জিহাদের পথের পথিকদের প্রতি কিছু নিবেদন
উস্তাদ আহমাদ নাবিল হাফিজাহুল্লাহ
***************************************
হে যুবক, গুনাহ থেকে সাবধান!
ওহে মুসলিম যুবক! সাবধান!
তোমার গুনাহ যেন তোমাকে জিহাদ ও শাহাদাত থেকে মাহরূম না করে!
মনে রেখ, যখন মুসলিম সমাজে কুফর ও রিদ্দার ব্যাপকতা ঘটে তখন জিহাদের পথে অবিচল থাকতে পারা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে এক অনেক বড় নেয়ামত। আর এই নেয়ামত আল্লাহ্ তাআলা সকলকে প্রদান করেন না।
আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّـهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّـهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّـهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿٥٤﴾
হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। (সূরা মায়েদাহ-৫৪)
হতে পারে, তোমার পাপ ও অবাধ্যতা আল্লাহ্ তাআলার এই অনুগ্রহের পথে বাঁধা হবে। তোমার গুনাহ তোমাকে জিহাদ থেকে বিরত রাখবে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا ۖ وَلَقَدْ عَفَا اللَّـهُ عَنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ ﴿١٥٥﴾
তোমাদের যে দুটি দল লড়াইয়ের দিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল, তাদেরই পাপের দরুন। (আলে ইমারান-১৫৫)
এই আশায় (ধোঁকায়) গুনাহে লিপ্ত হচ্ছো, জিহাদ ও শাহাদাত তোমার গুনাহ সমূহের কাফফারা হবে?!! হতে পারে, এই গুনাহেই জিহাদ ও শাহাদাতের পথে বাঁধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
হে রব! আপনি আমাদেরকে শয়তানের ধোঁকা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
আধুনিক সভ্যতার চিত্র
তুরস্কের এয়ারপোর্ট থেকে বিমান উড়ছে। কিছু যাচ্ছে মসুলে আর কিছু ইজরাইলে। মসুলে যাচ্ছে আগুন জ্বালাতে আর ইজরাইলে আগুন নেভাতে।
হায়রে এরদোগান!!!
হিকমত ও তাহরীফের স্বরূপ
শরীয়তের মুহকাম (দ্যর্থহীন) বিধান গোপন করার নাম হিকমত নয়। এর নাম ‘কিতমান’। যার পরিণাম হচ্ছে- রবের পক্ষ থেকে মাল’উন "উপাধি” অর্জন। কিতমানকারীদের উপর লা’নত করেন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা, সাথে সাথে তাঁর সম্মানিত ফেরেস্তাগন ও মুমিন বান্দাগণ।
পার্থিব স্বার্থ রক্ষা অথবা নিজের মতকে প্রতিষ্ঠার জন্য মুহকাম (দ্যর্থহীন) বিধানের অপব্যাখ্যার নাম হিকমত নয়। এর নাম তাহরীফ। আর তাহরীফ, কিতমানের চেয়েও জঘন্য, ইয়াহুদ উলামাদের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যা কখনো কখনো কুফর পর্যন্ত পৌঁছায়।
তাহলে হিকমত কি?
-হিকমত হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহের সঠিক ইলেম ও ফাহাম (জ্ঞান ও বুঝ) ও তার সঠিক প্রয়োগের নাম।
কিন্তু আফসোস! শত আফসোস!
কিতমান ও তাহরীফকেই সমাজে ইলেম ও হিকমতের চাদর পরানো হয়েছে।
জিহাদ করবে না! সদাকাহ দেবে না! কিভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে?!!
