JustPaste.it
User avatar
Jago Mujahid @JagoMujahid · Sep 24, 2021

শত্রুনিয়ন্ত্রিত শান্তির ছায়ায় বিনিদ্ররজনী কাটাও হে সিংহের জাত!

=================================================================

 

        অর্ধ শতক ব্যাপী চলে আসা একটি দ্রোহ ফু দিয়ে নিভিয়ে দিতে চেয়েছে বর্তমান পরাশক্তি। হোয়াইট হাউসে বসে মার্কিনী নেতারা ফিলিস্তিনী জনগণের অন্যতম নেতা ইয়াসির আরাফাতকে দিয়ে যে ঐতিহাসিক চাল চেলে নিয়েছেন তারা সুদুর প্রসারী কার্যকারিতা প্রত্যক্ষ করতে বিশ্বের মুসলমানকে খুবদীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয় না। বিশাল ইউরোপ আর বিস্তীর্ণ আমেরিকার বুক জুড়ে ইহুদীদের জন্য একখণ্ড স্বাধীন আভাস পাওয়া যায়নি। বরং আজন্ম সন্ত্রাসবাদী অভিশপ্ত ইহুদীদের নির্বংশ করার সমূহ প্রয়াস খ্রিষ্টানেরাই চালিয়ে এসেছে আর এ খ্রিষ্টজখতই আজ ইহুদীদের একান্ত বন্ধু হয়েগেছে কেবল মুসলমানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য। গোটা বিশ্ব বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত মার্কিন রুশ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নেতারা মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় অদূরদর্শী আরব শাসকদের সাথে নিয়ে ফিলিস্তিনে ঢুকেই গড়ে তুললেন পৃথিবীর একমাত্র ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল। ওরা রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ার পরপরই পবিত্র আল কুদস নগরীকে দু'খন্ড করে ফেললো।

 

        আরবদের সাথে বেশ ক'টি যুদ্ধ বাধিয়ে দখল করে নিলো মিশরের সিনাই, জর্দ্দানের গোলান আর ফিলিস্তিনীদের গাজাও পশ্চিম তীর। অধিকৃত আরব ভূখন্ডে শুরু হলো নিপীড়নের তাণ্ডব লীলা। যুদ্ধে শহীদ হলেন অসংখ্য মুসলিম আরব যোদ্ধা ও জনগণ। সুদীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী ব্যাপী অবিরাম সংগ্রাম আর অবর্ণনীয় কষ্টের বিনিময়ে যখন বিগত ৬ বছর পূর্বে গোটা ফিলিস্তীনে সৃষ্টি হয়েছিলো অপূর্ব গণজাগরণ, অদম্য গণঅভ্যুত্থান "ইন্তিফাদা" ঠিক তখনই ইসরাইলী কর্তৃপক্ষের মনে পরল শান্তির কথা। আলোচনার কথা। কেননা একটি স্বাধীনতাকামী জাতির বিদ্রোহী প্রজন্মকে থামিয়ে না দিলে কোন শাসকই তার সিংহাসন নিরাপদ করতে পারেনা। ইন্তিফাদার আগুন নিভিয়ে দেয়ার জন্যই অনুষ্ঠিত হয় একের পর এক শান্তি বৈঠক। মাদ্রিদে, ওয়াশিংটনে অতঃপর শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় হোয়াইট হাউসে।

 

        বিগত সময় যে সংগঠনটি ফিলিস্তিনী গণমানুষের স্বাধীনতার বার্তা বহন করেছে, যারা কোনদিনও ইসরাইলকে একটি বৈধ রাষ্ট্ররূপে স্বীকৃত দেইনি, যারা সবসময় প্রত্যক্ষ লড়াইকে তাদের প্রথম কিবলার স্বদেশ মাতৃকা পুনরুদ্ধারে বিকল্পহীন উপায় বলে মনে করে এসেছে, সে (পিএলও) প্যালেষ্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা ফিলিস্তিনী মুক্তি সংস্থার চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলেন। বিনিময়ে নিজেও স্বীকৃতি পেলেন তবে সন্ত্রাসী হিসেবে। স্বায়ত্তশাসন পেলেন, তবে পুতুল সরকার হিসেবে। তথাকথিত শান্তির নাগল পেলেন, তবে অসংখ্য টগবগে যুবক, স্বাধীনতা ও মুক্তির অগণিত সৈনিককে হারিয়ে। ফিলিস্তিনীদের বিশাল একটি অংশ এখনো শান্তি চুক্তি মেনে নেয়নি। যেমন মেনে নিতে দ্বিধা করছেন বেশ কিছু আফ্রিকীয় ও আরব শাসক।

 

        শান্তিচূক্তি স্বাক্ষরে মার্কিনীদের আনন্দ আর তাদের অতিউৎসাহে মুসলমানদের মনে একটু সংশয় জেগেছে। যেমন জেগেছে ইয়াসির আরাফাতের সুন্দরী শ্বেতাঙ্গ স্ত্রী বিশিষ্ট আইনজীবী সোহা আত তাবীল এর হাসি দেখে। ইহুদী সমাজে ইয়াসির আরাফাতের ছবি আঁকা "টি" শার্ট বিক্রীর ধুম দেখে। আর হোয়াইট হাউসের একপ্রান্তে ইয়াসির আরাফাত ছবি লটকানোর বাহার দেখে। সর্বোপরি স্বায়ত্তশাসন প্রাপ্ত ফিলিস্তিনী আরবের উন্নয়নে কোটি কোটি ডলারের সাহায্য মঞ্জুরের বিষয়ে বিল ক্লিনটনের উৎসা দেখে।

