ওরা মানবতার শত্রু!
[আমেরিকা-সৌদি রাজপরিবার সম্পর্ক, পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে আল-কায়েদার টার্গেট নির্ধারণসহ তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার]
শাইখ আবু বাসির নাসির আল উহাইশী রহ.
সাবেক আমীর- আল কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখা (AQAP)
সাদিক হাসান অনুদিত
**********************************************************************
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহ'র নামে শুরু করছি।
ইন্সপায়ার ম্যাগাজিনের সাথে আল-কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখার আমীর শায়খ আবু বাসির নাসির আল-উহাইশী (আল্লাহ্ তাঁকে হেফাজত করুন)-এর ধারণকৃত সাক্ষাতকারটি আল-মালাহিম মিডিয়া ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে আমাদের পাঠকদের জন্য পরিবেশন করছি।
প্রশ্ন ১: শায়খ, আল-কায়েদা আরব উপদ্বীপ সংগঠনটির অন্যতম পুরাতন শাখা। আপনি কি দয়া করে সংক্ষেপে আমাদের এর ইতিহাস ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করবেন?
শায়খ: সকল প্রশংসা বিশ্বজাহানের রব আল্লাহ্’তায়ালার। জিহাদ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার পক্ষ থেকে একটি ফরজ বিধান। মুসলমান যুবকরা সেই দিন থেকে এটাকে নিজেদের মধ্যে আঁকড়ে ধরে আছে যেদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরবারি হাতে নিয়েছেন। এবং এটা অব্যাহত থাকবে এই জাতির শেষ দলটি মাসিহে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা পর্যন্ত। জিহাদ সব প্রজন্মের মুসলমানদের মধ্যে জারি থাকবে।
প্রায় তিন যুগ আগে গঠিত হওয়া আল-কায়েদাও সেইসব মুসলমান প্রজন্মগুলোর একটি যারা মানুষদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করা, ইসলাম এবং এর পবিত্র নিদর্শনগুলো ও ভূমিগুলোকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ১৯৯০ সাল থেকে যখন আমেরিকা নবুয়্যতের ভূমিকে দখল করেছে; তখন থেকেই ইসলামের উপদ্বীপের যুবকেরা রক্ষা করে আসছে তাদের দ্বীনকে, তাদের পবিত্র নিদর্শনগুলো ও তাদের ভূমিগুলোকে যেগুলোর ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন কাফিরদেরকে বের করে দিতে। তারা আরবীয় উপদ্বীপের ভিতরে ও বাহিরে আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু অভিযান চালিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর হামলাগুলো হলো উলায়া, আল-খোবার, পূর্ব রিয়াদ, ইউ.এস.এস. কোল, লিমবার্গ এবং কুয়েতের ফায়লাকাহ দ্বীপে আমেরিকান সৈন্যদের হত্যা। আমেরিকার বিরুদ্ধে আরব উপদ্বীপের ভিতরে ও বাহিরে এই হামলাগুলো নেতৃত্ব দেন আল-কায়েদার শায়খ আল-বাত্তার ইউসুফ আল-উয়াইরি, আবদুল আজীজ আল-মিকরিন, শায়খ আবু আলি আল-হারিছি সহ অন্যান্য নেতারা। শুধুমাত্র একজন মুসলমান হিসেবে নয় একজন স্বাধীন মানব হিসেবেও আমরা এসকল হামলায় আনন্দিত। আল-কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখার ব্যাপারে আমাদের সম্মানিত নেতা শায়খ উসামা বলেন: “দুই পবিত্র ভূমির সন্তানদের সাথে আমেরিকা যুদ্ধে জড়িয়ে নিজেদের ভিয়েতনামের ভয়াবহতার কথা ভুলে যাবে। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার সাহায্যে হিজাজ ও নজদে আমাদের আসন্ন বিজয় আমেরিকাকে তাদের ভিয়েতনাম ও বৈরুতের বিভীষিকার কথা ভুলিয়ে দিবে।”
আমাদের লক্ষ্য আরব উপদ্বীপ থেকে দখলবাজদের তাড়িয়ে এই ভুমিকে পবিত্র করা, আল্লাহর শরীয়াহ বাস্তবায়ন, খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা, মানুষকে তাওহীদের দাওয়াত দেওয়া, জালেমদের প্রতিহত করা এবং অসহায়দের সাহায্য করা।
প্রশ্ন ২: শেষ কিছু অপারেশনের পর মিডিয়াগুলো খুব জোরেসোরে আরব উপদ্বীপ শাখাকে আল-কায়েদার সবচেয়ে বিপদজনক শাখা হিসেবে প্রচার করছে। আপনার কী মনে হয় কেন হঠাৎ করে সকলের দৃষ্টি এর উপর পড়েছে? আর আসলেই এটি কতটুকু বিপদজনক?