এক ব্যক্তি এলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বায়াত নেবেন। তিনি বায়াতের জন্য শর্ত দিলেন- সাক্ষ্য দিতে হবে, আল্লাহ্ তায়ালা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ তায়ালার বান্দা ও রাসূল। সালাত ও যাকাত আদায় করতে হবে। হজ্জ পালন করতে হবে, রোজা রাখতে হবে। আল্লাহ্ তায়ালার পথে জিহাদ করতে হবে।
সাহবী জানালেন, জিহাদ ও সদাকার ব্যাপারে বায়াত নিতে পারবেন না। জিহাদ করবেন না। কারণ, ঈমান দুর্বল। জিহাদে যেয়ে মৃত্যুর ভয়ে যদি পলায়ন করেন তাহলে তো আল্লাহ্ তায়ালার ক্রোধের মাঝে পরবেন। আর সদাকাহ করতে পারবেন না, কারণ সম্পদ স্বল্প।
ওজর শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত ধরলেন। ঝাঁকি দিয়ে বললেনঃ
«لا جهاد ولا صدقة!! فبمَ تدخل الجنة؟»
জিহাদও করবে না! সদাকাও দেবে না! তাহলে কিভাবে তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে?!!
অতঃপর সাহাবী সকল বিষয়ের উপর বায়াত প্রদান করলেন।
(আল-মুসতাদরাক আলাস-সহীহাইন। সনদ-ইমাম যাহাবী রহঃ সহীহ বলেছেন)
আমেরিকার টার্গেট
ইরাকের মসুলে অ্যামেরিকান ক্রুসেডার ও নাপাক রাফিযীদের টার্গেট, নির্দিষ্ট কোন তানযীম নয়। তাদের মূল টার্গেট আহলুস সুন্নাহ।
হে রব! আপনি ক্রুসেডার ও রাফিযীদের হাত থেকে মসুলের মুসলিমদেরকে হেফাজত করুন। আপনি তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আহলুস সুন্নাহকে বিজয় দান করুন।
জিহাদের অর্থ ও সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ
আমর বিন আবাসাহ রাদিঃ থেকে একটি হাদীস বর্ণীত হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিভিন্ন ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছিলেন, এক পর্যায়ে লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন- “জিহাদ মানে কী”?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন- “যখন কাফেরদের সাথে মোকাবেলা হবে তখন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে”।
লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করলেন- “তাহলে কোন জিহাদ সর্বশ্রেষ্ঠ”?
(প্রতি উত্তরে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন- “যার ঘোড়ার পা কেটে হত্যা করা হয় ও তার নিজের রক্তও প্রবাহিত করা হয় (শহীদ করা হয়)”।
(মুসনাদে আহমাদ, শা'বুল ঈমান লিল-বাইহাকী। সনদঃ সহীহ)
জীবনের সফলতা
গাড়িটা বিস্ফোরিত হল,
দেহটা ছিন্নভিন্ন হল। (কাবার রবের শপথ আমি সফল হলাম।)
একটি প্রচলিত ভুল-“কিয়ামত পর্যন্ত জিহাদ চলবে”
الجهاد ماض إلى يوم القيامة
আমাদের মাঝে উপরোক্ত বাক্যটি হাদীস হিসাবে প্রচলিত। কিন্তু বাস্তবিক হাদীসের কোন কিতাবে এই শব্দে কোন হাদীস পাওয়া যায় না। এবং যারা এই বাক্যকে হাদীস হিসাবে ব্যবহার করেছেন কেউ এর কোন সনদ উল্লেখ করতে পারেননি। না সহীহ না দয়ীফ।
তাই আমাদের সতর্ক হওয়া জরুরী। কারণ অনেক দায়িত্বশীল আলেমের কথা ও লিখাতেও অনেক সময় পাওয়া যায়, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন –
الجهاد ماض إلى يوم القيامة”
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেহেতু এই শব্দে/বাক্যে কোন হাদীস বর্ণীত নেই। তাই এর নিসবত/সম্পর্ক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে করা কোন ভাবেই সমীচীন নয়। এই ভুল থেকে বাঁচা জরুরী।
