JustPaste.it

"সার না পেয়ে রাস্তার মাঝে শুয়ে পড়লেন কৃষকরা"

খবরঃ

জামালপুরে ইউরিয়া সার না পেয়ে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। রোববার সকালে জামালপুর সদরের শরিফপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন কৃষক সড়কের মাঝে শুয়ে পড়েন।

 

বিক্ষুব্ধ কৃষকদের অভিযোগ, ইউরিয়া সার বিক্রির মাইকিং শুনে রোববার সকালে সার কিনতে শরিফপুর বাজারের ডিলার আব্দুস সালামের গুদামের সামনে উপস্থিত হন কয়েকশ কৃষক। উপস্থিত ২০-২৫ জন কৃষকের মাঝে প্রতি বস্তা সার ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রির পর গুদাম বন্ধ করে দেন ডিলার। এরপর বিক্ষুব্ধ কৃষকরা সারের দাবিতে জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কের শরিফপুর বাজার এলাকায় অবরোধ করেন। কয়েকজন কৃষক সড়কের মাঝে শুয়ে পড়ে সার না দেওয়ার প্রতিবাদ জানান।

 

https://www.jugantor.com/country-news/591354/সার-না-পেয়ে-সড়কের-মাঝে-শুয়ে-পড়লেন-কৃষকরা

 

মন্তব্যঃ

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যে বিষয়গুলো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বারবার আসছে তা হচ্ছে, আমন চাষের ভরা মৌসুমে সারের মূল্যবৃদ্ধি ও সারের সংকট যেখানে বাড়তি টাকায় মিলছে না সার।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্ধবছরে ইউরিয়ার চাহিদা ২৬লক্ষ টন।যার মধ্যে দেশের চারটি সার কারখানা ১০ দশমিক ৫ লাখ টন উৎপাদন করতে সক্ষম, বাকি 16 লাখ এর জন্য আমদানি নির্ভর হওয়া  ছাড়া কোন উপায় নেই। গত বছরেও এই আমদানি বাবদ ২৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সারের দাম আকাশচুম্বী হয়ে ওঠায় গত অর্থবছরে মে মাস পর্যন্ত আমদানি খরচ হয়েছে ৪ বিলিয়ন যা এক বছরের তুলনায় ২২৩% বেশি। সারের মতো একই সংকট দেখা যায় চাল এর ক্ষেত্রেও।কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত ১২বছরে দেশের প্রধান দুই খাদ্যশস্য  ধান ও গমের গড় আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ টন।বাস্তবতা হচ্ছে,বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম উর্বরা জমি, ৬ টি স্বতন্ত্র ঋতু,  ৭০০ নদীর সমাহার, শ্রমশক্তির বৃহৎ পুল– যা বাংলাদেশের মধ্যে তৈরি করেছে অবারিত কৃষি সম্ভাবনা এবং এ জমির মাত্র ৫৯.৮% চাষের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালে ৩৫ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন করতে সক্ষম হই।BRRI rice journal 2021 এ প্রকাশিত হয়েছে যে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ডাবল করা সম্ভব,সেখানে উল্টো প্রতিবছর আমাদের চাল আমদানি করে আনতে হয়। এই অনুশীলন শুরু হয়েছে বহু আগে গত শতকের ষাটের দশক থেকেই সবুজ বিপ্লবের নামে বৈদেশিক সার এবং হাইব্রিড বীজের মত বন্ধ্যা বীজ ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরন প্রক্রিয়া শুরু হয়।আর সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর  এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রচারণার মাধ্যমে  হাইব্রিড বীজের গুণাগুণ তুলে ধরছে।সেই ধারাবাহিকতায়  হাইব্রিড বীজ এর বেশিরভাগ আমরা চীন থেকে আমদানি করি, আর সার আসে রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে। যুদ্ধ সংঘাত বা যেকোনো অস্থিতিশীলতার কারণে  এই আমদানি ব্যাহত হতে পারে যা আমাদের খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে দিবে না যেভাবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে সার, গমের প্রাপ্যতা ঝুঁকিতে। সুতরাং, যে কৃষি থেকে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব ছিল, শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন করা সম্ভব ছিল এবং যে কৃষি হতে পারত বৈদেশিক বাণিজ্যের ভিত্তি —- সেই কৃষিই হয়ে পড়ল আমদানিনির্ভর - অন্যের মর্জির উপর নির্ভরশীল। এভাবে, পরিকল্পিতভাবে  আমাদের কৃষি খাতকে পঙ্গু করার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং পরনির্ভরশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, যখন পুরো বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ  বিষয় নিশ্চিত করতে মরিয়া, চীনের মতো রাষ্ট্র তার ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আফ্রিকা মহাদেশের আবাদি জমি ক্রয় করছে,সেখানে আমাদের সক্ষমতা থাকা সত্বেও কেন আমদানিনির্ভর কৃষিখাত গড়ে তোলা হচ্ছে? কারন হচ্ছে  আমাদের শাসকেরা মুসলিম ভূমিতে