 

        এ সংশয় আরো ঘনীভূত হয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের  মরক্কো সফর আর সদ্য নির্মিত বাদশাহ্ হাসান মসজিদ' পরিদর্শনের ঘটনায়।  জর্দানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের ধুমধাম দেখে। মিসরের সাথে নরম কথার ধরন দেখে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আরব বিশ্বের প্রতি ইসরাইলকে স্বীকৃতি দানের নসীহত শুনে। সর্বোপরি ও আই সি কর্তৃক ফিলিস্তিনীর মুক্তি যুব সংগঠনকে দেয়া সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণায়। ফিলিস্তিনী মুখপাত্র ডঃ হাসান আশরাভীর আকর্ণ হাসিতে ফুটে উঠা, শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যানকারী ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াসির আরাফাতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার প্রতি সীমাহীন অবজ্ঞাভরা কটাক্ষে।

 

        বিপ্লবী ফিলিস্তিনী যুবকেরা কেউ কেউ বলেছেঃ "জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বুকে ছুরিকাঘাতকারী নেতা ইয়াসির আরাফাতের জন্য একটি বুলেটই যথেষ্ট।"

 

        আমরা মনে করি, দীর্ঘ সংগ্রামের ক্লান্ত একটি ছিন্নমূল জাতি যুদ্ধের কঠিন সয়তে একটু বিরতি পেয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাসটুকু ছেড়েছে তা যেন এদের মন থেকে জিহাদের উদ্দীপনা আর স্বাধীনতার চেতনার শেষ করে না দেয়। স্বায়ত্তশাসনের শীতল ছায়ায় যেন গভীর নিদ্রায় মগ্ন না হয়ে পড়ে প্রথম কিবলা পুনরুদ্ধারের সৈনিকেরা। ইহুদী প্রিয়দর্শীনি রমণী, নগদ নারায়ন আর ঘুম পাড়ানো গানে এরাও আবার যেন ঝিমিয়ে না পডে। নীলছবি, উলঙ্গ সংস্কৃতি, সংশয়বাদী সাহিত্য, ঈমান বিধ্বংসী শিক্ষা আর আত্মমর্যাদা হরণকারী সহায়তা যেন ফিলিস্তিনীদের এক পাল বুযদিল শৃগালে পরিণত না করে।

 

        পিএলও তাঁর সুদীর্ঘ দিনের সংগ্রামী ইতিহ্যকে "সন্ত্রাসবাদ বলে যে মুছলেকা দিয়েছে, এতে কি গোটা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের কাঁধেই সন্ত্রাসবাদের কলংকের বোঝা চাপাবে না? তথাকথিত শান্তিচুক্তির অসহনীয় বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া জিহাদী সংগঠন "হ্যমাস" এখন যত তৎপরতা চালাবে এইসবই কি সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যায়িত হবেনা? ছোট্ট ছোট্ট ফিলিস্তিনী বালকেরা যে ইহুদী সৈন্যদের প্রতি ইট পাথর ছূড়ে মারতো, এদের নামও তো এখন হবে সন্ত্রাসী। ইয়াসির আরাফাতের পুলিশই এখন এদের হাড্ডি গুঁড়ো করার দায়িত্ব পালন করবে। অতঃপর শান্তির ভিডিও দেখে দেখে ঘুমিয়ে পড়বে। এসব পরাধীন স্বর্ণঈগল। নুপুরের নিক্কন আর মাদকদ্রব্যের সর্পছোয়ায় ফিলিস্তিনী যুবা-তরুণেরা কি বিস্মৃত হয়ে যাবে ইন্তিফাদার উদ্দীপনা?

 

        আমরা এখনো কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে চক্রান্তটা খুবই গভীর তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না মোটেও। মরক্কোর নতুন মসজিদটি দেখে এসে মার্কিন আইজ্যাক রবিন কি আবার অচিরেই মসজিদে নববী দেখতে চাইবেন? ইহুদীদের আজন্ম লালিত স্বপ্নও তো এটাই। মসজিদে আকসা থেকে মসজিদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম) পর্যন্ত রাজ্য বিস্তারই তো ইহুদীদের প্রাথমিক লক্ষমাত্র।

 

        মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার পৃষ্ঠপোষক, যে জাতির হাতে রয়েছে দু'শতাধিক পারমানবিক বোমা, যে জাতির প্রতিটি সদস্য ভায়োলেন্সে ওস্তাদ, যে জাতি অনায়াসে তার বৌ বেটি আর বোনকে তুলে দিতে পারে অপর পুরুষের হাতে, এমন অস্ত্রপাতি আর কলকাঠিতে সমৃদ্ধ ইসরাইলীদের অগ্রযাত্রা রোধের কোন পথ কি এখনো খোলা আছে?

 

        সে ফিলিস্তিনী তরুণ যোদ্ধার দল! তোমরা সাবধানে পথ চলবে। শান্তিচুক্তির ছায়াতলে বিনিদ্র রজনী কাটাবে। শত্রুনিয়ন্ত্রিত স্বায়ত্তশাসনের মাদকতায় যেন তোমর ক্লান্তির নিদ্রায় ঢলে না পডে। সোনালী ভবিষ্যতের হাতছানির পানে চেয়ে জেগে থেকো হে সিংহের জাতি! মূল লডাই কিন্তু এখনো শুরু হয়নি।

 

*****