হ্যাঁ তবে! জিহাদ যে অবিরত চলমান থাকবে, তা প্রমাণ করে এমন একাধিক সহীহ হাদীস বর্ণীত আছে। আমরা ইনশাআল্লাহ্ সেগুলোই দলীল হিসেবে পেশ করতে পারি। যেমন এক হাদীসে এসেছে-
وعن عمران بن حصين قال: قال رسول الله r لا تزال طائفة من أمتي يقاتلون على ا لحق،ظاهرين على من ناوأهم، حتى يقاتل آخرهم المسيح الدجال
ইমরান বিন হুসাইন থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
আমার উম্মতের মধ্য থেকে একটি দল সর্বদা হকের উপর থেকে কিতাল (যুদ্ধ) করবে। তারা তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে বিজয়ী অবস্থায় থাকবে। তাদের শেষ ব্যক্তি দাজ্জালকে হত্যা করা অবধি। (সুনানে আবী দাউদ, সনদ-সহীহ)
আশা ও আশঙ্কা
আল্লাহ্ তায়ালার কিছু বিধান আছে যা পালনের মাঝে শুধুমাত্র পরকালিন আশা নিহিত। কিছু বিধান আছে, যার মাঝে পরকালিন আশার সাথে-সাথে ইহকালিন আশঙ্কাও বিদ্যমান।
তাই কোন দ্বীনদার যদি শুধু এমন বিধান পালনের মাঝেই ক্ষান্ত থাকে, যার মাঝে রয়েছে শুধু পরকালীন আশা। নেই ইহকালিন আশঙ্কা। তাহলে সে কখনই পূর্ণ দ্বীনদার নয়, হতে পারে না।
তাই হে দ্বীনের পথিক!
যদি দ্বীনের সঠিক কোন বিধান পালনের কারণে আপনি পার্থিব আশঙ্কার মধ্যে থাকেন তাহলে, মহান রবের দেয়া এই তাউফিকের জন্য মন খুলে শুকরিয়া আদায় করুন- আলহামদুলিল্লাহ্।
“আর আমি অবশ্যই অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয় দ্বারা ............” (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৫-১৫৬)
আরও দেখুনঃ- সূরা বাকারাঃ ২১৪, সূরা বাকারা-১২৪, সূরা আলে ইমরানঃ ১৮৬, সূরা তাওবা- ১৬, সূরা হাজ্জঃ ১১, সূরা আনকাবূতঃ ২-৩, সূরা আনকাবূতঃ ১০-১১, সূরা আহঝাবঃ ১০-১১, সূরা মুহাম্মাদঃ ৩১।
ইমাম মাহদী কোন কাফেলায়?
عن جابر بن عبد الله قال: سمعت النبي يقول:" لا تزال طائفة من أمتي يقاتلون على الحق ظاهرين إلى يوم القيامة، قال: فينزل عيسى بن مريم فيقول أميرهم تعال صلِّ لنا، فيقول لا، إن بعضكم على بعض أمراء تكرمة الله هذه الأمة ".
জাবির বিন আব্দিল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের একটি দল হকের উপর থেকে বিজয়ী অবস্থায় কিয়ামত পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাকবে। তিনি বলেনঃ অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম নেমে আসবেন। তখন তাঁদের আমির বলবেন, আসুন আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করুন। তিনি বলবেন, না! আপনারা একে অন্যের আমির, এটা আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে এই উম্মতের প্রতি সম্মান। (সহীহ মুসলিম)
শিক্ষাঃ
১. কিতাল ও মুকাতিল, জিহাদ ও মুজাহিদ কিয়ামত পর্যন্ত চলমান ও বিদ্যমান থাকবে। কোন ভাবেই তা বন্ধ হবে না। না যালিমের যুলুম তা রুখতে পারবে, না কোন মুনসিফ শাসকের ইনসাফে তা থেমে যাবে।
২. একটি জামাত হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর তাদের মানসূস যে সিফাত হাদীসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে কিতাল। কিতাল তাদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। হক জামাত সন্ধানীদের জন্য ইনশাআল্লাহ্ এই হাদিসটি পথের দিশা দেবে।
তবে একটা বিষয় স্পষ্ট ভাবে বুঝতে হবে, কিতাল করলেই এই জামাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে হাদীসে এমনটি বলা হয়নি, বরং হক জামাতটির বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে, তাদের মাঝে কিতাল থাকবে। জামাতের মধ্যে কিতাল থাকবে তা নিশ্চিত। কিন্তু ‘সকল কিতালকারি এই জামাতেরে অন্তর্ভুক্ত’ হাদীস কোন ভাবেই এটা প্রমাণ করে না।