সাম্রাজ্যবাদীদের নির্ধারিত আত্মঘাতি নীতি বাস্তবায়ন করছে, কৃষিতে ভর্তুকি উঠিয়ে এবং কৃষকদের  সর্ব ধরনের অসহযোগিতার মাধ্যমে উর্বর মুসলিম ভূমিতে খাদ্যের মরুভূমি তৈরি করেছে, আবার বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সাহায্যের নামে ভিক্ষা নিয়ে হাজির হওয়ার নাটকের মঞ্চায়নও হচ্ছে ।একই পুঁজিবাদী নীতিমালা বাস্তবায়ন

বিশ্বের খাদ্যের ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত সুদানকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গম আমদানিকারকে পরিণত করেছে। অথচ, তাদের আছে ২০০ মিলিয়ন  একরের বেশি উর্বর জমি, ভূগর্ভস্থ পানি সহ বিপুল  জলসম্পদ। 

ইতিহাস সাক্ষী যখন মুসলিম ভূমি আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছিল তখন তারা ছিল পৃথিবীর কৃষি বিস্ময়। যখন ইউরোপ  অনাহার ও দুর্ভিক্ষে জর্জরিত ছিল, তখন যে বিষয়টি তাদেরকে আস-শাম এর আশীর্বাদ পূর্ণ ভূমি আক্রমণ  করার জন্য লালায়িত  করেছিল তা ছিল তার বিপুল কৃষি সম্পদ। আস-শাম কে ক্রুসেডাররা বলতো "land of milk and honey"। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ ইসলামের অধীনে ছিল কৃষির পাওয়ার হাউস, যা একাই বিশ্বের জিডিপির ২৩% উৎপাদন করতো, তার ছিলো  শক্তিশালী রপ্তানি প্রফাইল, তার মসলা এবং কৃষি সম্পদ ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের লোভকে   উস্কে দেয়। অথচ, ব্রিটিশদের শাসন আমলে এই একই  অঞ্চলে ব্যাপক আকারে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল যাতে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে  মারা গিয়েছিল। ব্রিটিশরা চলে গেলেও,পুঁজিবাদ রয়ে যায় যা আমাদের আশীর্বাদপূর্ণ কৃষিখাতকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, যদিও গরীব কৃষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা এখনো টিকে আছে। খিলাফাহ ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন আবাদি কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করবে।জমির উৎপাদন ক্ষমতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  যেমনটি আমরা দেখেছিলাম পূর্বে  খিলাফতের অধীনে - আবু ইউসুফ আল -খারাজে আমরু ইবনে মায়মুন এবং হারিথা ইবনে মুদরাব থেকে বর্ণনা করেছেন, "উমর ইবনে আল খাত্তাব উসমান ইবনে হানিফকে ইরাক দেশে পাঠালে তিনি তাকে তা জরিপ করার নির্দেশ দেন। প্রতিটি জারীবের( এর একটি টুকরা চাষযোগ্য জমি)   উপর তা চাষ করা হোক বা জলে উপচে পরুক,, তবে সাধারণত ব্যবহার করা যেতে পারে, তিনি রেখেছিলেন একটি দিরহাম এবং একটি কাফিজ ( প্রায় ১৬ কেজি)"। হিজবুত তাহরীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের সংবিধানের ১৩৬ ন% অনুচ্ছেদে গৃহীত হয়েছে, "যারা জমির মালিক প্রত্যেকেই এটি ব্যবহার করতে বাধ্য, এবং যাদের আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন তাদের বায়াত-উল-মাল থেকে অর্থ প্রদান করা হবে যাতে তারা তাদের জমি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়, তিন বছর ধরে কেউ জমি ব্যবহারে অবহেলা করলে তাদের কাছ থেকে তা নিয়ে অন্য কাউকে দেওয়া  হবে।" তাছাড়াও, খিলাফাহ হাইব্রিড বীজ, বৈদেশিক সারের ফাদ থেকে কৃষকদেরকে মুক্ত করবে, প্রয়োজনে উদ্ভিদ প্রজননবিদদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজস্ব গবেষণায় উচ্চ ফলনশীল ধান ও বীজ উৎপাদন করবে।  আসন্ন খিলাফাহ এই কৃষিনীতির সম্পূর্ণ পুনর্গঠন   নিশ্চিত করবে, আমাদের উর্বর ভূমি,জলসম্পদ, জনসম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত কৃষি এবং ভারী শিল্প সহ নেতৃত্বশীল অর্থনীতি করে তুলবে। 

 

নাসরিন জাহান।