফগানী শহীদ হওয়ার পরও তাদের জিহাদের তীব্রতা দিন দিন বাড়তেই থাকে। অপরদিকে মাত্র ষাট হাজার সৈন্যের পতনের সাথে সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের গোটা জাতি অস্থির হয়ে পড়ে।

 

 

মায়ের ফরমানঃ 

        এটাকে ইসলামের মোজেজা বলতে হবে যে, মধ্য এশিয়ার মুসলমানরা দীর্ঘ দিন যাবত নির্যাতিত, দাসচীত জীবন যাপন করার পরও তাদের স্বজাত্যাভিমান ও আত্মমর্যাদা বোধ একটু হ্রাস পায়নি। সেখানের মায়েরা আজও তাদের সন্তানদেরকে আফগান সফরে বিদায় দেয়ার সময় এই জরুরী হিদায়াত দান করে যে, “বৎস! কখনো নিজের মুসলমান ভাইদের উপর গুলী চালাবে না।”

 

        উজবেকিস্তাননে তাশক শহরের উনিশ বছর বয়স্কা আলেকজান্ডার ইয়ারনুস্ত থেকে রওয়ানা হওয়ার সময় তার মাও তাকে এই উপদেশেই দিয়েছিল। মা বিদায় কালে নওজোয়ান আলেকজাণ্ডারকে বলেছিলঃ বাবা! কখনো মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে না বরং সুযোগ পেলে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করবে।”

 

        জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে ভর্তি করার পর আলেকজাণ্ডারকে ওয়ারলেস অপারেটরের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আফগানিস্তান আসার পর কাবুলের নিকটবর্তী একটি ক্যাম্পে তাকে ওয়ারলেস অপারেটর হিসেবে নিয়োগ করা হয়। দীর্ঘ একবছর পর্যন্ত সে এই দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু মুজাহিদদের ক্ষতি হতে পারে এমন কোন সংবাদ কখনো সে পরিবেশন করেনি।

 

═──────────────═