৩. এই হাদীস প্রমাণ করে, ইমাম মাহদী এই কাফেলার মধ্যে আসবেন ও তিনি তার সময় এই তয়েফার আমির হবেন। কারণ হাদীসের মধ্যে ইমাম মাহদীর ব্যাপারে যে শব্দ বলা হচ্ছে- (فيقول أميرهم) তাঁদের আমির বলবেন। ‘তাঁদের’ সর্বনাম দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে পূর্বে যে তয়েফার কথা বলা হয়েছে সেই তয়েফার আমির। আর তা তো এমন এক তয়েফা, যা সর্বদা বিদ্যমান থাকবে। পূর্বে ছিল, এখন আছে, কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। সুতরাং ইমাম মাহদীর কাফেলা এখনও বিদ্যমান আছে, তিনি এই কাফেলার ইনশাআল্লাহ্ এক সময় আমির হবেন। আর ঈসা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম আসমান থেকে নেমে এই কাফেরলার সাথেই থাকবেন।
হে মুসলিম একটু ভাবুন!
যারা কোন পার্থক্য না করে, সকল মুজাহিদের বিরোধিতা করছেন। বর্তমান জিহাদকে ফাসাদ বলছেন। অথবা বলছেন, বর্তমান বিশ্বে হকের উপর থেকে জিহাদকারি কোন জামাত বিদ্যমান নেই। তারা যে সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে এ ব্যাপারে কি কোন সন্দেহের অবকাশ আছে?!!
আপনি বুঝে বা না বুঝে আল্লাহ্ তায়ালার একটি হক ইবাদাতের বিরোধিতা করছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম, আল্লাহ্ তায়ালার যে বান্দাদের ব্যাপারে, হকের উপর থাকার গ্যারান্টি দিয়েছেন আপনি তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কাল হাউজে কাউছারে কীভাবে আপনি রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দাঁড়াবেন?!!!
আপনি ইমাম মাহদির কাফেলার বিরোধিতা করছেন, আর অপেক্ষা করছেন তিনি এলে তার সাথে মিলে জিহাদ করবেন। শুনে রাখুন! আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ দলীল যারা উপেক্ষা করে, ছুঁড়ে ফেলে, মুখ ঘুরিয়ে নেয়, মু'জেঝা বা কারামাত তাদের কোন কাজেই আসে না বরং তাদের গোমরাহিকে বৃদ্ধি করে। যদিও চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়। পাথর টুকরো থেকে উটনী বের হয়। লাঠি ভয়ংকর সাপ হয়।
তারুণ্যের ক্যারিয়ার!
বেশ কিছু দিন চলে গেল শেভিং ক্রিমটা ব্যাবহার হয় না। যে ছেলেকে সকাল ৯-১০টায় ডেকে উঠাতে হত, শেষ রাতে তার রুম থেকে ভেসে আসে অ্যালার্মের আওয়াজ। কিছুক্ষণ পর শোনা যায় গেট খোলার শব্দ। কলেজ/ভার্সিটির বইয়ের পরিবর্তে পড়ার টেবিলে শোভা পায় দ্বীনি কিতাব। জীবনে প্রথম কিচেনে যায়। মায়ের রান্না করা দেখে। কোমল কণ্ঠে বলে, আম্মু কি রান্না করছ? রান্নাঘর দেখি অনেক গরম, তোমার তো অনেক কষ্ট হচ্ছে। রাত্রি বেলা ছেলের ঘরে না ফেরা নিয়ে আর উদ্বিগ্ন হতে হয় না।
কিন্তু স্নেহশীল বাবা ও মমতাময়ী মা হাবুডুবু খায় চিন্তার নতুন এক সমুদ্রে। ছেলের ফিউচার নিয়ে চিন্তা। ক্যারিয়ার নিয়ে টেনশন। এভাবে তো ছেলেটা নিজ ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। দ্বীনের কাজ করার সময় তো এখন না। সামনে অনেক সময় আছে। এভাবে চললে তো লাইফটা বরবাদ হয়ে যাবে। ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। ওকে নিয়ে কত আশা ছিল।
ছেলেঃ আব্বু! তুমি তো পরকালে বিশ্বাসী।
বাবাঃ হ্যাঁ! বাবা অবশ্যই।
ছেলেঃ আচ্ছা আব্বু! তুমি যে সময়টুকুকে ভবিষ্যত বল, সেটা স্বাভাবিক কত দিনের?