শায়খ: সকল প্রশংসা বিশ্বজাহানের রব আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতায়ালার যিনি আমাদেরকে জালেম আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু সফল অভিযানের তৌফিক দিয়েছেন এবং আমরা দোয়া করি যাতে তিনি এরকম আরো অভিযান পরিচালনা করার তৌফিক দেন। কৌশলগত কারনে আল-কায়েদার আরবীয় উপদ্বীপ শাখার ব্যাপারে সকলের আগ্রহ। এই ভূমি নবুয়্যতের ভূমি, ইসলামের জন্মভূমি, এখানেই অবস্থিত ইসলামের পবিত্র দুই মসজিদ এবং এখানকার মানুষের রগেরগে সাহাবা রাদিআল্লাহু আনহুম’র রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। লোভী আমেরিকার আরবীয় উপদ্বীপের ব্যাপারে অনেকগুলো স্বার্থ রয়েছে। এর সমুদ্রপথে তাদের পণ্যবাহী জাহাজসমূহ চলাচল করে এবং এর তেল চুরি করা এদের উদ্দেশ্য। এই ভূমিটি আমেরিকার অর্থনীতির জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। এই কাজ সমাধা দেওয়ার জন্য তারা চায় না এই ভুমিতে অথবা এমন কোন গ্রুপের সাথে বিবাদে লিপ্ত হতে যারা মুসলমানদের ভূমি এবং দ্বীনকে রক্ষা করতে চায়। কিন্তু তাদের মনে এই ভয়ও বাসা বেধেছে যে আসলে তাদের উদ্দেশ্যেটি সফল হবে না এবং তাদের স্বপ্নগুলো অপূর্ণই থেকে যাবে।
এখন আপনার প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া যাক যে আল-কায়েদার আরবীয় উপদ্বীপ শাখাটি কতটা বিপজ্জনক। আমি বলবো, যেখানেই মুজাহিদীন আছে সেখানেই কাফেরদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। মুজাহিদীনরা আসলে একটি দেহ, তাদের কোন একজন যদি কোথাও অবস্থান নেয় তাহলে সেখানে ভয় এবং আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
আল-কায়েদার প্রত্যেকটি শাখাই আমেরিকার বিরুদ্ধে হামলায় সফল যার সর্বশেষ সংযোজন নিউইয়র্কে গাড়িতে বোম্ব। আমেরিকা এবং তাদের সহযোগীদের হামলার ব্যাপারে বিভিন্ন শাখা একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে। সকলের একটাই উদ্দেশ্য, সাপের মাথাকে (আমেরিকা) ধ্বংস করা আর এই বিজয়ের মিছিলে নিজেদের শরিক করা।
প্রশ্ন ৩: আল-কায়েদার আরবীয় উপদ্বীপ শাখার ইয়েমেনের বাহিরে প্রথম হামলাটি ছিলো সৌদি আরবের সহকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন নায়েফের উপর। মুহাম্মদ বিন নায়েফের উপর কেন? আর হামলাটা কতটুকু সফল?