বাবা একটু আশ্চর্য হয়েঃ কেন? ৪০-৫০ বছর।
ছেলেঃ আব্বু! মৃত্যুর পরের জীবনটা বর্তমান নাকি ভবিষ্যৎ?
বাবাঃ ভবিষ্যৎ।
সেটা কত বছরের?
বাবা চুপ করে থাকে।
ছেলেঃ বাবা তুমি যে ফিউচার নিয়ে পেরেশান, তা পরকাল নামক ফিউচারের কত ভাগের এক ভাগ হবে?
বাবা চুপ করেই থাকেন।
ছেলেঃ বাবা পরকাল নামক ‘ভবিষ্যত ক্যারিয়ার’ তো আমাকে এখনই গঠন করতে হবে। আর দুই ভবিষ্যতের যেটা যত প্রলম্বিত সেটাতে সে পরিমাণ সময় দেয়াই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়? তাহলে তুমি বল, আমি কোন ভবিষ্যতের জন্য কতটুকু সময় দেব? আমি যে পারছি না, আমার আসল ফিউচার জেনে বুঝে ধ্বংস করতে।
(বাবা ছেলের আলোচনা সেদিনের মত সেখানেই শেষ হয়।)
আসলে যদি ‘কাল’ ভাগ করা হয়, পৃথিবীতে আগমনের পূর্বের দীর্ঘ সময়টা ছিল আমার অতীত। আমি এখন বর্তমানে। দুনিয়ার এই অতি সামান্য সময়টাই আমার বর্তমান। মৃত্যুর পর অসীম সময়টা আমার ভবিষ্যৎ। আমার ভবিষ্যৎ এত দীর্ঘ!, যাদের সাইন্স সম্পর্কে জানা আছে তারা জানি, বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত বিশ্ব জগতটা কত বিশাল।!! বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত-অনাবিষ্কৃত পুরো বিশ্ব জগতটা যদি সরিষা দানা দিয়ে ভরে দেয়া হয়। আর একটি কবুতর পাঁচ শত বছর পর-পর এসে শুধু একটি করে দানা নিয়ে যায়। এক দিন সব দানা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ শেষ হবে না। !!!
এই ফিউচারের জন্য চেষ্টা চালাই বলে, অনেকে আমাকে অবজ্ঞা করে বলে, ‘হুজুর’। এই ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনের জন্যই আজ সমাজের চোখে আমি ‘বোকা মানব’। কিন্তু আমি চরম আশ্চর্য হই, যখন দেখি আমাকে অবজ্ঞা করা এই বুদ্ধিমান(!), পরকালের প্রতি বিশ্বাসের দাবী করে।
ইনশাআল্লাহ্ ভবিষ্যতই বলে দেবে, কে বুদ্ধিমান আর কে বোকা?
মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ-
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ ﴿١٨٥﴾
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়।(সূরাঃ আল ইমরান-১৮৫)।
মাজলুম বিধান
উম্মতের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে, মহান রবের বিধান জিহাদের উপর ‘জুলুম’ ছেঁড়ে দেয়া।
“যখন কোন সম্প্রদায় জিহাদ ছেঁড়ে দেয়, আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে ব্যাপক ভাবে শাস্তিতে নিপতিত করেন।” (মাজমায়ুঝ ঝাওায়েদ,সনদঃ সহীহ)
-------------------------