শায়খ: সকল প্রশংসা আল্লাহ্ সুবাহানাহু তায়ালার। মুহাম্মদ বিন নায়েফের উপর হামলাটি ছিলো আমাদের নেওয়া আরবীয় উপদ্বীপ থেকে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মূল করার কৌশলের একটি অংশ। সে এবং তার মতো যারা আছে তারাই আমেরিকাকে ইসলামের উপদ্বীপে ঘাঁটি ঘাড়ার অনুমতি দিয়েছে এবং আজকের দিনের আবু রুকালের চরিত্রে আবির্ভাব হয়েছে। আসলে সে আরবীয় পোশাকে একটা আমেরিকান। যদি এরা না হতো তাহলে আমেরিকা কোনদিনও খারজ, রিয়াদ বা অন্যান্য এয়ারপোর্ট থেকে ইরাক বা আফগানিস্তানের উপর বোমা ফেলতে পারতো না, যদি এরা না হতো তাহলে ষাট বছর ধরে ইহুদীরা ফিলিস্তিন দখল করে রাখতে পারতো না। মুজাহিদীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং দিন-রাত তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার কারনেই সে আমাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। এই হামলার অনেকগুলো ভালো দিকের মধ্যে রয়েছে এটি কাফের নেতা এবং ষড়যন্ত্রকারীদের হামলা করার ব্যাপারে মুজাহিদীনের দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়েছে এবং তারা বুঝতে পেরেছে আল্লাহ্র সাহায্যে শত্রুদের কাছে পৌঁছা কোন কঠিন কাজ নয়। এই হামলাটি শত্রুদের তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে যে দম্ভ অহংকার ছিলো তা চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে এবং এটাও এখন পরিষ্কার যে মুজাহিদগণ আল্লাহ্র উপর ভরসা করে নিজেদের যন্ত্রগুলোর মধ্যে কোন রকম ধাতব পদার্থ না রেখে পূর্ণগোপনীয়তায় শত্রুদের কাছে পৌঁছাতে পারে।
প্রশ্ন ৪: এবার ভাই উমার আল-ফারুক (আল্লাহ্ তাঁর মুক্তি ত্বরান্বিত করুন) এর ডেট্রয়েট ফ্লাইট অপরেশনের ব্যাপারে আসা যাক। যদিও বোম্বটি বিস্ফোরিত হয়নি তবুও বলা হয়ে থাকে এই হামলাটির পিছনে যে বার্তা ছিলো তা পৌঁছে গিয়েছে। এই হামলাটির কী উদ্দেশ্য ছিলো? এবং এই হামলাটি কী সুফলতা বয়ে এনেছে?
শায়খ: সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার। উমার আল-ফারুক (আল্লাহ্ তাঁর মুক্তি ত্বরান্বিত করুন) এর অপরেশনটি আমেরিকার অর্থনীতির কাফিনে একটি শক্ত পেরাগ এবং এটি তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি একটি চরম কষাঘাত। অনেকগুলো বিমানবন্দরের শক্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে এবং সেগুলোতে তাকে তল্লাশি করার পরও সে তার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছিলো। আল্লাহ্র রহমতে তাদের কোন একটা নিরাপত্তা উপকরণও তার বিষ্ফোরকটি ধরতে সক্ষম হয়নি।
এই হামলাটির মাধ্যমে আমরা তাদেরকে যে বার্তাটি দিতে চেয়েছি তা হলোঃ “আমেরিকা কোনদিনও নিরাপত্তা উপভোগ করতে পারবে না যতক্ষণ আমরা ফিলিস্তিনে তা উপভোগ করি। এবং তোমরা কোনদিন সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না যতক্ষণ না আমাদের ভাইয়েরা গাযায় কঠিন জীবন পার করছে।”
এই হামলার অনেকগুলো সুফলতা রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি হলোঃ
-
আমেরিকার অর্থনীতিতে ৪১ বিলিয়ন ডলার এর ক্ষতি এবং তাদের সকল নিরাপত্তা উপকরণ ভেস্তে গেলো।
-
আমেরিকার বিমানবন্দর এবং অন্যান্য নিরাপত্তা কার্যালয়গুলোতে যে ভয় ছড়িয়েছে এর মাধ্যমে আমেরিকানরা বুঝতে পেরেছে তাদের নিরাপত্তা পরিষদগুলোর উপর আসলে ভরসা করা যায় না।
-
আমেরিকার জনগণের মধ্যে ত্রাশ সৃষ্টি হয়েছে এবং ভয়ের ব্যাপারে একটি সমতা এসেছে। এবং তারা এটা বুঝতে পেরেছে যে নিরাপত্তা এমন বস্তু নয় যা ওবামা সরকার কন্ট্রোল করতে পারবে।
-
ইসলামের বিরুদ্ধে যু্দ্ধকারী ক্রুসেডরদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পশ্চিমা বিশ্বে বসবাসকারী মুসলমান তরুণদের জন্য এটি একটি নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।
প্রশ্ন ৫: আল-কায়েদা পশ্চিমাদের থেকে কী চায় যার দ্বারা তারা পশ্চিমাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো বন্ধ করবে?
শায়খ: আমরা পশ্চিমাদের থেকে একটা জিনিস-ই চাই: তারা মুসলমান জাতিগুলোর বিরুদ্ধে অত্যাচার নিপীড়ন বন্ধ করবে এবং তাদের ভূমি থেকে চলে যাবে। আমাদের সকল নেতৃবৃন্দ সব সময় এই সমাধানের কথাই বলে আসছে। এই সমাধানটি এমন একজনের কাছ থেকে এসেছিলো যিনি সত্যিকার অর্থে মুসলমানদের পক্ষ থেকে এমন সিদ্বান্ত নিতে পারেন তিনি হলেন, শায়খ ওসামা বিন লাদেন(রহিমাহুমুল্লাহ)। তাঁর প্রস্তাবটিকে নাকচ করে দেওয়া হয়। যখনই আমরা তাদের কোন সুন্দর প্রস্তাব দিই তখনই তারা তাদের জেদের উপর অটল থাকে তাই নিজেদেরকে প্রতিরক্ষা করা এবং এসব জালেমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায়ই থাকলো না। যদি পশ্চিমারা আমাদেরকে আক্রমণ এবং জুলুম করা থেকে নিবৃত হয় তাহলে আমরাও তাদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর ব্যাপারে নিবৃত হবো।
প্রশ্ন ৬: আমেরিকা ইয়েমেনের আবয়িয়ান, সাবওয়া এবং মা’য়ারিবের মত কিছু জায়গায় বোমাবর্ষণ করেছে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক সরকার বলছে এগুলো নাকি আল-কায়েদার বিরুদ্ধে কিছু স্বতপ্রণোদিত হামলা। আসলে ঘটনাটি কী? আর এ হামলাগুলো কি সংগঠনটিকে দূর্বল করে দিয়েছে?
শায়খ: আমেরিকানদের সংস্কৃতিই হলো মানুষ হত্যা করা। এই আমেরিকানরাই কত ভিয়েতনামি, জাপানি, ইরাকি, আফগানি এবং সোমালি মানুষকে হত্যা করেছে এবং তাদের মদদপুস্ট যায়োনিষ্টরা কত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তার হিসেব আছে? এখন সর্বশেষ তারা বাকাযিম, আরহাব এবং আওয়ালিক গোত্রের ডজনখানেক মানুষকে হত্যা করেছে। তারা সেখানকার নারী এবং শিশুদের হত্যা করে এই মিথ্যা ছড়াচ্ছে যে এটা ছিলো আল-কায়েদার বিরুদ্ধে একটি স্বতপ্রণোদিত হামলা যাতে তারা এই হামলাটির বৈধতা দিতে পারে এবং তাদের জনগণকে বলতে পারে যে তারা আল-কায়েদার নেতাদের হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। আর ইয়েমেনী সরকার তাদের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের পক্ষ না নিয়ে বরং আমারিকার চাটুকারিতা করছে এবং তাদের এই হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করছে। তারা বলে বেড়াচ্ছে তাদের বিমান দিয়ে আমেরিকার এই হামলাটি ছিলো আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যদিও তারা ভালো করেই জানে হতাহতদের সবাই বেদুঈন ছিলো। দেখে মনে হচ্ছে ইয়েমেনী সরকার তাদের নারী এবং শিশুদের রক্ত দিয়ে আমেরিকার সাথে তাদের কোন পুরোনো দেনা শোধ করছে। তাহলে ডজনখানেক নারী ও শিশুদের হত্যাযজ্ঞের এই নিখুঁত হামলাটির স্বরূপ কী? যদি ধরেও নেওয়া হয় যে তাদের পাইলটের সামরিক কোন জ্ঞানই নাই তাহলেও সে একটি মিলিটারী আস্তানা এবং বেদুঈন তাঁবুর মধ্যে পার্থক্য করতে পারতো। কিন্তু সত্য কথা হলো আমেরিকা আসলে মানুষ হত্যার ব্যাপারে তৃষ্ণার্ত।
এইসব বোমাবাজিতে আসলে আমেরিকার কোনই লাভ হবে না এবং আল্লাহর রহমতে এটি আল-কায়েদাকে দূর্বলও করতে পারবে না। বরং এর মাধ্যমে তারা আমাদের আরেকটু নিকটবর্তী হবে এবং মুসলমান জনগণকে আমাদের পাশে দাঁড়াতে সাহায্যে করবে। আসলে আমেরিকানদের এরকম বেপরোয়া হামলাগুলো মুসলমানদের কাছে হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের গনতন্ত্রের বাস্তবতাকেই তুলে ধরবে।
প্রশ্ন ৭: বিশ্বাসঘাতক সরকারের মিডিয়াগুলো প্রচার করছে আপনি আপনার সহকারী এবং মিলিটারী কমান্ডারের সাথে মারা গেছেন। পরে খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা সাব্যস্ত হয়েছে। আপনার কী মনে হয় সরকার কেন এমনটা করেছে? এবং এর মাধ্যমে কী লাভটাই হয়েছে?
শায়খ: ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট একটা পেশাদার মিথ্যুক বিশেষ করে টাকা-পয়সার ব্যাপারে। এধরনের মিথ্যা তার জন্য আমেরিকা থেকে ডলার নিয়ে আসে। আমেরিকানদের ধোঁকা দেওয়া খুবই সহজ এবং সে তাদের জন্য একটা নকল বিজয় সৃষ্টি করছে।
ইসলামের দায়ী শায়খ আনোয়ার আল-আওলাকি (আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন) বলেন: “ইয়েমেনী সরকারের বৈশিষ্ট্যই হলো মিথ্যা বলা। তারা তাদের জনগণের কাছে মিথ্যা বলে। বহিঃবিশ্বের সাথে মিথ্যা বলে। সকলের সাথে মিথ্যা বলে।” ত্রিশ বছর যাবৎ তারা মিথ্যা বলে যাচ্ছে। তারা তাদের জনগণের বিরুদ্ধেই যেভাবে মিথ্যা বলে এর থেকেই প্রমাণ হয় অন্যদের তো দূরের কথা তারা নিজেদেরকেও এখন নিরাপত্তা দিতে সক্ষম নয় এবং তাদের হাতে এখন আর কিছুই নেই। তাদের এখন অমুক-অমুককে মেরেছি, অমুক-অমুককে জেলে বন্দী করেছি এধরনের মিথ্যা ছড়ানো ছাড়া আর করার কিছুই নাই। এটা একারণে যে যাতে বৈদেশিক সাহায্য আসা বন্ধ না হয়ে যায়।
প্রশ্ন ৮: কেন আল-কায়েদা পশ্চিমাদের বিশেষ করে আমেরিকাকে টার্গেট করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়?
শায়খ: সকল প্রসংশা আল্লাহ্ তায়ালার। আমেরিকাই আমাদেরকে তাদের টার্গেট করার জন্য দায়ি। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কার্টুন আঁকা এবং যারা এগুলো আঁকে তাদের পুরস্কৃত করার মতো জঘন্য অপরাধগুলো যা প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের কাছেই নিন্দনীয়; এগুলোর জন্যই আমরা আমেরিকাকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারি। আসলে তাদের কার্যক্রমগুলো এতো জঘন্য যে এর কারনে তাদেরকে দুনিয়ার মানচিত্র থেকেও সম্পূর্ণভাবে মুছে দেওয়া যায়। আমেরিকা আসলে একটা ক্যন্সারের মতো যেটাকে অন্যান্য পশ্চিমা দেশ গুলোর সাথে যারা তাদের এই জঘন্য অপরাধগুলোতে তাদের সাহায্য করছে এবং আমাদের পবিত্র মুসলমান বোনদের নিকাব নিষিদ্ধ করেছে উপড়ে ফেলা উচিৎ।
যদিও আমরা শুধু তাদের নির্যাতন এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধেই জোর দিচ্ছি। এই সমস্যাটি এখন আর মানুষের জীবন, জায়গা বা সম্পদে সীমাবদ্ধ নেই এটি তার থেকেও এখন বেশি গুরুতর। এটি এখন রাসুলগণের সম্মান রক্ষা করা এবং তাঁদেরকে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষদের কাছ থেকে হেফাজত করার পর্যায়ে পৌঁছেছে। আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতায়ালার শাস্তি থেকে বাঁচার তাদের কোন উপায় নেই কেননা আল্লাহ্ই তাঁর রাসুলগণকে রক্ষা করবেন। আল্লাহ্ সাধারণ মুমিন বান্দাদেরকেও হেফাজত করেন তাহলে কি তিনি তাঁর রাসুলগণকে যারা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা এবং তাঁর সৃষ্টির সেরা জীব তাঁদের রক্ষা করবেন না!
আল্লাহ্ আমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বিজয় দিবেন এবং আল্লাহ্ চাহেতো আমেরিকার জন্য সামনে যে দিন আসছে তা বিগত দিন গুলো থেকে বেশি ভয়াবহ হবে।
আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন: বল, ‘তোমরা আমাদের জন্য যে জিনিসের অপেক্ষা করছ তা দু’টো ভালোর একটি ছাড়া আর কিছুই না (শাহাদাত কিংবা বিজয়) আর আমরা অপেক্ষা করছি এজন্য যে, আল্লাহ নিজেই তোমাদেরকে শাস্তি দেন অথবা আমাদের হাত দিয়ে দেয়ান। কাজেই অপেক্ষায় থাক, আমরা তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।’ (সুরা আত-তাওবা: ৫২)
প্রশ্ন ৯: পরিশেষে পশ্চিমা দেশে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য আপনার কোন পরামর্শ আছে?
শায়খ: পশ্চিমা দেশে বসবাসকারী মুসলমান ভাইদের প্রতি আমার উপদেশ হলো তারা যেনো অস্ত্র সংগ্রহ করে এবং যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়। তারা এমন একটি যায়গায় বসবাস করছে চাইলে তারা শত্রুদের উপর চরম আঘাত আনতে পারে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহায্য করতে পারে। এই জীবনের কোন মানেই থাকতে পারে না যদি তারা শুনে এবং দেখে তাদের চোখের সামনেই রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র মানববন্ধন এবং মিছিল করাই মাধ্যমেই তাকে (আমার পিতা-মাতা তাঁর জন্য কোরবান হোক) রক্ষা করা যথেষ্ট নয় কারন পশ্চিমারা এগুলোতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। উপযুক্ত পন্থা হলো বিস্ফোরক জিনিসপত্র ব্যবহার করা এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করা। এটাই তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রক্ষা করার সুস্পষ্ট এবং উপযুক্ত পন্থা যেটার ব্যবহার শুরু করেছে পাকিস্তানের তালেবান, নিদাল হাসান এবং উমর আল-ফারুক (আল্লাহ্ তাদের মুক্তি ত্বরান্বিত করুন) এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আপনাদের মতো মানুষ যারা এই রাস্তায় এগিয়ে আসছে।
ও মুসলমানেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষা করোঃ ছুরি দিয়ে, বন্দুক দিয়ে, রাইফেল দিয়ে, বোম্ব দিয়ে, বিস্ফোরক যন্ত্র বানানোর মাধ্যমে, বন বা দালানে আগুন লাগিয়ে অথবা তাদেরকে গাড়ি বা ট্রাকচাপা দিয়ে মারার মাধ্যমে। তাদেরকে মারার জন্য বহু পন্থা আছে তাই আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন আল্লাহ্ একটা উপায় বের করে দিবেন। আমাদের উপর রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিকারের তুলনায় তাঁর জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গ করা কিছুই না। আমাদের মায়েরা নিঃস্ব হোক যদি আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষা না করি।
ও মুসলমানেরা আল্লাহর সামনে তোমাদের জবাব দেওয়ার মতো কিছুই থাকবে না যদি না তোমরা তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষা করার জন্য লড়াই না কর। যদি আপনি লড়াই করতে না পারেন তাহলে আপনার উচিৎ সে ভূমি থেকে হিযরত করা যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেওয়া হয়েছে কারন এইধরনের জায়গা আল্লাহর গজবের জন্য অপেক্ষা করছে। যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের সাথে বসবাস করার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করেছেন সেখানে কিভাবে আমরা ওই জায়গায় বসবাস করতে পারি যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেওয়া হয় অথচ আমরা কিছুই করতে পারি না এমনকি সে জায়গা ত্যাগ করে চলেও যাই না? বিচার দিবসে আপনি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে কী জবাব দিবেন?
যদি আপনি হিযরত করতে সক্ষম না হন তাহলে অন্ততঃ কাফেরদেরকে বয়কট করুন এবং তাওহীদ এবং আল-ওয়ালা ওয়াল বার’আর ঘোষণা দিন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যাতে তিনি আপনার জন্য একটা উপায় বের করে দেন।
আল্লাহ্ আমাদের তাঁর দ্বীন এবং রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিজয়ে আমাদের সফল করুন।
সকল প্রশংসা বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার।